
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান ও সাবেক ছয় চিকিৎসক এবং দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক (ব্রেন ডেথ) অঙ্গদাতা সারা ইসলামের মা ও একজন মুক্তিযোদ্ধা মরণোত্তর অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছেন। গতকাল সোমবার বিএসএমএমইউতে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নামে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই আটজন অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন।
অঙ্গীকারদাতাদের মধ্যে ছয়জন ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন। তারা হলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল ও বিএসএমএমইউর কিডনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. হারুন অর রশিদ এবং সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা। এ ছাড়া মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করেছেন বিএসএমএমইউর সাবেক চিকিৎসক অধ্যাপক সজল ব্যানার্জী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান।
ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকারনামাদের নাম ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন অঙ্গদানের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’ উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা।
একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারা ইসলামের অঙ্গ অন্য চারজন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিএসএমএমইউ ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারা ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। তার পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন। ভবিষ্যতে আমি নিজেও এ ধরনের মহতী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারি সেটা আমার বিবেচনায় রয়েছে।
বিএনপি ঘোষিত পদযাত্রা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি পদযাত্রার নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য বিএনপি দিনের বেলা পদযাত্রা করে রাতে কূটনীতিকদের পদলেহনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বিএনপির উচিত বিশৃঙ্খলা-ষড়যন্ত্র পরিহার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে।
তিনি আরও বলেন, সারা ইসলাম মেধাবী একজন ছাত্রী ছিলেন। জটিল এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুদক্ষ চিত্রশল্পী ছিলেন। মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তার মা শবনম সুলতানা তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় সঠিক অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ছয়জন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষা করে সেখান থেকে দুজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে জটিল এই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং শেষ হয় পরদিন ভোর প্রায় ৫টার দিকে। আইন অনুযায়ী গঠিত প্রতিটি টিম এখানে সুদক্ষভাবে কাজ করেছে। প্রতিস্থাপন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। ইউরোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, কিডনি ফাউন্ডেশন, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কমিটির সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অভিনন্দন জানাই।
সারা ইসলামের অবদানকে সম্মান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারা ইসলামই প্রথম ব্যক্তি যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন। তার দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন! সারা তা দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারা ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছি। আমাদের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। ছোট্ট একটা মেয়ে আমাদের যা শিখিয়ে দিয়ে গেল, আমরা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। সারার অঙ্গদান একটা বিশাল ব্যাপার। আমার জীবনে দেখা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীরা খুব কষ্ট পায়। এদের যদি আমরা ন্যূনতম সাহায্যটুকুও করতে পারি এটাই আমাদের জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, সারার দুটি কিডনি যে দুই রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। তাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীটিও ভালো আছে। তবে তাকে ছুটি দিতে একটু সময় লাগবে।
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে সারা ইসলাম ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তার দুই কিডনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে বের করে আনা হয়। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। সারার অপর কিডনিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও সারার দুটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় রোগী শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার (৫৬) ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) চোখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌসী আক্তারের চোখে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় ১১০০ বর্গফুটের তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের গড়পড়তা মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এই ফ্ল্যাটের প্রতি রুমে চারজন খুব সহজেই বসবাস করতে পারে। ড্রইং-ডাইনিংয়েও আরও এক-দুজনের থাকা সম্ভব। ফলে ওই ফ্ল্যাটে ১৩ জন ছাত্রী থাকতে পারে। অথচ রূপনগরেই ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যয়ে ৫০০ আসনের ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করেছে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাঁচ বছর আগে নির্মিত ওই হোস্টেলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩ জন ছাত্রী অবস্থান করেছে; অর্থাৎ ১৩ ছাত্রীর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ২৭ কোটি টাকার হোস্টেল।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক তদন্ত প্রতিবেদনে স্কুল কর্তৃপক্ষের অযথা ও অপরিকল্পিত অর্থ খরচের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। এরপর কয়েক মাস তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তদন্ত দল। এতে শতকোটি টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনটি আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া এই প্রতিবেদনের কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত ফাইল এখনো আমার কাছে আসেনি। তাই মন্তব্য করতে পারব না। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্কুল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধার জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়নি। সবাই জানে, এই হোস্টেলে কোনোভাবেই আবাসিক ছাত্রী পাওয়া যাবে না। আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। মূলত বড় অঙ্কের টাকা খরচের জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ যত বেশি টাকা খরচ করা সম্ভব হবে, তত বেশি টাকা নয়ছয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ২০১৮ সালের বিল, ভাউচার ও স্টেটমেন্ট যাচাই করে পরিদর্শন দল দেখতে পায়, অধ্যক্ষের বাসভবন ও মহিলা হোস্টেল নির্মাণকাজের ব্যয় বাবদ লারা এন্টারপ্রাইজকে মোট ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি অধ্যক্ষের বাসভবন ও ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা মহিলা হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। গত বছরের ৯ জুন মহিলা হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৩ জন; অর্থাৎ ৫০০ সিটের মধ্যে ৪৮৭টিই ফাঁকা। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক দিন আগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সেই ১৩ জন ছাত্রীও হোস্টেলে নেই। মাত্র চার-পাঁচজন অবস্থান করছে। অথচ তাদের পেছনে আট-দশ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী কাজ করছেন। মাসে অনেক টাকা মেইনটেন্যান্সে খরচ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চিন্তা করে হোস্টেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে একটি উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। সেটা হলে হোস্টেলটি প্রয়োজন হবে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোস্টেলটি করা হয়েছে স্কুলের টাকায়। তাহলে সেটা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে?
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ ছাড়া ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ টাকার কাজের প্রয়োজনীতা ও যথাযথ হিসাব দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরে আইন ভেঙে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্মানী নিয়েছে। বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষকদের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। ৬ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩ কোটি টাকা তোলা হলেও বের হয়নি ম্যাগাজিন। এমনকি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের নামেও দুর্নীতি হয়েছে। ৭ বছরে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অবস্থিত মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৬টি ক্যাম্পাস। মনিপুর এলাকায় বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে। এর বাইরে শেওড়াপাড়া, ইব্রাহীমপুর ও রূপনগরে শাখা রয়েছে। আর রূপনগরে আলাদাভাবে করা হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারের ওপরে। প্রতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের টিউশন ফি, ভর্তি ও সেশনচার্জ বাবদ প্রতিষ্ঠানটিতে এককালীন আয় হয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতি মাসে টিউশন ফি বাবদ ওঠে প্রায় ৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরে ১১৭ কোটি টাকা আয় হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ৩০ কোটি খরচ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বাকি টাকায় সারা বছরই চলে নানা ধরনের উন্নয়নকাজ ও নানা ধরনের কেনাকাটা। এমনকি নতুন ভবন ভেঙেও তৈরি করা হয়েছে আরেক নতুন ভবন। প্রতিষ্ঠানটির বালিকা ক্যাম্পাসের চারদিক ঘুরিয়ে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন। কয়েক বছর ধরে সেই ভবন ভেঙে নতুন তিনটি ১৫তলা ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এগুলো নির্মাণের জন্য আগে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হলেও সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ১৩০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। যাদের অধীনেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার, যিনি সর্বশেষ গভর্নিং বডিরও সভাপতি ছিলেন। সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সরকারের শিল্প প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহম্মেদ মজুমদার, এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, জাকিয়া শিল্পী, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মো. শহিদুল্লাহ্ শিকদার এবং রেজাউল হক ভুঁঞা।
ডিআইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবের সম্মানী বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সম্মানী থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করার কথা। সেই হিসাবে সম্মানী থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৪ টাকা। এ ছাড়া গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ অনুযায়ী, সদস্যদের সম্মানীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। যেহেতু সম্মানী নেওয়ার সপক্ষে কোনো বিধান নেই, তাই সম্মানী বাবদ গৃহীত সব টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মূল ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। এসব ক্লাসের সম্মানী বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার ৫৬ টাকা। কিন্তু এই সম্মানীর বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর বাবদ ২ কোটি ৯ লাখ ২ হাজার ৭০৫ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এতে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অভিভাবকরা বলেছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা শুরু হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ছিল মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। তখন নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকদের বেতনও আংশিক দেওয়া হয়। অথচ করোনাকালীন ২০২০ ও ২০২১ সালে যেখানে নিয়মিত ক্লাসই হয়নি, সেখানে বিশেষ ক্লাসের নামে বড় অঙ্কের বিল দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃক নিযুক্ত হোসেন দেলোয়ার অ্যান্ড কোং-এর অডিট রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সরবরাহ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩১৪ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর বিপরীতে মাত্র ১ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার ৯৭৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভ্যাট হওয়ার কথা ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬২ টাকা। তাই বাকি ২২ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ২৮৮ টাকা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া আবশ্যক।
বিদ্যালয়টির ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাস মেরামত ও রং করার কাজে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে পরিদর্শন দল। তারা বলছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯১০ টাকার কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার মাত্র ৭ দিনের মাথায় বিল পরিশোধের সুপারিশ করা হয়। অথচ ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাসটি অনেক বড় এলাকা। মাত্র ৬ দিনে এর নির্মাণ, মেরামত ও রং এর কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কাজটি আদৌ করা হয়েছিল কি না, তা সন্দেহজনক। আর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করে দেখা যায়, এটি একটি আমদানি-রপ্তানিকারক ও তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের এ ধরনের কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
২০১৫-১৬ হতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বিল ভাউচার যাচাইয়ে আরও দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জারা এন্টারপ্রাইজ, লারা এন্টারপ্রাইজ, তৌহিদ ডেভেলপারস অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, ওশান ইনফরমেশন সিস্টেম ও মনির ডেকোরেটরকে মোট ৪৭ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৩ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ এসব বিল বাবদ ১০ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬ টাকার আয়কর পরিশোধ করা হয়নি। দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আয়করের পুরো টাকা আদায় করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রতিস্থাপনেও ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৯২ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে; যা বিধিবহির্ভূত বলেছে পরিদর্শন দল।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক বলছেন, ঘুরেফিরে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই স্কুলের শত শত কোটি টাকার কাজ করছে। বলতে গেলে, কয়েকজন ট্রাস্টির সৃষ্ট ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমেই বড় অঙ্কের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এত ভবনের কী দরকার? প্রতিনিয়ত নতুন ভবন ভেঙে আবার ভবন করা হচ্ছে। ভবন নির্মাণ আর কেনাকাটার মাধ্যমেই লুটপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এর আগে গত অক্টোবরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত অপর এক তদন্তে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অবসরের পর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বা ট্রাস্ট তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তা বৈধ নয় এবং তারা তা দিতে পারে না। কিন্তু এরপরও ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখনো প্রতিবেদনের কপি পাইনি। তা পাওয়ার পর জবাব দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। আমরা ওই সময়ের মধ্যেই এ ব্যাপারে জবাব দেব।’
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ধারাবাহিকতায় দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গড়ে উঠছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু যথাযথ পাইলিংয়ের (ভবন বা স্থাপনার এক ধরনের ফাউন্ডেশন যা স্থাপনার নিচে মাটির গভীরে ভার স্থানান্তর করে স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়) মাধ্যমে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে খোদ প্রকৌশলীদের মধ্যেই রয়েছে সংশয়। এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীসহ তিন বিভাগীয় শহরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) বহুতল ভবনগুলো নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। শক্তিশালী বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে এসব ভবন ধসে না পড়ে টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল আগে থেকেই। বিশেষ করে সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজারো বহুতল ভবন ধসে পড়ার পর এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।
দেশের প্রধান শহরগুলোতে জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে গড়ে উঠছে সুউচ্চ সব ভবন। তবে নিচু ভূমির মাটির নিচে কাদামাটির পরিমাণ বেশি। ভৌগোলিকভাবে পুরো বাংলাদেশ (তিন পার্বত্য জেলা, লালমাই, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং বরেন্দ্রভূমি ছাড়া) পলি সঞ্চয়নের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। আর তাই মাটির নিচে পানির প্রবাহ বেশি, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও পিলার তৈরিকালে কয়েকটি পিলারের নিচে এমন পানির প্রবাহ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নকশায় পরিবর্তন এনে আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু ভবন নির্মাণে সেই আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভবন মালিক কিংবা ডেভেলপাররা (ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান) মাটির নিচে ভবনের ভিত মজবুত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করে থাকেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। চট্টগ্রামের মাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বেসরকারি সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। ‘মৃত্তিকা’ নামে সয়েল টেস্টের (মাটি পরীক্ষা) একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্ণধার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবন মালিকরা ভবনের ওপরের অংশের সাজসজ্জায় কিংবা ছাদের রড দেওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু সচেতন ভবনের নিচের অংশের নির্মাণে সেই সচেতনতা দেখা যায় না। যেনতেনভাবে পাইলিং করে ভবন নির্মাণ করলেই যেন হয়ে গেল। কিন্তু তারা বুঝতে চায় না পা যদি দুর্বল হয়, তাহলে শরীরটা দাঁড়িয়ে থাকবে কীসের ওপর?’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পাহাড়ি এলাকার আশপাশ ছাড়া দেশের অন্য সব এলাকায় মাটির নিচে কাদা ও বালি মাটির আধিক্য বেশি। বালি মাটির নিচে যদি পানির স্তর থাকে আর তখন যদি সঠিকভাবে ট্রিটমেন্ট না করে ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে ঝুঁকি বাড়বে।’
দেশের মাটিতে পানির আধিক্য সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাম্মেল বলেন, ‘আমাদের মাটির কিছু দূর পরপর পানির পকেট রয়েছে। তাই ভবনের ডিজাইন করতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
গত রবিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর পশ্চিম বাকলিয়া বগার বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাকলিয়া এক্সেস রোডকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। সেখানে নির্মাণাধীন একটি ছয় তলা ভবনের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকে। তিনি বলেন, ‘এই ভবন নির্মাণের জন্য মাটির ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইলিং করা হয়েছে। ৫০ ফুটের নিচে আছে পানির স্তর। আবার ৮০ ফুটের নিচেও পানি আছে। তাই মধ্য এলাকা পর্যন্ত পাইলিং করে বেইজ করা হয়েছে।’
তবে এভাবে অপরিকল্পিত পাইলিংয়ে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান পুরকৌশলবিদ এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ভূমির নিচের দিকে মাটির চেয়ে বালির আধিক্য বেশি। আর সেই বালির নিচে যদি পানির স্তর থাকে তাহলে অবশ্যই ট্রিটমেন্ট করে বেইস করতে হবে। আর কাদামাটির ওপর বেইস করলে তা স্লিপ করতে পারে। আর এ জন্যই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন দেবে যাওয়া কিংবা হেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
মাটির নিচের কাঠামো কেমন?
নগর নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভূগোলবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের নগরগুলোতে এখন জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব এলাকার নিচের মাটির গাঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। অবশ্য সেই দুর্বল কাঠামোর মধ্যেও বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু তা হতে হবে নির্মাণ বিধি অনুযায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে এসব ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কি না?’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপান ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এক সময় সেখানে বহুতল ভবন নির্মিত হতো না। এখন ১০০ তলারও বেশি উচ্চতার ভবন নির্মিত হচ্ছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রযুক্তি রয়েছে। আমরা সেই প্রযুক্তি মেনে চলছি কি না সেটাই প্রশ্ন। প্রকৌশলীদের মতে, আমরা অনেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না। একসময় দেশে বিমবিহীন ভবন নির্মাণের জোয়ার শুরু হয়েছিল। পরে যখন জানা গেল এসব ভবনে ভূমিকম্পে ঝুঁকি বেশি, তখন সেই ধারণা থেকে সরে আসে অনেকে। তবে বিমবিহীন ভবন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, আমরা সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকে দক্ষ ছিলাম না। সাধারণ মিস্ত্রিরাও এই পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ শুরু করে দিয়েছিল।’
দেশের মাটির গঠন কাঠামো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান বলেন, ‘ভৌগোলিকগত কারণে আমাদের দেশের মাটির গঠন কাঠামো শক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে পিউর বালি মাটির ওপরে বেইস করা নিরাপদ। আর যদি কাঁদা মাটির ওপরে বেইস করা হয় তাহলে ভূমিকম্পে নিচের পানির সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে তা তরলীকরণ হয়ে পিচ্ছিল হয়ে যেতে পারে। যা ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন বর্ষাকালে কাদামাটি স্লিপ কাটে, কিন্তু বালি মাটি স্লিপ কাটে না।’
দেশের ভবনগুলো কি নিরাপদ?
ভূ-তত্ত্ববিদ, ভূগোলবিদ ও প্রকৌশলী সবারই অভিমত দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হয় না। আর এসব ভবনগুলোতে ঝুঁকি বেশি। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মমিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের পুরো এলাকা জলাধার ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এসব ভবন কি নির্মাণ বিধি মেনে নির্মিত হয়েছে? বর্তমানে দেশের ভেতরে কিংবা দেশের প্রান্তসীমায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যদি মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্পও আমাদের এখানে উৎপত্তি হয় তাহলে ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত আছি? আমাদের ভবনগুলোর কি অবস্থা হবে?’
দেশের ভেতরেই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান। ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়ে কাজ করা এই গবেষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে না। আর এতেই চিন্তার কারণ বাড়ছে। ভূমিকম্প হলে শক্তিগুলো বের হয়ে যেত, কিন্তু ভূমিকম্প না হওয়ায় শক্তিগুলো জমা হয়ে বড় ভূমিকম্প হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯১৮ সালে ৭ দশমিক ৬ রিকটার স্কেলের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়নি। ফলে আমরা বড় ভূমিকম্পের অপেক্ষায় আছি বলতে পারি।’
ভূমিকম্পের জন্য কোনো এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে পুরো দেশই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারপরও নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে ওঠা ভবন এবং কক্সবাজারের সাগরতীরে গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে লিকুফিকশানের (মাটির সঙ্গে পানি মিশ্রিত হয়ে তরল হয়ে যাওয়াকে বোঝায়) শঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে এসব ভবন ধসে পড়বে। তাই যেকোনো জায়গায় ভবন নির্মাণে মাটির স্তর পরীক্ষা করে ভবনের ডিজাইন করতে হবে।’
সমাধান কি?
পুরকৌশলবিদ ও ভূমিকম্পবিদ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘নগরায়ণের কারণে জলাশয় ও নিচু এলাকা ভরাট করে ভবন নির্মাণ ছাড়া গতি নেই। তবে এ জন্য প্রকৌশল প্রযুক্তি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু পাথরের ওপর গড়ে তোলা হয়। যেহেতু ভৌগোলিকভাবে আমাদের মাটির কাঠামো দুর্বল সে জন্য ৫০০ মিলিয়ন টাকা খরচ করে মাটির নিচে সিমেন্ট দিয়ে পাথর বানিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তারপর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।’
কোন পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ যথাযথ এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘কোনো ভবনের পাইলিং যদি ১০০ মিটার হয় তাহলে ওপরের দিকে ১০ মিটারে মাটির সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে দুরমুচ (শক্ত কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া) করতে হবে। তাহলে ভূমিকম্প হলে সেই ঝাঁকুনিটি সহ্য করতে পারবে। কিন্তু আমাদের ভবনগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয়নি এবং করা হচ্ছে না, এতেই ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকি কমাতে এখনই সব ভবন সঠিক পদ্ধতি মেনে নির্মাণ করা উচিত।’
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার বার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে বছরে ১০০ ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই ১০০ ভূমিকম্পের মধ্যে কিছু ভূমিকম্প অবলীলায় খুব মারাত্মক হয়ে থাকে। পৃথিবী ছোট-বড় ২৭টি প্লেট নিয়ে গঠিত এবং এই প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত গতিতে রয়েছে। ফলে প্লেটগুলোর প্রান্তসীমায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
সম্প্রতি তুরস্কে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকম্প হলে কে অবস্থা হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। দেশের পূর্ব পাশ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী হয়ে একটি ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের ফল্ট লাইন রয়েছে। যা সিলেটের উত্তর প্রান্ত হয়ে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ফল্ট লাইনের কারণে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রায়ই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এছাড়া দেশের ভেতরেও কিছু খাদ রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৪ এপ্রিল তার নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আমি ঘোষণা করছি যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন।
এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। সিইসি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র একই ব্যক্তির নামে জমা পড়ে। যার নামে দাখিল করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই করেছি। বাছাইয়ের সময় যারা প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র বাছাই করে দুটির মধ্যে একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণভাবে বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়পত্র গ্রহণের কার্যকারিতা ছিল না। তিনি আরও বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা ৭ অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দলের হয়ে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত রবিবার ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আসেন। এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন। মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিনিই হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
এদিকে গতকাল দুপুরে নির্বাচন ভবনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো রাষ্ট্রপতি করিনি যার নাম ইয়াজউদ্দিন, কার্যক্রমে ইয়েস উদ্দিন। এ ইয়েস ধরনের কোনো ব্যক্তিকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, কোনো অপশক্তিকে মনোনয়ন দিইনি। তিনি বলেন, টেররিজমে বিশ্বাস করে, আগুন সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে এমন কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সুশিক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি। যার ক্যারিয়ার, গোটা জীবনটাই বর্ণাঢ্য। এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করায় সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাদের বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রধান নির্বাচনের ঘোষণাটি আমরা পেয়েছি। একটা কপি আমাদের দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিএনপির আগ্রহ নেই এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে তাদের আগ্রহ থাকবে না। দেশের সংবিধানে, গণতন্ত্রে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। গণতন্ত্র ও সংবিধানে যাদের আগ্রহ না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কে হলো না হলো তা নিয়ে তাদের আগ্রহ না থাকারই কথা। এ নিয়ে আমরা অবাক হইনি। বিএনপি এমনই বলবে এটা তাদের মুখে শোভা পাবে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। বিএনপির মতো দল নির্বাচনে থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা।
নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংবিধান মেনে কাজ করার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে দায়িত্বভার দিয়েছে সেটা তিনি করবেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করার থাকবে না।
বিএনপির সংলাপেও আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি তাদের সংলাপে ডেকেছেন, যায়নি, ইসির সংলাপে যায়নি। তারা সংলাপে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না।
প্রায় তিন বছর ধরে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহনুর ইসলাম লিজা। চলতি মাসে টাকা রিচার্জ করতে গেলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয় এখন থেকে তাকে পোস্ট পেইড বিল দিতে হবে। কী কারণে তাকে প্রি-পেইড থেকে পোস্ট পেইডে যেতে হলো তাও জানেন না তিনি। তবে তাকে এখন একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুনতে হবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে লিজার মতো ওই এলাকার কয়েক হাজার গ্রাহক এখন চরম ভোগান্তির শিকার।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিতাসের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘তারা (তিতাস) নিজেরা মিটার দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি মিটার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক, যাতে গ্রাহক পছন্দমতো মিটার কিনতে পারেন। কিন্তু তা না করে গ্রাহককে জিম্মি করা হয়েছে। এখন তারা গ্যাস দেবে না। উল্টো গ্যাসের দাম আদায় করবে। এটা ভয়ংকর রকমের অপরাধ। তিতাস গ্রাহককে লুণ্ঠন করছে নানা উপায়ে। ২০১৫ সালের কমিশনের আদেশে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা বলা হলেও তারা তা পারেনি। এগুলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
তিতাস গ্যাসের গ্রাহক মাহনুর ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তার বাসায় গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে ব্যাংকে গেলে তাকে একটি নোটিস দেখানো হয়। তাতে লেখা সাময়িকভাবে তিতাসের কার্ড রিচার্জ বন্ধ। ওই নোটিসে উল্লেখ করা যোগাযোগ নম্বরে ফোন দেওয়ার পর শনিবার তিতাস গ্যাসের কর্মী তার বাসায় গিয়ে প্রি-পেইড মিটারটি খুলে পোস্ট পেইড সংযোগ দিয়ে দেন। এজন্য কিছু টাকাও তাকে দিতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাহনুর বলেন, ‘ইচ্ছে হলো মিটার লাগাবে আবার খুলবে এটা কোন ধরনের কথা? কারিগরি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে গ্রাহক হিসেবে তা জানার অধিকার আমার আছে। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ আগে-পরে এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। এমনকি কবে নাগাদ প্রি-পেইড মিটার ফিরে পাব কিংবা আদৌ পাব কি না তাও জানি না।’
‘এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাস বা কখনো কখনো তারও বেশি সময় ধরে গ্যাস ব্যবহার করতে পারি। আর এখন আমাকে একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি মাসে প্রায় ১১শ টাকা দিতে হবে। কারণ পোস্ট পেইডে বিল ফিক্সড। তিতাসের কারণে কেন আমাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে’ যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী লিলি জানান, তিনিও আগে থেকে কিছুই জানতেন না। কার্ড রিচার্জ করতে গেলে তাকে গ্যাসের পোস্ট পেইড সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে তাকে এখন থেকে প্রতি মাসে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
গত জানুয়ারি থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ধানম-ি ও মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, এমনিতেই ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন আবার বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা আগে থেকেই মাইকিং করে কিংবা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহককে জানানোর কথা থাকলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে তিতাসের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন (উত্তর) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইমাম উদ্দীন শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে ৮ হাজার ৬শ গ্রাহক এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। তবে সমাধানের আগ পর্যন্ত গ্রাহককে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের মতো প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হবে।’
কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ইমাম উদ্দীন সার্ভার জটিলতার কথা বললেও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ মোল্লাহ্ জানালেন মিটারের সমস্যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারে শুরুর দিকে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় ওই মিটারগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। এখন তাতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ওই মিটার আর আমদানি করা হচ্ছে না। ফলে নতুন করে আবার মিটার স্থাপন করা হবে। ধারাবাহিকভাবে এই কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের দু’জন কর্মকর্তা জানান, যে কোম্পানির কাছ থেকে ওই সেবা নেওয়া হয়েছিল তারা এখন আর এ ধরনের ব্যবসা করে না। ফলে ওই কোম্পানির কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট নেওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো আসার ওপর তা পর্যায়ক্রমে ওইসব গ্রাহকদের দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ এই মিটার আনা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে মিটার আমদানি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এদিকে তিতাসের অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারগুলোর স্থায়িত্ব ২০ বছর। প্রতি মাসে মিটার ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা করে নেওয়া হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। কিন্তু ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব মিটার অকেজো হয়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কারিগরি কারণে কোনো সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন।
বর্তমানে একজন পোস্ট পেইড গ্রাহককে দুই চুলার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকার বিল দিতে হয়। সাধারণত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় তার চেয়ে বেশি হিসাব ধরে দাম নির্ধারণের কারণে গ্রাহকের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। অনেক সময় পুরো মাসে কোনো গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল দিতে হয় একই পরিমাণে। কিন্তু প্রি-পেইড গ্রাহককে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিল পরিশোধ করতে হয়।
এদিকে গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে।
২০২৫ সালের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে এই কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিতাসের মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার আবাসিক গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে। অথচ এ খাতে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮ জন। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
দ্রুত গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিতে বিতরণ কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তাগিদ দিয়েছে একাধিবার। প্রি-পেইড মিটারের ধীরগতি নিয়ে কয়েক দফা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
২০২১ সালে বিইআরসির এক হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার বসানো হলে এই চুরি ঠেকানো সহজ হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার বসালে গ্রাহকপ্রতি গড়ে অন্তত ৩০ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে গ্রাহকের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দেশে চলমান গ্যাস সংকটও কিছুটা কমবে।
অভিযোগ উঠেছে তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয় যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি করা হচ্ছে।
গাছে গাছে নতুন পাতা, পলাশ, শিমুল কৃষ্ণচূড়ার রঙের ছটা আর কোকিলের কুহুতান জানান দেয় বসন্ত এলো দ্বারে। বাংলা বর্ষপঞ্জির ষড়ঋতুর শেষ ঋতু বসন্ত। আর ঋতু শুরু হয় ফাল্গুন মাস দিয়ে। আজ পহেলা ফাল্গুন। যুগ যুগ ধরে বাঙালির রঙিন ঋতু এটি। শুধু প্রকৃতির রং নয়, এদিন রং ছড়ায় প্রতিটি মানুষের মাঝে। প্রতি বছরের মতো এবারও বসন্ত এসেছে প্রকৃতির পূর্ণতা নিয়ে; বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের হৃদয়ে দোলা দেয় দিনটি। এবার দিবসের পূর্ণতা আরও বাড়িছে ভ্যালেন্টাইনস বা ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় দিনটি। পহেলা ফাল্গুনে ভালোবাসা দিবস হওয়ায় অন্য রকম ভালো লাগার শিহরণ জাগায়; বিশেষ করে প্রেমিক যুগলের কাছে দিনটি ধরা দেয় অন্যতম ভালো লাগার দিন হিসেবে।
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ‘বসন্ত উৎসব ২০২৩’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিকেল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত, কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন করা হয়েছে।
একাডেমি সূত্র জানায়, নব ফাল্গুনের এই বর্ণিল উৎসবে বিশেষ আয়োজন হিসেবে সব নারী দর্শকের মাথায় ফুলের রিং ও পুরুষদের হাতে ফুলের মালা রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপস্থিত দর্শদের মধ্যে সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হবে। বসন্ত উৎসবটি বাঙালির সব বয়সীর হলেও এতে তারুণ্যের প্রভাবই থাকে বেশি। আর পহেলা ফাল্গুনের ভিন্ন আমেজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বের তাবৎ মানুষের মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতি জাগাতেই এ দিবসটির অবতারণা। অতীতে এ দিবসটি মূলত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পালিত হলেও নব্বইয়ের দশক থেকে বেশ জোরেশোরে বাংলাদেশে পালিত হয় ভালোবাসার দিন।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।