
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জেলার আদালতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় আইন ও বিচারাঙ্গনে উদ্বেগ ও শঙ্কা বেড়েছে। গত চার মাসে পিরোজপুর, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির ৩১ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণ, বিচারককে হুমকি দেওয়া, অদালতে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় স্লোগান এবং বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, অতীতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও এখনকার মতো কখনো হয়নি। বিচারপ্রার্থীরা যাতে জিম্মি না হয়ে পড়েন সে জন্য বিচারক-আইনজীবীদের আরও সহনশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। কারণ বিচারাঙ্গন ও আইনাঙ্গনের পরিপূরক হচ্ছে আইনজীবী (বার) ও আদালত (বেঞ্চ)।
এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে অস্থির পরিস্থিতির অনেকটাই অবসান হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক বিচারকাজ চলছে। যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের এজলাস বর্জন অব্যাহত রয়েছে। তিনি ছুটিতে থাকায় এ আদালতের বিচারকাজ পরিচালনা করছে অন্য একটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপ্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থলে কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা জানতে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের শীর্ষ আইনজীবী এবং আদালতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদালতের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি; কিছু আইনজীবীর প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস, কিছু আইনজীবীর বাড়াবাড়ি আচরণ; আইনজীবী ও বিচারকদের ‘ইগো’ সমস্যা বা নিজ সিদ্ধান্তে স্থির থাকা, কোনো কোনো বিচারকের বিচক্ষণতার ঘাটতি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুজ্জ্বল ভূমিকা এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার নেপথ্যে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ও আইনজীবীদের আদালত বর্জনের ঘটনার নেপথ্যে নানা কারণ আলোচিত হচ্ছে। জেলা ও দায়রা আদালতের নাজির মো. মোমিনুল ইসলামের (ইতিমধ্যে বদলি হয়েছেন) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও জেলার শীর্ষ বিচারকদের ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন আইনজীবীরা। জেলার প্রবীণ ও শীর্ষ আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, বিচারক ও আইনজীবীদের ইগো বা ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা পরিস্থিতি অন্যদিকে নিয়ে গেছে। আবার আইনজীবীদের অনেকে অত্যুৎসাহে উদ্ধত আচরণ করেছেন।
আইনজীবীরা বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলাম আদালত চত্বরে ১৫-২০ জন ভেন্ডারকে অবৈধভাবে বসান। ভেন্ডারদের কোর্ট ফি দেওয়ার জাল সিøপ ও জাল স্ট্যাম্প বিক্রি, ২ টাকার কোর্ট ফি ১০ টাকায় বিক্রি করার বিষয়ে আপত্তি তুললেও মোমিন মাসোহারা নিয়ে তাদের পক্ষেই অবস্থান নেন। তার বিরুদ্ধে আদালতের রায়, আদেশ ও নিষেধাজ্ঞার আদেশ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে আইনজীবীদের। এসব বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগারকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু মোমিনের বিরুদ্ধে বিচারক শারমিন নিগারকে ভুল বোঝানোর অভিযোগ তুলেছেন বারের শীর্ষ আইনজীবীরা। মোমিনের বিরুদ্ধে গত বছর ৭ ডিসেম্বর জেলা বারের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তের নিরিখে দুদকে ১০ ডিসেম্বর অভিযোগ করা হয়।
আইনজীবীরা বলেন, বার ভবন থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত পর্যন্ত যেতে একটি রেইনশেড নির্মাণের চেষ্টা করে জেলা বার। জেলা জজ ও জেলা প্রশাসককে জানিয়ে গত বছর ২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়। জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯টি খুঁটি বসানোর পর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা অপারগতা প্রকাশ করি। ভেন্ডারদের কাছ থেকে মোমিনের মাসোহারা নেওয়ার বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজকে অবহিত করি। কিন্তু আমাদের বলা হয়, মোমিন মসজিদের জন্য এ টাকা নেন। এ ছাড়া শহরের পুরাতন কাচারি এলাকায় টিনশেডসহ চার শতাংশ জায়গা কোটি টাকার বিনিময়ে নাজির মোমিন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কয়েকজনকে শত বছরের জন্য লিজ দেন, যা তার এখতিয়ারের বাইরে।’
কয়েকজন আইনজীবী বলেন, গত বছর ১ ডিসেম্বর অবকাশ ছুটি শুরুর আগে আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আইনজীবীরা চাপাচাপি করলে তাদের প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সাধারণ সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে ওই বিচারকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১ জানুয়ারি আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে বিচারক আটটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আইনজীবীরা মনে করেন, তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুক রীতির বাইরে গিয়ে পুলিশি পাহারায় এজলাসে ওঠেন। ওইদিন বেশ কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে অশোভন আচরণ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩ জানুয়ারি বিচারকরা আদালতে প্রতীকী বিচারকাজ করে চলে যান। ওইদিন শীর্ষ বিচারকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এরপরই তারা আদালতের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আইনজীবীরাও পাল্টা কর্মসূচি দেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৫ জানুয়ারি জেলা বারের কয়েকজন আইনজীবীকে হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল দিয়ে তলব করলে আইনজীবীদের একাংশ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জাল কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প বিক্রয়কারীদের উচ্ছেদ করেছিলাম। নাজির মোমিন তাদের আবারও বসানোর ব্যবস্থা করেন এবং জেলা ও দায়রা জজকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে উসকে দেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়সংগত কারণে মাঠে আছি। মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার আদালত বর্জন চলবে।’
বার কাউন্সিলের অনুজ্জ্বল ভূমিকা : সারা দেশে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পর এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে তার উদ্যোগ নেয় বার কাউন্সিল। গত ২৮ জানুয়ারি বার কাউন্সিল ভবনে জেলা বারের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভা করেন নেতারা। কিন্তু সেখানে বক্তব্য দেওয়া নিয়ে বিবাদে জড়ান সরকারপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ওইদিন বার কাউন্সিল থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হলেও কাজের কাজ হয়নি। বার কাউন্সিলের একজন সাধারণ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতীতে আদালতে অপ্রীতিকর ঘটনায় বার কাউন্সিলের সিনিয়র নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন। এবার তেমনটি হয়নি।
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (অ্যাটর্নি জেনারেল) এএম আমিন উদ্দিন ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বার কাউন্সিলের কমপ্লেইন অ্যান্ড ভিজিল্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলা বারের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন আদালতে অসহিষ্ণু আচরণ না করেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বিচারক-আইনজীবী উভয়ই অনড় অবস্থানে থাকেন। আইনজীবীদের অনেকেই হয়তো বাড়াবাড়ি করেছেন। এজলাসে বিচারকদের গালি দেওয়া, হুমকি দেওয়া ঘোরতর অন্যায়। কিন্তু তারা কেন এমন করছে তা খুঁজে বের করা উচিত। আমার মনে হয়, উচ্চ আদালত দুপক্ষকেই ডেকে তাদের বক্তব্য শুনে সমাধান দিতে পারে। বার কাউন্সিলরকেও আরও বলিষ্ঠ হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে এখন মূল সমস্যা দুর্নীতি। প্রায়ই এ প্রসঙ্গটি উঠছে। বিচারকদের অধস্তনরা যে দুর্নীতি করে এতে সন্দেহ নেই। এর ফলে আইনজীবীর মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ ফকির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জুডিশিয়ারি ও আইনজীবী মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটা পরিবারের মতো। পরিবারে যেমন ঝগড়া হয় তেমনি আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যেও মাঝেমধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। আশা করি, পরিস্থিতি আর খারাপের দিকে যাবে না। সত্বর সমস্যার সমাধান হবে।’
বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে সাবসিডিয়ারি তিন কোম্পানির কাঁচামালের আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে ২০২২-২৩ হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আয় বাড়লেও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে লোকসানে পড়েছে ডরিন পাওয়ার। একই অবস্থা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানিরও। সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য আমদানি করা কাঁচামালে প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হওয়ায় শাহজীবাজার পাওয়ারও ব্যাপক লোকসানে পড়েছে।
বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও কাক্সিক্ষত নোট মার্কিন ডলার। আমদানি ব্যয়ের ধকল সামলাতে গিয়ে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভ বাড়াতে ব্যাপক সংস্কারের শর্ত মেনে বিদেশি ঋণের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে সরকার। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বাড়তি থাকায় গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২২ শতাংশের বেশি। কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এলসি খোলার পর তা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। সাধারণত এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে ৩ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এ ব্যবধানের কারণেই বিনিময় হারে বড় লোকসান দিয়েছে পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো।
ডলার সংকটে শুধু ডরিন কিংবা শাহজীবাজার পাওয়ার নয়, রানার, ইফাদ, সিঙ্গার, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, এসিআইর মতো ব্র্যান্ড ভ্যালুর বড় কোম্পানিগুলোও শত শত কোটি টাকার লোকসান দিচ্ছে। বিনিময় হার, কাঁচামালের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে মূলত উৎপাদনমুখী কোম্পানিগুলো মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক হারে বাড়লেও একই হারে পণ্যমূল্য বাড়াতে পারেনি কোম্পানিগুলো। বিনিময় হারের কারণে ইলেকট্রনিকস খাতের জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটনের নিট মুনাফা ৯৭ শতাংশ কমে গেছে।
শক্ত মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানি নতুন করে লোকসানে পড়ায় মন্দায় থাকা পুঁজিবাজারের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে। তালিকাভুক্ত ৭০ শতাংশ কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে। নতুন করে লোকসানে পড়েছে তালিকাভুক্ত ২৫ কোম্পানি। আর বিনিয়োগ করা ১৬৯ শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় ১৮টি মিউচুয়াল ফান্ডও নতুন করে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে। অবশ্য এখনো বেশিরভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কারণে সর্বনিম্ন মূল্যসীমায় আটকে রয়েছে। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অনীহা রয়েছে। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক লেনদেন তলানিতে নামছে।
বিশ্ববাজারের জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বাড়ায় গত বছর ৫ আগস্ট সরকার দেশেও সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। জ্বালানি তেল ছাড়াও সম্প্রতি গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর থেকে জাহাজ ভাড়া ও কাঁচামালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনমুখী শিল্পের ব্যয় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ইয়াসিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ারের সাবসিডিয়ারি মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার কোম্পানির জন্য এইচএফও আমদানি করতে গিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। তিনি জানান, যখন এইচএফও আমদানির জন্য এলসি খোলা হয় তখন ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮৪ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত মার্চে খোলা এলসি ডিসেম্বরে পরিশোধের সময় ডলারের বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। ফলে এলসি পরিশোধের সময় অতিরিক্ত প্রায় শতকোটি টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। একটি সাবসিডিয়ারির কারণে বড় লোকসানে পড়তে হয়েছে শাহজীবাজার পাওয়ারকে।
শাহজীবাজার পাওয়ারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, যার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড। এটি ১৫০ মেগাওয়াটের এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি। আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে কোম্পানিটি। শাহজীবাজার পাওয়ার ও এর অধীন অন্যান্য কোম্পানি কিছুটা লাভজনক অবস্থায় থাকলেও শুধু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ারের কারণে চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের দ্বিতীয়ার্ধে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ২১ কোটি টাকা নিট মুনাফা ছিল। প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা মুনাফা থাকায় চলতি প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) শাহজীবাজার পাওয়ারের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৫৮ কোটি টাকা। ডলারের কারণে ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি এই প্রথম লোকসানে পড়ল।
বিনিময় হারের কারণে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে লোকসানে পড়েছে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড। তিন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এইচএফও আমদানি করতে গিয়ে আর্থিক ব্যয় ৯৮ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে ব্যবধানের কারণে চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডরিন পাওয়ারের নিট লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকারও বেশি, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার নিট মুনাফায় ছিল কোম্পানিটির।
ডরিন পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলসি নিষ্পত্তি করতে গিয়েই বিপত্তি তৈরি হয়েছে। এলসি খোলার সময়ে ডলারের যে দর ছিল নিষ্পত্তির সময়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ব্যয় সমন্বয় করতে গিয়েই দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসানে পড়ে কোম্পানিগুলো।
চলতি প্রথমার্ধে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের আর্থিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা প্রায় ৮০ শতাংশই হয়েছে ডলারের বিনিময় হারের লোকসান থেকে। গত বছর একই সময়ে আর্থিক ব্যয় ছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। আর্থিক ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় কোম্পানিটি ৫৯ কোটি টাকার কর-পূর্ববর্তী লোকসানে পড়েছে। কর পরিশোধের পর কোম্পানির সমন্বিত নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ২৪২ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এমনিতেই উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম। কিন্তু পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে দাম পুরোপুরি সমন্বয় সম্ভব হয়নি। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আর্থিক ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, যা লোকসানে যাওয়ার প্রধান কারণ। ডলারের সংকট এখনো শেষ হয়নি। ব্যাংকগুলো আমাদের ডলার সংগ্রহ দিতে বলছে। কিন্তু এ সময়ে এটি খুবই কঠিন।’
ইস্পাত শিল্পের আরেক জায়ান্ট কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত চলতি প্রথমার্ধে ৮৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা ছিল। চলতি প্রথমার্ধে ডলারের কারণে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় ১৫৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির লোকসান হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৩ কোটি টাকা। এতে করে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমে ৯৭ শতাংশ গেছে। একই খাতের আরেক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের নিট মুনাফা ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি থেকে আয় বাড়লেও নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৮৬ শতাংশ কমে গেছে।
সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, গত দেড় বছর সুতার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ, কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫০-৪৫০ শতাংশ, ডাইস ও কেমিক্যালের খরচ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। গত বছরের শুরুতে মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে পোশাকশিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে চলমান জ¦ালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল নিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে বড় সংকটে রয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক।
চলতি প্রথমার্ধে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টাইলক্র্যাফট, রহিম টেক্সটাইল, সায়হাম টেক্সটাইল, দুলামিয়া কটন, প্রাইম টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, জাহিন টেক্সটাইল লোকসানে পড়েছে। এর বাইরে রপ্তানি আয়ের ডলার থাকার পরও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ বস্ত্র খাতের কোম্পানির আয় আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
কানাডার টরন্টোতে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের একমাত্র ছেলে কুমার নিবিড় গুরুতর আহত হয়েছেন। টরন্টোর স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশের (ওপিপি) বরাত দিয়ে সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, টরন্টোর হাইওয়ে ৪২৭-এর দুনদাস স্ট্রিট ওয়েস্টে সোমবার মধ্যরাতে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক বিভাজনে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি উল্টে যায় এবং তাতে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ভেতর থেকে আরোহীদের বের করে হাসপাতালে পাঠান।
অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ এক টুইটে জানিয়েছে, ওই গাড়িতে থাকা চারজনই বাংলাদেশি। শিক্ষার্থী ভিসায় তারা টরন্টোতে থাকছিলেন। নিহতদের মধ্যে একজন তরুণী এবং একজন তরুণ, দুজনেরই বয়স ২০ বছর। আর অন্যজনের বয়স ১৭ বছর। আর আহত ২১ বছর বয়সী একজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ হতাহতদের নাম প্রকাশ না করলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছে সিবিসি নিউজ। তবে কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন শাহরিয়ার খান, অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈ ও আরিয়ান দীপ্ত। আর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কুমার নিবিড় বিএমডব্লিউ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। গাড়িটি চলছিল প্রচণ্ড গতিতে। কুমার নিবিড় বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ^জিতের ছেলে।
এদিকে বিষয়টি জানার পরপরই কুমার বিশ^জিৎ ও তার স্ত্রী কানাডার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ ভোট দিলে আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমি কখনই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না। আমি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলেন, তার সরকার সবসময় খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারপ্রধান তার নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরে বলেন, প্রথমবারের মতো সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইন পাস হয়েছে এবং সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা হয়েছে। ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে।
শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ ও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভিত্তি নেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, গত ১৪ বছরে সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
সৌজন্য সাক্ষাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে বলে জানান স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কারণ এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধ কখনই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনার মাধ্যমে এই বিরোধের মীমাংসা হতে পারে।
রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি হচ্ছে এবং ওখানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকের কারণে স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা মাদক পাচার, মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পাঁচ বছর ধরে তারা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আর তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আত্মসংস্থানমূলক কাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সরকার। বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা প্রদানেরও আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
এ সময় শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। মিয়ানমারে আবারও কোনো গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে সম্প্রতি কয়েকজন উচ্চপদস্থ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার সফর দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে শোলে বলেন, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। আমি দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একাধিক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করে নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দুই পক্ষ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায়। রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদারের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল মিয়ানমারে এবং এ সংকট সমাধানে দেশটি বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাবে। ঢাকা সফরে এসে এমন বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে। এ ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে সাধুবাদ জানিয়ে টেকসই সংস্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। তবে র্যাবকে একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য কার্যকরী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে সফররত সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের আলাদা বৈঠকে এ আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত যৌথ ব্রিফিংয়ে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও ডেরেক শোলে। শোলে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের সম্পর্কের যে ধারাবাহিকতা, সেটিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই, একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা এ নিয়ে আশাবাদী।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা শোলে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক বাড়ছে। অনেক মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং আমি এখন এসেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করার সমান সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তা অনুসরণীয়। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আসা এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা প্রতিদিন কাজ করছি, বাংলাদেশকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এ সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং বাংলাদেশের জন্য আমরা আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘উনি এসেছেন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ভালো করার জন্য, শক্তিশালী করার জন্য। গত ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু এই সম্পর্ক আমরা আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই, সলিডিফাই করতে চাই। আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর। তারা সিঙ্গেল কান্ট্রি আমাদের গার্মেন্টসে, তারা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য নেয়। আমরা এটা থেকে আরও ওপরে যেতে চাই। বাংলাদেশে নতুন গড়ে তোলা ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সাহায্য করছে এবং করে যাচ্ছে। সিঙ্গেল কান্ট্রি, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা গ্রেটেস্ট কন্ট্রিবিউটর। তারাও আমাদের সঙ্গে একমত, রোহিঙ্গাদের জীবনমান আরও উন্নত করতে হবে, তাদের হৃদয়ে একটা হোপ দিতে হবে। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল (সেইফ জোন) প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে তারা জানতে চাননি। আমরা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করব, কীভাবে স্বাধীন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করেছি এবং ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা বানিয়েছি, এগুলো তাদের জানিয়েছি। বিএনপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে জ¦ালাও-পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাস ঘটিয়েছে তার একটি ডকুমেন্ট তাদের দিয়েছি।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৫ ফেব্রুয়ারি ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেন, এই আইনের কারণে দেশটির ২০০০-এরও বেশি কোম্পানি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, এ বিষয়ে আলাপ হয়নি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা বলেছি যে এই আইনের যেখানে যেখানে প্রয়োজন আমরা সংশোধন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তাদের আহ্বান জানিয়েছি।’
বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেরেক শোলে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে গতকাল প্রাতরাশ বৈঠক করেন। ডেরেক শোলের এ সফরের বৈঠকগুলোতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, যৌথ অগ্রাধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকার, জলবায়ু, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপ হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই সফর নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘র্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈঠকে আলাপ হয়েছে। র্যাবকে আরও শক্তিশালী এবং পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের সহায়তা চেয়েছি, বিশেষ করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে।’
বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে বলেন, ‘বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে এবং আমি সম্মানিত বোধ করছি যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির পরপরই আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে; যা কয়েক দশকের সহযোগিতা ও সমর্থনের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও যৌথ অগ্রাধিকারের অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার অপেক্ষায় রয়েছি।’
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এ সফর নিয়ে এক বিবৃতিতে গতকাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক প্রতিনিধিদল ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বাংলাদেশে থাকাকালে কাউন্সেলর শোলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে কাউন্সেলর শোলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকারের সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সহযোগিতা ও একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদের উভয় দেশের জন্য আরও বেশি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও মানবিক সহযোগিতার পূর্ণ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যে দৃঢ়বন্ধন গড়ে তোলার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘আপনার এবং আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিনয় খাতরা বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত।
বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি- ২০) শীর্ষ সম্মেলনের ১৮তম আসরে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জি-২০’র সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে ভারত। এ সময়ে গ্রুপটির সব বৈঠকে বাংলাদেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বন্ধনকে অত্যন্ত দৃঢ় বলে বর্ণনা করে বিনয় খাতরা বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে, যা ইতিমধ্যেই কৌশলগত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উভয় দেশই কাজ করতে পারে।
সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) শর্তাবলি সহজ করার চেষ্টা করছেন যাতে বাংলাদেশ সহজেই ঋণ নিতে এবং তা পরিশোধ করতে পারে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করেই পরিচালনা করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।
পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতকে ফের তাগাদা :তিস্তা ও কুশিয়ারায় পানিবণ্টন চুক্তিতে ভারতকে আবারও তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অনিষ্পন্ন ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে তিস্তায় পানি নিয়ে ভারতে যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা আছে সেটি দেশটির পক্ষ থেকেও বাংলাদেশকে আবার জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। দুই বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা ভারতকে তিস্তা ও কুশিয়ারা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সই করা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ভারতকে বলেছি। কিন্তু তিস্তা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তিনি বলেন, পানিবণ্টন ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় অনিষ্পন্ন ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মোটাদাগে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ট্যারিফ বাধা দূর করা, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি-বিএসএফের ভূমিকা বাড়ানো, দ্রুত সেপা চুক্তি করা, গঙ্গা চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়াসহ আঞ্চলিক পর্যায়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম বেগবান করতে একমত হয়েছি। এছাড়া পর্যটকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণে ভারতের আরও সহযোগিতা চেয়েছি। পাশাপাশি এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আদানির বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে আলাদা করে আলাপ হয়নি। তবে বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আলাপ হয়েছে। তারা নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে সহযোগিতা করবে। তবে এ জন্য আমাদের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেপ্টেম্বরে জি-২০ এর মূল সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন। গতকাল তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
রাজধানীর বাংলামোটরে যাত্রী ছাউনির নিচে খালি গায়ে বসে আছেন মোক্তার হোসেন। বারবার তোয়ালে দিয়ে গাম মুছতে দেখা যায় তাকে। মোক্তার জানান, কাতার যাবেন তাই মেডিকেল করাতে ঢাকায় এসেছেন। গত সপ্তাহে সিরিয়াল দিলেও এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি। তাই প্রতিদিন সকালে এসে বসে থাকেন এখানে। হোটেলে গিয়ে যে একটু শান্তিতে বিশ্রাম নেবেন, তারও উপায় নেই লোডশেডিংয়ের কারণে।
মোক্তারদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন পাশে বসে থাকা রিকশাচালক আমির হোসেন বলেন, গরমের কথা আর কইয়েন না। সকাল থেকে তিন ট্রিপ মারতে জীবন বাইর হইয়া গ্যাছে। মনে হয় শইল্লের (শরীরের) সব পানি বাইর হইয়া গেছে। দুই-তিন বোতল পানি খাইছি। তারপরেও শরীর দুর্বল লাগে। মাথাডাও ঘুরতাছে। আজকে আর রিকশা চালাইতে পারব না। তিনি জানান, সাধারণত দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করেন রিকশা চালিয়ে। কিন্তু সোমবার তার আয় হয়েছে ৩২০ টাকা।
চলতি বছরের মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দুদিন পর থেকে। কয়েক দিন বৃষ্টির পর আবার শুরু হয় প্রচণ্ড গরম; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে শুষ্ক প্রকৃতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। সূর্যের বিচ্ছুরণে মধ্যবেলায় প্রকৃতি নেয় অগ্নিরূপ। এর মধ্যে আকাশে নেই মেঘের দেখা। বাতাসের গতিও কম। যেটুকু বাতাস রয়েছে তাতেও যেন আগুনের হল্কা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে কম।
এদিকে দেশ জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত রবিবার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় চার দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সব খেলাও স্থগিত করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে স্থানভেদে ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীসহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। সপ্তাহ জুড়েই এ তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের দিকে কম থাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। তবে মৌসুমি বায়ু এ মাসের মাঝামাঝি সময় প্রবাহিত হবে।
এর আগে আবহাওয়া অফিস জানায়, এপ্রিল মাসে ৮৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। মে মাসে কম হয়েছে ৪৬ শতাংশ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগে মার্চ-এপ্রিল-মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ হলেও, এখন তা অক্টোবর পর্যন্ত হচ্ছে। এক যুগ ধরেই এ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেচ্ছা বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে দেশের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। ১২ জুন কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও সারা দেশ থেকে যে তাপপ্রবাহ চলে যাবে বিষয়টা এমন নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে মৌসুমি বায়ু সেটা আসতে একটু দেরি হচ্ছে ফলে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। একদিকে বাতাসের গতিবেগ কম, অন্যদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। ফলে মানুষ বেশি অস্বস্তি অনুভব করছে।’
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. মোহন কুমার দাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের একটি অংশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এ পুরো অংশটি এক-একটি হিট ইঞ্জিন। এসব দেশের তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ৪১-৪৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অন্যদিকে ভৌগোলিক পরিপ্রেক্ষিতে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু এই তাপ শুষে নেওয়ার যে উপাদান জলাশয়, মাটি বা গাছপালা তা কিন্তু কমছে। ফলে যেটুকু তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, মানুষ তার বেশি অনুভব করছে। শহরের এ উপাদানগুলো যদি পর্যাপ্ত থাকত তাহলে হয়তো গরম অনুভব হতো কিন্তু ক্লান্তি লাগত না। ঐতিহাসিকভাবে তাপমাত্রা ছিল, এখনো আছে। কিন্তু দমবন্ধ একটা পরিবেশ তৈরি করছি। ফলে জীবনব্যবস্থায়ও এক ধরনের প্রভাব তৈরি করছে।’
আবহাওয়ার এমন চরম ভাবাপন্ন হওয়ার জন্য তিন ধরনের কারণ রয়েছে বলে মনে করেন আবহাওয়া বিশ্লেষকরা। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি বেড়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ও আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। এ তিনটি বিষয় একত্রে কাজ করায় বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরে ১৫ লাখ ইঞ্জিনচলিত গাড়ি রয়েছে। দিনরাত চলাচল করছে। এরও একটা প্রভাব রয়েছে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে। স্থানীয় পর্যায়ে বিল্ডিং বাড়িয়ে দিয়েছি, জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইটের ভাটাগুলো চলমান। জলাধার ভরাট করে ফেলেছি। বায়ুদূষণ হচ্ছে। দেশের উল্লেখযোগ্য বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। দিন দিন শহরাঞ্চলের গাছপালার পরিমাণ কমে গিয়ে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনই যদি দূষণের পরিমাণ কমানোর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে তাপমাত্রা বাড়বে। তবে তার জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।