
সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে থাকা বিএনপিকে নষ্ট রাজনীতির হোতা আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এদের কাছে গণতন্ত্র, জনগণ কেউই নিরাপদ নয়।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড লু (যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী) বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। আমেরিকার এ দূতের সঙ্গে কথা বলতে বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছিল, সফল হয়নি। বিএনপি ক্রমেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা-ে দেশের মানুষ খুশি, শুধু মন খারাপ বিএনপির। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলা সংকটেও দেশের মানুষ শেখ হাসিনার ওপর খুশি। শেখ হাসিনার সততায় খুশি। শেখ হাসিনার উন্নয়নে খুশি। মন খারাপ শুধু বিএনপির। তাদের মন খারাপ। উন্নয়ন দেখলে তাদের ভালো লাগে না, অন্তজ্বালায় ভোগে।’
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছর আগের ও পরের মোহাম্মদপুর, দিনরাতের পার্থক্য। মোহাম্মদপুর এখন আলোয় আলোকিত। এটা এখন ডিজিটাল নগরী। এ নগরী এখন উন্নয়নের ঝলকে আলোকোজ্জ্বল। মোহাম্মদপুর, আদাবরের যেদিকেই তাকাবেন উন্নয়ন, শুধু উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশেকে আফগানিস্তান বানাতে চায়। মেয়েদের দমিয়ে রাখতে চায়। অথচ শেখ হাসিনা নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন।’ তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন বিদেশি চ্যানেলে দেখতে পায়। তিনি মাতারবাড়ীতে, পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর বানিয়েছেন, শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে রূপপুর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়েছেন। শেখ হাসিনাই একদিনে ১০০ সেতু, ১০০ রাস্তা উদ্বোধন করেছেন। সংকটের সময়েও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জ¦ালানি, খাদ্যশস্য কিনছেন। কিন্তু দিচ্ছেন কম দামে।
তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়া হচ্ছে খাম্বা ব্যাপারী। তাদের কাজ ছিল লুটপাট করা। হাওয়া ভবনের আরেক নাম খাওয়া ভবন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরা চাকরি করে খায়, তারা ব্যবসা করে না, সাধারণ জীবনযাপন করেন।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, এখন বিএনপির মুখে আবার খই ফুটেছে। তাদের আন্দোলনের নদীতে এখন আর জোয়ার নেই। এ বছর না আগামী বছর, কোন বছর আন্দোলন হবে জানা নেই। তাদের সবকিছুই ভুয়া। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র নিশ্চিত করেন, অন্য কিছু নয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার নতুন দুয়ার নগর পরিবহনে মেট্রোরেল উন্মোচন করেছে। বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এত কিছুর পরও রাজধানীরজুড়ে সড়কে এখনো দাপিয়ে বেড়ায় ফিটনেসবিহীন বাস। এই নিম্নমানের বাসগুলোর দিকে তাকালে দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে আসা অনেকেই ভাবতে পারেন বাংলাদেশে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলেও সেকালের গরিবি বাসে সয়লাব শহরজুড়ে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নানা সময় বাসগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিলেও সেভাবে মনিটরিং না করায় বছরের পর বছর বাসগুলো সড়কে চলছে। তবে বাস মালিক সমিতি থেকে এই মাসে বাসগুলো বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন সমিতির নেতারা।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেইট, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন বাস প্রকাশ্যে চলছে। মাঝপথে অনেক বাস বন্ধ হতে দেখা যায়। বেশিরভাগ বাসের সিট ভাঙা, নেই ভালো বসার স্থান। আর বাসগুলো থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে পরিবেশের মারাত্মক হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে খারাপ বাস চলতে দেখা যায় পুরান ঢাকার বাবুবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত রোডে। এই রোডে শতভাগ বাসের ফিটনেস নেই বললেই চলে।
ভোলার বাসিন্দা মো. যুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার জেলা-উপজেলায় ঢাকার চেয়ে উন্নত মানের বাসগুলো চলে। সিটিতে চলা বেশিরভাগ বাসে ভালোভাবে বসা যায় না। সিটগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। আর কিছু বাস দেখতে সুন্দর হলেও ভেতরে দেখা যায় নানা সমস্যা। এই রকম অবস্থা দেখে আসছি বছরের পর বছর। কোনো উন্নতি নেই এই বাসগুলোর।
ঢাকায় নিয়মিত বাসে চলাচল করা মো. ইমন নামের এক যাত্রী জানান, বাসগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায় সড়কে এত দুর্ঘটনা কেন ঘটে। এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলো দিনের পর দিন সড়কে চলছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। তবে কিছু হলে তেলের অজুহাতে ভাড়া বাড়ান বাস মালিকরা।
সদরঘাট থেকে মিরপুর রোডে চলাচল করা তানজীল পরিবহনের এক বাসচালক মো. তানভির বলেন, ‘মালিক যে বাস দেন সেটি চালাই। এখন পুরনো হোক বা নতুন হোক আমাদের তো আর কিছু বলার নেই। আমি না চালালে অন্য কেউ তো আর বসে থাকবে না।’
পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে গাবতলী পর্যন্ত চলা একটি ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় ‘প্রত্যয় পরিবহন’র একটি বাসের চালক মো. সিফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাত্রীরা যখন বাসে ওঠেন আমাদের সঙ্গে বাগ্বিত-া লেগেই থাকে বাসের এই অবস্থার জন্য। শুনলাম সামনে নতুন বাস নামাবেন মালিক। এর থেকে বেশি আর বলতে পারছি না।’
বাবুবাজার রোডে চলাচল করা একটি পরিবহনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ গাড়ি চলে এই রোডে। এই এলাকায় বাস নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। তাদের জন্য নতুন বাস নামানো যায় না। আর এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয় প্রতিটি জায়গায়।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে শুনে আসছি এসব ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা। কিন্তু এই বাসগুলো বন্ধে সেভাবে পদক্ষেপ আজও নিতে দেখিনি। ফলে এই বাসগুলো রাস্তায় চলাচল করায় সড়কে দিনের পর দিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের মতো এত অত্যাধুনিক পরিবহন শহরের যোগাযোগে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কে দেখা যায় সেই পুরনো ফিটনেসবিহীন বাস। এসব বাস বন্ধের জন্য বাস মালিক সমিতি ও বিআরটিএ একসঙ্গে বসে ফিটনেসবিহীন বাসের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত। খুব দ্রুত এই বাসগুলোর বিষয়ে মনিটরিং বাড়িয়ে যেগুলো চলাচলের অনুপযোগী, সেগুলোকে অপসারণ করা দরকার।’
চলতি মাসেই ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মাস থেকেই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ফিটনেসবিহীন বাস কোনোভাবেই সড়কে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। আর বাবুবাজার রোডে যেসব ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করে সেগুলো আমাদের সমিতির আওতায় নেই বলে জানান তিনি।
ডলার সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। প্রায় সব খাতেই খরচ বেড়েছে। নীরবে মূল্যবৃদ্ধির এ ধাক্কা সামলাতে গিয়ে বেসামাল স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত।
আর্থিক সংকটে অনেকে বাধ্য হয়েই পরিবারের নিয়মিত অনেক খরচ কাটছাঁট করেছে। ডিম, বড় মাছ, মাংস, দুধসহ অনেক কিছু নিয়মিত খাবারের তালিকা থেকে হয় বাদ দিয়ে, না হয় কমিয়ে দিয়েছে। সে তালিকায় যোগ হয়েছে কম দামি খাবার।
খরচ বেড়ে যাওয়ায় অন্য খাতে কাটছাঁট করতে গিয়ে অনেকে পাারিবারিক অনুষ্ঠান ও মেহমান দাওয়াত দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে আপতত এসব আয়োজন বন্ধ রেখেছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, খরচ বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। আর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করলেও দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে অসাধু ব্যববায়ীদের কারসাজিতে অনেক খাতে দাম যতটা বাড়ার, বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি এমন কথাও বলেছেন তারা।
সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মতে, এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছয় মাস ধরে কম-বেশি প্রায় সব খাতে খরচ বেড়েই চলেছে। অথচ ব্যবসায় সুবাতাস নেই। চাকরিতেও বেতন বাড়ার সুখবর তেমন শোনা যায় না। খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ কষ্টে পড়েছেন বেশি। প্রতি দিনের সংসার খরচ চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে অনেক পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। যা কিনছি তা-ও বেশি দামে। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করলেও আগের চেয়ে দাম বেশি পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে দাম বেশি রাখছেন না। তবে এটা সত্য অনেক সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে দাম যতটা বাড়ার, তার চেয়ে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটা চালের দাম খানিকটা স্থিতিশীল। কিন্তু গত ছয় মাসে অনেকটাই বেড়েছে। অন্যদিকে শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ বাড়ানোর পরও চালের দাম কমেনি। মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করা প্রতি কেজি ভালো মানের চাল দুই মাস আগে ৭২ টাকায় কিনতে পারলেও এখন ৭৮ টাকা। ৭০ টাকা কেজির নাজির শাইল এখন ৭৫-৮০ টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। এক কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ৭০ টাকা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর দেওয়া বাংলাদেশের দানাদার খাদ্যবিষয়ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বেশি দামে আটা কিনতে না পারায় দেশের মানুষের বড় অংশ রুটি, বিস্কুট ও আটা-ময়দা থেকে তৈরি খাদ্য কম খাচ্ছে। দাম বেশি থাকায় আটার তৈরি খাবারের বদলে মানুষ ভাত খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছয় মাসে প্রায় সব ধরনের বিস্কুটের দাম বেড়েছে গড়ে ২০-৩০ টাকা। চানাচুরের দাম প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা এবং মুড়ির দাম প্রতি কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে।
এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ ভাগ। সর্বশেষ ৭ টাকা বেড়ে বোতলজাত এক লিটারের দাম এখন ১৮৭ ১৯০ টাকা। আর খোলাটা লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮০ টাকা।
শীতকাল শেষ। কিন্তু শীতে ভরা মৌসুমেও অনেকের সাধ্যের বাইরে ছিল শাকসবজি। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিবেদন বলছে, দেশে খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ৬৮ শতাংশ মানুষ। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং আয় না বাড়ায় নানাভাবে সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে। যেমন সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ আলু খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, এক মাস আগে ঢাকার বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৬০-৭০০ টাকা। আর খাসির মাংসের দাম ছিল ৯০০-১০০০ টাকা। এখন খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০-২০০ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে বাজারে গরুর মাসের দাম বেড়ে হয়েছে কেজি ৭০০-৭৫০ টাকা।
ফার্মের মুরগি, ডিম, দুধ ও মাছের মতো সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারের দাম চড়া। তেলাপিয়া, পাঙাশের মতো মাছ কিংবা অ্যাংকর ডালও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বড় আকারের তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। বাদামি রঙের ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা। এক মাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১১০-১১৫ টাকা। সাধারণ মানুষের প্রোটিনের বড় আরেকটি উৎস ব্রয়লার মুরগি। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা। টিসিবি বলছে, মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে। কম নেই সোনালি মুরগির দামও। গত মাসে ২৬০ কেজি দরে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম এখন ৩৫০ টাকায় ঠেকেছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।
তরল দুধের দাম এক বছরে লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) এক লিটার দুধের দাম এখন ৯০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, এক বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে ২৭-৩৫ টাকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, আট ধরনের প্রাণিজ আমিষে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান আছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে মাছ, মাংস, সামুদ্রিক খাবারসহ পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারছে দেশের মাত্র ১৭ শতাংশ পরিবার।
সব ধরনের প্যাকেটজাত মসলার দাম বেড়েছে। প্যাকেটজাত মসলার দাম গড়ে প্রতি কেজি বেড়েছে ১৩০ টাকা। মসুরের ডাল রকমভেদে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২৮ টাকা। চিনির দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন খোলা ১১০ ও প্যাকেটজাত ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা, রসুন ও আদার দাম কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। ৩৫০ টাকার প্রতি কেজি জিরা এখন ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবণের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা।
এক বছরে খাদ্যপণ্যের সঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের খরচও বেড়েছে। সাবান, শ্যাম্পু, দাঁতের মাজন, শাড়ি, গয়না, স্যান্ডেল, জুতাসহ প্রায় সব ধরনের পোশাকের দাম বেড়েছে।
গায়ে মাখা সাবানের দাম গড়ে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গুঁড়া সাবানের দাম বেড়েছে ৬০-৭০ টাকা। ৭০০ গ্রাম শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা।
নতুন বছরের শুরুতে কমবেশি বাসাভাড়া ও বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন বাড়ানো হয়েছে। খাতা, কলম, পেনসিলসহ প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম আগের চেয়ে বেশি। খাতার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বল পয়েন্ট কলমের দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা।
চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে অনেকে। প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধ এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্যারাসিটামলের মতো অধিক ব্যবহৃত ওষুধের দামও বেড়েছে। ৫০০ এমজির প্যারাসিটামল প্রতিটি ট্যাবলেট ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড-আগে ছিল ১ টাকা ৬৬ পয়সা, এখন ২ টাকা। কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশেরও বেশি; অর্থাৎ আগে যে দামে ওষুধ কেনা যেত, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা গুনতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা থাকে সরকারের হাতে। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, এক্সিপিয়েন্ট, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময়মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে ওষুধের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যই বলছে, গত বছর মে মাসের পর থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা যখন দিশাহারা, এ অবস্থায় জ¦ালানি ও বিদ্যুতের মতো কৌশলগত পণ্যের ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে বাড়ছে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার চারজনের পরিবারের খাবার খরচ আগের চেয়ে অন্তত ৭ হাজার টাকা বেড়েছে। কিন্তু আয় তো আর এত টাকা বাড়েনি।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত উন্নয়ন সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মূল্যস্ফীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের (২০২২ সালের) জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল।
কেউ কেউ সবসময় খুঁজে ফেরে পাদপ্রদীপের আলো, কেউ থাকতে ভালোবাসেন নিভৃতচারী হয়ে। সৈয়দ আশরাফুল হক দ্বিতীয় দলের মানুষ। ক্রিকেট খেলেছেন, ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এখনো ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন। কিন্তু কখনোই এই নিয়ে তাকে আত্মম্ভরী কথাবার্তা বলতে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তির পেছনেও সৈয়দ আশরাফুল হকের ক্রিকেট কূটনীতির অবদান অনেক। অথচ নিভৃতচারী এই মানুষ বলতে গেলে হারিয়েই গেছেন দেশের ক্রিকেট অঙ্গন থেকে, যেখানে এখন শুধুই মৌসুমি ক্রিকেটপ্রেমীদের দাপট।
আসলে সৈয়দ আশরাফুল হক মানুষটাই এমন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বন্ধু আব্দুল হালিম জুয়েলদের সঙ্গে তিনিও যেতে চেয়েছিলেন রণাঙ্গনে। কিন্তু মাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই বিয়ে করা আশরাফুলকে রণাঙ্গনে যেতে দেননি জুয়েল। আশরাফুলের ভাষায়, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি বিয়ে করি। জুয়েল ছিল আমার বিয়ের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু জুয়েল বলেছিল, ‘নতুন বিয়ে করেছিস। যুদ্ধে যাওয়ার দরকার নেই। তুই ঢাকায় থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে পারিস।’ তাই সরাসরি রণাঙ্গনে না গিয়েও ঢাকায় থেকেই ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা যোদ্ধাদের অনেক রকম সহায়তা করেছেন আশরাফুল, নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছেন অপারেশনে। সেনা টহলের মুখে পড়লে কাজে দিত ক্রিকেটার পরিচয়টা, জানান আশরাফুল। তিনি বলেন, ক্র্যাক প্লাটুনের অনেক গেরিলাই আমার বন্ধুবান্ধব ছিল। ওদের নানাভাবে সাহায্য করেছি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে শহীদ রুমি ছিলেন আমার খুব পরিচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে অনেক সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। কতবার যে নিজে গাড়ি চালিয়ে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যদের রসদ নানা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি! একবার তো প্রায় ধরাই পড়ে গিয়েছিলাম। মোহাম্মদপুর থেকে কিছু স্টেনগান আর গ্রেনেড তুলেছি গাড়িতে। ওগুলো ছিল বাজারের চটের ব্যাগে। পথে একটা সেনা চেকপোস্টে গাড়ি দাঁড় করাতে হলো। আমি ভেতরে-ভেতরে শেষ। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে সৈনিককে বললাম, ‘আমি ক্রিকেটার। পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলি।’
যুদ্ধ শেষ হলো, স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশ সফরের দলে নিজ যোগ্যতাতেই জায়গা করে নিলেন আশরাফুল। ‘আসলে আমার মনে হয় ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফির দলে আমিই ছিলাম একমাত্র ক্রিকেটার যার ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। আমি ইংল্যান্ডে পড়ার সময় মিডলসেক্স কাউন্টির লিগে স্থানীয় একটা দলের হয়ে খেলেছি। আমরা ফিজিকে হারাই আর মালয়েশিয়াকে হারাই। আমি মনে করি ডেনমার্ক ও কানাডার বিপক্ষেও আমাদের জেতা উচিত ছিল’, এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আশরাফুল হক। ফিজির বিপক্ষে অফস্পিনে আশরাফুল নিয়েছিলেন ২৩ রানে ৭ উইকেট যা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সেরা বোলিং নৈপুণ্যের রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল। সেসময়ের ক্রিকেটে এখনকার মতো টাকা-পয়সার ঝনঝনানি ছিল না। নৌবাহিনীর ব্যারাকে অনুশীলন, অনেকটা সৈনিক জীবনের মতো শারীরিক প্রশিক্ষণেই হতো দিনের শুরু। সাতসকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার সেই দিনগুলোই আইসিসি ট্রফির আগে দলটাকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করেছিল বলেই বিশ্বাস আশরাফুলের, যদিও আক্ষেপ আছে সেই সফরে দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করার।
ক্রিকেটার জীবনের ইতি টানেন ৮০’র দশকে। এরপরই আশরাফুল হকের সঙ্গে দেখা হয় এমন একজনের, যার সংস্পর্শে এসে ক্রিকেট কূটনীতি আর অর্থনীতির অন্দরমহলে অবাধ প্রবেশাধিকার পেয়ে যান। সেই মানুষটির নাম জগমোহন ডালমিয়া, ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি। যার হাত ধরে ক্রিকেটে লেগেছে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। আশরাফুল হকের সঙ্গে ডালমিয়ার পরিচয় ৮০’র দশকেই। ‘আমি তখন আজাদ বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) একটি দল আসে ঢাকায়, তখন ডালমিয়া ঢাকায় আসেন। সেই থেকে পরিচয়, এরপর তো বলা যায় আমরা এক পরিবারের মতোই হয়ে গেলাম’, বললেন আশরাফুল।
ডালমিয়ার হাত ধরেই ক্রিকেট কূটনীতির অন্দরমহলে নিত্য যাতায়াত শুরু হয় সৈয়দ আশরাফুল হকের। ডালমিয়াই বুঝেছিলেন, ক্রিকেট খেলাটাকে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মুঠো থেকে বের করে আনতে হবে, বুঝতে পেরেছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশের তিন দেশÑ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা মিলে আয়োজন করল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইডেন গার্ডেনসে। চোখ ধাঁধানো লেজার শো আর মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা সেনের হাতে অংশগ্রহণকারী সব দলের অধিনায়কের পতাকা। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজন একা সামলেছেন ‘অ্যাশ’ নামে পরিচিতি পাওয়া আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব উনি (ডালমিয়া) দিলেন আমার হাতে। অথচ কে আমি? বাংলাদেশ তো খেলছেই না! সবটাই হয়েছে ডালমিয়ার জন্য, উনি আমাকে রেখেছেন তাই কেউ কিছু বলেনি। কারণ উনিই ছিলেন বিশ্বকাপের প্রধান আয়োজক, স্থানীয় আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক।’
সফল সেই বিশ্বকাপ আয়োজনের পর ১৯৯৮ সালে ঢাকায় হলো প্রথম মিনি বিশ্বকাপ বা আইসিসি নকআউট ট্রফি, যা এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর খুলে গেল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার দরজা, সেখানে পাকিস্তানকে হারানোর পর দাবি উঠল টেস্ট মর্যাদার। কেনিয়া এবং নেদারল্যান্ডসও টেস্ট মর্যাদার জোরালো দাবিদার, সেখানে কীভাবে বাংলাদেশ তাদের আগে টেস্ট মর্যাদা পেয়ে যায় সেই লম্বা গল্পটাও শুনিয়েছেন আশরাফুল হক। ‘১৯৭৬ সালে আইসিসির বার্ষিক সভাতেই বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে আলোচনা হয়। যেহেতু বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল এবং পরে স্বাধীন হয়েছে, আর পাকিস্তান টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত দেশ তাই বাংলাদেশও টেস্ট মর্যাদা পাবে। এই ছিল আলোচনা, কিন্তু অনেকগুলো দেশ এতে রাজি হয়নি এবং বলা হয় আগে বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী সদস্য হতে। তারপর যখন ১৯৯৭ সালে আমরা আইসিসি ট্রফি জিতলাম তখন আবার এই প্রসঙ্গটা আসল। আমি সাবেরকে (সাবের হোসেন চৌধুরী) বললাম যে, আমাদের একজনকে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট কমিটিতে থাকতে হবে কারণ এই কমিটিই সহযোগী সদস্যদেশগুলো থেকে পরের ধাপে যেতে মনোনয়ন দেবে। একজন কমিটিতে থাকলে ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশের জন্য কাজ করা সহজ হবে। সাবের বলল, ‘আমার তো এখানে প্রথমবার, এখানেই কেউ আমাকে চেনে না। তুমিই নির্বাচন কর।’ নির্বাচনে আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পেলাম। এরপর কমিটি থেকে যখন কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডসের নাম উত্থাপন করার প্রস্তাব হয় তখন আমি বাধা দিয়ে বললাম, না, বাংলাদেশের নাম প্রস্তাব করা হোক। বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতেছে,’ স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন আশরাফুল। এভাবে নানান কৌশলে ও কূটনীতিতে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানদের সম্মতি আদায় করে, আইসিসির প্রণীত কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করে অবশেষে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার দ্বার খুলতে পারেন সাবের-আশরাফুল জুটি। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা না পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে অনেকখানি পিছিয়ে পড়ত তার প্রমাণ তো হাতের কাছেই আছে। কেনিয়া যে হারিয়েই গেছে ক্রিকেট থেকে আর বাংলাদেশের পর আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে ২০১৭ সালে। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ক্রিকেটের যে জোয়ার এসেছিল, টেস্ট মর্যাদা না পেলে তাতে নিশ্চিতভাবেই ধরত ভাটার টান।
১৯৭১ সালের মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের যুবদলের বিপক্ষে খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের উদীয়মান ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া একটি দল। সেই দলে খেলেছিলেন ইমরান খান। ইমরানকে আশরাফুল বলেছিলেন, ‘এরপর ঢাকায় আসতে ভিসা লাগবে।’ ইমরান হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে লন্ডনে ঠিকই আশরাফুলকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনীর এসব কাজকর্মের ব্যাপার তিনি জানতেন না। এই প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে ইমরানের আত্মজীবনীতেও।
খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট মাঠে এবং সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট কূটনীতিতে সুদক্ষ ও কৌশলী আশরাফুল হক কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময়ই থাকেন মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বাঁকবদলের নেপথ্যের নায়ক এখন কাজ করছেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেইসহ নানান দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে। অথচ তার মাপের সংগঠকের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের, কেন পেলেন না সেই প্রশ্ন না হয় তোলাই থাক।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নিরপেক্ষ সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ বর্তমান সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। আজ শনিবার ঢাকার বাইরে সারা দেশের সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে কীভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে, তিনি নিজেও তা জানতেন না বলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় বর্তমান সংবিধানে দেশ চলবে না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্থাপিত ২৭ দফার আলোকে সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজ ক্ষমতাসীনদের চুরির কারণে ব্যাংক খালি, ডলার নেই। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। দেশে আজ গণলুট চলছে। এরা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের সম্পদ লুট করে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলছে, মানুষ গরিব হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তারা বলে উন্নয়ন উন্নয়ন, এমন উন্নয়ন হয়েছে যে মানুষ আজ বিদ্যুৎ পায় না, পানি পায় না, গ্যাস পায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।’ বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে ১৫ বছরে অনেক অত্যাচার হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জনগণকে বাসা থেকে বের হতে হবে, জেগে উঠতে হবে। কারণ সরকার দেশকে ফতুর বানিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আমরা এটি চাইনি, এটি জাতির জন্য লজ্জাকর, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে র্যাব ও পুলিশকে দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এবারও আমেরিকায় অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পাইনি, এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ হয়েছে, সেই গণতন্ত্র হরণের অভিযোগেই গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সারা দেশেই অত্যাচার হচ্ছে, চলছে নৈরাজ্য। আওয়ামী লীগ মূলত সন্ত্রাসী দল। এরা কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। এরা সব সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। গত কয়েক মাসে তারা আমাদের ১০ জন নেতাকে হত্যা করেছে। বেআইনি ও গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। কারণ এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রকামী সব জনতার।’
‘আমার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের মানুষ হাসে। আমাদের পরিষ্কার কথা এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধু নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।’
‘বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করতে না পারলে আপনারা কেন পাহারার নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন। তাহলে কেন পাহারা দেন? এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়েন। সারা দেশের মানুষ নেমে পড়েছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রেখেছেন। তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছেন? বিএনপি কি ভেঙে গেছে; বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।’
সমাবেশ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ থেকে টিকাটুলি-রাজধানী মার্কেট (র্যাব-৩ অফিসের সামনে দিয়ে) স্বামীবাগ-দয়াগঞ্জ-বানিয়ানগর-মোড় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশ দিয়ে ধোলাইখাল-রায়সাহেব বাজার চৌরাস্তা-তাঁতীবাজার মোড় হয়ে নয়াবাজার গিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। এর আগে বেলা ১টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হতে থাকেন মতিঝিল এলাকায়। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি মোশাররফের : গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি করেন দলটির নেতাকর্মীরা। পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। দাবি মানা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথেই ফয়সালা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। বিএনপি কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ শান্তির নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। যারা ভোট ডাকাত, তারা কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
সভা শেষে পদযাত্রা শুরু হয়ে ১১ নম্বর সেক্টর জমজম টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পদযাত্রা : গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্বপান্থপথে এফডিসিসংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়ের সামনে থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) পদযাত্রা শুরু হয়। এরপর মগবাজার হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এতে নেতৃত্ব দেন এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম রাজধানীর মতিঝিলে আরামবাগের নিজস্ব দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।
১২-দলীয় জোটের পদযাত্রা আজ : একই দাবিতে আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে ১২-দলীয় জোট। বিজয়নগর পানির ট্যাংকিসংলগ্ন রাস্তা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, আজাদ প্রোডাক্টসের গলি ঘুরে কালভার্ট রোড হয়ে ফের পানির ট্যাংকির সামনে গিয়ে শেষ হবে।
তেলবাহী ওয়াগান দুর্ঘটনার নেপথ্যে রেললাইনের পয়েন্ট (এক রেললাইন থেকে আরেক লাইনে স্থানান্তর পয়েন্ট)। একই পয়েন্টে এর আগে কয়েক দফায় বগি লাইনচ্যুত, তেলবাহী ওয়াগান পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও তোলপাড় হয়নি, কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। গত বুধবার সন্ধ্যায় দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় ৪০ হাজার লিটার তেল পড়ে যাওয়ার পর টনক নড়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এই ধূম্রজালের কারণ জানতে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। একই সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, ৫ নম্বর লাইনের ৫ নম্বর পয়েন্টে দুর্ঘটনা ঘটে; অর্থাৎ এই পয়েন্টে দুটি ওয়াগন পড়ে যায়। তারা জানান, ট্রেনটিতে ১৬টি ওয়াগন ছিল। এর মধ্যে ইঞ্জিনসহ প্রথম ১২টি ওয়াগন পয়েন্ট পার হয়ে যায়। ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন দুটির চাকা রেললাইন থেকে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অন্যদিকে পরের ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়াগন দুটি লাইনে ছিল। সেগুলো লাইনচ্যুত হয়নি।
প্রথম ১২টি ওয়াগন পার হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী দুটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হলো কেন? রেললাইন মেরামত ও পয়েন্টের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ভাষ্য, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগনের চাকায় হয়তো কোনো সমস্যা ছিল। সেই সমস্যার কারণে গাড়ির চালক ব্রেক করার কারণে তা ঝাঁকুনি খেয়েছে এবং এতে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে। আর যেহেতু ওয়াগনগুলো তেলে পরিপূর্ণ ছিল তাই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি।
তবে তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। রেলওয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক বিন আনোয়ার। তিনি গতকাল দুপুর ১২টার সময় তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি আলোচিত সেই পয়েন্টের মাপ নেন, পয়েন্ট অন-অফ করে রেললাইন চেক করেন, সর্বশেষ ডামি ট্রেন পরিচালনা করে পরীক্ষাও করেন।
ঘটনাস্থলে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে জানান, এই পয়েন্টের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ ট্রেনটি অতিক্রম করার সময় রেললাইনের পাতের ব্যবধান সঠিক থাকছে না। এ জায়গায় আরও কয়েক দফা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের সহকারী চালক ওয়াদুদ হোসেনের সঙ্গে। ১২টি পার হওয়ার পর ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন পড়ে গেল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তেল নিয়ে সিজিপিওয়াই (চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড) প্রবেশ করছিলাম। এ সময় ৫ নম্বর পয়েন্টে ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। এটা রেললাইন বা পয়েন্ট কী কারণে হয়েছে, তা আমি বলতে পারব না।’
ব্রেক করেছিলেন কি না জানতে চাইলে ওয়াদুদ বলেন, এই পয়েন্টে গাড়ি চলে হাঁটার গতিতে (ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার)। তাই ব্রেক করার প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ইয়ার্ডে কাজ করে আসছেন ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক। তিনি বলেন, ‘এই পয়েন্টে সমস্যা রয়েছে। আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। এবার তেল বেশি পড়েছে। প্রতিবার দুর্ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হতো না।’
এদিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে রেলওয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তেল পড়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর সঠিক কারণ শনাক্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য গঠিত কমিটির রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কমিটিকে বলেছি, আজকের (শুক্রবার) মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপকের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে।’
তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে কি না জানতে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কথা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি মনে হয় আজ রিপোর্ট জমা দিতে পারবে না। শনিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
দুর্ঘটনাকবলিত ওয়াগন থেকে কী পরিমাণ তেল পড়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, লাইনচ্যুত হওয়া তিনটি ওয়াগনের মধ্যে একটি থেকে কোনো তেল পড়েনি। বাকি দুটি ওয়াগনের একটার প্রায় সব তেল পড়ে গেছে এবং অপর ওয়াগনের এক-তৃতীয়াংশ পড়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার লিটার হতে পারে। পড়ে যাওয়া তেল রেললাইন থেকে ছোট নালার মাধ্যমে দূরে গিয়ে মহেশখালে পড়ে। সেখান থেকে কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশতে পারে। এতে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে। এসব তেল যমুনা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানির ডিপো থেকে ওয়াগন দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছিল। তেল কোম্পানি থেকে তেল এনে সিজিপিওয়াইতে রাখা হয়। পরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব তেল পাঠানো হয়।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।