
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে এই নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগী ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে হাইকোর্টের আদেশে। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
নির্যাতনের অভিযোগটি তদন্ত করতে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক এবং প্রশাসন ক্যাডারের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করতে বলেছে হাইকোর্ট। কমিটির প্রতিবেদন পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে জমা দিতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ইবি প্রশাসনের করা কমিটির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে দাখিল করতে বলেছে আদালত।
এর আগে গত রবিবার রাতে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে। রাতভর নির্যাতনের পর তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত বুধবার হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। আদালত তাদের বিষয়টি লিখিত আকারে আনতে বলে। এরপর দুই আইনজীবী এ বিষয়ে রিট আবেদন করেন। আদালতে আবেদনের শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে, ভুক্তভোগী আতঙ্কে : ইবি ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে হলেই অবস্থান করছে। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে ফিরে ক্লাস করতে চাই। কিন্তু যেতে ভয় পাচ্ছি। আমার নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে এখনো প্রশাসন থেকে যোগাযোগ করা হয়নি।’
তবে হাইকোর্টের গতকালের আদেশের পর শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অভিযুক্তদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশের পর অভিযুক্তদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার থেকে হলের তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হবে।’ প্রভোস্টের নির্দেশের পর গতকাল সন্ধ্যার পর অভিযুক্ত দুজন হল ছেড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যান বলে জানা গেছে।
এদিকে শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের এই ঘটনার পর ছাত্রীরা গণরুম ছেড়ে বাসায় চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আতঙ্কে ও পারিবারিক চাপে বাধ্য হয়ে তারা বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। এমনই একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে পরিবার জানতে পেরে বাসায় যেতে বলেছে। এজন্য বাসায় যাচ্ছি। এছাড়াও হলে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এমন পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ইবি প্রশাসনের তদন্ত কমিটি শুরু করেনি কাজ : ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে ইবি প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটি এখনো কাজ শুরু করেনি বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা ম-ল গতকাল বলেন, ‘আজ হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল তদন্ত কমিটির সবাই বসব। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সার্বিক বিষয়ে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের বিষয়টা জেনেছি। হাইকোর্ট থেকে আমাদের কাছে একটা নির্দেশনা আসবে। আমি ইতিমধ্যে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ প্রশাসনকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি আগামী রবিবারের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা আসবে। এরপর অফিশিয়ালি লিখিতভাবে হল কর্র্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত ছাত্রীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও সিকিউরিটি অফিসকে জানিয়েছি।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়তা নিয়ে বিদেশিদের চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। সম্প্রতি বিদেশি কূটনীতিকদের সফর কিংবা দেশে থাকা বিভিন্ন দেশের দূতদের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া মানবাধিকারের বিষয়েও তারা সোচ্চার। এ অবস্থায় বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দেওয়া, দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার করা ও সংলাপে বসে সমস্যার সমাধানএসব কিছুতেই রাজি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক তা সরকার চায়। তাই যতটুকু ছাড় সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব সবকিছুই দেওয়া হবে বলে বিদেশিদের জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিদেশিদের কাছে এ বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বোঝাতে চান, তার এ বক্তব্য কথার কথা নয়, অর্থবোধক।
এদিকে বিএনপিকে সংবিধানসম্মতভাবে সব সুযোগ দেওয়ার মনোভাব প্রদর্শন করা আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্য এক পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। ‘তৃণমূল বিএনপি’কে নিবন্ধন দিয়ে সরকার বিএনপির ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করেও রাখতে চায়। গতকাল দলটিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে গত বছরের আগস্ট থেকে বিএনপি সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করে আসছে। ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক উত্তাপ ছড়ায়। একপর্যায়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির সদস্যরা। এখন পর্যন্ত হামলা, সংঘর্ষে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। কার্যত দুই দলই এখনো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
সম্প্রতি বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে রাজপথে স্পেস দেওয়া, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা-মামলা না করা, পুরনো মামলা নিষ্পত্তি ও সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে ক্ষমতাসীনদের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সফরে আসা প্রতিনিধিরা।
তারা বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে পুরনো মামলাগুলো কীভাবে মীমাংসা করা যায় সে ব্যাপারে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব নেতার যোগাযোগ রয়েছে সেসব নেতাকে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শুরুর জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে অফলাইন, অনলাইন অথবা সাইডলাইনে আলোচনা করে বিএনপির মনোভাব জানার চেষ্টা করছে সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, সাবেক আমলা রাশিদুল আলম, গওহর রিজভী ও কবির বিন আনোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ কাজগুলো করবেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে থাকবেন দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
অন্য একটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ইতিমধ্যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতাদের নামে যেসব মামলা আছে সেগুলোর ব্যাপারে জেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে জমা দেওয়ার।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিলে নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাজনীতিতে যে অস্থিরতা আছে সে বিষয়ে তিনিও উদ্যোগ নিতে পারেন। সে উদ্যোগে বিএনপি সাড়া দেবে বলে তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়িত্ব পালনের সময় নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তাই তার উদ্যোগে সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে ওই নেতারা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবেএটা আওয়ামী লীগও চায়। তবে সংবিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে কারও কোনো আবদার রক্ষা করার ঘোর বিপক্ষে দলের শীর্ষ নেতারা। ঢাকা সফরে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। এর জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপের ব্যাপারে দলটি ইতিবাচক। এটাও জানিয়েছে যে, বিএনপি সংলাপে বসতে অনাগ্রহী।
অবশ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির বাসভবনে এক বৈঠকে বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা সায় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইইউভুক্ত সাতটি দেশের দূতদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে মত জানিয়েছে। সেখানে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ইইউ বেশ কিছু লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরলে আওয়ামী লীগ নেতারা দলের অবস্থান জানান। কিন্তু সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ সরকারের বা আওয়ামী লীগের হাতে নেই বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদল।
ইইউর সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, দেশের ব্যবসাবাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে প্রসঙ্গহীনভাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে দল (বিএনপি) রাষ্ট্রপতির সংলাপকে উপেক্ষা করে। নতুন নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে দুবার সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা আসেনি। সংলাপের বিষয়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপি অনাগ্রহী।’
এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা। বুধবার তারা দুজন আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাদের। ওই বৈঠকে ডেরেক শোলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ডেরেক শোলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব দেন। বিনয় খাতরা শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থার কথা জানান। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানান। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আস্থাশীল দাবি করলেও বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে আরও সহনশীল হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে দ্বিমত করেননি ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা।
গতকাল ইইউর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউ তাদের কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তারা চায় আগামী নির্বাচন যাতে সবার অংশগ্রহণে হয়। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না এমন কথাও তারা বলেছে।’
সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে আওয়ামী লীগকে অনুরোধ করেনি ইইউ। রাজনীতিতে সবসময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে। তারা আমাদের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, তারা আমাদের বন্ধু দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।’
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আমিও ছিলাম, আমি নোট নেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না খেয়াল করিনি।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার আভাস দেখতে পেয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তৎপর হয়েছে। স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে ব্যবসাবাণিজ্যেরও ক্ষতি হবে। এ ধারণা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো ক্ষমতাসীনদের অবহিত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। আগামী জুনের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, ইইউ রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণেই তারা প্রাতরাশে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা (ইইউ) আলোচনা করতে চায়। এ জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সবকিছুতে সবসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকি।’
এর আগে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং ডিসেম্বরের শুরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দলটির কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাও ছিলেন। এসব বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
ইইউ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় : কাদের
বাসস জানায়, গতকাল ইইউ দূতদের সঙ্গে বৈঠকের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইইউর সাতটি দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আজকে বৈঠক করা। তারা চায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।’
‘ইইউ আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বলছে, এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের মতামত কী’এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার বক্তব্যে বলেছেন; আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সবধরনের সহযোগিতা করবে। একই সঙ্গে আমরা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
হার্টের রিং, ভালভ ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার, অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাইয়ের সুতা, এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের ফিল্ম, ইসিজি রোলসহ বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকট দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানিকারকরা। ফলে গত চার মাসে এসব পণ্যের আমদানি ৪০-৫০ শতাংশ কমেছে। এদিকে আমদানিকারকদের কাছে থাকা মজুদও শেষ হয়ে আসছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে হার্টের রিং, ভালভ ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার, অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাইয়ের সুতা, এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যানের ফিল্ম, ইসিজি রোল, আল্ট্রাসনো পেপার, ডায়াবেটিক মাপার স্ট্রিপস, ব্লাড ও ইউরিন ব্যাগ, ডায়ালাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, অক্সিজেনেটর মেশিন, স্পাইনাল কর্ড নিডল, ডায়াগনসিস কেমিক্যাল ও মেডিকেল বর্জ্য পরিশোধনের ডিসপোজেবল সরঞ্জামাদির। এর মধ্যে কিছু কিছু পণ্য আমদানি একেবারেই বন্ধ রয়েছে। যেমন উন্নতমানের ট্রিপল ও ডাবল ব্লাড ব্যাগ, অক্সিজেনেটর মেশিন, স্পাইনাল কর্ড নিডল ও শিশু হার্ট রোগীদের ডিভাইস ক্লোজার।
চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো হাসপাতালে কিট, কেমিক্যাল ও রি-এজেন্ট না থাকায় সেসব পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসের অভাবে অনেক হাসপাতালেই বন্ধ রয়েছে বড় ও শিশুদের হার্ট সার্জারি। ফিল্মের অভাবে এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যান পরীক্ষার সংখ্য সীমিত করা হয়েছে। ব্লাড ব্যাগের অভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এসব চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহ সংকট থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি সব ধরনের পণ্যের দাম ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, তাদের কাছে থাকা কিছু কিছু পণ্যের মজুদ শেষ হয়ে এসেছে। প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারলে আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে তারা বাজারে এসব পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংকট সমাধানে ডায়াগনসিস ও সার্জারিসহ সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানির জন্য সুযোগ দিতে হবে। আমদানিকারকরা যাতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে রোগীরা দুর্ভোগ পোহাবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড আমদানি কমে অর্ধেক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জানুয়ারির শুরু থেকে কিছু এলসি নিচ্ছে ব্যাংক। এভাবেও যদি নেয়, তাহলেও আশা করছি ভবিষ্যতে চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিতে বড় ধরনের কোনো সংকট হবে না।’
হার্ট সার্জারির সামগ্রীর সংকট বেশি, নেই অক্সিজেনেটর মেশিন ও স্পাইনাল কর্ড নিডল : হৃদরোগ চিকিৎসার সরঞ্জামাদি আমদানিকারকরা দেশ রূপান্তরকে জানান, এলসির অভাবে হার্টের রিং, পেস মেকার, হার্ট ভালভ, শিশু হৃদরোগীদের ডিভাইস ক্লোজার ও অক্সিজেনেটর আমদানি করতে পারছেন না। বিশেষ করে অক্সিজেনটের মেশিন গত তিন মাস ধরেই আমদানি বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের এক নির্বাহী পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের ৮০ শতাংশ আমদানিই কমেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এসব রোগীকে হাসপাতাল ভর্তি করছে না। তারা রোগীদের আমাদের নাম্বার দিয়ে সার্জারির জিনিসপত্র নিশ্চিত করে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলছে।
এ কর্মকর্তা জানান, তাদের কার্ডিয়াক সার্জারির ক্ষেত্রে মাসে হার্ট ভালভ লাগে ৮০ ইউনিট। এখন ২০টার মতো দিতে পারছেন। আগে এক চালানে ৮০০-১০০০ পিস আনতেন। গত তিন মাস ধরে কোনো অক্সিজেনেটর নেই। ডিসেম্বরে ১০০ পিসের মতো ডিভাইস ক্লোজার (বাচ্চাদের হার্টে ফুটো থাকলে ব্যবহার করা হয়) এনেছিলেন। সে জন্য এখনো সংকট দেখা দেয়নি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথমদিকে কিছুটা ঠা-া আবহাওয়ার জন্য খুব একটা অপারেশন হয়নি। সে জন্য কিছু রয়ে গেছে। সেগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে। আশা করছেন আগামী ১৫ দিন চালাতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, এ মাসে তার তিনি ১৪-১৫টা হার্ট ভালভ সরবরাহ করতে পেরেছেন। এখনো যা মজুদ আছে সেগুলো দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন চলবে।
এক্স-রে, এমআরআই ও সিটিস্ক্যান কম হচ্ছে : রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ফিল্মের অভাবে এসব পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগে এক দিনে ২০০-২৫০টা এক্স-রে করা হতো, এখন হচ্ছে ১০০-১৫০টা। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে অন্য সময় ১০০-এর মতো এক্স-রে হতো, এখন ৫০-৬০টা হচ্ছে। সেই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষার রমরমা ব্যবসা চলছে। আগে বুকের এক্স-রে ৫০০-৬০০ টাকা নিত, এখন নিচ্ছে ৮০০ টাকা। এভাবে সব পরীক্ষার দামই বেড়েছে।
ব্লাড ব্যাগ চেয়েচিন্তে চলছে রক্ত পরিসঞ্চালনের কাজ : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে ব্লাড ব্যাগ দিয়েছিল, সেটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার বেসরকারিভাবে মার্কেট থেকে কিনতে গেলেও পাচ্ছি না। মাসে আমাদের ১৬০০-১৮০০ ব্যাগ রক্তের চাহিদা পূরণ করতে হয়। মূলত বেশি লাগে ডাবল ও ট্রিপল ব্যাগ। সিঙ্গেল ব্যাগের চাহিদা কম। আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ধারে এনে যেটুকু চালানো যায়, সেভাবেই চলছি।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ঢাকার একটা সরকারি ইনস্টিটিউট থেকে কিছু ব্লাড ব্যাগ পেয়েছি। সেটা না পেলে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর রক্ত পরিসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেত। এ ছাড়া ইউরো ব্যাগ বা ইউরিনের ব্যাগ ও মেরুদ-ের স্পাইনাল কর্ড পরীক্ষা করার স্পাইনাল কর্ড নিডলও পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুর ও জাপানের মানসম্পন্ন জেএমএস ও ট্রেমো ব্লাড ব্যাগ পাচ্ছি না। প্রতি মাসে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ ব্যাগ লাগে। ট্রিপল ব্যাগ লাগে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার। সরবরাহকারীরা আগে যে পরিমাণ ব্যাগ দিত এখন দিতে পারছে না। এখন যে ব্যাগ আছে তা দিয়ে এক থেকে দেড় মাস চলবে।’
পরীক্ষার কেমিকেল ও কিট সংকট : বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব কেমিক্যাল লাগে, তা আমদানি করে জেনেটিক ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিদিন এসব কেমিক্যাল লাগে। যেমন এক প্যাকেটে ১০০ জনকে পরীক্ষার জন্য ১০০টি রি-এজেন্ট ও সমপরিমাণ কেমিক্যাল থাকে। হাসপাতালগুলোকে এসব পণ্য দুই-তিন হাজার প্যাকেট মজুদ রাখতে হয়। এখন আমরা সেগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছি না।’ এমনকি সুগার, কোলস্টেরল ও হরমোন পরীক্ষার কিট আমদানি কম হচ্ছে বলেও জানান এক আমদানিকারক।
চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধনসামগ্রীর অভাব : রাজধানীর আতিক সার্জিক্যাল অ্যান্ড মেডিকেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, ‘অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা বর্জ্য বহনের জন্য যেসব জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়, সেসব ডিসপোজেবল প্রডাক্ট আমদানি করি। এরকম প্রায় এক হাজার পণ্য রয়েছে। অক্টোবর থেকে এলসির কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। মার্কেটে এখনো মাল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বেশিদিন চলবে না।’
আমদানি কমেছে ৪০-৫০ শতাংশ : বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যেসব মেডিকেল ডিভাইস প্রয়োজন হয়, তার মাত্র ১০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। বাকি ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনো আমদানিকারক যদি বছরে চারটি এলসি করত, সে এখন দুটি এলসি করতে পারছে। অর্থাৎ এলসি কমে অর্ধেকে নেমে গেছে ও আমদানিও কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ‘এলসির অভাবে গড়ে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদির আমদানি ৪০ শতাংশ কমেছে। আমরা যে ব্যাংকে এলসি করি, সেই ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, এত টাকার এলসি করার অনুমতি নেই। আরও কম আনেন। যেখানে আমরা ১ লাখ ডলারের এলসি করতাম, সেখান এখন করছি ২০-২৫ ডলারের এলসি। ফলে আমদানিও কম করতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সার্জিক্যাল মেডিকেল ডিভাইস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে কিছু কিছু এলসি খোলা যাচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এ ছাড়া আমদানিকারকদের চাহিদা অনুপাতে যেন ঔষধ প্রশাসন পণ্য আমদানিতে অনুমতি দেয়, সরকারকে সেটাও দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বহিরাগত শক্তির যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’-এর ‘দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রূপান্তরিত করতে চাই। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশ ও জনগণের পাশে আছে। যেকোনো দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশে দুর্ঘটনা ঘটে তখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যায় এবং উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষী বাহিনী গৌরবজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারকাজে সফলভাবে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তার হৃদয়ের খুব কাছের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদ তার দুই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পুনর্মিলনীতে যোগ দেওয়া একদিকে আমার জন্য বেদনাদায়ক, অন্যদিকে আনন্দের।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তার সঙ্গে ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’ এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার গৃহহীন ভূমিহীনকে ঘর করে দেওয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং দেশের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণেরও প্রশংসা করেন।
দূরত্ব যতটুকুই হোক, ঢাকায় কোথাও গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে আসার কর্তব্য থাকে এবং এ জন্য যদি মাত্র ঘণ্টাখানেক সময় হাতে থাকে তাহলে আপনি ফেঁসেছেন। আজকে (গতকাল) আমিও সেই দলে। বাংলা মোটর থেকে শাহবাগ পার হয়ে টিএসসির গেট দিয়ে বইমেলায় পৌঁছতেই বরাদ্দের সিংহভাগ সময় শেষ। কিন্তু বইমেলার টান সময় স্বল্পতাকে উপেক্ষা করায়।
বইমেলায় ঢুকতে গিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি রো ধরে লাইন ধরে এগোতে থাকি। লোক বেশি নেই। আমার সামনে পাঁচ-ছয়জন। এর মধ্যে একজনের পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার পেয়ে নিরাপত্তাকর্মী সেগুলো কেড়ে নিতে উদ্যত হলে, ছেলেটি মেলায় যাব না বলে উল্টো দিকে হাঁটা দিল। তার পরেই দাঁড়ানো আরও একটি তরুণও সঙ্গী হলো ছেলেটির। বুঝলাম দুই বন্ধু বইমেলায় এসেছিল বই কিনতে অথবা নিছকই ঘুরতে।
আমিও মূলত ঘুরতে এসেছি। অনেকের দেখি বইমেলায় বই না কিনে ঘুরতে আসা ভিড় নিয়ে আপত্তি আছে। আমার তা লাগে না। বইমেলায় ঘুরতে এসেছি বলতেও চাপ নিই না, যেহেতু মেলা। যেহেতু এখানে কবি-লেখকদের আর তাদের ‘গ্ল্যামারটা’ দেখা যায়। যেহেতু এখানে নতুন বইয়ের, প্রচারের, খোঁজখবরের একটা বিষয় তো থাকে।
এ ছাড়া মেলায় এমনি আসতেই বা ক্ষতি কি!
সামনের দুজন কমে যাওয়ায় আমি এগিয়ে যাই। আর্চওয়ের মেটাল ডিটেক্টর পার হতেই নিরাপত্তাকর্মী কথা নেই, বার্তা নেই গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি চালাতে গেলেই চমকে গিয়ে দু-পা পিছিয়ে যাই। সেও চমকে উঠে আর জিজ্ঞেস করে সিগারেট আছে কি না। আমি বলি নেই। কিন্তু এভাবে গায়ে হাত দেন কেন? জিজ্ঞেস করে নেবেন তো। জবাবে সে হাসে আর বলে যান আপনি।
এদিক-ওদিক বিচ্ছিন্নভাবে হাঁটতে হাঁটতে, দেখতে দেখতে বাথরুম চেপে যায়। খুঁজতে খুঁজতে মেলার শেষপ্রান্তে প্রক্ষালন কেন্দ্র খুঁজে পাই। কিন্তু আজব সেখানে জুতা পরে প্রবেশ করা যাবে না। যেতে হবে তাদের চপ্পল পরে, যেগুলো বহু লোকের পায়ে ঘুরে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। মনে পড়ল ফেইসবুকে এ নিয়ে কথাও বলেছেন কেউ কেউ। ভুলে গিয়েছিলাম। বাথরুম আর সারা হলো না তলপেটে চাপের অস্বস্তি নিয়ে ঘুরতে থাকলাম বইমেলায়।
গত কয়েকটি বইমেলা আয়োজনটিতে গোছানোর প্রয়াস চোখে পড়েছিল। পরিসর যেমন বড় ছিল, তেমনি মেলায় আসা লোকজনই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরতে, বই দেখতে, আড্ডা দিতে পারছিলেন। কিন্তু এবার একেবারেই বিশৃঙ্খল অবস্থা মনে হলো। আরও দেখলাম মেলার বিভিন্ন স্থানে ধূমপান চলছে। বইমেলার গেট থেকে ফিরে যাওয়া তরুণ দুটির কথা মনে পড়ল। কর্তৃপক্ষ ধূমপায়ীদের জন্য কর্নার করে দিতে পারে। অবশ্য এই দেশে নিষিদ্ধ কিছুই তেমন একটা নিষিদ্ধ না যেহেতু, সেই সূত্রে অফিশিয়ালি ক্লিন বা অধূমপায়ী লেখক-পাঠক রেখে এমন চালিয়ে যেতে পারে। তরুণ দুটির ফিরে যাওয়াটিই সঠিক মনে হয়।
কয়েকজন পরিচিত মানুষ পেয়ে তলপেটের অস্বস্তি ভুলে থাকলাম আলাপচারিতায়। ‘আদর্শহীন বইমেলা’, প্রবাসী নারী লেখকের বই প্রত্যাহার ও সেখানে দেশের কোন কোন লেখকের নাম শোনা যাচ্ছে এসবই বলছেন প্রায় সবাই। কিন্তু ভালো কী বই আসছে বা আসবে এসব নিয়ে কোনো আলাপ শুনলাম না। এসব বলতে বলতে সবাই ‘ফুড কোর্টে’র দিকে এগিয়ে গেলাম।
চারদিক ঘেরাও করে বিচিত্র ব্যবস্থায় খাওয়া-দাওয়া চলছে। ভেতরে আর ঢুকতে ইচ্ছে হলো না। পরিচিতদের থেকে বিদায় নিয়ে ভাবলাম কফি খাব। কিন্তু তেমন ভালো কফিরও ব্যবস্থা নেই মেলায়।
ফিরব ভেবে মেলার চারদিক দেখতে দেখতে গেটের দিকে এগোতে থাকি। ১৯৯৯ সালে প্রথম যখন বইমেলায় আসি, তখন মেলার পরিসর ছোট আর ভিড়ের চাপ আরও বেশি অনুভূত হলেও এই ২০২৩ সালে যে বইমেলা দেখছি তাকে আমার কোনো অর্থেই আপন লাগল না। যদিও পরিসর বেড়েছে, চাকচিক্য, প্রচার সবই বেড়েছে কিন্তু গুণিতক হারে যেটা বেড়েছে সেটা বিশৃঙ্খলা। মানুষ বইমেলায় ভালো সময় কাটাতে আসবেন তা যেন আয়োজকরা মানতেই পারেন না।
তৃণমূলের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় হোক তা চাচ্ছেন না দলের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় এসব নেতার ব্যাপারে তৃণমূলের যে ক্ষোভ অসন্তোষসেটা যেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে না পৌঁছায় সেজন্যই তারা মতবিনিময় বৈঠক চাচ্ছেন না। এমনকি তাদের অনেকে তদবিরও করছেন যেন মতবিনিময় বৈঠক না হয়। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না তৃণমূলের নেতারা।
২০০১ সাল থেকে বিএনপির পদধারী অথবা সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের তালিকা গত মাসে চেয়ে পাঠান তারেক রহমান। সেই তালিকা এখন কেন্দ্রীয় দপ্তরে।
বিএনপিদলীয় সূত্র বলছে, ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তারেক রহমানের মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব জনপ্রতিনিধিকে সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা এবং চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত জানা। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে আন্দোলন ও নির্বাচনের সার্বিক চিত্রটি জানতে চান তিনি। ১০টি সাংগঠনিক টিমের হয়ে যারা তথ্য সংগ্রহ করেছেনএমন প্রায় ২৮ নেতার সঙ্গে আজ শুক্রবার স্কাইপে বৈঠক করবেন তারেক রহমান।
তথ্য সংগ্রহে যুক্ত দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের তালিকা করার পাশাপাশি তাদের কাছ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা থেকে তৃণমূলের চিত্রও কিছু কিছু পাওয়া গেছে। আজকের বৈঠকে সেসব বিষয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানো হবে। এ ছাড়া ১০ সাংগঠনিক বিভাগে কবে কীভাবে মতবিনিময় সভাগুলো করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকা দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু জানানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ইচ্ছের পর কেউ তদবির করলে সেটা চলে না।’
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৩০৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য রয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ জন। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রয়েছেন ২৩৫ জন। সিটি করপোরেশন ও পৌর মেয়র রয়েছেন ১৮১ জন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১৫৯ জন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ১৩২ জন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা ১৬২ জন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া এবং দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন চান অথচ তৃণমূলের চিত্র তাদের বিরুদ্ধে, মূলত এমন নেতারাই মতবিনিময়ের বিরোধিতা করছেন। এ ছাড়া দলের কয়েক উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ১০-১২ নেতাও বিরোধিতায় সুর মেলাচ্ছেন।
দেশ রূপান্তরের হাতে থাকা তালিকার কয়েক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তারা আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে চান। এমন মতবিনিময় হলে হাইকমান্ডকে (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) যারা (নিজের এলাকায় আধিপত্য থাকা, কোন্দলও না থাকার ইত্যাদি) সাংগঠনিক বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে রেখেছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন হবে। তারা বলছেন, মাঠের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে চান তারা। এ ছাড়া ‘দিনের ভোট রাতে হলে’ কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে সেটি তারা জানাতে চাইছেন।
নরসিংদী-৩ আসন শিবপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হলো বাঘাব, জয়নগর, পুটিয়া, মাছিমপুর, দুলালপুর, আইয়ুবপুর, চক্রধা, সাধারচর, যোশর। এর মধ্যে বতর্মানে দুজন চেয়ারম্যান রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত। তারা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাও।
মাছিমপুরে আবুল হারিছ রিকাবদার ১৯৭৬ সাল থেকে টানা চেয়ারম্যান। প্রবীণ এই নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যদি কথা বলার সুযোগ পাই এবং তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে যদি নেতা নির্বাচন বা মনোনয়ন দেওয়ার ইচ্ছা হাইকমান্ডের থাকে, তাহলে এসব নিয়ে মতামত তুলে ধরব। যদি কথা না শোনেন, তাহলে বলব না। কারণ আমরা যারা কথা বলব, পরে তাদের ওপর হামলা বা মামলা হবে।’
দুই মেয়াদে (২০০৩ ও ২০১৬) আইয়ূবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন আবু তাহের খন্দকার। তিনি শিবপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতিও। গত জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া মঞ্জুর এলাহীকে এবার কেউ প্রার্থী হিসেবে চান না বলে দাবি তার। এই নেতা বলেন, ‘মঞ্জুর এলাহী আগে জাতীয় পার্টি করতেন। এখন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার কর্মকা- কেউ পছন্দ করে না। তারেক রহমান ছাত্রদলের একটি কমিটি দিয়েছেন সেটার বিরোধিতা করে তার লোকজন জেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুল কবির খোকনের বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি পুরো জেলার বিএনপির আসল লোকদের বাদ দিয়ে ভাড়া করা লোকদের দিয়ে কমিটি দিচ্ছেন।’
জানতে চাইলে মঞ্জুর এলাহী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি ছয় মাস হলো। এ সময়ের মধ্যে কোনো কমিটি হয়নি। সুতরাং তাদের অভিযোগ অমূলক।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময়ই দলের হাইকমান্ডের কাছে তৃণমূলের সমস্যা তুলে ধরতে চাই। বলার সুযোগ পেলে অনেক নেতার সত্যিকারের চরিত্র উদঘাটন হবে। আবার আমরা যারা এই সময়ে ভোট করে জিতেছি, তারাও ভোটে জেতার কৌশল কী তা বলতে পারব।’
হারুনুর রশিদ আজাদ ২০০৪ ও ২০১১ সালে নোয়াখালী সদরের পৌর মেয়র ছিলেন। পরে বিএনপির বিরোধীদলীয় সাবেক হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পৌর ছাত্রদলের সভাপতি থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত রাজনীতি করে আসা এই নেতার নাম যাতে জনপ্রতিনিধির তালিকায় না আসে সেই তদবির করেছেন দলের প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান। পরে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে তালিকায় তার নাম ওঠে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফুল সুজিপানা (ওলফিয়া আরিজাহ)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Wolffia Arrhiza
এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের Lemnaceae গোত্রের অন্তর্গত অবাধ ভাসমান জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। পানিতে চরে বেড়ানো পাখিদের প্রিয়খাদ্য।
দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে অন্যান্য গাছগাছালিকে সহজেই ছাড়িয়ে যায় এবং খরা, ঠান্ডা, খাদ্যাভাব ইত্যাদি পরিবেশগত দুর্যোগেও টিকে থাকতে পারে।
সপুষ্পক হলেও সুজিপানায় দৈবাৎ ফুল ফোটে, বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ-মুকুলে। এগুলো বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছে গত এক শতক ধরে।
এ ক্ষুদ্রতম ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদটি থ্যালাস (যে উদ্ভিদ পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং মূলে বিন্যস্ত নয়) প্রজাতির উদ্ভিদ।
সবুজ বা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এই উদ্ভিদটির কোনো মূল নেই।
উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কোনো স্বতন্ত্র কান্ড ও পাতা নেই। গোটা উদ্ভিদটিই আসলে চ্যাপ্টা ছোট একটি পত্রকল্প কাঠামো বা ফ্রন্ড (frond)। এ ফ্রন্ড নিচে ঝুলন্ত এক বা একাধিক কৈশিক মূলসহ একক বা দলবদ্ধ থাকে।
ফুল সাধারণত উদ্ভিদটির ওপরের স্তরে জন্মে থাকে। এর একটি করে পুংকেশর ও গর্ভকেশর থাকে। এর সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিমি হয়ে থাকে। ওলফিয়া শতকরা ৮০ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। আদর্শ পরিবেশে এগুলোর জীবসত্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়।
সালাদ হিসেবে খাদ্যযোগ্য ওলফিয়া প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।