
দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে? কেমন রাষ্ট্রপতি হলে ভালো হতোএমন কোনো বিষয়েই আগ্রহ নেই রাজপথের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির। দলটির নেতারা বলছেন, তারা আন্দোলনে রয়েছেন। সরকার রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সরকার কী করল না করল সেসব বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
গতকাল রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দেওয়ার পর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। সরকার কী করল না করল সেসব বিষয়ে আগ্রহ নেই বিএনপির।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজকে যে উদ্দেশ্যে প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য ডেকেছি গতকালের ইউনিয়ন পদযাত্রায় সংঘটিত বিষয়গুলো আপনাদের অবহিত করা। আপনারা তো জানেন, ১০ দফা আমাদের দাবি, প্রথম দফা হচ্ছে, এই অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া। এসব হলো ইস্যু। এই সরকার কী করছে, না করছে এসব বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
জানতে চাইলে গতকাল রবিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ কাকে রাষ্ট্রপতি বানাচ্ছে, তাতে বিএনপির আগ্রহ দেখানোর কিছু নেই।’
এর আগে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘সংসদে আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সুতরাং তারা যাকে পছন্দ করবেন তিনিই রাষ্ট্রপতি হবেন। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আমরা কিছুই ভাবছি না। আমরা এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আন্দোলনে রয়েছি। আগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা: রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
গত শনিবার সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে ‘হামলা, বাধা ও নেতাকর্মীদের আটকের’ প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। দিশাহারা হয়ে তারা দেশে বিশৃঙ্খলা করতে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। যেকোনো কর্মসূচি দিলেই সরকার বলে, তারা (বিএনপি) বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস করছে।’
তিনি বলেন, ‘পাল্টা কর্মসূচি যখন একটা রাজনৈতিক দল দেয়, তখন বুঝতে হবে, তারা একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা যেদিন কর্মসূচি দেব, সেদিনই তাদের (আওয়ামী লীগ) কর্মসূচি দিতে হবে! এতে প্রমাণ হয়, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা, গণতন্ত্র হত্যা, সামাজিক অব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সবকিছুতে দিশাহারা হয়ে দেশে বিশৃঙ্খলার জন্য পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) বলেছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়ে যাবেন। অনুরোধ জানাচ্ছি, কোন দিন কোন কর্মসূচি হবে, তা এখনই ঘোষণা দেন। তাহলে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচিগুলো নিরাপদ স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারি। কিন্তু আমরা কর্মসূচি ঘোষণার পরে আওয়ামী লীগ যদি কর্মসূচি ঘোষণা দেয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে, ইচ্ছাকৃতভাবে তারা দেশে একটা গন্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছিল। শোনা গিয়েছিল চমক আসতে পারে। আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীর নামও জানা হয়ে গিয়েছিল মানুষের। কিন্তু সেসবের ধারেকাছেও গেলেন না প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে ব্যক্তিটিকে এই পদে দলীয় মনোনয়ন দিলেন তার নাম কারও ধারণায় ছিল বলে জানা যায় না। বিস্ময় জাগিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনীত করেছেন।
নির্বাচনের বছর বলে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ কাকে বেছে নেয় এ নিয়ে মানুষের বিপুল আগ্রহ ছিল। গত দুইবারের ধারাবাহিকতায় এ পদের জন্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনীত করে তার ওপর ভরসা রাখলেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের উৎসাহিত করেছেন তিনি।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি টানা দুই মেয়াদে এ পদে আছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
হামিদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পথে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরবর্তীকালে জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তিনি। জেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ করা কোনো নেতা এই প্রথম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে যাচ্ছেন। চুপ্পুকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এমন আলোচনা চলছে যে, আবারও ছাত্রলীগের ‘গর্জিয়াসনেস’ স্পষ্ট হয়েছে। তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করার মধ্য দিয়ে কোনো সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন করারও দরকার হচ্ছে না।
গতকাল রবিবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আজ মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। পরদিন প্রত্যাহার। আর কোনো প্রার্থী না থাকলে এবং চুপ্পুর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তিনিই হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগ সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। এ ছাড়া বিরোধী দল রাষ্ট্রপতি পদে কাউকে প্রার্থী করবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। সে কারণে ধরে নেওয়া যায় যে, সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু : বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য হওয়ার কথা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু তার এক লেখায় জানিয়েছেন। ওই লেখায় তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্যাকবলিত মানুষকে বাঁচাতে পাবনায় ‘মুজিব বাঁধ’ উদ্বোধন করতে এসেছিলেন জাতির জনক। আমি তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। স্বাগত বক্তব্যের দায়িত্ব পড়ল আমার ওপর। বক্তৃতা দিলাম। ডায়াস থেকে যখন মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়েছি, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু আমার হাত ধরে ফেললেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু এঁকে বললেন, ‘তুই তো ভালো বলিস।’ বঙ্গবন্ধুর বুকে লেপ্টে আছি; কী বলব কী বলা উচিত, বুঝতে পারছিলাম না। মুহূর্তের জন্য হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম জাতির জনকের দিকে।
বঙ্গবন্ধুকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের মধ্য দিয়ে যথারীতি অনুষ্ঠান শেষ হলো। বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারে উঠতে যাচ্ছেন, এমন মুহূর্তে আমার কাছে জানতে চাইলেন ঢাকা যাব কি না? আগপাছ চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলাম। প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার ভ্রমণের সুযোগ হলো, তাও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। ঢাকায় হেলিকপ্টার থামল পুরনো বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন, ‘ওকে (আমাকে) বাসায় নিয়ে খেতে দাও, তারপর খরচ দিয়ে পাবনা পাঠিয়ে দিও।’
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ওই লেখায় বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল পঁচাত্তরে। ধানম-ির ৩২ নম্বরে। জেলা বাকশালের সম্পাদক ও ৫ যুগ্ম সম্পাদক মিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাই। জাতির জনক সেদিন তার স্বভাব ড্রেস কোড ‘হাফ-শার্ট’ ও ‘লুঙ্গি’ পরেছিলেন। এই সাক্ষাতের দু’মাস পরেই যে বঙ্গবন্ধু চলে যাবেন, কে জানত সেটা? ভবনে ঢুকে বঙ্গবন্ধুকে সালাম দিলাম। বাকশাল কমিটিতে স্থান দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। তিনি আমাদের নানা দিকনির্দেশনা দিলেন। চলে আসব, ঠিক এই মুহূর্তে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। বললেন ‘কিরে, আমার সঙ্গে তো ছবি না তুলে কেউ যায় না; তোরা কেন যাস।’ তাৎক্ষণিক ক্যামেরাম্যান ডাকলেন। ফটোবন্দি হলাম ‘রাজনীতির কবি’র সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে নেওয়া সেই ছবি আজও আমি আগলে রাখি। তার কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ স্মৃতিচিহ্ন যে এটাই!
কী কারণে চুপ্পুকে মনোনয়ন : আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনীতি ছাড়াও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন চুপ্পু। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ায় জেল খাটতে হয়েছিল তাকে। এ বিষয়টি স্মরণ করে তাকে রাষ্ট্রপতি পদে বিবেচনায় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের তোলা কথিত পদ্মা সেতুসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ খুব ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিলেন চুপ্পু। সরকার ও আওয়ামী লীগ যখন খুব মুষড়ে পড়েছিল তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে শক্ত অবস্থান নেন তিনি। এটাও তার প্রতি শেখ হাসিনার সুনজরের কারণ।
সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় সেটা চুপ্পুর নিজের হাতে করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর অপর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়িত্ব পালনকালে অবসরে যান তিনি।
ওই নেতা বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে। নির্বাচন ঘিরে রাষ্ট্রপতি পদটি খুব গুরুত্ব বহন করে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র ও চক্রান্ত নড়েচড়ে বসবে। ফলে রাষ্ট্রপতি পদে এমন একজন মানুষ দরকার যিনি আস্থা-বিশ্বাস ও কমিটমেন্টের জায়গায় শতভাগ অবিচল থাকবেন। যিনি চাপের কাছে, লোভের কাছে ও ষড়যন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। আবার দক্ষতাও লাগবে। এই বিবেচনাবোধ থেকে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বিকল্পহীন মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মূল বিষয় হলো ওই ব্যক্তি কতখানি আস্থা ও বিশ্বাসের, সেটি। এসবই আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর কাছে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে এগিয়ে গেছেন তিনি।
২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরবর্তীকালে তার প্রণীত প্রতিবেদন সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এই কাজটিও তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেক দূর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সততা-দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে অবিচল তিনি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত চুপ্পু নির্মম ওই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল।
মনোনয়নপত্র দাখিল : গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আসে। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র নিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রে সই করেন চুপ্পু। বেলা ১১টা ও ১১টা ৫ মিনিটে তার নামে দুটো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় অন্য নেতারা। চুপ্পুর একমাত্র ছেলে ও দুই নাতিও উপস্থিত ছিলেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নতুন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর পরিচিতি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তিনি সে অনুযায়ী এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের যুগ্ম সচিব ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নামে দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র আগামীকাল (আজ সোমবার) দুপুর ১টা থেকে বাছাই করা হবে।
সচিব বলেন, ‘আগামীকাল বাছাইয়ের পর বৈধ মনোনয়ন যেটা হবে তার নাম ঘোষণা করা হবে। আইনানুগভাবে প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব কে বাংলাদেশের পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।’
গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
পাবনা ছাত্রলীগ নেতা থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে : সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগ ছাড়ার পরই জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলেন। পাবনার একটি থানায় অস্ত্র লুট করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তাকে সামরিক আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় তিন বছর জেলা খাটেন তিনি। কারাবন্দি অবস্থায় বিভিন্ন ইন্টারোগেশন সেল জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় চুপ্পুকে। মুক্ত হয়েই তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। তিনি দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধও করেছেন। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল তিনি ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যান। ফিরে এসে পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নেন।
এ ছাড়া সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব পদে থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পাবনা জেলা পরিবার-পরিকল্পনা সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতা করা চুপ্পু পাবনা জেলা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবনসদস্য।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি ১৯৬৬ সালে পাবনার রাধানগর মজুমদার একাডেমি থেকে এসএসসি পাস করে এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি মনোবিজ্ঞানে এমএসসি এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ওই বছর বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সহকারী জজ পদে যোগ দেন। বিচারিক কাজের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান। এরপর পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়িত্ব পালন করেন। তার একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান রনি দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চুপ্পু শতভাগ আস্থাশীল ও বঙ্গবন্ধুপ্রেমী একজন ব্যক্তি। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন, রাষ্ট্রীয় গুরুদায়িত্বও পালন করেছেন বিশ্বাসের সঙ্গে। সেই সময় ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছিলেন।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি পদে বহুমুখী প্রতিভার ব্যক্তি খুঁজছিল দলীয় হাইকমান্ড। সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মধ্যে এর সবকিছুই আছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ : সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস জানান, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গণভবনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশটা আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাবে না। একটি স্মার্ট উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হয়ে ওঠার জন্য এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির ‘৪৩তম জাতীয় সমাবেশ-২০২৩’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি, আজ শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি, আমাদের দেশে মেট্রোরেল চালু হয়েছে, পাতাল রেলও চালু হবে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করে দিচ্ছি, পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে আমরা করেছি। আর এই প্রতিটি স্থাপনার নিরাপত্তার সঙ্গে আনসার বাহিনী বিশেষভাবে জড়িত রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের তৃণমূলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমরা বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যাতে করে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও যখন বিএনপি-জামায়াতরা শুরু করেছিল সেই ট্রেনে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে বাস, গাড়ি, লঞ্চে যখন তারা আগুন দিচ্ছিল। তখন আনসার বাহিনী তার নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করে এই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে এ দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তাছাড়া জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালে আনসার বাহিনীকে জাতীয় পতাকা দিয়েছি। নানা সুযোগ-সুবিধা ও চাকরি স্থায়ী করেছি। আনসার বাহিনীর পদোন্নয়ন ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আনসার সদস্যরা মাসিক যে ভাতা পান, তা বাড়ানো হয়েছে। ২৭টি উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন অফিস ও আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গরিব আনসার সদস্যদের জন্যও নতুন ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখনই আনসারদের জন্য সব কিছু করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে একাডেমিতে এসে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট মো. ফখরুল আলম তাকে স্বাগত জানান। পরে আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৮০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের হাতে আটটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন পদক তুলে দেন। তিনি আনসার একাডেমিতে বিভিন্ন স্থাপনার উদ্বোধন করেন এবং আনসার ও ভিডিপি পরিবেশিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কোরিওগ্রাফি উপভোগ করেন। তিনি পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এভাবেই আপনাদের কাজের স্বীকৃতি দিয়ে কাজের উৎসাহ যেন বৃদ্ধি পায় সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। বাংলাদেশ আনসার বাহিনীকে এখন আধুনিক ও মডেল ব্যাটালিয়নে রূপ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, রোমানা আলী টুসি এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল ইলাম প্রমুখসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
প্রথম রাষ্ট্রপতি
২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২
চতুর্থ রাষ্ট্রপতি
২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
দ্বিতীয় (অস্থায়ী)
১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে
১০ জানুয়ারি ১৯৭২
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
তৃতীয়
১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে
২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩
মোহাম্মদউল্লাহ
পঞ্চম
২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫
বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
সপ্তম
৬ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭
খন্দকার মোশতাক আহমেদ
ষষ্ঠ
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে
৬ নভেম্বর ১৯৭৫
জিয়াউর রহমান
অষ্টম
২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১
বিচারপতি আবদুস সাত্তার
নবম (অস্থায়ী) ও দশম
৩০ মে ১৯৮১ থেকে
২৪ মার্চ ১৯৮২
বিচারপতি আহ্সান উদ্দীন চৌধুরী
একাদশ
২৭ মার্চ ১৯৮২ থেকে
১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
দ্বাদশ
১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ
ত্রয়োদশ (অস্থায়ী) ও পঞ্চদশ
৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯১
৯ অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১৪ নভেম্বর ২০০১
আবদুর রহমান বিশ্বাস
চতুর্দশ
৯ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯৬
একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী
ষোড়শ
১৪ নভেম্বর ২০০১ থেকে ২১ জুন ২০০২
জমির উদ্দিন সরকার
সপ্তদশ (ভারপ্রাপ্ত)
২১ জুন ২০০২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ
অষ্টাদশ
৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
মো. জিল্লুর রহমান
ঊনবিংশতম
১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ২০ মার্চ ২০১৩
মো. আবদুল হামিদ
বিংশতম-একবিংশতম
২০ মার্চ ২০১৩ থেকে
২৩ এপ্রিল ২০২৩
তুরস্কের হাতাই প্রদেশের শহর ইস্কান্দারুন। গত সপ্তাহে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে একটি। স্বজনদের হারিয়ে স্থানীয় এক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ৬১ বছরের নারী সেরিজান আগবাস। কাছেই তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। কিন্তু সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যেকোনো সময়ই ধসে পড়ার শঙ্কা আছে। সেখানে আর ফেরার ইচ্ছে নেই তার। তাই ওই স্কুলেই উদ্ধারকারীদের সঙ্গেই কাটছে তার সময়। খাচ্ছেন তাদের দেওয়া খাবার। বাড়ি ফেরার আশাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার স্কুলের বাগানে একটি চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছিলেন তিনি। সে সময় আলজাজিরার এক সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা হয় তার। তাকেই তিনি জানান নিজের সর্বস্ব হারানোর কথা। ওই নারী বলেন, আমরা সব হারিয়েছি। হারানোর বেদনা যে কত দীর্ঘ সেটা আমরা জেনে গেছি। ঘরবাড়িতে লুটতরাজ নিয়ে বলেন, আমার কাছে আছে মাত্র ১৫ লিরা; যা দিয়ে একবারের খাবার হবে। তবুও আমার এখনো আর হারানোর কিছু নেই। স্বজন হারানোর দীর্ঘ বেদনাই আমার সম্বল এখন।
তুরস্ক ও সিরিয়ার সরকারি সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৬০৫ জন। আর সিরিয়াতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৭৪ জন। তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার শঙ্কা নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। গত কয়েক দিনে হাতেগোনা কয়েকজনকে ‘অলৌকিকভাবে’ পাওয়া গেলেও সময় যত পেরুচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ততই ফিকে হচ্ছে।
আলজাজিরা বলছে, তুরস্কে এখনো উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক হাজার উদ্ধারকর্মী। গতকালও দেশটির ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশু ও কিশোরীসহ বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির কর্র্তৃপক্ষ বলছে, উদ্ধারকাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরও যদি কোনো জীবিত মানুষকে ধ্বংসস্তূপে পাওয়া যায়, তবে সেটা খুবই অলৌকিক ঘটনা হবে বলে তারা মনে করছেন। গত শনিবার থেকে জার্মান উদ্ধারকারী দল ও অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী তাদের তল্লাশি অভিযানও স্থগিত ঘোষণা করে।
গতকাল বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভের কারণে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জায়গায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ কমে আসায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটারও আশঙ্কা করা হচ্ছে, বলেছেন এক উদ্ধারকর্মী। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি দিতে তিনি প্রয়োজনে জরুরি ক্ষমতার ব্যবহার করবেন। গত শনিবার অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়েরে কুগেলওয়েইস জানান, হাতাই প্রদেশে অজ্ঞাত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাতের কারণে অস্ট্রিয়া বাহিনীর দুর্যোগ ত্রাণ ইউনিটের অনেক কর্মী অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে বেইজ ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
অস্ট্রিয়া তাদের উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তুরস্কের সেনাবাহিনী অস্ট্রিয়ার কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় উদ্ধার অভিযান ফের শুরুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তল্লাশি ও উদ্ধারকারী গোষ্ঠী আইএসএআরের জার্মান শাখা এবং জার্মান ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিকাল রিলিফও (টিএসডব্লিউ) নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়ে তাদের অভিযান স্থগিত রেখেছে। আইএসএআরের মুখপাত্র স্তেফান হেইন বলেন, নানান অংশের মধ্যে সংঘাতের অনেক অনেক খবর আসছে, গুলিও ছোড়া হয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবনগুলোর নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১১৩টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন তুরস্কের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঠিকাদারসহ ইতিমধ্যে ১২ ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শনিবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম লুটপাটের অভিযোগে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা।
এদিকে আলজাজিরার এক খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক-সিরিয়ার নাগরিকদের সাময়িক ভিসা দেবে জার্মানি। বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসরত তুরস্ক ও সিরিয়ার নাগরিকরা এই সুবিধার আওতায় স্বজনদের নিয়ে যেতে পারবেন। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা স্থানীয় সময় শনিবার বিল্ড পত্রিকাকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এটা জরুরি সহায়তা। জার্মানিতে বসবাসরত তুরস্ক ও সিরীয় পরিবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে আত্মীয়স্বজনকে তাদের কাছে নিয়ে আসতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে না।
শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে স্বাধীন হওয়া এ দেশের সর্বোচ্চ পদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেশিরভাগ সময়েই দায়িত্ব পালন করেছেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। সেনাপ্রধান, বিচারপতি ও শিক্ষকএমন পেশাজীবীরা রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত যারা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র সাতজন রাজনীতিক। অরাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকায় অনেক ঝুটঝামেলা, সংবিধান কাটাছেঁড়াসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশ ও দেশের মানুষকে।
এমন প্রেক্ষাপটে ২০০২ সালের ৯ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজনীতিবিদকে রাষ্ট্রপতি বানাব। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমানকে মনোনীত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তৎকালীন সংসদের উপনেতা জিল্লুুর রহমানকে। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ মারা যান আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া এ নেতা। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন সংসদের স্পিকার মো. আবদুল হামিদকে। একই বছর ২২ এপ্রিল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হন তিনি। এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারপ্রাপ্ত, অস্থায়ী ও পূর্ণ মেয়াদসহ ১৭ জনের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মাত্র সাতজন রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বিজয়ীদের নিয়েই গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তার প্রথম মেয়াদ ধরা হয় ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি চতুর্থ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত।
মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় অস্থায়ী সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন চৌকস রাজনৈতিক নেতা। তাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
পঞ্চম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদউল্লাহ একসময় আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৩ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হন তিনি। ছিলেন ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৯১ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন।
ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি ছিলেন খন্দকার মোশতাক। আওয়ামী লীগ করলেও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত এ নেতার কুখ্যাতি রয়েছে। তার দায়িত্বকাল ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস মুসলিম লীগ তথা বরিশাল বিভাগের শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির শাসন আমলে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ষোড়শ রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী পেশাজীবী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের ২১ জুন পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। তার পদত্যাগের পর সপ্তদশ (ভারপ্রাপ্ত) রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জমিরউদ্দিন সরকার ন্যাপ-ভাসানীর রাজনীতি থেকে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন।
সপ্তম রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, নবম ও দশম রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, একাদশ রাষ্ট্রপতি আহসান উদ্দীন চৌধুরী, ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বিচারপতি থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তবে অষ্টাদশ রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন পেশায় শিক্ষক। অষ্টম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দ্বাদশ রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনাশাসক থেকে রাষ্ট্রপতি পদ দখল করে নেন। ক্ষমতায় থেকে পরে দুজনই রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
অবশ্য রাষ্ট্রপতি রাজনীতিবিদই হতে হবে এমন কোনো নিয়ম না থাকলেও যেহেতু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে সেক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যে এই নিয়ে নেতিবাচক একটি ধারণা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন রাজনীতি সম্পৃক্ত। তবে তিনি বিচারক হলেও তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতি করা। প্রবীণ এ নেতা বলেন, ‘বিচারক, আমলা হওয়ার আগে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় আমি আশাবাদী তিনি রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’
পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, রাষ্ট্রপতি রাজনীতিবিদ হতেই হবে এমন কথা নেই। বাংলাদেশ যেহেতু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জন্ম নিয়েছে, সেক্ষেত্রে একটু কেমন দেখাতে পারে। রাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য দরকার। রাষ্ট্রপতির কাজ যেন শুধু মাজার উদ্বোধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। তার কাজে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন হোক।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আজ বুধবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’।
তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হবে। দিবসটি উদযাপন উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মত এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভুমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পিছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ।
অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে অতিরিক্ত যে লাভের কথা প্রচার করা হয়, তার প্রায় সবটাই বানোয়াট। আপাতদৃষ্টিতে তামাক চাষে বেশি আয় উপার্জন হলেও এই আয় থেকে পারিবারিক শ্রমের পারিতোষিক, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিজস্ব গাছের বা কাঠের দাম, পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য ব্যয় ইত্যাদি বাদ দিলে তামাক চাষে লাভের বদলে ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে নেট সোশ্যাল রিটার্ন ঋণাত্মক, প্রতি একরে ক্ষতি ৯১৬.১১ ডলার।
টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বন নিধনের পেছনে তামাক চাষ দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় তামাকপাতা শুকানোর (কিউরিং) কাজে এক বছরেই প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। স্থানীয় বন থেকে এইসব কাঠ সংগ্রহ করায় পাহাড়গুলো বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছে এবং সেখানকার অধিবাসীরা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নিকটস্থ জলাশয়ে মিশে মৎস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাক চাষের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য তামাক কোম্পানিগুলো প্রায়শই নিজেদের অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে। তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির (সিএসআর) মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের ঘটানো ক্ষতি আড়াল করে এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করণের মাধ্যমেই এসব ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।