
সরকারি সহায়তা পান না এমন ১ কোটি পরিবারকে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। রমজানের শুরুতেই এই কর্মসূচি চালু হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমের আওতায় ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও ২৪ টাকা দরে আটা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (এফএফপি) ১৫ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনা করলে চালের দাম স্থিতিশীল আছে।
চাল ছেঁটে বিভিন্ন নামে বিক্রি বন্ধে আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, চালের জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার মতো কিছু হয়নি। সীমিত আকারে আমদানিও হচ্ছে, কেননা মজুদ সর্বকালের সেরা। ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩০ টন আমন চাল গত বুধবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ টন। কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করতে পারেন। কাজেই কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে।
সাধন চন্দ্র বলেন, খাদ্যের দিক দিয়ে বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশে প্রভাব পড়েনি, আশা করা যায় পড়বে না। বোরোতেও বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও জানান, ১ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলবে। ওএমএস চলমান থাকবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়তা নিয়ে বিদেশিদের চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। সম্প্রতি বিদেশি কূটনীতিকদের সফর কিংবা দেশে থাকা বিভিন্ন দেশের দূতদের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া মানবাধিকারের বিষয়েও তারা সোচ্চার। এ অবস্থায় বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দেওয়া, দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার করা ও সংলাপে বসে সমস্যার সমাধানএসব কিছুতেই রাজি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক তা সরকার চায়। তাই যতটুকু ছাড় সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব সবকিছুই দেওয়া হবে বলে বিদেশিদের জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিদেশিদের কাছে এ বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বোঝাতে চান, তার এ বক্তব্য কথার কথা নয়, অর্থবোধক।
এদিকে বিএনপিকে সংবিধানসম্মতভাবে সব সুযোগ দেওয়ার মনোভাব প্রদর্শন করা আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্য এক পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। ‘তৃণমূল বিএনপি’কে নিবন্ধন দিয়ে সরকার বিএনপির ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করেও রাখতে চায়। গতকাল দলটিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে গত বছরের আগস্ট থেকে বিএনপি সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করে আসছে। ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক উত্তাপ ছড়ায়। একপর্যায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির সদস্যরা। এখন পর্যন্ত হামলা, সংঘর্ষে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। কার্যত দুই দলই এখনো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
সম্প্রতি বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে রাজপথে স্পেস দেওয়া, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা-মামলা না করা, পুরনো মামলা নিষ্পত্তি ও সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে ক্ষমতাসীনদের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সফরে আসা প্রতিনিধিরা।
তারা বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে পুরনো মামলাগুলো কীভাবে মীমাংসা করা যায় সে ব্যাপারে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব নেতার যোগাযোগ রয়েছে সেসব নেতাকে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শুরুর জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে অফলাইন, অনলাইন অথবা সাইডলাইনে আলোচনা করে বিএনপির মনোভাব জানার চেষ্টা করছে সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, সাবেক আমলা রাশিদুল আলম, গওহর রিজভী ও কবির বিন আনোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ কাজগুলো করবেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে থাকবেন দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
অন্য একটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ইতিমধ্যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতাদের নামে যেসব মামলা আছে সেগুলোর ব্যাপারে জেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে জমা দেওয়ার।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিলে নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাজনীতিতে যে অস্থিরতা আছে সে বিষয়ে তিনিও উদ্যোগ নিতে পারেন। সে উদ্যোগে বিএনপি সাড়া দেবে বলে তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়িত্ব পালনের সময় নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তাই তার উদ্যোগে সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে ওই নেতারা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবেএটা আওয়ামী লীগও চায়। তবে সংবিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে কারও কোনো আবদার রক্ষা করার ঘোর বিপক্ষে দলের শীর্ষ নেতারা। ঢাকা সফরে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। এর জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপের ব্যাপারে দলটি ইতিবাচক। এটাও জানিয়েছে যে, বিএনপি সংলাপে বসতে অনাগ্রহী।
অবশ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির বাসভবনে এক বৈঠকে বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা সায় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইইউভুক্ত সাতটি দেশের দূতদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে মত জানিয়েছে। সেখানে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ইইউ বেশ কিছু লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরলে আওয়ামী লীগ নেতারা দলের অবস্থান জানান। কিন্তু সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ সরকারের বা আওয়ামী লীগের হাতে নেই বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদল।
ইইউর সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, দেশের ব্যবসাবাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে প্রসঙ্গহীনভাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে দল (বিএনপি) রাষ্ট্রপতির সংলাপকে উপেক্ষা করে। নতুন নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে দুবার সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা আসেনি। সংলাপের বিষয়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপি অনাগ্রহী।’
এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা। বুধবার তারা দুজন আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাদের। ওই বৈঠকে ডেরেক শোলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ডেরেক শোলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব দেন। বিনয় খাতরা শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থার কথা জানান। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আস্থাশীল দাবি করলেও বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে আরও সহনশীল হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে দ্বিমত করেননি ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা।
গতকাল ইইউর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউ তাদের কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তারা চায় আগামী নির্বাচন যাতে সবার অংশগ্রহণে হয়। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না এমন কথাও তারা বলেছে।’
সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে আওয়ামী লীগকে অনুরোধ করেনি ইইউ। রাজনীতিতে সবসময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে। তারা আমাদের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, তারা আমাদের বন্ধু দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।’
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আমিও ছিলাম, আমি নোট নেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না খেয়াল করিনি।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার আভাস দেখতে পেয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তৎপর হয়েছে। স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে ব্যবসাবাণিজ্যেরও ক্ষতি হবে। এ ধারণা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো ক্ষমতাসীনদের অবহিত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। আগামী জুনের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, ইইউ রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণেই তারা প্রাতরাশে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা (ইইউ) আলোচনা করতে চায়। এ জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সবকিছুতে সবসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকি।’
এর আগে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং ডিসেম্বরের শুরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দলটির কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাও ছিলেন। এসব বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
ইইউ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় : কাদের
বাসস জানায়, গতকাল ইইউ দূতদের সঙ্গে বৈঠকের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইইউর সাতটি দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আজকে বৈঠক করা। তারা চায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।’
‘ইইউ আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বলছে, এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের মতামত কী’এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার বক্তব্যে বলেছেন; আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সবধরনের সহযোগিতা করবে। একই সঙ্গে আমরা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
হার্টের রিং, ভালভ ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার, অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাইয়ের সুতা, এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের ফিল্ম, ইসিজি রোলসহ বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকট দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানিকারকরা। ফলে গত চার মাসে এসব পণ্যের আমদানি ৪০-৫০ শতাংশ কমেছে। এদিকে আমদানিকারকদের কাছে থাকা মজুদও শেষ হয়ে আসছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে হার্টের রিং, ভালভ ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার, অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাইয়ের সুতা, এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের ফিল্ম, ইসিজি রোল, আল্ট্রাসনো পেপার, ডায়াবেটিক মাপার স্ট্রিপস, ব্লাড ও ইউরিন ব্যাগ, ডায়ালাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, অক্সিজেনেটর মেশিন, স্পাইনাল কর্ড নিডল, ডায়াগনসিস কেমিক্যাল ও মেডিকেল বর্জ্য পরিশোধনের ডিসপোজেবল সরঞ্জামাদির। এর মধ্যে কিছু কিছু পণ্য আমদানি একেবারেই বন্ধ রয়েছে। যেমন উন্নতমানের ট্রিপল ও ডাবল ব্লাড ব্যাগ, অক্সিজেনেটর মেশিন, স্পাইনাল কর্ড নিডল ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার।
চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো হাসপাতালে কিট, কেমিক্যাল ও রি-এজেন্ট না থাকায় সেসব পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসের অভাবে অনেক হাসপাতালেই বন্ধ রয়েছে বড় ও শিশুদের হার্ট সার্জারি। ফিল্মের অভাবে এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যান পরীক্ষার সংখ্য সীমিত করা হয়েছে। ব্লাড ব্যাগের অভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এসব চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহ সংকট থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি সব ধরনের পণ্যের দাম ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, তাদের কাছে থাকা কিছু কিছু পণ্যের মজুদ শেষ হয়ে এসেছে। প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারলে আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে তারা বাজারে এসব পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংকট সমাধানে ডায়াগনসিস ও সার্জারিসহ সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানির জন্য সুযোগ দিতে হবে। আমদানিকারকরা যাতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে রোগীরা দুর্ভোগ পোহাবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড আমদানি কমে অর্ধেক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জানুয়ারির শুরু থেকে কিছু এলসি নিচ্ছে ব্যাংক। এভাবেও যদি নেয়, তাহলেও আশা করছি ভবিষ্যতে চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিতে বড় ধরনের কোনো সংকট হবে না।’
হার্ট সার্জারির সামগ্রীর সংকট বেশি, নেই অক্সিজেনেটর মেশিন ও স্পাইনাল কর্ড নিডল : হৃদরোগ চিকিৎসার সরঞ্জামাদি আমদানিকারকরা দেশ রূপান্তরকে জানান, এলসির অভাবে হার্টের রিং, পেস মেকার, হার্ট ভালভ, শিশু হৃদরোগীদের ডিভাইস ক্লোজার ও অক্সিজেনেটর আমদানি করতে পারছেন না। বিশেষ করে অক্সিজেনটের মেশিন গত তিন মাস ধরেই আমদানি বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের এক নির্বাহী পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের ৮০ শতাংশ আমদানিই কমেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এসব রোগীকে হাসপাতাল ভর্তি করছে না। তারা রোগীদের আমাদের নাম্বার দিয়ে সার্জারির জিনিসপত্র নিশ্চিত করে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলছে।
এ কর্মকর্তা জানান, তাদের কার্ডিয়াক সার্জারির ক্ষেত্রে মাসে হার্ট ভালভ লাগে ৮০ ইউনিট। এখন ২০টার মতো দিতে পারছেন। আগে এক চালানে ৮০০-১০০০ পিস আনতেন। গত তিন মাস ধরে কোনো অক্সিজেনেটর নেই। ডিসেম্বরে ১০০ পিসের মতো ডিভাইস ক্লোজার (বাচ্চাদের হার্টে ফুটো থাকলে ব্যবহার করা হয়) এনেছিলেন। সে জন্য এখনো সংকট দেখা দেয়নি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথমদিকে কিছুটা ঠা-া আবহাওয়ার জন্য খুব একটা অপারেশন হয়নি। সে জন্য কিছু রয়ে গেছে। সেগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে। আশা করছেন আগামী ১৫ দিন চালাতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, এ মাসে তার তিনি ১৪-১৫টা হার্ট ভালভ সরবরাহ করতে পেরেছেন। এখনো যা মজুদ আছে সেগুলো দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন চলবে।
এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যান কম হচ্ছে : রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ফিল্মের অভাবে এসব পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগে এক দিনে ২০০-২৫০টা এক্স-রে করা হতো, এখন হচ্ছে ১০০-১৫০টা। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে অন্য সময় ১০০-এর মতো এক্স-রে হতো, এখন ৫০-৬০টা হচ্ছে। সেই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষার রমরমা ব্যবসা চলছে। আগে বুকের এক্স-রে ৫০০-৬০০ টাকা নিত, এখন নিচ্ছে ৮০০ টাকা। এভাবে সব পরীক্ষার দামই বেড়েছে।
ব্লাড ব্যাগ চেয়েচিন্তে চলছে রক্ত পরিসঞ্চালনের কাজ : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে ব্লাড ব্যাগ দিয়েছিল, সেটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার বেসরকারিভাবে মার্কেট থেকে কিনতে গেলেও পাচ্ছি না। মাসে আমাদের ১৬০০-১৮০০ ব্যাগ রক্তের চাহিদা পূরণ করতে হয়। মূলত বেশি লাগে ডাবল ও ট্রিপল ব্যাগ। সিঙ্গেল ব্যাগের চাহিদা কম। আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ধারে এনে যেটুকু চালানো যায়, সেভাবেই চলছি।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ঢাকার একটা সরকারি ইনস্টিটিউট থেকে কিছু ব্লাড ব্যাগ পেয়েছি। সেটা না পেলে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর রক্ত পরিসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেত। এ ছাড়া ইউরো ব্যাগ বা ইউরিনের ব্যাগ ও মেরুদ-ের স্পাইনাল কর্ড পরীক্ষা করার স্পাইনাল কর্ড নিডলও পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুর ও জাপানের মানসম্পন্ন জেএমএস ও ট্রেমো ব্লাড ব্যাগ পাচ্ছি না। প্রতি মাসে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ ব্যাগ লাগে। ট্রিপল ব্যাগ লাগে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার। সরবরাহকারীরা আগে যে পরিমাণ ব্যাগ দিত এখন দিতে পারছে না। এখন যে ব্যাগ আছে তা দিয়ে এক থেকে দেড় মাস চলবে।’
পরীক্ষার কেমিকেল ও কিট সংকট : বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব কেমিক্যাল লাগে, তা আমদানি করে জেনেটিক ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিদিন এসব কেমিক্যাল লাগে। যেমন এক প্যাকেটে ১০০ জনকে পরীক্ষার জন্য ১০০টি রি-এজেন্ট ও সমপরিমাণ কেমিক্যাল থাকে। হাসপাতালগুলোকে এসব পণ্য দুই-তিন হাজার প্যাকেট মজুদ রাখতে হয়। এখন আমরা সেগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছি না।’ এমনকি সুগার, কোলস্টেরল ও হরমোন পরীক্ষার কিট আমদানি কম হচ্ছে বলেও জানান এক আমদানিকারক।
চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধনসামগ্রীর অভাব : রাজধানীর আতিক সার্জিক্যাল অ্যান্ড মেডিকেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, ‘অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা বর্জ্য বহনের জন্য যেসব জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়, সেসব ডিসপোজেবল প্রডাক্ট আমদানি করি। এরকম প্রায় এক হাজার পণ্য রয়েছে। অক্টোবর থেকে এলসির কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। মার্কেটে এখনো মাল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বেশিদিন চলবে না।’
আমদানি কমেছে ৪০-৫০ শতাংশ : বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যেসব মেডিকেল ডিভাইস প্রয়োজন হয়, তার মাত্র ১০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। বাকি ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনো আমদানিকারক যদি বছরে চারটি এলসি করত, সে এখন দুটি এলসি করতে পারছে। অর্থাৎ এলসি কমে অর্ধেকে নেমে গেছে ও আমদানিও কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ‘এলসির অভাবে গড়ে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদির আমদানি ৪০ শতাংশ কমেছে। আমরা যে ব্যাংকে এলসি করি, সেই ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, এত টাকার এলসি করার অনুমতি নেই। আরও কম আনেন। যেখানে আমরা ১ লাখ ডলারের এলসি করতাম, সেখান এখন করছি ২০-২৫ ডলারের এলসি। ফলে আমদানিও কম করতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সার্জিক্যাল মেডিকেল ডিভাইস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে কিছু কিছু এলসি খোলা যাচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এ ছাড়া আমদানিকারকদের চাহিদা অনুপাতে যেন ঔষধ প্রশাসন পণ্য আমদানিতে অনুমতি দেয়, সরকারকে সেটাও দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বহিরাগত শক্তির যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’-এর ‘দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রূপান্তরিত করতে চাই। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশ ও জনগণের পাশে আছে। যেকোনো দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশে দুর্ঘটনা ঘটে তখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যায় এবং উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষী বাহিনী গৌরবজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারকাজে সফলভাবে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তার হৃদয়ের খুব কাছের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদ তার দুই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পুনর্মিলনীতে যোগ দেওয়া একদিকে আমার জন্য বেদনাদায়ক, অন্যদিকে আনন্দের।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তার সঙ্গে ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’ এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার গৃহহীন ভূমিহীনকে ঘর করে দেওয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং দেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণেরও প্রশংসা করেন।
দূরত্ব যতটুকুই হোক, ঢাকায় কোথাও গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে আসার কর্তব্য থাকে এবং এ জন্য যদি মাত্র ঘণ্টাখানেক সময় হাতে থাকে তাহলে আপনি ফেঁসেছেন। আজকে (গতকাল) আমিও সেই দলে। বাংলা মোটর থেকে শাহবাগ পার হয়ে টিএসসির গেট দিয়ে বইমেলায় পৌঁছতেই বরাদ্দের সিংহভাগ সময় শেষ। কিন্তু বইমেলার টান সময় স্বল্পতাকে উপেক্ষা করায়।
বইমেলায় ঢুকতে গিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি রো ধরে লাইন ধরে এগোতে থাকি। লোক বেশি নেই। আমার সামনে পাঁচ-ছয়জন। এর মধ্যে একজনের পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার পেয়ে নিরাপত্তাকর্মী সেগুলো কেড়ে নিতে উদ্যত হলে, ছেলেটি মেলায় যাব না বলে উল্টো দিকে হাঁটা দিল। তার পরেই দাঁড়ানো আরও একটি তরুণও সঙ্গী হলো ছেলেটির। বুঝলাম দুই বন্ধু বইমেলায় এসেছিল বই কিনতে অথবা নিছকই ঘুরতে।
আমিও মূলত ঘুরতে এসেছি। অনেকের দেখি বইমেলায় বই না কিনে ঘুরতে আসা ভিড় নিয়ে আপত্তি আছে। আমার তা লাগে না। বইমেলায় ঘুরতে এসেছি বলতেও চাপ নিই না, যেহেতু মেলা। যেহেতু এখানে কবি-লেখকদের আর তাদের ‘গ্ল্যামারটা’ দেখা যায়। যেহেতু এখানে নতুন বইয়ের, প্রচারের, খোঁজখবরের একটা বিষয় তো থাকে।
এ ছাড়া মেলায় এমনি আসতেই বা ক্ষতি কি!
সামনের দুজন কমে যাওয়ায় আমি এগিয়ে যাই। আর্চওয়ের মেটাল ডিটেক্টর পার হতেই নিরাপত্তাকর্মী কথা নেই, বার্তা নেই গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি চালাতে গেলেই চমকে গিয়ে দু-পা পিছিয়ে যাই। সেও চমকে উঠে আর জিজ্ঞেস করে সিগারেট আছে কি না। আমি বলি নেই। কিন্তু এভাবে গায়ে হাত দেন কেন? জিজ্ঞেস করে নেবেন তো। জবাবে সে হাসে আর বলে যান আপনি।
এদিক-ওদিক বিচ্ছিন্নভাবে হাঁটতে হাঁটতে, দেখতে দেখতে বাথরুম চেপে যায়। খুঁজতে খুঁজতে মেলার শেষপ্রান্তে প্রক্ষালন কেন্দ্র খুঁজে পাই। কিন্তু আজব সেখানে জুতা পরে প্রবেশ করা যাবে না। যেতে হবে তাদের চপ্পল পরে, যেগুলো বহু লোকের পায়ে ঘুরে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। মনে পড়ল ফেইসবুকে এ নিয়ে কথাও বলেছেন কেউ কেউ। ভুলে গিয়েছিলাম। বাথরুম আর সারা হলো না তলপেটে চাপের অস্বস্তি নিয়ে ঘুরতে থাকলাম বইমেলায়।
গত কয়েকটি বইমেলা আয়োজনটিতে গোছানোর প্রয়াস চোখে পড়েছিল। পরিসর যেমন বড় ছিল, তেমনি মেলায় আসা লোকজনই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরতে, বই দেখতে, আড্ডা দিতে পারছিলেন। কিন্তু এবার একেবারেই বিশৃঙ্খল অবস্থা মনে হলো। আরও দেখলাম মেলার বিভিন্ন স্থানে ধূমপান চলছে। বইমেলার গেট থেকে ফিরে যাওয়া তরুণ দুটির কথা মনে পড়ল। কর্তৃপক্ষ ধূমপায়ীদের জন্য কর্নার করে দিতে পারে। অবশ্য এই দেশে নিষিদ্ধ কিছুই তেমন একটা নিষিদ্ধ না যেহেতু, সেই সূত্রে অফিশিয়ালি ক্লিন বা অধূমপায়ী লেখক-পাঠক রেখে এমন চালিয়ে যেতে পারে। তরুণ দুটির ফিরে যাওয়াটিই সঠিক মনে হয়।
কয়েকজন পরিচিত মানুষ পেয়ে তলপেটের অস্বস্তি ভুলে থাকলাম আলাপচারিতায়। ‘আদর্শহীন বইমেলা’, প্রবাসী নারী লেখকের বই প্রত্যাহার ও সেখানে দেশের কোন কোন লেখকের নাম শোনা যাচ্ছে এসবই বলছেন প্রায় সবাই। কিন্তু ভালো কী বই আসছে বা আসবে এসব নিয়ে কোনো আলাপ শুনলাম না। এসব বলতে বলতে সবাই ‘ফুড কোর্টে’র দিকে এগিয়ে গেলাম।
চারদিক ঘেরাও করে বিচিত্র ব্যবস্থায় খাওয়া-দাওয়া চলছে। ভেতরে আর ঢুকতে ইচ্ছে হলো না। পরিচিতদের থেকে বিদায় নিয়ে ভাবলাম কফি খাব। কিন্তু তেমন ভালো কফিরও ব্যবস্থা নেই মেলায়।
ফিরব ভেবে মেলার চারদিক দেখতে দেখতে গেটের দিকে এগোতে থাকি। ১৯৯৯ সালে প্রথম যখন বইমেলায় আসি, তখন মেলার পরিসর ছোট আর ভিড়ের চাপ আরও বেশি অনুভূত হলেও এই ২০২৩ সালে যে বইমেলা দেখছি তাকে আমার কোনো অর্থেই আপন লাগল না। যদিও পরিসর বেড়েছে, চাকচিক্য, প্রচার সবই বেড়েছে কিন্তু গুণিতক হারে যেটা বেড়েছে সেটা বিশৃঙ্খলা। মানুষ বইমেলায় ভালো সময় কাটাতে আসবেন তা যেন আয়োজকরা মানতেই পারেন না।
তৃণমূলের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় হোক তা চাচ্ছেন না দলের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় এসব নেতার ব্যাপারে তৃণমূলের যে ক্ষোভ অসন্তোষসেটা যেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে না পৌঁছায় সেজন্যই তারা মতবিনিময় বৈঠক চাচ্ছেন না। এমনকি তাদের অনেকে তদবিরও করছেন যেন মতবিনিময় বৈঠক না হয়। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না তৃণমূলের নেতারা।
২০০১ সাল থেকে বিএনপির পদধারী অথবা সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের তালিকা গত মাসে চেয়ে পাঠান তারেক রহমান। সেই তালিকা এখন কেন্দ্রীয় দপ্তরে।
বিএনপিদলীয় সূত্র বলছে, ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তারেক রহমানের মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব জনপ্রতিনিধিকে সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা এবং চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত জানা। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে আন্দোলন ও নির্বাচনের সার্বিক চিত্রটি জানতে চান তিনি। ১০টি সাংগঠনিক টিমের হয়ে যারা তথ্য সংগ্রহ করেছেনএমন প্রায় ২৮ নেতার সঙ্গে আজ শুক্রবার স্কাইপে বৈঠক করবেন তারেক রহমান।
তথ্য সংগ্রহে যুক্ত দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের তালিকা করার পাশাপাশি তাদের কাছ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা থেকে তৃণমূলের চিত্রও কিছু কিছু পাওয়া গেছে। আজকের বৈঠকে সেসব বিষয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানো হবে। এ ছাড়া ১০ সাংগঠনিক বিভাগে কবে কীভাবে মতবিনিময় সভাগুলো করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকা দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু জানানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ইচ্ছের পর কেউ তদবির করলে সেটা চলে না।’
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৩০৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য রয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ জন। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রয়েছেন ২৩৫ জন। সিটি করপোরেশন ও পৌর মেয়র রয়েছেন ১৮১ জন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১৫৯ জন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ১৩২ জন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা ১৬২ জন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া এবং দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন চান অথচ তৃণমূলের চিত্র তাদের বিরুদ্ধে, মূলত এমন নেতারাই মতবিনিময়ের বিরোধিতা করছেন। এ ছাড়া দলের কয়েক উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ১০-১২ নেতাও বিরোধিতায় সুর মেলাচ্ছেন।
দেশ রূপান্তরের হাতে থাকা তালিকার কয়েক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তারা আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে চান। এমন মতবিনিময় হলে হাইকমান্ডকে (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) যারা (নিজের এলাকায় আধিপত্য থাকা, কোন্দলও না থাকার ইত্যাদি) সাংগঠনিক বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে রেখেছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন হবে। তারা বলছেন, মাঠের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে চান তারা। এ ছাড়া ‘দিনের ভোট রাতে হলে’ কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে সেটি তারা জানাতে চাইছেন।
নরসিংদী-৩ আসন শিবপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হলো বাঘাব, জয়নগর, পুটিয়া, মাছিমপুর, দুলালপুর, আইয়ুবপুর, চক্রধা, সাধারচর, যোশর। এর মধ্যে বতর্মানে দুজন চেয়ারম্যান রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত। তারা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাও।
মাছিমপুরে আবুল হারিছ রিকাবদার ১৯৭৬ সাল থেকে টানা চেয়ারম্যান। প্রবীণ এই নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যদি কথা বলার সুযোগ পাই এবং তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে যদি নেতা নির্বাচন বা মনোনয়ন দেওয়ার ইচ্ছা হাইকমান্ডের থাকে, তাহলে এসব নিয়ে মতামত তুলে ধরব। যদি কথা না শোনেন, তাহলে বলব না। কারণ আমরা যারা কথা বলব, পরে তাদের ওপর হামলা বা মামলা হবে।’
দুই মেয়াদে (২০০৩ ও ২০১৬) আইয়ূবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন আবু তাহের খন্দকার। তিনি শিবপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতিও। গত জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া মঞ্জুর এলাহীকে এবার কেউ প্রার্থী হিসেবে চান না বলে দাবি তার। এই নেতা বলেন, ‘মঞ্জুর এলাহী আগে জাতীয় পার্টি করতেন। এখন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার কর্মকা- কেউ পছন্দ করে না। তারেক রহমান ছাত্রদলের একটি কমিটি দিয়েছেন সেটার বিরোধিতা করে তার লোকজন জেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুল কবির খোকনের বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি পুরো জেলার বিএনপির আসল লোকদের বাদ দিয়ে ভাড়া করা লোকদের দিয়ে কমিটি দিচ্ছেন।’
জানতে চাইলে মঞ্জুর এলাহী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি ছয় মাস হলো। এ সময়ের মধ্যে কোনো কমিটি হয়নি। সুতরাং তাদের অভিযোগ অমূলক।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময়ই দলের হাইকমান্ডের কাছে তৃণমূলের সমস্যা তুলে ধরতে চাই। বলার সুযোগ পেলে অনেক নেতার সত্যিকারের চরিত্র উদঘাটন হবে। আবার আমরা যারা এই সময়ে ভোট করে জিতেছি, তারাও ভোটে জেতার কৌশল কী তা বলতে পারব।’
হারুনুর রশিদ আজাদ ২০০৪ ও ২০১১ সালে নোয়াখালী সদরের পৌর মেয়র ছিলেন। পরে বিএনপির বিরোধীদলীয় সাবেক হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পৌর ছাত্রদলের সভাপতি থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত রাজনীতি করে আসা এই নেতার নাম যাতে জনপ্রতিনিধির তালিকায় না আসে সেই তদবির করেছেন দলের প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান। পরে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে তালিকায় তার নাম ওঠে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।