
প্রায় এগারো মাস পর পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। আগের কমিটিতেও তিনি সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি ঘোষিত নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছেলেসহ তার আরও ১০ আত্মীয়স্বজন স্থান পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ৭৫ সদস্যের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের পরিবারের কয়েক সদস্যও রয়েছেন। গত সোমবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ফেইসবুক পেইজে এই কমিটির নামের তালিকা প্রকাশ করেন।
এতে দেখা গেছে, কমিটিতে জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি আমিনুর রহমান সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি রেলপথমন্ত্রীর চাচাতো ভাই। আরেক চাচাতো ভাই আব্দুল জব্বার এবং ছেলে কৌশিক নাহিয়ান নাবিদ সদস্য হয়েছেন। নাবিদ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও একটি পদে আছেন। মন্ত্রীর ভাগ্নে এ এইচ এম সাইদুর রহমান হাসনাত হয়েছেন সদস্য। মন্ত্রীর ছেলের শ্বশুর কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন সদস্য এবং সম্পর্কে ভাগ্নি হোসনেয়ারা বেগম হয়েছেন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক।
এ ছাড়া মন্ত্রীর এপিএস রাশেদ প্রধান সদস্য, চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং ভাতিজা আব্দুস সোবহান লিটন যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আরেক আত্মীয় হাবিবুর রহমান পাপ্পু সদস্য হিসেবে আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনরা স্থান পাওয়ায় নেতাকর্মীদের অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তারা জানান, ২০২২ সালের ১৮ মার্চ পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে নুরুল ইসলাম সুজন সভাপতি এবং আনোয়ার সাদাত সম্রাট সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তখন সহসভাপতি হিসেবে মজাহারুল হক প্রধান ও নাঈমুজ্জামান মুক্তার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ১০ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো।
এ প্রসঙ্গে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আবু বকর ছিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মনগড়া কমিটি। যারা নিবেদিত এবং ত্যাগ শিকার করে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন তারা পদে নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আত্মীয়করণ করেছেন।’
পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘আমি এখনো কমিটি দেখিনি। আমাকে নিয়েই কমিটি করার কথা ছিল। যদি ত্যাগী নেতারা বাদ যায়, তাহলে খুব দুঃখজনক হবে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।
উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই কাজটুকু করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই পরিদর্শক আছেন ৬০০।
শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শকরাই একমাত্র তদারককারী নন। তাদের সঙ্গে আছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের পরিদর্শক। যাদের প্রত্যেকের কাজ বিভিন্ন অবস্থান থেকে কারখানা পরিদর্শন করা। নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কোনো না কোনো অধিদপ্তরের পরিদর্শকের পা কারখানায় পড়বেই।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? আগুন লাগলে বা অন্য কোনো সংকট এলেই বলা হয় জনবল ঘাটতির জন্য তারা কিছু করতে পারছেন না। আসলেই জনবল ঘাটতি, নাকি দায়িত্ব এড়ানো?
সরকারের কোনো দপ্তর সমন্বিত পরিকল্পনাই করেনি। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ফলাও করে লোক না থাকার কথা বলে। তারপর সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়াতে চিঠিপত্র চালাচালি করে। একপর্যায়ে তারা জনবল বাড়িয়েও নেয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপে করের বোঝা। অথচ সেবা যেখানে ছিল সেখানেই থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আসলে জনবলের ঘাটতি নেই, সংকট পরিকল্পনায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনবল নিয়ে বসে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না। জনবল পূর্ণ মাত্রায় কখনোই পাওয়া যাবে না। সব সময় ঘাটতি থাকবে। দেশে পুলিশ প্রায় দুই লাখ। এখন ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দিতে হয় এই কম পুলিশ দিয়েই। আইনগতভাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই কারখানা পরিদর্শন করা মূলকাজ। তারা কারখানার পাশাপাশি শ্রমিকের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন দেয়। শুধু তাদের ওপর নির্ভর না করে যারা বর্তমানে কারখানা পরিদর্শন করে, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স করা যেতে পারে। এতে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারখানা তদারকির বাইরে থকবে না। সব কারখানা সমান গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি শ্রমিক কাজ করে বা রপ্তানিমুখী কারখানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইজি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিল্প খাতের অগ্নিকা- ও অন্যান্য সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখনই যে সচিব এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন তিনিই জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। আগের সচিব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৯৯৩টি পদের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৭৯১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেন সরকারকে। এসব পদের জন্য ১১টি জিপ, ৫টি সিডান কার, ৩৭টি মাইক্রোবাস ও ১ হাজার ৫৩টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাবও একই সঙ্গে জুড়ে দেন। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পালনের চিত্র তুলে ধরে আগের সচিবের পথ ধরে বর্তমান সচিবও এসব পদ আরও বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেন।
অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসও তাদের জনবল ঘাটতির কথা ডাক ছেড়েই বলে। গাজীপুরের টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণের পর পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হলেও তা ঝুলে আছে। সারা দেশের কারখানাগুলোর বয়লার সেটআপ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নবায়নযোগ্যতা তাদেরই দেখভাল করার কথা। কিন্তু সরকারি অফিসের কাজ হয়তো সরকারি গতিতেই চলে। মাঝখান থেকে অকালে ঝরে যায় নিরীহ কিছু প্রাণ। নামকাওয়াস্তে গঠিত তদন্ত কমিটি মৃতদের পরিবারকে নামমাত্র অনুদান দিয়ে দায় সারে।
কলকারখানা অধিদপ্তরের ৬০০ পরিদর্শকই একমাত্র তদারককারী দল নয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পরিদর্শক ৩১ জন। বয়লার পরিদপ্তরে পরিদর্শক কাজ করেন ৬২ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরে ৪৫০ জন পরিদর্শনের কাজ করেন। পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৭৬ জন। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা এবং তিতাসসহ গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থায় কয়েকশ পরিদর্শক তো রয়েছেনই।
এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকের কাজ কারখানা পরিদর্শন করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকেরই আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা কারখানা বা অর্থনৈতিক ইউনিটের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি শিল্পকারখানার মালিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, নিয়ম করে তারা সবাই কারখানায় আসেন। তারা আসলেও কোনো কাজ করেন না। তারা ম্যানেজারের রুমে গিয়ে ম্যানেজ হয়ে যান। প্রত্যেক ইউনিটের পরিদর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার চুক্তিতে না এলে তাদের সঙ্গে পারা যায় না। তারা বিভিন্ন আইনকানুন বিধিবিধানের প্যাঁচে ফেলে দেন। এ কারণেই তাদের সঙ্গে মাসোহারার চুক্তিতে যাই। বিষয়টি কোনো গোপন নয়। এদেশের যেকোনো শিল্পপতি তা জানেন। শিল্পপতি কাম সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও এর ভুক্তভোগী। কারখানাসংক্রান্ত পরিদর্শকরা নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কারখানায় সমস্যা থাকলে কোনো না কোনো দপ্তরের পরিদর্শকের নজরে তা পড়বেই।
সিটি করপোরেশনের বাইরে কারখানার স্থাপনা করতে স্থানীয় সরকারের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা কেউ অনুসরণ করে না। কারণ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে গেলেই অনেক টাকা ডিমান্ড করে। অথচ না গেলে কেউ খবরও নেয় না। এ কারণে সিটি করপোরেশনের বাইরের বেশিরভাগ কারখানার স্থাপনাগত অনুমোদন নেই। অথচ বহুতল কারখানার নকশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নকশার সঙ্গে ফায়ার লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
২০১৫ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে ৮৩ লাখ ইকোনমিক ইউনিট রয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় ২৩টি উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব বলে শ্রম মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইকোনমিক ইউনিটের আওতায় দোকানপাটসহ সবকিছু রয়েছে। গুরুত্বের তালিকায় একটা মুদি দোকান আসতে পারে না। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। এরমধ্যে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই ৫ হাজার কারখানাকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। এসব কারখানায় প্রতিমাসেই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের পরিদর্শন করতে হয়। এসব দপ্তরের মোট পরিদর্শকের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫১৯ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব ভাগ করে দিলে বছরে মাত্র তিনটি কারখানা ভালোভাবে পরিদর্শনের দায়িত্ব পড়ে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী টিমভিত্তিক ও এককভাবে পরিদর্শন করা হয়। মাসে এককভাবে ১৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠান এবং যৌথভাবে ১৫টি কারখানা পরিদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদেরও মাসভিত্তিক পরিদর্শন করতে হয়।
যখনই অগ্নিকা- হয় তখনই জেগে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। তবে নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ‘কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিল্পকারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পরিদর্শনের আলোকে শিল্পকারখানাগুলোর অবকাঠামো, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের জন্য অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিডাকে। সাচিবিক দায়িত্ব পেয়ে বিডা ১০৮টি উপকমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ৫ হাজার ২০৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সালমান এফ রহমান জানান, আরও ১০ হাজার শিল্প-কলকারখানা পরিদর্শন করা হবে। এ ছাড়াও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জনবল ও কার্য অধিক্ষেত্র বৃদ্ধির মাধ্যমে এটিকে একটি কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হবে। যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে তাদের আগামী তিন মাস সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নয়ন না ঘটলে সেসব কোম্পানিকে সিলগালা করা হবে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করায় সেসব কোম্পানিকে আগামী ৬ মাস সুযোগ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশের উন্নয়ন না ঘটলে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিদর্শনকৃত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের বিদ্যমান ত্রুটিসমূহ অবগত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব অ্যাসোসিয়েশনকে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিডার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটিগুলো প্রায় সব কারখানা পরিদর্শন করছে। এখানেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শন করলে ভালো ফল পাওয়া যেত। কারণ সব কারখানা পরিদর্শন করতে অনেক সময় লাগবে। এখনই সংস্কার করতে না পারলে চলমান পরিদর্শনের সময়ের মধ্যে নতুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যে কারখানায় ৫ জন শ্রমিক কাজ করে সেটা ৫ হাজার শ্রমিকের কারখানার মতো গুরুত্ব পেতে পারে না। বেশি শ্রমিকের কারখানায় আগুন লাগলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর একটি বিষয় হচ্ছে বিডার পরিদর্শনে নিয়মিত পরিদর্শকদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারণ কোন কারখানায় কী সমস্যা তা সবচেয়ে বেশি জানে নিয়মিত পরিদর্শকরা।
কাগজে-কলমে নির্মাণকাজের তথ্য আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। অস্তিত্বহীন এ কাজের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল লিমিটেডের ছয়টি ট্যাংক নির্মাণে এমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তারা। পরে আর সাড়া দেয়নি। উপরন্তু এ প্রতিবেদক পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করা ও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ফোনে বলা কথা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার জেনে যান। ঠিকাদারকে প্রতিবেদকের ফোন নম্বরও দেওয়া হয়। পরে ঠিকাদার ফোন করে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ করেন।
সূত্রমতে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে পাঁচটি পেট্রোলিয়াম স্টোরেজ ট্যাংক ও একটি ফায়ার ওয়াটার ট্যাংক নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করে পদ্মা অয়েল। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রামের মেসার্স এসএ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আরিফ হোসেনকে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শর্তানুযায়ী ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ হয়নি। অথচ চলমান এ কাজের বিল বাবদ ঠিকাদারকে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে পদ্মা অয়েল।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর বিল পরিশোধের অনুমোদনের চিঠিতে সই করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চিঠিতে বলা হয়, ঠিকাদার ২৪ শতাংশ কাজ সফলভাবে শেষ করেছেন। অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রথম বিল দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কাজের পরের অংশ সম্পন্ন করার জন্য তাকে বিল দেওয়া যেতে পারে।
বিল দেওয়ার পর ট্যাংক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ না হওয়ার পরও পদ্মা অয়েলের কাছে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি মানির ১৮ লাখ ২৯ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানকারী প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্যই ঠিকাদারের কাছ থেকে সিকিউরিটি মানি জমা রাখা হয় কাজ শেষ হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত। এর উদ্দেশ্য এ সময়ের মধ্যে কাজে ত্রুটি ধরা পড়লে তার সমাধানের ব্যবস্থা করা।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা অয়েলের মহাব্যবস্থাপকের (প্রকল্প) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ঠিকাদার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন দাবি করেন, ২০২১ সালের আগস্টে সফলভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। তিনি বিলও পেয়েছেন এবং কাজ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি।
গত সোমবার দেশ রূপান্তরের স্থানীয় প্রতিনিধি মোস্তাফিজ আমিনকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর পর তিনি জানান, সরেজমিনে ট্যাংক নির্মাণকাজের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ছয়টি ট্যাংক নির্মাণের কথা ছিল; কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বালি ও ইটের খোয়া ছাড়া কিছু দেখা যায়নি।
ঠিকাদার আরিফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই জায়গায় আগে ১০ ফুট গর্ত ছিল। বালি ভরাট করে কাজ করতে হয়েছে। দেড়-দুই বছর আগে কাজ শেষ করেছি। এরপর কাজ না হওয়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে। মাটির নিচে কাজ হওয়ায় বাইরে থেকে তো বোঝা যাবে না।’
কাজের প্রমাণস্বরূপ ২০২১ সালের নির্মাণকাজের কিছু ছবি পাঠান তিনি। সেসবে দেখা যায়, ট্যাংকের বেজমেন্ট বা ভিত তৈরির জন্য ইটের খোয়া ও বালি বিছানো রয়েছে। তবে ভিতের জন্য কোনো ঢালাই বা সিমেন্টের প্লাস্টার করা হয়নি। ছবি ওই স্থানের কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অসম্পূর্ণ ভিতের ছবি দেখিয়ে কয়েকজন পেশাদার প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তারা বলেন, পুরো কাজের নকশা এবং বাস্তবে না দেখে প্রকৃত ব্যয় হিসাব করা কঠিন। তারপরও ছবি দেখে ও আয়তন অনুমান করে এটুকু বলা যায়, ছয়টি অসম্পূর্ণ বেজমেন্ট নির্মাণে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়।
একজন ঠিকাদার তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি একটি কাজের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় তিন বছর পর তাকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই দরপত্র বাতিল করে। এতে তার কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার মতে, সাধারণত কাজ শুরুর আগে দরবৃদ্ধির আবেদন করে থাকেন ঠিকাদাররা। কাজ চলাকালেও এই দাবি করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ দরবৃদ্ধি না করলে কাজ বন্ধও করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাধারণত ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি কখনো তাদের কালো তালিকাভুক্তও করা হয়।
আরিফ হোসেনের দাবি, কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পর জায়গা বুঝে পান তিনি। এরপর করোনার কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরবৃদ্ধির অনুরোধ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায় নতুন করে দরবৃদ্ধির সুযোগ নেই। যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে ততটুকুর বিল নিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে তিনি রাজি হন এবং পদ্মা অয়েলের কর্মকর্তারা অগ্রগতি পরিদর্শন করে তাকে বিল দিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থান নিয়ে জটিলতার কারণে যে পরিমাণ বিল তিনি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে কাজ সম্পূর্ণ করতে চাইলেও তাকে করতে দেওয়া হয়নি। নিজের পক্ষে নানান যুক্তি দেখানোর একপর্যায়ে প্রতিবেদনটি না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত করে কাজের কোনো ত্রুটি ধরতে পারবে না। কিন্তু তাকে হয়রান হতে হবে।
সে সময় তিনি উৎকোচ দিতে এ প্রতিবেদকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চান। আরিফ হোসেন বলেন, ‘আপনি আমাকে সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে আমিও আপনাকে সহযোগিতা করব।’
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) আমিনুল হক টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র-নির্ধারিত দরে কাজ করতে আপত্তি জানান ঠিকাদার। দরবৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় যতটুকু কাজ হয়েছে সে অনুযায়ী তাকে বিল দিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই কাজ শেষ করার জন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
কাজের অগ্রগতি পরিমাপ করতে ওই সময় একটি কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আমিনুল হক বলেন, ‘কমিটি তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি বলে প্রতিবেদন দেয়নি।’
গত ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পদ্মা অয়েলের কার্যালয়ে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকের বেজমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ আছে।’ তার কাছে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি পরদিন বুধবার জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এবং আবদুস সোবহানকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে জানান।
পরে এ প্রতিবেদক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সাড়া পাননি। প্রকল্প মহাব্যবস্থাপক আমিনুল হককে পরে কয়েক দফায় ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত মো. সাহাবুদ্দিন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি হামিদের সহধর্মিণী রাশিদা খানম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাসসকে এ তথ্য জানান।
এর আগে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, তার সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ ও তার সহধর্মিণী। এ সময় আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানান এবং তারা পরস্পর কুশল বিনিময় করেন ও স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রীতি অনুযায়ী বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গত রবিবার দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিনকে (৭৪) মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সোমবার তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন সচিবালয়। ওইদিনই ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাহাবুদ্দিন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার নবীনগরে নামিয়ে সড়কের পাশে বাস রেখে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন ওই বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ ১২-১৩ জনের একদল ডাকাত বাসে উঠে চিৎকার করতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনজনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম মারধর করে। এরপর চোখ-মুখ, হাত ও পা বেঁধে বাসের পেছনের আসনে ফেলে রাখে। তাদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এরপর ডাকাতরা বাস নিয়ে রাজধানীতে চলে আসে এবং রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে যাত্রী তোলে। যাত্রীরা বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে মারধর। তাদেরও মুখ, হাত ও পা বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে কাউকে সড়কে নামিয়ে দেয় আবার কাউকে বাসের পেছনে গাদাগাদি করে ফেলে রাখে। যাত্রীদের মধ্যে চিকিৎসক, ব্যাংকার ও সাধারণ কর্মজীবীও ছিলেন। তাদের হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় ডাকাতরা। কিছুক্ষণ পরপর লোহার পাইপ দিয়ে শরীরে আঘাত করে। অনেকের শরীর ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। পরে ভোরের দিকে চন্দ্রার একটি নির্জন স্থানে বাস রেখে সটকে পরে ডাকাত দলটি। বাসটির স্টাফ ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে দাবি করেন রিসাত পরিবহনের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডাকাত দলের কাউকেই গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি। শফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে এবং স্টাফদের মারধর করেছে। তবে আমাদের বাসমালিক কোনো ধরনের ঝামেলায় যেতে চান না। আমরা নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে একটি জিডি করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ বিন করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতির কোনো তথ্য আমার জানা নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে কেউ সাধারণ ডায়েরিও করেছে বলেও ডিউটি অফিসার আমাকে বলেননি।’ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীদের একজন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক শাওন চৌধুরী জয়। রবিবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশে চাঁনখারপুল এলাকা থেকে রিসাত পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন তিনি। এর পরই তার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। চোখ বেঁধে বাসের পেছনে নিয়ে বসিয়ে রাখে। শাওন চৌধুরী জানান, তার কাছে থাকা ১২ প্রোম্যাক্স আইফোন, ৭ আইফোন, নগদ সাড়ে চার হাজার টাকা, হাতঘড়ি ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে গেছে ডাকাত দল। তাকে মারধরও করেছে তারা।
এর আগেও রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ডজনখানেক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শফিকুল ইসলাম নামে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে এরকম ডাকাতির কবলে পড়েন। পরে তিনি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এরপরই আন্তঃজেলা বাসে ডাকাতি করা দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার হয় বেশ কিছু ডাকাত।
ডাকাতির একাধিক মামলা নিয়ে তদন্তকারী পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতিতে জড়িয়ে অতীতে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কিছু দুর্ধর্ষ ডাকাত সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। ফলে ডাকাতির রাতভর মৃত্যুর বিভীষিকা ঘটনা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাদের ওপর নজরদারি বাড়ালে বাস নিয়ে এভাবে ডাকাতির ঘটনা কমে আসবে।’
রিসাত পরিবহনের ওই বাসের কর্মচারীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীনগর পৌঁছলে সব যাত্রী নেমে যান। এ সময় বাস কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয় যেহেতু বাস খালি তাই রাতে সেখানে থেকে পরদিন ভোরে ট্রিপ নিয়ে খুলনা যেতে। সে কারণে তারা নবীনগর বাস কাউন্টারে পেট্রলপাম্পের পাশের ফুটপাতে বাস রাখেন। খাওয়াদাওয়া শেষে রাত ১১টার দিকে বাসের ভেতরেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ওই সময়ে ডাকাতের কবলে পড়েন।
কর্মচারীরা জানান, ডাকাত দল বাসে উঠে চালক মো. নাসির উদ্দিনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একে একে সুপারভাইজার রাসেল ও চালকের সহকারীকেও মারধর করে। তাদের অর্ধনগ্ন করে গামছা ও লুঙ্গি দিয়ে চোখ, মুখ, হাত, পা বেঁধে বাসের পেছনের সিটে ফেলে রাখে। নড়াচড়া করলেই লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ডাকাতরা জানতে চায় গাড়ির জিপিআরএস (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস) চালু আছে কি না। চালক জানান জিপিআরএস নেই। এরপরই চালকের ঘাড়ে পাইপ দিয়ে সজোরে আঘাত করে ডাকাতরা। তারপর গাড়ি চালিয়ে রাজধানীতে চলে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরার সময় কোনো যাত্রী সিগন্যাল দিলেই তাকে বাসে তুলেই মুখ বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে বাসের পেছনে নিয়ে রাখতে থাকে। রাতভর এমন সাত থেকে আটজনকে বাসে তুলে ডাকাতি করেছে চক্রটি। বাসে ওঠার পর ফাঁকা বাস দেখে অনেকে নামার চেষ্টা করলে তাদের বেশি মারধর করেছে। ভোরে চন্দ্রায় ফেলে যাওয়ার পর তাদের ডাকাডাকিতে পথচারীরা এসে উদ্ধার করে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
চালক নাসির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডাকাতরা সারা রাত টানা বাস চালিয়েছে। কোথাও বিরতি দেয়নি। যাত্রীদের যে যেখানে যেতে চেয়েছে তাকে সেখানকার কথা বলেই তুলে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বেঁধে রেখে তারা বাসের মধ্যেই গাঁজা খেতে থাকে। খুবই হিংস্র আচরণ করতে থাকে। সবকিছু দিয়ে দেওয়ার পরও মারধর করেছে। তারা বারবার বলছিল আমাদের মেরে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দেবে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে যখন পাইপ দিয়ে খোঁচা দিতে থাকে তখন মনে হচ্ছিল ধারালো চাকু দিয়ে খোঁচাচ্ছে। আঘাতের কারণে আমার শরীর থেকে রক্ত বের হতে থাকে। মনে হচ্ছিল এখনই মারা যাব হয়তো। আমার ছোট্ট দুটি বাচ্চার কথা বারবার মনে পড়ছিল।’ ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ থানায় যেতে রাজি হয়নি বলে জানান নাসির।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ কৌশলগত উপদেষ্টা ও দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর (আন্ডার সেক্রেটারি) ডেরেক শোলে দুদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এদিকে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল রাতে ঢাকা এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শোলের এই সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা। দুই সরকারের মধ্যে যে সম্পর্কটা আছে, সেটাকে আরও শক্তিশালী করা। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তার এই সফর দুদেশের সম্পর্ককে ‘আরও শক্তিশালী’ করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আজ বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডেরেক শোলে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করবেন তিনি। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো থাকছে। পাশাপাশি র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই জোর দেওয়া হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেরেক শোলে। ডেরেক শোলের সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমন্বয় ও প্রতিক্রিয়া, আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা জোরদার নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
ডেরেক শোলের সফরের আগেই ইউএসএআইডি’র একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশে এসেছে। দলটি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে ঢাকায় ফিরে তারা ডেরেক শোলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব : মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক এবার ঢাকায় হচ্ছে। আজ বুধবার বিনয় মোহন কোয়াত্রা ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া পানি, বাণিজ্য, সীমান্ত পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা, চলমান সহযোগিতার বিষয় ও লাইন অব ক্রেডিটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে।
বৈঠকগুলোতে বিদ্যুৎ জটিলতার আলোচনা হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। কারণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টির দেখভাল না করলেও আলোচনা যে হবে না বা হচ্ছে না বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। অবশ্য পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজন আছে। তারাই মূলত এই প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো নিয়ে কাউন্টার পার্টের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। এটি সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি, জানানো হলে আমরা প্রসঙ্গটি তুলব।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।