
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় ১১০০ বর্গফুটের তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের গড়পড়তা মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এই ফ্ল্যাটের প্রতি রুমে চারজন খুব সহজেই বসবাস করতে পারে। ড্রইং-ডাইনিংয়েও আরও এক-দুজনের থাকা সম্ভব। ফলে ওই ফ্ল্যাটে ১৩ জন ছাত্রী থাকতে পারে। অথচ রূপনগরেই ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যয়ে ৫০০ আসনের ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করেছে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাঁচ বছর আগে নির্মিত ওই হোস্টেলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩ জন ছাত্রী অবস্থান করেছে; অর্থাৎ ১৩ ছাত্রীর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ২৭ কোটি টাকার হোস্টেল।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক তদন্ত প্রতিবেদনে স্কুল কর্তৃপক্ষের অযথা ও অপরিকল্পিত অর্থ খরচের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। এরপর কয়েক মাস তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তদন্ত দল। এতে শতকোটি টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনটি আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া এই প্রতিবেদনের কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত ফাইল এখনো আমার কাছে আসেনি। তাই মন্তব্য করতে পারব না। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্কুল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধার জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়নি। সবাই জানে, এই হোস্টেলে কোনোভাবেই আবাসিক ছাত্রী পাওয়া যাবে না। আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। মূলত বড় অঙ্কের টাকা খরচের জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ যত বেশি টাকা খরচ করা সম্ভব হবে, তত বেশি টাকা নয়ছয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ২০১৮ সালের বিল, ভাউচার ও স্টেটমেন্ট যাচাই করে পরিদর্শন দল দেখতে পায়, অধ্যক্ষের বাসভবন ও মহিলা হোস্টেল নির্মাণকাজের ব্যয় বাবদ লারা এন্টারপ্রাইজকে মোট ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি অধ্যক্ষের বাসভবন ও ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা মহিলা হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। গত বছরের ৯ জুন মহিলা হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৩ জন; অর্থাৎ ৫০০ সিটের মধ্যে ৪৮৭টিই ফাঁকা। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক দিন আগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সেই ১৩ জন ছাত্রীও হোস্টেলে নেই। মাত্র চার-পাঁচজন অবস্থান করছে। অথচ তাদের পেছনে আট-দশ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী কাজ করছেন। মাসে অনেক টাকা মেইনটেন্যান্সে খরচ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চিন্তা করে হোস্টেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে একটি উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। সেটা হলে হোস্টেলটি প্রয়োজন হবে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোস্টেলটি করা হয়েছে স্কুলের টাকায়। তাহলে সেটা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে?
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ ছাড়া ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ টাকার কাজের প্রয়োজনীতা ও যথাযথ হিসাব দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরে আইন ভেঙে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্মানী নিয়েছে। বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষকদের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। ৬ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩ কোটি টাকা তোলা হলেও বের হয়নি ম্যাগাজিন। এমনকি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের নামেও দুর্নীতি হয়েছে। ৭ বছরে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অবস্থিত মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৬টি ক্যাম্পাস। মনিপুর এলাকায় বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে। এর বাইরে শেওড়াপাড়া, ইব্রাহীমপুর ও রূপনগরে শাখা রয়েছে। আর রূপনগরে আলাদাভাবে করা হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারের ওপরে। প্রতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের টিউশন ফি, ভর্তি ও সেশনচার্জ বাবদ প্রতিষ্ঠানটিতে এককালীন আয় হয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতি মাসে টিউশন ফি বাবদ ওঠে প্রায় ৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরে ১১৭ কোটি টাকা আয় হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ৩০ কোটি খরচ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বাকি টাকায় সারা বছরই চলে নানা ধরনের উন্নয়নকাজ ও নানা ধরনের কেনাকাটা। এমনকি নতুন ভবন ভেঙেও তৈরি করা হয়েছে আরেক নতুন ভবন। প্রতিষ্ঠানটির বালিকা ক্যাম্পাসের চারদিক ঘুরিয়ে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন। কয়েক বছর ধরে সেই ভবন ভেঙে নতুন তিনটি ১৫তলা ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এগুলো নির্মাণের জন্য আগে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হলেও সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ১৩০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। যাদের অধীনেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার, যিনি সর্বশেষ গভর্নিং বডিরও সভাপতি ছিলেন। সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সরকারের শিল্প প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহম্মেদ মজুমদার, এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, জাকিয়া শিল্পী, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মো. শহিদুল্লাহ্ শিকদার এবং রেজাউল হক ভুঁঞা।
ডিআইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবের সম্মানী বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সম্মানী থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করার কথা। সেই হিসাবে সম্মানী থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৪ টাকা। এ ছাড়া গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ অনুযায়ী, সদস্যদের সম্মানীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। যেহেতু সম্মানী নেওয়ার সপক্ষে কোনো বিধান নেই, তাই সম্মানী বাবদ গৃহীত সব টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মূল ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। এসব ক্লাসের সম্মানী বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার ৫৬ টাকা। কিন্তু এই সম্মানীর বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর বাবদ ২ কোটি ৯ লাখ ২ হাজার ৭০৫ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এতে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অভিভাবকরা বলেছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা শুরু হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ছিল মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। তখন নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকদের বেতনও আংশিক দেওয়া হয়। অথচ করোনাকালীন ২০২০ ও ২০২১ সালে যেখানে নিয়মিত ক্লাসই হয়নি, সেখানে বিশেষ ক্লাসের নামে বড় অঙ্কের বিল দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃক নিযুক্ত হোসেন দেলোয়ার অ্যান্ড কোং-এর অডিট রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সরবরাহ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩১৪ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর বিপরীতে মাত্র ১ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার ৯৭৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভ্যাট হওয়ার কথা ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬২ টাকা। তাই বাকি ২২ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ২৮৮ টাকা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া আবশ্যক।
বিদ্যালয়টির ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাস মেরামত ও রং করার কাজে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে পরিদর্শন দল। তারা বলছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯১০ টাকার কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার মাত্র ৭ দিনের মাথায় বিল পরিশোধের সুপারিশ করা হয়। অথচ ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাসটি অনেক বড় এলাকা। মাত্র ৬ দিনে এর নির্মাণ, মেরামত ও রং এর কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কাজটি আদৌ করা হয়েছিল কি না, তা সন্দেহজনক। আর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করে দেখা যায়, এটি একটি আমদানি-রপ্তানিকারক ও তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের এ ধরনের কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
২০১৫-১৬ হতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বিল ভাউচার যাচাইয়ে আরও দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জারা এন্টারপ্রাইজ, লারা এন্টারপ্রাইজ, তৌহিদ ডেভেলপারস অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, ওশান ইনফরমেশন সিস্টেম ও মনির ডেকোরেটরকে মোট ৪৭ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৩ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ এসব বিল বাবদ ১০ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬ টাকার আয়কর পরিশোধ করা হয়নি। দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আয়করের পুরো টাকা আদায় করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রতিস্থাপনেও ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৯২ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে; যা বিধিবহির্ভূত বলেছে পরিদর্শন দল।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক বলছেন, ঘুরেফিরে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই স্কুলের শত শত কোটি টাকার কাজ করছে। বলতে গেলে, কয়েকজন ট্রাস্টির সৃষ্ট ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমেই বড় অঙ্কের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এত ভবনের কী দরকার? প্রতিনিয়ত নতুন ভবন ভেঙে আবার ভবন করা হচ্ছে। ভবন নির্মাণ আর কেনাকাটার মাধ্যমেই লুটপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এর আগে গত অক্টোবরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত অপর এক তদন্তে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অবসরের পর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বা ট্রাস্ট তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তা বৈধ নয় এবং তারা তা দিতে পারে না। কিন্তু এরপরও ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখনো প্রতিবেদনের কপি পাইনি। তা পাওয়ার পর জবাব দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। আমরা ওই সময়ের মধ্যেই এ ব্যাপারে জবাব দেব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান ও সাবেক ছয় চিকিৎসক এবং দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক (ব্রেন ডেথ) অঙ্গদাতা সারা ইসলামের মা ও একজন মুক্তিযোদ্ধা মরণোত্তর অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছেন। গতকাল সোমবার বিএসএমএমইউতে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নামে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই আটজন অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন।
অঙ্গীকারদাতাদের মধ্যে ছয়জন ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন। তারা হলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল ও বিএসএমএমইউর কিডনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. হারুন অর রশিদ এবং সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা। এ ছাড়া মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করেছেন বিএসএমএমইউর সাবেক চিকিৎসক অধ্যাপক সজল ব্যানার্জী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান।
ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকারনামাদের নাম ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন অঙ্গদানের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’ উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা।
একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারা ইসলামের অঙ্গ অন্য চারজন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিএসএমএমইউ ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারা ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। তার পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন। ভবিষ্যতে আমি নিজেও এ ধরনের মহতী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারি সেটা আমার বিবেচনায় রয়েছে।
বিএনপি ঘোষিত পদযাত্রা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি পদযাত্রার নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য বিএনপি দিনের বেলা পদযাত্রা করে রাতে কূটনীতিকদের পদলেহনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বিএনপির উচিত বিশৃঙ্খলা-ষড়যন্ত্র পরিহার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে।
তিনি আরও বলেন, সারা ইসলাম মেধাবী একজন ছাত্রী ছিলেন। জটিল এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুদক্ষ চিত্রশল্পী ছিলেন। মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তার মা শবনম সুলতানা তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় সঠিক অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ছয়জন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষা করে সেখান থেকে দুজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে জটিল এই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং শেষ হয় পরদিন ভোর প্রায় ৫টার দিকে। আইন অনুযায়ী গঠিত প্রতিটি টিম এখানে সুদক্ষভাবে কাজ করেছে। প্রতিস্থাপন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। ইউরোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, কিডনি ফাউন্ডেশন, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কমিটির সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অভিনন্দন জানাই।
সারা ইসলামের অবদানকে সম্মান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারা ইসলামই প্রথম ব্যক্তি যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন। তার দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন! সারা তা দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারা ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছি। আমাদের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। ছোট্ট একটা মেয়ে আমাদের যা শিখিয়ে দিয়ে গেল, আমরা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। সারার অঙ্গদান একটা বিশাল ব্যাপার। আমার জীবনে দেখা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীরা খুব কষ্ট পায়। এদের যদি আমরা ন্যূনতম সাহায্যটুকুও করতে পারি এটাই আমাদের জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, সারার দুটি কিডনি যে দুই রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। তাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীটিও ভালো আছে। তবে তাকে ছুটি দিতে একটু সময় লাগবে।
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে সারা ইসলাম ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তার দুই কিডনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে বের করে আনা হয়। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। সারার অপর কিডনিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও সারার দুটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় রোগী শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার (৫৬) ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) চোখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌসী আক্তারের চোখে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ধারাবাহিকতায় দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গড়ে উঠছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু যথাযথ পাইলিংয়ের (ভবন বা স্থাপনার এক ধরনের ফাউন্ডেশন যা স্থাপনার নিচে মাটির গভীরে ভার স্থানান্তর করে স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়) মাধ্যমে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে খোদ প্রকৌশলীদের মধ্যেই রয়েছে সংশয়। এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীসহ তিন বিভাগীয় শহরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) বহুতল ভবনগুলো নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। শক্তিশালী বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে এসব ভবন ধসে না পড়ে টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল আগে থেকেই। বিশেষ করে সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজারো বহুতল ভবন ধসে পড়ার পর এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।
দেশের প্রধান শহরগুলোতে জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে গড়ে উঠছে সুউচ্চ সব ভবন। তবে নিচু ভূমির মাটির নিচে কাদামাটির পরিমাণ বেশি। ভৌগোলিকভাবে পুরো বাংলাদেশ (তিন পার্বত্য জেলা, লালমাই, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং বরেন্দ্রভূমি ছাড়া) পলি সঞ্চয়নের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। আর তাই মাটির নিচে পানির প্রবাহ বেশি, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও পিলার তৈরিকালে কয়েকটি পিলারের নিচে এমন পানির প্রবাহ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নকশায় পরিবর্তন এনে আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু ভবন নির্মাণে সেই আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভবন মালিক কিংবা ডেভেলপাররা (ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান) মাটির নিচে ভবনের ভিত মজবুত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করে থাকেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। চট্টগ্রামের মাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বেসরকারি সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। ‘মৃত্তিকা’ নামে সয়েল টেস্টের (মাটি পরীক্ষা) একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্ণধার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবন মালিকরা ভবনের ওপরের অংশের সাজসজ্জায় কিংবা ছাদের রড দেওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু সচেতন ভবনের নিচের অংশের নির্মাণে সেই সচেতনতা দেখা যায় না। যেনতেনভাবে পাইলিং করে ভবন নির্মাণ করলেই যেন হয়ে গেল। কিন্তু তারা বুঝতে চায় না পা যদি দুর্বল হয়, তাহলে শরীরটা দাঁড়িয়ে থাকবে কীসের ওপর?’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পাহাড়ি এলাকার আশপাশ ছাড়া দেশের অন্য সব এলাকায় মাটির নিচে কাদা ও বালি মাটির আধিক্য বেশি। বালি মাটির নিচে যদি পানির স্তর থাকে আর তখন যদি সঠিকভাবে ট্রিটমেন্ট না করে ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে ঝুঁকি বাড়বে।’
দেশের মাটিতে পানির আধিক্য সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাম্মেল বলেন, ‘আমাদের মাটির কিছু দূর পরপর পানির পকেট রয়েছে। তাই ভবনের ডিজাইন করতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
গত রবিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর পশ্চিম বাকলিয়া বগার বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাকলিয়া এক্সেস রোডকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। সেখানে নির্মাণাধীন একটি ছয় তলা ভবনের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকে। তিনি বলেন, ‘এই ভবন নির্মাণের জন্য মাটির ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইলিং করা হয়েছে। ৫০ ফুটের নিচে আছে পানির স্তর। আবার ৮০ ফুটের নিচেও পানি আছে। তাই মধ্য এলাকা পর্যন্ত পাইলিং করে বেইজ করা হয়েছে।’
তবে এভাবে অপরিকল্পিত পাইলিংয়ে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান পুরকৌশলবিদ এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ভূমির নিচের দিকে মাটির চেয়ে বালির আধিক্য বেশি। আর সেই বালির নিচে যদি পানির স্তর থাকে তাহলে অবশ্যই ট্রিটমেন্ট করে বেইস করতে হবে। আর কাদামাটির ওপর বেইস করলে তা স্লিপ করতে পারে। আর এ জন্যই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন দেবে যাওয়া কিংবা হেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
মাটির নিচের কাঠামো কেমন?
নগর নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভূগোলবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের নগরগুলোতে এখন জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব এলাকার নিচের মাটির গাঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। অবশ্য সেই দুর্বল কাঠামোর মধ্যেও বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু তা হতে হবে নির্মাণ বিধি অনুযায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে এসব ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কি না?’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপান ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এক সময় সেখানে বহুতল ভবন নির্মিত হতো না। এখন ১০০ তলারও বেশি উচ্চতার ভবন নির্মিত হচ্ছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রযুক্তি রয়েছে। আমরা সেই প্রযুক্তি মেনে চলছি কি না সেটাই প্রশ্ন। প্রকৌশলীদের মতে, আমরা অনেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না। একসময় দেশে বিমবিহীন ভবন নির্মাণের জোয়ার শুরু হয়েছিল। পরে যখন জানা গেল এসব ভবনে ভূমিকম্পে ঝুঁকি বেশি, তখন সেই ধারণা থেকে সরে আসে অনেকে। তবে বিমবিহীন ভবন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, আমরা সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকে দক্ষ ছিলাম না। সাধারণ মিস্ত্রিরাও এই পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ শুরু করে দিয়েছিল।’
দেশের মাটির গঠন কাঠামো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান বলেন, ‘ভৌগোলিকগত কারণে আমাদের দেশের মাটির গঠন কাঠামো শক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে পিউর বালি মাটির ওপরে বেইস করা নিরাপদ। আর যদি কাঁদা মাটির ওপরে বেইস করা হয় তাহলে ভূমিকম্পে নিচের পানির সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে তা তরলীকরণ হয়ে পিচ্ছিল হয়ে যেতে পারে। যা ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন বর্ষাকালে কাদামাটি স্লিপ কাটে, কিন্তু বালি মাটি স্লিপ কাটে না।’
দেশের ভবনগুলো কি নিরাপদ?
ভূ-তত্ত্ববিদ, ভূগোলবিদ ও প্রকৌশলী সবারই অভিমত দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হয় না। আর এসব ভবনগুলোতে ঝুঁকি বেশি। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মমিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের পুরো এলাকা জলাধার ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এসব ভবন কি নির্মাণ বিধি মেনে নির্মিত হয়েছে? বর্তমানে দেশের ভেতরে কিংবা দেশের প্রান্তসীমায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যদি মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্পও আমাদের এখানে উৎপত্তি হয় তাহলে ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত আছি? আমাদের ভবনগুলোর কি অবস্থা হবে?’
দেশের ভেতরেই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান। ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়ে কাজ করা এই গবেষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে না। আর এতেই চিন্তার কারণ বাড়ছে। ভূমিকম্প হলে শক্তিগুলো বের হয়ে যেত, কিন্তু ভূমিকম্প না হওয়ায় শক্তিগুলো জমা হয়ে বড় ভূমিকম্প হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯১৮ সালে ৭ দশমিক ৬ রিকটার স্কেলের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়নি। ফলে আমরা বড় ভূমিকম্পের অপেক্ষায় আছি বলতে পারি।’
ভূমিকম্পের জন্য কোনো এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে পুরো দেশই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারপরও নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে ওঠা ভবন এবং কক্সবাজারের সাগরতীরে গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে লিকুফিকশানের (মাটির সঙ্গে পানি মিশ্রিত হয়ে তরল হয়ে যাওয়াকে বোঝায়) শঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে এসব ভবন ধসে পড়বে। তাই যেকোনো জায়গায় ভবন নির্মাণে মাটির স্তর পরীক্ষা করে ভবনের ডিজাইন করতে হবে।’
সমাধান কি?
পুরকৌশলবিদ ও ভূমিকম্পবিদ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘নগরায়ণের কারণে জলাশয় ও নিচু এলাকা ভরাট করে ভবন নির্মাণ ছাড়া গতি নেই। তবে এ জন্য প্রকৌশল প্রযুক্তি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু পাথরের ওপর গড়ে তোলা হয়। যেহেতু ভৌগোলিকভাবে আমাদের মাটির কাঠামো দুর্বল সে জন্য ৫০০ মিলিয়ন টাকা খরচ করে মাটির নিচে সিমেন্ট দিয়ে পাথর বানিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তারপর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।’
কোন পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ যথাযথ এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘কোনো ভবনের পাইলিং যদি ১০০ মিটার হয় তাহলে ওপরের দিকে ১০ মিটারে মাটির সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে দুরমুচ (শক্ত কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া) করতে হবে। তাহলে ভূমিকম্প হলে সেই ঝাঁকুনিটি সহ্য করতে পারবে। কিন্তু আমাদের ভবনগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয়নি এবং করা হচ্ছে না, এতেই ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকি কমাতে এখনই সব ভবন সঠিক পদ্ধতি মেনে নির্মাণ করা উচিত।’
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার বার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে বছরে ১০০ ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই ১০০ ভূমিকম্পের মধ্যে কিছু ভূমিকম্প অবলীলায় খুব মারাত্মক হয়ে থাকে। পৃথিবী ছোট-বড় ২৭টি প্লেট নিয়ে গঠিত এবং এই প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত গতিতে রয়েছে। ফলে প্লেটগুলোর প্রান্তসীমায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
সম্প্রতি তুরস্কে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকম্প হলে কে অবস্থা হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। দেশের পূর্ব পাশ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী হয়ে একটি ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের ফল্ট লাইন রয়েছে। যা সিলেটের উত্তর প্রান্ত হয়ে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ফল্ট লাইনের কারণে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রায়ই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এছাড়া দেশের ভেতরেও কিছু খাদ রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৪ এপ্রিল তার নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আমি ঘোষণা করছি যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন।
এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। সিইসি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র একই ব্যক্তির নামে জমা পড়ে। যার নামে দাখিল করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই করেছি। বাছাইয়ের সময় যারা প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র বাছাই করে দুটির মধ্যে একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণভাবে বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়পত্র গ্রহণের কার্যকারিতা ছিল না। তিনি আরও বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা ৭ অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দলের হয়ে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত রবিবার ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আসেন। এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন। মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিনিই হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
এদিকে গতকাল দুপুরে নির্বাচন ভবনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো রাষ্ট্রপতি করিনি যার নাম ইয়াজউদ্দিন, কার্যক্রমে ইয়েস উদ্দিন। এ ইয়েস ধরনের কোনো ব্যক্তিকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, কোনো অপশক্তিকে মনোনয়ন দিইনি। তিনি বলেন, টেররিজমে বিশ্বাস করে, আগুন সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে এমন কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সুশিক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি। যার ক্যারিয়ার, গোটা জীবনটাই বর্ণাঢ্য। এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করায় সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাদের বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রধান নির্বাচনের ঘোষণাটি আমরা পেয়েছি। একটা কপি আমাদের দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিএনপির আগ্রহ নেই এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে তাদের আগ্রহ থাকবে না। দেশের সংবিধানে, গণতন্ত্রে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। গণতন্ত্র ও সংবিধানে যাদের আগ্রহ না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কে হলো না হলো তা নিয়ে তাদের আগ্রহ না থাকারই কথা। এ নিয়ে আমরা অবাক হইনি। বিএনপি এমনই বলবে এটা তাদের মুখে শোভা পাবে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। বিএনপির মতো দল নির্বাচনে থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা।
নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংবিধান মেনে কাজ করার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে দায়িত্বভার দিয়েছে সেটা তিনি করবেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করার থাকবে না।
বিএনপির সংলাপেও আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি তাদের সংলাপে ডেকেছেন, যায়নি, ইসির সংলাপে যায়নি। তারা সংলাপে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না।
প্রায় তিন বছর ধরে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহনুর ইসলাম লিজা। চলতি মাসে টাকা রিচার্জ করতে গেলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয় এখন থেকে তাকে পোস্ট পেইড বিল দিতে হবে। কী কারণে তাকে প্রি-পেইড থেকে পোস্ট পেইডে যেতে হলো তাও জানেন না তিনি। তবে তাকে এখন একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুনতে হবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে লিজার মতো ওই এলাকার কয়েক হাজার গ্রাহক এখন চরম ভোগান্তির শিকার।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিতাসের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘তারা (তিতাস) নিজেরা মিটার দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি মিটার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক, যাতে গ্রাহক পছন্দমতো মিটার কিনতে পারেন। কিন্তু তা না করে গ্রাহককে জিম্মি করা হয়েছে। এখন তারা গ্যাস দেবে না। উল্টো গ্যাসের দাম আদায় করবে। এটা ভয়ংকর রকমের অপরাধ। তিতাস গ্রাহককে লুণ্ঠন করছে নানা উপায়ে। ২০১৫ সালের কমিশনের আদেশে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা বলা হলেও তারা তা পারেনি। এগুলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
তিতাস গ্যাসের গ্রাহক মাহনুর ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তার বাসায় গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে ব্যাংকে গেলে তাকে একটি নোটিস দেখানো হয়। তাতে লেখা সাময়িকভাবে তিতাসের কার্ড রিচার্জ বন্ধ। ওই নোটিসে উল্লেখ করা যোগাযোগ নম্বরে ফোন দেওয়ার পর শনিবার তিতাস গ্যাসের কর্মী তার বাসায় গিয়ে প্রি-পেইড মিটারটি খুলে পোস্ট পেইড সংযোগ দিয়ে দেন। এজন্য কিছু টাকাও তাকে দিতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাহনুর বলেন, ‘ইচ্ছে হলো মিটার লাগাবে আবার খুলবে এটা কোন ধরনের কথা? কারিগরি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে গ্রাহক হিসেবে তা জানার অধিকার আমার আছে। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ আগে-পরে এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। এমনকি কবে নাগাদ প্রি-পেইড মিটার ফিরে পাব কিংবা আদৌ পাব কি না তাও জানি না।’
‘এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাস বা কখনো কখনো তারও বেশি সময় ধরে গ্যাস ব্যবহার করতে পারি। আর এখন আমাকে একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি মাসে প্রায় ১১শ টাকা দিতে হবে। কারণ পোস্ট পেইডে বিল ফিক্সড। তিতাসের কারণে কেন আমাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে’ যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী লিলি জানান, তিনিও আগে থেকে কিছুই জানতেন না। কার্ড রিচার্জ করতে গেলে তাকে গ্যাসের পোস্ট পেইড সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে তাকে এখন থেকে প্রতি মাসে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
গত জানুয়ারি থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ধানম-ি ও মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, এমনিতেই ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন আবার বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা আগে থেকেই মাইকিং করে কিংবা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহককে জানানোর কথা থাকলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে তিতাসের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন (উত্তর) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইমাম উদ্দীন শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে ৮ হাজার ৬শ গ্রাহক এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। তবে সমাধানের আগ পর্যন্ত গ্রাহককে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের মতো প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হবে।’
কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ইমাম উদ্দীন সার্ভার জটিলতার কথা বললেও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ মোল্লাহ্ জানালেন মিটারের সমস্যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারে শুরুর দিকে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় ওই মিটারগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। এখন তাতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ওই মিটার আর আমদানি করা হচ্ছে না। ফলে নতুন করে আবার মিটার স্থাপন করা হবে। ধারাবাহিকভাবে এই কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের দু’জন কর্মকর্তা জানান, যে কোম্পানির কাছ থেকে ওই সেবা নেওয়া হয়েছিল তারা এখন আর এ ধরনের ব্যবসা করে না। ফলে ওই কোম্পানির কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট নেওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো আসার ওপর তা পর্যায়ক্রমে ওইসব গ্রাহকদের দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ এই মিটার আনা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে মিটার আমদানি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এদিকে তিতাসের অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারগুলোর স্থায়িত্ব ২০ বছর। প্রতি মাসে মিটার ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা করে নেওয়া হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। কিন্তু ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব মিটার অকেজো হয়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কারিগরি কারণে কোনো সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন।
বর্তমানে একজন পোস্ট পেইড গ্রাহককে দুই চুলার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকার বিল দিতে হয়। সাধারণত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় তার চেয়ে বেশি হিসাব ধরে দাম নির্ধারণের কারণে গ্রাহকের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। অনেক সময় পুরো মাসে কোনো গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল দিতে হয় একই পরিমাণে। কিন্তু প্রি-পেইড গ্রাহককে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিল পরিশোধ করতে হয়।
এদিকে গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে।
২০২৫ সালের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে এই কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিতাসের মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার আবাসিক গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে। অথচ এ খাতে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮ জন। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
দ্রুত গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিতে বিতরণ কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তাগিদ দিয়েছে একাধিবার। প্রি-পেইড মিটারের ধীরগতি নিয়ে কয়েক দফা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
২০২১ সালে বিইআরসির এক হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার বসানো হলে এই চুরি ঠেকানো সহজ হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার বসালে গ্রাহকপ্রতি গড়ে অন্তত ৩০ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে গ্রাহকের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দেশে চলমান গ্যাস সংকটও কিছুটা কমবে।
অভিযোগ উঠেছে তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয় যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি করা হচ্ছে।
গাছে গাছে নতুন পাতা, পলাশ, শিমুল কৃষ্ণচূড়ার রঙের ছটা আর কোকিলের কুহুতান জানান দেয় বসন্ত এলো দ্বারে। বাংলা বর্ষপঞ্জির ষড়ঋতুর শেষ ঋতু বসন্ত। আর ঋতু শুরু হয় ফাল্গুন মাস দিয়ে। আজ পহেলা ফাল্গুন। যুগ যুগ ধরে বাঙালির রঙিন ঋতু এটি। শুধু প্রকৃতির রং নয়, এদিন রং ছড়ায় প্রতিটি মানুষের মাঝে। প্রতি বছরের মতো এবারও বসন্ত এসেছে প্রকৃতির পূর্ণতা নিয়ে; বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের হৃদয়ে দোলা দেয় দিনটি। এবার দিবসের পূর্ণতা আরও বাড়িছে ভ্যালেন্টাইনস বা ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় দিনটি। পহেলা ফাল্গুনে ভালোবাসা দিবস হওয়ায় অন্য রকম ভালো লাগার শিহরণ জাগায়; বিশেষ করে প্রেমিক যুগলের কাছে দিনটি ধরা দেয় অন্যতম ভালো লাগার দিন হিসেবে।
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ‘বসন্ত উৎসব ২০২৩’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিকেল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত, কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন করা হয়েছে।
একাডেমি সূত্র জানায়, নব ফাল্গুনের এই বর্ণিল উৎসবে বিশেষ আয়োজন হিসেবে সব নারী দর্শকের মাথায় ফুলের রিং ও পুরুষদের হাতে ফুলের মালা রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপস্থিত দর্শদের মধ্যে সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হবে। বসন্ত উৎসবটি বাঙালির সব বয়সীর হলেও এতে তারুণ্যের প্রভাবই থাকে বেশি। আর পহেলা ফাল্গুনের ভিন্ন আমেজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বের তাবৎ মানুষের মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতি জাগাতেই এ দিবসটির অবতারণা। অতীতে এ দিবসটি মূলত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পালিত হলেও নব্বইয়ের দশক থেকে বেশ জোরেশোরে বাংলাদেশে পালিত হয় ভালোবাসার দিন।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।