
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদী হয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাচালান রোধ ও কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ এক উদ্যোগ নিয়েছে। নদীতীরে ও তলদেশে বিশেষ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। পুলিশের বিশেষ একটি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি বাহিনী গোপনীয়ভাবে স্থাপন করা ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে ঢাকা থেকে সীমান্ত মনিটর করবে। পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে; বিশেষ করে ইয়াবা কারবারিদের প্রতিরোধ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকেই ইয়াবার চালান সবচেয়ে বেশি আসছে। নাফ নদীতে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। এই নদী দিয়ে ইয়াবার চালান যাতে দেশে আসতে না পারে, সে জন্য আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ মাদক চোরাকারবারিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯টি ইয়াবা আটক করা হয়। মাদক কারবারিদের যারা সহায়তা করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড।’
নাফ নদী হয়ে প্রায় প্রতিদিন দেদার আসছে ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় বড় চালান। নানা পরিকল্পনা নিয়েও ইয়াবা চোরাকারবার ঠেকানো যাচ্ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা প্রায়ই চালান আটক করছেন। ইয়াবা কারবারিরাও ধরা পড়ছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের একাধিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কারবারিদের এ অবৈধ কারবারে সহায়তা করছেন কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যরা। তাদের তালিকাও করা হচ্ছে বারবার। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও বড় চোরাকারবারি হিসেবে পরিচিত কিছু লোক আত্মসমর্পণ করলেও মাদক কারবার বন্ধ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমার থেকে টেকনাফে ইয়াবা আনতে কোনো বিনিয়োগ লাগছে না। নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ইয়াবা নিরাপদে পৌঁছানোর পর মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের টাকা পরিশোধ করা হয়। বাহকের কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা জমা দিয়ে নিজের ভাগের টাকা নিয়ে নেওয়া। ফলে মিয়ানমার থেকে পাঠানো ইয়াবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও উদ্ধারের সংখ্যা খুবই কম। নাফ নদী দিয়েই আসছে বেশি চালান। দিনে দিনে চালানের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গোয়েন্দা ইউনিটগুলো নাফ নদী এলাকায় বিশেষ অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, নতুন কারবারিদের পাশাপাশি পুরনোরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারাও ইয়াবার কারবার করছে। টেকনাফের আলিয়াবাদের আমিনুর রহমান, পশ্চিম লেদারের নুরুল হুদা মেম্বার, উত্তর লেঙ্গুর বিলের দিদার মিয়া, মুন্ডারডেইলের শাহেদ রহমান নিপু, মধ্য জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জোবায়ের হোসেন, কুলালপাড়ার নুরুল বছর, কাউন্সিলর ওরফে নুরসাদ, শিলবুনিয়াপাড়ার কামরুল হাসান, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, একই এলাকার নুরুল আমিন, চৌধুরীপাড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, একই এলাকার ফয়সাল রহমান, নাজিরপাড়ার এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, আলিরডেইলের শাহেদ কামাল, সাবরাংয়ের মৌলভী বছির আহম্মদ, পুরনো কল্যাণপাড়ার শাহ আলম, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, রাসেল প্রমুখ নাফ নদী দিয়ে নিয়মিত চালান নিয়ে আসছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ইয়াবার চালান প্রতিরোধে নাফের তীর ও তলদেশে বিশেষ ক্যামেরা বসানোর কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু হবে। ক্যামেরাগুলো ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে। কারা নদী দিয়ে আসা-যাওয়া করছে, সেই চিত্র ফুটে উঠবে ক্যামেরার মনিটরে। আর এগুলো মনিটরিং করবে পুলিশের একটি সংস্থা ও একটি বাহিনী।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। আর নাফের প্রস্থ ১ হাজার ৩৬৪ মিটার। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত এই নদীর পাড়ে অন্তত সাত হাজার মানুষের বসবাস। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এ নদী হয়ে প্রবেশ শুরু করে মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞের শিকার রোহিঙ্গারা। মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণ দেখিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও নাফ নদী এলাকায় প্রতিদিন ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে এক বছরে এ নদী দিয়ে পাচার হয়ে আসা ৯০০ কোটি টাকার বেশি ইয়াবা ও আরেক মাদকদ্রব্য আইস উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে ২ হাজার ৩১০টি মামলায় ৩ হাজার ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে টেকনাফে ২৮৫ কোটি টাকার মাদক, স্বর্ণ ও বিভিন্ন চোরাই পণ্য জব্দ হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নাফ নদীকেন্দ্রিক চোরাকারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশে ৯০ শতাংশ মাদক কারবারি ও সেবনকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে চোরাকারবারিদের সহায়তা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য। আর এ কারণে তারা নাফের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্যামেরাগুলো এমনভাবে বসানো হবে কেউ বুঝতেই পারবে না সেখানে কিছু একটা আছে। এ জন্য একটি বাজেটও ধরা হয়েছে। অন্তত ২০০ ক্যামেরা কেনা হবে।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, মিয়ানমারসহ গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় ইয়াবা তৈরির হাজারের বেশি কারখানা আছে। এসব কারখানা থেকে ইয়াবার চালান আসছে বাংলাদেশে। আর নাফ হয়ে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াক্যাং, উখিয়া বালুখালী, পালংখালী, রাজাপালং ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ইয়াবার চালান আনার পর কারবারিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। মিয়ানমারের পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনের (এমপিটি) সিম দিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কথা বলা যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এমপিটির রোমিং সুবিধা রয়েছে। এমপিটির কার্যক্রম রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।
গত ১৪ বছর ধরে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি আত্মস্থ করছিল শিক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষা ও মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে এ বছর তিনটি শ্রেণিতে (প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম) চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে গিয়ে বড় বিপদে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে দুটি বই প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। আরও তিনটি বইয়ে বড় ধরনের সংশোধন আসছে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
এছাড়া অন্য প্রায় সব বইয়েই আছে নানা ধরনের ভুলত্রুটি। ফলে নতুন বছরের দেড় মাস পার হতে চললেও কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হলেও তার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে সে ধারাবাহিকতা নেই। আগে নবম-দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হতো তার অনেক কিছুই ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে ঢোকানো হয়েছে। শিক্ষকদের যে পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাও যথেষ্ট নয়। নতুন শিক্ষাক্রমের যে পাইলটিং হয়েছে, তাও যথাযথ ছিল না। ছিল না প্রয়োজনীয় সমীক্ষা। এসবের ঘাটতি হয়েছিল তা নানা ধরনের গলদ ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে এখন সামনে আসছে।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি পড়েছি। সেখানে আমি ১৫ থেকে ১৬টি জায়গায় ইতিহাসের ভুল পেয়েছি। মহাস্থানগড়ে যখন মানব বসতি গড়ে ওঠার কথা বলা হয়েছে, এর অন্তত এক হাজার বছর আগে সেখানে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। এটা চরম ভুল। এ ধরনের অসংখ্য ভুল আছে। আমি বলব, নতুন শিক্ষাক্রমের মতো বড় এই কাজ খুবই কাঁচা হাতে করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।’
অধ্যাপক শাহনাওয়াজ আরও বলেন, ‘কারিকুলামে কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই যেটা ভাবা উচিত, সেটা হচ্ছে কোন বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য কী দিতে হবে? ষষ্ঠ শ্রেণির বইতে ৪৫ পৃষ্ঠাজুড়ে যে ইতিহাসের বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো তো এত ডিটেইল দেওয়া ঠিক হয়নি। এটা ধাপে ধাপে দিতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে, ধারণ করতে পারে। কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হয়েছে বদহজমের মতো।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের বইতে বিস্তর ভুল আছে। যাদের দিয়ে ভুল সংশোধনের কমিটি করা হয়েছে, তারাও এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কি না সেটাও ভেবে দেখা দরকার।’
নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান’ বিষয়ে দুটি করে বই আছে। এর এক অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অনুশীলন বই’ ও অপর অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। গত শুক্রবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক বিজ্ঞপ্তিতে, দুটি শ্রেণিতেই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আর দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন বই’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানীপাঠ’ বইয়ের কিছু অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে বলে জানানো হয়।
জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা এ বছর আর দেওয়া হবে না। কারণ ওই বই দুটির দুটি অংশ ছিল। এখন যে অংশটি রয়েছে তা দিয়েই বিষয়টি কাভার হবে। শিক্ষার্থীদের শিখনে কোনো সমস্যা হবে না বলেই বই দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’
অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের অনুশীলন বইয়ে আমরা নানা বিশ্বের নানা সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরেছি। এসব ইতিহাসকে প্রদর্শন করতে গিয়ে ‘অনুসন্ধানী পাঠে’ মিসরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো এসেছে, প্রাচীন দেব-দেবী নিয়ে কথা এসেছে, তাদের সংস্কৃতির নানা ছবি ব্যবহার হয়েছে। যদি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য প্রাচীন সভ্যতার বিষয়টি কঠিন হয়ে যায়, তাহলে তা আমরা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ওপরের শ্রেণিতে নিয়ে যাব।’
একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে বিবর্তনবাদ ছিল একাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ে। এবার এটা ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া ‘মিসরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো ছিল নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য। কিন্তু এখন তা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ইতিহাস নিয়ে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে সেভাবে নেই।
এতদিন বইগুলোতে মানব অঙ্গের তেমন কোনো বর্ণনাই ছিল না। এমনকি ওপরের শ্রেণিতেও নয়। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ্যবইয়ে ১১তম অধ্যায়ে ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে নানা অঙ্গের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অনেকেই। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ ও ৫২ পৃষ্ঠাতে ট্রান্সজেন্ডার বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠাতে বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসন নিয়ে যা লেখা হয়েছে, তা ষষ্ঠ শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য বোঝা কঠিন বলে মনে করছেন অনেকেই।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে আগ্রহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, বই দুটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাতে বড় ধরনের ছেদ পড়ল। এখন যেগুলো সংশোধন হবে সেগুলোও আপাতত পড়ানোর সুযোগ নেই। বাকি বইগুলোর ওপরও একটা আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলাম।’
সূত্র জানায়, সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মাত্র ৬২টি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন বইয়ের পাইলটিং করা হয়। একটি পদ্ধতি চালুর আগে যা কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই পাইলটিং শুরু হয়। আর মে মাসে ফিডব্যাক নেওয়া হয়। ফলে মাত্র চারমাসে যথাযথ ফিডব্যাক পাওয়া যায়নি। আর তাড়াহুড়ো করে সংশোধন বা পরিমার্জনও যথাযথ হয়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রাথমিকেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু গত বছর প্রাথমিকে নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো পাইলটিং না হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ঝুঁকি নেয়নি। তারা দ্বিতীয় শ্রেণি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে। মাধ্যমিকের পাইলটিংও যথাযথ না হওয়ায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাংশ এ বছর শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের যুক্তি, একটি শ্রেণির বই হলে আরও কিছুটা ভুলত্রুটি কম হতো। কিন্তু সে প্রস্তাবে কোনোভাবেই রাজি হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাইলটিং শুরু করে, মে মাসেই ফিডব্যাক নিয়েছি। সে অনুযায়ী পরিমার্জনও করেছি। কিন্তু যদি সারা বছরের ফিডব্যাক নিতাম, তাহলে হয়তো ভিন্ন ফল পাওয়া যেত। আর সারা পৃথিবীর যেখানেই কারিকুলামের পরিবর্তন হয়েছে, সেখানেই প্রথমবারই যে সঠিকটা গেছে সে নজির নেই।’
যদিও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসংগতি, ভুল বা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটির মতামতের আগেই দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। এছাড়া ভুলত্রুটির জন্য দায়ীদের খুুঁজে বের করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু বই প্রত্যাহার হলেও ভুলত্রুটির দায় নিচ্ছে না কেউ।
জানা যায়, এনসিটিবির পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরই ঠিক করা লেখক প্যানেল একটি বই লেখেন। এ বছরের লেখক প্যানেলে বেশিরভাগই ছিলেন নতুন লেখক। আগের বইগুলো যারা লিখেছেন, তাদের বেশিরভাগকেই ডাকা হয়নি। প্রতিটি বইয়ের জন্যই এক বা একাধিক সম্পাদক থাকেন এবং এনসিটিবির একজন বিশেষজ্ঞ পুরো কাজ তত্ত্বাবধান করেন। বানান ও বাক্যের অসংগতির জন্যও এনসিটিবির পৃথক জনবল রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রতিটি বইয়ের জন্য বড় একটি টিম কাজ করে। ইতিমধ্যে শুধুমাত্র সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ভুলের দায় স্বীকার করেছেন ওই বইটির সম্পাদক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান।
অ্যাথলেটিকসে কোনো বাংলাদেশি স্প্রিন্টার স্বর্ণ জিতবেন তা এতদিন ছিল কল্পনার অতীত। কাল তা সত্যি করে দেখালেন ইমরানুর রহমান। লন্ডন প্রবাসী এই স্প্রিন্টার আগে থেকেই ছিলেন দেশের দ্রুততম মানব। কাল নিজের গতির প্রমাণ রেখে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে শ্রেষ্ঠত্ব দেখালেন। ইভেন্টে ৬.৫৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছেন তিনি। ৬০ মিটার স্প্রিন্টে এটাই ইমরানুরের সেরা টাইমিং। এতে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়শিপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেশকে সোনা জয়ের ইতিহাস এনে দিলেন। ৬.৬৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্বিতীয় হন হংকংয়ের শাক কাম চিং। তৃতীয় হওয়া জাপানের রয়োটা সুজুকির টাইমিং ৬.৬৬ সেকেন্ড। কাজাখস্তানের ট্র্যাকে ইমরানুর হিটেও আলো ছড়ান। প্রথম দৌড় শেষ করেন ৬.৭০ সেকেন্ডে। সেমিফাইনালে দ্বিতীয় হন ৬.৬১ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে। কাতারের প্রতিযোগীর কাছে ফটো ফিনিশিংয়ে হেরে দ্বিতীয় হন ইমরানুর। কিন্তু ফাইনাল দৌড়ে তাকে আর ছুঁতে পারেননি কেউ, সেরা টাইমিংয়েই দৌড় শেষ করেন। গত বছর এই ইভেন্টে সার্বিয়ার বেলগ্রেডে ৬ দশমিক ৬৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেছিলেন ইমরানুর। এই ইভেন্টের মেয়েদের বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন শিরিন আক্তার। তবে হিট থেকেই ছিটকে যান তিনি। দৌড় শেষ করেন ৭.৯৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে।
গত বছর জানুয়ারিতে প্রথমবার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে খেলেই রেকর্ড গড়ে সেরা হয়েছিলেন লন্ডন প্রবাসী ইমরানুর। তখন থেকেই বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হয়ে যান তিনি। ওই প্রতিযোগিতায় ২১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙেছিলেন। হারিয়েছিলেন চারবারের দ্রুততম মানব মোহাম্মদ ইসমাইলকে। ইলেকট্রনিক বোর্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট ইমরানুরের টাইমিং তখন ছিল ১০.৫০ সেকেন্ড। ইলেকট্রনিক বোর্ডে সেটাই ছিল তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেটের সেরা টাইমিং। এর আগে ১৯৯৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রয়াত মাহবুব আলমের গড়া ১০.৫৪ সেকেন্ড ছিল সর্বশেষ দেশের কোনো অ্যাথলেটের রেকর্ড টাইমিং। এরপর সেপ্টেম্বরে নিজের ১০.৫০ এর রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় ওঠেন ইমরানুর। ১৬তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়েছিলেন ১০.২৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। যা নতুন জাতীয় রেকর্ড হয় এবং ইমরানুরের সেরা টাইমিং। কোনো ইলেকট্রনিক বোর্ডে কোনো বাংলাদেশি স্প্রিন্টারেরও সেরা টাইমিং ছিল তা। এরপর ডিসেম্বরে ৪৬তম বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরার খেতাব ধরে রেখেছিলেন এই স্প্রিন্টার। ১০.৪৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন। যদিও ভ্রমণক্লান্তির জন্য নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারেননি বলে জানিয়েছিলেন ইমরানুর।
দেশের অ্যাথলেটিকসের নতুন এই ভরসা ২০২২ এ জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নিতে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার আগেই সেরা স্প্রিন্টার হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে ১৬-১৭ বছর বয়সে অ্যাথলেটিকসে নাম লেখান। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি ইনডোর অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হয়েছিলেন।
নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার দেশজুড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিরোধী দল বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির এই কর্মসূচির বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও গতকাল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। সবমিলিয়ে দু’দলই এদিন রাজপথে শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
তবে শান্তি-সমাবেশে বিএনপি অতর্কিত হামলা চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকালের সংঘাতে দল দুটির নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দলীয় কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি জায়গায় শটগানের গুলি ও টিয়ার গ্যাস শেল ছোড়ে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের বেশ কয়েক নেতাকর্মীকে।
সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে। জামালপুরের কয়েক জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির কমপক্ষে ৪০ নেতাকর্মী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে শান্তি-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এ ছাড়া ১৩টি মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিস্তারিত প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে:
জামালপুরে পদযাত্রায় আ.লীগের হামলা: সারা দেশের মতো গতকাল সকালে জেলার সাতটি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচি পালনকালে সদর উপজেলার তিতপল্লা, ঘোড়াধাপ, দিগপাইত ও বাঁশচড়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়। এসব হামলায় দলটির কমপক্ষে ৪০ নেতাকর্মী আহত হন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন অভিযোগ করে বলেন, তাদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পুলিশ তিতপল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ শান্তি সমাবেশে হামলা চালিয়েছে বিএনপি। মূল ঘটনা হচ্ছে এটা। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা বলতেছে, ওদের পদযাত্রায় আমরা হামলা করেছি।’
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমাবেশে বিএনপি হামলা করে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩৪ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ৪ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।’
সিরাজগঞ্জে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ: সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া বাজার এলাকায় সকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশ শুরু করে। এর পাশ দিয়ে বিএনপির পদযাত্রা যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ১৩টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বেশকিছু দোকানে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সদর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
আড়াইহাজারে বিএনপি-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি ও পুলিশ সদস্যদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাচরুখী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাসুম শিকারীর দাবি, তাদের পদযাত্রায় পুলিশ হামলা চালানোর পাশাপাশি গুলি ছোড়ে। তবে আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদারের দাবি, তারা শুধু মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনার সময় পুলিশ ৪০ রাউন্ড গুলি ও ৩টি টিয়ার শেল ছোড়ে।
নাটোরে শান্তি সমাবেশ থেকে পদযাত্রায় হামলা: গতকাল বেলা ১১টায় সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি চলাকালে রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম বাজারে লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির দুই নেতা আহত হন। এ ছাড়া চৌগ্রাম ইউনিয়নে হামলা ৭ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে বিএনপির পদযাত্রায় হামলা হয়েছে।
লালমনিরহাটে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ: জেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় দলের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ও বিএনপির দলীয় কার্যালয়। আর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রার প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিএনপির ছয় কর্মী আহত হন।
যশোরে পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জ: যশোরে পদযাত্রায় লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। বিকেল ৩টার দিকে সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বাউলিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অভিযোগ করে বলেন, পেছন থেকে হামলা করে পুলিশ। কোনো কারণ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
টাঙ্গাইলের বিএনপির লাঠি মিছিল, গ্রেপ্তার ২: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে লাঠি মিছিল করেছে বিএনপি। কর্মসূচি পালনকালে করটিয়া ইউনিয়নে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় করটিয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সৈয়দ জাদিদুল হক জাদিদ, মাসুদ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন। এ ছাড়াও শুক্রবার রাতে সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক জিএস সৈয়দ বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান তিনি।
শ্রীপুরে পদযাত্রার মিছিলে ছাত্রদল কর্মীর হাতে পিস্তল: গাজীপুরের শ্রীপুরে বিএনপির পদযাত্রা থেকে পিস্তল উঁচিয়ে এক ছাত্রদল কর্মী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয় দেখিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরমী ইউনিয়নের পদযাত্রায় এ ঘটনা ঘটে। মিছিলে পিস্তল উঁচিয়ে তাক করা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিএনপি নেতারা বলেন, বহু আগের ছবি সামনে এনে তাদের ওপর হামলার বিষয়টি আড়াল করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন। বরং বিএনপির পদযাত্রায় হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহ হয়েছে। পিস্তল হাতে ছবি ছড়িয়ে পড়া ওই যুবকের নাম জাহিদ হাসান ওরফে উত্তইরা জাহিদ (২৫)। সে বরমী এলাকার ৮ নম্বর ওর্য়াডের মৃত সাইফুর রহমানের ছেলে। বিএনপি বলছে, সে ছাত্রদলের কর্মী হতে পারে তবে কোনো পদ-পদবি নেই। পুলিশ বলছে, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
মির্জাপুরে পদযাত্রার প্রস্তুতিকালে বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পদযাত্রার প্রস্তুতিকালে বহুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে বহুরিয়া বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, আলহাজ হোসেনের বিরুদ্ধে আগের মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মাগুরায় যুবদল-ছাত্রদলের তিন নেতাকে আটকের অভিযোগ: বিকেলে সদর উপজেলার ৩নং কছুন্দী ইউনিয়ন বিএনপি পদযাত্রার আযোজন করে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর অভিযোগ করেন, পদযাত্রা শেষে পুলিশ জেলা যুবদলের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক মীর ইমন ও ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সোহেল আহম্মেদকে আটক করেছে। তবে সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বরগুনায় পুলিশ-আ.লীগের বাধায় পণ্ড পদযাত্রা: বরগুনার বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুলিশি বাধা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে পদযাত্রায়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের লাঠিপেটা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপির কমপক্ষে ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি দলটির নেতাদের।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আমাদের করতে দেওয়া হচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে এর ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ হবে।’ তবে বেতাগী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পদযাত্রা কর্মসূচিতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে পুলিশ হয়তো বাধা দিয়েছে।’
পলাশে মঈন খানের পদযাত্রায় পুলিশের বাধা: নরসিংদীর পলাশে পুলিশ ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি বানচাল করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। সকালে জিনারদী ইউনিয়নের চরনগরদী এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে এ ঘটনা ঘটে বলে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের পূর্ব অনুমতি না থাকায় তাদের কর্মসূচি পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পলাশ থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
খুলনায় পুলিশের বাধা: খুলনায় পুলিশের বাধার মধ্য দিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বেলা ১১টায় ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রা শুরু হয়। ডুমুরিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সামনে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া রূপসা ও পাইকগাছা উপজেলায় পুলিশের বাধায় পদযাত্রা করা সম্ভব হয়নি বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে নগরীর আড়ংঘাটা ও আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা হয়েছে।
দুমকিতে হাতাহাতি: পটুয়াখালীর দুমকির মুরাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা, হাতাহাতি ও মৃদু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বোর্ড অফিস বাজার থেকে ইউনিয়ন বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর পদযাত্রাটি জয়গুননেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছে সমাবেশে শুরু করে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তখন দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, মাইক ভাঙচুর ও মৃদু সংঘর্ষ হয়। এতে বিএনপির অন্তত ৬ কর্মী আহত হয়।
মোংলায় পদযাত্রা ঘিরে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ: বাগেরহাটের মোংলায় পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল ভোরে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, হয়রানি ও ধরপাকড় চালায় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
আ.লীগের সমাবেশে হামলার অভিযোগ কাদেরের : আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিএনপি অতর্কিত হামলা চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি গণতন্ত্রের নামে, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বরাবরের মতো সন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে। সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির নামে আজ (গতকাল) সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে বিএনপির সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী।’
প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে, তা নিয়ে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত করার কাজ চলছিল। যোগ-বিয়োগ চলছিল অন্তত ছয়জনকে নিয়ে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছুই জানি না। তবে যিনিই হবেন, তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন সবার কাছে।’
প্রধানমন্ত্রীর একজন সহকারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একটি ক্লু দিয়ে বলেন, মাদারীপুর বাড়ি। বয়স ৭১ বছর। সংসদ সদস্য নন। অপরাধ না করেও যিনি শাস্তি পেয়েছেন, এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে গতকাল অনেক আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে কয়েক দিনে ছয়জনকে নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই রয়েছেন ধোঁয়াশায়। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। কে ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন তা নিশ্চিত হতে কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে, তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। শেষ সময়ে দুই-তিনটি নামের বিষয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, এবারই প্রথম রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে চূড়ান্ত নাম জানা গেলে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে বিতর্কিত করতে পারে। এ কারণে শীর্ষ নেতৃত্ব কৌশলী হয়েই নাম চূড়ান্ত করছেন। নির্বাচনে কমিশনে নাম জমা দেওয়ার পরেই সেই নাম জানা যাবে।
গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমি এখন নির্বাচনী এলাকা থেকে ঢাকায় ফিরছি। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনো ধারণা করতে পারছি না। ঢাকা ফিরলে জানা যাবে।’ তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘বাড়ি মাদারীপুর এবং বয়স ৭১ বছর এমন একজন রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি রয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে শুরু থেকে সাবেক আমলা ও বিচারপতির নাম জোরালোভাবেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। সেখানে বর্তমান ও আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজনীতিবিদকে মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে বলা যায়, এবারও কোনো পোড়খাওয়া নেতা, যিনি দল ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি শতভাগ আনুগত, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও মতিয়া চৌধুরীর সম্ভাবনা বেশি। রাজনীতিকের বাইরে হলে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এ পদে আসতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আরও আলোচনায় রয়েছেন মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শেখ কবির হোসেনের নামও।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কে হবেন রাষ্ট্রপতি, সে সম্পর্কে কিছুই জানি না।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির পক্ষে কোনো ফরম সংগ্রহ করা হয়নি। অবশ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন-১৯৯১ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা-১৯৯১-এর বিধান মতে, ফরম সংগ্রহ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতার কথা বলা নেই। নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তাও একই কথা জানান। তারা বলেন, আইন ও বিধিমালায় ফরম দাখিলের কথা বলা আছে। বলা আছে, দাখিলের আনুষ্ঠানিকতার কথাও।
জানা গেছে, নির্বাচন বিধিমালায় মনোনয়ন ফরমের (ফরম-ক) কথা উল্লেখ আছে। সেখানে ফরমের নমুনা দেওয়া রয়েছে। তবে ওই ফরম ইসি থেকে সংগ্রহ করতে হবে এমনটি বলা নেই। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফরমের কথা যেভাবে বলা আছে তাতে কেউ চাইলে ইসি থেকে সংগ্রহ করে তা জমা দিতে পারেন। আবার চাইলে নমুনার হুবহু ফরম নিজেরা তৈরি করে জমা দিতে পারেন। তবে দাখিলের সময় তাতে প্রার্থীর পাশাপাশি প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে দুজন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর থাকতে হবে। একজন সংসদ সদস্যকে উপস্থিত থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় ভোটার তালিকা/সিডি সংগ্রহ করার বিধান থাকায় অর্থের বিনিময়ে তা সংগ্রহ এবং মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যাংক ড্রাফট জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ দুটির কোনোটিরই দরকার নেই। ফলে ফরম সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে না।
রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রত্যাহার ১৪ ফেব্রুয়ারি। সংসদ ভবনে ভোট গ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনেই একক প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে।
দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, একজন চিকিৎসকের তিন ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত না এবং রোগীপ্রতি গড়ে ১০ মিনিট সময় দিতে হবে। অথচ বাস্তবে এই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। দেশে একজন চিকিৎসক রোগীকে ঠিক কী পরিমাণ সময় দিচ্ছেন, সে-সংক্রান্ত কোনো গবেষণা নেই। তবে চিকিৎসকরা যেটুকু সময় দিচ্ছেন, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না রোগীরা। এতে চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থা কমছে। রোগী ও চিকিৎসক মুখোমুখি অবস্থানে এবং একজন আরেকজনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছেন। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য রোগীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ যে ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেন না ও আস্থা তৈরি করতে পারেন না। রোগীরা যতটুকু সময় চান, আমরা সেটা দিতে পারি না। এর পেছনে কারণ আমাদের রোগীর পরিমাণ বেশি। কিন্তু রোগীদের প্রয়োজনীয় সময়টুকু দেওয়া দরকার।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমার মতে, তিন ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত না এবং ১০ মিনিট করে দেখতে হবে।’
‘এটারই উদাহরণ তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসকদের বলেছি, ৩ ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখা যাবে না এবং রোগীদের ১০ মিনিটের কম সময় দেওয়া যাবে না। এই নিয়ম যদি আমরা চিকিৎসকদের প্রতিটি চেম্বারে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের কোনো রোগী বিদেশ যাবে ন।’ বলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকরা রোগীদের সঙ্গে একটু ভালো ব্যবহার করি, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তাহলে রোগীর অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যাবে। যারা বড় চিকিৎসক, তাদের কাছে রোগীরা বেশি ভিড় করেন। অথচ রোগীরা জানেন না যে তাদের ছাত্ররাও এখন অনেক কিছু জানে। কাজেই আমরা একটা রেফারেল সিস্টেমও দাঁড় করাতে পারি। যেমন একজন অধ্যাপকের কাছে যাওয়ার আগে রোগী যেন একজন সহযোগী বা সহকারী অধ্যাপককে দেখান। তিনি যদি না পারেন, তখন তিনি তার স্যারের কাছে রোগী পাঠাবেন। এতে একজন চিকিৎসকের চেম্বারে রোগীর চাপ কমবে। অনেক নামকরা চিকিৎসক ২০ জনের বেশি রোগী দেখতেন না। এখনো অনেক চিকিৎসক তা-ই করেন।’
এ অবস্থায় আজ বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব রোগী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়।
দেশে একজন চিকিৎসক তার চেম্বারে বা হাসপাতালে রোগীপ্রতি প্রয়োজনীয় সময় দেন না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এতে শুধু চিকিৎসকদের দোষারোপ করে লাভ নেই। কারণ সিস্টেমের অভাব। একটি বেসরকারি হাসপাতালের চেম্বারে একজন রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাত ৮টায়। কিন্তু পথে যানজটের কারণে চিকিৎসক এলেন দুই ঘণ্টা পর। তখন চিকিৎসক বাধ্য হয়ে রোগী না কমিয়ে রোগীকে সময় দেওয়া কমিয়ে দেন এবং প্রত্যেক রোগীকে দেখেন। সে হিসেবে রোগী সময় কম পান।’
এই গবেষক বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী দেখার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যদি ঠিক থাকত, তাহলে রোগীকে সময় দিতে পারতেন চিকিৎসকরা। যেমন রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গে তার রোগের ইতিহাস শোনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, ওজন নেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এসব তথ্য মূল চিকিৎসকের কাছে আগেই চলে যাবে। তারপর মূল চিকিৎসক নিজে আবার রোগীকে সব জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু আমাদের এখানে মূল চিকিৎসকই সব করেন। তিনি যখন দেরিতে রোগী দেখা শুরু করেন, তখন তিনি আর রোগীকে সময় দিতে পারবেন না।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের চিকিৎসকরা এমনিতেই রোগী বেশি দেখেন। এক সন্ধ্যায় ২০টা রোগী দেখলেই হয় বা দেখা উচিত। সেখানে তিনি দেখেন ৪০টা রোগী। স্বাভাবিকভাবেই রোগীপ্রতি সময় কমে যাচ্ছে। এই বেশি রোগী দেখাটাও সিস্টেমিক প্রবলেম। কারণ আমরাও সবাই নির্ভর করছি ওই এক চিকিৎসকের ওপর। নামকরা চিকিৎসকদের পেছনে ভিড় করছি। তা ছাড়া যত বেশি রোগী দেখবেন, তত টাকা বেশি পাবেন। আবার বেশি রোগী দেখা বা বেশি লাইন হওয়া, সেটাও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছে নিজের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া। সেখানেও কিছু আর্থিক সুবিধার বিষয় আছে। এসব নানা কারণে বেশি রোগী দেখার বা তার লাইনে বেশি রোগী থাকার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। এগুলোর সব প্রভাব পড়ছে রোগীদের ওপর।
এমন পরিস্থিতি রোগী ও চিকিৎসককে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক ও রোগী প্রতিপক্ষ হয়ে গেছেন। অথচ চিকিৎসক-রোগী একপক্ষ এবং রোগীর প্রকৃত বন্ধু চিকিৎসক। সেটাই সারা পৃথিবীতে চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে সেই পদ্ধতি তৈরি হয়নি। এখানে চিকিৎসকদের ঢালাওভাবে দায়ী করব না। সিস্টেম ঠিক না করলে তারা কী করবেন? চিকিৎসকদের দায়ী করলে ভালো চিকিৎসক দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। তাদের সুযোগ আছে দেশের বাইরে ভালো চাকরি পাওয়ার। এখন ভালো ভালো চিকিৎসক দেশ ছেড়ে চলেও যাচ্ছেন।’
একজন ডাক্তার একজন রোগীর পেছনে ঠিক কতটুকু সময় দেন, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা দেশে নেই বলে জানান পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এমন কোনো সিস্টেম নেই যে রোগীপ্রতি একজন চিকিৎসক কত সময় দেবেন বা একটা নির্দিষ্ট সময়ে কতজন রোগী দেখবেন। কাজেই উপচে পড়া ভিড় যেখানে হয়, সেখানে রোগীরা সময় কম পান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর অনেক ভিড় থাকে। কিন্তু সেই অনুপাতে চিকিৎসক অনেক কম। ফলে সেখানে একজন চিকিৎসকের একজন রোগীকে যে সময় দেওয়া উচিত, সেটা দিতে পারেন না।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘রোগীরও একটা সন্তুষ্টির ব্যাপার আছে। সেই জায়গায় রোগীকে আমরা সন্তুষ্টি দিতে পারি না। এটা ইচ্ছেকৃত নয়, অনিচ্ছাতেও হয়ে যায়। কারণ চেম্বারে যত রোগী আসে, সবাইকে সময় নিয়ে দেখতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। এটা যে শুধু ডাক্তারকে দোষারোপ করবেন, তা নয়। গোটা সিস্টেমটাই এভাবে গড়ে উঠেছে। ডাক্তারেরও খুব বেশি কিছু করার আছে, তা নয়।’
এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম করা যেতে পারে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একই ডাক্তারের কাছে ১০০ জন যাচ্ছেন, আরেক ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন ৫ জন। এটা যদি না হয়, একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি আনতে পারি, তাহলে সমস্যা থাকে না। তবে এখন চিকিৎসকরা আরও বেশি সচেতন। এখন রোগীরাও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে জেনে যান তার কী রোগ হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা ভালো হয়েছে। রোগীর অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। বিস্তারিত বলতে চান। কিন্তু চেম্বারে সেই সময়টা থাকে না বলে চিকিৎসক সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’