
এক সপ্তাহ আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনো ঢাকা পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। সাত দিন পরেও ধসে পড়া ভবনের নিচে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত কয়েকজনকে। তবে সময় যত যাচ্ছে ততই ফিকে হচ্ছে জীবিত উদ্ধারের আশা। স্বজনরাও আটকে পড়া প্রিয়জনকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে চাইছেন মরদেহ উদ্ধার হোক। তবে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির হাড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়ার আশা অবাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সরিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তাদের ঘিরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকছেন স্বজনহারারা। খোলা আকাশের নিচে স্বজনের মরদেহের অপেক্ষায়, খাবারের অপেক্ষায় কাটছে তাদের দিনরাত্রি। যাদের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও নেমে এসেছেন রাস্তায়। তাদের আশঙ্কা, যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে।
গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ হাজার ২১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তুরস্কের জরুরি সমন্বয় কেন্দ্র সাকম জানায়, কেবল তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার ৬৪৩ জনে পৌঁছেছে। আর সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৫৭৪ জন। স্যালভেশন গভর্নমেন্ট গভর্ন্যান্স অথরিটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অংশেই মারা গেছে ৩ হাজার ১৬০ জন। আর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশে মারা গেছেন ১ হাজার ৪১৪ জন।
১৯৯৯ সালের পর থেকে তুরস্কে সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে তুরস্কেই। দেশটির কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতাই ও কিলিস অঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব এলাকায় তিন হাজারের মতো ভবন ধসে পড়ে বাস্তুহীন হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এর মধ্যে গেল এক সপ্তাহে কয়েকশ বারের আফটারশক তাদের মনে ভূমিকম্পের ভয়কে স্থায়ী করে দিয়েছে। তারা তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে থাকলেও পাকা ভবনে ফিরতে ইচ্ছুক নন।
আলজাজিরা বলছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে হাতাই প্রদেশের রাজধানী আনতাকিয়া শহরের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। শহরে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলাটা বেশি হয়েছে। কারণ শহরটি বহু পুরনো। শহরে যে দিকেই চোখ যায়, শুধু ধসে পড়া ভবনের স্তূপ। ফলে ক্ষয়ক্ষতিটা আদতে কতটা হয়েছে, তা পরিমাণ করা কঠিন। আর টিকে থাকা অনেক ভবনে ফাটল ধরেছে, আংশিক ধ্বংস হয়েছে, না হয় হেলে পড়েছে। ভবন ধসে পড়ায় শহরটিতে অনেকে এখন পুরোপুরি বাস্তুহীন। অনেকে আবার টিকে থাকা বাড়িগুলোতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন; আশঙ্কা, যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে। ফলে বহু বাসিন্দা শহরটি ছেড়ে চলে গেছেন। আর যারা রয়ে গেছেন, তারা বসবাস করছেন গাড়িতে, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অথবা সহায়তা হিসেবে পাওয়া তাঁবুতে। তাদের জীবন কাটছে উদ্বাস্তু শরনার্থীদেরও মতোই।
ভূমিকম্পের পর আনতাকিয়ার মতো অনেক শহরে দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নানা জরুরি পণ্যের তীব্র সংকট। ফলে লুটপাটের ঘটনা বেড়েছে। তবে গতকাল রবিবার থেকে সেনাবাহিনী রাস্তাঘাটে টহল দেওয়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। তুরস্কের আরেকটি ভূমিকম্পকবলিত শহর ইসকেনদেরুনের বাসিন্দা সেরিজান আগবাস। তিনি আলজাজিরাকে বলেছিলেন, তার অবস্থা এখন একজন উদ্বাস্তুর চাইতেও খারাপ। তার পকেটে আছে আছে মাত্র ১৫ লিরা। তার একটি কাপড়ের ছোট দোকান ছিল। ওই দোকানের আয় থেকে পরিবারের পেট চালাতেন তিনি। দোকানটি এখন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। আগবাস যে ভবনে বসবার করতেন, সেটি কোনোমতে টিকে থাকলেও অবস্থা বেশ নাজুক। তাই সেখানেও তিনি যেতে চান না। উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গেই একটি স্কুলের বারান্দায় থাকছেন তিনি। প্রায় এক সপ্তাহ পরেও তেমন সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন তিনি। আগবাস বলছিলেন, আমাদের পুরো জাতির কাছ থেকে মানসিক সহায়তা দরকার। সরকারের কাছ থেকে কেউ কিছু আশা করছে না। নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সামলাতে হচ্ছে।
তুরস্কে যেসব অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, সেগুলোর মোট আয়তন ব্রিটেনের সমান। তুরস্ক সরকার বলছে, বিপর্যয়ের মাত্রা অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে তিনি উপদ্রুত এলাকাগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। তবে প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার বা ৯ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি এই সময়ের মধ্যে তুরস্ক কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা না নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
যদিও তুরস্ক ইতিমধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ থেকে সহায়তা পেয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে নানা ধরনের ঋণ সহায়তাও পাবে দেশটি।
তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় পরিস্থিতি পুরো উল্টো। ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরেও অনেক এলাকার কোনো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব মেলেনি। জাতিসংঘ বলছে, শুধু সিরিয়াতেই ৫৩ লাখের বেশি মানুষ গৃহহারা হয়েছে। তবে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের কারণে অনেক এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের প্রচেষ্টা বিঘিœত হচ্ছে। এর সঙ্গে বৈরী আবহাওয়ায় বিঘিœত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতাও। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত আর কাউকে পাওয়ার আশা তারা করছে না জানিয়ে গতকাল সেখানে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টেনেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটস। এরাই ওই অঞ্চলটিতে খালি হাতেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে গেছে।
গতকাল জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস সিরিয়ার আলেপ্পোতে ভূমিকম্প দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান। যেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিরই উদ্ধার অভিযান ‘শেষ হওয়ার পথে’। গ্রিফিথস বলেন, এখন কর্মকর্তারা বেঁচে যাওয়াদের আশ্রয়, খাবার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার বিষয়ে অধিক মনোযোগ দেবেন। তিনি বলেন, আমরা এখানকার যেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের চোখেমুখে ভয় ও আতঙ্ক স্পষ্ট ছিল। এটা এমন একটি ভয় যেটা কাটাতে বিশ্বকে কাজ করতে হবে। এখানকার মানুষদের জন্য সাহায্য পাঠানো, তাদের যতœ নেওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘ ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার মানুষদের অনেক ভুগতে হয়েছে এবং হচ্ছে। তারপরও এবারের ভূমিকম্পকে দেশটির মানুষদের ওপর নেমে আসা সব থেকে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান ও সাবেক ছয় চিকিৎসক এবং দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক (ব্রেন ডেথ) অঙ্গদাতা সারা ইসলামের মা ও একজন মুক্তিযোদ্ধা মরণোত্তর অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছেন। গতকাল সোমবার বিএসএমএমইউতে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নামে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই আটজন অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন।
অঙ্গীকারদাতাদের মধ্যে ছয়জন ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন। তারা হলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল ও বিএসএমএমইউর কিডনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. হারুন অর রশিদ এবং সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা। এ ছাড়া মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করেছেন বিএসএমএমইউর সাবেক চিকিৎসক অধ্যাপক সজল ব্যানার্জী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান।
ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকারনামাদের নাম ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন অঙ্গদানের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’ উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা।
একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারা ইসলামের অঙ্গ অন্য চারজন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিএসএমএমইউ ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারা ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। তার পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন। ভবিষ্যতে আমি নিজেও এ ধরনের মহতী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারি সেটা আমার বিবেচনায় রয়েছে।
বিএনপি ঘোষিত পদযাত্রা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি পদযাত্রার নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য বিএনপি দিনের বেলা পদযাত্রা করে রাতে কূটনীতিকদের পদলেহনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বিএনপির উচিত বিশৃঙ্খলা-ষড়যন্ত্র পরিহার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে।
তিনি আরও বলেন, সারা ইসলাম মেধাবী একজন ছাত্রী ছিলেন। জটিল এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুদক্ষ চিত্রশল্পী ছিলেন। মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তার মা শবনম সুলতানা তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় সঠিক অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ছয়জন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষা করে সেখান থেকে দুজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে জটিল এই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং শেষ হয় পরদিন ভোর প্রায় ৫টার দিকে। আইন অনুযায়ী গঠিত প্রতিটি টিম এখানে সুদক্ষভাবে কাজ করেছে। প্রতিস্থাপন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। ইউরোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, কিডনি ফাউন্ডেশন, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কমিটির সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অভিনন্দন জানাই।
সারা ইসলামের অবদানকে সম্মান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারা ইসলামই প্রথম ব্যক্তি যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন। তার দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন! সারা তা দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারা ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছি। আমাদের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। ছোট্ট একটা মেয়ে আমাদের যা শিখিয়ে দিয়ে গেল, আমরা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। সারার অঙ্গদান একটা বিশাল ব্যাপার। আমার জীবনে দেখা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীরা খুব কষ্ট পায়। এদের যদি আমরা ন্যূনতম সাহায্যটুকুও করতে পারি এটাই আমাদের জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, সারার দুটি কিডনি যে দুই রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। তাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীটিও ভালো আছে। তবে তাকে ছুটি দিতে একটু সময় লাগবে।
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে সারা ইসলাম ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তার দুই কিডনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে বের করে আনা হয়। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। সারার অপর কিডনিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও সারার দুটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় রোগী শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার (৫৬) ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) চোখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌসী আক্তারের চোখে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় ১১০০ বর্গফুটের তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের গড়পড়তা মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এই ফ্ল্যাটের প্রতি রুমে চারজন খুব সহজেই বসবাস করতে পারে। ড্রইং-ডাইনিংয়েও আরও এক-দুজনের থাকা সম্ভব। ফলে ওই ফ্ল্যাটে ১৩ জন ছাত্রী থাকতে পারে। অথচ রূপনগরেই ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যয়ে ৫০০ আসনের ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করেছে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাঁচ বছর আগে নির্মিত ওই হোস্টেলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩ জন ছাত্রী অবস্থান করেছে; অর্থাৎ ১৩ ছাত্রীর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ২৭ কোটি টাকার হোস্টেল।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক তদন্ত প্রতিবেদনে স্কুল কর্তৃপক্ষের অযথা ও অপরিকল্পিত অর্থ খরচের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। এরপর কয়েক মাস তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তদন্ত দল। এতে শতকোটি টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনটি আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া এই প্রতিবেদনের কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত ফাইল এখনো আমার কাছে আসেনি। তাই মন্তব্য করতে পারব না। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্কুল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধার জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়নি। সবাই জানে, এই হোস্টেলে কোনোভাবেই আবাসিক ছাত্রী পাওয়া যাবে না। আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। মূলত বড় অঙ্কের টাকা খরচের জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ যত বেশি টাকা খরচ করা সম্ভব হবে, তত বেশি টাকা নয়ছয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ২০১৮ সালের বিল, ভাউচার ও স্টেটমেন্ট যাচাই করে পরিদর্শন দল দেখতে পায়, অধ্যক্ষের বাসভবন ও মহিলা হোস্টেল নির্মাণকাজের ব্যয় বাবদ লারা এন্টারপ্রাইজকে মোট ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি অধ্যক্ষের বাসভবন ও ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা মহিলা হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। গত বছরের ৯ জুন মহিলা হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৩ জন; অর্থাৎ ৫০০ সিটের মধ্যে ৪৮৭টিই ফাঁকা। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক দিন আগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সেই ১৩ জন ছাত্রীও হোস্টেলে নেই। মাত্র চার-পাঁচজন অবস্থান করছে। অথচ তাদের পেছনে আট-দশ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী কাজ করছেন। মাসে অনেক টাকা মেইনটেন্যান্সে খরচ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চিন্তা করে হোস্টেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে একটি উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। সেটা হলে হোস্টেলটি প্রয়োজন হবে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোস্টেলটি করা হয়েছে স্কুলের টাকায়। তাহলে সেটা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে?
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ ছাড়া ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ টাকার কাজের প্রয়োজনীতা ও যথাযথ হিসাব দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরে আইন ভেঙে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্মানী নিয়েছে। বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষকদের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। ৬ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩ কোটি টাকা তোলা হলেও বের হয়নি ম্যাগাজিন। এমনকি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের নামেও দুর্নীতি হয়েছে। ৭ বছরে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অবস্থিত মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৬টি ক্যাম্পাস। মনিপুর এলাকায় বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে। এর বাইরে শেওড়াপাড়া, ইব্রাহীমপুর ও রূপনগরে শাখা রয়েছে। আর রূপনগরে আলাদাভাবে করা হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারের ওপরে। প্রতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের টিউশন ফি, ভর্তি ও সেশনচার্জ বাবদ প্রতিষ্ঠানটিতে এককালীন আয় হয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতি মাসে টিউশন ফি বাবদ ওঠে প্রায় ৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরে ১১৭ কোটি টাকা আয় হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ৩০ কোটি খরচ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বাকি টাকায় সারা বছরই চলে নানা ধরনের উন্নয়নকাজ ও নানা ধরনের কেনাকাটা। এমনকি নতুন ভবন ভেঙেও তৈরি করা হয়েছে আরেক নতুন ভবন। প্রতিষ্ঠানটির বালিকা ক্যাম্পাসের চারদিক ঘুরিয়ে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন। কয়েক বছর ধরে সেই ভবন ভেঙে নতুন তিনটি ১৫তলা ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এগুলো নির্মাণের জন্য আগে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হলেও সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ১৩০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। যাদের অধীনেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার, যিনি সর্বশেষ গভর্নিং বডিরও সভাপতি ছিলেন। সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সরকারের শিল্প প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহম্মেদ মজুমদার, এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, জাকিয়া শিল্পী, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মো. শহিদুল্লাহ্ শিকদার এবং রেজাউল হক ভুঁঞা।
ডিআইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবের সম্মানী বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সম্মানী থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করার কথা। সেই হিসাবে সম্মানী থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৪ টাকা। এ ছাড়া গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ অনুযায়ী, সদস্যদের সম্মানীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। যেহেতু সম্মানী নেওয়ার সপক্ষে কোনো বিধান নেই, তাই সম্মানী বাবদ গৃহীত সব টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মূল ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। এসব ক্লাসের সম্মানী বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার ৫৬ টাকা। কিন্তু এই সম্মানীর বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর বাবদ ২ কোটি ৯ লাখ ২ হাজার ৭০৫ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এতে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অভিভাবকরা বলেছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা শুরু হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ছিল মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। তখন নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকদের বেতনও আংশিক দেওয়া হয়। অথচ করোনাকালীন ২০২০ ও ২০২১ সালে যেখানে নিয়মিত ক্লাসই হয়নি, সেখানে বিশেষ ক্লাসের নামে বড় অঙ্কের বিল দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃক নিযুক্ত হোসেন দেলোয়ার অ্যান্ড কোং-এর অডিট রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সরবরাহ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩১৪ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর বিপরীতে মাত্র ১ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার ৯৭৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভ্যাট হওয়ার কথা ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬২ টাকা। তাই বাকি ২২ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ২৮৮ টাকা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া আবশ্যক।
বিদ্যালয়টির ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাস মেরামত ও রং করার কাজে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে পরিদর্শন দল। তারা বলছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯১০ টাকার কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার মাত্র ৭ দিনের মাথায় বিল পরিশোধের সুপারিশ করা হয়। অথচ ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাসটি অনেক বড় এলাকা। মাত্র ৬ দিনে এর নির্মাণ, মেরামত ও রং এর কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কাজটি আদৌ করা হয়েছিল কি না, তা সন্দেহজনক। আর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করে দেখা যায়, এটি একটি আমদানি-রপ্তানিকারক ও তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের এ ধরনের কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
২০১৫-১৬ হতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বিল ভাউচার যাচাইয়ে আরও দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জারা এন্টারপ্রাইজ, লারা এন্টারপ্রাইজ, তৌহিদ ডেভেলপারস অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, ওশান ইনফরমেশন সিস্টেম ও মনির ডেকোরেটরকে মোট ৪৭ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৩ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ এসব বিল বাবদ ১০ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬ টাকার আয়কর পরিশোধ করা হয়নি। দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আয়করের পুরো টাকা আদায় করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রতিস্থাপনেও ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৯২ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে; যা বিধিবহির্ভূত বলেছে পরিদর্শন দল।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক বলছেন, ঘুরেফিরে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই স্কুলের শত শত কোটি টাকার কাজ করছে। বলতে গেলে, কয়েকজন ট্রাস্টির সৃষ্ট ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমেই বড় অঙ্কের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এত ভবনের কী দরকার? প্রতিনিয়ত নতুন ভবন ভেঙে আবার ভবন করা হচ্ছে। ভবন নির্মাণ আর কেনাকাটার মাধ্যমেই লুটপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এর আগে গত অক্টোবরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত অপর এক তদন্তে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অবসরের পর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বা ট্রাস্ট তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তা বৈধ নয় এবং তারা তা দিতে পারে না। কিন্তু এরপরও ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখনো প্রতিবেদনের কপি পাইনি। তা পাওয়ার পর জবাব দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। আমরা ওই সময়ের মধ্যেই এ ব্যাপারে জবাব দেব।’
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ধারাবাহিকতায় দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গড়ে উঠছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু যথাযথ পাইলিংয়ের (ভবন বা স্থাপনার এক ধরনের ফাউন্ডেশন যা স্থাপনার নিচে মাটির গভীরে ভার স্থানান্তর করে স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়) মাধ্যমে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে খোদ প্রকৌশলীদের মধ্যেই রয়েছে সংশয়। এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীসহ তিন বিভাগীয় শহরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) বহুতল ভবনগুলো নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। শক্তিশালী বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে এসব ভবন ধসে না পড়ে টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল আগে থেকেই। বিশেষ করে সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজারো বহুতল ভবন ধসে পড়ার পর এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।
দেশের প্রধান শহরগুলোতে জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে গড়ে উঠছে সুউচ্চ সব ভবন। তবে নিচু ভূমির মাটির নিচে কাদামাটির পরিমাণ বেশি। ভৌগোলিকভাবে পুরো বাংলাদেশ (তিন পার্বত্য জেলা, লালমাই, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং বরেন্দ্রভূমি ছাড়া) পলি সঞ্চয়নের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। আর তাই মাটির নিচে পানির প্রবাহ বেশি, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও পিলার তৈরিকালে কয়েকটি পিলারের নিচে এমন পানির প্রবাহ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নকশায় পরিবর্তন এনে আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু ভবন নির্মাণে সেই আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভবন মালিক কিংবা ডেভেলপাররা (ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান) মাটির নিচে ভবনের ভিত মজবুত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করে থাকেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। চট্টগ্রামের মাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বেসরকারি সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। ‘মৃত্তিকা’ নামে সয়েল টেস্টের (মাটি পরীক্ষা) একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্ণধার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবন মালিকরা ভবনের ওপরের অংশের সাজসজ্জায় কিংবা ছাদের রড দেওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু সচেতন ভবনের নিচের অংশের নির্মাণে সেই সচেতনতা দেখা যায় না। যেনতেনভাবে পাইলিং করে ভবন নির্মাণ করলেই যেন হয়ে গেল। কিন্তু তারা বুঝতে চায় না পা যদি দুর্বল হয়, তাহলে শরীরটা দাঁড়িয়ে থাকবে কীসের ওপর?’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পাহাড়ি এলাকার আশপাশ ছাড়া দেশের অন্য সব এলাকায় মাটির নিচে কাদা ও বালি মাটির আধিক্য বেশি। বালি মাটির নিচে যদি পানির স্তর থাকে আর তখন যদি সঠিকভাবে ট্রিটমেন্ট না করে ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে ঝুঁকি বাড়বে।’
দেশের মাটিতে পানির আধিক্য সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাম্মেল বলেন, ‘আমাদের মাটির কিছু দূর পরপর পানির পকেট রয়েছে। তাই ভবনের ডিজাইন করতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
গত রবিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর পশ্চিম বাকলিয়া বগার বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাকলিয়া এক্সেস রোডকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। সেখানে নির্মাণাধীন একটি ছয় তলা ভবনের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকে। তিনি বলেন, ‘এই ভবন নির্মাণের জন্য মাটির ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইলিং করা হয়েছে। ৫০ ফুটের নিচে আছে পানির স্তর। আবার ৮০ ফুটের নিচেও পানি আছে। তাই মধ্য এলাকা পর্যন্ত পাইলিং করে বেইজ করা হয়েছে।’
তবে এভাবে অপরিকল্পিত পাইলিংয়ে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান পুরকৌশলবিদ এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ভূমির নিচের দিকে মাটির চেয়ে বালির আধিক্য বেশি। আর সেই বালির নিচে যদি পানির স্তর থাকে তাহলে অবশ্যই ট্রিটমেন্ট করে বেইস করতে হবে। আর কাদামাটির ওপর বেইস করলে তা স্লিপ করতে পারে। আর এ জন্যই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন দেবে যাওয়া কিংবা হেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
মাটির নিচের কাঠামো কেমন?
নগর নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভূগোলবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের নগরগুলোতে এখন জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব এলাকার নিচের মাটির গাঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। অবশ্য সেই দুর্বল কাঠামোর মধ্যেও বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু তা হতে হবে নির্মাণ বিধি অনুযায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে এসব ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কি না?’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপান ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এক সময় সেখানে বহুতল ভবন নির্মিত হতো না। এখন ১০০ তলারও বেশি উচ্চতার ভবন নির্মিত হচ্ছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রযুক্তি রয়েছে। আমরা সেই প্রযুক্তি মেনে চলছি কি না সেটাই প্রশ্ন। প্রকৌশলীদের মতে, আমরা অনেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না। একসময় দেশে বিমবিহীন ভবন নির্মাণের জোয়ার শুরু হয়েছিল। পরে যখন জানা গেল এসব ভবনে ভূমিকম্পে ঝুঁকি বেশি, তখন সেই ধারণা থেকে সরে আসে অনেকে। তবে বিমবিহীন ভবন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, আমরা সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকে দক্ষ ছিলাম না। সাধারণ মিস্ত্রিরাও এই পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ শুরু করে দিয়েছিল।’
দেশের মাটির গঠন কাঠামো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান বলেন, ‘ভৌগোলিকগত কারণে আমাদের দেশের মাটির গঠন কাঠামো শক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে পিউর বালি মাটির ওপরে বেইস করা নিরাপদ। আর যদি কাঁদা মাটির ওপরে বেইস করা হয় তাহলে ভূমিকম্পে নিচের পানির সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে তা তরলীকরণ হয়ে পিচ্ছিল হয়ে যেতে পারে। যা ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন বর্ষাকালে কাদামাটি স্লিপ কাটে, কিন্তু বালি মাটি স্লিপ কাটে না।’
দেশের ভবনগুলো কি নিরাপদ?
ভূ-তত্ত্ববিদ, ভূগোলবিদ ও প্রকৌশলী সবারই অভিমত দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হয় না। আর এসব ভবনগুলোতে ঝুঁকি বেশি। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মমিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের পুরো এলাকা জলাধার ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এসব ভবন কি নির্মাণ বিধি মেনে নির্মিত হয়েছে? বর্তমানে দেশের ভেতরে কিংবা দেশের প্রান্তসীমায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যদি মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্পও আমাদের এখানে উৎপত্তি হয় তাহলে ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত আছি? আমাদের ভবনগুলোর কি অবস্থা হবে?’
দেশের ভেতরেই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান। ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়ে কাজ করা এই গবেষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে না। আর এতেই চিন্তার কারণ বাড়ছে। ভূমিকম্প হলে শক্তিগুলো বের হয়ে যেত, কিন্তু ভূমিকম্প না হওয়ায় শক্তিগুলো জমা হয়ে বড় ভূমিকম্প হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯১৮ সালে ৭ দশমিক ৬ রিকটার স্কেলের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়নি। ফলে আমরা বড় ভূমিকম্পের অপেক্ষায় আছি বলতে পারি।’
ভূমিকম্পের জন্য কোনো এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে পুরো দেশই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারপরও নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে ওঠা ভবন এবং কক্সবাজারের সাগরতীরে গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে লিকুফিকশানের (মাটির সঙ্গে পানি মিশ্রিত হয়ে তরল হয়ে যাওয়াকে বোঝায়) শঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে এসব ভবন ধসে পড়বে। তাই যেকোনো জায়গায় ভবন নির্মাণে মাটির স্তর পরীক্ষা করে ভবনের ডিজাইন করতে হবে।’
সমাধান কি?
পুরকৌশলবিদ ও ভূমিকম্পবিদ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘নগরায়ণের কারণে জলাশয় ও নিচু এলাকা ভরাট করে ভবন নির্মাণ ছাড়া গতি নেই। তবে এ জন্য প্রকৌশল প্রযুক্তি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু পাথরের ওপর গড়ে তোলা হয়। যেহেতু ভৌগোলিকভাবে আমাদের মাটির কাঠামো দুর্বল সে জন্য ৫০০ মিলিয়ন টাকা খরচ করে মাটির নিচে সিমেন্ট দিয়ে পাথর বানিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তারপর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।’
কোন পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ যথাযথ এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘কোনো ভবনের পাইলিং যদি ১০০ মিটার হয় তাহলে ওপরের দিকে ১০ মিটারে মাটির সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে দুরমুচ (শক্ত কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া) করতে হবে। তাহলে ভূমিকম্প হলে সেই ঝাঁকুনিটি সহ্য করতে পারবে। কিন্তু আমাদের ভবনগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয়নি এবং করা হচ্ছে না, এতেই ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকি কমাতে এখনই সব ভবন সঠিক পদ্ধতি মেনে নির্মাণ করা উচিত।’
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার বার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে বছরে ১০০ ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই ১০০ ভূমিকম্পের মধ্যে কিছু ভূমিকম্প অবলীলায় খুব মারাত্মক হয়ে থাকে। পৃথিবী ছোট-বড় ২৭টি প্লেট নিয়ে গঠিত এবং এই প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত গতিতে রয়েছে। ফলে প্লেটগুলোর প্রান্তসীমায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
সম্প্রতি তুরস্কে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকম্প হলে কে অবস্থা হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। দেশের পূর্ব পাশ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী হয়ে একটি ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের ফল্ট লাইন রয়েছে। যা সিলেটের উত্তর প্রান্ত হয়ে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ফল্ট লাইনের কারণে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রায়ই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এছাড়া দেশের ভেতরেও কিছু খাদ রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৪ এপ্রিল তার নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আমি ঘোষণা করছি যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন।
এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। সিইসি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র একই ব্যক্তির নামে জমা পড়ে। যার নামে দাখিল করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই করেছি। বাছাইয়ের সময় যারা প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র বাছাই করে দুটির মধ্যে একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণভাবে বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়পত্র গ্রহণের কার্যকারিতা ছিল না। তিনি আরও বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা ৭ অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দলের হয়ে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত রবিবার ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আসেন। এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন। মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিনিই হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
এদিকে গতকাল দুপুরে নির্বাচন ভবনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো রাষ্ট্রপতি করিনি যার নাম ইয়াজউদ্দিন, কার্যক্রমে ইয়েস উদ্দিন। এ ইয়েস ধরনের কোনো ব্যক্তিকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, কোনো অপশক্তিকে মনোনয়ন দিইনি। তিনি বলেন, টেররিজমে বিশ্বাস করে, আগুন সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে এমন কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সুশিক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি। যার ক্যারিয়ার, গোটা জীবনটাই বর্ণাঢ্য। এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করায় সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাদের বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রধান নির্বাচনের ঘোষণাটি আমরা পেয়েছি। একটা কপি আমাদের দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিএনপির আগ্রহ নেই এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে তাদের আগ্রহ থাকবে না। দেশের সংবিধানে, গণতন্ত্রে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। গণতন্ত্র ও সংবিধানে যাদের আগ্রহ না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কে হলো না হলো তা নিয়ে তাদের আগ্রহ না থাকারই কথা। এ নিয়ে আমরা অবাক হইনি। বিএনপি এমনই বলবে এটা তাদের মুখে শোভা পাবে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। বিএনপির মতো দল নির্বাচনে থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা।
নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংবিধান মেনে কাজ করার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে দায়িত্বভার দিয়েছে সেটা তিনি করবেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করার থাকবে না।
বিএনপির সংলাপেও আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি তাদের সংলাপে ডেকেছেন, যায়নি, ইসির সংলাপে যায়নি। তারা সংলাপে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না।
প্রায় তিন বছর ধরে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহনুর ইসলাম লিজা। চলতি মাসে টাকা রিচার্জ করতে গেলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয় এখন থেকে তাকে পোস্ট পেইড বিল দিতে হবে। কী কারণে তাকে প্রি-পেইড থেকে পোস্ট পেইডে যেতে হলো তাও জানেন না তিনি। তবে তাকে এখন একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুনতে হবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে লিজার মতো ওই এলাকার কয়েক হাজার গ্রাহক এখন চরম ভোগান্তির শিকার।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিতাসের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘তারা (তিতাস) নিজেরা মিটার দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি মিটার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক, যাতে গ্রাহক পছন্দমতো মিটার কিনতে পারেন। কিন্তু তা না করে গ্রাহককে জিম্মি করা হয়েছে। এখন তারা গ্যাস দেবে না। উল্টো গ্যাসের দাম আদায় করবে। এটা ভয়ংকর রকমের অপরাধ। তিতাস গ্রাহককে লুণ্ঠন করছে নানা উপায়ে। ২০১৫ সালের কমিশনের আদেশে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা বলা হলেও তারা তা পারেনি। এগুলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
তিতাস গ্যাসের গ্রাহক মাহনুর ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তার বাসায় গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে ব্যাংকে গেলে তাকে একটি নোটিস দেখানো হয়। তাতে লেখা সাময়িকভাবে তিতাসের কার্ড রিচার্জ বন্ধ। ওই নোটিসে উল্লেখ করা যোগাযোগ নম্বরে ফোন দেওয়ার পর শনিবার তিতাস গ্যাসের কর্মী তার বাসায় গিয়ে প্রি-পেইড মিটারটি খুলে পোস্ট পেইড সংযোগ দিয়ে দেন। এজন্য কিছু টাকাও তাকে দিতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাহনুর বলেন, ‘ইচ্ছে হলো মিটার লাগাবে আবার খুলবে এটা কোন ধরনের কথা? কারিগরি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে গ্রাহক হিসেবে তা জানার অধিকার আমার আছে। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ আগে-পরে এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। এমনকি কবে নাগাদ প্রি-পেইড মিটার ফিরে পাব কিংবা আদৌ পাব কি না তাও জানি না।’
‘এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাস বা কখনো কখনো তারও বেশি সময় ধরে গ্যাস ব্যবহার করতে পারি। আর এখন আমাকে একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি মাসে প্রায় ১১শ টাকা দিতে হবে। কারণ পোস্ট পেইডে বিল ফিক্সড। তিতাসের কারণে কেন আমাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে’ যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী লিলি জানান, তিনিও আগে থেকে কিছুই জানতেন না। কার্ড রিচার্জ করতে গেলে তাকে গ্যাসের পোস্ট পেইড সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে তাকে এখন থেকে প্রতি মাসে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
গত জানুয়ারি থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ধানম-ি ও মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, এমনিতেই ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন আবার বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা আগে থেকেই মাইকিং করে কিংবা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহককে জানানোর কথা থাকলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে তিতাসের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন (উত্তর) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইমাম উদ্দীন শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে ৮ হাজার ৬শ গ্রাহক এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। তবে সমাধানের আগ পর্যন্ত গ্রাহককে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের মতো প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হবে।’
কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ইমাম উদ্দীন সার্ভার জটিলতার কথা বললেও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ মোল্লাহ্ জানালেন মিটারের সমস্যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারে শুরুর দিকে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় ওই মিটারগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। এখন তাতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ওই মিটার আর আমদানি করা হচ্ছে না। ফলে নতুন করে আবার মিটার স্থাপন করা হবে। ধারাবাহিকভাবে এই কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের দু’জন কর্মকর্তা জানান, যে কোম্পানির কাছ থেকে ওই সেবা নেওয়া হয়েছিল তারা এখন আর এ ধরনের ব্যবসা করে না। ফলে ওই কোম্পানির কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট নেওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো আসার ওপর তা পর্যায়ক্রমে ওইসব গ্রাহকদের দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ এই মিটার আনা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে মিটার আমদানি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এদিকে তিতাসের অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারগুলোর স্থায়িত্ব ২০ বছর। প্রতি মাসে মিটার ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা করে নেওয়া হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। কিন্তু ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব মিটার অকেজো হয়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কারিগরি কারণে কোনো সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন।
বর্তমানে একজন পোস্ট পেইড গ্রাহককে দুই চুলার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকার বিল দিতে হয়। সাধারণত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় তার চেয়ে বেশি হিসাব ধরে দাম নির্ধারণের কারণে গ্রাহকের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। অনেক সময় পুরো মাসে কোনো গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল দিতে হয় একই পরিমাণে। কিন্তু প্রি-পেইড গ্রাহককে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিল পরিশোধ করতে হয়।
এদিকে গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে।
২০২৫ সালের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে এই কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিতাসের মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার আবাসিক গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে। অথচ এ খাতে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮ জন। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
দ্রুত গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিতে বিতরণ কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তাগিদ দিয়েছে একাধিবার। প্রি-পেইড মিটারের ধীরগতি নিয়ে কয়েক দফা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
২০২১ সালে বিইআরসির এক হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার বসানো হলে এই চুরি ঠেকানো সহজ হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার বসালে গ্রাহকপ্রতি গড়ে অন্তত ৩০ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে গ্রাহকের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দেশে চলমান গ্যাস সংকটও কিছুটা কমবে।
অভিযোগ উঠেছে তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয় যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
রনজিদা বেগম (৬০) থাকেন পুরান ঢাকার লালবাগে। রোজা রেখে বাসাবাড়ির কাজ শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাজির হন লালবাগের হরনাথ ঘোষ সড়কে। এখানে ‘নবীনের মেহমান খানায়’ প্রতিদিন তার মতো হাজার মানুষের জন্য বিনামূল্যের ইফতারি দেয় নবীন বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
রনজিদা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এত কষ্ট করে মানুষের বাসায় কাজ করে খাই। ছেলে খোঁজ লয় না, তাই লাইনে দাঁড়াইছি। রোজা রেখে কেউ কি ছেলের নামে মিথ্যা কথে বলে? আর রমজানে এখানে প্রতিদিন পোলাও, মাংস, মাছ, রুটি ও ফলসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। সাহরির জন্য দুধও দেওয়া হয়। তাই খরচ বাঁচাতে এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেই।’
আয়োজকেরা জানান, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী এনামুল হাসান নবীনের উদ্যোগে চার বছর ধরে লালবাগ, চকবাজার ও কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ইফতারি দেওয়া হচ্ছে। রোজা শুরুর আগেই নবীন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে হাজার সুবিধাবঞ্চিতকে কার্ড দেন। পরে কার্ড নিয়ে এলে তাকে খাবার দেওয়া হয়।
মেহমানখানার খাবারে বৈচিত্র্য আনার জন্য একেক দিন একেক রকম আয়োজন থাকে। পোলাও, মুরগি, গরুর মাংস, রুই মাছ, দুধ, খেজুর, তরমুজ ও রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইফতারের এক ঘণ্টা আগেই সড়কের দুই দিকে দীর্ঘ লাইন। সবাই অপেক্ষা করছেন। ইফতারের সময় একজন করে এসে সুশৃঙ্খলভাবে কার্ড দেখিয়ে নির্দিষ্ট খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। হরনাথ ঘোষ এলাকার বাসিন্দারা জানান, নবীনের মতো ব্যবসায়ীরা সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ালে সমাজের চিত্র বদলে যেত। গত রমজানেও মেহমানখানা থেকে ইফতারি দেওয়া হয়। এবারও ঠিকঠাকভাবেই সবকিছু চলছে।
ইফতারি নিতে আসা সানজিদা বেগম বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম। রমজানে মাংস দিয়ে খেতে হলে অনেকগুলো টাকা চলে যাবে। এখানে মুরগি, গরু, মাছ সব ধরনের খাবার দেয় পুরো রমজানে। এই খাবার দিয়ে পরিবার নিয়ে প্রতিদিন খাওয়া হয়। ফলে সংসারে খাবারের খরচ কিছুটা সাশ্রয় হয়।’
পুরান ঢাকায় আরও অনেক ধনী আছে, কিন্তু আমরা সেভাবে কারও কাছ থেকে ইফতার পাই না জানিয়ে মো. রাকিব নামের এক বাসিন্দা জানান, ‘অনেক ধনী আছে পুরান ঢাকায়। কিন্তু কারও থেকে সেভাবে কোনো সহায়তা পাই না। গরিব মানুষ তাই এইখানে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেই। শুধু রমজানে নয়, এলাকার গরিব-দুঃখী বিপদে পড়লে এখানে আসলে উপকার পাওয়া যায়। আর রমজান শেষে ঈদের দিনও বাজার দেওয়া হয়।’
নবীন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফেজ এনামুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যবসার লাভের অংশ দিয়ে প্রতি রমজানে ইফতারের আয়োজন করি। আমার মেহমানদের আগেই কার্ড দেই, তারা কার্ড দেখিয়ে খাবার নেন। ইফতারে তাদের জন্য যে খাবার দেওয়া হয়, তা আমি নিজেও খাই। ভালো বাবুর্চি দিয়ে মেহমানদের খাবার রান্না করা হয়। একজনকে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়, তাতে চারজন খেতে পারেন। তবে গতবারের চেয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। তাতে মেহমানখানা চালাতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। বিবেকের তাড়না থেকেই রমজানে সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াই। আমার মতো সব ব্যবসায়ী তাদের পাশে দাঁড়ালে কিছুটা হলেও এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষ স্বস্তি পেতেন।’
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।