
তেলবাহী ওয়াগান দুর্ঘটনার নেপথ্যে রেললাইনের পয়েন্ট (এক রেললাইন থেকে আরেক লাইনে স্থানান্তর পয়েন্ট)। একই পয়েন্টে এর আগে কয়েক দফায় বগি লাইনচ্যুত, তেলবাহী ওয়াগান পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও তোলপাড় হয়নি, কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। গত বুধবার সন্ধ্যায় দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় ৪০ হাজার লিটার তেল পড়ে যাওয়ার পর টনক নড়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এই ধূম্রজালের কারণ জানতে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। একই সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, ৫ নম্বর লাইনের ৫ নম্বর পয়েন্টে দুর্ঘটনা ঘটে; অর্থাৎ এই পয়েন্টে দুটি ওয়াগন পড়ে যায়। তারা জানান, ট্রেনটিতে ১৬টি ওয়াগন ছিল। এর মধ্যে ইঞ্জিনসহ প্রথম ১২টি ওয়াগন পয়েন্ট পার হয়ে যায়। ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন দুটির চাকা রেললাইন থেকে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অন্যদিকে পরের ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়াগন দুটি লাইনে ছিল। সেগুলো লাইনচ্যুত হয়নি।
প্রথম ১২টি ওয়াগন পার হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী দুটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হলো কেন? রেললাইন মেরামত ও পয়েন্টের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ভাষ্য, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগনের চাকায় হয়তো কোনো সমস্যা ছিল। সেই সমস্যার কারণে গাড়ির চালক ব্রেক করার কারণে তা ঝাঁকুনি খেয়েছে এবং এতে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে। আর যেহেতু ওয়াগনগুলো তেলে পরিপূর্ণ ছিল তাই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি।
তবে তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। রেলওয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক বিন আনোয়ার। তিনি গতকাল দুপুর ১২টার সময় তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি আলোচিত সেই পয়েন্টের মাপ নেন, পয়েন্ট অন-অফ করে রেললাইন চেক করেন, সর্বশেষ ডামি ট্রেন পরিচালনা করে পরীক্ষাও করেন।
ঘটনাস্থলে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে জানান, এই পয়েন্টের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ ট্রেনটি অতিক্রম করার সময় রেললাইনের পাতের ব্যবধান সঠিক থাকছে না। এ জায়গায় আরও কয়েক দফা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের সহকারী চালক ওয়াদুদ হোসেনের সঙ্গে। ১২টি পার হওয়ার পর ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন পড়ে গেল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তেল নিয়ে সিজিপিওয়াই (চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড) প্রবেশ করছিলাম। এ সময় ৫ নম্বর পয়েন্টে ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। এটা রেললাইন বা পয়েন্ট কী কারণে হয়েছে, তা আমি বলতে পারব না।’
ব্রেক করেছিলেন কি না জানতে চাইলে ওয়াদুদ বলেন, এই পয়েন্টে গাড়ি চলে হাঁটার গতিতে (ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার)। তাই ব্রেক করার প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ইয়ার্ডে কাজ করে আসছেন ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক। তিনি বলেন, ‘এই পয়েন্টে সমস্যা রয়েছে। আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। এবার তেল বেশি পড়েছে। প্রতিবার দুর্ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হতো না।’
এদিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে রেলওয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তেল পড়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর সঠিক কারণ শনাক্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য গঠিত কমিটির রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কমিটিকে বলেছি, আজকের (শুক্রবার) মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপকের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে।’
তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে কি না জানতে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কথা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি মনে হয় আজ রিপোর্ট জমা দিতে পারবে না। শনিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
দুর্ঘটনাকবলিত ওয়াগন থেকে কী পরিমাণ তেল পড়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, লাইনচ্যুত হওয়া তিনটি ওয়াগনের মধ্যে একটি থেকে কোনো তেল পড়েনি। বাকি দুটি ওয়াগনের একটার প্রায় সব তেল পড়ে গেছে এবং অপর ওয়াগনের এক-তৃতীয়াংশ পড়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার লিটার হতে পারে। পড়ে যাওয়া তেল রেললাইন থেকে ছোট নালার মাধ্যমে দূরে গিয়ে মহেশখালে পড়ে। সেখান থেকে কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশতে পারে। এতে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে। এসব তেল যমুনা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানির ডিপো থেকে ওয়াগন দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছিল। তেল কোম্পানি থেকে তেল এনে সিজিপিওয়াইতে রাখা হয়। পরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব তেল পাঠানো হয়।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার নতুন দুয়ার নগর পরিবহনে মেট্রোরেল উন্মোচন করেছে। বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এত কিছুর পরও রাজধানীরজুড়ে সড়কে এখনো দাপিয়ে বেড়ায় ফিটনেসবিহীন বাস। এই নিম্নমানের বাসগুলোর দিকে তাকালে দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে আসা অনেকেই ভাবতে পারেন বাংলাদেশে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলেও সেকালের গরিবি বাসে সয়লাব শহরজুড়ে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নানা সময় বাসগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিলেও সেভাবে মনিটরিং না করায় বছরের পর বছর বাসগুলো সড়কে চলছে। তবে বাস মালিক সমিতি থেকে এই মাসে বাসগুলো বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন সমিতির নেতারা।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেইট, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন বাস প্রকাশ্যে চলছে। মাঝপথে অনেক বাস বন্ধ হতে দেখা যায়। বেশিরভাগ বাসের সিট ভাঙা, নেই ভালো বসার স্থান। আর বাসগুলো থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে পরিবেশের মারাত্মক হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে খারাপ বাস চলতে দেখা যায় পুরান ঢাকার বাবুবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত রোডে। এই রোডে শতভাগ বাসের ফিটনেস নেই বললেই চলে।
ভোলার বাসিন্দা মো. যুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার জেলা-উপজেলায় ঢাকার চেয়ে উন্নত মানের বাসগুলো চলে। সিটিতে চলা বেশিরভাগ বাসে ভালোভাবে বসা যায় না। সিটগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। আর কিছু বাস দেখতে সুন্দর হলেও ভেতরে দেখা যায় নানা সমস্যা। এই রকম অবস্থা দেখে আসছি বছরের পর বছর। কোনো উন্নতি নেই এই বাসগুলোর।
ঢাকায় নিয়মিত বাসে চলাচল করা মো. ইমন নামের এক যাত্রী জানান, বাসগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায় সড়কে এত দুর্ঘটনা কেন ঘটে। এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলো দিনের পর দিন সড়কে চলছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। তবে কিছু হলে তেলের অজুহাতে ভাড়া বাড়ান বাস মালিকরা।
সদরঘাট থেকে মিরপুর রোডে চলাচল করা তানজীল পরিবহনের এক বাসচালক মো. তানভির বলেন, ‘মালিক যে বাস দেন সেটি চালাই। এখন পুরনো হোক বা নতুন হোক আমাদের তো আর কিছু বলার নেই। আমি না চালালে অন্য কেউ তো আর বসে থাকবে না।’
পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে গাবতলী পর্যন্ত চলা একটি ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় ‘প্রত্যয় পরিবহন’র একটি বাসের চালক মো. সিফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাত্রীরা যখন বাসে ওঠেন আমাদের সঙ্গে বাগ্বিত-া লেগেই থাকে বাসের এই অবস্থার জন্য। শুনলাম সামনে নতুন বাস নামাবেন মালিক। এর থেকে বেশি আর বলতে পারছি না।’
বাবুবাজার রোডে চলাচল করা একটি পরিবহনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ গাড়ি চলে এই রোডে। এই এলাকায় বাস নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। তাদের জন্য নতুন বাস নামানো যায় না। আর এই ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয় প্রতিটি জায়গায়।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে শুনে আসছি এসব ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা। কিন্তু এই বাসগুলো বন্ধে সেভাবে পদক্ষেপ আজও নিতে দেখিনি। ফলে এই বাসগুলো রাস্তায় চলাচল করায় সড়কে দিনের পর দিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের মতো এত অত্যাধুনিক পরিবহন শহরের যোগাযোগে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কে দেখা যায় সেই পুরনো ফিটনেসবিহীন বাস। এসব বাস বন্ধের জন্য বাস মালিক সমিতি ও বিআরটিএ একসঙ্গে বসে ফিটনেসবিহীন বাসের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত। খুব দ্রুত এই বাসগুলোর বিষয়ে মনিটরিং বাড়িয়ে যেগুলো চলাচলের অনুপযোগী, সেগুলোকে অপসারণ করা দরকার।’
চলতি মাসেই ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মাস থেকেই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ফিটনেসবিহীন বাস কোনোভাবেই সড়কে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। আর বাবুবাজার রোডে যেসব ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করে সেগুলো আমাদের সমিতির আওতায় নেই বলে জানান তিনি।
ডলার সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। প্রায় সব খাতেই খরচ বেড়েছে। নীরবে মূল্যবৃদ্ধির এ ধাক্কা সামলাতে গিয়ে বেসামাল স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত।
আর্থিক সংকটে অনেকে বাধ্য হয়েই পরিবারের নিয়মিত অনেক খরচ কাটছাঁট করেছে। ডিম, বড় মাছ, মাংস, দুধসহ অনেক কিছু নিয়মিত খাবারের তালিকা থেকে হয় বাদ দিয়ে, না হয় কমিয়ে দিয়েছে। সে তালিকায় যোগ হয়েছে কম দামি খাবার।
খরচ বেড়ে যাওয়ায় অন্য খাতে কাটছাঁট করতে গিয়ে অনেকে পাারিবারিক অনুষ্ঠান ও মেহমান দাওয়াত দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে আপতত এসব আয়োজন বন্ধ রেখেছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, খরচ বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। আর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করলেও দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে অসাধু ব্যববায়ীদের কারসাজিতে অনেক খাতে দাম যতটা বাড়ার, বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি এমন কথাও বলেছেন তারা।
সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মতে, এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছয় মাস ধরে কম-বেশি প্রায় সব খাতে খরচ বেড়েই চলেছে। অথচ ব্যবসায় সুবাতাস নেই। চাকরিতেও বেতন বাড়ার সুখবর তেমন শোনা যায় না। খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ কষ্টে পড়েছেন বেশি। প্রতি দিনের সংসার খরচ চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে অনেক পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। যা কিনছি তা-ও বেশি দামে। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করলেও আগের চেয়ে দাম বেশি পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে দাম বেশি রাখছেন না। তবে এটা সত্য অনেক সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে দাম যতটা বাড়ার, তার চেয়ে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটা চালের দাম খানিকটা স্থিতিশীল। কিন্তু গত ছয় মাসে অনেকটাই বেড়েছে। অন্যদিকে শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ বাড়ানোর পরও চালের দাম কমেনি। মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করা প্রতি কেজি ভালো মানের চাল দুই মাস আগে ৭২ টাকায় কিনতে পারলেও এখন ৭৮ টাকা। ৭০ টাকা কেজির নাজির শাইল এখন ৭৫-৮০ টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। এক কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ৭০ টাকা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর দেওয়া বাংলাদেশের দানাদার খাদ্যবিষয়ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বেশি দামে আটা কিনতে না পারায় দেশের মানুষের বড় অংশ রুটি, বিস্কুট ও আটা-ময়দা থেকে তৈরি খাদ্য কম খাচ্ছে। দাম বেশি থাকায় আটার তৈরি খাবারের বদলে মানুষ ভাত খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছয় মাসে প্রায় সব ধরনের বিস্কুটের দাম বেড়েছে গড়ে ২০-৩০ টাকা। চানাচুরের দাম প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা এবং মুড়ির দাম প্রতি কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে।
এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ ভাগ। সর্বশেষ ৭ টাকা বেড়ে বোতলজাত এক লিটারের দাম এখন ১৮৭ ১৯০ টাকা। আর খোলাটা লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮০ টাকা।
শীতকাল শেষ। কিন্তু শীতে ভরা মৌসুমেও অনেকের সাধ্যের বাইরে ছিল শাকসবজি। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিবেদন বলছে, দেশে খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ৬৮ শতাংশ মানুষ। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং আয় না বাড়ায় নানাভাবে সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে। যেমন সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ আলু খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, এক মাস আগে ঢাকার বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৬০-৭০০ টাকা। আর খাসির মাংসের দাম ছিল ৯০০-১০০০ টাকা। এখন খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০-২০০ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে বাজারে গরুর মাসের দাম বেড়ে হয়েছে কেজি ৭০০-৭৫০ টাকা।
ফার্মের মুরগি, ডিম, দুধ ও মাছের মতো সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারের দাম চড়া। তেলাপিয়া, পাঙাশের মতো মাছ কিংবা অ্যাংকর ডালও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বড় আকারের তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। বাদামি রঙের ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা। এক মাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১১০-১১৫ টাকা। সাধারণ মানুষের প্রোটিনের বড় আরেকটি উৎস ব্রয়লার মুরগি। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা। টিসিবি বলছে, মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে। কম নেই সোনালি মুরগির দামও। গত মাসে ২৬০ কেজি দরে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম এখন ৩৫০ টাকায় ঠেকেছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।
তরল দুধের দাম এক বছরে লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) এক লিটার দুধের দাম এখন ৯০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, এক বছরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে ২৭-৩৫ টাকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, আট ধরনের প্রাণিজ আমিষে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান আছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে মাছ, মাংস, সামুদ্রিক খাবারসহ পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারছে দেশের মাত্র ১৭ শতাংশ পরিবার।
সব ধরনের প্যাকেটজাত মসলার দাম বেড়েছে। প্যাকেটজাত মসলার দাম গড়ে প্রতি কেজি বেড়েছে ১৩০ টাকা। মসুরের ডাল রকমভেদে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২৮ টাকা। চিনির দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন খোলা ১১০ ও প্যাকেটজাত ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা, রসুন ও আদার দাম কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। ৩৫০ টাকার প্রতি কেজি জিরা এখন ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবণের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা।
এক বছরে খাদ্যপণ্যের সঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের খরচও বেড়েছে। সাবান, শ্যাম্পু, দাঁতের মাজন, শাড়ি, গয়না, স্যান্ডেল, জুতাসহ প্রায় সব ধরনের পোশাকের দাম বেড়েছে।
গায়ে মাখা সাবানের দাম গড়ে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গুঁড়া সাবানের দাম বেড়েছে ৬০-৭০ টাকা। ৭০০ গ্রাম শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা।
নতুন বছরের শুরুতে কমবেশি বাসাভাড়া ও বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন বাড়ানো হয়েছে। খাতা, কলম, পেনসিলসহ প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম আগের চেয়ে বেশি। খাতার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বল পয়েন্ট কলমের দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা।
চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে অনেকে। প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধ এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্যারাসিটামলের মতো অধিক ব্যবহৃত ওষুধের দামও বেড়েছে। ৫০০ এমজির প্যারাসিটামল প্রতিটি ট্যাবলেট ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড-আগে ছিল ১ টাকা ৬৬ পয়সা, এখন ২ টাকা। কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশেরও বেশি; অর্থাৎ আগে যে দামে ওষুধ কেনা যেত, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা গুনতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা থাকে সরকারের হাতে। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, এক্সিপিয়েন্ট, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময়মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে ওষুধের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যই বলছে, গত বছর মে মাসের পর থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা যখন দিশাহারা, এ অবস্থায় জ¦ালানি ও বিদ্যুতের মতো কৌশলগত পণ্যের ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে বাড়ছে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার চারজনের পরিবারের খাবার খরচ আগের চেয়ে অন্তত ৭ হাজার টাকা বেড়েছে। কিন্তু আয় তো আর এত টাকা বাড়েনি।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত উন্নয়ন সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মূল্যস্ফীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের (২০২২ সালের) জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল।
কেউ কেউ সবসময় খুঁজে ফেরে পাদপ্রদীপের আলো, কেউ থাকতে ভালোবাসেন নিভৃতচারী হয়ে। সৈয়দ আশরাফুল হক দ্বিতীয় দলের মানুষ। ক্রিকেট খেলেছেন, ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এখনো ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন। কিন্তু কখনোই এই নিয়ে তাকে আত্মম্ভরী কথাবার্তা বলতে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তির পেছনেও সৈয়দ আশরাফুল হকের ক্রিকেট কূটনীতির অবদান অনেক। অথচ নিভৃতচারী এই মানুষ বলতে গেলে হারিয়েই গেছেন দেশের ক্রিকেট অঙ্গন থেকে, যেখানে এখন শুধুই মৌসুমি ক্রিকেটপ্রেমীদের দাপট।
আসলে সৈয়দ আশরাফুল হক মানুষটাই এমন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বন্ধু আব্দুল হালিম জুয়েলদের সঙ্গে তিনিও যেতে চেয়েছিলেন রণাঙ্গনে। কিন্তু মাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই বিয়ে করা আশরাফুলকে রণাঙ্গনে যেতে দেননি জুয়েল। আশরাফুলের ভাষায়, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি বিয়ে করি। জুয়েল ছিল আমার বিয়ের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু জুয়েল বলেছিল, ‘নতুন বিয়ে করেছিস। যুদ্ধে যাওয়ার দরকার নেই। তুই ঢাকায় থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে পারিস।’ তাই সরাসরি রণাঙ্গনে না গিয়েও ঢাকায় থেকেই ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা যোদ্ধাদের অনেক রকম সহায়তা করেছেন আশরাফুল, নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছেন অপারেশনে। সেনা টহলের মুখে পড়লে কাজে দিত ক্রিকেটার পরিচয়টা, জানান আশরাফুল। তিনি বলেন, ক্র্যাক প্লাটুনের অনেক গেরিলাই আমার বন্ধুবান্ধব ছিল। ওদের নানাভাবে সাহায্য করেছি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে শহীদ রুমি ছিলেন আমার খুব পরিচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে অনেক সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। কতবার যে নিজে গাড়ি চালিয়ে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যদের রসদ নানা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি! একবার তো প্রায় ধরাই পড়ে গিয়েছিলাম। মোহাম্মদপুর থেকে কিছু স্টেনগান আর গ্রেনেড তুলেছি গাড়িতে। ওগুলো ছিল বাজারের চটের ব্যাগে। পথে একটা সেনা চেকপোস্টে গাড়ি দাঁড় করাতে হলো। আমি ভেতরে-ভেতরে শেষ। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে সৈনিককে বললাম, ‘আমি ক্রিকেটার। পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলি।’
যুদ্ধ শেষ হলো, স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশ সফরের দলে নিজ যোগ্যতাতেই জায়গা করে নিলেন আশরাফুল। ‘আসলে আমার মনে হয় ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফির দলে আমিই ছিলাম একমাত্র ক্রিকেটার যার ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। আমি ইংল্যান্ডে পড়ার সময় মিডলসেক্স কাউন্টির লিগে স্থানীয় একটা দলের হয়ে খেলেছি। আমরা ফিজিকে হারাই আর মালয়েশিয়াকে হারাই। আমি মনে করি ডেনমার্ক ও কানাডার বিপক্ষেও আমাদের জেতা উচিত ছিল’, এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আশরাফুল হক। ফিজির বিপক্ষে অফস্পিনে আশরাফুল নিয়েছিলেন ২৩ রানে ৭ উইকেট যা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সেরা বোলিং নৈপুণ্যের রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল। সেসময়ের ক্রিকেটে এখনকার মতো টাকা-পয়সার ঝনঝনানি ছিল না। নৌবাহিনীর ব্যারাকে অনুশীলন, অনেকটা সৈনিক জীবনের মতো শারীরিক প্রশিক্ষণেই হতো দিনের শুরু। সাতসকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার সেই দিনগুলোই আইসিসি ট্রফির আগে দলটাকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করেছিল বলেই বিশ্বাস আশরাফুলের, যদিও আক্ষেপ আছে সেই সফরে দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করার।
ক্রিকেটার জীবনের ইতি টানেন ৮০’র দশকে। এরপরই আশরাফুল হকের সঙ্গে দেখা হয় এমন একজনের, যার সংস্পর্শে এসে ক্রিকেট কূটনীতি আর অর্থনীতির অন্দরমহলে অবাধ প্রবেশাধিকার পেয়ে যান। সেই মানুষটির নাম জগমোহন ডালমিয়া, ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি। যার হাত ধরে ক্রিকেটে লেগেছে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। আশরাফুল হকের সঙ্গে ডালমিয়ার পরিচয় ৮০’র দশকেই। ‘আমি তখন আজাদ বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) একটি দল আসে ঢাকায়, তখন ডালমিয়া ঢাকায় আসেন। সেই থেকে পরিচয়, এরপর তো বলা যায় আমরা এক পরিবারের মতোই হয়ে গেলাম’, বললেন আশরাফুল।
ডালমিয়ার হাত ধরেই ক্রিকেট কূটনীতির অন্দরমহলে নিত্য যাতায়াত শুরু হয় সৈয়দ আশরাফুল হকের। ডালমিয়াই বুঝেছিলেন, ক্রিকেট খেলাটাকে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মুঠো থেকে বের করে আনতে হবে, বুঝতে পেরেছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশের তিন দেশÑ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা মিলে আয়োজন করল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইডেন গার্ডেনসে। চোখ ধাঁধানো লেজার শো আর মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা সেনের হাতে অংশগ্রহণকারী সব দলের অধিনায়কের পতাকা। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজন একা সামলেছেন ‘অ্যাশ’ নামে পরিচিতি পাওয়া আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব উনি (ডালমিয়া) দিলেন আমার হাতে। অথচ কে আমি? বাংলাদেশ তো খেলছেই না! সবটাই হয়েছে ডালমিয়ার জন্য, উনি আমাকে রেখেছেন তাই কেউ কিছু বলেনি। কারণ উনিই ছিলেন বিশ্বকাপের প্রধান আয়োজক, স্থানীয় আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক।’
সফল সেই বিশ্বকাপ আয়োজনের পর ১৯৯৮ সালে ঢাকায় হলো প্রথম মিনি বিশ্বকাপ বা আইসিসি নকআউট ট্রফি, যা এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর খুলে গেল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার দরজা, সেখানে পাকিস্তানকে হারানোর পর দাবি উঠল টেস্ট মর্যাদার। কেনিয়া এবং নেদারল্যান্ডসও টেস্ট মর্যাদার জোরালো দাবিদার, সেখানে কীভাবে বাংলাদেশ তাদের আগে টেস্ট মর্যাদা পেয়ে যায় সেই লম্বা গল্পটাও শুনিয়েছেন আশরাফুল হক। ‘১৯৭৬ সালে আইসিসির বার্ষিক সভাতেই বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে আলোচনা হয়। যেহেতু বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল এবং পরে স্বাধীন হয়েছে, আর পাকিস্তান টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত দেশ তাই বাংলাদেশও টেস্ট মর্যাদা পাবে। এই ছিল আলোচনা, কিন্তু অনেকগুলো দেশ এতে রাজি হয়নি এবং বলা হয় আগে বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী সদস্য হতে। তারপর যখন ১৯৯৭ সালে আমরা আইসিসি ট্রফি জিতলাম তখন আবার এই প্রসঙ্গটা আসল। আমি সাবেরকে (সাবের হোসেন চৌধুরী) বললাম যে, আমাদের একজনকে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট কমিটিতে থাকতে হবে কারণ এই কমিটিই সহযোগী সদস্যদেশগুলো থেকে পরের ধাপে যেতে মনোনয়ন দেবে। একজন কমিটিতে থাকলে ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশের জন্য কাজ করা সহজ হবে। সাবের বলল, ‘আমার তো এখানে প্রথমবার, এখানেই কেউ আমাকে চেনে না। তুমিই নির্বাচন কর।’ নির্বাচনে আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পেলাম। এরপর কমিটি থেকে যখন কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডসের নাম উত্থাপন করার প্রস্তাব হয় তখন আমি বাধা দিয়ে বললাম, না, বাংলাদেশের নাম প্রস্তাব করা হোক। বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতেছে,’ স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন আশরাফুল। এভাবে নানান কৌশলে ও কূটনীতিতে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানদের সম্মতি আদায় করে, আইসিসির প্রণীত কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করে অবশেষে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার দ্বার খুলতে পারেন সাবের-আশরাফুল জুটি। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা না পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে অনেকখানি পিছিয়ে পড়ত তার প্রমাণ তো হাতের কাছেই আছে। কেনিয়া যে হারিয়েই গেছে ক্রিকেট থেকে আর বাংলাদেশের পর আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে ২০১৭ সালে। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ক্রিকেটের যে জোয়ার এসেছিল, টেস্ট মর্যাদা না পেলে তাতে নিশ্চিতভাবেই ধরত ভাটার টান।
১৯৭১ সালের মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের যুবদলের বিপক্ষে খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের উদীয়মান ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া একটি দল। সেই দলে খেলেছিলেন ইমরান খান। ইমরানকে আশরাফুল বলেছিলেন, ‘এরপর ঢাকায় আসতে ভিসা লাগবে।’ ইমরান হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে লন্ডনে ঠিকই আশরাফুলকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনীর এসব কাজকর্মের ব্যাপার তিনি জানতেন না। এই প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে ইমরানের আত্মজীবনীতেও।
খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট মাঠে এবং সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট কূটনীতিতে সুদক্ষ ও কৌশলী আশরাফুল হক কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময়ই থাকেন মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বাঁকবদলের নেপথ্যের নায়ক এখন কাজ করছেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেইসহ নানান দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে। অথচ তার মাপের সংগঠকের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের, কেন পেলেন না সেই প্রশ্ন না হয় তোলাই থাক।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নিরপেক্ষ সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ বর্তমান সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। আজ শনিবার ঢাকার বাইরে সারা দেশের সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে কীভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে, তিনি নিজেও তা জানতেন না বলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় বর্তমান সংবিধানে দেশ চলবে না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্থাপিত ২৭ দফার আলোকে সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজ ক্ষমতাসীনদের চুরির কারণে ব্যাংক খালি, ডলার নেই। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। দেশে আজ গণলুট চলছে। এরা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের সম্পদ লুট করে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলছে, মানুষ গরিব হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তারা বলে উন্নয়ন উন্নয়ন, এমন উন্নয়ন হয়েছে যে মানুষ আজ বিদ্যুৎ পায় না, পানি পায় না, গ্যাস পায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।’ বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে ১৫ বছরে অনেক অত্যাচার হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জনগণকে বাসা থেকে বের হতে হবে, জেগে উঠতে হবে। কারণ সরকার দেশকে ফতুর বানিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আমরা এটি চাইনি, এটি জাতির জন্য লজ্জাকর, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে র্যাব ও পুলিশকে দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এবারও আমেরিকায় অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পাইনি, এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ হয়েছে, সেই গণতন্ত্র হরণের অভিযোগেই গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সারা দেশেই অত্যাচার হচ্ছে, চলছে নৈরাজ্য। আওয়ামী লীগ মূলত সন্ত্রাসী দল। এরা কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। এরা সব সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। গত কয়েক মাসে তারা আমাদের ১০ জন নেতাকে হত্যা করেছে। বেআইনি ও গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। কারণ এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রকামী সব জনতার।’
‘আমার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের মানুষ হাসে। আমাদের পরিষ্কার কথা এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধু নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।’
‘বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করতে না পারলে আপনারা কেন পাহারার নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন। তাহলে কেন পাহারা দেন? এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়েন। সারা দেশের মানুষ নেমে পড়েছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রেখেছেন। তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছেন? বিএনপি কি ভেঙে গেছে; বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।’
সমাবেশ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ থেকে টিকাটুলি-রাজধানী মার্কেট (র্যাব-৩ অফিসের সামনে দিয়ে) স্বামীবাগ-দয়াগঞ্জ-বানিয়ানগর-মোড় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশ দিয়ে ধোলাইখাল-রায়সাহেব বাজার চৌরাস্তা-তাঁতীবাজার মোড় হয়ে নয়াবাজার গিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। এর আগে বেলা ১টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হতে থাকেন মতিঝিল এলাকায়। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি মোশাররফের : গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি করেন দলটির নেতাকর্মীরা। পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। দাবি মানা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথেই ফয়সালা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। বিএনপি কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ শান্তির নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। যারা ভোট ডাকাত, তারা কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
সভা শেষে পদযাত্রা শুরু হয়ে ১১ নম্বর সেক্টর জমজম টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পদযাত্রা : গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্বপান্থপথে এফডিসিসংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়ের সামনে থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) পদযাত্রা শুরু হয়। এরপর মগবাজার হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এতে নেতৃত্ব দেন এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম রাজধানীর মতিঝিলে আরামবাগের নিজস্ব দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।
১২-দলীয় জোটের পদযাত্রা আজ : একই দাবিতে আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে ১২-দলীয় জোট। বিজয়নগর পানির ট্যাংকিসংলগ্ন রাস্তা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, আজাদ প্রোডাক্টসের গলি ঘুরে কালভার্ট রোড হয়ে ফের পানির ট্যাংকির সামনে গিয়ে শেষ হবে।
সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে থাকা বিএনপিকে নষ্ট রাজনীতির হোতা আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এদের কাছে গণতন্ত্র, জনগণ কেউই নিরাপদ নয়।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড লু (যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী) বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। আমেরিকার এ দূতের সঙ্গে কথা বলতে বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছিল, সফল হয়নি। বিএনপি ক্রমেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা-ে দেশের মানুষ খুশি, শুধু মন খারাপ বিএনপির। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলা সংকটেও দেশের মানুষ শেখ হাসিনার ওপর খুশি। শেখ হাসিনার সততায় খুশি। শেখ হাসিনার উন্নয়নে খুশি। মন খারাপ শুধু বিএনপির। তাদের মন খারাপ। উন্নয়ন দেখলে তাদের ভালো লাগে না, অন্তজ্বালায় ভোগে।’
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছর আগের ও পরের মোহাম্মদপুর, দিনরাতের পার্থক্য। মোহাম্মদপুর এখন আলোয় আলোকিত। এটা এখন ডিজিটাল নগরী। এ নগরী এখন উন্নয়নের ঝলকে আলোকোজ্জ্বল। মোহাম্মদপুর, আদাবরের যেদিকেই তাকাবেন উন্নয়ন, শুধু উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশেকে আফগানিস্তান বানাতে চায়। মেয়েদের দমিয়ে রাখতে চায়। অথচ শেখ হাসিনা নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন।’ তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন বিদেশি চ্যানেলে দেখতে পায়। তিনি মাতারবাড়ীতে, পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর বানিয়েছেন, শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে রূপপুর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়েছেন। শেখ হাসিনাই একদিনে ১০০ সেতু, ১০০ রাস্তা উদ্বোধন করেছেন। সংকটের সময়েও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জ¦ালানি, খাদ্যশস্য কিনছেন। কিন্তু দিচ্ছেন কম দামে।
তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়া হচ্ছে খাম্বা ব্যাপারী। তাদের কাজ ছিল লুটপাট করা। হাওয়া ভবনের আরেক নাম খাওয়া ভবন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরা চাকরি করে খায়, তারা ব্যবসা করে না, সাধারণ জীবনযাপন করেন।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, এখন বিএনপির মুখে আবার খই ফুটেছে। তাদের আন্দোলনের নদীতে এখন আর জোয়ার নেই। এ বছর না আগামী বছর, কোন বছর আন্দোলন হবে জানা নেই। তাদের সবকিছুই ভুয়া। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র নিশ্চিত করেন, অন্য কিছু নয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।