
দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, একজন চিকিৎসকের তিন ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত না এবং রোগীপ্রতি গড়ে ১০ মিনিট সময় দিতে হবে। অথচ বাস্তবে এই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। দেশে একজন চিকিৎসক রোগীকে ঠিক কী পরিমাণ সময় দিচ্ছেন, সে-সংক্রান্ত কোনো গবেষণা নেই। তবে চিকিৎসকরা যেটুকু সময় দিচ্ছেন, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না রোগীরা। এতে চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থা কমছে। রোগী ও চিকিৎসক মুখোমুখি অবস্থানে এবং একজন আরেকজনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছেন। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য রোগীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ যে ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেন না ও আস্থা তৈরি করতে পারেন না। রোগীরা যতটুকু সময় চান, আমরা সেটা দিতে পারি না। এর পেছনে কারণ আমাদের রোগীর পরিমাণ বেশি। কিন্তু রোগীদের প্রয়োজনীয় সময়টুকু দেওয়া দরকার।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমার মতে, তিন ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত না এবং ১০ মিনিট করে দেখতে হবে।’
‘এটারই উদাহরণ তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসকদের বলেছি, ৩ ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখা যাবে না এবং রোগীদের ১০ মিনিটের কম সময় দেওয়া যাবে না। এই নিয়ম যদি আমরা চিকিৎসকদের প্রতিটি চেম্বারে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের কোনো রোগী বিদেশ যাবে ন।’ বলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকরা রোগীদের সঙ্গে একটু ভালো ব্যবহার করি, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তাহলে রোগীর অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যাবে। যারা বড় চিকিৎসক, তাদের কাছে রোগীরা বেশি ভিড় করেন। অথচ রোগীরা জানেন না যে তাদের ছাত্ররাও এখন অনেক কিছু জানে। কাজেই আমরা একটা রেফারেল সিস্টেমও দাঁড় করাতে পারি। যেমন একজন অধ্যাপকের কাছে যাওয়ার আগে রোগী যেন একজন সহযোগী বা সহকারী অধ্যাপককে দেখান। তিনি যদি না পারেন, তখন তিনি তার স্যারের কাছে রোগী পাঠাবেন। এতে একজন চিকিৎসকের চেম্বারে রোগীর চাপ কমবে। অনেক নামকরা চিকিৎসক ২০ জনের বেশি রোগী দেখতেন না। এখনো অনেক চিকিৎসক তা-ই করেন।’
এ অবস্থায় আজ বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব রোগী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়।
দেশে একজন চিকিৎসক তার চেম্বারে বা হাসপাতালে রোগীপ্রতি প্রয়োজনীয় সময় দেন না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এতে শুধু চিকিৎসকদের দোষারোপ করে লাভ নেই। কারণ সিস্টেমের অভাব। একটি বেসরকারি হাসপাতালের চেম্বারে একজন রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাত ৮টায়। কিন্তু পথে যানজটের কারণে চিকিৎসক এলেন দুই ঘণ্টা পর। তখন চিকিৎসক বাধ্য হয়ে রোগী না কমিয়ে রোগীকে সময় দেওয়া কমিয়ে দেন এবং প্রত্যেক রোগীকে দেখেন। সে হিসেবে রোগী সময় কম পান।’
এই গবেষক বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী দেখার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যদি ঠিক থাকত, তাহলে রোগীকে সময় দিতে পারতেন চিকিৎসকরা। যেমন রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গে তার রোগের ইতিহাস শোনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, ওজন নেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এসব তথ্য মূল চিকিৎসকের কাছে আগেই চলে যাবে। তারপর মূল চিকিৎসক নিজে আবার রোগীকে সব জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু আমাদের এখানে মূল চিকিৎসকই সব করেন। তিনি যখন দেরিতে রোগী দেখা শুরু করেন, তখন তিনি আর রোগীকে সময় দিতে পারবেন না।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের চিকিৎসকরা এমনিতেই রোগী বেশি দেখেন। এক সন্ধ্যায় ২০টা রোগী দেখলেই হয় বা দেখা উচিত। সেখানে তিনি দেখেন ৪০টা রোগী। স্বাভাবিকভাবেই রোগীপ্রতি সময় কমে যাচ্ছে। এই বেশি রোগী দেখাটাও সিস্টেমিক প্রবলেম। কারণ আমরাও সবাই নির্ভর করছি ওই এক চিকিৎসকের ওপর। নামকরা চিকিৎসকদের পেছনে ভিড় করছি। তা ছাড়া যত বেশি রোগী দেখবেন, তত টাকা বেশি পাবেন। আবার বেশি রোগী দেখা বা বেশি লাইন হওয়া, সেটাও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছে নিজের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া। সেখানেও কিছু আর্থিক সুবিধার বিষয় আছে। এসব নানা কারণে বেশি রোগী দেখার বা তার লাইনে বেশি রোগী থাকার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। এগুলোর সব প্রভাব পড়ছে রোগীদের ওপর।
এমন পরিস্থিতি রোগী ও চিকিৎসককে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক ও রোগী প্রতিপক্ষ হয়ে গেছেন। অথচ চিকিৎসক-রোগী একপক্ষ এবং রোগীর প্রকৃত বন্ধু চিকিৎসক। সেটাই সারা পৃথিবীতে চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে সেই পদ্ধতি তৈরি হয়নি। এখানে চিকিৎসকদের ঢালাওভাবে দায়ী করব না। সিস্টেম ঠিক না করলে তারা কী করবেন? চিকিৎসকদের দায়ী করলে ভালো চিকিৎসক দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। তাদের সুযোগ আছে দেশের বাইরে ভালো চাকরি পাওয়ার। এখন ভালো ভালো চিকিৎসক দেশ ছেড়ে চলেও যাচ্ছেন।’
একজন ডাক্তার একজন রোগীর পেছনে ঠিক কতটুকু সময় দেন, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা দেশে নেই বলে জানান পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এমন কোনো সিস্টেম নেই যে রোগীপ্রতি একজন চিকিৎসক কত সময় দেবেন বা একটা নির্দিষ্ট সময়ে কতজন রোগী দেখবেন। কাজেই উপচে পড়া ভিড় যেখানে হয়, সেখানে রোগীরা সময় কম পান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর অনেক ভিড় থাকে। কিন্তু সেই অনুপাতে চিকিৎসক অনেক কম। ফলে সেখানে একজন চিকিৎসকের একজন রোগীকে যে সময় দেওয়া উচিত, সেটা দিতে পারেন না।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘রোগীরও একটা সন্তুষ্টির ব্যাপার আছে। সেই জায়গায় রোগীকে আমরা সন্তুষ্টি দিতে পারি না। এটা ইচ্ছেকৃত নয়, অনিচ্ছাতেও হয়ে যায়। কারণ চেম্বারে যত রোগী আসে, সবাইকে সময় নিয়ে দেখতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। এটা যে শুধু ডাক্তারকে দোষারোপ করবেন, তা নয়। গোটা সিস্টেমটাই এভাবে গড়ে উঠেছে। ডাক্তারেরও খুব বেশি কিছু করার আছে, তা নয়।’
এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম করা যেতে পারে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একই ডাক্তারের কাছে ১০০ জন যাচ্ছেন, আরেক ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন ৫ জন। এটা যদি না হয়, একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি আনতে পারি, তাহলে সমস্যা থাকে না। তবে এখন চিকিৎসকরা আরও বেশি সচেতন। এখন রোগীরাও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে জেনে যান তার কী রোগ হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা ভালো হয়েছে। রোগীর অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। বিস্তারিত বলতে চান। কিন্তু চেম্বারে সেই সময়টা থাকে না বলে চিকিৎসক সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না।
গত ১৪ বছর ধরে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি আত্মস্থ করছিল শিক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষা ও মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে এ বছর তিনটি শ্রেণিতে (প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম) চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে গিয়ে বড় বিপদে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে দুটি বই প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। আরও তিনটি বইয়ে বড় ধরনের সংশোধন আসছে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
এছাড়া অন্য প্রায় সব বইয়েই আছে নানা ধরনের ভুলত্রুটি। ফলে নতুন বছরের দেড় মাস পার হতে চললেও কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হলেও তার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে সে ধারাবাহিকতা নেই। আগে নবম-দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হতো তার অনেক কিছুই ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে ঢোকানো হয়েছে। শিক্ষকদের যে পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাও যথেষ্ট নয়। নতুন শিক্ষাক্রমের যে পাইলটিং হয়েছে, তাও যথাযথ ছিল না। ছিল না প্রয়োজনীয় সমীক্ষা। এসবের ঘাটতি হয়েছিল তা নানা ধরনের গলদ ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে এখন সামনে আসছে।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি পড়েছি। সেখানে আমি ১৫ থেকে ১৬টি জায়গায় ইতিহাসের ভুল পেয়েছি। মহাস্থানগড়ে যখন মানব বসতি গড়ে ওঠার কথা বলা হয়েছে, এর অন্তত এক হাজার বছর আগে সেখানে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। এটা চরম ভুল। এ ধরনের অসংখ্য ভুল আছে। আমি বলব, নতুন শিক্ষাক্রমের মতো বড় এই কাজ খুবই কাঁচা হাতে করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।’
অধ্যাপক শাহনাওয়াজ আরও বলেন, ‘কারিকুলামে কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই যেটা ভাবা উচিত, সেটা হচ্ছে কোন বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য কী দিতে হবে? ষষ্ঠ শ্রেণির বইতে ৪৫ পৃষ্ঠাজুড়ে যে ইতিহাসের বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো তো এত ডিটেইল দেওয়া ঠিক হয়নি। এটা ধাপে ধাপে দিতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে, ধারণ করতে পারে। কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হয়েছে বদহজমের মতো।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের বইতে বিস্তর ভুল আছে। যাদের দিয়ে ভুল সংশোধনের কমিটি করা হয়েছে, তারাও এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কি না সেটাও ভেবে দেখা দরকার।’
নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান’ বিষয়ে দুটি করে বই আছে। এর এক অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অনুশীলন বই’ ও অপর অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। গত শুক্রবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক বিজ্ঞপ্তিতে, দুটি শ্রেণিতেই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আর দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন বই’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানীপাঠ’ বইয়ের কিছু অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে বলে জানানো হয়।
জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা এ বছর আর দেওয়া হবে না। কারণ ওই বই দুটির দুটি অংশ ছিল। এখন যে অংশটি রয়েছে তা দিয়েই বিষয়টি কাভার হবে। শিক্ষার্থীদের শিখনে কোনো সমস্যা হবে না বলেই বই দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’
অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের অনুশীলন বইয়ে আমরা নানা বিশ্বের নানা সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরেছি। এসব ইতিহাসকে প্রদর্শন করতে গিয়ে ‘অনুসন্ধানী পাঠে’ মিসরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো এসেছে, প্রাচীন দেব-দেবী নিয়ে কথা এসেছে, তাদের সংস্কৃতির নানা ছবি ব্যবহার হয়েছে। যদি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য প্রাচীন সভ্যতার বিষয়টি কঠিন হয়ে যায়, তাহলে তা আমরা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ওপরের শ্রেণিতে নিয়ে যাব।’
একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে বিবর্তনবাদ ছিল একাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ে। এবার এটা ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া ‘মিসরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো ছিল নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য। কিন্তু এখন তা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ইতিহাস নিয়ে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে সেভাবে নেই।
এতদিন বইগুলোতে মানব অঙ্গের তেমন কোনো বর্ণনাই ছিল না। এমনকি ওপরের শ্রেণিতেও নয়। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ্যবইয়ে ১১তম অধ্যায়ে ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে নানা অঙ্গের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অনেকেই। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ ও ৫২ পৃষ্ঠাতে ট্রান্সজেন্ডার বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠাতে বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসন নিয়ে যা লেখা হয়েছে, তা ষষ্ঠ শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য বোঝা কঠিন বলে মনে করছেন অনেকেই।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে আগ্রহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, বই দুটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাতে বড় ধরনের ছেদ পড়ল। এখন যেগুলো সংশোধন হবে সেগুলোও আপাতত পড়ানোর সুযোগ নেই। বাকি বইগুলোর ওপরও একটা আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলাম।’
সূত্র জানায়, সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মাত্র ৬২টি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন বইয়ের পাইলটিং করা হয়। একটি পদ্ধতি চালুর আগে যা কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই পাইলটিং শুরু হয়। আর মে মাসে ফিডব্যাক নেওয়া হয়। ফলে মাত্র চারমাসে যথাযথ ফিডব্যাক পাওয়া যায়নি। আর তাড়াহুড়ো করে সংশোধন বা পরিমার্জনও যথাযথ হয়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রাথমিকেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু গত বছর প্রাথমিকে নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো পাইলটিং না হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ঝুঁকি নেয়নি। তারা দ্বিতীয় শ্রেণি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে। মাধ্যমিকের পাইলটিংও যথাযথ না হওয়ায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাংশ এ বছর শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের যুক্তি, একটি শ্রেণির বই হলে আরও কিছুটা ভুলত্রুটি কম হতো। কিন্তু সে প্রস্তাবে কোনোভাবেই রাজি হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাইলটিং শুরু করে, মে মাসেই ফিডব্যাক নিয়েছি। সে অনুযায়ী পরিমার্জনও করেছি। কিন্তু যদি সারা বছরের ফিডব্যাক নিতাম, তাহলে হয়তো ভিন্ন ফল পাওয়া যেত। আর সারা পৃথিবীর যেখানেই কারিকুলামের পরিবর্তন হয়েছে, সেখানেই প্রথমবারই যে সঠিকটা গেছে সে নজির নেই।’
যদিও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসংগতি, ভুল বা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটির মতামতের আগেই দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। এছাড়া ভুলত্রুটির জন্য দায়ীদের খুুঁজে বের করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু বই প্রত্যাহার হলেও ভুলত্রুটির দায় নিচ্ছে না কেউ।
জানা যায়, এনসিটিবির পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরই ঠিক করা লেখক প্যানেল একটি বই লেখেন। এ বছরের লেখক প্যানেলে বেশিরভাগই ছিলেন নতুন লেখক। আগের বইগুলো যারা লিখেছেন, তাদের বেশিরভাগকেই ডাকা হয়নি। প্রতিটি বইয়ের জন্যই এক বা একাধিক সম্পাদক থাকেন এবং এনসিটিবির একজন বিশেষজ্ঞ পুরো কাজ তত্ত্বাবধান করেন। বানান ও বাক্যের অসংগতির জন্যও এনসিটিবির পৃথক জনবল রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রতিটি বইয়ের জন্য বড় একটি টিম কাজ করে। ইতিমধ্যে শুধুমাত্র সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ভুলের দায় স্বীকার করেছেন ওই বইটির সম্পাদক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান।
অ্যাথলেটিকসে কোনো বাংলাদেশি স্প্রিন্টার স্বর্ণ জিতবেন তা এতদিন ছিল কল্পনার অতীত। কাল তা সত্যি করে দেখালেন ইমরানুর রহমান। লন্ডন প্রবাসী এই স্প্রিন্টার আগে থেকেই ছিলেন দেশের দ্রুততম মানব। কাল নিজের গতির প্রমাণ রেখে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে শ্রেষ্ঠত্ব দেখালেন। ইভেন্টে ৬.৫৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছেন তিনি। ৬০ মিটার স্প্রিন্টে এটাই ইমরানুরের সেরা টাইমিং। এতে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়শিপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেশকে সোনা জয়ের ইতিহাস এনে দিলেন। ৬.৬৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্বিতীয় হন হংকংয়ের শাক কাম চিং। তৃতীয় হওয়া জাপানের রয়োটা সুজুকির টাইমিং ৬.৬৬ সেকেন্ড। কাজাখস্তানের ট্র্যাকে ইমরানুর হিটেও আলো ছড়ান। প্রথম দৌড় শেষ করেন ৬.৭০ সেকেন্ডে। সেমিফাইনালে দ্বিতীয় হন ৬.৬১ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে। কাতারের প্রতিযোগীর কাছে ফটো ফিনিশিংয়ে হেরে দ্বিতীয় হন ইমরানুর। কিন্তু ফাইনাল দৌড়ে তাকে আর ছুঁতে পারেননি কেউ, সেরা টাইমিংয়েই দৌড় শেষ করেন। গত বছর এই ইভেন্টে সার্বিয়ার বেলগ্রেডে ৬ দশমিক ৬৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেছিলেন ইমরানুর। এই ইভেন্টের মেয়েদের বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন শিরিন আক্তার। তবে হিট থেকেই ছিটকে যান তিনি। দৌড় শেষ করেন ৭.৯৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে।
গত বছর জানুয়ারিতে প্রথমবার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে খেলেই রেকর্ড গড়ে সেরা হয়েছিলেন লন্ডন প্রবাসী ইমরানুর। তখন থেকেই বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হয়ে যান তিনি। ওই প্রতিযোগিতায় ২১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙেছিলেন। হারিয়েছিলেন চারবারের দ্রুততম মানব মোহাম্মদ ইসমাইলকে। ইলেকট্রনিক বোর্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট ইমরানুরের টাইমিং তখন ছিল ১০.৫০ সেকেন্ড। ইলেকট্রনিক বোর্ডে সেটাই ছিল তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেটের সেরা টাইমিং। এর আগে ১৯৯৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রয়াত মাহবুব আলমের গড়া ১০.৫৪ সেকেন্ড ছিল সর্বশেষ দেশের কোনো অ্যাথলেটের রেকর্ড টাইমিং। এরপর সেপ্টেম্বরে নিজের ১০.৫০ এর রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় ওঠেন ইমরানুর। ১৬তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়েছিলেন ১০.২৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। যা নতুন জাতীয় রেকর্ড হয় এবং ইমরানুরের সেরা টাইমিং। কোনো ইলেকট্রনিক বোর্ডে কোনো বাংলাদেশি স্প্রিন্টারেরও সেরা টাইমিং ছিল তা। এরপর ডিসেম্বরে ৪৬তম বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরার খেতাব ধরে রেখেছিলেন এই স্প্রিন্টার। ১০.৪৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন। যদিও ভ্রমণক্লান্তির জন্য নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারেননি বলে জানিয়েছিলেন ইমরানুর।
দেশের অ্যাথলেটিকসের নতুন এই ভরসা ২০২২ এ জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নিতে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার আগেই সেরা স্প্রিন্টার হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে ১৬-১৭ বছর বয়সে অ্যাথলেটিকসে নাম লেখান। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি ইনডোর অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হয়েছিলেন।
নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার দেশজুড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিরোধী দল বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির এই কর্মসূচির বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও গতকাল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। সবমিলিয়ে দু’দলই এদিন রাজপথে শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
তবে শান্তি-সমাবেশে বিএনপি অতর্কিত হামলা চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকালের সংঘাতে দল দুটির নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দলীয় কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি জায়গায় শটগানের গুলি ও টিয়ার গ্যাস শেল ছোড়ে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের বেশ কয়েক নেতাকর্মীকে।
সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে। জামালপুরের কয়েক জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির কমপক্ষে ৪০ নেতাকর্মী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে শান্তি-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এ ছাড়া ১৩টি মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিস্তারিত প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে:
জামালপুরে পদযাত্রায় আ.লীগের হামলা: সারা দেশের মতো গতকাল সকালে জেলার সাতটি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচি পালনকালে সদর উপজেলার তিতপল্লা, ঘোড়াধাপ, দিগপাইত ও বাঁশচড়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়। এসব হামলায় দলটির কমপক্ষে ৪০ নেতাকর্মী আহত হন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন অভিযোগ করে বলেন, তাদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পুলিশ তিতপল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ শান্তি সমাবেশে হামলা চালিয়েছে বিএনপি। মূল ঘটনা হচ্ছে এটা। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা বলতেছে, ওদের পদযাত্রায় আমরা হামলা করেছি।’
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমাবেশে বিএনপি হামলা করে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩৪ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ৪ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।’
সিরাজগঞ্জে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ: সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া বাজার এলাকায় সকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশ শুরু করে। এর পাশ দিয়ে বিএনপির পদযাত্রা যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ১৩টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বেশকিছু দোকানে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সদর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
আড়াইহাজারে বিএনপি-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি ও পুলিশ সদস্যদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাচরুখী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাসুম শিকারীর দাবি, তাদের পদযাত্রায় পুলিশ হামলা চালানোর পাশাপাশি গুলি ছোড়ে। তবে আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদারের দাবি, তারা শুধু মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনার সময় পুলিশ ৪০ রাউন্ড গুলি ও ৩টি টিয়ার শেল ছোড়ে।
নাটোরে শান্তি সমাবেশ থেকে পদযাত্রায় হামলা: গতকাল বেলা ১১টায় সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি চলাকালে রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম বাজারে লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির দুই নেতা আহত হন। এ ছাড়া চৌগ্রাম ইউনিয়নে হামলা ৭ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে বিএনপির পদযাত্রায় হামলা হয়েছে।
লালমনিরহাটে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ: জেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় দলের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ও বিএনপির দলীয় কার্যালয়। আর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রার প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিএনপির ছয় কর্মী আহত হন।
যশোরে পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জ: যশোরে পদযাত্রায় লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। বিকেল ৩টার দিকে সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বাউলিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অভিযোগ করে বলেন, পেছন থেকে হামলা করে পুলিশ। কোনো কারণ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
টাঙ্গাইলের বিএনপির লাঠি মিছিল, গ্রেপ্তার ২: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে লাঠি মিছিল করেছে বিএনপি। কর্মসূচি পালনকালে করটিয়া ইউনিয়নে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় করটিয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সৈয়দ জাদিদুল হক জাদিদ, মাসুদ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন। এ ছাড়াও শুক্রবার রাতে সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক জিএস সৈয়দ বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান তিনি।
শ্রীপুরে পদযাত্রার মিছিলে ছাত্রদল কর্মীর হাতে পিস্তল: গাজীপুরের শ্রীপুরে বিএনপির পদযাত্রা থেকে পিস্তল উঁচিয়ে এক ছাত্রদল কর্মী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয় দেখিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরমী ইউনিয়নের পদযাত্রায় এ ঘটনা ঘটে। মিছিলে পিস্তল উঁচিয়ে তাক করা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিএনপি নেতারা বলেন, বহু আগের ছবি সামনে এনে তাদের ওপর হামলার বিষয়টি আড়াল করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন। বরং বিএনপির পদযাত্রায় হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহ হয়েছে। পিস্তল হাতে ছবি ছড়িয়ে পড়া ওই যুবকের নাম জাহিদ হাসান ওরফে উত্তইরা জাহিদ (২৫)। সে বরমী এলাকার ৮ নম্বর ওর্য়াডের মৃত সাইফুর রহমানের ছেলে। বিএনপি বলছে, সে ছাত্রদলের কর্মী হতে পারে তবে কোনো পদ-পদবি নেই। পুলিশ বলছে, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
মির্জাপুরে পদযাত্রার প্রস্তুতিকালে বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পদযাত্রার প্রস্তুতিকালে বহুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে বহুরিয়া বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, আলহাজ হোসেনের বিরুদ্ধে আগের মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মাগুরায় যুবদল-ছাত্রদলের তিন নেতাকে আটকের অভিযোগ: বিকেলে সদর উপজেলার ৩নং কছুন্দী ইউনিয়ন বিএনপি পদযাত্রার আযোজন করে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর অভিযোগ করেন, পদযাত্রা শেষে পুলিশ জেলা যুবদলের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক মীর ইমন ও ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সোহেল আহম্মেদকে আটক করেছে। তবে সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বরগুনায় পুলিশ-আ.লীগের বাধায় পণ্ড পদযাত্রা: বরগুনার বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুলিশি বাধা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে পদযাত্রায়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের লাঠিপেটা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপির কমপক্ষে ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি দলটির নেতাদের।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আমাদের করতে দেওয়া হচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে এর ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ হবে।’ তবে বেতাগী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পদযাত্রা কর্মসূচিতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে পুলিশ হয়তো বাধা দিয়েছে।’
পলাশে মঈন খানের পদযাত্রায় পুলিশের বাধা: নরসিংদীর পলাশে পুলিশ ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি বানচাল করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। সকালে জিনারদী ইউনিয়নের চরনগরদী এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে এ ঘটনা ঘটে বলে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের পূর্ব অনুমতি না থাকায় তাদের কর্মসূচি পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পলাশ থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
খুলনায় পুলিশের বাধা: খুলনায় পুলিশের বাধার মধ্য দিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বেলা ১১টায় ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রা শুরু হয়। ডুমুরিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সামনে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া রূপসা ও পাইকগাছা উপজেলায় পুলিশের বাধায় পদযাত্রা করা সম্ভব হয়নি বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে নগরীর আড়ংঘাটা ও আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা হয়েছে।
দুমকিতে হাতাহাতি: পটুয়াখালীর দুমকির মুরাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা, হাতাহাতি ও মৃদু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বোর্ড অফিস বাজার থেকে ইউনিয়ন বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর পদযাত্রাটি জয়গুননেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছে সমাবেশে শুরু করে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তখন দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, মাইক ভাঙচুর ও মৃদু সংঘর্ষ হয়। এতে বিএনপির অন্তত ৬ কর্মী আহত হয়।
মোংলায় পদযাত্রা ঘিরে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ: বাগেরহাটের মোংলায় পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল ভোরে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, হয়রানি ও ধরপাকড় চালায় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
আ.লীগের সমাবেশে হামলার অভিযোগ কাদেরের : আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিএনপি অতর্কিত হামলা চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি গণতন্ত্রের নামে, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বরাবরের মতো সন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে। সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির নামে আজ (গতকাল) সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে বিএনপির সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী।’
প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে, তা নিয়ে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত করার কাজ চলছিল। যোগ-বিয়োগ চলছিল অন্তত ছয়জনকে নিয়ে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছুই জানি না। তবে যিনিই হবেন, তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন সবার কাছে।’
প্রধানমন্ত্রীর একজন সহকারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একটি ক্লু দিয়ে বলেন, মাদারীপুর বাড়ি। বয়স ৭১ বছর। সংসদ সদস্য নন। অপরাধ না করেও যিনি শাস্তি পেয়েছেন, এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে গতকাল অনেক আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে কয়েক দিনে ছয়জনকে নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই রয়েছেন ধোঁয়াশায়। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। কে ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন তা নিশ্চিত হতে কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে, তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। শেষ সময়ে দুই-তিনটি নামের বিষয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, এবারই প্রথম রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে চূড়ান্ত নাম জানা গেলে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে বিতর্কিত করতে পারে। এ কারণে শীর্ষ নেতৃত্ব কৌশলী হয়েই নাম চূড়ান্ত করছেন। নির্বাচনে কমিশনে নাম জমা দেওয়ার পরেই সেই নাম জানা যাবে।
গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমি এখন নির্বাচনী এলাকা থেকে ঢাকায় ফিরছি। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনো ধারণা করতে পারছি না। ঢাকা ফিরলে জানা যাবে।’ তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘বাড়ি মাদারীপুর এবং বয়স ৭১ বছর এমন একজন রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি রয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে শুরু থেকে সাবেক আমলা ও বিচারপতির নাম জোরালোভাবেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। সেখানে বর্তমান ও আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজনীতিবিদকে মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে বলা যায়, এবারও কোনো পোড়খাওয়া নেতা, যিনি দল ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি শতভাগ আনুগত, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও মতিয়া চৌধুরীর সম্ভাবনা বেশি। রাজনীতিকের বাইরে হলে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এ পদে আসতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আরও আলোচনায় রয়েছেন মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শেখ কবির হোসেনের নামও।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কে হবেন রাষ্ট্রপতি, সে সম্পর্কে কিছুই জানি না।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির পক্ষে কোনো ফরম সংগ্রহ করা হয়নি। অবশ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন-১৯৯১ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা-১৯৯১-এর বিধান মতে, ফরম সংগ্রহ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতার কথা বলা নেই। নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তাও একই কথা জানান। তারা বলেন, আইন ও বিধিমালায় ফরম দাখিলের কথা বলা আছে। বলা আছে, দাখিলের আনুষ্ঠানিকতার কথাও।
জানা গেছে, নির্বাচন বিধিমালায় মনোনয়ন ফরমের (ফরম-ক) কথা উল্লেখ আছে। সেখানে ফরমের নমুনা দেওয়া রয়েছে। তবে ওই ফরম ইসি থেকে সংগ্রহ করতে হবে এমনটি বলা নেই। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফরমের কথা যেভাবে বলা আছে তাতে কেউ চাইলে ইসি থেকে সংগ্রহ করে তা জমা দিতে পারেন। আবার চাইলে নমুনার হুবহু ফরম নিজেরা তৈরি করে জমা দিতে পারেন। তবে দাখিলের সময় তাতে প্রার্থীর পাশাপাশি প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে দুজন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর থাকতে হবে। একজন সংসদ সদস্যকে উপস্থিত থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় ভোটার তালিকা/সিডি সংগ্রহ করার বিধান থাকায় অর্থের বিনিময়ে তা সংগ্রহ এবং মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যাংক ড্রাফট জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ দুটির কোনোটিরই দরকার নেই। ফলে ফরম সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে না।
রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রত্যাহার ১৪ ফেব্রুয়ারি। সংসদ ভবনে ভোট গ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনেই একক প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদী হয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাচালান রোধ ও কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ এক উদ্যোগ নিয়েছে। নদীতীরে ও তলদেশে বিশেষ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। পুলিশের বিশেষ একটি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি বাহিনী গোপনীয়ভাবে স্থাপন করা ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে ঢাকা থেকে সীমান্ত মনিটর করবে। পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে; বিশেষ করে ইয়াবা কারবারিদের প্রতিরোধ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকেই ইয়াবার চালান সবচেয়ে বেশি আসছে। নাফ নদীতে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। এই নদী দিয়ে ইয়াবার চালান যাতে দেশে আসতে না পারে, সে জন্য আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ মাদক চোরাকারবারিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯টি ইয়াবা আটক করা হয়। মাদক কারবারিদের যারা সহায়তা করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড।’
নাফ নদী হয়ে প্রায় প্রতিদিন দেদার আসছে ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় বড় চালান। নানা পরিকল্পনা নিয়েও ইয়াবা চোরাকারবার ঠেকানো যাচ্ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা প্রায়ই চালান আটক করছেন। ইয়াবা কারবারিরাও ধরা পড়ছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের একাধিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কারবারিদের এ অবৈধ কারবারে সহায়তা করছেন কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যরা। তাদের তালিকাও করা হচ্ছে বারবার। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও বড় চোরাকারবারি হিসেবে পরিচিত কিছু লোক আত্মসমর্পণ করলেও মাদক কারবার বন্ধ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমার থেকে টেকনাফে ইয়াবা আনতে কোনো বিনিয়োগ লাগছে না। নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ইয়াবা নিরাপদে পৌঁছানোর পর মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের টাকা পরিশোধ করা হয়। বাহকের কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা জমা দিয়ে নিজের ভাগের টাকা নিয়ে নেওয়া। ফলে মিয়ানমার থেকে পাঠানো ইয়াবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও উদ্ধারের সংখ্যা খুবই কম। নাফ নদী দিয়েই আসছে বেশি চালান। দিনে দিনে চালানের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গোয়েন্দা ইউনিটগুলো নাফ নদী এলাকায় বিশেষ অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, নতুন কারবারিদের পাশাপাশি পুরনোরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারাও ইয়াবার কারবার করছে। টেকনাফের আলিয়াবাদের আমিনুর রহমান, পশ্চিম লেদারের নুরুল হুদা মেম্বার, উত্তর লেঙ্গুর বিলের দিদার মিয়া, মুন্ডারডেইলের শাহেদ রহমান নিপু, মধ্য জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জোবায়ের হোসেন, কুলালপাড়ার নুরুল বছর, কাউন্সিলর ওরফে নুরসাদ, শিলবুনিয়াপাড়ার কামরুল হাসান, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, একই এলাকার নুরুল আমিন, চৌধুরীপাড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, একই এলাকার ফয়সাল রহমান, নাজিরপাড়ার এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, আলিরডেইলের শাহেদ কামাল, সাবরাংয়ের মৌলভী বছির আহম্মদ, পুরনো কল্যাণপাড়ার শাহ আলম, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, রাসেল প্রমুখ নাফ নদী দিয়ে নিয়মিত চালান নিয়ে আসছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ইয়াবার চালান প্রতিরোধে নাফের তীর ও তলদেশে বিশেষ ক্যামেরা বসানোর কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু হবে। ক্যামেরাগুলো ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে। কারা নদী দিয়ে আসা-যাওয়া করছে, সেই চিত্র ফুটে উঠবে ক্যামেরার মনিটরে। আর এগুলো মনিটরিং করবে পুলিশের একটি সংস্থা ও একটি বাহিনী।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। আর নাফের প্রস্থ ১ হাজার ৩৬৪ মিটার। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত এই নদীর পাড়ে অন্তত সাত হাজার মানুষের বসবাস। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এ নদী হয়ে প্রবেশ শুরু করে মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞের শিকার রোহিঙ্গারা। মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণ দেখিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও নাফ নদী এলাকায় প্রতিদিন ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে এক বছরে এ নদী দিয়ে পাচার হয়ে আসা ৯০০ কোটি টাকার বেশি ইয়াবা ও আরেক মাদকদ্রব্য আইস উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে ২ হাজার ৩১০টি মামলায় ৩ হাজার ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে টেকনাফে ২৮৫ কোটি টাকার মাদক, স্বর্ণ ও বিভিন্ন চোরাই পণ্য জব্দ হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নাফ নদীকেন্দ্রিক চোরাকারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশে ৯০ শতাংশ মাদক কারবারি ও সেবনকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে চোরাকারবারিদের সহায়তা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য। আর এ কারণে তারা নাফের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্যামেরাগুলো এমনভাবে বসানো হবে কেউ বুঝতেই পারবে না সেখানে কিছু একটা আছে। এ জন্য একটি বাজেটও ধরা হয়েছে। অন্তত ২০০ ক্যামেরা কেনা হবে।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, মিয়ানমারসহ গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় ইয়াবা তৈরির হাজারের বেশি কারখানা আছে। এসব কারখানা থেকে ইয়াবার চালান আসছে বাংলাদেশে। আর নাফ হয়ে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াক্যাং, উখিয়া বালুখালী, পালংখালী, রাজাপালং ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ইয়াবার চালান আনার পর কারবারিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। মিয়ানমারের পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনের (এমপিটি) সিম দিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কথা বলা যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এমপিটির রোমিং সুবিধা রয়েছে। এমপিটির কার্যক্রম রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
সার কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে আমদানিকৃত গ্যাসের ওপর ভর দিয়ে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরপরও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এভাবে গ্যাস বন্ধ কিংবা সীমিত করে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার ফলে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্রাহকরা যেমন ঠিকমতো গ্যাস পাবে না, তেমনি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়বে। সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়। রমজান, সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাকি গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে।
বর্তমানে দেশে দৈনিক প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং বাকি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হলে ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য খাতে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ভুল। কারণ কদিন আগেও বিশ^বাজারে এলএনজির দাম ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন সেটা অনেক কমলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে পারে। তখন গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’
‘সংকটের মুখে পড়ে সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আরও আগেই এ কাজ করা দরকার ছিল। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে যখন আমদানি শুরু হয় তখন থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতো তাহলে এতদিনে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না’ যোগ করেন তিনি।
বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানিতে যতবেশি নজর দেওয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ততটায় অবহেলিত রয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫ থেকে ৭টা কূপ খনন করা গেলে সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, বিশ^বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। দাম কমতে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে খোলাবাজার থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। চলতি মাস থেকে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করায় গ্যাসের সরবরাহও বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ৩০০ মিলিয়ন এবং জুনে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খোলাবাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশীয় গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলাবাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো কারণে খোলাবাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায় তাহলে গ্যাস সরবরাহ আরও কমবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেলে বাসাবাড়ি ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ কমানো অথবা সরবরাহ বন্ধ করা হবে দিনের কিছু সময়ের জন্য। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হবে। তবে রমজানে সাহরি ও ইফতার তৈরিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে মানুষের ভোগান্তি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘এটা একটা জোড়াতালির পরিকল্পনা। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা নাগরিক হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। এতে এলপিজির দামও আরও বেড়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আমদানিকৃত ও দেশীয় বিদ্যুতের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ¦ালানির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে যাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা ও অন্যান্য জ¦ালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সবমিলে এ বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চদামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।