
পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা পোশাক এবং তা রপ্তানি নিয়ে কাজ করছেন তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিভিন্ন দেশের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তা মাথায় রেখে নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।’ গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি ছয়টি জেলায় ছয়টি টেক্সটাইল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটানোরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতে দেশে একটি ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে কোন রং ও ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটার চাহিদা বেশি এটা একটা ঘূর্ণায়মান অবস্থা এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট বা রপ্তানিকারক তাদের আমি অনুরোধ করব আপনাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পোশাক ব্যবহার হয়ে থাকে সেভাবে আমরা নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারি।’
আসন্ন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বড় ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য তার সরকার দেশের জনগণকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজ অত্যন্ত দক্ষ। তাদের একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা উন্নতমানের কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, দ্রুততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বস্ত্র অধিদপ্তরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে এবং ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে এবং স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সব সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
পাশাপাশি বস্ত্র খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য তার সরকার বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) ১৬টি বন্ধ মিল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে (পিপিপি) চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নতুন উদ্বোধন করা ছয়টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট হচ্ছে ‘শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গোপালগঞ্জ’, ‘শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, গৌরনদী, বরিশাল’, ‘শহিদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মান্দা, নওগাঁ’, ‘বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ’, ‘ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’ এবং ‘শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। বর্তমান সরকারের আমলে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামান্য চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।
উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই কাজটুকু করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই পরিদর্শক আছেন ৬০০।
শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শকরাই একমাত্র তদারককারী নন। তাদের সঙ্গে আছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের পরিদর্শক। যাদের প্রত্যেকের কাজ বিভিন্ন অবস্থান থেকে কারখানা পরিদর্শন করা। নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কোনো না কোনো অধিদপ্তরের পরিদর্শকের পা কারখানায় পড়বেই।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? আগুন লাগলে বা অন্য কোনো সংকট এলেই বলা হয় জনবল ঘাটতির জন্য তারা কিছু করতে পারছেন না। আসলেই জনবল ঘাটতি, নাকি দায়িত্ব এড়ানো?
সরকারের কোনো দপ্তর সমন্বিত পরিকল্পনাই করেনি। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ফলাও করে লোক না থাকার কথা বলে। তারপর সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়াতে চিঠিপত্র চালাচালি করে। একপর্যায়ে তারা জনবল বাড়িয়েও নেয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপে করের বোঝা। অথচ সেবা যেখানে ছিল সেখানেই থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আসলে জনবলের ঘাটতি নেই, সংকট পরিকল্পনায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনবল নিয়ে বসে থাকলে দুর্ঘটনা কমবে না। জনবল পূর্ণ মাত্রায় কখনোই পাওয়া যাবে না। সব সময় ঘাটতি থাকবে। দেশে পুলিশ প্রায় দুই লাখ। এখন ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দিতে হয় এই কম পুলিশ দিয়েই। আইনগতভাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরই কারখানা পরিদর্শন করা মূলকাজ। তারা কারখানার পাশাপাশি শ্রমিকের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন দেয়। শুধু তাদের ওপর নির্ভর না করে যারা বর্তমানে কারখানা পরিদর্শন করে, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স করা যেতে পারে। এতে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারখানা তদারকির বাইরে থকবে না। সব কারখানা সমান গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি শ্রমিক কাজ করে বা রপ্তানিমুখী কারখানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইজি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিল্প খাতের অগ্নিকা- ও অন্যান্য সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখনই যে সচিব এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন তিনিই জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। আগের সচিব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৯৯৩টি পদের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৭৯১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেন সরকারকে। এসব পদের জন্য ১১টি জিপ, ৫টি সিডান কার, ৩৭টি মাইক্রোবাস ও ১ হাজার ৫৩টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাবও একই সঙ্গে জুড়ে দেন। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পালনের চিত্র তুলে ধরে আগের সচিবের পথ ধরে বর্তমান সচিবও এসব পদ আরও বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেন।
অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসও তাদের জনবল ঘাটতির কথা ডাক ছেড়েই বলে। গাজীপুরের টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণের পর পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হলেও তা ঝুলে আছে। সারা দেশের কারখানাগুলোর বয়লার সেটআপ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নবায়নযোগ্যতা তাদেরই দেখভাল করার কথা। কিন্তু সরকারি অফিসের কাজ হয়তো সরকারি গতিতেই চলে। মাঝখান থেকে অকালে ঝরে যায় নিরীহ কিছু প্রাণ। নামকাওয়াস্তে গঠিত তদন্ত কমিটি মৃতদের পরিবারকে নামমাত্র অনুদান দিয়ে দায় সারে।
কলকারখানা অধিদপ্তরের ৬০০ পরিদর্শকই একমাত্র তদারককারী দল নয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পরিদর্শক ৩১ জন। বয়লার পরিদপ্তরে পরিদর্শক কাজ করেন ৬২ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরে ৪৫০ জন পরিদর্শনের কাজ করেন। পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৭৬ জন। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা এবং তিতাসসহ গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থায় কয়েকশ পরিদর্শক তো রয়েছেনই।
এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকের কাজ কারখানা পরিদর্শন করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শকের প্রত্যেকেরই আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শকরা কারখানা বা অর্থনৈতিক ইউনিটের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি শিল্পকারখানার মালিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, নিয়ম করে তারা সবাই কারখানায় আসেন। তারা আসলেও কোনো কাজ করেন না। তারা ম্যানেজারের রুমে গিয়ে ম্যানেজ হয়ে যান। প্রত্যেক ইউনিটের পরিদর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার চুক্তিতে না এলে তাদের সঙ্গে পারা যায় না। তারা বিভিন্ন আইনকানুন বিধিবিধানের প্যাঁচে ফেলে দেন। এ কারণেই তাদের সঙ্গে মাসোহারার চুক্তিতে যাই। বিষয়টি কোনো গোপন নয়। এদেশের যেকোনো শিল্পপতি তা জানেন। শিল্পপতি কাম সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও এর ভুক্তভোগী। কারখানাসংক্রান্ত পরিদর্শকরা নিজের কাজটুকু করলে কোনো কারখানাই তদারকির বাইরে থাকতে পারে না। কারখানায় সমস্যা থাকলে কোনো না কোনো দপ্তরের পরিদর্শকের নজরে তা পড়বেই।
সিটি করপোরেশনের বাইরে কারখানার স্থাপনা করতে স্থানীয় সরকারের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা কেউ অনুসরণ করে না। কারণ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে গেলেই অনেক টাকা ডিমান্ড করে। অথচ না গেলে কেউ খবরও নেয় না। এ কারণে সিটি করপোরেশনের বাইরের বেশিরভাগ কারখানার স্থাপনাগত অনুমোদন নেই। অথচ বহুতল কারখানার নকশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নকশার সঙ্গে ফায়ার লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
২০১৫ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে ৮৩ লাখ ইকোনমিক ইউনিট রয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় ২৩টি উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব বলে শ্রম মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইকোনমিক ইউনিটের আওতায় দোকানপাটসহ সবকিছু রয়েছে। গুরুত্বের তালিকায় একটা মুদি দোকান আসতে পারে না। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে উৎপাদনমুখী মোট কারখানা ৫০ হাজার। এরমধ্যে পরিদর্শনযোগ্য কারখানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার। এই ৫ হাজার কারখানাকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। এসব কারখানায় প্রতিমাসেই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদের পরিদর্শন করতে হয়। এসব দপ্তরের মোট পরিদর্শকের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫১৯ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব ভাগ করে দিলে বছরে মাত্র তিনটি কারখানা ভালোভাবে পরিদর্শনের দায়িত্ব পড়ে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী টিমভিত্তিক ও এককভাবে পরিদর্শন করা হয়। মাসে এককভাবে ১৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠান এবং যৌথভাবে ১৫টি কারখানা পরিদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শকদেরও মাসভিত্তিক পরিদর্শন করতে হয়।
যখনই অগ্নিকা- হয় তখনই জেগে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। তবে নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুড কারখানায় অগ্নিকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ‘কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিল্পকারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পরিদর্শনের আলোকে শিল্পকারখানাগুলোর অবকাঠামো, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের জন্য অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিডাকে। সাচিবিক দায়িত্ব পেয়ে বিডা ১০৮টি উপকমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ৫ হাজার ২০৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সালমান এফ রহমান জানান, আরও ১০ হাজার শিল্প-কলকারখানা পরিদর্শন করা হবে। এ ছাড়াও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জনবল ও কার্য অধিক্ষেত্র বৃদ্ধির মাধ্যমে এটিকে একটি কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হবে। যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট মানদ-ের ২৫ শতাংশের কম স্কোর করেছে তাদের আগামী তিন মাস সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নয়ন না ঘটলে সেসব কোম্পানিকে সিলগালা করা হবে। ২০৬টি প্রতিষ্ঠান মানদ-ের ৫০ শতাংশ স্কোর করায় সেসব কোম্পানিকে আগামী ৬ মাস সুযোগ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশের উন্নয়ন না ঘটলে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিদর্শনকৃত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের বিদ্যমান ত্রুটিসমূহ অবগত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব অ্যাসোসিয়েশনকে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিডার তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটিগুলো প্রায় সব কারখানা পরিদর্শন করছে। এখানেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিদর্শন করলে ভালো ফল পাওয়া যেত। কারণ সব কারখানা পরিদর্শন করতে অনেক সময় লাগবে। এখনই সংস্কার করতে না পারলে চলমান পরিদর্শনের সময়ের মধ্যে নতুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যে কারখানায় ৫ জন শ্রমিক কাজ করে সেটা ৫ হাজার শ্রমিকের কারখানার মতো গুরুত্ব পেতে পারে না। বেশি শ্রমিকের কারখানায় আগুন লাগলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর একটি বিষয় হচ্ছে বিডার পরিদর্শনে নিয়মিত পরিদর্শকদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারণ কোন কারখানায় কী সমস্যা তা সবচেয়ে বেশি জানে নিয়মিত পরিদর্শকরা।
কাগজে-কলমে নির্মাণকাজের তথ্য আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। অস্তিত্বহীন এ কাজের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল লিমিটেডের ছয়টি ট্যাংক নির্মাণে এমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তারা। পরে আর সাড়া দেয়নি। উপরন্তু এ প্রতিবেদক পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করা ও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ফোনে বলা কথা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার জেনে যান। ঠিকাদারকে প্রতিবেদকের ফোন নম্বরও দেওয়া হয়। পরে ঠিকাদার ফোন করে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ করেন।
সূত্রমতে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে পাঁচটি পেট্রোলিয়াম স্টোরেজ ট্যাংক ও একটি ফায়ার ওয়াটার ট্যাংক নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করে পদ্মা অয়েল। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে চট্টগ্রামের মেসার্স এসএ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আরিফ হোসেনকে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শর্তানুযায়ী ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ হয়নি। অথচ চলমান এ কাজের বিল বাবদ ঠিকাদারকে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে পদ্মা অয়েল।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর বিল পরিশোধের অনুমোদনের চিঠিতে সই করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চিঠিতে বলা হয়, ঠিকাদার ২৪ শতাংশ কাজ সফলভাবে শেষ করেছেন। অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রথম বিল দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কাজের পরের অংশ সম্পন্ন করার জন্য তাকে বিল দেওয়া যেতে পারে।
বিল দেওয়ার পর ট্যাংক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ না হওয়ার পরও পদ্মা অয়েলের কাছে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি মানির ১৮ লাখ ২৯ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানকারী প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্যই ঠিকাদারের কাছ থেকে সিকিউরিটি মানি জমা রাখা হয় কাজ শেষ হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত। এর উদ্দেশ্য এ সময়ের মধ্যে কাজে ত্রুটি ধরা পড়লে তার সমাধানের ব্যবস্থা করা।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা অয়েলের মহাব্যবস্থাপকের (প্রকল্প) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ঠিকাদার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন দাবি করেন, ২০২১ সালের আগস্টে সফলভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। তিনি বিলও পেয়েছেন এবং কাজ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি।
গত সোমবার দেশ রূপান্তরের স্থানীয় প্রতিনিধি মোস্তাফিজ আমিনকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর পর তিনি জানান, সরেজমিনে ট্যাংক নির্মাণকাজের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ছয়টি ট্যাংক নির্মাণের কথা ছিল; কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বালি ও ইটের খোয়া ছাড়া কিছু দেখা যায়নি।
ঠিকাদার আরিফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই জায়গায় আগে ১০ ফুট গর্ত ছিল। বালি ভরাট করে কাজ করতে হয়েছে। দেড়-দুই বছর আগে কাজ শেষ করেছি। এরপর কাজ না হওয়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে। মাটির নিচে কাজ হওয়ায় বাইরে থেকে তো বোঝা যাবে না।’
কাজের প্রমাণস্বরূপ ২০২১ সালের নির্মাণকাজের কিছু ছবি পাঠান তিনি। সেসবে দেখা যায়, ট্যাংকের বেজমেন্ট বা ভিত তৈরির জন্য ইটের খোয়া ও বালি বিছানো রয়েছে। তবে ভিতের জন্য কোনো ঢালাই বা সিমেন্টের প্লাস্টার করা হয়নি। ছবি ওই স্থানের কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অসম্পূর্ণ ভিতের ছবি দেখিয়ে কয়েকজন পেশাদার প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তারা বলেন, পুরো কাজের নকশা এবং বাস্তবে না দেখে প্রকৃত ব্যয় হিসাব করা কঠিন। তারপরও ছবি দেখে ও আয়তন অনুমান করে এটুকু বলা যায়, ছয়টি অসম্পূর্ণ বেজমেন্ট নির্মাণে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়।
একজন ঠিকাদার তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি একটি কাজের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় তিন বছর পর তাকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই দরপত্র বাতিল করে। এতে তার কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার মতে, সাধারণত কাজ শুরুর আগে দরবৃদ্ধির আবেদন করে থাকেন ঠিকাদাররা। কাজ চলাকালেও এই দাবি করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ দরবৃদ্ধি না করলে কাজ বন্ধও করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাধারণত ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি কখনো তাদের কালো তালিকাভুক্তও করা হয়।
আরিফ হোসেনের দাবি, কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পর জায়গা বুঝে পান তিনি। এরপর করোনার কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরবৃদ্ধির অনুরোধ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায় নতুন করে দরবৃদ্ধির সুযোগ নেই। যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে ততটুকুর বিল নিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে তিনি রাজি হন এবং পদ্মা অয়েলের কর্মকর্তারা অগ্রগতি পরিদর্শন করে তাকে বিল দিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থান নিয়ে জটিলতার কারণে যে পরিমাণ বিল তিনি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে কাজ সম্পূর্ণ করতে চাইলেও তাকে করতে দেওয়া হয়নি। নিজের পক্ষে নানান যুক্তি দেখানোর একপর্যায়ে প্রতিবেদনটি না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত করে কাজের কোনো ত্রুটি ধরতে পারবে না। কিন্তু তাকে হয়রান হতে হবে।
সে সময় তিনি উৎকোচ দিতে এ প্রতিবেদকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর চান। আরিফ হোসেন বলেন, ‘আপনি আমাকে সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে আমিও আপনাকে সহযোগিতা করব।’
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) আমিনুল হক টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র-নির্ধারিত দরে কাজ করতে আপত্তি জানান ঠিকাদার। দরবৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় যতটুকু কাজ হয়েছে সে অনুযায়ী তাকে বিল দিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই কাজ শেষ করার জন্য নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
কাজের অগ্রগতি পরিমাপ করতে ওই সময় একটি কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আমিনুল হক বলেন, ‘কমিটি তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি বলে প্রতিবেদন দেয়নি।’
গত ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পদ্মা অয়েলের কার্যালয়ে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকের বেজমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ আছে।’ তার কাছে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি পরদিন বুধবার জানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এবং আবদুস সোবহানকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে অবহিত করবেন বলে জানান।
পরে এ প্রতিবেদক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সাড়া পাননি। প্রকল্প মহাব্যবস্থাপক আমিনুল হককে পরে কয়েক দফায় ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত মো. সাহাবুদ্দিন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি হামিদের সহধর্মিণী রাশিদা খানম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাসসকে এ তথ্য জানান।
এর আগে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, তার সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ ও তার সহধর্মিণী। এ সময় আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানান এবং তারা পরস্পর কুশল বিনিময় করেন ও স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রীতি অনুযায়ী বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গত রবিবার দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিনকে (৭৪) মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সোমবার তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন সচিবালয়। ওইদিনই ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাহাবুদ্দিন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার নবীনগরে নামিয়ে সড়কের পাশে বাস রেখে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন ওই বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ ১২-১৩ জনের একদল ডাকাত বাসে উঠে চিৎকার করতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনজনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম মারধর করে। এরপর চোখ-মুখ, হাত ও পা বেঁধে বাসের পেছনের আসনে ফেলে রাখে। তাদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এরপর ডাকাতরা বাস নিয়ে রাজধানীতে চলে আসে এবং রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে যাত্রী তোলে। যাত্রীরা বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে মারধর। তাদেরও মুখ, হাত ও পা বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে কাউকে সড়কে নামিয়ে দেয় আবার কাউকে বাসের পেছনে গাদাগাদি করে ফেলে রাখে। যাত্রীদের মধ্যে চিকিৎসক, ব্যাংকার ও সাধারণ কর্মজীবীও ছিলেন। তাদের হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় ডাকাতরা। কিছুক্ষণ পরপর লোহার পাইপ দিয়ে শরীরে আঘাত করে। অনেকের শরীর ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। পরে ভোরের দিকে চন্দ্রার একটি নির্জন স্থানে বাস রেখে সটকে পরে ডাকাত দলটি। বাসটির স্টাফ ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে দাবি করেন রিসাত পরিবহনের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডাকাত দলের কাউকেই গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি। শফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে এবং স্টাফদের মারধর করেছে। তবে আমাদের বাসমালিক কোনো ধরনের ঝামেলায় যেতে চান না। আমরা নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে একটি জিডি করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ বিন করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতির কোনো তথ্য আমার জানা নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে কেউ সাধারণ ডায়েরিও করেছে বলেও ডিউটি অফিসার আমাকে বলেননি।’ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীদের একজন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক শাওন চৌধুরী জয়। রবিবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশে চাঁনখারপুল এলাকা থেকে রিসাত পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন তিনি। এর পরই তার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। চোখ বেঁধে বাসের পেছনে নিয়ে বসিয়ে রাখে। শাওন চৌধুরী জানান, তার কাছে থাকা ১২ প্রোম্যাক্স আইফোন, ৭ আইফোন, নগদ সাড়ে চার হাজার টাকা, হাতঘড়ি ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে গেছে ডাকাত দল। তাকে মারধরও করেছে তারা।
এর আগেও রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ডজনখানেক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শফিকুল ইসলাম নামে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে এরকম ডাকাতির কবলে পড়েন। পরে তিনি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এরপরই আন্তঃজেলা বাসে ডাকাতি করা দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার হয় বেশ কিছু ডাকাত।
ডাকাতির একাধিক মামলা নিয়ে তদন্তকারী পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস ডাকাতিতে জড়িয়ে অতীতে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কিছু দুর্ধর্ষ ডাকাত সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। ফলে ডাকাতির রাতভর মৃত্যুর বিভীষিকা ঘটনা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাদের ওপর নজরদারি বাড়ালে বাস নিয়ে এভাবে ডাকাতির ঘটনা কমে আসবে।’
রিসাত পরিবহনের ওই বাসের কর্মচারীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবীনগর পৌঁছলে সব যাত্রী নেমে যান। এ সময় বাস কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয় যেহেতু বাস খালি তাই রাতে সেখানে থেকে পরদিন ভোরে ট্রিপ নিয়ে খুলনা যেতে। সে কারণে তারা নবীনগর বাস কাউন্টারে পেট্রলপাম্পের পাশের ফুটপাতে বাস রাখেন। খাওয়াদাওয়া শেষে রাত ১১টার দিকে বাসের ভেতরেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ওই সময়ে ডাকাতের কবলে পড়েন।
কর্মচারীরা জানান, ডাকাত দল বাসে উঠে চালক মো. নাসির উদ্দিনকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একে একে সুপারভাইজার রাসেল ও চালকের সহকারীকেও মারধর করে। তাদের অর্ধনগ্ন করে গামছা ও লুঙ্গি দিয়ে চোখ, মুখ, হাত, পা বেঁধে বাসের পেছনের সিটে ফেলে রাখে। নড়াচড়া করলেই লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ডাকাতরা জানতে চায় গাড়ির জিপিআরএস (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস) চালু আছে কি না। চালক জানান জিপিআরএস নেই। এরপরই চালকের ঘাড়ে পাইপ দিয়ে সজোরে আঘাত করে ডাকাতরা। তারপর গাড়ি চালিয়ে রাজধানীতে চলে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরার সময় কোনো যাত্রী সিগন্যাল দিলেই তাকে বাসে তুলেই মুখ বেঁধে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে বাসের পেছনে নিয়ে রাখতে থাকে। রাতভর এমন সাত থেকে আটজনকে বাসে তুলে ডাকাতি করেছে চক্রটি। বাসে ওঠার পর ফাঁকা বাস দেখে অনেকে নামার চেষ্টা করলে তাদের বেশি মারধর করেছে। ভোরে চন্দ্রায় ফেলে যাওয়ার পর তাদের ডাকাডাকিতে পথচারীরা এসে উদ্ধার করে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
চালক নাসির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডাকাতরা সারা রাত টানা বাস চালিয়েছে। কোথাও বিরতি দেয়নি। যাত্রীদের যে যেখানে যেতে চেয়েছে তাকে সেখানকার কথা বলেই তুলে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বেঁধে রেখে তারা বাসের মধ্যেই গাঁজা খেতে থাকে। খুবই হিংস্র আচরণ করতে থাকে। সবকিছু দিয়ে দেওয়ার পরও মারধর করেছে। তারা বারবার বলছিল আমাদের মেরে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দেবে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে যখন পাইপ দিয়ে খোঁচা দিতে থাকে তখন মনে হচ্ছিল ধারালো চাকু দিয়ে খোঁচাচ্ছে। আঘাতের কারণে আমার শরীর থেকে রক্ত বের হতে থাকে। মনে হচ্ছিল এখনই মারা যাব হয়তো। আমার ছোট্ট দুটি বাচ্চার কথা বারবার মনে পড়ছিল।’ ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ থানায় যেতে রাজি হয়নি বলে জানান নাসির।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ কৌশলগত উপদেষ্টা ও দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর (আন্ডার সেক্রেটারি) ডেরেক শোলে দুদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এদিকে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল রাতে ঢাকা এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শোলের এই সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা। দুই সরকারের মধ্যে যে সম্পর্কটা আছে, সেটাকে আরও শক্তিশালী করা। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তার এই সফর দুদেশের সম্পর্ককে ‘আরও শক্তিশালী’ করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আজ বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডেরেক শোলে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করবেন তিনি। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো থাকছে। পাশাপাশি র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই জোর দেওয়া হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেরেক শোলে। ডেরেক শোলের সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমন্বয় ও প্রতিক্রিয়া, আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা জোরদার নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
ডেরেক শোলের সফরের আগেই ইউএসএআইডি’র একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশে এসেছে। দলটি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে ঢাকায় ফিরে তারা ডেরেক শোলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব : মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক এবার ঢাকায় হচ্ছে। আজ বুধবার বিনয় মোহন কোয়াত্রা ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া পানি, বাণিজ্য, সীমান্ত পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা, চলমান সহযোগিতার বিষয় ও লাইন অব ক্রেডিটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে।
বৈঠকগুলোতে বিদ্যুৎ জটিলতার আলোচনা হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। কারণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টির দেখভাল না করলেও আলোচনা যে হবে না বা হচ্ছে না বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। অবশ্য পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজন আছে। তারাই মূলত এই প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো নিয়ে কাউন্টার পার্টের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। এটি সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি, জানানো হলে আমরা প্রসঙ্গটি তুলব।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।