
এক সপ্তাহ আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনো ঢাকা পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। সাত দিন পরেও ধসে পড়া ভবনের নিচে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত কয়েকজনকে। তবে সময় যত যাচ্ছে ততই ফিকে হচ্ছে জীবিত উদ্ধারের আশা। স্বজনরাও আটকে পড়া প্রিয়জনকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে চাইছেন মরদেহ উদ্ধার হোক। তবে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির হাড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়ার আশা অবাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সরিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তাদের ঘিরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকছেন স্বজনহারারা। খোলা আকাশের নিচে স্বজনের মরদেহের অপেক্ষায়, খাবারের অপেক্ষায় কাটছে তাদের দিনরাত্রি। যাদের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও নেমে এসেছেন রাস্তায়। তাদের আশঙ্কা, যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে।
গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ হাজার ২১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তুরস্কের জরুরি সমন্বয় কেন্দ্র সাকম জানায়, কেবল তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার ৬৪৩ জনে পৌঁছেছে। আর সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৫৭৪ জন। স্যালভেশন গভর্নমেন্ট গভর্ন্যান্স অথরিটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অংশেই মারা গেছে ৩ হাজার ১৬০ জন। আর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশে মারা গেছেন ১ হাজার ৪১৪ জন।
১৯৯৯ সালের পর থেকে তুরস্কে সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে তুরস্কেই। দেশটির কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতাই ও কিলিস অঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব এলাকায় তিন হাজারের মতো ভবন ধসে পড়ে বাস্তুহীন হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এর মধ্যে গেল এক সপ্তাহে কয়েকশ বারের আফটারশক তাদের মনে ভূমিকম্পের ভয়কে স্থায়ী করে দিয়েছে। তারা তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে থাকলেও পাকা ভবনে ফিরতে ইচ্ছুক নন।
আলজাজিরা বলছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে হাতাই প্রদেশের রাজধানী আনতাকিয়া শহরের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। শহরে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলাটা বেশি হয়েছে। কারণ শহরটি বহু পুরনো। শহরে যে দিকেই চোখ যায়, শুধু ধসে পড়া ভবনের স্তূপ। ফলে ক্ষয়ক্ষতিটা আদতে কতটা হয়েছে, তা পরিমাণ করা কঠিন। আর টিকে থাকা অনেক ভবনে ফাটল ধরেছে, আংশিক ধ্বংস হয়েছে, না হয় হেলে পড়েছে। ভবন ধসে পড়ায় শহরটিতে অনেকে এখন পুরোপুরি বাস্তুহীন। অনেকে আবার টিকে থাকা বাড়িগুলোতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন; আশঙ্কা, যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে। ফলে বহু বাসিন্দা শহরটি ছেড়ে চলে গেছেন। আর যারা রয়ে গেছেন, তারা বসবাস করছেন গাড়িতে, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অথবা সহায়তা হিসেবে পাওয়া তাঁবুতে। তাদের জীবন কাটছে উদ্বাস্তু শরনার্থীদেরও মতোই।
ভূমিকম্পের পর আনতাকিয়ার মতো অনেক শহরে দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নানা জরুরি পণ্যের তীব্র সংকট। ফলে লুটপাটের ঘটনা বেড়েছে। তবে গতকাল রবিবার থেকে সেনাবাহিনী রাস্তাঘাটে টহল দেওয়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। তুরস্কের আরেকটি ভূমিকম্পকবলিত শহর ইসকেনদেরুনের বাসিন্দা সেরিজান আগবাস। তিনি আলজাজিরাকে বলেছিলেন, তার অবস্থা এখন একজন উদ্বাস্তুর চাইতেও খারাপ। তার পকেটে আছে আছে মাত্র ১৫ লিরা। তার একটি কাপড়ের ছোট দোকান ছিল। ওই দোকানের আয় থেকে পরিবারের পেট চালাতেন তিনি। দোকানটি এখন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। আগবাস যে ভবনে বসবার করতেন, সেটি কোনোমতে টিকে থাকলেও অবস্থা বেশ নাজুক। তাই সেখানেও তিনি যেতে চান না। উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গেই একটি স্কুলের বারান্দায় থাকছেন তিনি। প্রায় এক সপ্তাহ পরেও তেমন সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন তিনি। আগবাস বলছিলেন, আমাদের পুরো জাতির কাছ থেকে মানসিক সহায়তা দরকার। সরকারের কাছ থেকে কেউ কিছু আশা করছে না। নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সামলাতে হচ্ছে।
তুরস্কে যেসব অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, সেগুলোর মোট আয়তন ব্রিটেনের সমান। তুরস্ক সরকার বলছে, বিপর্যয়ের মাত্রা অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে তিনি উপদ্রুত এলাকাগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। তবে প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার বা ৯ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি এই সময়ের মধ্যে তুরস্ক কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা না নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
যদিও তুরস্ক ইতিমধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ থেকে সহায়তা পেয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে নানা ধরনের ঋণ সহায়তাও পাবে দেশটি।
তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় পরিস্থিতি পুরো উল্টো। ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরেও অনেক এলাকার কোনো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব মেলেনি। জাতিসংঘ বলছে, শুধু সিরিয়াতেই ৫৩ লাখের বেশি মানুষ গৃহহারা হয়েছে। তবে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের কারণে অনেক এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের প্রচেষ্টা বিঘিœত হচ্ছে। এর সঙ্গে বৈরী আবহাওয়ায় বিঘিœত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতাও। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত আর কাউকে পাওয়ার আশা তারা করছে না জানিয়ে গতকাল সেখানে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টেনেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটস। এরাই ওই অঞ্চলটিতে খালি হাতেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে গেছে।
গতকাল জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস সিরিয়ার আলেপ্পোতে ভূমিকম্প দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান। যেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিরই উদ্ধার অভিযান ‘শেষ হওয়ার পথে’। গ্রিফিথস বলেন, এখন কর্মকর্তারা বেঁচে যাওয়াদের আশ্রয়, খাবার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার বিষয়ে অধিক মনোযোগ দেবেন। তিনি বলেন, আমরা এখানকার যেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের চোখেমুখে ভয় ও আতঙ্ক স্পষ্ট ছিল। এটা এমন একটি ভয় যেটা কাটাতে বিশ্বকে কাজ করতে হবে। এখানকার মানুষদের জন্য সাহায্য পাঠানো, তাদের যতœ নেওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘ ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার মানুষদের অনেক ভুগতে হয়েছে এবং হচ্ছে। তারপরও এবারের ভূমিকম্পকে দেশটির মানুষদের ওপর নেমে আসা সব থেকে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান ও সাবেক ছয় চিকিৎসক এবং দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক (ব্রেন ডেথ) অঙ্গদাতা সারা ইসলামের মা ও একজন মুক্তিযোদ্ধা মরণোত্তর অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছেন। গতকাল সোমবার বিএসএমএমইউতে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নামে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই আটজন অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন।
অঙ্গীকারদাতাদের মধ্যে ছয়জন ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন। তারা হলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল ও বিএসএমএমইউর কিডনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. হারুন অর রশিদ এবং সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা। এ ছাড়া মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করেছেন বিএসএমএমইউর সাবেক চিকিৎসক অধ্যাপক সজল ব্যানার্জী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান।
ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকারনামাদের নাম ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন অঙ্গদানের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে ‘সারা ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’ উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা।
একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারা ইসলামের অঙ্গ অন্য চারজন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিএসএমএমইউ ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারা ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। তার পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন। ভবিষ্যতে আমি নিজেও এ ধরনের মহতী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারি সেটা আমার বিবেচনায় রয়েছে।
বিএনপি ঘোষিত পদযাত্রা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি পদযাত্রার নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য বিএনপি দিনের বেলা পদযাত্রা করে রাতে কূটনীতিকদের পদলেহনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বিএনপির উচিত বিশৃঙ্খলা-ষড়যন্ত্র পরিহার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে।
তিনি আরও বলেন, সারা ইসলাম মেধাবী একজন ছাত্রী ছিলেন। জটিল এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুদক্ষ চিত্রশল্পী ছিলেন। মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তার মা শবনম সুলতানা তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় সঠিক অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ছয়জন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষা করে সেখান থেকে দুজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে জটিল এই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং শেষ হয় পরদিন ভোর প্রায় ৫টার দিকে। আইন অনুযায়ী গঠিত প্রতিটি টিম এখানে সুদক্ষভাবে কাজ করেছে। প্রতিস্থাপন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। ইউরোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, কিডনি ফাউন্ডেশন, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কমিটির সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অভিনন্দন জানাই।
সারা ইসলামের অবদানকে সম্মান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারা ইসলামই প্রথম ব্যক্তি যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন। তার দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন! সারা তা দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারা ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে অঙ্গীকার করেছি। আমাদের পরবর্তী কাজগুলো শুরু হবে। ছোট্ট একটা মেয়ে আমাদের যা শিখিয়ে দিয়ে গেল, আমরা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। সারার অঙ্গদান একটা বিশাল ব্যাপার। আমার জীবনে দেখা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীরা খুব কষ্ট পায়। এদের যদি আমরা ন্যূনতম সাহায্যটুকুও করতে পারি এটাই আমাদের জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, সারার দুটি কিডনি যে দুই রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। তাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীটিও ভালো আছে। তবে তাকে ছুটি দিতে একটু সময় লাগবে।
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে সারা ইসলাম ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তার দুই কিডনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে বের করে আনা হয়। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। সারার অপর কিডনিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও সারার দুটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় রোগী শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার (৫৬) ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) চোখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌসী আক্তারের চোখে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় ১১০০ বর্গফুটের তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের গড়পড়তা মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এই ফ্ল্যাটের প্রতি রুমে চারজন খুব সহজেই বসবাস করতে পারে। ড্রইং-ডাইনিংয়েও আরও এক-দুজনের থাকা সম্ভব। ফলে ওই ফ্ল্যাটে ১৩ জন ছাত্রী থাকতে পারে। অথচ রূপনগরেই ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যয়ে ৫০০ আসনের ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করেছে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাঁচ বছর আগে নির্মিত ওই হোস্টেলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩ জন ছাত্রী অবস্থান করেছে; অর্থাৎ ১৩ ছাত্রীর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ২৭ কোটি টাকার হোস্টেল।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক তদন্ত প্রতিবেদনে স্কুল কর্তৃপক্ষের অযথা ও অপরিকল্পিত অর্থ খরচের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। এরপর কয়েক মাস তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তদন্ত দল। এতে শতকোটি টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনটি আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া এই প্রতিবেদনের কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত ফাইল এখনো আমার কাছে আসেনি। তাই মন্তব্য করতে পারব না। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্কুল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রীদের আবাসিক সুবিধার জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়নি। সবাই জানে, এই হোস্টেলে কোনোভাবেই আবাসিক ছাত্রী পাওয়া যাবে না। আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। মূলত বড় অঙ্কের টাকা খরচের জন্য এই হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ যত বেশি টাকা খরচ করা সম্ভব হবে, তত বেশি টাকা নয়ছয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ২০১৮ সালের বিল, ভাউচার ও স্টেটমেন্ট যাচাই করে পরিদর্শন দল দেখতে পায়, অধ্যক্ষের বাসভবন ও মহিলা হোস্টেল নির্মাণকাজের ব্যয় বাবদ লারা এন্টারপ্রাইজকে মোট ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি অধ্যক্ষের বাসভবন ও ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা মহিলা হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। গত বছরের ৯ জুন মহিলা হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৩ জন; অর্থাৎ ৫০০ সিটের মধ্যে ৪৮৭টিই ফাঁকা। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক দিন আগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সেই ১৩ জন ছাত্রীও হোস্টেলে নেই। মাত্র চার-পাঁচজন অবস্থান করছে। অথচ তাদের পেছনে আট-দশ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী কাজ করছেন। মাসে অনেক টাকা মেইনটেন্যান্সে খরচ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চিন্তা করে হোস্টেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে একটি উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। সেটা হলে হোস্টেলটি প্রয়োজন হবে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোস্টেলটি করা হয়েছে স্কুলের টাকায়। তাহলে সেটা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে?
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ ছাড়া ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ টাকার কাজের প্রয়োজনীতা ও যথাযথ হিসাব দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরে আইন ভেঙে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্মানী নিয়েছে। বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষকদের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। ৬ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩ কোটি টাকা তোলা হলেও বের হয়নি ম্যাগাজিন। এমনকি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের নামেও দুর্নীতি হয়েছে। ৭ বছরে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি টাকার মতো বিভিন্ন ধরনের কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অবস্থিত মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৬টি ক্যাম্পাস। মনিপুর এলাকায় বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে। এর বাইরে শেওড়াপাড়া, ইব্রাহীমপুর ও রূপনগরে শাখা রয়েছে। আর রূপনগরে আলাদাভাবে করা হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজারের ওপরে। প্রতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের টিউশন ফি, ভর্তি ও সেশনচার্জ বাবদ প্রতিষ্ঠানটিতে এককালীন আয় হয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রতি মাসে টিউশন ফি বাবদ ওঠে প্রায় ৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরে ১১৭ কোটি টাকা আয় হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ৩০ কোটি খরচ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বাকি টাকায় সারা বছরই চলে নানা ধরনের উন্নয়নকাজ ও নানা ধরনের কেনাকাটা। এমনকি নতুন ভবন ভেঙেও তৈরি করা হয়েছে আরেক নতুন ভবন। প্রতিষ্ঠানটির বালিকা ক্যাম্পাসের চারদিক ঘুরিয়ে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন। কয়েক বছর ধরে সেই ভবন ভেঙে নতুন তিনটি ১৫তলা ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এগুলো নির্মাণের জন্য আগে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হলেও সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ১৩০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। যাদের অধীনেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার, যিনি সর্বশেষ গভর্নিং বডিরও সভাপতি ছিলেন। সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সরকারের শিল্প প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহম্মেদ মজুমদার, এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, জাকিয়া শিল্পী, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মো. শহিদুল্লাহ্ শিকদার এবং রেজাউল হক ভুঁঞা।
ডিআইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবের সম্মানী বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সম্মানী থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করার কথা। সেই হিসাবে সম্মানী থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৪ টাকা। এ ছাড়া গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ অনুযায়ী, সদস্যদের সম্মানীর বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। যেহেতু সম্মানী নেওয়ার সপক্ষে কোনো বিধান নেই, তাই সম্মানী বাবদ গৃহীত সব টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মূল ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। এসব ক্লাসের সম্মানী বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার ৫৬ টাকা। কিন্তু এই সম্মানীর বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর বাবদ ২ কোটি ৯ লাখ ২ হাজার ৭০৫ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এতে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অভিভাবকরা বলেছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা শুরু হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ ছিল মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। তখন নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকদের বেতনও আংশিক দেওয়া হয়। অথচ করোনাকালীন ২০২০ ও ২০২১ সালে যেখানে নিয়মিত ক্লাসই হয়নি, সেখানে বিশেষ ক্লাসের নামে বড় অঙ্কের বিল দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃক নিযুক্ত হোসেন দেলোয়ার অ্যান্ড কোং-এর অডিট রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সরবরাহ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩১৪ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর বিপরীতে মাত্র ১ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার ৯৭৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভ্যাট হওয়ার কথা ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬২ টাকা। তাই বাকি ২২ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ২৮৮ টাকা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া আবশ্যক।
বিদ্যালয়টির ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাস মেরামত ও রং করার কাজে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে পরিদর্শন দল। তারা বলছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯১০ টাকার কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার মাত্র ৭ দিনের মাথায় বিল পরিশোধের সুপারিশ করা হয়। অথচ ইব্রাহীমপুর ক্যাম্পাসটি অনেক বড় এলাকা। মাত্র ৬ দিনে এর নির্মাণ, মেরামত ও রং এর কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কাজটি আদৌ করা হয়েছিল কি না, তা সন্দেহজনক। আর একুলিয়া এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করে দেখা যায়, এটি একটি আমদানি-রপ্তানিকারক ও তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের এ ধরনের কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
২০১৫-১৬ হতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বিল ভাউচার যাচাইয়ে আরও দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জারা এন্টারপ্রাইজ, লারা এন্টারপ্রাইজ, তৌহিদ ডেভেলপারস অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, ওশান ইনফরমেশন সিস্টেম ও মনির ডেকোরেটরকে মোট ৪৭ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৩ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ এসব বিল বাবদ ১০ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬ টাকার আয়কর পরিশোধ করা হয়নি। দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আয়করের পুরো টাকা আদায় করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর প্রতিস্থাপনেও ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৯২ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে; যা বিধিবহির্ভূত বলেছে পরিদর্শন দল।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক বলছেন, ঘুরেফিরে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই স্কুলের শত শত কোটি টাকার কাজ করছে। বলতে গেলে, কয়েকজন ট্রাস্টির সৃষ্ট ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমেই বড় অঙ্কের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এত ভবনের কী দরকার? প্রতিনিয়ত নতুন ভবন ভেঙে আবার ভবন করা হচ্ছে। ভবন নির্মাণ আর কেনাকাটার মাধ্যমেই লুটপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এর আগে গত অক্টোবরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত অপর এক তদন্তে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অবসরের পর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বা ট্রাস্ট তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তা বৈধ নয় এবং তারা তা দিতে পারে না। কিন্তু এরপরও ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখনো প্রতিবেদনের কপি পাইনি। তা পাওয়ার পর জবাব দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। আমরা ওই সময়ের মধ্যেই এ ব্যাপারে জবাব দেব।’
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ধারাবাহিকতায় দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গড়ে উঠছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু যথাযথ পাইলিংয়ের (ভবন বা স্থাপনার এক ধরনের ফাউন্ডেশন যা স্থাপনার নিচে মাটির গভীরে ভার স্থানান্তর করে স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়) মাধ্যমে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে খোদ প্রকৌশলীদের মধ্যেই রয়েছে সংশয়। এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীসহ তিন বিভাগীয় শহরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) বহুতল ভবনগুলো নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। শক্তিশালী বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে এসব ভবন ধসে না পড়ে টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল আগে থেকেই। বিশেষ করে সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজারো বহুতল ভবন ধসে পড়ার পর এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।
দেশের প্রধান শহরগুলোতে জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে গড়ে উঠছে সুউচ্চ সব ভবন। তবে নিচু ভূমির মাটির নিচে কাদামাটির পরিমাণ বেশি। ভৌগোলিকভাবে পুরো বাংলাদেশ (তিন পার্বত্য জেলা, লালমাই, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং বরেন্দ্রভূমি ছাড়া) পলি সঞ্চয়নের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। আর তাই মাটির নিচে পানির প্রবাহ বেশি, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও পিলার তৈরিকালে কয়েকটি পিলারের নিচে এমন পানির প্রবাহ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নকশায় পরিবর্তন এনে আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু ভবন নির্মাণে সেই আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভবন মালিক কিংবা ডেভেলপাররা (ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান) মাটির নিচে ভবনের ভিত মজবুত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করে থাকেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। চট্টগ্রামের মাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বেসরকারি সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। ‘মৃত্তিকা’ নামে সয়েল টেস্টের (মাটি পরীক্ষা) একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্ণধার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবন মালিকরা ভবনের ওপরের অংশের সাজসজ্জায় কিংবা ছাদের রড দেওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু সচেতন ভবনের নিচের অংশের নির্মাণে সেই সচেতনতা দেখা যায় না। যেনতেনভাবে পাইলিং করে ভবন নির্মাণ করলেই যেন হয়ে গেল। কিন্তু তারা বুঝতে চায় না পা যদি দুর্বল হয়, তাহলে শরীরটা দাঁড়িয়ে থাকবে কীসের ওপর?’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পাহাড়ি এলাকার আশপাশ ছাড়া দেশের অন্য সব এলাকায় মাটির নিচে কাদা ও বালি মাটির আধিক্য বেশি। বালি মাটির নিচে যদি পানির স্তর থাকে আর তখন যদি সঠিকভাবে ট্রিটমেন্ট না করে ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে ঝুঁকি বাড়বে।’
দেশের মাটিতে পানির আধিক্য সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাম্মেল বলেন, ‘আমাদের মাটির কিছু দূর পরপর পানির পকেট রয়েছে। তাই ভবনের ডিজাইন করতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
গত রবিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর পশ্চিম বাকলিয়া বগার বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাকলিয়া এক্সেস রোডকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। সেখানে নির্মাণাধীন একটি ছয় তলা ভবনের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকে। তিনি বলেন, ‘এই ভবন নির্মাণের জন্য মাটির ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত পাইলিং করা হয়েছে। ৫০ ফুটের নিচে আছে পানির স্তর। আবার ৮০ ফুটের নিচেও পানি আছে। তাই মধ্য এলাকা পর্যন্ত পাইলিং করে বেইজ করা হয়েছে।’
তবে এভাবে অপরিকল্পিত পাইলিংয়ে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান পুরকৌশলবিদ এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ভূমির নিচের দিকে মাটির চেয়ে বালির আধিক্য বেশি। আর সেই বালির নিচে যদি পানির স্তর থাকে তাহলে অবশ্যই ট্রিটমেন্ট করে বেইস করতে হবে। আর কাদামাটির ওপর বেইস করলে তা স্লিপ করতে পারে। আর এ জন্যই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন দেবে যাওয়া কিংবা হেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
মাটির নিচের কাঠামো কেমন?
নগর নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ভূগোলবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের নগরগুলোতে এখন জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব এলাকার নিচের মাটির গাঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। অবশ্য সেই দুর্বল কাঠামোর মধ্যেও বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু তা হতে হবে নির্মাণ বিধি অনুযায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে এসব ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে কি না?’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপান ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এক সময় সেখানে বহুতল ভবন নির্মিত হতো না। এখন ১০০ তলারও বেশি উচ্চতার ভবন নির্মিত হচ্ছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রযুক্তি রয়েছে। আমরা সেই প্রযুক্তি মেনে চলছি কি না সেটাই প্রশ্ন। প্রকৌশলীদের মতে, আমরা অনেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না। একসময় দেশে বিমবিহীন ভবন নির্মাণের জোয়ার শুরু হয়েছিল। পরে যখন জানা গেল এসব ভবনে ভূমিকম্পে ঝুঁকি বেশি, তখন সেই ধারণা থেকে সরে আসে অনেকে। তবে বিমবিহীন ভবন নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, আমরা সেই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকে দক্ষ ছিলাম না। সাধারণ মিস্ত্রিরাও এই পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ শুরু করে দিয়েছিল।’
দেশের মাটির গঠন কাঠামো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান বলেন, ‘ভৌগোলিকগত কারণে আমাদের দেশের মাটির গঠন কাঠামো শক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে পিউর বালি মাটির ওপরে বেইস করা নিরাপদ। আর যদি কাঁদা মাটির ওপরে বেইস করা হয় তাহলে ভূমিকম্পে নিচের পানির সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে তা তরলীকরণ হয়ে পিচ্ছিল হয়ে যেতে পারে। যা ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন বর্ষাকালে কাদামাটি স্লিপ কাটে, কিন্তু বালি মাটি স্লিপ কাটে না।’
দেশের ভবনগুলো কি নিরাপদ?
ভূ-তত্ত্ববিদ, ভূগোলবিদ ও প্রকৌশলী সবারই অভিমত দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হয় না। আর এসব ভবনগুলোতে ঝুঁকি বেশি। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মমিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের পুরো এলাকা জলাধার ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এসব ভবন কি নির্মাণ বিধি মেনে নির্মিত হয়েছে? বর্তমানে দেশের ভেতরে কিংবা দেশের প্রান্তসীমায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যদি মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্পও আমাদের এখানে উৎপত্তি হয় তাহলে ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত আছি? আমাদের ভবনগুলোর কি অবস্থা হবে?’
দেশের ভেতরেই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভূ-তত্ত্ব) আক্তারুল আহসান। ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়ে কাজ করা এই গবেষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে না। আর এতেই চিন্তার কারণ বাড়ছে। ভূমিকম্প হলে শক্তিগুলো বের হয়ে যেত, কিন্তু ভূমিকম্প না হওয়ায় শক্তিগুলো জমা হয়ে বড় ভূমিকম্প হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯১৮ সালে ৭ দশমিক ৬ রিকটার স্কেলের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়নি। ফলে আমরা বড় ভূমিকম্পের অপেক্ষায় আছি বলতে পারি।’
ভূমিকম্পের জন্য কোনো এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে পুরো দেশই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারপরও নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে ওঠা ভবন এবং কক্সবাজারের সাগরতীরে গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে লিকুফিকশানের (মাটির সঙ্গে পানি মিশ্রিত হয়ে তরল হয়ে যাওয়াকে বোঝায়) শঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে এসব ভবন ধসে পড়বে। তাই যেকোনো জায়গায় ভবন নির্মাণে মাটির স্তর পরীক্ষা করে ভবনের ডিজাইন করতে হবে।’
সমাধান কি?
পুরকৌশলবিদ ও ভূমিকম্পবিদ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘নগরায়ণের কারণে জলাশয় ও নিচু এলাকা ভরাট করে ভবন নির্মাণ ছাড়া গতি নেই। তবে এ জন্য প্রকৌশল প্রযুক্তি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু পাথরের ওপর গড়ে তোলা হয়। যেহেতু ভৌগোলিকভাবে আমাদের মাটির কাঠামো দুর্বল সে জন্য ৫০০ মিলিয়ন টাকা খরচ করে মাটির নিচে সিমেন্ট দিয়ে পাথর বানিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তারপর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।’
কোন পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণ যথাযথ এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘কোনো ভবনের পাইলিং যদি ১০০ মিটার হয় তাহলে ওপরের দিকে ১০ মিটারে মাটির সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে দুরমুচ (শক্ত কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া) করতে হবে। তাহলে ভূমিকম্প হলে সেই ঝাঁকুনিটি সহ্য করতে পারবে। কিন্তু আমাদের ভবনগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয়নি এবং করা হচ্ছে না, এতেই ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকি কমাতে এখনই সব ভবন সঠিক পদ্ধতি মেনে নির্মাণ করা উচিত।’
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার বার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে বছরে ১০০ ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই ১০০ ভূমিকম্পের মধ্যে কিছু ভূমিকম্প অবলীলায় খুব মারাত্মক হয়ে থাকে। পৃথিবী ছোট-বড় ২৭টি প্লেট নিয়ে গঠিত এবং এই প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত গতিতে রয়েছে। ফলে প্লেটগুলোর প্রান্তসীমায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
সম্প্রতি তুরস্কে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকম্প হলে কে অবস্থা হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। দেশের পূর্ব পাশ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী হয়ে একটি ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের ফল্ট লাইন রয়েছে। যা সিলেটের উত্তর প্রান্ত হয়ে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ফল্ট লাইনের কারণে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রায়ই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এছাড়া দেশের ভেতরেও কিছু খাদ রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৪ এপ্রিল তার নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আমি ঘোষণা করছি যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন।
এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। সিইসি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র একই ব্যক্তির নামে জমা পড়ে। যার নামে দাখিল করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই করেছি। বাছাইয়ের সময় যারা প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র বাছাই করে দুটির মধ্যে একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণভাবে বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়পত্র গ্রহণের কার্যকারিতা ছিল না। তিনি আরও বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা ৭ অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দলের হয়ে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত রবিবার ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আসেন। এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন। মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিনিই হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
এদিকে গতকাল দুপুরে নির্বাচন ভবনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো রাষ্ট্রপতি করিনি যার নাম ইয়াজউদ্দিন, কার্যক্রমে ইয়েস উদ্দিন। এ ইয়েস ধরনের কোনো ব্যক্তিকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, কোনো অপশক্তিকে মনোনয়ন দিইনি। তিনি বলেন, টেররিজমে বিশ্বাস করে, আগুন সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে এমন কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সুশিক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি। যার ক্যারিয়ার, গোটা জীবনটাই বর্ণাঢ্য। এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করায় সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাদের বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রধান নির্বাচনের ঘোষণাটি আমরা পেয়েছি। একটা কপি আমাদের দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিএনপির আগ্রহ নেই এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে তাদের আগ্রহ থাকবে না। দেশের সংবিধানে, গণতন্ত্রে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। গণতন্ত্র ও সংবিধানে যাদের আগ্রহ না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কে হলো না হলো তা নিয়ে তাদের আগ্রহ না থাকারই কথা। এ নিয়ে আমরা অবাক হইনি। বিএনপি এমনই বলবে এটা তাদের মুখে শোভা পাবে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। বিএনপির মতো দল নির্বাচনে থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা।
নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংবিধান মেনে কাজ করার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে দায়িত্বভার দিয়েছে সেটা তিনি করবেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করার থাকবে না।
বিএনপির সংলাপেও আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি তাদের সংলাপে ডেকেছেন, যায়নি, ইসির সংলাপে যায়নি। তারা সংলাপে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না।
প্রায় তিন বছর ধরে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহনুর ইসলাম লিজা। চলতি মাসে টাকা রিচার্জ করতে গেলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয় এখন থেকে তাকে পোস্ট পেইড বিল দিতে হবে। কী কারণে তাকে প্রি-পেইড থেকে পোস্ট পেইডে যেতে হলো তাও জানেন না তিনি। তবে তাকে এখন একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুনতে হবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে লিজার মতো ওই এলাকার কয়েক হাজার গ্রাহক এখন চরম ভোগান্তির শিকার।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিতাসের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘তারা (তিতাস) নিজেরা মিটার দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি মিটার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক, যাতে গ্রাহক পছন্দমতো মিটার কিনতে পারেন। কিন্তু তা না করে গ্রাহককে জিম্মি করা হয়েছে। এখন তারা গ্যাস দেবে না। উল্টো গ্যাসের দাম আদায় করবে। এটা ভয়ংকর রকমের অপরাধ। তিতাস গ্রাহককে লুণ্ঠন করছে নানা উপায়ে। ২০১৫ সালের কমিশনের আদেশে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা বলা হলেও তারা তা পারেনি। এগুলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
তিতাস গ্যাসের গ্রাহক মাহনুর ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তার বাসায় গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে ব্যাংকে গেলে তাকে একটি নোটিস দেখানো হয়। তাতে লেখা সাময়িকভাবে তিতাসের কার্ড রিচার্জ বন্ধ। ওই নোটিসে উল্লেখ করা যোগাযোগ নম্বরে ফোন দেওয়ার পর শনিবার তিতাস গ্যাসের কর্মী তার বাসায় গিয়ে প্রি-পেইড মিটারটি খুলে পোস্ট পেইড সংযোগ দিয়ে দেন। এজন্য কিছু টাকাও তাকে দিতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাহনুর বলেন, ‘ইচ্ছে হলো মিটার লাগাবে আবার খুলবে এটা কোন ধরনের কথা? কারিগরি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে গ্রাহক হিসেবে তা জানার অধিকার আমার আছে। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ আগে-পরে এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। এমনকি কবে নাগাদ প্রি-পেইড মিটার ফিরে পাব কিংবা আদৌ পাব কি না তাও জানি না।’
‘এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাস বা কখনো কখনো তারও বেশি সময় ধরে গ্যাস ব্যবহার করতে পারি। আর এখন আমাকে একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি মাসে প্রায় ১১শ টাকা দিতে হবে। কারণ পোস্ট পেইডে বিল ফিক্সড। তিতাসের কারণে কেন আমাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে’ যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী লিলি জানান, তিনিও আগে থেকে কিছুই জানতেন না। কার্ড রিচার্জ করতে গেলে তাকে গ্যাসের পোস্ট পেইড সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে তাকে এখন থেকে প্রতি মাসে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
গত জানুয়ারি থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ধানম-ি ও মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, এমনিতেই ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন আবার বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা আগে থেকেই মাইকিং করে কিংবা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহককে জানানোর কথা থাকলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে তিতাসের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন (উত্তর) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইমাম উদ্দীন শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে ৮ হাজার ৬শ গ্রাহক এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। তবে সমাধানের আগ পর্যন্ত গ্রাহককে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের মতো প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হবে।’
কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ইমাম উদ্দীন সার্ভার জটিলতার কথা বললেও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ মোল্লাহ্ জানালেন মিটারের সমস্যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারে শুরুর দিকে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় ওই মিটারগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। এখন তাতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ওই মিটার আর আমদানি করা হচ্ছে না। ফলে নতুন করে আবার মিটার স্থাপন করা হবে। ধারাবাহিকভাবে এই কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের দু’জন কর্মকর্তা জানান, যে কোম্পানির কাছ থেকে ওই সেবা নেওয়া হয়েছিল তারা এখন আর এ ধরনের ব্যবসা করে না। ফলে ওই কোম্পানির কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট নেওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো আসার ওপর তা পর্যায়ক্রমে ওইসব গ্রাহকদের দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ এই মিটার আনা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে মিটার আমদানি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এদিকে তিতাসের অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারগুলোর স্থায়িত্ব ২০ বছর। প্রতি মাসে মিটার ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা করে নেওয়া হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। কিন্তু ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব মিটার অকেজো হয়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কারিগরি কারণে কোনো সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন।
বর্তমানে একজন পোস্ট পেইড গ্রাহককে দুই চুলার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকার বিল দিতে হয়। সাধারণত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় তার চেয়ে বেশি হিসাব ধরে দাম নির্ধারণের কারণে গ্রাহকের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। অনেক সময় পুরো মাসে কোনো গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল দিতে হয় একই পরিমাণে। কিন্তু প্রি-পেইড গ্রাহককে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিল পরিশোধ করতে হয়।
এদিকে গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে।
২০২৫ সালের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে এই কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিতাসের মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার আবাসিক গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে। অথচ এ খাতে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮ জন। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
দ্রুত গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিতে বিতরণ কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তাগিদ দিয়েছে একাধিবার। প্রি-পেইড মিটারের ধীরগতি নিয়ে কয়েক দফা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
২০২১ সালে বিইআরসির এক হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার বসানো হলে এই চুরি ঠেকানো সহজ হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার বসালে গ্রাহকপ্রতি গড়ে অন্তত ৩০ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে গ্রাহকের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দেশে চলমান গ্যাস সংকটও কিছুটা কমবে।
অভিযোগ উঠেছে তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয় যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি করা হচ্ছে।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ রবিবার (৪ জুন) জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, এক সময় চা ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা শিল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৭ সালে 'উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প' অনুমোদন দিয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধিসহ তাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাসস্থান, শৌচাগার ও নলকূপ স্থাপন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্প পুনর্গঠনে বাগান মালিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে শ্রীমঙ্গলের টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) হিসেবে দেশের চা গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বছর চা দিবসের প্রতিপাদ্য 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প' অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
মো. সাহাবুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডসহ চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি 'জাতীয় চা দিবস ২০২৩' উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। আর স্বল্প সময়ের উৎপাদন দিয়েই গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিয়া মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ দেখা। এরই অংশ হিসেবে স্বল্প সময়ের উৎপাদন দিয়ে আমরা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছি, যাতে ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে বের করে আনা যায়। এখন লক্ষ্য হচ্ছে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা।
মিয়া মামুন আরও বলেন, মূলত এমারেল্ডের তেল জাপানে রপ্তানির উদ্দেশ্যেই আমরা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করেছি। একটি রুগ্ণ কোম্পানিকে স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি চেয়ারম্যানের সহায়তায় এখন আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি জাপানে রপ্তানির জন্য। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই এটি সম্ভব হবে বলে মনে করছি। কিছু কমপ্লায়েন্স ইস্যু ছিল, যা আসন্ন এজিএমে সমাধান হয়ে যাবে। এরপর তেল রপ্তানিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
গত ১ জুন এমারেল্ড অয়েলের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির আগের উদ্যোক্তা বাদে অন্য সবাই এ লভ্যাংশ পাবেন। ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থাকায় আগের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার ফ্রিজ করা আছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল কোম্পানিটির তৎকালীন পর্ষদ। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেষ্টায় ২০২১ সালে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। বন্ধ থাকা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। মিনোরির নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরে এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানিটির রাইস ব্র্যান তেলের দুটি ইউনিটের একটি সচল রয়েছে, যেখান থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ৪৫ টন ক্রুড অয়েল উৎপাদন হচ্ছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি। কোম্পানিটি উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহায়তা দেন এসইসি চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে এসইসি চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু এমারেল্ড নয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, রিং সাইন টেক্সটাইলসহ প্রায় ২০টির মতো পুরনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানি আমরা পুনর্গঠিত করেছি। এরমধ্যে অনেকগুলো কোম্পানি নতুন ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনে ফিরেছে। পুরনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো সচলে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও প্রায় ২০টি কোম্পানি উৎপাদনে ফিরবে। এখন বড় বড় গ্রুপগুলো পুরনো বন্ধ থাকা এসব কোম্পানি নিতে চাইছে। কারণ নতুন করে জমি, যন্ত্রপাতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষে উৎপাদন শুরু করতে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু পুরনো কোম্পানি ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা যায়।
এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুরনো কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছিল। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের মাধ্যমে সেসব কোম্পানি এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফিরছে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে। এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
এদিকে দেশজুড়ে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছিল না এমারেল্ড অয়েল। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন সংকট কাটাতে গত ১১ মে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রাইস হাস্ক (ধানের তুষ) বয়লার সংযোজন করেছে কোম্পানিটি। এর ফলে এখন থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা ধানের কুড়ার তেল উৎপাদন করতে পারবে এমারেল্ড অয়েল। এর ফলে প্রতিদিন অন্তত ২০০ টন রাইস ব্র্যান ক্রাশিং করা যাবে, যা থেকে ৪০-৪৫ টন তেল পাওয়া যাবে। বয়লার স্থাপনের কারণে পরিশোধিত তেল উৎপাদন সর্বোচ্চ ৭০ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানি এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদন চালাচ্ছে। মুনাফাও হচ্ছে। প্রথম বছরের স্বল্প উৎপাদন থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাঁচামাল, জ্বালানি থেকে সবকিছু অনুকূলে থাকায় এটি এখন আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
এদিকে নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার বরাদ্দ হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
এমারেল্ড অয়েলকে সফলভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া হয় মিনোরির হাতে। এটিরও ধারাবাহিক উন্নতি দেখা গেছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও মুনাফা বাড়ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।