
বিএনপির সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে তাদের মোকাবিলার ঘোষণা দিয়ে মাঠে আছে আওয়ামী লীগও। বিএনপি যেমন রাজধানী ও বিভাগীয় কর্মসূচির পর এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করছে। তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও তৃণমূলে নজর দিয়েছে। কিন্তু ঢাকা ঘিরে বিশেষ মনোযোগী ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের আঁচ কোনোভাবেই ঢাকায় লাগতে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেকোনো মূল্যে ঢাকা শান্ত রাখা হবে। রাজধানী শহর ও আশপাশ এলাকায় বিএনপির অবস্থান দুর্বল করে রাখা ও তাদের কব্জায় নেওয়ার কোনো সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। এ জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে আওয়ামী লীগ ও সরকার। ঢাকা ‘মুক্ত’ রাখতে প্রশাসনিক তৎপরতা প্রয়োজন হলে আরও জোরদার করার কথাও ভাবছে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, বিএনপির লক্ষ্য আন্দোলন করে ঢাকা অচল করা। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে ঢাকা শান্ত রাখা। বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের বিএনপি মোকাবিলা করার কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও সরকারি দলের নেতারা দাবি করেন, তা কেন হবে। দুটি রাজনৈতিক দলের একই দিনের কর্মসূচি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির অভিযোগ থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতারা সে অভিযোগ মানতে চান না। আজ শনিবার বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। একই পর্যায়ে আওয়ামী লীগেরও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কেন হবে? পদযাত্রা ও শান্তি সমাবেশ কি এক? এক না। তারা তাদের কর্মসূচি দিয়েছে, আমরা আমাদের কর্মসূচি দিয়েছি। এখানে পাল্টাপাল্টি দেখার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘কোনো দল ৩৬৫ দিন কর্মসূচি দিয়ে রাখে, অন্য দল কি কর্মসূচি দিতে পারবে না।’
দলটির সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি শান্তি সমাবেশ। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দেশের ও দেশের মানুষের শান্তি বজায়ে রাখার ব্যাপারে আমাদের ওপরও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সে দায়িত্বটুকু পালন করে মাত্র।’ ঢাকা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঢাকা দেশের রাজধানী। অনেক কিছুর চালিকাশক্তি ঢাকা ঘিরে। ফলে যেকোনো ঝুট-ঝামেলামুক্ত রাখার জন্য সরকার সবসময়ই সচেষ্ট থাকে।’
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি গত বছর আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দলের শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছে যে, বিএনপির লক্ষ্য ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, সভা-সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে মাঠ দখলে রাখা। বিএনপির শীর্ষ পর্যায় মনে করে, ঢাকায় আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারলে সরকারবিরোধী আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরে পরিণত হবে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন। তবেই সরকারের ভিত নড়বড়ে হয়ে উঠবে। লক্ষ্য পূরণ হবে বিএনপির। আর তখন সরকার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার আগ্রহ দেখাবে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, আন্দোলনের নামে সংঘাত-সংঘর্ষ ও সহিংসতা সৃষ্টি করে ঢাকায় উত্তাপ ছড়ানোর সুযোগ বিএনপিকে দেওয়া হবে না। এ জন্যই বিএনপির কর্মসূচি যেদিন যেখানে থাকবে ঠিক সেদিন সেখানেই কর্মসূচি রাখবে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিকে বেঁধে রাখার এ কৌশল জানিয়ে সরকারি দলের এই নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের এ কৌশলকে বিএনপিসহ দেশের বিভিন্ন মহল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলে আখ্যা দিতে চাইলেও আওয়ামী লীগ তাতে বিচলিত নয়। বিএনপি ও তাদের সমর্থিত বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি ঘোষণার কৌশল থেকে সরে আসবে না। সমালোচনার ভয়ে কৌশল পরিবর্তন করলে এর সুযোগ নেবে বিএনপি। তিলকে তাল বানিয়ে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেবে নানা অপপ্রচার।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি ঢাকায় মাঠ দখলের সুযোগ না পেয়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্দোলন নিয়ে গেছে। বিএনপি তৃণমূলে আন্দোলন নিয়ে গেলেও ঢাকায় সভা-সমাবেশ কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। পাশাপাশি তৃণমূলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। কেন্দ্র থেকে তেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের ওই কর্মসূচিগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশগ্রহণ করবেন।
এ প্রসঙ্গে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোকসেদুল গণি রাব্বু শাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে আমাদের খানসামা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নেই শান্তি সমাবেশ করব। আমরা সংঘর্ষের চিন্তা করে মাঠে থাকব না। কেউ যদি গায়ে উঠে পড়ে সেই ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করব।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সহিংসতা কেন হবে? ওদের কর্মসূচি ওরা করবে, আমাদেরটা আমরা। জায়গা এক না হলে তো সহিংসতার আশঙ্কা নেই। আমরা সহিংসতা চাচ্ছি না, শান্তি সমাবেশ করব। আমরা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীদের মাঠে রাখছি চাঙ্গা রাখার জন্য।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র থেকে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা জোট আন্দোলন জোরদারের মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি দিয়ে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে আন্দোলনের গতি আনতে চায়। এ সময়টাতে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে সুযোগ পেয়ে যাবে বিরোধীরা।
ওই নেতা আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তৃণমূলের নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করেছেন। সেখানে সরকারি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসভা করবেন তিনি। সেসব জনসভায় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে তৃণমূল সফর শুরু করেছেন তিনি। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, যশোর ও রাজশাহী জেলা সফর করেছেন। আসছে মার্চে ময়মনসিংহ ও বরিশাল জেলা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু এজেন্ডা নিয়ে চলতি বছর মাঠেই থাকবেন তারা। বিএনপি মাঠে নেমেছে বলেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপি মাঠে থাকলে আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকলে তাদের মনোবল নষ্ট হবে। মানসিক দুর্বলতা নেতাকর্মীদের মধ্যে জেঁকে বসলে নির্বাচনের আগে তা দূর করতে সময় ফুরিয়ে যাবে। এ সুযোগে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে বিএনপি।
দলের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে থাকায় ইতিমধ্যেই সুফল পাওয়া গেছে। তিনি মনে করেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল হতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নীতি অনুসরণ করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে উপস্থিতি দিনকে দিন কমতে শুরু করেছে। এখন হামলা-মামলা ও পুলিশের অভিযানের ভীতি তৈরি করতে পারলে বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগ টানা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকলে বিএনপি একটা সময়ে কর্মসূচি ঘোষণার মনোবলও হারিয়ে ফেলবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যত কর্মসূচি যেভাবে দেবে আমরা সব জায়গায় সতর্ক অবস্থানে থাকব। তারা কর্মসূচি দিলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত থাকে। তাই শান্তি সমাবেশ নিয়ে আমরা সতর্ক থাকি।’
হানিফ বলেন, যেহেতু আমাদের লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় লাভ করা। এ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম মানুষের সামনে তুলে ধরব আমরা।
কর্মসূচি : আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহে ও ১৮ মার্চ বরিশালে মহাসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
কাগজে-কলমে ঠিকানা আছে, তবে অনেক সংগঠনের স্থায়ী বা অস্থায়ী কার্যালয় নেই। অথচ নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সব স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণ সাধন এবং তাদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে। দিবসীয় কিছু কার্যক্রম ছাড়া এসব সংগঠনের তৎপরতা চোখে পড়ে না খুব একটা। এরা নামে আছে, কাজে নেই।
অনেক সংগঠনের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ড ও আচরণের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৬ বছরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে বিভিন্ন নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলা, উপজেলায় ২৭০টি সংগঠন নিবন্ধন নিয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলসহ হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া এসব সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকরা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এদের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ। তারা বলেছেন, জামুকার আশকারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এরা ব্যবসা খুলে বসেছে। ঠিকানাহীন এসব সংগঠনকে নিয়ে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে জামুকা। তারা শিগগির এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সুশীল সমাজের আপত্তি : ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জামুকা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের যেসব সংগঠনকে অনুমোদন দিয়েছে সেগুলোর নাম নিয়েও আপত্তি তুলেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মুক্তিযুদ্ধকে জানো, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন ও বিনোদন কেন্দ্র, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন সোসাইটি, সবুজ বাংলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, নিউ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা অরোরা ফাউন্ডেশন, ১৯৭১ সালে ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোট, সিটি মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাইটার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এমনসব নামে নিবন্ধন নেওয়া হলেও এসব সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। ঢাকার যে ঠিকানায় নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে সেখানে এদের অস্তিত্ব মেলেনি।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামুকার কাজ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে সহযোগিতা করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রূপায়ণের ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়নি। অথচ তারা মুক্তিযুদ্ধের নামে এসব দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে হচ্ছে ৭২-এর সংবিধান; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। তার রূপায়ণে জামুকা কিছু করেছে বা বলেছে বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের চিত্তবিনোদনের জন্য ক্লাব লাগবে কেন? এসব আসলে মুক্তিযুদ্ধের নামে ব্যবসা। এসব করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকেও হেয় করা হচ্ছে। এর দায় জামুকাকেই নিতে হবে।’
সরেজমিনে যা দেখা গেল : ঢাকায় জামুকার নিবন্ধিত অন্তত আটটি সংগঠনের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদক। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন ফোরাম নামের সংগঠনের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বায়তুল খায়ের; ৪৮-এ-বি, কক্ষ নম্বর-১১০৭, পুরানা পল্টন। ওই ঠিকানায় গিয়ে এমন কোনো কার্যালয় দেখা যায়নি। ওই ভবনসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ১৩-১৪ বছর আগে এ নামে কিছুদিন একটি অফিস ছিল। ৫৯ (দ্বিতীয়তলা), পুরানা পল্টনের ঠিকানা দেওয়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ অরোরা ফাউন্ডেশনের খোঁজে সেখানে গেলে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এই নামে কোনো সংগঠন তারা এখানে দেখেননি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের ঠিকানা ১৪/২ তোপখানা রোড। সেখানে একটি পুরনো ও রং জ¦লে যাওয়া সাইনবোর্ড থাকলেও ভবনের নিচে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক সরবরাহকারী ব্যবসায়ী মো. হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই নামে এখানে কোনো সংগঠনের কার্যালয় আছে গত এক যুগে শুনিনি।’ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন ও বিনোদন কেন্দ্র নামের সংগঠনের ঠিকানা ৩৩, তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজা। ভবনের দায়িত্বরতরা বলেন, ‘এ ধরনের একটি কার্যালয় এখানে ছিল। কিছুদিন আগে অফিসটি বন্ধ হয়ে গেছে।’
মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাবের ঠিকানা ৫৬৭/সি কামারপট্টি রোড, খিলগাঁও বাজার। সেখানে গিয়ে এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব মেলেনি। স্থানীয় সেলুন ব্যবসায়ী টিটু দাস বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর ধরে এখানে কাজ করছি; মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কার্যালয় কখনো দেখিনি।’ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনের সপ্তমতলায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের ঠিকানায় গিয়ে এ নামে কোনো সংগঠনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ১৬/এ, ওয়াজা ভবনের চতুর্থতলার ঠিকানায় গিয়ে ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন নামে সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভবনের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
যেভাবে নিবন্ধন দেয় জামুকা : জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২-এর ৭(ঙ) ধারা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০২ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সমিতি/সংগঠন নিবন্ধনের জন্য জামুকা ১৮টি শর্ত পূরণ করতে বলে স্থায়ী ও অস্থায়ী কার্যালয় থাকা, সংগঠনে শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি, সংগঠনের নামে ব্যাংক হিসাব থাকা, সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থী কোনো কাজ না করা, জামুকার নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করা প্রভৃতি। জামুকার সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্যমতে, ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে নিবন্ধন পেতে ৫৫৫টি সংগঠন আবেদন করে। বিভিন্ন সময়ে ২৭০টি সংগঠনকে অনুমোদন দিয়েছে জামুকা। এসবের মধ্যে ঢাকায় ১৩৫টি। সংগঠনের নামের বিষয়ে জামুকার কোনো নির্দেশনা নেই। নিবন্ধিত সংগঠনগুলোর মধ্যে সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল জামুকার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০০২ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৮টি সংগঠনকে নিবন্ধন দেয় জামুকা। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ ছিল। ২০১০-এর মে মাস থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ২০২টি সংগঠনকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। জামুকার ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেন, সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কর্মকা- ও নিষ্ক্রিয়তায় বিভিন্ন সময়ে ছয়টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থা, বগুড়ার আদমদীঘির শহীদ যুদ্ধাহত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি, নওগাঁ জেলার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি, খুলনা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম কল্যাণ ও পুনর্বাসন, ঢাকার জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন ও ঢাকার ৭১-এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ। এ ছাড়া ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে দুটি সংগঠন থাকায় এদের নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়েছে। জামুকার নিবন্ধিত সংগঠন এখন পর্যন্ত ২৬২টি।
জামুকার সহকারী পরিচালক (রেজিস্ট্রেশন ও সার্টিফিকেট) মো. আবদুল খালেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০০ সংগঠনের সঙ্গে তাদের দপ্তরের কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। চিঠি দিলে উত্তর আসে না। কার্যক্রম দেখতে চাইলে সাড়া পাওয়া যায় না। প্রায়ই কমিটি নিয়ে দলাদলিসহ নানা অভিযোগ আসে।’ ৫০টির মতো সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জাগ্রত রাখাসহ যে উদ্দেশ্যে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল দেখা যাচ্ছে অনেকে সংগঠনই তা করে না। লোকবলের স্বল্পতার কারণে এত সংগঠনের কার্যক্রম তদারকি করাও কঠিন। তাই নতুন করে নিবন্ধন দিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘সংগঠনগুলোর সঙ্গে একেবারেই যে যোগাযোগ নেই, এমনও নয়। আমরা নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছি। অনেকের হয়তো তৎপরতা নেই। অভিযোগ আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। কীভাবে সংগঠনগুলোকে আরও গতিশীল করা যায় সে চেষ্টা আমাদের রয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক বা দুটির অস্তিত্ব আছে। বাকিগুলো কাজ করে বা করেছে বলে আমার জানা নেই। আড়াইশো সংগঠন প্রায় নামসর্বস্ব। নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। জামুকার উচিত হবে নিবন্ধন বাতিল করা।’
গায়ক তিনি, ছায়ানটে গান শিখেছেন পেশাদার গায়কের মতোই। উদীচীর সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ঢাকার বিএফ শাহীন স্কুলে ও তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করেছেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সেনাবাহিনীর চাকরিতে যান। এ পেশার সঙ্গে পরিবারের স্বপ্নও অনেকাংশে জড়িয়ে ছিল। ব্যারাকের জীবনে ইতি টেনে জড়ান সাংবাদিকতায় ইউনিফর্মের বাইরে বেরিয়ে চাকরি শুরু করেন নিউ নেশনে, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে। সাংবাদিক হিসেবে শুধু প্রতিবেদন নয়, কলামও লিখেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গে অভিনয়েও যুক্ত ছিলেন। একসময় সাংবাদিকতা ছেড়ে অভিনয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। পেশা-নেশার বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন। বিচিত্র এই জীবনে যে কাজটি বরাবর করতেন এবং করেন তা হলো, ফটোগ্রাফি। ভালো রাঁধতেও পারেন। শখ তার ঘুরে বেড়ানো; প্রায় সব জেলায় ঘুরেছেন। সময় পেলেই আড্ডায় মাতেন। শখ তার আরও আছে খেলা দেখা এবং নেটফ্লিক্সে ছবি দেখা। তিনি হাসান মাসুদ। বাবার চাকরির সুবাদে শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে।
নিউ নেশন থেকে ডেইলি স্টারে যোগ দেন। ডেইলি স্টারে ছিলেন সাড়ে আট বছর। এরপর বিবিসিতে সাড়ে চার বছর কাটিয়ে সাংবাদিকজীবনের ইতি ২০০৮ সালের ৩১ মে। লেখালেখি এখনো করেন। খেলাধুলা নিয়ে কলাম লেখেন জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে। ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছেন। ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়াও ছেলেদের টেনিস দেখতে বেশি আগ্রহী। ডেইলি স্টারে কাজ করার সময় বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে। খেলার খবর জোগাড় করতে নানা দেশে গেছেন। স্মৃতিতে জাগ্রত ঘটনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেপালে যুব ফুটবলে যেবার স্বর্ণপদক পেল বাংলাদেশ, সেবার মাঠে থেকে কভার করেছি সেই ঘটনা। সে দিনটাই বিশেষ আমার কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর তেমন আড্ডা দিতে পারি না। একটা সময় বেশ আড্ডা দিতাম। বেশির ভাগ দিনই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইবিএতে। নিজের থেকে বছর দশেকের ছোটদের সঙ্গে আড্ডা ভালো জমে।’ বন্ধুদের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘এ বয়সে আর বন্ধু থাকে না। কেউ কারও প্রকৃত বন্ধুও হয় না। তবে ছোটবেলার বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু। আমার শৈশব কেটেছে ইসলামাবাদে, সেখানকার কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই।’
ফেইসবুকে শৈশবের কবির নামে এক অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ হতো। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর ফেইসবুক আইডি হ্যাক হওয়ায় সেটাও বন্ধ এখন। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। এখন হাতে অনেক সময়। তার মনে হয়, বর্তমান প্রজন্ম নতজানু এক প্রজন্ম। সব সময় মাথা নত করে কী যেন দেখে! কী দেখে? সম্ভবত আত্মিক-মতাদর্শিক বিষয়েও তারা নত মস্তক।
হাসান মাসুদ বলেন, এখন ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ফোনে। তার লেখা বই একটাই উপন্যাস। সেটা বেরিয়েছে ২০১৬ সালে। শিরোনাম ‘একজন কনকের কথা’। লেখালেখি অনেক আছে, তবে পান্ডুলিপি করা হয়ে উঠছে না। সেনাজীবন নিয়ে একটি বই লিখবেন ভেবেছেন। কাজটা অনেকটা এগিয়েওছে।
তিনি যে অভিনেতা হবেন, ভাবনায় ছিল না। হঠাৎ করেই ১৯৯৫-এ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ দিয়ে অভিনয় শুরু। এই সিনেমায় তিনি ‘আজকে না হয় ভালোবাসো’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। তারপর নাটক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প অবলম্বনে প্রয়াত খালেদ খানের প্রযোজনায় একটা নাটক করেন তিনি। তাতে সহ-অভিনেত্রী ছিলেন দীপা খন্দকার। তারপর ফারুকীর ‘সিক্সটি নাইন’। নাটকের সংখ্যা এখন সঠিক বলতে পারেন না।
নাটক নিয়ে তিনি বললেন, ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার টেলিফিল্মটা আমার কাছে বিশেষ। সেটাতে যেমন কষ্ট করেছি, তেমনি মনেও দাগ কেটেছে। টানা ১০ দিন প্রচণ্ড গরমে ট্যাক্সিতে শ্যুটিং। মজার অনুভূতির কথা যদি বলতে হয়, সেটা সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় সান টু সান সিরিয়াল। কারণ সূর্য ডুবে গেলে আর কাজ হতো না।
এখন এত কাজ আর করেন না। মাসের ৮ থেকে ১০ দিন শ্যুটিং থাকে। এখন ওয়েব সিরিজ বেশি করছেন। অবসর সময়টা তিনি নেটফ্লিক্স দেখে কাটান। বেড়ানোর নেশা শৈশব থেকেই। সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার সপরিবারে ঘুরে এলেন গত সপ্তাহে। কুষ্টিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সব জেলাতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ফটোগ্রাফি তার একরকম নেশা। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের এমন জায়গা কমই আছে, যেখানে তিনি যাননি বা ছবি তোলেননি। হাসান মাসুদের পছন্দের খাবারের তালিকাটা বেশ বড়। চিকেন কর্ন স্যুপ, টম ইয়াম স্যুপ যেটাকে বাংলাদেশে থাই স্যুপ বলে, গরুর মাংস, চিংড়ি খেতে ভালো লাগে তার।
তিনি বলেন, ‘রান্না তো সবাইকে কমবেশি পাড়তে হয়। আমিও ভালো রাঁধি। তবে মাছ ভাজতে জানলেও রাঁধতে জানি না। মাছ রান্নায় মসলার হিসাবটা গোলমেলে হয়ে যায়। রান্নার হাতেখড়ি বিবিসিতে কাজ করতে গিয়ে লন্ডনে। তখন রোজই রাঁধতে হতো। ছুটির দিনে বাঙালি বন্ধুরা বাড়িতে খেতে চলে আসত।’
হাসান মাসুদ বলেন, ‘ক্রীড়া সাংবাদিকতা এখন অনেক দূর এগিয়েছে। খেলা নিয়ে অনেক কিছু হচ্ছে। ক্রিকেটে তো এখন থ্রি-সিক্সটি গেম। তবে আমার তো মনে হয় আজকালের অনেক সাংবাদিক এর ফিল্ড পজিশন বোঝেন না। আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করি আমি, উৎপল শুভ্র, মোস্তফা মামুন, সাইদুর রহমান, আমরা খেলা দেখে খেলার রিপোর্ট করতাম। এখন সেসব নেই।’
দেশের বাইরে তিনি শ্রীলঙ্কা দলের সাপোর্টার। ২০০৪ সালে ভারত ১৬ বছর পর পাকিস্তান গিয়েছিল খেলতে, ওই সিরিজ কভার করতে গিয়ে ৩৮ দিন ছিলেন। সংবাদ সংগ্রহের বাইরেও অনেক মজা করেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন। শৈশবের স্মৃতির জায়গাগুলো খুঁজেছেন।
অভিনয় কমিয়ে দেওয়ার অনেক কারণের একটা হলো বয়স। ভালো কনটেন্টের অভাবও আছে। দেশে ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার কম। তাই টেলিভিশনে কাজ কমিয়ে ওয়েবে সময় বেশি দিচ্ছেন। ফারুকীর লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান দিয়ে ওয়েবযাত্রা শুরু। চরকির জন্য অনিমেষ আইচের মাকাল করেছেন। অনিমেষের আরেকটি কাজ করবেন সান টু সান। আরও কটি সিরিজের পরিচালকের সঙ্গে কথা চলছে।
গান শখের বসেই শিখেছেন। ছায়ানট থেকে নজরুলসংগীতের ওপর পাঁচ বছরের কোর্সও করেছেন। ২০০৬ সালে অনেকটা ঝোঁকের বশে হৃদয়ঘটিত নামে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করেন। অবসরে বাসার সবাই মিলে গানের আড্ডা হয়। ফটোগ্রাফি যেহেতু নেশা, তাই এটা সব সময় করেন। নেচারের ফটোগ্রাফিই বেশি। বিশেষ করে প্রজাপতির। অনেক ধরনের প্রজাপতির ছবি আছে তার কাছে। তিনি বলেন, ‘যখন যেভাবে থাকি, সেই সময়টা সেভাবেই উপভোগ করি। আমি সময়কে উপভোগ করতে জানি।’
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তারা জানিয়েছে বাসাবাড়িতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হয়রানি করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী এখন বাড়িছাড়া। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকা বাদে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এ কর্মসূচির আগে গ্রেপ্তারকে উদ্দেশ্যমূলক বলছেন দলের শীর্ষ নেতারা। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবরে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না।’
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে বলেছেন, ইউনিয়নের পর থানা, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি আসবে। শেষ পর্যায়ে রাজধানীর ঢাকার দিকে পদযাত্রা হবে সারা দেশ থেকে।
রাজধানীর ঢাকার নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পদযাত্রা কর্মসূচি হচ্ছে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে। কিন্তু ঢাকার নেতাকর্মীদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে সাদা পোশাকের পুলিশ। এ ছাড়া জুরাইন কবরস্থানে এক জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে সেখান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনসমর্থন হারিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি শূন্য হয়ে গেছে। পথ হারিয়ে তারা এখন বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। তাতে মানুষের অংশগ্রহণ না থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে গোলাম মাওলা শাহীনকে গ্রেপ্তারের খবরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন রাজধানী ঢাকার বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার আতঙ্কে গত দুই মাস যাবৎ নিজ বাসায় থাকছি না। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এভাবে কতদিন পালিয়ে বেড়াতে হবে তা বুঝতে পারছি না। কর্মসূচি এলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, বাসাবাড়িতে হানা দেয়, নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না। এ সময় যুবদল নেতা গোলাম মাওলা শাহীন ও ইখতিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তারেক রহমানকে অবহিত করেন। তিনি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কার্যালয়ে গেলে গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আতঙ্কে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় কার্যালয়ে স্টাফ ছাড়া কেউ নেই। অফিস স্টাফ শামীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দপ্তরসংশ্লিষ্ট কেউ কার্যালয়ে আসেননি। বাদ আসর যুবদলের সাবেক সহসভাপতির জানাজা আছে তখন নেতাকর্মীরা আসতে পারেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের কর্মসূচি এলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করে। কর্মসূচির আগে ও পরে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেড়েছে মামলা গ্রেপ্তার। নতুন-পুরনো মামলায় সারা দেশ থেকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তারের খবর আসছে। জামিন নিতে তাদের ছুটতে হচ্ছে আদালতে, সময় কাটছে আদালতের বারান্দায়। আবার অনেকেই গ্রেপ্তার ও হয়রানি আতঙ্কে ঘরছাড়া, গ্রামছাড়া।’
গ্যাস, বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকা বাদে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। তবে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা করবে। আগামীকাল রবিবার রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
সাবেক এমপি, মন্ত্রীরা নিজ নিজ এলাকার ইউনিয়ন পদযাত্রা করবেন : দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রা সফল করতে কিছু জেলা ও বিভাগে জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি লক্ষ্মীপুরে জেলা নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান নোয়াখালীতে পদযাত্রা করবেন।
শরিকরা যে যেখানে থাকবেন : যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বাঁশতলা ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। পদযাত্রাটি নতুনবাজার (বাঁশতলা) থেকে শুরু হয়ে বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি। গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত ১৪ দফা দাবিতে প্রতিবাদী পদযাত্রা করবে। মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশের নেতারা রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা করবেন না। তবে ঢাকার বাইরে তারা পদযাত্রা করবেন।
স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কের ১০টি অঞ্চলে মারা গেছে ১৯ হাজার ৮৭৫ জন। আর সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৩৭৭ জনের। ভূমিকম্পের পঞ্চম দিনেও উদ্ধারকাজের অনেক বাকি। এখনো ধসে পড়া অনেক ভবনে শুরু হয়নি উদ্ধার তৎপরতা। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সময় যত যাবে, মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়বে। শেষ অবধি এ সংখ্যা কোথায় থামবে তার কোনো ধারণাও তাদের নেই। এ মধ্যে তীব্র ঠান্ডা, বৃষ্টি, যোগাযোগে বিপর্যয়সহ নানা সমস্যায় উদ্ধার ব্যাহত হওয়ায় ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হয়ে আসছে। আশ্রয়, খাবার, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের অভাবে উপদ্রুত এলাকাগুলোর বেঁচে থাকা মানুষেরা রয়েছে প্রাণ সংশয়ে। তবে ১১০ ঘণ্টা পরও গতকাল শুক্রবার দুই দেশেই কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো কোথাও কোথাও প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। ঠান্ডায় জমে যাওয়া আবহাওয়ার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কিংবা গাড়ির ভেতরে তৃতীয় রাত পার করেছে তুরস্ক এবং সিরিয়ার বহু মানুষ। ভূমিকম্পে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে কিংবা হেলে পড়েছে। সেখানে আর ফিরে যাওয়ার সাহস নেই কারও।
গৃহহীন হওয়া লাখো মানুষ সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। পাঁচ দিন ধরে উদ্ধারকর্মীরা যেমন দুর্গতদের বাঁচানোর লড়াই করে যাচ্ছেন, তেমনি বেঁচে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে বেঁচে যাওয়াদেরও।
আলজাজিরা বলছে, তুরস্কের প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির কর্তৃৃপক্ষ ধ্বংসস্তূপ থেকে আট হাজার জনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় চার লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে সরিয়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, হোটেলসহ পরিচিতজনদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তুর্কিয়ে সরকারের। তবে রয়টার্স, বিবিসিসহ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, দুর্গত এলাকার মানুষ চার দিন পরেও উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। রয়টার্স বলছে, ভূমিকম্পের পর জরুরি পরিষেবাগুলো সাড়া দিতে অনেক দেরি করেছে, এমন অভিযোগকে ঘিরে তুরস্কে অসন্তোষ বাড়ছে। কিছু এলাকায় লোকজন দুদিন অপেক্ষা করার পরও জরুরি পরিষেবার দেখা পায়নি।
গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রায় ৯০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক নবজাতক ও তার মাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দশ দিন বয়সী এই শিশুর নাম ইয়াগিজ। দক্ষিণাঞ্চলীয় হতাই প্রদেশের একটি বিধ্বস্ত ভবন থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে নবজাতকটিকে সাবধানে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। কম্বলে মুড়িয়ে চিকিৎসার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় তুর্কিয়ে সংবাদমাধ্যম এ ঘটনাকে অলৌকিক হিসেবে তুলে ধরেছে।
ভূমিকম্পের ১০১ ঘণ্টা পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে একই পরিবারের ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল ইস্কেন্দেরুনের ধসে পড়া একটি ভবনের নিচে ৬ জনকে একসঙ্গে জীবিত পাওয়া যায়। তাদের সন্ধান পেয়ে অন্য উদ্ধারকর্মীরাও ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তুর্কিয়ে কর্র্তৃপক্ষ।
আর তুরস্কের প্রতিবেশী সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল। এর মধ্যে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আর অন্য অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারকাজে সমন্বয়েও সমস্যা হচ্ছে। তবে চতুর্থ দিন ত্রাণের প্রথম বহর সিরিয়ায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তারা জানান, তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে ছয়টি লরি ইদলিবের বাব আল-হাওয়া সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
সিরিয়ায়ও বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক লাশ যেমন উদ্ধার করা হচ্ছে, তেমনি জীবিতদেরও। তবে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কে উৎফুল্ল হওয়ার মতো উদ্ধারের কিছু ঘটনা ঘটলেও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমেই আশাহীন হয়ে উঠছে।
ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়াদের বের করে আনতে উদ্ধারকারীদের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে, কিন্তু ভূমিকম্পের পর থেকে প্রায় ১০০ ঘণ্টা পার হওয়ায় জীবিতদের উদ্ধারের আশা ক্রমেই মিইয়ে যাচ্ছে।
গত সোমবারের ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের সরকারি হিসাবে, দেশটিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। আর সিরিয়ায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক এল-মোস্তাফা বেনলামিল জানিয়েছেন, দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ।
এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি ত্রাণের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮৯০ কোটি টাকার (সাড়ে ৮ কোটি ডলার) প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসে। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) পক্ষ থেকে বলা হয়, লাখো মানুষকে জরুরি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে এ তহবিল মাঠপর্যায়ের অংশীদারদের কাছে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবাদাতা খাতের বিভিন্ন অংশীদার। এ ছাড়া খাদ্য, আশ্রয় এবং জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবায় এ তহবিল ব্যয় হবে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায় দ্রুত সহায়তা পাঠায়। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভূমিকম্পের পরপরই সহায়তার হাত বাড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ১৯টি দেশ থেকে ২৭টি উদ্ধার ও অনুসন্ধান দল গঠন করে পাঠানো হয়। এ দলে ১ হাজার ১৫০ জন সদস্য ও ৭০টি কুকুর পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার তুরস্কে পৌঁছে যায় চীনের উদ্ধারকারী দল। এ ছাড়া চীনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৬২ কোটি টাকা (৫৯ মিলিয়ন ডলার) পাঠানো হয়। দেশটির পাঠানো উদ্ধারকারী দলে চিকিৎসকও রয়েছেন। দেশটির পক্ষ থেকে সিরিয়ায়ও সহায়তা পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তার দেশ থেকে ৭৭ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞ নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে তুরস্কের গাজিয়ানতেপে কাজ করছেন। তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজে সাড়া দেওয়া আরেকটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দুই দেশেই উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ায় ৩০০ সেনা উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘের দল মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশ, ভারত, ইউক্রেন, জার্মানি, গ্রিস, ইসরায়েল, ইরান, জাপান, নরওয়ে, স্পেনের মতো দেশও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্ককে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। তুরস্কে ১০ হাজার ভ্রাম্যমাণ বাড়ি পাঠাচ্ছে কাতার। এ ছাড়া একটি ফিল্ড হাসপাতালের সরঞ্জাম এবং মানবিক সহায়তাও পাঠাচ্ছে কাতার। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা সিরিয়া ও তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় কাতারের প্রচেষ্টার অংশ।
সিরিয়ার সেই শিশুকে দত্তক চান অনেকেই : ভূমিকম্পে ধসে পড়া সিরিয়ার একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে জন্ম নেওয়া এক শিশুকন্যাকে দত্তক নিতে চাইছে হাজার হাজার মানুষ। বিবিসি জানিয়েছে, ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে উদ্ধার করা শিশুটির নাম রাখা হয়েছে আয়া (আরবিতে যার অর্থ অলৌকিক)। উদ্ধারের সময়ও তার নাড়ি মায়ের সঙ্গে জোড়া লাগানো অবস্থাতেই ছিল। আয়াকে জীবিত পাওয়া গেলেও ভূমিকম্প তার মা, বাবা এবং চার ভাইবোনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
আয়াকে উদ্ধারের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ফুটেজে দেখা যায়, একটি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক ব্যক্তি ধুলায় আচ্ছাদিত এক শিশুকে কোলে নিয়ে ছুটছেন। জঞ্জাল থেকে আয়াকে উদ্ধার করার সময় তার দূরসম্পর্কীয় এক আত্মীয়, খলিল আল-সুওয়াদি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনিই সদ্যোজাত শিশুটিকে সিরীয় শহর আফরিনে ডা. মারুফের কাছে নিয়ে যান।
বিবিসি বলছে, সদ্যোজাত শিশুটি হাসপাতালে আছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হানি মারুফ বলেন, সোমবার সে খুবই খারাপ অবস্থায় (পৃথিবীতে) এসেছিল, তার গায়ে কাটাছেঁড়া ছিল; শরীর ঠাণ্ডা ছিল, শ্বাস ঠিকভাবে নিতে পারছিল না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ এখন শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক খালিদ আতিয়াহ জানান, এরই মধ্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক ডজন ফোন পেয়েছেন, যারা শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী। কুয়েতের এক টিভি উপস্থাপক বলেছেন, ‘আমি শিশুটির দেখাশোনা করতে ও তাকে দত্তক নিতে প্রস্তুত, যদি আইনি প্রক্রিয়া আমাকে সেই সুযোগ দেয়।’
তবে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক আতিয়াহ বলেছেন, ‘যতক্ষণ তার পরিবারের দূরসম্পর্কীয় সদস্যরা না ফিরছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কাউকেই মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার অনুমতি দিতে পারি না। আমি তাকে আমার সন্তানের মতোই দেখছি।’ তিনি জানান, তার চার মাসের এক সন্তান আছে। তাদের মেয়ের পাশাপাশি আয়াকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তার স্ত্রী।
আয়ার শহর জিনদারিসের লোকজন এখনো ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে প্রিয়জনদের সন্ধান করে যাচ্ছেন। সেখানকার সাংবাদিক মোহাম্মেদ আল-আদনান বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ আছে। এমন অনেকেই আছেন, যাদের কাছে আমরা এখনো পৌঁছাতেই পারিনি।’ জিনদারিসের ৯০ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অনুমান তার।
পড়ালেখা করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। কিন্তু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ফটোকপি দিয়ে চাকরি করছেন। চাকরির আবেদনপত্রে যে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন সেটাও মিথ্যা। পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এমন প্রতিবেদন দিলেও তিনি চাকরিতে বহাল। এই ব্যক্তি হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট মাইনুল আহমেদ। বর্তমানে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত। তার কর্মী নম্বর-৫৩০২৭।
মাইনুলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কথা বলছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, বড় অঙ্কের উৎকোচের মাধ্যমে ওই পদে চাকরি নিয়েছেন মাইনুল। ফলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি মাইনুলের পক্ষে দেওয়ার জোর তদবিরও ছিল বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তার। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরের অক্টোবর মাসে সঠিক প্রতিবেদনই দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এর পরও মাইনুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাইনুল সেদিনও কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাল সনদপত্রে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ পাওয়ার পরও কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।’
জাল সনদে চাকরির বিষয়ে জানতে গত ৩০ জানুয়ারি মাইনুল আহমেদকে ফোন করলে, তিনি এ প্রতিবেদকের প্রশ্ন শোনার পর কোনো মন্তব্য করবেন না বলেই ঠাস করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তাকে একাধিকবার ফোন করলেও আর রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপক (গ্রাউন্ড সার্ভিসেস) গোলাম সারওয়ার এবং মহাব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশনস) তাহেরা খন্দকারসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করলে তারা ফোন ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও তারা কোনো সাড়া দেননি।
উপ-ব্যবস্থাপক (গ্রাউন্ড সার্ভিস) তন্ময় কান্তি বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সনদপত্র জালের বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম।’ তিনি বলেন, ‘এখানে শিফ্টভিত্তিক অনেকেই চাকরি করেন। মাইনুল নামের কাউকে নাম শুনে চিনতে পারছি না।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাঁদপুর সদরের জি টি রোড দক্ষিণের বাসিন্দা এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে মাইনুল আহমেদ। তিনি ২০০৭ সালে চাঁদপুরের আমিন একাডেমি থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৯ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০১০ সালে ভর্তি হন ঢাকার ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউবিটি) ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (বিবিএ)। কিন্তু সেখানে পড়ালেখা শেষ করেননি। বিমানের ১১তম গ্রেডের ‘গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট’ পদে চাকরির আবেদনপত্রে নিজেকে বিইউবিটি থেকে চার বছর মেয়াদি বিবিএ পাস বলে উল্লেখ করেন। আবেদনপত্রে বিবিএতে সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.১০ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে গত বছরের ১২ জুন চাকরিতে যোগদানের আগে অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে বিইউবিটি থেকে বিবিএ পাসের একটি সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দেন মাইনুল। চাকরির আবেদনপত্রে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন খালেক সিটির বি-২৭/এ নম্বর বাসার ঠিকানা।
পরবর্তী সময়ে নিয়ম অনুযায়ী মাইনুলের চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি বা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আছে কি না তা যাচাইয়ে পুলিশকে অনুরোধ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে মাইনুলের বিবিএ জাল সনদের তথ্য পায় পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
এ বিষয়ে ওই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর কাছে মাইনুলের সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিইউবিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ বি মো. বদরুদ্দোজা মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ‘মাইনুল আহমেদের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট (সাময়িক সনদপত্র) এবং ট্রান্সক্রিপ্টের (নম্বরপত্র) ফটোকপি সম্পূর্ণ ভুয়া। বিইউবিটি থেকে এ ধরনের কোনো কাগজপত্রাদি দেওয়া হয়নি।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোপনে, প্রকাশ্যে ও স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করে প্রার্থীর (মাইনুল আহমেদ) বিরুদ্ধে বিরূপ তথ্য পাওয়া গেল যে তিনি ভুয়া সনদপত্র দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডে গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি করে আসছেন। তার ২০১৪ সালের বিবিএ পাসের সনদ যাচাইয়ের জন্য বিইউবিটিতে (ইউনিভার্সিটি) সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তদন্তকালে তার বিবিএ পাসের শিক্ষা সনদ নকল বলে কন্ট্রোলার প্রত্যয়নপত্র দেন।
এ ছাড়া প্রার্থীর বর্তমান ঠিকানা বি-২৭/এ, খালেক সিটি, থানা- দারুস সালাম, ঢাকা- স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে পুলিশের তদন্ত ফরমে (ডিআরে) উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা নয়। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানার ফ্ল্যাটটি তার ভগ্নিপতি মো. রাশেদুল হাসান চৌধুরীর। তার স্থায়ী ঠিকানা মূলত চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ বিষ্ণুদি এলাকার জিটি রোডের হোল্ডিং নম্বর-৩২৪।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী সড়ক অবরোধ করা হয়। সোয়া ৩টার দিকে ঢাকাগামী অপর সড়কটিও অবরোধ করা হয়। এর আগে পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ তিন দাবি জানান। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো শামসুজ্জামান শামস ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে শামস ভাইকে মুক্ত করতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তির আগ পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখব। শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন, তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাই এর নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, তা নাহলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের খবরে সেখানে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ প্রশাসনসংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
সুপারস্টার শাকিব খানের জন্মদিন ছিল ২৮ মার্চ। বিশেষ দিনটিতে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছায় সিক্ত হন নায়ক। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান তাকে।
বিশেষ ওই দিনটি ঘরোয়া আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন তিনি। পরিবারের সদস্য এবং দুই ছেলে আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীরের সঙ্গে কেক কাটেন তিনি। সমাজমাধ্যম ছড়িয়ে আছে সেসব ছবি।
অভিনেতার জন্মদিনে ছেলে বীরকে নিয়ে শাকিবের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন বুবলী। তারই একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন বুবলী।
নায়িকা ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখেন—'বাবার জন্মদিনে যখন বাবা ছেলের দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি।' এর পরই জুড়ে দেন একটি রেড হার্ট ইমো।
বুবলীর পোস্ট করা নজরকাড়া ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখবার দেখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্তব্য পড়েছে প্রায় তিন হাজার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।