
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ কৌশলগত উপদেষ্টা ও দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর (আন্ডার সেক্রেটারি) ডেরেক শোলে দুদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এদিকে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল রাতে ঢাকা এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শোলের এই সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা। দুই সরকারের মধ্যে যে সম্পর্কটা আছে, সেটাকে আরও শক্তিশালী করা। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তার এই সফর দুদেশের সম্পর্ককে ‘আরও শক্তিশালী’ করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আজ বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডেরেক শোলে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করবেন তিনি। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো থাকছে। পাশাপাশি র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই জোর দেওয়া হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেরেক শোলে। ডেরেক শোলের সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমন্বয় ও প্রতিক্রিয়া, আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা জোরদার নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
ডেরেক শোলের সফরের আগেই ইউএসএআইডি’র একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশে এসেছে। দলটি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে ঢাকায় ফিরে তারা ডেরেক শোলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব : মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক এবার ঢাকায় হচ্ছে। আজ বুধবার বিনয় মোহন কোয়াত্রা ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া পানি, বাণিজ্য, সীমান্ত পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা, চলমান সহযোগিতার বিষয় ও লাইন অব ক্রেডিটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে।
বৈঠকগুলোতে বিদ্যুৎ জটিলতার আলোচনা হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। কারণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টির দেখভাল না করলেও আলোচনা যে হবে না বা হচ্ছে না বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। অবশ্য পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজন আছে। তারাই মূলত এই প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো নিয়ে কাউন্টার পার্টের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। এটি সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি, জানানো হলে আমরা প্রসঙ্গটি তুলব।
উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই কাজটুকু করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই পরিদর্শক আছেন ৬০০।
শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শকরাই একমাত্র তদারককারী নন। তাদের সঙ্গে আছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের পরিদর্শক। যাদের প্রত্যেকের কাজ বিভিন্ন অবস্থান থেকে কারখানা পরিদর্শন করা। নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কোনো না কোনো অধিদপ্তরের পরিদর্শকের পা কারখানায় পড়বেই।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? আগুন লাগলে বা অন্য কোনো সংকট এলেই বলা হয় জনবল ঘাটতির জন্য তারা কিছু করতে পারছেন না। আসলেই জনবল ঘাটতি, নাকি দায়িত্ব এড়ানো?
সরকারের কোনো দপ্তর সমন্বিত পরিকল্পনাই করেনি। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ফলাও করে লোক না থাকার কথা বলে। তারপর সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়াতে চিঠিপত্র চালাচালি করে। একপর্যায়ে তারা জনবল বাড়িয়েও নেয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপে করের বোঝা। অথচ সেবা যেখানে ছিল সেখানেই থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আসলে জনবলের ঘাটতি নেই, সংকট পরিকল্পনায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনবল নিয়ে বসে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না। জনবল পূর্ণ মাত্রায় কখনোই পাওয়া যাবে না। সব সময় ঘাটতি থাকবে। দেশে পুলিশ প্রায় দুই লাখ। এখন ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দিতে হয় এই কম পুলিশ দিয়েই। আইনগতভাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই কারখানা পরিদর্শন করা মূলকাজ। তারা কারখানার পাশাপাশি শ্রমিকের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন দেয়। শুধু তাদের ওপর নির্ভর না করে যারা বর্তমানে কারখানা পরিদর্শন করে, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স করা যেতে পারে। এতে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারখানা তদারকির বাইরে থকবে না। সব কারখানা সমান গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি শ্রমিক কাজ করে বা রপ্তানিমুখী কারখানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইজি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিল্প খাতের অগ্নিকা- ও অন্যান্য সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখনই যে সচিব এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন তিনিই জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। আগের সচিব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৯৯৩টি পদের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৭৯১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেন সরকারকে। এসব পদের জন্য ১১টি জিপ, ৫টি সিডান কার, ৩৭টি মাইক্রোবাস ও ১ হাজার ৫৩টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাবও একই সঙ্গে জুড়ে দেন। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পালনের চিত্র তুলে ধরে আগের সচিবের পথ ধরে বর্তমান সচিবও এসব পদ আরও বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেন।
অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসও তাদের জনবল ঘাটতির কথা ডাক ছেড়েই বলে। গাজীপুরের টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণের পর পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হলেও তা ঝুলে আছে। সারা দেশের কারখানাগুলোর বয়লার সেটআপ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নবায়নযোগ্যতা তাদেরই দেখভাল করার কথা। কিন্তু সরকারি অফিসের কাজ হয়তো সরকারি গতিতেই চলে। মাঝখান থেকে অকালে ঝরে যায় নিরীহ কিছু প্রাণ। নামকাওয়াস্তে গঠিত তদন্ত কমিটি মৃতদের পরিবারকে নামমাত্র অনুদান দিয়ে দায় সারে।
কলকারখানা অধিদপ্তরের ৬০০ পরিদর্শকই একমাত্র তদারককারী দল নয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পরিদর্শক ৩১ জন। বয়লার পরিদপ্তরে পরিদর্শক কাজ করেন ৬২ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরে ৪৫০ জন পরিদর্শনের কাজ করেন। পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৭৬ জন। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা এবং তিতাসসহ গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থায় কয়েকশ পরিদর্শক তো রয়েছেনই।
এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকের কাজ কারখানা পরিদর্শন করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকেরই আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা কারখানা বা অর্থনৈতিক ইউনিটের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি শিল্পকারখানার মালিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, নিয়ম করে তারা সবাই কারখানায় আসেন। তারা আসলেও কোনো কাজ করেন না। তারা ম্যানেজারের রুমে গিয়ে ম্যানেজ হয়ে যান। প্রত্যেক ইউনিটের পরিদর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার চুক্তিতে না এলে তাদের সঙ্গে পারা যায় না। তারা বিভিন্ন আইনকানুন বিধিবিধানের প্যাঁচে ফেলে দেন। এ কারণেই তাদের সঙ্গে মাসোহারার চুক্তিতে যাই। বিষয়টি কোনো গোপন নয়। এদেশের যেকোনো শিল্পপতি তা জানেন। শিল্পপতি কাম সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও এর ভুক্তভোগী। কারখানাসংক্রান্ত পরিদর্শকরা নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কারখানায় সমস্যা থাকলে কোনো না কোনো দপ্তরের পরিদর্শকের নজরে তা পড়বেই।
সিটি করপোরেশনের বাইরে কারখানার স্থাপনা করতে স্থানীয় সরকারের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা কেউ অনুসরণ করে না। কারণ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে গেলেই অনেক টাকা ডিমান্ড করে। অথচ না গেলে কেউ খবরও নেয় না। এ কারণে সিটি করপোরেশনের বাইরের বেশিরভাগ কারখানার স্থাপনাগত অনুমোদন নেই। অথচ বহুতল কারখানার নকশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নকশার সঙ্গে ফায়ার লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
২০১৫ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে ৮৩ লাখ ইকোনমিক ইউনিট রয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় ২৩টি উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব বলে শ্রম মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইকোনমিক ইউনিটের আওতায় দোকানপাটসহ সবকিছু রয়েছে। গুরুত্বের তালিকায় একটা মুদি দোকান আসতে পারে না। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। এরমধ্যে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই ৫ হাজার কারখানাকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। এসব কারখানায় প্রতিমাসেই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের পরিদর্শন করতে হয়। এসব দপ্তরের মোট পরিদর্শকের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫১৯ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব ভাগ করে দিলে বছরে মাত্র তিনটি কারখানা ভালোভাবে পরিদর্শনের দায়িত্ব পড়ে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী টিমভিত্তিক ও এককভাবে পরিদর্শন করা হয়। মাসে এককভাবে ১৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠান এবং যৌথভাবে ১৫টি কারখানা পরিদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদেরও মাসভিত্তিক পরিদর্শন করতে হয়।
যখনই অগ্নিকা- হয় তখনই জেগে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। তবে নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ‘কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিল্পকারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পরিদর্শনের আলোকে শিল্পকারখানাগুলোর অবকাঠামো, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের জন্য অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিডাকে। সাচিবিক দায়িত্ব পেয়ে বিডা ১০৮টি উপকমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ৫ হাজার ২০৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সালমান এফ রহমান জানান, আরও ১০ হাজার শিল্প-কলকারখানা পরিদর্শন করা হবে। এ ছাড়াও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জনবল ও কার্য অধিক্ষেত্র বৃদ্ধির মাধ্যমে এটিকে একটি কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হবে। যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে তাদের আগামী তিন মাস সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নয়ন না ঘটলে সেসব কোম্পানিকে সিলগালা করা হবে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করায় সেসব কোম্পানিকে আগামী ৬ মাস সুযোগ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশের উন্নয়ন না ঘটলে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিদর্শনকৃত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের বিদ্যমান ত্রুটিসমূহ অবগত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব অ্যাসোসিয়েশনকে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিডার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটিগুলো প্রায় সব কারখানা পরিদর্শন করছে। এখানেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শন করলে ভালো ফল পাওয়া যেত। কারণ সব কারখানা পরিদর্শন করতে অনেক সময় লাগবে। এখনই সংস্কার করতে না পারলে চলমান পরিদর্শনের সময়ের মধ্যে নতুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যে কারখানায় ৫ জন শ্রমিক কাজ করে সেটা ৫ হাজার শ্রমিকের কারখানার মতো গুরুত্ব পেতে পারে না। বেশি শ্রমিকের কারখানায় আগুন লাগলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর একটি বিষয় হচ্ছে বিডার পরিদর্শনে নিয়মিত পরিদর্শকদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারণ কোন কারখানায় কী সমস্যা তা সবচেয়ে বেশি জানে নিয়মিত পরিদর্শকরা।
কাগজে-কলমে নির্মাণকাজের তথ্য আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। অস্তিত্বহীন এ কাজের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল লিমিটেডের ছয়টি ট্যাংক নির্মাণে এমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তারা। পরে আর সাড়া দেয়নি। উপরন্তু এ প্রতিবেদক পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করা ও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ফোনে বলা কথা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার জেনে যান। ঠিকাদারকে প্রতিবেদকের ফোন নম্বরও দেওয়া হয়। পরে ঠিকাদার ফোন করে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ করেন।
সূত্রমতে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে পাঁচটি পেট্রোলিয়াম স্টোরেজ ট্যাংক ও একটি ফায়ার ওয়াটার ট্যাংক নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করে পদ্মা অয়েল। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রামের মেসার্স এসএ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আরিফ হোসেনকে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শর্তানুযায়ী ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ হয়নি। অথচ চলমান এ কাজের বিল বাবদ ঠিকাদারকে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে পদ্মা অয়েল।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর বিল পরিশোধের অনুমোদনের চিঠিতে সই করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চিঠিতে বলা হয়, ঠিকাদার ২৪ শতাংশ কাজ সফলভাবে শেষ করেছেন। অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রথম বিল দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কাজের পরের অংশ সম্পন্ন করার জন্য তাকে বিল দেওয়া যেতে পারে।
বিল দেওয়ার পর ট্যাংক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ না হওয়ার পরও পদ্মা অয়েলের কাছে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি মানির ১৮ লাখ ২৯ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানকারী প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্যই ঠিকাদারের কাছ থেকে সিকিউরিটি মানি জমা রাখা হয় কাজ শেষ হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত। এর উদ্দেশ্য এ সময়ের মধ্যে কাজে ত্রুটি ধরা পড়লে তার সমাধানের ব্যবস্থা করা।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা অয়েলের মহাব্যবস্থাপকের (প্রকল্প) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ঠিকাদার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন দাবি করেন, ২০২১ সালের আগস্টে সফলভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। তিনি বিলও পেয়েছেন এবং কাজ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি।
গত সোমবার দেশ রূপান্তরের স্থানীয় প্রতিনিধি মোস্তাফিজ আমিনকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর পর তিনি জানান, সরেজমিনে ট্যাংক নির্মাণকাজের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ছয়টি ট্যাংক নির্মাণের কথা ছিল; কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বালি ও ইটের খোয়া ছাড়া কিছু দেখা যায়নি।
ঠিকাদার আরিফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই জায়গায় আগে ১০ ফুট গর্ত ছিল। বালি ভরাট করে কাজ করতে হয়েছে। দেড়-দুই বছর আগে কাজ শেষ করেছি। এরপর কাজ না হওয়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে। মাটির নিচে কাজ হওয়ায় বাইরে থেকে তো বোঝা যাবে না।’
কাজের প্রমাণস্বরূপ ২০২১ সালের নির্মাণকাজের কিছু ছবি পাঠান তিনি। সেসবে দেখা যায়, ট্যাংকের বেজমেন্ট বা ভিত তৈরির জন্য ইটের খোয়া ও বালি বিছানো রয়েছে। তবে ভিতের জন্য কোনো ঢালাই বা সিমেন্টের প্লাস্টার করা হয়নি। ছবি ওই স্থানের কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অসম্পূর্ণ ভিতের ছবি দেখিয়ে কয়েকজন পেশাদার প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তারা বলেন, পুরো কাজের নকশা এবং বাস্তবে না দেখে প্রকৃত ব্যয় হিসাব করা কঠিন। তারপরও ছবি দেখে ও আয়তন অনুমান করে এটুকু বলা যায়, ছয়টি অসম্পূর্ণ বেজমেন্ট নির্মাণে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়।
একজন ঠিকাদার তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি একটি কাজের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় তিন বছর পর তাকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই দরপত্র বাতিল করে। এতে তার কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার মতে, সাধারণত কাজ শুরুর আগে দরবৃদ্ধির আবেদন করে থাকেন ঠিকাদাররা। কাজ চলাকালেও এই দাবি করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ দরবৃদ্ধি না করলে কাজ বন্ধও করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাধারণত ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি কখনো তাদের কালো তালিকাভুক্তও করা হয়।
আরিফ হোসেনের দাবি, কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পর জায়গা বুঝে পান তিনি। এরপর করোনার কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরবৃদ্ধির অনুরোধ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায় নতুন করে দরবৃদ্ধির সুযোগ নেই। যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে ততটুকুর বিল নিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে তিনি রাজি হন এবং পদ্মা অয়েলের কর্মকর্তারা অগ্রগতি পরিদর্শন করে তাকে বিল দিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থান নিয়ে জটিলতার কারণে যে পরিমাণ বিল তিনি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে কাজ সম্পূর্ণ করতে চাইলেও তাকে করতে দেওয়া হয়নি। নিজের পক্ষে নানান যুক্তি দেখানোর একপর্যায়ে প্রতিবেদনটি না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত করে কাজের কোনো ত্রুটি ধরতে পারবে না। কিন্তু তাকে হয়রান হতে হবে।
সে সময় তিনি উৎকোচ দিতে এ প্রতিবেদকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চান। আরিফ হোসেন বলেন, ‘আপনি আমাকে সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে আমিও আপনাকে সহযোগিতা করব।’
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) আমিনুল হক টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র-নির্ধারিত দরে কাজ করতে আপত্তি জানান ঠিকাদার। দরবৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় যতটুকু কাজ হয়েছে সে অনুযায়ী তাকে বিল দিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই কাজ শেষ করার জন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
কাজের অগ্রগতি পরিমাপ করতে ওই সময় একটি কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আমিনুল হক বলেন, ‘কমিটি তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি বলে প্রতিবেদন দেয়নি।’
গত ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পদ্মা অয়েলের কার্যালয়ে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকের বেজমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ আছে।’ তার কাছে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি পরদিন বুধবার জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এবং আবদুস সোবহানকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে জানান।
পরে এ প্রতিবেদক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সাড়া পাননি। প্রকল্প মহাব্যবস্থাপক আমিনুল হককে পরে কয়েক দফায় ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত মো. সাহাবুদ্দিন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি হামিদের সহধর্মিণী রাশিদা খানম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাসসকে এ তথ্য জানান।
এর আগে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, তার সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ ও তার সহধর্মিণী। এ সময় আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানান এবং তারা পরস্পর কুশল বিনিময় করেন ও স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রীতি অনুযায়ী বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গত রবিবার দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিনকে (৭৪) মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সোমবার তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন সচিবালয়। ওইদিনই ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাহাবুদ্দিন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার নবীনগরে নামিয়ে সড়কের পাশে বাস রেখে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন ওই বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ ১২-১৩ জনের একদল ডাকাত বাসে উঠে চিৎকার করতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনজনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম মারধর করে। এরপর চোখ-মুখ, হাত ও পা বেঁধে বাসের পেছনের আসনে ফেলে রাখে। তাদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এরপর ডাকাতরা বাস নিয়ে রাজধানীতে চলে আসে এবং রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে যাত্রী তোলে। যাত্রীরা বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে মারধর। তাদেরও মুখ, হাত ও পা বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে কাউকে সড়কে নামিয়ে দেয় আবার কাউকে বাসের পেছনে গাদাগাদি করে ফেলে রাখে। যাত্রীদের মধ্যে চিকিৎসক, ব্যাংকার ও সাধারণ কর্মজীবীও ছিলেন। তাদের হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় ডাকাতরা। কিছুক্ষণ পরপর লোহার পাইপ দিয়ে শরীরে আঘাত করে। অনেকের শরীর ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। পরে ভোরের দিকে চন্দ্রার একটি নির্জন স্থানে বাস রেখে সটকে পরে ডাকাত দলটি। বাসটির স্টাফ ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে দাবি করেন রিসাত পরিবহনের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডাকাত দলের কাউকেই গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি। শফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে এবং স্টাফদের মারধর করেছে। তবে আমাদের বাসমালিক কোনো ধরনের ঝামেলায় যেতে চান না। আমরা নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে একটি জিডি করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ বিন করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতির কোনো তথ্য আমার জানা নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে কেউ সাধারণ ডায়েরিও করেছে বলেও ডিউটি অফিসার আমাকে বলেননি।’ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীদের একজন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক শাওন চৌধুরী জয়। রবিবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশে চাঁনখারপুল এলাকা থেকে রিসাত পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন তিনি। এর পরই তার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। চোখ বেঁধে বাসের পেছনে নিয়ে বসিয়ে রাখে। শাওন চৌধুরী জানান, তার কাছে থাকা ১২ প্রোম্যাক্স আইফোন, ৭ আইফোন, নগদ সাড়ে চার হাজার টাকা, হাতঘড়ি ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে গেছে ডাকাত দল। তাকে মারধরও করেছে তারা।
এর আগেও রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ডজনখানেক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শফিকুল ইসলাম নামে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে এরকম ডাকাতির কবলে পড়েন। পরে তিনি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এরপরই আন্তঃজেলা বাসে ডাকাতি করা দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার হয় বেশ কিছু ডাকাত।
ডাকাতির একাধিক মামলা নিয়ে তদন্তকারী পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতিতে জড়িয়ে অতীতে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কিছু দুর্ধর্ষ ডাকাত সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। ফলে ডাকাতির রাতভর মৃত্যুর বিভীষিকা ঘটনা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাদের ওপর নজরদারি বাড়ালে বাস নিয়ে এভাবে ডাকাতির ঘটনা কমে আসবে।’
রিসাত পরিবহনের ওই বাসের কর্মচারীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীনগর পৌঁছলে সব যাত্রী নেমে যান। এ সময় বাস কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয় যেহেতু বাস খালি তাই রাতে সেখানে থেকে পরদিন ভোরে ট্রিপ নিয়ে খুলনা যেতে। সে কারণে তারা নবীনগর বাস কাউন্টারে পেট্রলপাম্পের পাশের ফুটপাতে বাস রাখেন। খাওয়াদাওয়া শেষে রাত ১১টার দিকে বাসের ভেতরেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ওই সময়ে ডাকাতের কবলে পড়েন।
কর্মচারীরা জানান, ডাকাত দল বাসে উঠে চালক মো. নাসির উদ্দিনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একে একে সুপারভাইজার রাসেল ও চালকের সহকারীকেও মারধর করে। তাদের অর্ধনগ্ন করে গামছা ও লুঙ্গি দিয়ে চোখ, মুখ, হাত, পা বেঁধে বাসের পেছনের সিটে ফেলে রাখে। নড়াচড়া করলেই লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ডাকাতরা জানতে চায় গাড়ির জিপিআরএস (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস) চালু আছে কি না। চালক জানান জিপিআরএস নেই। এরপরই চালকের ঘাড়ে পাইপ দিয়ে সজোরে আঘাত করে ডাকাতরা। তারপর গাড়ি চালিয়ে রাজধানীতে চলে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরার সময় কোনো যাত্রী সিগন্যাল দিলেই তাকে বাসে তুলেই মুখ বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে বাসের পেছনে নিয়ে রাখতে থাকে। রাতভর এমন সাত থেকে আটজনকে বাসে তুলে ডাকাতি করেছে চক্রটি। বাসে ওঠার পর ফাঁকা বাস দেখে অনেকে নামার চেষ্টা করলে তাদের বেশি মারধর করেছে। ভোরে চন্দ্রায় ফেলে যাওয়ার পর তাদের ডাকাডাকিতে পথচারীরা এসে উদ্ধার করে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
চালক নাসির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডাকাতরা সারা রাত টানা বাস চালিয়েছে। কোথাও বিরতি দেয়নি। যাত্রীদের যে যেখানে যেতে চেয়েছে তাকে সেখানকার কথা বলেই তুলে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বেঁধে রেখে তারা বাসের মধ্যেই গাঁজা খেতে থাকে। খুবই হিংস্র আচরণ করতে থাকে। সবকিছু দিয়ে দেওয়ার পরও মারধর করেছে। তারা বারবার বলছিল আমাদের মেরে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দেবে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে যখন পাইপ দিয়ে খোঁচা দিতে থাকে তখন মনে হচ্ছিল ধারালো চাকু দিয়ে খোঁচাচ্ছে। আঘাতের কারণে আমার শরীর থেকে রক্ত বের হতে থাকে। মনে হচ্ছিল এখনই মারা যাব হয়তো। আমার ছোট্ট দুটি বাচ্চার কথা বারবার মনে পড়ছিল।’ ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ থানায় যেতে রাজি হয়নি বলে জানান নাসির।
প্রায় এগারো মাস পর পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। আগের কমিটিতেও তিনি সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি ঘোষিত নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছেলেসহ তার আরও ১০ আত্মীয়স্বজন স্থান পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ৭৫ সদস্যের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের পরিবারের কয়েক সদস্যও রয়েছেন। গত সোমবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ফেইসবুক পেইজে এই কমিটির নামের তালিকা প্রকাশ করেন।
এতে দেখা গেছে, কমিটিতে জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি আমিনুর রহমান সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি রেলপথমন্ত্রীর চাচাতো ভাই। আরেক চাচাতো ভাই আব্দুল জব্বার এবং ছেলে কৌশিক নাহিয়ান নাবিদ সদস্য হয়েছেন। নাবিদ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও একটি পদে আছেন। মন্ত্রীর ভাগ্নে এ এইচ এম সাইদুর রহমান হাসনাত হয়েছেন সদস্য। মন্ত্রীর ছেলের শ্বশুর কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন সদস্য এবং সম্পর্কে ভাগ্নি হোসনেয়ারা বেগম হয়েছেন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক।
এ ছাড়া মন্ত্রীর এপিএস রাশেদ প্রধান সদস্য, চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং ভাতিজা আব্দুস সোবহান লিটন যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আরেক আত্মীয় হাবিবুর রহমান পাপ্পু সদস্য হিসেবে আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনরা স্থান পাওয়ায় নেতাকর্মীদের অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তারা জানান, ২০২২ সালের ১৮ মার্চ পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে নুরুল ইসলাম সুজন সভাপতি এবং আনোয়ার সাদাত সম্রাট সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তখন সহসভাপতি হিসেবে মজাহারুল হক প্রধান ও নাঈমুজ্জামান মুক্তার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ১০ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো।
এ প্রসঙ্গে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আবু বকর ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মনগড়া কমিটি। যারা নিবেদিত এবং ত্যাগ শিকার করে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন তারা পদে নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আত্মীয়করণ করেছেন।’
পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘আমি এখনো কমিটি দেখিনি। আমাকে নিয়েই কমিটি করার কথা ছিল। যদি ত্যাগী নেতারা বাদ যায়, তাহলে খুব দুঃখজনক হবে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও 'সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ' গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, 'তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।' একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ 'কেবলমাত্র তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন- এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।'
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দুটি উপশিরোনামসহ 'বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস' শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, 'পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে' এবং 'নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে'।
ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।
তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেখানে পাকিস্তান এখনও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেননি।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
মেট্রোরেলের উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন আগামীকাল ৩১ মার্চ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ইতিমধ্যে এ দুটি স্টেশন খোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মেট্রোরেল সেবা পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল সূত্র এ তথ্য জানায়।
উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হলে যাত্রীরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন ব্যবহার করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা দুটি দল গঠন করেছি যারা অপারেশনের জন্য উত্তরা দক্ষিণ এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের অপারেশন টিমের সাথে সমন্বয় করবে।'
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। বর্তমানে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।