
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার জাদুর কাঠি শক্তি হারাল। তার জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রথম নেমেই ফাইনাল খেলে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ওদিকে টানা ১০ জয়ে ফাইনালে ওঠে ফেভারিট কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। তবুও মাশরাফী নামের জাদুর ভয় ছিল তাদের জন্য। তিনি যে ফাইনালে উঠে দল নিয়ে একবারও হারেননি। কাল সেই রেকর্ড আর টিকল না। বরং ফাইনালে উঠে কুমিল্লার না হারার রেকর্ডই অটুট থাকল। সিলেটকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় ও মোট চতুর্থ শিরোপা জিতল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের লড়াইয়ে সিলেটের করা ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জনসন চার্লস নামক ক্যারিবীয় পাওয়ার হাউজের ব্যাটে চড়ে তা সহজেই উতরে গেল কুমিল্লা। বিপিএলে এখন সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী ফেভারিট তারা।
৮ রানে রুবেল হোসেনের ক্যাচ মিসে জীবন পেয়েছিলেন চার্লস। রুবেলের সামনে সুযোগ ছিল ওই ভুলের মাশুল দেওয়ার। তা তো হলোই না, উল্টো ১৭তম ওভারে এসে ২৩ রান দিয়ে ফাইনাল হারিয়ে দিলেন দলকে। ওই ওভারের আগে ২৪ বলে ৫২ রান দরকার ছিল কুমিল্লার। মইন আলির এক ছক্কা ও চার্লসের দুই ছক্কা ও এক চারে ব্যবধান ১৮ বলে ২৯-এ নেমে আসে। এরপর আর চার্লসকে থামানো যায়নি। ১৯তম ওভারে লুক উডকে পাওয়ার হিটিংয়ে দুই ছক্কা ও চার মেরে কুমিল্লাকে চ্যাম্পিয়ন করে দিলেন এ ক্যারিবিয়ান। ৮ রানে জীবন পাওয়া চার্লস করলেন ৫২ বলে ৫ ছক্কা ও ৭ চারে ৭৯ রান। ওদিকে মইন আলি অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ২ চারে ও ১ ছক্কায় ২৫ রানে। ৪০ বলে ৭২ রানের অপরাজিত জুটি তাদের।
ময়েশ্চার থাকা উইকেটে আগে ব্যাট করতে চায়নি কুমিল্লা। তাই টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি ইমরুল কায়েস। তার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল তা প্রমাণ করলেন সিলেটের ব্যাটাররা। শুরুর তিন ওভারেই ২ উইকেট পড়ে যায়। তৌহিদ হৃদয় ও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা উইকেটের বলের গতি না বুঝে আউট হয়েছেন। হৃদয় ফিরলেন তানভীরের জোরের ওপর করা বলে বোল্ড হয়ে আর শততম ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে নামা মাশরাফী তিনে নেমে আন্দ্রে রাসেলের সেøায়ারে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দেন কাভারে। ২ উইকেট হারানোয় রানটা খুব বেশি হয়নি সিলেটের। প্রথম পাওয়ার প্লেতে এসেছে মাত্র ৪২ রান। তবে জুটি দাঁড় করান শান্ত ও মুশফিক। ধীরে শুরু করে তারা তৃতীয় উইকেট জুটিতে করেন ৫৬ বলে ৭৯ রান। ১৩তম ওভারে দলীয় ১০৫ রানে ১২তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি করে শান্ত আউট হলে থামে এ জুটি। ৪৫ বলে ১ ছক্কা ও ৯ চারে ৬৪ রান করে বোল্ড হন শান্ত। এর আগে দুবার জীবন পান। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ফাইন লেগে ২৯ রানে মোস্তাফিজ তার ক্যাচ ফেলেন। পরে ৩৭ রানে ইমরুল তার ক্যাচ ফেললে দ্বিতীয় সুযোগ পান। শান্তর বিদায়ে সিলেটের ইনিংস টেনে নেন মুশফিক একাই। যোগ্য সঙ্গ না পেলেও স্ট্রাইক নিয়ে খেলে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৮ বলে ৭৪ রানে। মুশফিকের ক্যারিয়ারের ৩১তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি। শেষ পাঁচ ওভারে সিলেট ৫০ রান তোলে যার ৩৮ রান আসে মুশফিকের ব্যাটেই।
রান তাড়ায় কুমিল্লার শুরুটা হয় দুর্দান্ত। দ্বিতীয় ওভারে লিটন দাস ও সুনিল নারাইন মিলে ২১ রান নেন। তরুণ তানজিম সাকিবকে দুই ব্যাটারই একটি করে ছক্কা ও চার মারেন। কুমিল্লার দারুণ মোমেন্টাম মুহূর্তেই ঘুরে যায় সিলেটের দিকে। পরপর দুই ওভারে নারাইন ১০ ও ২ রান করা ইমরুলকে ফেরত পাঠায় সিলেট। টানা দুই উইকেট হারিয়েও দমে যাননি লিটন। একপ্রান্ত থেকে ওভারপ্রতি একটি চার বা ছক্কা তোলার চেষ্টায় সফল হচ্ছিলেন। ওদিকে মাত্র ৮ রানে জনসন চার্লসের ক্যাচ ফেলে সিলেটের বিপদ বাড়ান রুবেল হোসেন। জীবন পেয়ে আর ভুল করেননি চার্লস। সাবধানী ব্যাটিংয়ে লিটনকে সঙ্গ দেন ভালোভাবেই। ৫৭ বলে ৭০ রানের দারুণ জুটি গড়ে এগোচ্ছিলেন তারা কিন্তু নাজমুল শান্তর অসাধারণ এক ক্যাচে থামেন লিটন। রুবেলের বলে পুল করে ছক্কার চেষ্টায় ছিলেন লিটন কিন্তু ডিপ ফাইন লেগে অনেকটা দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন শান্ত। ক্যাচ মিসের ম্যাচে তার এ কীর্তিটা ছিল দেখার মতো। তাই ক্যাচ ধরে শান্তর উদযাপনও ছিল ব্যতিক্রম। লিটন ফিরলেও বিপদ কাটছিল না সিলেটের। উইকেটে থাকা জনসন চার্লসের সঙ্গে মইন আলি ও আন্দ্রে রাসেল তখনো উইকেটে। শেষ পর্যন্ত রাসেলকে আর নামতে হয়নি। চার্লস-মইনেই চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলে কুমিল্লা।
ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতে এসে জনসন চার্লস বলেছেন, ‘এটা ২০০ রানের উইকেট ছিল।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও ট্রফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের এ ঘাটতির কথা, ‘এইটা ২০০ রানের উইকেট ছিল। আমরা যেভাবে ক্যাচ ফেলেছি আর মিস ফিল্ডিং করেছি তাতে ওদের ২০০ রান করা উচিত ছিল। কিন্তু ওদের ইনিংস শেষে যখন দেখি রান পৌনে দুইশোর ঘরে, তখন নিশ্চিত ছিলাম আমরাই জিতব।’ এমনকি শেষ চার ওভারে ৫২ রান যখন লাগত তখনো জয়ের বিশ্বাস ছিল, বলেছেন সালাউদ্দিন, ‘ওদের বোলিং অপশন কমে এসেছিল, হয়তো একটা ভালো ওভার ছিল লুক উডের। আমাদের মইন আলি আর জনসন চার্লস ছিল উইকেটে, ওরা রানটা করে দেবে এ বিশ্বাসটা আমার ছিল।’
সিলেট স্ট্রাইকার্সের তিন বিদেশি ক্রিকেটার রায়ান বার্ল, জর্জ লিন্ডে আর থিসারা পেরেরা মিলে লোয়ার মিডল অর্ডারে করেছেন ২২ রান। থিসারা আর বার্ল মিলে করেছেন তিন ওভার। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা মেনে নিয়েছেন, এখানেই ম্যাচের লাগাম ফসকে গেছে ‘একদমই তাই। আমাদের ব্যাটিংয়ে শান্ত আউট হয়ে যাওয়ার পর সেভাবে আর রান হয়নি। আমাদের ১৫-২০ রান কম হয়েছে। বোলিংয়ে আমাদের একজন বোলার শর্ট যেহেতু আমি বোলিং করছিলাম না। সেখানে তাদের কাছ থেকে পাঁচ ওভারের বোলিং পাইনি। এখানটায় বড় একটা ব্যবধান হয়ে গেছে।’ তবে সবচেয়ে বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে জনসন চার্লসের ক্যাচটা ফেলে দেওয়াতে, ‘চার্লসের ক্যাচটা নিতে পারলে আমাদের একটা সুযোগ থাকত। ও আউট হয়ে গেলে দুদিকে দুজন নতুন ব্যাটসম্যান থাকত। সেট ব্যাটসম্যানকে বল করার চেয়ে নতুন ব্যাটসম্যানকে বল করা সহজ।’
চার ওভারে যখন ৫২ রান লাগে, তখন রুবেল হোসেন করতে এলেন তার চতুর্থ ওভার। দিয়েছেন ২৩ রান। ওখানেই ম্যাচটা ফসকে গেল কি না এমন প্রশ্নে মাশরাফীর উত্তর, ‘রুবেলই কিন্তু আমাদের ম্যাচে ফিরিয়েছে। সে অভিজ্ঞ বোলার, কখন কী করতে হবে সে জানে। তবে ওর জায়গায় অন্য কেউ হলেও একই ব্যাপারই হতো। আমাদের বোলিং অপশনও সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।’
এবারই প্রথম বিপিএলের ফাইনালে হারলেন মাশরাফী। পঞ্চম ফাইনালে এসে। ফাইনালের পর বললেন, ‘কখনো না কখনো তো এটা হতোই। ভালো হয়েছে এবারই হলো। আমরা খুব সীমাবদ্ধ বাজেটে দল গড়েছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল না ফাইনালে খেলব। সব মিলিয়ে সবার পারফরম্যান্সে খুশি। নিজেও উপভোগ করেছি, তরুণরাও ভালো করেছে।’
ছয়বার বিপিএলে অংশ নিয়ে চারবার শিরোপা জিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস নিজেদের নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। তাদের প্রথম শিরোপাটা এসেছিল মাশরাফীর হাত ধরে। ফাইনালে প্রথম হারের অভিজ্ঞতাও হলো সেই কুমিল্লার কাছেই।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়তা নিয়ে বিদেশিদের চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। সম্প্রতি বিদেশি কূটনীতিকদের সফর কিংবা দেশে থাকা বিভিন্ন দেশের দূতদের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া মানবাধিকারের বিষয়েও তারা সোচ্চার। এ অবস্থায় বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দেওয়া, দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার করা ও সংলাপে বসে সমস্যার সমাধানএসব কিছুতেই রাজি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক তা সরকার চায়। তাই যতটুকু ছাড় সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব সবকিছুই দেওয়া হবে বলে বিদেশিদের জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিদেশিদের কাছে এ বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বোঝাতে চান, তার এ বক্তব্য কথার কথা নয়, অর্থবোধক।
এদিকে বিএনপিকে সংবিধানসম্মতভাবে সব সুযোগ দেওয়ার মনোভাব প্রদর্শন করা আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্য এক পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। ‘তৃণমূল বিএনপি’কে নিবন্ধন দিয়ে সরকার বিএনপির ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করেও রাখতে চায়। গতকাল দলটিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে গত বছরের আগস্ট থেকে বিএনপি সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করে আসছে। ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক উত্তাপ ছড়ায়। একপর্যায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির সদস্যরা। এখন পর্যন্ত হামলা, সংঘর্ষে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। কার্যত দুই দলই এখনো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
সম্প্রতি বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে রাজপথে স্পেস দেওয়া, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা-মামলা না করা, পুরনো মামলা নিষ্পত্তি ও সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে ক্ষমতাসীনদের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সফরে আসা প্রতিনিধিরা।
তারা বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে পুরনো মামলাগুলো কীভাবে মীমাংসা করা যায় সে ব্যাপারে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব নেতার যোগাযোগ রয়েছে সেসব নেতাকে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শুরুর জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে অফলাইন, অনলাইন অথবা সাইডলাইনে আলোচনা করে বিএনপির মনোভাব জানার চেষ্টা করছে সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, সাবেক আমলা রাশিদুল আলম, গওহর রিজভী ও কবির বিন আনোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ কাজগুলো করবেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে থাকবেন দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
অন্য একটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ইতিমধ্যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতাদের নামে যেসব মামলা আছে সেগুলোর ব্যাপারে জেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে জমা দেওয়ার।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিলে নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাজনীতিতে যে অস্থিরতা আছে সে বিষয়ে তিনিও উদ্যোগ নিতে পারেন। সে উদ্যোগে বিএনপি সাড়া দেবে বলে তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়িত্ব পালনের সময় নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তাই তার উদ্যোগে সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে ওই নেতারা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবেএটা আওয়ামী লীগও চায়। তবে সংবিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে কারও কোনো আবদার রক্ষা করার ঘোর বিপক্ষে দলের শীর্ষ নেতারা। ঢাকা সফরে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। এর জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপের ব্যাপারে দলটি ইতিবাচক। এটাও জানিয়েছে যে, বিএনপি সংলাপে বসতে অনাগ্রহী।
অবশ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির বাসভবনে এক বৈঠকে বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা সায় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইইউভুক্ত সাতটি দেশের দূতদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে মত জানিয়েছে। সেখানে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ইইউ বেশ কিছু লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরলে আওয়ামী লীগ নেতারা দলের অবস্থান জানান। কিন্তু সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ সরকারের বা আওয়ামী লীগের হাতে নেই বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদল।
ইইউর সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, দেশের ব্যবসাবাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে প্রসঙ্গহীনভাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে দল (বিএনপি) রাষ্ট্রপতির সংলাপকে উপেক্ষা করে। নতুন নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে দুবার সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা আসেনি। সংলাপের বিষয়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপি অনাগ্রহী।’
এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা। বুধবার তারা দুজন আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাদের। ওই বৈঠকে ডেরেক শোলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ডেরেক শোলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব দেন। বিনয় খাতরা শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থার কথা জানান। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আস্থাশীল দাবি করলেও বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে আরও সহনশীল হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে দ্বিমত করেননি ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা।
গতকাল ইইউর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউ তাদের কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তারা চায় আগামী নির্বাচন যাতে সবার অংশগ্রহণে হয়। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না এমন কথাও তারা বলেছে।’
সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে আওয়ামী লীগকে অনুরোধ করেনি ইইউ। রাজনীতিতে সবসময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে। তারা আমাদের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, তারা আমাদের বন্ধু দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।’
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আমিও ছিলাম, আমি নোট নেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না খেয়াল করিনি।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার আভাস দেখতে পেয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তৎপর হয়েছে। স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে ব্যবসাবাণিজ্যেরও ক্ষতি হবে। এ ধারণা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো ক্ষমতাসীনদের অবহিত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। আগামী জুনের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, ইইউ রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণেই তারা প্রাতরাশে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা (ইইউ) আলোচনা করতে চায়। এ জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সবকিছুতে সবসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকি।’
এর আগে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং ডিসেম্বরের শুরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দলটির কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাও ছিলেন। এসব বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
ইইউ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় : কাদের
বাসস জানায়, গতকাল ইইউ দূতদের সঙ্গে বৈঠকের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইইউর সাতটি দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আজকে বৈঠক করা। তারা চায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।’
‘ইইউ আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বলছে, এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের মতামত কী’এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার বক্তব্যে বলেছেন; আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সবধরনের সহযোগিতা করবে। একই সঙ্গে আমরা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
হার্টের রিং, ভালভ ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার, অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাইয়ের সুতা, এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের ফিল্ম, ইসিজি রোলসহ বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকট দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানিকারকরা। ফলে গত চার মাসে এসব পণ্যের আমদানি ৪০-৫০ শতাংশ কমেছে। এদিকে আমদানিকারকদের কাছে থাকা মজুদও শেষ হয়ে আসছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে হার্টের রিং, ভালভ ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার, অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাইয়ের সুতা, এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের ফিল্ম, ইসিজি রোল, আল্ট্রাসনো পেপার, ডায়াবেটিক মাপার স্ট্রিপস, ব্লাড ও ইউরিন ব্যাগ, ডায়ালাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, অক্সিজেনেটর মেশিন, স্পাইনাল কর্ড নিডল, ডায়াগনসিস কেমিক্যাল ও মেডিকেল বর্জ্য পরিশোধনের ডিসপোজেবল সরঞ্জামাদির। এর মধ্যে কিছু কিছু পণ্য আমদানি একেবারেই বন্ধ রয়েছে। যেমন উন্নতমানের ট্রিপল ও ডাবল ব্লাড ব্যাগ, অক্সিজেনেটর মেশিন, স্পাইনাল কর্ড নিডল ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার।
চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো হাসপাতালে কিট, কেমিক্যাল ও রি-এজেন্ট না থাকায় সেসব পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসের অভাবে অনেক হাসপাতালেই বন্ধ রয়েছে বড় ও শিশুদের হার্ট সার্জারি। ফিল্মের অভাবে এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যান পরীক্ষার সংখ্য সীমিত করা হয়েছে। ব্লাড ব্যাগের অভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এসব চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহ সংকট থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি সব ধরনের পণ্যের দাম ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, তাদের কাছে থাকা কিছু কিছু পণ্যের মজুদ শেষ হয়ে এসেছে। প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারলে আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে তারা বাজারে এসব পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংকট সমাধানে ডায়াগনসিস ও সার্জারিসহ সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানির জন্য সুযোগ দিতে হবে। আমদানিকারকরা যাতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে রোগীরা দুর্ভোগ পোহাবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড আমদানি কমে অর্ধেক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জানুয়ারির শুরু থেকে কিছু এলসি নিচ্ছে ব্যাংক। এভাবেও যদি নেয়, তাহলেও আশা করছি ভবিষ্যতে চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিতে বড় ধরনের কোনো সংকট হবে না।’
হার্ট সার্জারির সামগ্রীর সংকট বেশি, নেই অক্সিজেনেটর মেশিন ও স্পাইনাল কর্ড নিডল : হৃদরোগ চিকিৎসার সরঞ্জামাদি আমদানিকারকরা দেশ রূপান্তরকে জানান, এলসির অভাবে হার্টের রিং, পেস মেকার, হার্ট ভালভ, শিশু হৃদরোগীদের ডিভাইস ক্লোজার ও অক্সিজেনেটর আমদানি করতে পারছেন না। বিশেষ করে অক্সিজেনটের মেশিন গত তিন মাস ধরেই আমদানি বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের এক নির্বাহী পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের ৮০ শতাংশ আমদানিই কমেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এসব রোগীকে হাসপাতাল ভর্তি করছে না। তারা রোগীদের আমাদের নাম্বার দিয়ে সার্জারির জিনিসপত্র নিশ্চিত করে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলছে।
এ কর্মকর্তা জানান, তাদের কার্ডিয়াক সার্জারির ক্ষেত্রে মাসে হার্ট ভালভ লাগে ৮০ ইউনিট। এখন ২০টার মতো দিতে পারছেন। আগে এক চালানে ৮০০-১০০০ পিস আনতেন। গত তিন মাস ধরে কোনো অক্সিজেনেটর নেই। ডিসেম্বরে ১০০ পিসের মতো ডিভাইস ক্লোজার (বাচ্চাদের হার্টে ফুটো থাকলে ব্যবহার করা হয়) এনেছিলেন। সে জন্য এখনো সংকট দেখা দেয়নি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথমদিকে কিছুটা ঠা-া আবহাওয়ার জন্য খুব একটা অপারেশন হয়নি। সে জন্য কিছু রয়ে গেছে। সেগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে। আশা করছেন আগামী ১৫ দিন চালাতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, এ মাসে তার তিনি ১৪-১৫টা হার্ট ভালভ সরবরাহ করতে পেরেছেন। এখনো যা মজুদ আছে সেগুলো দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন চলবে।
এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যান কম হচ্ছে : রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ফিল্মের অভাবে এসব পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগে এক দিনে ২০০-২৫০টা এক্স-রে করা হতো, এখন হচ্ছে ১০০-১৫০টা। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে অন্য সময় ১০০-এর মতো এক্স-রে হতো, এখন ৫০-৬০টা হচ্ছে। সেই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষার রমরমা ব্যবসা চলছে। আগে বুকের এক্স-রে ৫০০-৬০০ টাকা নিত, এখন নিচ্ছে ৮০০ টাকা। এভাবে সব পরীক্ষার দামই বেড়েছে।
ব্লাড ব্যাগ চেয়েচিন্তে চলছে রক্ত পরিসঞ্চালনের কাজ : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে ব্লাড ব্যাগ দিয়েছিল, সেটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার বেসরকারিভাবে মার্কেট থেকে কিনতে গেলেও পাচ্ছি না। মাসে আমাদের ১৬০০-১৮০০ ব্যাগ রক্তের চাহিদা পূরণ করতে হয়। মূলত বেশি লাগে ডাবল ও ট্রিপল ব্যাগ। সিঙ্গেল ব্যাগের চাহিদা কম। আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ধারে এনে যেটুকু চালানো যায়, সেভাবেই চলছি।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ঢাকার একটা সরকারি ইনস্টিটিউট থেকে কিছু ব্লাড ব্যাগ পেয়েছি। সেটা না পেলে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর রক্ত পরিসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেত। এ ছাড়া ইউরো ব্যাগ বা ইউরিনের ব্যাগ ও মেরুদ-ের স্পাইনাল কর্ড পরীক্ষা করার স্পাইনাল কর্ড নিডলও পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুর ও জাপানের মানসম্পন্ন জেএমএস ও ট্রেমো ব্লাড ব্যাগ পাচ্ছি না। প্রতি মাসে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ ব্যাগ লাগে। ট্রিপল ব্যাগ লাগে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার। সরবরাহকারীরা আগে যে পরিমাণ ব্যাগ দিত এখন দিতে পারছে না। এখন যে ব্যাগ আছে তা দিয়ে এক থেকে দেড় মাস চলবে।’
পরীক্ষার কেমিকেল ও কিট সংকট : বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব কেমিক্যাল লাগে, তা আমদানি করে জেনেটিক ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিদিন এসব কেমিক্যাল লাগে। যেমন এক প্যাকেটে ১০০ জনকে পরীক্ষার জন্য ১০০টি রি-এজেন্ট ও সমপরিমাণ কেমিক্যাল থাকে। হাসপাতালগুলোকে এসব পণ্য দুই-তিন হাজার প্যাকেট মজুদ রাখতে হয়। এখন আমরা সেগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছি না।’ এমনকি সুগার, কোলস্টেরল ও হরমোন পরীক্ষার কিট আমদানি কম হচ্ছে বলেও জানান এক আমদানিকারক।
চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধনসামগ্রীর অভাব : রাজধানীর আতিক সার্জিক্যাল অ্যান্ড মেডিকেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, ‘অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা বর্জ্য বহনের জন্য যেসব জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়, সেসব ডিসপোজেবল প্রডাক্ট আমদানি করি। এরকম প্রায় এক হাজার পণ্য রয়েছে। অক্টোবর থেকে এলসির কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। মার্কেটে এখনো মাল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বেশিদিন চলবে না।’
আমদানি কমেছে ৪০-৫০ শতাংশ : বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যেসব মেডিকেল ডিভাইস প্রয়োজন হয়, তার মাত্র ১০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। বাকি ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনো আমদানিকারক যদি বছরে চারটি এলসি করত, সে এখন দুটি এলসি করতে পারছে। অর্থাৎ এলসি কমে অর্ধেকে নেমে গেছে ও আমদানিও কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ‘এলসির অভাবে গড়ে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদির আমদানি ৪০ শতাংশ কমেছে। আমরা যে ব্যাংকে এলসি করি, সেই ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, এত টাকার এলসি করার অনুমতি নেই। আরও কম আনেন। যেখানে আমরা ১ লাখ ডলারের এলসি করতাম, সেখান এখন করছি ২০-২৫ ডলারের এলসি। ফলে আমদানিও কম করতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সার্জিক্যাল মেডিকেল ডিভাইস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে কিছু কিছু এলসি খোলা যাচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এ ছাড়া আমদানিকারকদের চাহিদা অনুপাতে যেন ঔষধ প্রশাসন পণ্য আমদানিতে অনুমতি দেয়, সরকারকে সেটাও দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বহিরাগত শক্তির যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’-এর ‘দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রূপান্তরিত করতে চাই। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশ ও জনগণের পাশে আছে। যেকোনো দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশে দুর্ঘটনা ঘটে তখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যায় এবং উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষী বাহিনী গৌরবজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারকাজে সফলভাবে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তার হৃদয়ের খুব কাছের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদ তার দুই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পুনর্মিলনীতে যোগ দেওয়া একদিকে আমার জন্য বেদনাদায়ক, অন্যদিকে আনন্দের।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তার সঙ্গে ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’ এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার গৃহহীন ভূমিহীনকে ঘর করে দেওয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং দেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণেরও প্রশংসা করেন।
দূরত্ব যতটুকুই হোক, ঢাকায় কোথাও গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে আসার কর্তব্য থাকে এবং এ জন্য যদি মাত্র ঘণ্টাখানেক সময় হাতে থাকে তাহলে আপনি ফেঁসেছেন। আজকে (গতকাল) আমিও সেই দলে। বাংলা মোটর থেকে শাহবাগ পার হয়ে টিএসসির গেট দিয়ে বইমেলায় পৌঁছতেই বরাদ্দের সিংহভাগ সময় শেষ। কিন্তু বইমেলার টান সময় স্বল্পতাকে উপেক্ষা করায়।
বইমেলায় ঢুকতে গিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি রো ধরে লাইন ধরে এগোতে থাকি। লোক বেশি নেই। আমার সামনে পাঁচ-ছয়জন। এর মধ্যে একজনের পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার পেয়ে নিরাপত্তাকর্মী সেগুলো কেড়ে নিতে উদ্যত হলে, ছেলেটি মেলায় যাব না বলে উল্টো দিকে হাঁটা দিল। তার পরেই দাঁড়ানো আরও একটি তরুণও সঙ্গী হলো ছেলেটির। বুঝলাম দুই বন্ধু বইমেলায় এসেছিল বই কিনতে অথবা নিছকই ঘুরতে।
আমিও মূলত ঘুরতে এসেছি। অনেকের দেখি বইমেলায় বই না কিনে ঘুরতে আসা ভিড় নিয়ে আপত্তি আছে। আমার তা লাগে না। বইমেলায় ঘুরতে এসেছি বলতেও চাপ নিই না, যেহেতু মেলা। যেহেতু এখানে কবি-লেখকদের আর তাদের ‘গ্ল্যামারটা’ দেখা যায়। যেহেতু এখানে নতুন বইয়ের, প্রচারের, খোঁজখবরের একটা বিষয় তো থাকে।
এ ছাড়া মেলায় এমনি আসতেই বা ক্ষতি কি!
সামনের দুজন কমে যাওয়ায় আমি এগিয়ে যাই। আর্চওয়ের মেটাল ডিটেক্টর পার হতেই নিরাপত্তাকর্মী কথা নেই, বার্তা নেই গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি চালাতে গেলেই চমকে গিয়ে দু-পা পিছিয়ে যাই। সেও চমকে উঠে আর জিজ্ঞেস করে সিগারেট আছে কি না। আমি বলি নেই। কিন্তু এভাবে গায়ে হাত দেন কেন? জিজ্ঞেস করে নেবেন তো। জবাবে সে হাসে আর বলে যান আপনি।
এদিক-ওদিক বিচ্ছিন্নভাবে হাঁটতে হাঁটতে, দেখতে দেখতে বাথরুম চেপে যায়। খুঁজতে খুঁজতে মেলার শেষপ্রান্তে প্রক্ষালন কেন্দ্র খুঁজে পাই। কিন্তু আজব সেখানে জুতা পরে প্রবেশ করা যাবে না। যেতে হবে তাদের চপ্পল পরে, যেগুলো বহু লোকের পায়ে ঘুরে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। মনে পড়ল ফেইসবুকে এ নিয়ে কথাও বলেছেন কেউ কেউ। ভুলে গিয়েছিলাম। বাথরুম আর সারা হলো না তলপেটে চাপের অস্বস্তি নিয়ে ঘুরতে থাকলাম বইমেলায়।
গত কয়েকটি বইমেলা আয়োজনটিতে গোছানোর প্রয়াস চোখে পড়েছিল। পরিসর যেমন বড় ছিল, তেমনি মেলায় আসা লোকজনই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরতে, বই দেখতে, আড্ডা দিতে পারছিলেন। কিন্তু এবার একেবারেই বিশৃঙ্খল অবস্থা মনে হলো। আরও দেখলাম মেলার বিভিন্ন স্থানে ধূমপান চলছে। বইমেলার গেট থেকে ফিরে যাওয়া তরুণ দুটির কথা মনে পড়ল। কর্তৃপক্ষ ধূমপায়ীদের জন্য কর্নার করে দিতে পারে। অবশ্য এই দেশে নিষিদ্ধ কিছুই তেমন একটা নিষিদ্ধ না যেহেতু, সেই সূত্রে অফিশিয়ালি ক্লিন বা অধূমপায়ী লেখক-পাঠক রেখে এমন চালিয়ে যেতে পারে। তরুণ দুটির ফিরে যাওয়াটিই সঠিক মনে হয়।
কয়েকজন পরিচিত মানুষ পেয়ে তলপেটের অস্বস্তি ভুলে থাকলাম আলাপচারিতায়। ‘আদর্শহীন বইমেলা’, প্রবাসী নারী লেখকের বই প্রত্যাহার ও সেখানে দেশের কোন কোন লেখকের নাম শোনা যাচ্ছে এসবই বলছেন প্রায় সবাই। কিন্তু ভালো কী বই আসছে বা আসবে এসব নিয়ে কোনো আলাপ শুনলাম না। এসব বলতে বলতে সবাই ‘ফুড কোর্টে’র দিকে এগিয়ে গেলাম।
চারদিক ঘেরাও করে বিচিত্র ব্যবস্থায় খাওয়া-দাওয়া চলছে। ভেতরে আর ঢুকতে ইচ্ছে হলো না। পরিচিতদের থেকে বিদায় নিয়ে ভাবলাম কফি খাব। কিন্তু তেমন ভালো কফিরও ব্যবস্থা নেই মেলায়।
ফিরব ভেবে মেলার চারদিক দেখতে দেখতে গেটের দিকে এগোতে থাকি। ১৯৯৯ সালে প্রথম যখন বইমেলায় আসি, তখন মেলার পরিসর ছোট আর ভিড়ের চাপ আরও বেশি অনুভূত হলেও এই ২০২৩ সালে যে বইমেলা দেখছি তাকে আমার কোনো অর্থেই আপন লাগল না। যদিও পরিসর বেড়েছে, চাকচিক্য, প্রচার সবই বেড়েছে কিন্তু গুণিতক হারে যেটা বেড়েছে সেটা বিশৃঙ্খলা। মানুষ বইমেলায় ভালো সময় কাটাতে আসবেন তা যেন আয়োজকরা মানতেই পারেন না।
তৃণমূলের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় হোক তা চাচ্ছেন না দলের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় এসব নেতার ব্যাপারে তৃণমূলের যে ক্ষোভ অসন্তোষসেটা যেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে না পৌঁছায় সেজন্যই তারা মতবিনিময় বৈঠক চাচ্ছেন না। এমনকি তাদের অনেকে তদবিরও করছেন যেন মতবিনিময় বৈঠক না হয়। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না তৃণমূলের নেতারা।
২০০১ সাল থেকে বিএনপির পদধারী অথবা সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের তালিকা গত মাসে চেয়ে পাঠান তারেক রহমান। সেই তালিকা এখন কেন্দ্রীয় দপ্তরে।
বিএনপিদলীয় সূত্র বলছে, ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তারেক রহমানের মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব জনপ্রতিনিধিকে সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা এবং চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত জানা। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে আন্দোলন ও নির্বাচনের সার্বিক চিত্রটি জানতে চান তিনি। ১০টি সাংগঠনিক টিমের হয়ে যারা তথ্য সংগ্রহ করেছেনএমন প্রায় ২৮ নেতার সঙ্গে আজ শুক্রবার স্কাইপে বৈঠক করবেন তারেক রহমান।
তথ্য সংগ্রহে যুক্ত দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের তালিকা করার পাশাপাশি তাদের কাছ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা থেকে তৃণমূলের চিত্রও কিছু কিছু পাওয়া গেছে। আজকের বৈঠকে সেসব বিষয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানো হবে। এ ছাড়া ১০ সাংগঠনিক বিভাগে কবে কীভাবে মতবিনিময় সভাগুলো করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকা দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু জানানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ইচ্ছের পর কেউ তদবির করলে সেটা চলে না।’
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৩০৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য রয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ জন। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রয়েছেন ২৩৫ জন। সিটি করপোরেশন ও পৌর মেয়র রয়েছেন ১৮১ জন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১৫৯ জন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ১৩২ জন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা ১৬২ জন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া এবং দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন চান অথচ তৃণমূলের চিত্র তাদের বিরুদ্ধে, মূলত এমন নেতারাই মতবিনিময়ের বিরোধিতা করছেন। এ ছাড়া দলের কয়েক উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ১০-১২ নেতাও বিরোধিতায় সুর মেলাচ্ছেন।
দেশ রূপান্তরের হাতে থাকা তালিকার কয়েক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তারা আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে চান। এমন মতবিনিময় হলে হাইকমান্ডকে (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) যারা (নিজের এলাকায় আধিপত্য থাকা, কোন্দলও না থাকার ইত্যাদি) সাংগঠনিক বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে রেখেছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন হবে। তারা বলছেন, মাঠের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে চান তারা। এ ছাড়া ‘দিনের ভোট রাতে হলে’ কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে সেটি তারা জানাতে চাইছেন।
নরসিংদী-৩ আসন শিবপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হলো বাঘাব, জয়নগর, পুটিয়া, মাছিমপুর, দুলালপুর, আইয়ুবপুর, চক্রধা, সাধারচর, যোশর। এর মধ্যে বতর্মানে দুজন চেয়ারম্যান রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত। তারা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাও।
মাছিমপুরে আবুল হারিছ রিকাবদার ১৯৭৬ সাল থেকে টানা চেয়ারম্যান। প্রবীণ এই নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যদি কথা বলার সুযোগ পাই এবং তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে যদি নেতা নির্বাচন বা মনোনয়ন দেওয়ার ইচ্ছা হাইকমান্ডের থাকে, তাহলে এসব নিয়ে মতামত তুলে ধরব। যদি কথা না শোনেন, তাহলে বলব না। কারণ আমরা যারা কথা বলব, পরে তাদের ওপর হামলা বা মামলা হবে।’
দুই মেয়াদে (২০০৩ ও ২০১৬) আইয়ূবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন আবু তাহের খন্দকার। তিনি শিবপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতিও। গত জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া মঞ্জুর এলাহীকে এবার কেউ প্রার্থী হিসেবে চান না বলে দাবি তার। এই নেতা বলেন, ‘মঞ্জুর এলাহী আগে জাতীয় পার্টি করতেন। এখন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার কর্মকা- কেউ পছন্দ করে না। তারেক রহমান ছাত্রদলের একটি কমিটি দিয়েছেন সেটার বিরোধিতা করে তার লোকজন জেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুল কবির খোকনের বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি পুরো জেলার বিএনপির আসল লোকদের বাদ দিয়ে ভাড়া করা লোকদের দিয়ে কমিটি দিচ্ছেন।’
জানতে চাইলে মঞ্জুর এলাহী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি ছয় মাস হলো। এ সময়ের মধ্যে কোনো কমিটি হয়নি। সুতরাং তাদের অভিযোগ অমূলক।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময়ই দলের হাইকমান্ডের কাছে তৃণমূলের সমস্যা তুলে ধরতে চাই। বলার সুযোগ পেলে অনেক নেতার সত্যিকারের চরিত্র উদঘাটন হবে। আবার আমরা যারা এই সময়ে ভোট করে জিতেছি, তারাও ভোটে জেতার কৌশল কী তা বলতে পারব।’
হারুনুর রশিদ আজাদ ২০০৪ ও ২০১১ সালে নোয়াখালী সদরের পৌর মেয়র ছিলেন। পরে বিএনপির বিরোধীদলীয় সাবেক হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পৌর ছাত্রদলের সভাপতি থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত রাজনীতি করে আসা এই নেতার নাম যাতে জনপ্রতিনিধির তালিকায় না আসে সেই তদবির করেছেন দলের প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান। পরে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে তালিকায় তার নাম ওঠে।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।