
গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার নবীনগরে নামিয়ে সড়কের পাশে বাস রেখে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন ওই বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ ১২-১৩ জনের একদল ডাকাত বাসে উঠে চিৎকার করতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনজনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম মারধর করে। এরপর চোখ-মুখ, হাত ও পা বেঁধে বাসের পেছনের আসনে ফেলে রাখে। তাদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এরপর ডাকাতরা বাস নিয়ে রাজধানীতে চলে আসে এবং রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে যাত্রী তোলে। যাত্রীরা বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে মারধর। তাদেরও মুখ, হাত ও পা বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে কাউকে সড়কে নামিয়ে দেয় আবার কাউকে বাসের পেছনে গাদাগাদি করে ফেলে রাখে। যাত্রীদের মধ্যে চিকিৎসক, ব্যাংকার ও সাধারণ কর্মজীবীও ছিলেন। তাদের হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় ডাকাতরা। কিছুক্ষণ পরপর লোহার পাইপ দিয়ে শরীরে আঘাত করে। অনেকের শরীর ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। পরে ভোরের দিকে চন্দ্রার একটি নির্জন স্থানে বাস রেখে সটকে পরে ডাকাত দলটি। বাসটির স্টাফ ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে দাবি করেন রিসাত পরিবহনের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডাকাত দলের কাউকেই গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি। শফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে এবং স্টাফদের মারধর করেছে। তবে আমাদের বাসমালিক কোনো ধরনের ঝামেলায় যেতে চান না। আমরা নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে একটি জিডি করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ বিন করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতির কোনো তথ্য আমার জানা নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে কেউ সাধারণ ডায়েরিও করেছে বলেও ডিউটি অফিসার আমাকে বলেননি।’ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীদের একজন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক শাওন চৌধুরী জয়। রবিবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশে চাঁনখারপুল এলাকা থেকে রিসাত পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন তিনি। এর পরই তার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। চোখ বেঁধে বাসের পেছনে নিয়ে বসিয়ে রাখে। শাওন চৌধুরী জানান, তার কাছে থাকা ১২ প্রোম্যাক্স আইফোন, ৭ আইফোন, নগদ সাড়ে চার হাজার টাকা, হাতঘড়ি ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে গেছে ডাকাত দল। তাকে মারধরও করেছে তারা।
এর আগেও রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ডজনখানেক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শফিকুল ইসলাম নামে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে এরকম ডাকাতির কবলে পড়েন। পরে তিনি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এরপরই আন্তঃজেলা বাসে ডাকাতি করা দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার হয় বেশ কিছু ডাকাত।
ডাকাতির একাধিক মামলা নিয়ে তদন্তকারী পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতিতে জড়িয়ে অতীতে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কিছু দুর্ধর্ষ ডাকাত সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। ফলে ডাকাতির রাতভর মৃত্যুর বিভীষিকা ঘটনা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাদের ওপর নজরদারি বাড়ালে বাস নিয়ে এভাবে ডাকাতির ঘটনা কমে আসবে।’
রিসাত পরিবহনের ওই বাসের কর্মচারীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীনগর পৌঁছলে সব যাত্রী নেমে যান। এ সময় বাস কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয় যেহেতু বাস খালি তাই রাতে সেখানে থেকে পরদিন ভোরে ট্রিপ নিয়ে খুলনা যেতে। সে কারণে তারা নবীনগর বাস কাউন্টারে পেট্রলপাম্পের পাশের ফুটপাতে বাস রাখেন। খাওয়াদাওয়া শেষে রাত ১১টার দিকে বাসের ভেতরেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ওই সময়ে ডাকাতের কবলে পড়েন।
কর্মচারীরা জানান, ডাকাত দল বাসে উঠে চালক মো. নাসির উদ্দিনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একে একে সুপারভাইজার রাসেল ও চালকের সহকারীকেও মারধর করে। তাদের অর্ধনগ্ন করে গামছা ও লুঙ্গি দিয়ে চোখ, মুখ, হাত, পা বেঁধে বাসের পেছনের সিটে ফেলে রাখে। নড়াচড়া করলেই লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ডাকাতরা জানতে চায় গাড়ির জিপিআরএস (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস) চালু আছে কি না। চালক জানান জিপিআরএস নেই। এরপরই চালকের ঘাড়ে পাইপ দিয়ে সজোরে আঘাত করে ডাকাতরা। তারপর গাড়ি চালিয়ে রাজধানীতে চলে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরার সময় কোনো যাত্রী সিগন্যাল দিলেই তাকে বাসে তুলেই মুখ বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে বাসের পেছনে নিয়ে রাখতে থাকে। রাতভর এমন সাত থেকে আটজনকে বাসে তুলে ডাকাতি করেছে চক্রটি। বাসে ওঠার পর ফাঁকা বাস দেখে অনেকে নামার চেষ্টা করলে তাদের বেশি মারধর করেছে। ভোরে চন্দ্রায় ফেলে যাওয়ার পর তাদের ডাকাডাকিতে পথচারীরা এসে উদ্ধার করে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
চালক নাসির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডাকাতরা সারা রাত টানা বাস চালিয়েছে। কোথাও বিরতি দেয়নি। যাত্রীদের যে যেখানে যেতে চেয়েছে তাকে সেখানকার কথা বলেই তুলে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বেঁধে রেখে তারা বাসের মধ্যেই গাঁজা খেতে থাকে। খুবই হিংস্র আচরণ করতে থাকে। সবকিছু দিয়ে দেওয়ার পরও মারধর করেছে। তারা বারবার বলছিল আমাদের মেরে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দেবে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে যখন পাইপ দিয়ে খোঁচা দিতে থাকে তখন মনে হচ্ছিল ধারালো চাকু দিয়ে খোঁচাচ্ছে। আঘাতের কারণে আমার শরীর থেকে রক্ত বের হতে থাকে। মনে হচ্ছিল এখনই মারা যাব হয়তো। আমার ছোট্ট দুটি বাচ্চার কথা বারবার মনে পড়ছিল।’ ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ থানায় যেতে রাজি হয়নি বলে জানান নাসির।
উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই কাজটুকু করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই পরিদর্শক আছেন ৬০০।
শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শকরাই একমাত্র তদারককারী নন। তাদের সঙ্গে আছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের পরিদর্শক। যাদের প্রত্যেকের কাজ বিভিন্ন অবস্থান থেকে কারখানা পরিদর্শন করা। নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কোনো না কোনো অধিদপ্তরের পরিদর্শকের পা কারখানায় পড়বেই।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? আগুন লাগলে বা অন্য কোনো সংকট এলেই বলা হয় জনবল ঘাটতির জন্য তারা কিছু করতে পারছেন না। আসলেই জনবল ঘাটতি, নাকি দায়িত্ব এড়ানো?
সরকারের কোনো দপ্তর সমন্বিত পরিকল্পনাই করেনি। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ফলাও করে লোক না থাকার কথা বলে। তারপর সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়াতে চিঠিপত্র চালাচালি করে। একপর্যায়ে তারা জনবল বাড়িয়েও নেয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপে করের বোঝা। অথচ সেবা যেখানে ছিল সেখানেই থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আসলে জনবলের ঘাটতি নেই, সংকট পরিকল্পনায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনবল নিয়ে বসে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না। জনবল পূর্ণ মাত্রায় কখনোই পাওয়া যাবে না। সব সময় ঘাটতি থাকবে। দেশে পুলিশ প্রায় দুই লাখ। এখন ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দিতে হয় এই কম পুলিশ দিয়েই। আইনগতভাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই কারখানা পরিদর্শন করা মূলকাজ। তারা কারখানার পাশাপাশি শ্রমিকের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন দেয়। শুধু তাদের ওপর নির্ভর না করে যারা বর্তমানে কারখানা পরিদর্শন করে, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স করা যেতে পারে। এতে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারখানা তদারকির বাইরে থকবে না। সব কারখানা সমান গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি শ্রমিক কাজ করে বা রপ্তানিমুখী কারখানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইজি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিল্প খাতের অগ্নিকা- ও অন্যান্য সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখনই যে সচিব এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন তিনিই জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। আগের সচিব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৯৯৩টি পদের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৭৯১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেন সরকারকে। এসব পদের জন্য ১১টি জিপ, ৫টি সিডান কার, ৩৭টি মাইক্রোবাস ও ১ হাজার ৫৩টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাবও একই সঙ্গে জুড়ে দেন। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পালনের চিত্র তুলে ধরে আগের সচিবের পথ ধরে বর্তমান সচিবও এসব পদ আরও বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেন।
অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসও তাদের জনবল ঘাটতির কথা ডাক ছেড়েই বলে। গাজীপুরের টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণের পর পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হলেও তা ঝুলে আছে। সারা দেশের কারখানাগুলোর বয়লার সেটআপ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নবায়নযোগ্যতা তাদেরই দেখভাল করার কথা। কিন্তু সরকারি অফিসের কাজ হয়তো সরকারি গতিতেই চলে। মাঝখান থেকে অকালে ঝরে যায় নিরীহ কিছু প্রাণ। নামকাওয়াস্তে গঠিত তদন্ত কমিটি মৃতদের পরিবারকে নামমাত্র অনুদান দিয়ে দায় সারে।
কলকারখানা অধিদপ্তরের ৬০০ পরিদর্শকই একমাত্র তদারককারী দল নয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পরিদর্শক ৩১ জন। বয়লার পরিদপ্তরে পরিদর্শক কাজ করেন ৬২ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরে ৪৫০ জন পরিদর্শনের কাজ করেন। পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৭৬ জন। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা এবং তিতাসসহ গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থায় কয়েকশ পরিদর্শক তো রয়েছেনই।
এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকের কাজ কারখানা পরিদর্শন করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকেরই আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা কারখানা বা অর্থনৈতিক ইউনিটের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি শিল্পকারখানার মালিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, নিয়ম করে তারা সবাই কারখানায় আসেন। তারা আসলেও কোনো কাজ করেন না। তারা ম্যানেজারের রুমে গিয়ে ম্যানেজ হয়ে যান। প্রত্যেক ইউনিটের পরিদর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার চুক্তিতে না এলে তাদের সঙ্গে পারা যায় না। তারা বিভিন্ন আইনকানুন বিধিবিধানের প্যাঁচে ফেলে দেন। এ কারণেই তাদের সঙ্গে মাসোহারার চুক্তিতে যাই। বিষয়টি কোনো গোপন নয়। এদেশের যেকোনো শিল্পপতি তা জানেন। শিল্পপতি কাম সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও এর ভুক্তভোগী। কারখানাসংক্রান্ত পরিদর্শকরা নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কারখানায় সমস্যা থাকলে কোনো না কোনো দপ্তরের পরিদর্শকের নজরে তা পড়বেই।
সিটি করপোরেশনের বাইরে কারখানার স্থাপনা করতে স্থানীয় সরকারের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা কেউ অনুসরণ করে না। কারণ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে গেলেই অনেক টাকা ডিমান্ড করে। অথচ না গেলে কেউ খবরও নেয় না। এ কারণে সিটি করপোরেশনের বাইরের বেশিরভাগ কারখানার স্থাপনাগত অনুমোদন নেই। অথচ বহুতল কারখানার নকশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নকশার সঙ্গে ফায়ার লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
২০১৫ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে ৮৩ লাখ ইকোনমিক ইউনিট রয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় ২৩টি উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব বলে শ্রম মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইকোনমিক ইউনিটের আওতায় দোকানপাটসহ সবকিছু রয়েছে। গুরুত্বের তালিকায় একটা মুদি দোকান আসতে পারে না। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। এরমধ্যে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই ৫ হাজার কারখানাকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। এসব কারখানায় প্রতিমাসেই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের পরিদর্শন করতে হয়। এসব দপ্তরের মোট পরিদর্শকের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫১৯ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব ভাগ করে দিলে বছরে মাত্র তিনটি কারখানা ভালোভাবে পরিদর্শনের দায়িত্ব পড়ে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী টিমভিত্তিক ও এককভাবে পরিদর্শন করা হয়। মাসে এককভাবে ১৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠান এবং যৌথভাবে ১৫টি কারখানা পরিদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদেরও মাসভিত্তিক পরিদর্শন করতে হয়।
যখনই অগ্নিকা- হয় তখনই জেগে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। তবে নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ‘কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিল্পকারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পরিদর্শনের আলোকে শিল্পকারখানাগুলোর অবকাঠামো, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের জন্য অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিডাকে। সাচিবিক দায়িত্ব পেয়ে বিডা ১০৮টি উপকমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ৫ হাজার ২০৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সালমান এফ রহমান জানান, আরও ১০ হাজার শিল্প-কলকারখানা পরিদর্শন করা হবে। এ ছাড়াও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জনবল ও কার্য অধিক্ষেত্র বৃদ্ধির মাধ্যমে এটিকে একটি কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হবে। যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে তাদের আগামী তিন মাস সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নয়ন না ঘটলে সেসব কোম্পানিকে সিলগালা করা হবে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করায় সেসব কোম্পানিকে আগামী ৬ মাস সুযোগ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশের উন্নয়ন না ঘটলে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিদর্শনকৃত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের বিদ্যমান ত্রুটিসমূহ অবগত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব অ্যাসোসিয়েশনকে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিডার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটিগুলো প্রায় সব কারখানা পরিদর্শন করছে। এখানেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শন করলে ভালো ফল পাওয়া যেত। কারণ সব কারখানা পরিদর্শন করতে অনেক সময় লাগবে। এখনই সংস্কার করতে না পারলে চলমান পরিদর্শনের সময়ের মধ্যে নতুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যে কারখানায় ৫ জন শ্রমিক কাজ করে সেটা ৫ হাজার শ্রমিকের কারখানার মতো গুরুত্ব পেতে পারে না। বেশি শ্রমিকের কারখানায় আগুন লাগলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর একটি বিষয় হচ্ছে বিডার পরিদর্শনে নিয়মিত পরিদর্শকদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারণ কোন কারখানায় কী সমস্যা তা সবচেয়ে বেশি জানে নিয়মিত পরিদর্শকরা।
কাগজে-কলমে নির্মাণকাজের তথ্য আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। অস্তিত্বহীন এ কাজের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল লিমিটেডের ছয়টি ট্যাংক নির্মাণে এমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তারা। পরে আর সাড়া দেয়নি। উপরন্তু এ প্রতিবেদক পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করা ও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ফোনে বলা কথা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার জেনে যান। ঠিকাদারকে প্রতিবেদকের ফোন নম্বরও দেওয়া হয়। পরে ঠিকাদার ফোন করে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ করেন।
সূত্রমতে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে পাঁচটি পেট্রোলিয়াম স্টোরেজ ট্যাংক ও একটি ফায়ার ওয়াটার ট্যাংক নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করে পদ্মা অয়েল। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রামের মেসার্স এসএ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আরিফ হোসেনকে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শর্তানুযায়ী ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ হয়নি। অথচ চলমান এ কাজের বিল বাবদ ঠিকাদারকে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে পদ্মা অয়েল।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর বিল পরিশোধের অনুমোদনের চিঠিতে সই করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চিঠিতে বলা হয়, ঠিকাদার ২৪ শতাংশ কাজ সফলভাবে শেষ করেছেন। অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রথম বিল দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কাজের পরের অংশ সম্পন্ন করার জন্য তাকে বিল দেওয়া যেতে পারে।
বিল দেওয়ার পর ট্যাংক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ না হওয়ার পরও পদ্মা অয়েলের কাছে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি মানির ১৮ লাখ ২৯ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানকারী প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্যই ঠিকাদারের কাছ থেকে সিকিউরিটি মানি জমা রাখা হয় কাজ শেষ হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত। এর উদ্দেশ্য এ সময়ের মধ্যে কাজে ত্রুটি ধরা পড়লে তার সমাধানের ব্যবস্থা করা।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা অয়েলের মহাব্যবস্থাপকের (প্রকল্প) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ঠিকাদার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন দাবি করেন, ২০২১ সালের আগস্টে সফলভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। তিনি বিলও পেয়েছেন এবং কাজ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি।
গত সোমবার দেশ রূপান্তরের স্থানীয় প্রতিনিধি মোস্তাফিজ আমিনকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর পর তিনি জানান, সরেজমিনে ট্যাংক নির্মাণকাজের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ছয়টি ট্যাংক নির্মাণের কথা ছিল; কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বালি ও ইটের খোয়া ছাড়া কিছু দেখা যায়নি।
ঠিকাদার আরিফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই জায়গায় আগে ১০ ফুট গর্ত ছিল। বালি ভরাট করে কাজ করতে হয়েছে। দেড়-দুই বছর আগে কাজ শেষ করেছি। এরপর কাজ না হওয়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে। মাটির নিচে কাজ হওয়ায় বাইরে থেকে তো বোঝা যাবে না।’
কাজের প্রমাণস্বরূপ ২০২১ সালের নির্মাণকাজের কিছু ছবি পাঠান তিনি। সেসবে দেখা যায়, ট্যাংকের বেজমেন্ট বা ভিত তৈরির জন্য ইটের খোয়া ও বালি বিছানো রয়েছে। তবে ভিতের জন্য কোনো ঢালাই বা সিমেন্টের প্লাস্টার করা হয়নি। ছবি ওই স্থানের কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অসম্পূর্ণ ভিতের ছবি দেখিয়ে কয়েকজন পেশাদার প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তারা বলেন, পুরো কাজের নকশা এবং বাস্তবে না দেখে প্রকৃত ব্যয় হিসাব করা কঠিন। তারপরও ছবি দেখে ও আয়তন অনুমান করে এটুকু বলা যায়, ছয়টি অসম্পূর্ণ বেজমেন্ট নির্মাণে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়।
একজন ঠিকাদার তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি একটি কাজের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় তিন বছর পর তাকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই দরপত্র বাতিল করে। এতে তার কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার মতে, সাধারণত কাজ শুরুর আগে দরবৃদ্ধির আবেদন করে থাকেন ঠিকাদাররা। কাজ চলাকালেও এই দাবি করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ দরবৃদ্ধি না করলে কাজ বন্ধও করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাধারণত ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি কখনো তাদের কালো তালিকাভুক্তও করা হয়।
আরিফ হোসেনের দাবি, কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পর জায়গা বুঝে পান তিনি। এরপর করোনার কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরবৃদ্ধির অনুরোধ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায় নতুন করে দরবৃদ্ধির সুযোগ নেই। যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে ততটুকুর বিল নিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে তিনি রাজি হন এবং পদ্মা অয়েলের কর্মকর্তারা অগ্রগতি পরিদর্শন করে তাকে বিল দিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থান নিয়ে জটিলতার কারণে যে পরিমাণ বিল তিনি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে কাজ সম্পূর্ণ করতে চাইলেও তাকে করতে দেওয়া হয়নি। নিজের পক্ষে নানান যুক্তি দেখানোর একপর্যায়ে প্রতিবেদনটি না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত করে কাজের কোনো ত্রুটি ধরতে পারবে না। কিন্তু তাকে হয়রান হতে হবে।
সে সময় তিনি উৎকোচ দিতে এ প্রতিবেদকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চান। আরিফ হোসেন বলেন, ‘আপনি আমাকে সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে আমিও আপনাকে সহযোগিতা করব।’
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) আমিনুল হক টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র-নির্ধারিত দরে কাজ করতে আপত্তি জানান ঠিকাদার। দরবৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় যতটুকু কাজ হয়েছে সে অনুযায়ী তাকে বিল দিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই কাজ শেষ করার জন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
কাজের অগ্রগতি পরিমাপ করতে ওই সময় একটি কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আমিনুল হক বলেন, ‘কমিটি তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি বলে প্রতিবেদন দেয়নি।’
গত ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পদ্মা অয়েলের কার্যালয়ে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকের বেজমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ আছে।’ তার কাছে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি পরদিন বুধবার জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এবং আবদুস সোবহানকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে জানান।
পরে এ প্রতিবেদক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সাড়া পাননি। প্রকল্প মহাব্যবস্থাপক আমিনুল হককে পরে কয়েক দফায় ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত মো. সাহাবুদ্দিন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি হামিদের সহধর্মিণী রাশিদা খানম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাসসকে এ তথ্য জানান।
এর আগে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, তার সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ ও তার সহধর্মিণী। এ সময় আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানান এবং তারা পরস্পর কুশল বিনিময় করেন ও স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রীতি অনুযায়ী বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গত রবিবার দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিনকে (৭৪) মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সোমবার তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন সচিবালয়। ওইদিনই ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাহাবুদ্দিন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ কৌশলগত উপদেষ্টা ও দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর (আন্ডার সেক্রেটারি) ডেরেক শোলে দুদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এদিকে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল রাতে ঢাকা এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শোলের এই সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা। দুই সরকারের মধ্যে যে সম্পর্কটা আছে, সেটাকে আরও শক্তিশালী করা। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তার এই সফর দুদেশের সম্পর্ককে ‘আরও শক্তিশালী’ করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আজ বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডেরেক শোলে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করবেন তিনি। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো থাকছে। পাশাপাশি র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই জোর দেওয়া হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেরেক শোলে। ডেরেক শোলের সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমন্বয় ও প্রতিক্রিয়া, আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা জোরদার নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
ডেরেক শোলের সফরের আগেই ইউএসএআইডি’র একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশে এসেছে। দলটি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে ঢাকায় ফিরে তারা ডেরেক শোলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব : মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক এবার ঢাকায় হচ্ছে। আজ বুধবার বিনয় মোহন কোয়াত্রা ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া পানি, বাণিজ্য, সীমান্ত পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা, চলমান সহযোগিতার বিষয় ও লাইন অব ক্রেডিটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে।
বৈঠকগুলোতে বিদ্যুৎ জটিলতার আলোচনা হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। কারণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টির দেখভাল না করলেও আলোচনা যে হবে না বা হচ্ছে না বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। অবশ্য পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজন আছে। তারাই মূলত এই প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো নিয়ে কাউন্টার পার্টের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। এটি সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি, জানানো হলে আমরা প্রসঙ্গটি তুলব।
প্রায় এগারো মাস পর পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। আগের কমিটিতেও তিনি সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি ঘোষিত নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছেলেসহ তার আরও ১০ আত্মীয়স্বজন স্থান পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ৭৫ সদস্যের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের পরিবারের কয়েক সদস্যও রয়েছেন। গত সোমবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ফেইসবুক পেইজে এই কমিটির নামের তালিকা প্রকাশ করেন।
এতে দেখা গেছে, কমিটিতে জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি আমিনুর রহমান সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি রেলপথমন্ত্রীর চাচাতো ভাই। আরেক চাচাতো ভাই আব্দুল জব্বার এবং ছেলে কৌশিক নাহিয়ান নাবিদ সদস্য হয়েছেন। নাবিদ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও একটি পদে আছেন। মন্ত্রীর ভাগ্নে এ এইচ এম সাইদুর রহমান হাসনাত হয়েছেন সদস্য। মন্ত্রীর ছেলের শ্বশুর কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন সদস্য এবং সম্পর্কে ভাগ্নি হোসনেয়ারা বেগম হয়েছেন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক।
এ ছাড়া মন্ত্রীর এপিএস রাশেদ প্রধান সদস্য, চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং ভাতিজা আব্দুস সোবহান লিটন যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আরেক আত্মীয় হাবিবুর রহমান পাপ্পু সদস্য হিসেবে আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনরা স্থান পাওয়ায় নেতাকর্মীদের অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তারা জানান, ২০২২ সালের ১৮ মার্চ পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে নুরুল ইসলাম সুজন সভাপতি এবং আনোয়ার সাদাত সম্রাট সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তখন সহসভাপতি হিসেবে মজাহারুল হক প্রধান ও নাঈমুজ্জামান মুক্তার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ১০ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো।
এ প্রসঙ্গে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আবু বকর ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মনগড়া কমিটি। যারা নিবেদিত এবং ত্যাগ শিকার করে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন তারা পদে নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আত্মীয়করণ করেছেন।’
পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘আমি এখনো কমিটি দেখিনি। আমাকে নিয়েই কমিটি করার কথা ছিল। যদি ত্যাগী নেতারা বাদ যায়, তাহলে খুব দুঃখজনক হবে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।