
তেলবাহী ওয়াগান দুর্ঘটনার নেপথ্যে রেললাইনের পয়েন্ট (এক রেললাইন থেকে আরেক লাইনে স্থানান্তর পয়েন্ট)। একই পয়েন্টে এর আগে কয়েক দফায় বগি লাইনচ্যুত, তেলবাহী ওয়াগান পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও তোলপাড় হয়নি, কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। গত বুধবার সন্ধ্যায় দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় ৪০ হাজার লিটার তেল পড়ে যাওয়ার পর টনক নড়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এই ধূম্রজালের কারণ জানতে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। একই সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, ৫ নম্বর লাইনের ৫ নম্বর পয়েন্টে দুর্ঘটনা ঘটে; অর্থাৎ এই পয়েন্টে দুটি ওয়াগন পড়ে যায়। তারা জানান, ট্রেনটিতে ১৬টি ওয়াগন ছিল। এর মধ্যে ইঞ্জিনসহ প্রথম ১২টি ওয়াগন পয়েন্ট পার হয়ে যায়। ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন দুটির চাকা রেললাইন থেকে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অন্যদিকে পরের ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়াগন দুটি লাইনে ছিল। সেগুলো লাইনচ্যুত হয়নি।
প্রথম ১২টি ওয়াগন পার হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী দুটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হলো কেন? রেললাইন মেরামত ও পয়েন্টের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ভাষ্য, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগনের চাকায় হয়তো কোনো সমস্যা ছিল। সেই সমস্যার কারণে গাড়ির চালক ব্রেক করার কারণে তা ঝাঁকুনি খেয়েছে এবং এতে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে। আর যেহেতু ওয়াগনগুলো তেলে পরিপূর্ণ ছিল তাই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি।
তবে তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। রেলওয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক বিন আনোয়ার। তিনি গতকাল দুপুর ১২টার সময় তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি আলোচিত সেই পয়েন্টের মাপ নেন, পয়েন্ট অন-অফ করে রেললাইন চেক করেন, সর্বশেষ ডামি ট্রেন পরিচালনা করে পরীক্ষাও করেন।
ঘটনাস্থলে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে জানান, এই পয়েন্টের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ ট্রেনটি অতিক্রম করার সময় রেললাইনের পাতের ব্যবধান সঠিক থাকছে না। এ জায়গায় আরও কয়েক দফা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের সহকারী চালক ওয়াদুদ হোসেনের সঙ্গে। ১২টি পার হওয়ার পর ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন পড়ে গেল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তেল নিয়ে সিজিপিওয়াই (চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড) প্রবেশ করছিলাম। এ সময় ৫ নম্বর পয়েন্টে ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। এটা রেললাইন বা পয়েন্ট কী কারণে হয়েছে, তা আমি বলতে পারব না।’
ব্রেক করেছিলেন কি না জানতে চাইলে ওয়াদুদ বলেন, এই পয়েন্টে গাড়ি চলে হাঁটার গতিতে (ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার)। তাই ব্রেক করার প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ইয়ার্ডে কাজ করে আসছেন ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক। তিনি বলেন, ‘এই পয়েন্টে সমস্যা রয়েছে। আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। এবার তেল বেশি পড়েছে। প্রতিবার দুর্ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হতো না।’
এদিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে রেলওয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তেল পড়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর সঠিক কারণ শনাক্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য গঠিত কমিটির রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কমিটিকে বলেছি, আজকের (শুক্রবার) মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপকের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে।’
তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে কি না জানতে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কথা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি মনে হয় আজ রিপোর্ট জমা দিতে পারবে না। শনিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
দুর্ঘটনাকবলিত ওয়াগন থেকে কী পরিমাণ তেল পড়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, লাইনচ্যুত হওয়া তিনটি ওয়াগনের মধ্যে একটি থেকে কোনো তেল পড়েনি। বাকি দুটি ওয়াগনের একটার প্রায় সব তেল পড়ে গেছে এবং অপর ওয়াগনের এক-তৃতীয়াংশ পড়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার লিটার হতে পারে। পড়ে যাওয়া তেল রেললাইন থেকে ছোট নালার মাধ্যমে দূরে গিয়ে মহেশখালে পড়ে। সেখান থেকে কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশতে পারে। এতে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে। এসব তেল যমুনা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানির ডিপো থেকে ওয়াগন দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছিল। তেল কোম্পানি থেকে তেল এনে সিজিপিওয়াইতে রাখা হয়। পরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব তেল পাঠানো হয়।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার নতুন দুয়ার নগর পরিবহনে মেট্রোরেল উন্মোচন করেছে। বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এত কিছুর পরও রাজধানীরজুড়ে সড়কে এখনো দাপিয়ে বেড়ায় ফিটনেসবিহীন বাস। এই নিম্নমানের বাসগুলোর দিকে তাকালে দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে আসা অনেকেই ভাবতে পারেন বাংলাদেশে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলেও সেকালের গরিবি বাসে সয়লাব শহরজুড়ে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নানা সময় বাসগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিলেও সেভাবে মনিটরিং না করায় বছরের পর বছর বাসগুলো সড়কে চলছে। তবে বাস মালিক সমিতি থেকে এই মাসে বাসগুলো বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন সমিতির নেতারা।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেইট, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন বাস প্রকাশ্যে চলছে। মাঝপথে অনেক বাস বন্ধ হতে দেখা যায়। বেশিরভাগ বাসের সিট ভাঙা, নেই ভালো বসার স্থান। আর বাসগুলো থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে পরিবেশের মারাত্মক হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে খারাপ বাস চলতে দেখা যায় পুরান ঢাকার বাবুবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত রোডে। এই রোডে শতভাগ বাসের ফিটনেস নেই বললেই চলে।
ভোলার বাসিন্দা মো. যুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার জেলা-উপজেলায় ঢাকার চেয়ে উন্নত মানের বাসগুলো চলে। সিটিতে চলা বেশিরভাগ বাসে ভালোভাবে বসা যায় না। সিটগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। আর কিছু বাস দেখতে সুন্দর হলেও ভেতরে দেখা যায় নানা সমস্যা। এই রকম অবস্থা দেখে আসছি বছরের পর বছর। কোনো উন্নতি নেই এই বাসগুলোর।
ঢাকায় নিয়মিত বাসে চলাচল করা মো. ইমন নামের এক যাত্রী জানান, বাসগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায় সড়কে এত দুর্ঘটনা কেন ঘটে। এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলো দিনের পর দিন সড়কে চলছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। তবে কিছু হলে তেলের অজুহাতে ভাড়া বাড়ান বাস মালিকরা।
সদরঘাট থেকে মিরপুর রোডে চলাচল করা তানজীল পরিবহনের এক বাসচালক মো. তানভির বলেন, ‘মালিক যে বাস দেন সেটি চালাই। এখন পুরনো হোক বা নতুন হোক আমাদের তো আর কিছু বলার নেই। আমি না চালালে অন্য কেউ তো আর বসে থাকবে না।’
পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে গাবতলী পর্যন্ত চলা একটি ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় ‘প্রত্যয় পরিবহন’র একটি বাসের চালক মো. সিফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাত্রীরা যখন বাসে ওঠেন আমাদের সঙ্গে বাগ্বিত-া লেগেই থাকে বাসের এই অবস্থার জন্য। শুনলাম সামনে নতুন বাস নামাবেন মালিক। এর থেকে বেশি আর বলতে পারছি না।’
বাবুবাজার রোডে চলাচল করা একটি পরিবহনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ গাড়ি চলে এই রোডে। এই এলাকায় বাস নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। তাদের জন্য নতুন বাস নামানো যায় না। আর এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয় প্রতিটি জায়গায়।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে শুনে আসছি এসব ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা। কিন্তু এই বাসগুলো বন্ধে সেভাবে পদক্ষেপ আজও নিতে দেখিনি। ফলে এই বাসগুলো রাস্তায় চলাচল করায় সড়কে দিনের পর দিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের মতো এত অত্যাধুনিক পরিবহন শহরের যোগাযোগে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কে দেখা যায় সেই পুরনো ফিটনেসবিহীন বাস। এসব বাস বন্ধের জন্য বাস মালিক সমিতি ও বিআরটিএ একসঙ্গে বসে ফিটনেসবিহীন বাসের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত। খুব দ্রুত এই বাসগুলোর বিষয়ে মনিটরিং বাড়িয়ে যেগুলো চলাচলের অনুপযোগী, সেগুলোকে অপসারণ করা দরকার।’
চলতি মাসেই ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মাস থেকেই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ফিটনেসবিহীন বাস কোনোভাবেই সড়কে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। আর বাবুবাজার রোডে যেসব ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করে সেগুলো আমাদের সমিতির আওতায় নেই বলে জানান তিনি।
ডলার সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। প্রায় সব খাতেই খরচ বেড়েছে। নীরবে মূল্যবৃদ্ধির এ ধাক্কা সামলাতে গিয়ে বেসামাল স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত।
আর্থিক সংকটে অনেকে বাধ্য হয়েই পরিবারের নিয়মিত অনেক খরচ কাটছাঁট করেছে। ডিম, বড় মাছ, মাংস, দুধসহ অনেক কিছু নিয়মিত খাবারের তালিকা থেকে হয় বাদ দিয়ে, না হয় কমিয়ে দিয়েছে। সে তালিকায় যোগ হয়েছে কম দামি খাবার।
খরচ বেড়ে যাওয়ায় অন্য খাতে কাটছাঁট করতে গিয়ে অনেকে পাারিবারিক অনুষ্ঠান ও মেহমান দাওয়াত দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে আপতত এসব আয়োজন বন্ধ রেখেছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, খরচ বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। আর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করলেও দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে অসাধু ব্যববায়ীদের কারসাজিতে অনেক খাতে দাম যতটা বাড়ার, বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি এমন কথাও বলেছেন তারা।
সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মতে, এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছয় মাস ধরে কম-বেশি প্রায় সব খাতে খরচ বেড়েই চলেছে। অথচ ব্যবসায় সুবাতাস নেই। চাকরিতেও বেতন বাড়ার সুখবর তেমন শোনা যায় না। খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ কষ্টে পড়েছেন বেশি। প্রতি দিনের সংসার খরচ চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে অনেক পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। যা কিনছি তা-ও বেশি দামে। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করলেও আগের চেয়ে দাম বেশি পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে দাম বেশি রাখছেন না। তবে এটা সত্য অনেক সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে দাম যতটা বাড়ার, তার চেয়ে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটা চালের দাম খানিকটা স্থিতিশীল। কিন্তু গত ছয় মাসে অনেকটাই বেড়েছে। অন্যদিকে শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ বাড়ানোর পরও চালের দাম কমেনি। মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করা প্রতি কেজি ভালো মানের চাল দুই মাস আগে ৭২ টাকায় কিনতে পারলেও এখন ৭৮ টাকা। ৭০ টাকা কেজির নাজির শাইল এখন ৭৫-৮০ টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। এক কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ৭০ টাকা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর দেওয়া বাংলাদেশের দানাদার খাদ্যবিষয়ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বেশি দামে আটা কিনতে না পারায় দেশের মানুষের বড় অংশ রুটি, বিস্কুট ও আটা-ময়দা থেকে তৈরি খাদ্য কম খাচ্ছে। দাম বেশি থাকায় আটার তৈরি খাবারের বদলে মানুষ ভাত খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছয় মাসে প্রায় সব ধরনের বিস্কুটের দাম বেড়েছে গড়ে ২০-৩০ টাকা। চানাচুরের দাম প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা এবং মুড়ির দাম প্রতি কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে।
এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ ভাগ। সর্বশেষ ৭ টাকা বেড়ে বোতলজাত এক লিটারের দাম এখন ১৮৭ ১৯০ টাকা। আর খোলাটা লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮০ টাকা।
শীতকাল শেষ। কিন্তু শীতে ভরা মৌসুমেও অনেকের সাধ্যের বাইরে ছিল শাকসবজি। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিবেদন বলছে, দেশে খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ৬৮ শতাংশ মানুষ। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং আয় না বাড়ায় নানাভাবে সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে। যেমন সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ আলু খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, এক মাস আগে ঢাকার বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৬০-৭০০ টাকা। আর খাসির মাংসের দাম ছিল ৯০০-১০০০ টাকা। এখন খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০-২০০ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে বাজারে গরুর মাসের দাম বেড়ে হয়েছে কেজি ৭০০-৭৫০ টাকা।
ফার্মের মুরগি, ডিম, দুধ ও মাছের মতো সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারের দাম চড়া। তেলাপিয়া, পাঙাশের মতো মাছ কিংবা অ্যাংকর ডালও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বড় আকারের তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। বাদামি রঙের ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা। এক মাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১১০-১১৫ টাকা। সাধারণ মানুষের প্রোটিনের বড় আরেকটি উৎস ব্রয়লার মুরগি। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা। টিসিবি বলছে, মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে। কম নেই সোনালি মুরগির দামও। গত মাসে ২৬০ কেজি দরে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম এখন ৩৫০ টাকায় ঠেকেছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।
তরল দুধের দাম এক বছরে লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) এক লিটার দুধের দাম এখন ৯০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, এক বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে ২৭-৩৫ টাকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, আট ধরনের প্রাণিজ আমিষে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান আছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে মাছ, মাংস, সামুদ্রিক খাবারসহ পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারছে দেশের মাত্র ১৭ শতাংশ পরিবার।
সব ধরনের প্যাকেটজাত মসলার দাম বেড়েছে। প্যাকেটজাত মসলার দাম গড়ে প্রতি কেজি বেড়েছে ১৩০ টাকা। মসুরের ডাল রকমভেদে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২৮ টাকা। চিনির দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন খোলা ১১০ ও প্যাকেটজাত ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা, রসুন ও আদার দাম কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। ৩৫০ টাকার প্রতি কেজি জিরা এখন ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবণের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা।
এক বছরে খাদ্যপণ্যের সঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের খরচও বেড়েছে। সাবান, শ্যাম্পু, দাঁতের মাজন, শাড়ি, গয়না, স্যান্ডেল, জুতাসহ প্রায় সব ধরনের পোশাকের দাম বেড়েছে।
গায়ে মাখা সাবানের দাম গড়ে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গুঁড়া সাবানের দাম বেড়েছে ৬০-৭০ টাকা। ৭০০ গ্রাম শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা।
নতুন বছরের শুরুতে কমবেশি বাসাভাড়া ও বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন বাড়ানো হয়েছে। খাতা, কলম, পেনসিলসহ প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম আগের চেয়ে বেশি। খাতার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বল পয়েন্ট কলমের দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা।
চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে অনেকে। প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধ এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্যারাসিটামলের মতো অধিক ব্যবহৃত ওষুধের দামও বেড়েছে। ৫০০ এমজির প্যারাসিটামল প্রতিটি ট্যাবলেট ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড-আগে ছিল ১ টাকা ৬৬ পয়সা, এখন ২ টাকা। কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশেরও বেশি; অর্থাৎ আগে যে দামে ওষুধ কেনা যেত, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা গুনতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা থাকে সরকারের হাতে। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, এক্সিপিয়েন্ট, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময়মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে ওষুধের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যই বলছে, গত বছর মে মাসের পর থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা যখন দিশাহারা, এ অবস্থায় জ¦ালানি ও বিদ্যুতের মতো কৌশলগত পণ্যের ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে বাড়ছে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার চারজনের পরিবারের খাবার খরচ আগের চেয়ে অন্তত ৭ হাজার টাকা বেড়েছে। কিন্তু আয় তো আর এত টাকা বাড়েনি।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত উন্নয়ন সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মূল্যস্ফীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের (২০২২ সালের) জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল।
কেউ কেউ সবসময় খুঁজে ফেরে পাদপ্রদীপের আলো, কেউ থাকতে ভালোবাসেন নিভৃতচারী হয়ে। সৈয়দ আশরাফুল হক দ্বিতীয় দলের মানুষ। ক্রিকেট খেলেছেন, ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এখনো ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন। কিন্তু কখনোই এই নিয়ে তাকে আত্মম্ভরী কথাবার্তা বলতে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তির পেছনেও সৈয়দ আশরাফুল হকের ক্রিকেট কূটনীতির অবদান অনেক। অথচ নিভৃতচারী এই মানুষ বলতে গেলে হারিয়েই গেছেন দেশের ক্রিকেট অঙ্গন থেকে, যেখানে এখন শুধুই মৌসুমি ক্রিকেটপ্রেমীদের দাপট।
আসলে সৈয়দ আশরাফুল হক মানুষটাই এমন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বন্ধু আব্দুল হালিম জুয়েলদের সঙ্গে তিনিও যেতে চেয়েছিলেন রণাঙ্গনে। কিন্তু মাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই বিয়ে করা আশরাফুলকে রণাঙ্গনে যেতে দেননি জুয়েল। আশরাফুলের ভাষায়, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি বিয়ে করি। জুয়েল ছিল আমার বিয়ের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু জুয়েল বলেছিল, ‘নতুন বিয়ে করেছিস। যুদ্ধে যাওয়ার দরকার নেই। তুই ঢাকায় থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে পারিস।’ তাই সরাসরি রণাঙ্গনে না গিয়েও ঢাকায় থেকেই ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা যোদ্ধাদের অনেক রকম সহায়তা করেছেন আশরাফুল, নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছেন অপারেশনে। সেনা টহলের মুখে পড়লে কাজে দিত ক্রিকেটার পরিচয়টা, জানান আশরাফুল। তিনি বলেন, ক্র্যাক প্লাটুনের অনেক গেরিলাই আমার বন্ধুবান্ধব ছিল। ওদের নানাভাবে সাহায্য করেছি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে শহীদ রুমি ছিলেন আমার খুব পরিচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে অনেক সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। কতবার যে নিজে গাড়ি চালিয়ে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যদের রসদ নানা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি! একবার তো প্রায় ধরাই পড়ে গিয়েছিলাম। মোহাম্মদপুর থেকে কিছু স্টেনগান আর গ্রেনেড তুলেছি গাড়িতে। ওগুলো ছিল বাজারের চটের ব্যাগে। পথে একটা সেনা চেকপোস্টে গাড়ি দাঁড় করাতে হলো। আমি ভেতরে-ভেতরে শেষ। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে সৈনিককে বললাম, ‘আমি ক্রিকেটার। পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলি।’
যুদ্ধ শেষ হলো, স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশ সফরের দলে নিজ যোগ্যতাতেই জায়গা করে নিলেন আশরাফুল। ‘আসলে আমার মনে হয় ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফির দলে আমিই ছিলাম একমাত্র ক্রিকেটার যার ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। আমি ইংল্যান্ডে পড়ার সময় মিডলসেক্স কাউন্টির লিগে স্থানীয় একটা দলের হয়ে খেলেছি। আমরা ফিজিকে হারাই আর মালয়েশিয়াকে হারাই। আমি মনে করি ডেনমার্ক ও কানাডার বিপক্ষেও আমাদের জেতা উচিত ছিল’, এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আশরাফুল হক। ফিজির বিপক্ষে অফস্পিনে আশরাফুল নিয়েছিলেন ২৩ রানে ৭ উইকেট যা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সেরা বোলিং নৈপুণ্যের রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল। সেসময়ের ক্রিকেটে এখনকার মতো টাকা-পয়সার ঝনঝনানি ছিল না। নৌবাহিনীর ব্যারাকে অনুশীলন, অনেকটা সৈনিক জীবনের মতো শারীরিক প্রশিক্ষণেই হতো দিনের শুরু। সাতসকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার সেই দিনগুলোই আইসিসি ট্রফির আগে দলটাকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করেছিল বলেই বিশ্বাস আশরাফুলের, যদিও আক্ষেপ আছে সেই সফরে দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করার।
ক্রিকেটার জীবনের ইতি টানেন ৮০’র দশকে। এরপরই আশরাফুল হকের সঙ্গে দেখা হয় এমন একজনের, যার সংস্পর্শে এসে ক্রিকেট কূটনীতি আর অর্থনীতির অন্দরমহলে অবাধ প্রবেশাধিকার পেয়ে যান। সেই মানুষটির নাম জগমোহন ডালমিয়া, ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি। যার হাত ধরে ক্রিকেটে লেগেছে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। আশরাফুল হকের সঙ্গে ডালমিয়ার পরিচয় ৮০’র দশকেই। ‘আমি তখন আজাদ বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) একটি দল আসে ঢাকায়, তখন ডালমিয়া ঢাকায় আসেন। সেই থেকে পরিচয়, এরপর তো বলা যায় আমরা এক পরিবারের মতোই হয়ে গেলাম’, বললেন আশরাফুল।
ডালমিয়ার হাত ধরেই ক্রিকেট কূটনীতির অন্দরমহলে নিত্য যাতায়াত শুরু হয় সৈয়দ আশরাফুল হকের। ডালমিয়াই বুঝেছিলেন, ক্রিকেট খেলাটাকে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মুঠো থেকে বের করে আনতে হবে, বুঝতে পেরেছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশের তিন দেশÑ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা মিলে আয়োজন করল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইডেন গার্ডেনসে। চোখ ধাঁধানো লেজার শো আর মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা সেনের হাতে অংশগ্রহণকারী সব দলের অধিনায়কের পতাকা। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজন একা সামলেছেন ‘অ্যাশ’ নামে পরিচিতি পাওয়া আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব উনি (ডালমিয়া) দিলেন আমার হাতে। অথচ কে আমি? বাংলাদেশ তো খেলছেই না! সবটাই হয়েছে ডালমিয়ার জন্য, উনি আমাকে রেখেছেন তাই কেউ কিছু বলেনি। কারণ উনিই ছিলেন বিশ্বকাপের প্রধান আয়োজক, স্থানীয় আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক।’
সফল সেই বিশ্বকাপ আয়োজনের পর ১৯৯৮ সালে ঢাকায় হলো প্রথম মিনি বিশ্বকাপ বা আইসিসি নকআউট ট্রফি, যা এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর খুলে গেল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার দরজা, সেখানে পাকিস্তানকে হারানোর পর দাবি উঠল টেস্ট মর্যাদার। কেনিয়া এবং নেদারল্যান্ডসও টেস্ট মর্যাদার জোরালো দাবিদার, সেখানে কীভাবে বাংলাদেশ তাদের আগে টেস্ট মর্যাদা পেয়ে যায় সেই লম্বা গল্পটাও শুনিয়েছেন আশরাফুল হক। ‘১৯৭৬ সালে আইসিসির বার্ষিক সভাতেই বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে আলোচনা হয়। যেহেতু বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল এবং পরে স্বাধীন হয়েছে, আর পাকিস্তান টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত দেশ তাই বাংলাদেশও টেস্ট মর্যাদা পাবে। এই ছিল আলোচনা, কিন্তু অনেকগুলো দেশ এতে রাজি হয়নি এবং বলা হয় আগে বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী সদস্য হতে। তারপর যখন ১৯৯৭ সালে আমরা আইসিসি ট্রফি জিতলাম তখন আবার এই প্রসঙ্গটা আসল। আমি সাবেরকে (সাবের হোসেন চৌধুরী) বললাম যে, আমাদের একজনকে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট কমিটিতে থাকতে হবে কারণ এই কমিটিই সহযোগী সদস্যদেশগুলো থেকে পরের ধাপে যেতে মনোনয়ন দেবে। একজন কমিটিতে থাকলে ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশের জন্য কাজ করা সহজ হবে। সাবের বলল, ‘আমার তো এখানে প্রথমবার, এখানেই কেউ আমাকে চেনে না। তুমিই নির্বাচন কর।’ নির্বাচনে আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পেলাম। এরপর কমিটি থেকে যখন কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডসের নাম উত্থাপন করার প্রস্তাব হয় তখন আমি বাধা দিয়ে বললাম, না, বাংলাদেশের নাম প্রস্তাব করা হোক। বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতেছে,’ স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন আশরাফুল। এভাবে নানান কৌশলে ও কূটনীতিতে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানদের সম্মতি আদায় করে, আইসিসির প্রণীত কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করে অবশেষে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার দ্বার খুলতে পারেন সাবের-আশরাফুল জুটি। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা না পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে অনেকখানি পিছিয়ে পড়ত তার প্রমাণ তো হাতের কাছেই আছে। কেনিয়া যে হারিয়েই গেছে ক্রিকেট থেকে আর বাংলাদেশের পর আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে ২০১৭ সালে। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ক্রিকেটের যে জোয়ার এসেছিল, টেস্ট মর্যাদা না পেলে তাতে নিশ্চিতভাবেই ধরত ভাটার টান।
১৯৭১ সালের মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের যুবদলের বিপক্ষে খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের উদীয়মান ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া একটি দল। সেই দলে খেলেছিলেন ইমরান খান। ইমরানকে আশরাফুল বলেছিলেন, ‘এরপর ঢাকায় আসতে ভিসা লাগবে।’ ইমরান হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে লন্ডনে ঠিকই আশরাফুলকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনীর এসব কাজকর্মের ব্যাপার তিনি জানতেন না। এই প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে ইমরানের আত্মজীবনীতেও।
খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট মাঠে এবং সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট কূটনীতিতে সুদক্ষ ও কৌশলী আশরাফুল হক কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময়ই থাকেন মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বাঁকবদলের নেপথ্যের নায়ক এখন কাজ করছেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেইসহ নানান দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে। অথচ তার মাপের সংগঠকের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের, কেন পেলেন না সেই প্রশ্ন না হয় তোলাই থাক।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নিরপেক্ষ সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ বর্তমান সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। আজ শনিবার ঢাকার বাইরে সারা দেশের সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে কীভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে, তিনি নিজেও তা জানতেন না বলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় বর্তমান সংবিধানে দেশ চলবে না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্থাপিত ২৭ দফার আলোকে সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজ ক্ষমতাসীনদের চুরির কারণে ব্যাংক খালি, ডলার নেই। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। দেশে আজ গণলুট চলছে। এরা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের সম্পদ লুট করে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলছে, মানুষ গরিব হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তারা বলে উন্নয়ন উন্নয়ন, এমন উন্নয়ন হয়েছে যে মানুষ আজ বিদ্যুৎ পায় না, পানি পায় না, গ্যাস পায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।’ বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে ১৫ বছরে অনেক অত্যাচার হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জনগণকে বাসা থেকে বের হতে হবে, জেগে উঠতে হবে। কারণ সরকার দেশকে ফতুর বানিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আমরা এটি চাইনি, এটি জাতির জন্য লজ্জাকর, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে র্যাব ও পুলিশকে দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এবারও আমেরিকায় অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পাইনি, এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ হয়েছে, সেই গণতন্ত্র হরণের অভিযোগেই গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সারা দেশেই অত্যাচার হচ্ছে, চলছে নৈরাজ্য। আওয়ামী লীগ মূলত সন্ত্রাসী দল। এরা কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। এরা সব সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। গত কয়েক মাসে তারা আমাদের ১০ জন নেতাকে হত্যা করেছে। বেআইনি ও গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। কারণ এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রকামী সব জনতার।’
‘আমার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের মানুষ হাসে। আমাদের পরিষ্কার কথা এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধু নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।’
‘বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করতে না পারলে আপনারা কেন পাহারার নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন। তাহলে কেন পাহারা দেন? এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়েন। সারা দেশের মানুষ নেমে পড়েছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রেখেছেন। তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছেন? বিএনপি কি ভেঙে গেছে; বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।’
সমাবেশ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ থেকে টিকাটুলি-রাজধানী মার্কেট (র্যাব-৩ অফিসের সামনে দিয়ে) স্বামীবাগ-দয়াগঞ্জ-বানিয়ানগর-মোড় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশ দিয়ে ধোলাইখাল-রায়সাহেব বাজার চৌরাস্তা-তাঁতীবাজার মোড় হয়ে নয়াবাজার গিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। এর আগে বেলা ১টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হতে থাকেন মতিঝিল এলাকায়। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি মোশাররফের : গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি করেন দলটির নেতাকর্মীরা। পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। দাবি মানা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথেই ফয়সালা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। বিএনপি কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ শান্তির নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। যারা ভোট ডাকাত, তারা কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
সভা শেষে পদযাত্রা শুরু হয়ে ১১ নম্বর সেক্টর জমজম টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পদযাত্রা : গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্বপান্থপথে এফডিসিসংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়ের সামনে থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) পদযাত্রা শুরু হয়। এরপর মগবাজার হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এতে নেতৃত্ব দেন এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম রাজধানীর মতিঝিলে আরামবাগের নিজস্ব দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।
১২-দলীয় জোটের পদযাত্রা আজ : একই দাবিতে আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে ১২-দলীয় জোট। বিজয়নগর পানির ট্যাংকিসংলগ্ন রাস্তা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, আজাদ প্রোডাক্টসের গলি ঘুরে কালভার্ট রোড হয়ে ফের পানির ট্যাংকির সামনে গিয়ে শেষ হবে।
সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে থাকা বিএনপিকে নষ্ট রাজনীতির হোতা আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এদের কাছে গণতন্ত্র, জনগণ কেউই নিরাপদ নয়।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড লু (যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী) বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। আমেরিকার এ দূতের সঙ্গে কথা বলতে বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছিল, সফল হয়নি। বিএনপি ক্রমেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা-ে দেশের মানুষ খুশি, শুধু মন খারাপ বিএনপির। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলা সংকটেও দেশের মানুষ শেখ হাসিনার ওপর খুশি। শেখ হাসিনার সততায় খুশি। শেখ হাসিনার উন্নয়নে খুশি। মন খারাপ শুধু বিএনপির। তাদের মন খারাপ। উন্নয়ন দেখলে তাদের ভালো লাগে না, অন্তজ্বালায় ভোগে।’
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছর আগের ও পরের মোহাম্মদপুর, দিনরাতের পার্থক্য। মোহাম্মদপুর এখন আলোয় আলোকিত। এটা এখন ডিজিটাল নগরী। এ নগরী এখন উন্নয়নের ঝলকে আলোকোজ্জ্বল। মোহাম্মদপুর, আদাবরের যেদিকেই তাকাবেন উন্নয়ন, শুধু উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশেকে আফগানিস্তান বানাতে চায়। মেয়েদের দমিয়ে রাখতে চায়। অথচ শেখ হাসিনা নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন।’ তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন বিদেশি চ্যানেলে দেখতে পায়। তিনি মাতারবাড়ীতে, পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর বানিয়েছেন, শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে রূপপুর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়েছেন। শেখ হাসিনাই একদিনে ১০০ সেতু, ১০০ রাস্তা উদ্বোধন করেছেন। সংকটের সময়েও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জ¦ালানি, খাদ্যশস্য কিনছেন। কিন্তু দিচ্ছেন কম দামে।
তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়া হচ্ছে খাম্বা ব্যাপারী। তাদের কাজ ছিল লুটপাট করা। হাওয়া ভবনের আরেক নাম খাওয়া ভবন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরা চাকরি করে খায়, তারা ব্যবসা করে না, সাধারণ জীবনযাপন করেন।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, এখন বিএনপির মুখে আবার খই ফুটেছে। তাদের আন্দোলনের নদীতে এখন আর জোয়ার নেই। এ বছর না আগামী বছর, কোন বছর আন্দোলন হবে জানা নেই। তাদের সবকিছুই ভুয়া। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র নিশ্চিত করেন, অন্য কিছু নয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’