
বর্তমানে বাংলাদেশে যে শ্রম আইন রয়েছে তা আরও যুগোপযোগী ও শ্রমিকবান্ধব করে সংশোধনের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকার বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে যে শ্রম আইনের সংশোধন করলেই কেবল বন্ধ থাকা ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস’ বা (জিএসপি) সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা চালু হবে।
বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটি আরও জানিয়েছে, দ্রুত জিএসপি সুবিধা পেতে চাইলে বাংলাদেশকে শ্রম আইন সংশোধন করতেই হবে।
ঢাকায় সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দেশটির এ অবস্থান জানিয়ে যান বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। দেশ রূপান্তরকে তারা বলেন, এখনই শ্রম আইন সংশোধন করার সুযোগ সরকারের হাতে নেই।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্যভুক্ত এবং স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। এর অন্যতম একটি সুবিধা হলো বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য-সুবিধা।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পেতে শুরু করে। ২০১৩ সালের জুনে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, শ্রমিকদের অধিকার ও শ্রমিকদের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রভাবশালী এ দেশটি বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেন বলে জানিয়েছেন এ দুটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য।
গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান। উপস্থিত ছিলেন দুই কমিটির সদস্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মজিদ খান, নাবিল আহমেদ ও নিজাম উদ্দিন জলিল ডন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা ও দেশের সব ইপিজেডে শ্রমিকদের দাবি আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সংশ্লিষ্ট আইনে রাখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান ডোনাল্ড লু। বৈঠকে তিনি বলেন, শ্রম আইনে শ্রমিকের কল্যাণ নিহিত থাকতে হবে। সব শিল্প ও শিল্পাঞ্চল শ্রমিকবান্ধব করে তুলতে আইনি নীতিমালা থাকতে হবে।
অবশ্য বৈঠকে দুই মন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে অবহিত করেন যে শ্রম আইন সংশোধন এখনই সম্ভব নয়; বিশেষ করে ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিয়ে শ্রম আইন সংশোধন করা সম্ভব নয়।
দুই মন্ত্রীই লুকে আরও বলেন, ইপিজেডে ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আশ^স্ত করা হয়েছে এখানে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকবে না। এখন শ্রম আইন সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি দেওয়া হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেঁকে বসতে পারে। ওই সব অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন না করতে নির্দেশনা থাকলেও ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি করার অনুমোদন আছে। তাতে করে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে লুর কাছ থেকে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই বৈঠক সূত্র আরও জানায়, শ্রম আইন সংশোধন করার পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে বন্ধ থাকা জিএসপি সুবিধার জটিলতা শিগগিরই সমাধান হবে না তাদের এমন অবস্থান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ডোনাল্ড লু জানিয়ে দিয়েছেন, জিএসপি জট খুলতে শ্রম আইন সংশোধন করা খুবই জরুরি। শ্রমিক কল্যাণ সমিতি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সেটা যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার মনে করে, শ্রমিক ইউনিয়ন-জাতীয় কোনো সংগঠন ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে তোলার সুযোগ পেলে যেকোনো ইস্যুতে শ্রমিকরা আন্দোলন সংঘটিত করার চেষ্টা করবেন। তাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কাজের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। এসব শঙ্কা মাথায় রেখেই শ্রম আইন এখনই সংশোধন করতে চায় না সরকার।
সরকার না চাইলেও শ্রম আইন সংশোধন এখন না করলে বাংলাদেশের জন্য আরও বিপদ অপেক্ষা করছে বলে জানান আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। তারা বলছেন, ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ না দিলে বাংলাদেশ বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। তাই বিষয়টি সরকার বিবেচনায় রেখেছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই তো ট্রেড ইউনিয়ন চান না। দেখা যাক, ভবিষ্যতে কী হয়।’
সরকার কেন ব্যবসা করবে-হরদম এ প্রশ্ন শোনা যায়। সরকার পলিসি করবে, যার আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করবে। সেই ব্যবসা তদারকি করবে সরকার-এটাকে আদর্শ মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
সরকার ব্যবসা করতে চায় না। তারপরও সরকারকে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। সাধারণ মানুষ যেন বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি না হয়ে পড়ে সেজন্য কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কোনো বিশেষ সময়ে প্রয়োজনে যাতে হস্তক্ষেপ করা যায়, সেজন্যই এমন উদ্যোগ।
জনকল্যাণের জন্য সরকার এ ধরনের কাজে নামলেও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানই এই কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সেবার দাম না দিয়ে, প্রয়োজনের সময় সাড়া না দিয়ে কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাফ পাওয়ার আশায় বকেয়ার বিষয়গুলো জিইয়ে রাখে। এক সরকারি প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে মামলা-মোকদ্দমা করে। এসব বাধা ডিঙ্গিয়ে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে পারে না। ধুঁকতে থাকা এসব বাণিজ্যিক সংস্থার আন্তঃলেনদেনে সরকারি আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাজ হচ্ছে আকাশ পথে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা বা নিরাপদ করা। এই যান চলাচল নিরাপদ করতে গিয়ে এভিয়েশন অথরিটি বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এই বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যয় করে বলেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বছরে আড়াই থেকে তিনশ কোটি টাকা মুনাফার গল্প বানাতে পারে। বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোও চুটিয়ে মুনাফা করতে পারে। বিমান নিজে মুনাফার দাবি করলেও সিভিল এভিয়েশনের পাওনা টাকা পরিশোধ করে না। বছরের পর বছর তারা বকেয়া টাকা আটকে রাখে। সিভিল এভিয়েশন সুদে আসলে সেই টাকার হিসাব রাখে বছরের পর বছর। এই হিসাব রাখতে গিয়ে সিভিল এভিয়েশনকে তাদের হিসাব বিভাগের বহর বাড়াতে হয়। আর বিমান তক্কে তক্কে থাকে কখন এই দায় থেকে অব্যাহতি চাইবে। জরুরি প্রয়োজনে যখন সরকারের তরফ থেকে বিমানকে ডাকা হয়, তখনই বিমান বলে তার পিঠের ওপর চাপানো দায় শোধ করার জন্য।
গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিমানের কাছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির বকেয়া পাওনা ৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে মূল বিল ৯৮৮ কোটি টাকা, ভ্যাট ও আয়কর ৪৩১ কোটি টাকা এবং বকেয়া রাজস্বের ওপর সারচার্জ ৬ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এ পাওনা আদায়ের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
কিন্তু বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, আরে ধুৎ, এত হয় কী করে। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা হতে পারে। এভিয়েশন অথরিটি লিখে রাখলেই হলো নাকি।
বিমানের ওই কর্মকর্তা তুড়ি মেরে সিভিল এভিয়েশনের পাওনা অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ বাণিজ্যিক সংস্থাটি দেনার দায়ে জর্জরিত। জেট ফুয়েল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বিমানের দেনা ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণের দায় সোনালী ব্যাংকের কাঁধে।
বিমানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। কর্মীদের মধ্যে ‘ওনারশিপ’ গড়ে না ওঠায় অপচয়ের চিত্র সর্বত্র। বিমানকে দায়দেনা থেকে বের করতে কমাতে হবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, নিতে হবে দূরদর্শী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। লাগাম টানতে হবে অপচয় ও দুর্নীতিতেএমনটাই মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
এক বিমান তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে রেখেছে। বিমান নিজে দাঁড়াতে পারছে না, অন্য প্রতিষ্ঠানকেও পেছনে টেনে ধরে রাখছে।
এই চিত্র শুধু বিমানে নয়, বিদ্যুতেও একই দশা। গত বছরের শেষ দিকে যখন সারা দেশে বিদ্যুৎ নিয়ে হইচই চলছিল, ঠিক তখন সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের কত বকেয়া তার হিসাব দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সংসদে দেওয়া তার হিসাবের ভিত্তিতেই বলা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা আছে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। অবশ্য এক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন স্থানীয় সরকার বিভাগ। ৯০৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগ। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদ এবং সংস্থা এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পরই আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি টাকার বিদু্যুৎ বিল বকেয়া রেখে রানার্সআপ তারা।
বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবায়নে অদক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব থাকায় রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর বকেয়া দিনে দিনে গাণিতিক হারে বাড়ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ আবার সরকারের বকেয়ার তালিকাতেও চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সরকার পায় ৯১ হাজার ১০ কোটি টাকা। এমন বিশৃঙ্খলা সরকারের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই।
বর্তমানের ডিপিডিসির (সাবেক ডেসা) কাছে দীর্ঘদিন ধরে ১৬৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে পিডিবির।
পিডিবি, ইজিসিবি (ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ লিমিটেড) ও বিভিন্ন সার কারখানার কাছে দীর্ঘদিন ধরে ২৯৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তিতাস গ্যাসের। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনাগ্রহে এ পাওনা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে তিতাস।
বিদ্যুৎ বিভাগের দেনা-পাওনার হিসাব একটু ভুতুড়ে। এ বিভাগের ১৩টি কোম্পানি একে অপরের কাছে পাবে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। তবে আন্তঃসংস্থাগুলোর দেনা-পাওনার ২০ হাজার কোটি টাকাই সুদ। কবে এ পাওনা আদায় হবে বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেরা তো জানেই না, খোদ সরকারও জানে না আদায় কীভাবে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তার তিন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কাছে ১৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা পাবে। সাবসিডিয়ারি এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি বছরই বিপিসির পাওনা বেড়ে চলেছে। আবার বিপিসির পাওনা পরিশোধ না করে সাবসিডিয়ারিগুলো উল্লিখিত বকেয়ার একটি বড় অংশই বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখে বিপুল পরিমাণের সুদ আয় করছে, যা কিনা ওই সব প্রতিষ্ঠানের মুনাফার প্রধান উৎস।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের এসব হিসাব আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির সঙ্গে করা দরকার। তাদের নিজেদেরও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা করতে অসুবিধা হয়, সরকারেরও রাজস্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।
সরকারের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা যে এ বকেয়া বাড়ার প্রধান কারণ, সেটিও জানিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, কোনটার মূল্য কী নির্ধারণ করলে সরকার তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারবে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে চলতে পারবে এসব বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এগুলোর ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে। এর মধ্যে কিছু আছে সরকারের মালিকানায়, কিছু আছে স্বায়ত্তশাসনে, কিছু প্রতিষ্ঠানে সরকারের শেয়ার আছে। এ জায়গাগুলোতে অনেক ধরনের অস্বচ্ছতাও আছে, অ্যাকাউন্টিং প্র্যাকটিস নিয়েও প্রশ্ন আছে। কীভাবে হিসাব করা হবে সেগুলো নিয়ে দ্বিমত-ত্রিমত আছে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষার হিসাবে, শুধু সরকারি ১১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছেই সরকারের পাওনা আছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১ লাখ কোটি টাকা বেশি দেনা খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই। এখন এসব আদায় করতে গেলে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। প্রভাব পড়বে দেশের মূল্যস্ফীতিতে। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতার হিস্যা দিতে হতে পারে সেবা গ্রহীতাদেরই।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান বকেয়া আদায় করলে তারা চলতে পারবে কি না সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এমনকি এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে, আমরা সেটিও ঠিক করতে পারছি না। এসব সরকারি বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্বাধীন পর্যালোচনা করে বা পরামর্শ নিয়ে যদি করা যায়, তাহলে কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে, কীভাবে ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে করা যায়, সরকারও কীভাবে উত্তরণ পায় সেগুলো দেখতে হবে। কারণ সরকারেরও বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিক থেকে সরকার এক হাতে দেয় আবার আরেক হাতে নেয়। কিন্তু সরকার নিতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠান সবই জনগণের করের টাকায় চলে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদেরও আয় আছে, সরকারের নিজেদেরও ব্যয় আছে। এ জায়গাগুলোতে স্বচ্ছতা ও অ্যাকাউন্টিং প্র্যাকটিসে পরিবর্তন আনার জন্য পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার।
তিনি বলেন, এখন সরকারের টাকা লাগছে বলে এগুলোর ওপর চাপ দিলে সমস্যা আরও গভীর হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করা দরকার সেগুলো তো করতে পারবে না। তখন আমরাই আবার বলব বিপিসি এক্সপ্লোরেশন করল না, দেশে তো গ্যাস নেই। এখন দেখতে হবে, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে কিনা, টাকা ঠিকমতো বিনিয়োগ করছে কিনা এসবই হলো মধ্যমেয়াদি কৌশল। স্বল্পমেয়াদে টানাপড়েনে পড়ছে বলে এগুলোকে চাপ দিলে আমাদের মধ্যমেয়াদে ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে খেলাপি হওয়ার নজিরও আছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ সময় পর্যন্ত সরকারের ৬টি শিল্প করপোরেশনের কাছেই বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বকেয়া আদায়ের জন্য এ মুহূর্তে জরুরি পদক্ষেপ নিতে গেলে দেখা যাবে, এগুলোর মধ্যে আবার অনেকগুলোই জনগণের সেবার সঙ্গে জড়িত। এখন পিডিবির ক্ষেত্রে সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিতে গেলে দেখা যাবে তারা বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, তার জ্বালানি কেনার পয়সা থাকবে না। তখন কী হবে? এসব কোনো স্বল্প মেয়াদি সংকট নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত থাকে। সরকার তো তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এখন কথা হলো, তাদের কাছে যদি উদ্বৃত্ত থাকে, তাদের যদি কোনো অসুবিধা না হয়, সরকার ভেবে দেখতে পারে। কিন্তু সমস্যাটি আরও গভীরে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভুলে যান। এই অসাংবিধানিক ব্যবস্থা আর ফিরবে না। বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে, সংবিধান থেকে আওয়ামী লীগ এক চুলও নড়বে।
গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ এ কথা বলেন কাদের। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যারা যেসব অপকর্ম করছে, তারা দুর্বৃত্ত। আমরা উন্নয়ন করছি গুটিকয়েক অপকর্ম করে সরকারের অর্জন ম্লান করবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধেও খেলা হবে। এসব দুর্বৃত্তের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই। এখানে তাদের থাকার অধিকার নেই। শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেয় না। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বজিৎ ও আবরার হত্যার বিচার হয়নি, হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীরা সাবধান হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হচ্ছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। ১৪ বছর আগে লুটপাটের বাংলাদেশ ছিল। আজকের বাংলাদেশ আলোর পথে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর অন্ধকার, লুটপাটের দিকে যাবে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে নামি নাই। আমরা পাহারাদার হিসেবে মাঠে রয়েছি। ক্ষমতায় আছি জনগণের জানমালের স্বার্থে, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মাঠে আছি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এটা আমাদের দায়িত্ব। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ, সদস্য সংগ্রহসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগ আপনাদের ভয় পায় না। জনগণ ভয় পায় আপনাদের অগ্নিসন্ত্রাসকে।’
বিএনপির উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বন্ধু, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, তাদের ক্ষমতায় আসার দরকার নেই। তাদের ক্ষমতায় বসার অধিকার নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন রুহুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, যে বাংলাদেশ একসময় ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, সেই দেশকে উন্নয়ন আর অগ্রগতির দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এ শান্তি সমাবেশ।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলন আন্দোলন খেলা বন্ধ করুন। এটা করে আপনারা এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবেন না; বরং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করে মানুষের আস্থা অর্জন করুন। তা না হলে অতীতের মতো আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবেন।’
ময়মনসিংহ : বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় জয় বাংলা চত্বরে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে সমবেত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
খুলনা : বিএনপি-জামায়াতের পদযাত্রার নাটক, সন্ত্রাস, সহিংস রাজনীতি, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং জনগণ ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খুলনা মহানগর যুবলীগ। গতকাল শনিবার নগরীর শঙ্খ মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ।
আওয়ামী লীগ এতিম হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো আর পথ নেই। রাজপথে জনগণকে নিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে হবে। আওয়ামী লীগ এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, পুলিশের পিছে পিছে ঘুরছে। আর ছুরি, লাঠি, দা নিয়ে তারা শান্তি সমাবেশ করছে। ওরা নাকি জনগণের সম্পদ রক্ষা করবে।
সরকারের পদত্যাগ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বাইরে বাকি মহানগরগুলোতে গতকাল শনিবার পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরি নুর আহম্মেদ সড়কে পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকারকে পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বিশ^ বিবেক আজ বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছে। যদি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিচের দিকে যায়, তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কও নিচের দিকে যাবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যদি আগের নির্বাচনের মতো করেন, দিনের ভোট রাতে চুরি করেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বুঝিয়ে দেবে ‘কত ধানে কত চাল’।
জনগণ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, আজ লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমে গেছে। এরা কেউ বাড়ি ফিরে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে তারা বিদায় করবে। জনগণ এই ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেশে নিরপেক্ষ সংসদ ও নিরপেক্ষ সরকার আনবে। যাদের সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি থাকবে।
নগরীর কাজির দেউরি নুর আহম্মেদ সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে লাভলেইন মোড়, জুবিলি রোড়, তিনপুলের মাথা, বোস ব্রাদার্স, ডিসি হিল, বৌদ্ধমন্দির, লাভলেইন হয়ে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে এসে শেষ হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় পদযাত্রা শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মীর নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মেগা পদযাত্রা শুরু করলাম। আরেকটা দলের ছটফটানি শুরু হয়ে গেছে। সেই দল হচ্ছে চোরের দল, ডাকাতদের দল, ব্যাংক লুটেরাদের দল, মানি লন্ডারিংয়ের দল। সেই দলের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। যদি আস্থা থাকত পুলিশ বাহিনীর সমর্থন নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করত না। আমরা রাস্তায় আছি, থাকব। এই সরকারের পদত্যাগ করিয়েই আমরা ক্ষান্ত হব।’
জয়নাল আবদীন ফারুক বলেন, ‘যে সরকারের অধীনে কবর থেকে উঠে এসে মরা মানুষ ভোট দেয়, তাদের অধীনে নির্বাচন আমরা মানি না। আওয়ামী লীগকে বিশ^াস করেছিলাম একবার আর বিশ্বাস করব না।’
গাজীপুরে দুই গ্রুপের পৃথক কর্মসূচি : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজীপুর মহানগর বিএনপি তাদের পদযাত্রা কর্মসূচি পুলিশের বাধায় করতে পারেনি। শনিবার সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে তাদের কর্মসূচি সম্পন্ন করে। অপরদিকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা বিএনপির ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
বিএনপির বিভক্ত কর্মসূচির কারণে পুলিশ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে দেয়নি। বিপুলসংখ্যক পুলিশ রাজবাড়ী রোডে দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ঘিরে রাখে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ের অদূরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে শহরের রাজবাড়ী রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে তারা। অপরদিকে মহানগরীর জজ কোর্ট এলাকা থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা বিএনপির ছাত্রনেতারা একটি বিশাল পদযাত্রা নিয়ে শহরের মধ্য ছায়াবীথির জোড়পুকুরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
সিলেট : মহানগর বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশে নতুন করে দারিদ্র্যের সংখ্যা প্রায় চার কোটিতে দাঁড়িয়েছে। মানুষ দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। যার প্রমাণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শতকরা ১৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। আওয়ামী লীগ মুখে শুধু গণতন্ত্রের কথা বলে, বাস্তবে তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই।’ তিনি বলেছেন, বাধ্য হয়ে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন; অর্থাৎ কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। এমন দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এই সরকারের বিদায় চায়। জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে রাতভর শারীরিক নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটির ডাকে এক সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার পাবনার গ্রামের বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসেন ওই ছাত্রী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাবা ও মামা। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কথা বলার পর নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চেয়ে ফের বাড়িতে ফিরে যান ওই ছাত্রী।
এদিকে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা নির্যাতনের এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও নীরব রয়েছেন শিক্ষকরা। তাদের একটি সংগঠনও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা প্রতিবাদ জানায়নি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রী নির্যাতনের এই ঘটনা তদন্তে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্র্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তের স্বার্থে হল কর্র্তৃপক্ষ গতকাল ওই ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে আসতে বলে। দুপুর ১২টার দিকে সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন নিরাপত্তা দিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে হলে নিয়ে আসেন। পরে হলের প্রভোস্ট রুমে তার কাছ থেকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই তদন্তকাজ চালান কমিটির সদস্যরা। এ সময় হল কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই ছাত্রীকে ঘটনাস্থলেও নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আহসানুল হক ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। তদন্ত কমিটির সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর বাবা ও মামার সঙ্গে ফের বাড়ি চলে যান ওই ছাত্রী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা আমি স্যারদের বলেছি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।’
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্তের জন্য আমরা হলে গিয়েছিলাম। মেয়েটি যে যে রুমে ছিলেনপ্রজাপতি, দোয়েল-২ এবং ৩০৬ নম্বর রুম সেসব রুমে আমরা সরেজমিনে গিয়েছি। আমরা ওইসব রুমে যাদেরকে পেয়েছি তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আর যাদের পাইনি তাদেরও সাক্ষাৎকার আগামীকাল নেওয়া হবে। আর অভিযুক্তদের (ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীরা) সাক্ষাৎকার নিতে আমরা হল প্রভোস্ট মহোদয়কে তাদের আগামী পরশুদিন সকাল ১০টায় তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত থাকতে চিঠির মাধ্যমে জানাতে বলেছি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের প্রয়োজনে আরও সাক্ষাৎকার আমরা নেব।’
ছাত্রী নির্যাতন ইস্যুতে নীরব ভূমিকার কারণ জানতে চাইলে ইবির শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। তবে শিক্ষক সমিতিকে আমরা বিষয়টি অবহিত করেছি।’
সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিস একটি উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যাতে ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা লিখিত আকারে বা সশরীরে আগামী সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলের অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত রবিবার রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছেন প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এই ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী গত বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
রাষ্ট্রপতিরা নির্বাচিত হয়ে নানারকম চমক উপহার দেন। মো. সাহাবুদ্দিন, যার সংক্ষিপ্ত চুপ্পু নামটাই বেশি পরিচিত, তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেই চমকে দিলেন। সম্ভাবনার চৌহদ্দির অনেক বাইরে থেকে আসা একজনের রাষ্ট্রপতি হওয়া এমন চমকানো সিদ্ধান্ত ছিল যে, খোদ আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতারই হজম করতে সমস্যা হয়েছে। মিডিয়াও সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত। তাদের কেউই ধারণা করতে পারেনি যে..। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, এই বিষয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে একটা আক্ষেপ তৈরি হয়। মনে হয়, ইস্, অমুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হয়তো...। এভাবে ভাবলে হয়তো...। এই বিষয় নিয়ে কাজ করা সহকর্মী পাভেল হায়দার চৌধুরীকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বললাম, ‘এখানে কারোই ব্যর্থতা বোধ করার কিছু নেই। আমরা যদি সম্ভাব্য ১০০ জনের তালিকা করতাম তবু হয়তো তার নাম আসত না।’ জবাবে পাভেল ক্ষীণ গলায় জানাল, ‘একটা ক্লু ছিল।’
‘তাহলে জানালে না কেন?’
উত্তর হলো, ‘জানিয়ে লাভ হতো না। কাউকে ঠিক বিশ্বাস করানো যেত না।’
যার নাম কেউ জানতে পারে না কিংবা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার কিছু ইশারা পেয়েও বিশ্বাসযোগ্য করতে পারবে না বলে এড়িয়ে যায়, তিনিই ভাবনার সব সীমাকে জয় করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
আমরা শিরোনাম করেছিলাম, ‘বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য থেকে মহামান্য’। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্যে পরে আসি, আগে মহামান্যের গল্প।
কয়েক বছর আগে সিলেট ক্যাডেট কলেজের একটা পুনর্মিলনী। প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে যিনি তিনি বারবার বলছিলেন, ‘মহামান্যের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে’ ‘মহামান্যের ব্যক্তিগত কর্তারা বলছেন।’ বিশেষ্য বাদ দিয়ে বিশেষণ। ভাবলাম, নিজে সরাসরি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কাজ করেন বলেই হয়তো, গুণমুগ্ধ হয়ে এই নামে ডাকছেন। ভুল। তিনি একা নন, প্রশাসন বা সরকারি পর্যায়ের সবার কাছে রাষ্ট্রপতির পরিচয়মহামান্য। সেই মহামান্য আমাদের অনুষ্ঠানে গেলেন এবং তার প্রতি মহামান্যের নিদর্শন দেখে আমরা স্তম্ভিত। তিনি যেখানে আসবেন, যেদিক দিয়ে যাবেন সবকিছুতে প্রবেশাধিকার সীমিত। তাদের প্রটোকলের ব্যাপারটা আমরা বুঝি, তবু সাধারণত ধরে নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেই এমন সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থাকবে। একে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জীবনের ওপর আক্রমণ এসেছে বারবার। তা ছাড়া সরকারপ্রধান বলে, তিনিই কার্যকর এক নম্বর। রাষ্ট্রপতি অলঙ্কার। সংসদে ভাষণ দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বাইরে তো প্রকাশ্যে তেমন কিছু করতে দেখা যায় না তাকে। তাহলে এই মান্যতা প্রদর্শন কি চিরাচরিত অভ্যাসের ফল, নাকি বাস্তব কোনো ভিত আছে।
কিছু বাস্তব ভিত দেখা গেল। মহামান্য প্রধান অতিথি হওয়াতে অনুষ্ঠানের মর্যাদা বেড়ে গেল। স্পনসর-বিজ্ঞাপনদাতারা অর্থ ছাড়ে ভীষণ উদার। অন্য অতিথিরাও সাগ্রহে আসতে রাজি। রাষ্ট্রপতির প্রটোকলের জন্য নানান হ্যাপাও হাসিমুখে মেনে নিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বুঝলাম, নির্বাহী ক্ষমতাশূন্য হলেও এক নম্বরের ধার এবং ভার আছে বটে। সেই ভার নিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন। এখন কাঙ্ক্ষিত ধার তিনি দেখাতে পারবেন! গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতির বছর। আসছে নির্বাচন। তারও আগে আসছে সম্ভাব্য নানান গোলমাল। সামাল দিতে নিজেকে কতটা মেলে ধরবেন এবং তারও আগে প্রশ্ন, মেলে ধরার সুযোগটা আসলে তার কোথায়? আমাদের সংবিধান তার সীমানাকে এত ছোট করে রেখেছে যে, মাঝেমধ্যে তাদের কারও কারও নিজেরও হাঁসফাঁস লাগে। কেউ কেউ আফসোসের কথা নানাভাবে বলেছেনও।
১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। লম্বা সময়। সবাইকে খুশি রাখা যায় না। তা ছাড়া দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতায় কিছু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ধরে নানারকম আপত্তিকর কাজ করছেন সরকার সমর্থকদের কেউ কেউ। তাই আওয়ামী লীগকে সমালোচনাই শুনতে হয় বেশি। আর এসবের ভিড়ে অনেক ভালো কাজও হারিয়ে যায়। যেমন হারিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদকে সর্বজনীন করার চেষ্টা।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। দলের কাউকে রাষ্ট্রপতি বানানো যেত এবং ২১ বছর পর ফেরা দলের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা দলের বাইরের একজনকে প্রায় জোর করে রাজি করালেন রাষ্ট্রপতি হতে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের প্রতি তার এই অনুরাগের কারণ ছিল, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি একটা সর্বজনশ্রদ্ধেয় ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছিলেন। অনেক বলে-কয়ে তাকে রাজি করালেন। প্রাপ্য মর্যাদা দিলেন। প্রাপ্য পাওনাটা অবশ্য পেলেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে যে সদ্যবিদায়ী আওয়ামী লীগের প্রতি সৎ ছেলের মতো আচরণ শুরু করল সেটা তিনি শুধু দেখে গেলেন। সংবিধান অনুযায়ী এমন কিছু করার ছিল না তার, তার দিক থেকে সেটাই যুক্তি নিশ্চয়; কিন্তু এই জায়গাতেই ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশের সুযোগ। তিনি সেটা না করে সংবিধান অনুযায়ী দোষ করেননি, কিন্তু মহামান্য হিসেবে বোধ হয় নিজের প্রতি খুব মর্যাদাও দেখাননি। এটুকু পর্যন্ত তবু মানা যায়, কিন্তু পরে সংসদে বিএনপি সরকারের প্রশংসা করে যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন সেটা মানা যায় না। তিনি অন্তত বলতে পারতেন, এটা সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণ, তিনি পাঠ করতে বাধ্য, যা নতুন সরকার আসার পর অন্য রাষ্ট্রপতিদের কেউ কেউ করেছেন। তিনি তা-ও উল্লেখ না করে যে যাতনা আওয়ামী লীগকে দিয়েছিলেন সেটা আওয়ামী লীগের পাওনা ছিল না। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচন বাতিলের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে খুব সুবিবেচনার কাজ করেননি। এসময় করা নানা কটুকাটব্যও গ্রহণযোগ্য নয় নিশ্চয়। আওয়ামী লীগ শেষভাগে তার প্রতি ন্যায্য আচরণ করেনি, কিন্তু তিনিও অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায্য আচরণ করেছিলেন।
ভুল উদাহরণ ভালো কাজের পথ আটকে দেয়। এখানেও দিল। এরপর আর কেউ সর্বজনশ্রদ্ধেয়র পথে না হেঁটে নিজেদের এমন লোককে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন যে, তাদের কেউ কেউ মহামান্যের মর্যাদা বঙ্গভবনের ধুলোয় মিশিয়েছেন।
আগেও সেরকম ঘটনা কিছু ঘটেছে। বিচারপতি সায়েম, বিচারপতি সাত্তার, বিচারপতি আহ্সান উদ্দীনের নামগুলো মনে করুন। সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার কাজে তাদের ডেকে আনা হয়েছে এবং নতমস্তকে সেটা করে তারা ধন্য হয়েছেন। আসলে হয়েছেন ঘৃণ্য। এর মধ্যে ঘৃণ্যতম খন্দকার মোশতাক, যিনি বিশ্বাসঘাতকতায় রাষ্ট্রপতি হয়ে জাতির জনকের পরিবারের খুনকে জায়েজ করেছেন খুনিদের সূর্যসন্তান আখ্যা দিয়ে। পরে দল করে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেও জিয়া-এরশাদের রাষ্ট্রপতিত্বে উত্তরণও এই পদের মর্যাদার গায়ে কালো দাগ। হুমায়ুন আজাদ রাষ্ট্রপতি সায়েম সম্পর্কে এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘তিনি উচ্চতায় খাটো। মানুষ হিসাবেও খাটো।’ এরকম বহু মাননীয় এবং মহামান্য আমাদের আছেন, যারা মানুষ হিসেবে ভীষণ খাটো। তাদের ভাগ্য যে, হুমায়ুন আজাদ একজনই ছিলেন এবং এখন নেই।
আপত্তিকর কাজ আরও আছে। ভাবা যায়, সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি পরে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তা-ও কী, আওয়ামী লীগ আমলের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এমপি হয়েছেন বিএনপির মার্কায়। আরেকজন, আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সেই ভাগ্য হয়নি। বিএনপি তাকে এমপি পদে মনোনয়ন না দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদকে আরেক দফা পতনের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। অবশ্য স্বাধীনতাবিরোধী আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি পদকে যথেষ্টই পতিত করে গেছেন। বিএনপি সংসদীয় ব্যবস্থায় রাজি ছিল না, শেষপর্যন্ত রাজি হলেও নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির হাতে রেখেছিল দ্বাদশ সংশোধনীতে, আব্দুর রহমান বিশ্বাস সেটার অপব্যবহার করে সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে আরেকটু হলে নির্বাচনকেই ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান দেখিয়েছিলেন ব্যক্তিত্বের ঝাঁজ কেমন হতে পারে। দেখিয়েছিলেন কাগুজে ক্ষমতা না থাকলেও উচ্চতর বিবেক আর উচ্চাঙ্গের বোধ দিয়ে করা যায় অনেক কিছু। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তার ব্যবহৃত শব্দ এবং বাক্য এমন অসামান্য উচ্চতার ছিল যে, সেদিন বোঝা গিয়েছিল নিয়মের নিগড়ে বাঁধা পড়ে থেকেও নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। ‘রাষ্ট্রপতি স্বীয় বিবেচনায় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’ বলে সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিজের মতভিন্নতা জানালেন। আবার ‘বড় দুঃখী এই মাটি, ভাইয়ের রক্তে যেন রঞ্জিত না হয়’ এই ধরনের কথায় থাকল বিবদমান পক্ষগুলোর প্রতি সংযত হওয়ার আকুতিও। তিনি ক্ষমতার সীমানাও মানলেন। আবার নিজের ব্যক্তিত্বও প্রকাশ করলেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কাছেও এই প্রত্যাশা ছিল। তিনি পূরণ করেননি। অতএব, এরপর আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাও হেঁটেছেন চিরাচরিত লাইনে। জিল্লুর রহমান এবং আবদুল হামিদের মতো দলের পোড়খাওয়া দুই নেতাই রাষ্ট্রপতি। মো. সাহাবুদ্দিন ঠিক সেই সারির নন এবং এখানেই তিনি অন্যরকম।
ঐ যে বলছিলাম, আমাদের শিরোনামের ‘বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য’ অংশ। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মাঠে নেমেছেন। সেই হিসেবে মাঠের রাজনীতিক। আবার পরে সরকারি চাকরিতে গিয়ে নানান দায়িত্ব পালন করে সরকারি কর্তা। আর কোনো রাষ্ট্রপতির বেলায় কি এমন মিশ্রণ ছিল! উত্তর খুব সম্ভবত না। অন্যদের তুলনায় অচেনা হয়তো, হয়তো সবচেয়ে লো প্রোফাইল থেকে রাষ্ট্রপতি, কিন্তু একইসঙ্গে একটা অনন্যতাও আছে। তিনি দলীয় অনুগত। আবার সরকারি অভিজ্ঞতাপুষ্টও। এই অনন্যতা মহামান্য হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে!
আসলে সেসব কিছু নয়। বিষয় হলো ব্যক্তিত্বে। রাষ্ট্রপতির কিছু করার নেই বলে বসে থাকলে দোষ নেই। আবার দেশের দুর্যোগে অভিভাবকের ছাতা হাতে দাঁড়াতে চাইলে সরানোর সুযোগও নেই। প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। আমাদের মতোই অলঙ্কার, কিন্তু যিনি রাজনীতির চানক্য তিনি রাষ্ট্র্রপতি ভবনের কাগুজে ফুল হয়ে থাকতে চাননি। আইন এবং নীতির এমন কিছু দিক দেখিয়ে গেছেন যা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের জন্য উপদ্রব মনে হলেও সামগ্রিকভাবে সহায়কই হয়েছে।
সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিত্ব তাই বেশ মজার। অলংকার হয়ে থাকতে চাইলেও দোষ নেই আবার অভিভাবক হয়ে উঠলেও বেশ হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
জনগণের জানার অধিকার রয়েছে কাকে কোনো প্রকল্পের কাজ দেওয়া হচ্ছে, কার সঙ্গে কী চুক্তি হচ্ছে এবং তা কীভাবে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির কোনো কিছুই প্রকাশ করা হচ্ছে না। অদক্ষভাবে বিদ্যুৎ চুক্তির কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২২ (খসড়া) : এটি কি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কোনো একটি পক্ষকে সুবিধা দিয়ে কাজ দেওয়ায় দুর্নীতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিদ্যুতের বড় ঘাটতি মেটাতে ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের প্রয়োজন ছিল। তবে বর্তমানে আইনটি অদক্ষতার জায়গা তৈরি করছে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির মতে, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পক্ষ পাচ্ছে বাড়তি সুবিধাও। অবিলম্বে আইনটি বাতিল করার দাবি জানিয়ে সিপিডি বলছে, নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে- এমন চুক্তিতে গেলে বাড়তি ভর্তুকির চাপ থেকে সরকার সরে আসতে পারবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০০৯ সালে জরুরি বিদ্যুৎ আইনের প্রয়োজন ছিল। ওই সময় বড় রকমের বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, সেটা মেটানোর জন্য চুক্তির দরকার ছিল। এরপর চারবার নবায়ন হয়েছে ওই আইন। আমরা মনে করি, এখন যে জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এরকম চুক্তির আর প্রয়োজন নেই।
দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন থেকে সরকারের সরে আসা দরকার। এই আইন বিভিন্নভাবে সমস্যা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি নিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছে, এর আগেও যেগুলো হয়েছে- সেগুলো এখন সরকারের জন্য বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ। এর মূল কারণ এই দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন।
সিপিডির এ গবেষণা পরিচালক বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি সমন্বয় নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির সমন্বয় করা হচ্ছে ভোক্তার ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে। ভুল পলিসির কারণে এমনটি হচ্ছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, ভর্তুকিও দিতে হচ্ছে ব্যাপক হারে। সেটির দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনটি যদি অবলোপন করে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে- চুক্তির দিকে যদি যাওয়া যায়, তাহলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বাড়তি ভর্তুকির চাপ থেকে সরে আসার সুযোগ রয়েছে। ফসিল ফুয়েল থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে গেলে বড় রকমের ভর্তুকির চাপ থেকে সরে আসার সুযোগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা শুনে এসেছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের মূল্য সবচেয়ে কম। অথচ নতুন চুক্তির অধীনে আমরা যে ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আনা শুরু করলাম, সেটার মূল্য তো ১৫ টাকা। এটা তো বোধগম্য না কী করে এরকম মূল্য, এরকম জায়গায় আমরা চুক্তি করতে পারি।
জ্বালানি চুক্তি খোলামেলা হওয়া উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো চুক্তির ডকুমেন্টস আমরা পাই না। কী রেটে চুক্তিগুলো করা হচ্ছে- জনগণের সেটা জানার অধিকার রয়েছে।
নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২২ এর খুঁটিনাটি তুলে ধরে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এতে জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেসব চুক্তি হচ্ছে, সেগুলো কতটা স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে করা হচ্ছে, তা আলোচনা হয়েছে। সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি আহরণ, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ২০০৮ সালে গৃহীত পলিসির আওতায় সামগ্রিক উৎপাদনের ৮ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এটা পলিসির ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন, নতুন নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসের কথা বলা হয়েছে। শুধু সোলার বলেই ছেড়ে দেওয়া হয়নি। রুফটফ সোলার, নেট মিটারিং, মিনি গ্রিড, ন্যানো গ্রিড, সোলার ইরিগেশন, চার্জিং স্টেশন, স্ট্রিট লাইটে রিনিউয়েবল এনার্জি, ফ্লোটিং সোলার সিস্টেম- এরকমভাবে ডিটেইল বলা আছে। একইভাবে উইন্ড এনার্জি, বায়োমাস এনার্জি, বায়ো ফুয়েলের কথা বলা হয়েছে। রিনিউয়েবল এনার্জির কিছু নতুন উৎসের কথাও এখানে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে আগামীতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথা বলা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে কিছু টার্গেটের কথা বলা হয়েছে। রিনিউয়েবল এনার্জির ক্ষেত্রে কিছু টার্গেট দেওয়া হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কথা এতে উল্লেখ রয়েছে জানিয়ে এই গবেষণা পরিচালক বলেন, স্রেডাকে এখানে নোডাল এজেন্সি বলা হয়েছে। আমরাও তাই মনে করি। কিন্তু স্রেডাকে সব ধরনের ক্যাপাসিটি দিতে হবে। বড় পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রস্তাবনা দেখভাল করার ও অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা স্রেডাকে দেওয়া উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কার দরকার আছে। তবে এই সংস্কার আবার খসড়া প্রস্তাবে অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, নুতন নীতিতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের আবার নীতি সংস্কার হয়েছে। মন্ত্রণালয় তার হাতে কর্তৃত্ব নিয়ে ফেলছে। এর ফলে রেগুলেটরি কমিশনের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে জ্বালানি নীতিতে যে গাইডলাইন দেওয়া আছে, আর সরকার এখন যেভাবে দাম নির্ধারণ করেছে, তাতে এটা এখন উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করছে।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি পলিসি-২০২২ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান বিদ্যুৎ খাতে যে সংকট রয়েছে তা অনেকটাই কমে যাবে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২৭ জন। সে হিসাবে দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৫০০ শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৪ শতাংশ বা দেড় হাজারের বেশি নয়। অর্থাৎ এখনো ৬ শতাংশ বা ২২ হাজার ৫০০ শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে রয়েছে। এর অর্থ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও শনাক্ত না হওয়ায় এসব শিশু চিকিৎসা পাচ্ছে না।
অবশ্য দেশে শিশু রোগীর সংখ্যার সঠিক কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। গত এক বছরে কত শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, সে তথ্যও নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশে শিশু যক্ষ্মার এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা মোট যক্ষ্মা রোগীর ৮ শতাংশ বা তার বেশি যেন শিশুদের যক্ষ্মা নির্ণয় করতে পারি। কিন্তু বাচ্চাদের শনাক্ত কম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আছি।
এ কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে ৪ শতাংশ বা তার কিছু বেশি শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করতে পারছি। মোট যে শনাক্তের হার, তার ৮ শতাংশ (বেসরকারি হিসেবে ১০ শতাংশ) শিশু হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে ৪ শতাংশের মতো। বাকি ৪ শতাংশ শনাক্ত হচ্ছে না।
শনাক্ত কম হওয়ার কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলেন, শিশুরা বলতে পারে না বা উপসর্গ বোঝে না, আবার অভিভাবকরাও সচেতন না। ফলে বেশিরভাগ শিশু শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ সার্বিক ক্ষেত্রে আমাদের যক্ষ্মা শনাক্ত হার অনেক বেশি। অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছি। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী আমাদের মোট শনাক্তের হার ৮২ শতাংশ।
অবশ্য শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার বাড়ানোর জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানান সরকারের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শিশুদেরও যে যক্ষ্মা হতে পারে, সে তথ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচার করা হচ্ছে। আগে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার আরও কম ছিল। কিন্তু এখন আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে সামনের দুই-এক বছরের মধ্যে শনাক্তের হার আরও বাড়বে।
এমন অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালে ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। এর ১০০ বছর পর ১৯৮২ সাল থেকে এই দিনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়Ñ ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
১ বছরে ১ লাখ রোগী কমেছে : জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে। কর্মসূচির হিসেবে, গত বছর বাংলাদেশে নতুন ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে । এ সময় যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন ২৯ লাখের বেশি লোকের নমুনা পরীক্ষা করে এ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সে হিসাবে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশ।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসেবে, এর আগের বছর ২০২১ সালে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার। সে হিসাবে গত এক বছরে দেশে যক্ষ্মা রোগী কমেছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৬৯ জন। চিকিৎসা নিরাময়ের হার গত ১০ বছর ধরে ৯৫ শতাংশের বেশি আছে। সর্বশেষ গত বছর তা আরও বেড়ে ৯৭ শতাংশ হয়েছে।
গত বছর সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা বিভাগে, ৭৪ হাজার ৯৪৫ জন ও সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে বরিশাল বিভাগে, ১৬ হাজার ৪৯১ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৪৮ হাজার ৯৩৮, রাজশাহীতে ২৭ হাজার ৫৪৫, খুলনায় ২৭ হাজার ১১৭, রংপুরে ২৬ হাজার ৮২৮, সিলেটে ২২ হাজার ২০৭ ও ময়মনসিংহে ১৮ হাজার ৩৬০ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এখনো শনাক্তের বাইরে ২০% রোগী : এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগীর ৮০ শতাংশকে শনাক্ত করতে পারছে সরকার ও বাকি ২০ শতাংশ শনাক্তের বাইরে রয়েছে। ফলে এই ২০ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। এমনকি তাদের মধ্যে ঠিক কী পরিমাণ রোগী মারা যাচ্ছে, সে তথ্যও পাচ্ছে না সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারকে যক্ষ্মা নির্মূলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে সার্বিক শনাক্ত শতভাগ পূরণ করতে হবে। সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে মোট শনাক্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা রোগী ২২৭ জন। সে হিসাবে মোট রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ জন। কিন্তু সে বছর শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার। সে হিসাবে এখনো শনাক্তের বাইরে ৯৩ হাজার ৭৫০ জন। অর্থাৎ এই ২০ শতাংশ রোগী এখনো সরকারের শনাক্ত ও চিকিৎসার নেটওয়ার্কের মধ্যে আসেনি।
প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মায় মরছে ১ জন : গত ১০ বছরে দেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু কমলেও এখনো এ সংখ্যা উদ্বেগজনক। গত ২০২১ সালে যক্ষ্মায় মারা গেছেন ৪২ হাজার মানুষ। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসেবে, চিকিৎসার মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ যক্ষ্মা রোগীকে বাঁচানো গেছে। ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি ১ লাখে ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, সেখানে ২০২১ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু প্রতি লাখে ২৫ জনে নেমে এসেছে। কিন্তু এখনো দেশে প্রতি মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মার কারণে একজন মারা যাচ্ছে।
যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসা বিনামূল্যে : যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, দেশে সরকারিভাবে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এ ব্যয় সরকার বহন করে। মানুষ এ সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু অনেক সময় মানুষ এ তথ্য জানে না। সে জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থা জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও আছে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা জানান, যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে ৫১৮টি জিনএক্সপার্ট মেশিন, ১ হাজার ১১৯টি মাইক্রোস্কোপ, ২০৫টি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ও ৩৮টি ট্রুনেট মেশিন রয়েছে। এসব পদ্ধতিতে যক্ষ্মার প্রায় ৮২ শতাংশ রোগী শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও একটি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও পাঁচটি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, সরকারি চারটি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সাতটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং সরকারি সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এনজিও ক্লিনিকে বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে সরকার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফজালুর রহমান জানান, যক্ষ্মা শনাক্ত হওয়ার পর প্রতিটি রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত ওষধু সেবন করার জন্য প্রতিটি রোগীর সঙ্গে একজন ডটস প্রোভাইডার নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে রোগী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে যক্ষ্মায় মৃত্যুহার কমে এসেছে এবং চিকিৎসার সাফল্যের হার বেড়েছে। এ উদ্যোগ বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এ সাফল্যের কারণে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার (এমডিআর টিবি) হারও কমে এসেছে।
কেন শিশুরা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে : এ ব্যাপারে রাজধানীর শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি ও অ্যাজমা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যক্ষ্মা বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। রোগটা সাধারণত মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। এই জীবাণু যেকোনো অঙ্গেই সংক্রমিত হতে পারে। তবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশুরা তাদের লক্ষণগুলো বুঝিয়ে বলতে পারে না, তাই প্রায়ই তাদের ক্ষেত্রে এ রোগটি নির্ণয় করতে দেরি হয় এবং উপেক্ষিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। বিশ্বব্যাপী মোট যক্ষ্মা রোগীর ১২ শতাংশ শিশু। কিন্তু বাংলাদেশে সঠিকভাবে শনাক্ত না হওয়ার কারণে এ হার চার শতাংশের মতো। শিশুদের হার আরও বেশি হবে বলে মনে করা হয়।
এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শিশুর শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু প্রবেশ করে বড়দের কাছ থেকে। ফুসফুসে আক্রান্ত একজন যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে এলে শিশুর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তবে বড় শিশুদের তুলনায় এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এরকম শিশুরা তাদের সময়ের একটা বড় অংশ পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় ও খেলার সাথীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটায়। এ ছাড়া এমন বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বড় শিশুদের তুলনায় কম থাকে। অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের যক্ষ্মার ঝুঁকি বেশি। কারণ অপুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
একাত্তরের যুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, বিশেষ করে নজরুল ছিলেন বাঙালির সংগ্রামী চৈতন্যের অগ্নিস্রোত। কথা না-থাকলেও সেই দুর্বার সময়ে বিষণœতার কবি জীবনানন্দ দাশ ওই অগ্নিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেলেন। কেন ঢুকলেন তা বিচার করতে চাইলে বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানসচৈতন্যের দিকে তাকাতে হবে। কল্পনাবিলাসী, আবেগপ্রবণ, ভাবুক, দুঃখবাদী, বিষন্ন, প্রকৃতিমুগ্ধ, কৃষিভিত্তিক জীবনবিলাসী বাঙালি রক্তাক্ত বিদ্রোহের ভেতরও ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’ আর ‘দু’দণ্ড শান্তি’-এর মতো ‘নাটোরের বনলতা সেন’কে কেন বারবার স্মরণ করত? এ প্রশ্ন অনিবার্য। আশ্চর্য এই যে, ভাববাদী রোমান্টিকরা তো বটেই, চরম বস্তুবাদী রিয়ালিস্টিক পাঠকও জীবনানন্দকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কোন জাদুতে? জীবনানন্দ নিজেই কি ম্যাজিক বা ম্যাজিশিয়ান, তার শব্দ, চিত্রকল্প, উপমা, কাব্যভাব কি ম্যাজিক? জীবনানন্দ মুগ্ধতা কি ক্রমবিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাঙালির বাঙালি হয়ে ওঠার নানা উপাদান অর্থাৎ চারিত্রিক এবং সাংস্কৃতিক নানা দুর্বলতার ফল মাত্র? বাঙালির মানসচেতনার সীমাবদ্ধতার কথা সত্যি জানতেন জীবনানন্দ। তিনি নিজেও যে একই গোত্রের। তার কবিতার শব্দ-প্রযুক্তিবিদ্যা, ধ্বনিমাধুর্য প্রবাহ, রূপকল্পের আবেগী ব্যবহার, অতীন্দ্রিয়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যবহার বাঙালিকে বিস্মিত করেছে।
দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা, দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘরে ও বাইরে চিরক্লান্ত, আশাশূন্য, বিধ্বস্ত এবং ঘোর অবসাদাক্রান্ত বাঙালিকে জীবনানন্দের কবিতা গভীর আত্মমুখী আঁধারে ডুবিয়ে দেয়। সমকালের, সমাজের, রাষ্ট্রের, পরিবার এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত রোগ, অসহায়ত্বকে ধরতে পেরেছিলেন জীবনানন্দ। নিজের জীবনের ওপর পরীক্ষাও করেছেন। তার অকাল মৃত্যুও ভেতর গোপন অদৃশ্য ব্যাধির ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই।
জীবনানন্দের কবিতার ভেতরই জটিল রহস্য রয়েছে। তার কবিতা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সমাজ ও ব্যক্তিকে আশ্রয় নিয়ে ‘দু’দণ্ড শান্তি’ নিতে উসকে দেয়। মানুষের মগজে, স্নায়ুতন্ত্রীতে মাদকের মতো ‘প্রশান্তির জগৎ’ তৈরি করে। যে কাব্য সমালোচকরা তার কাব্যে জীবনবিমুখতা, আত্মপলায়নপরতা কিংবা অবক্ষয়ী মূল্যবোধের চর্চার অভিযোগ এনেছেন, তাদের সব যুক্তিকে বাতিল করা যায় না। এ কথাও সত্য যে, তাকে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গুরুত্ব লঘু করা না। কেন যায় না তা নিয়ে আমরা তর্কে যাব না, কেননা আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়, উদ্দেশ্য বরং একাত্তরের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে বাঙালির আবেগ এবং চর্চার সীমানাটা খুঁজে দেখা। এ দেখাটা স্বাধীন দেশের বাঙালির জন্য জরুরি।
সাহিত্যের দহলিজে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে, বুদ্ধিজীবী মহলে জীবনানন্দ চর্চা পূর্ববঙ্গে পঞ্চাশের দশকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও চর্চার সঙ্গে জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ চর্চারও একটা যোগসূত্র দেখা যায়। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের কিছু আগে বা পরে জীবনানন্দের কাব্যসমগ্র রণেশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় বাংলাবাজার থেকে বের হয়। ব্যাপক সাড়াও ফেলে। জীবনানন্দ অনুসন্ধানের আগে আমরা জেনে নিতে চাই তার শিল্পের মননজগৎ তৈরির পেছনের সামাজিক, রাষ্ট্রিক এবং আন্তর্জাতিক কার্য-কারণগুলো। জীবনানন্দের কাব্যসাধনা এবং তার বিকাশ ও পরিণতি ঘটে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন, সময়ের সেই প্রভাবেই তিনি আন্দোলিত হয়েছেন।
বাংলায় উপনিবেশিক শাসন-শোষণ, জমিদারতন্ত্র, হিন্দু বর্ণবাদ, হিন্দুধর্ম আর ব্রাহ্মধর্মে সংঘাত, হিন্দুধর্মের শাক্ত আর বৈষ্ণব মতবাদীদের পরস্পর বিদ্বেষ, দেবী কালী আর অবতার কৃষ্ণের বিবাদ সমাজ অভ্যন্তরে তৈরি করে অস্থিরতা। সেই ইতিহাসই পরবর্তীকালে দেখিয়ে দেয় কেমন করে ভাঙন ধরে হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একেশ্বরবাদী, পৌত্তলিকতা-বিরোধী নতুন ধর্ম ব্রাহ্মবাদেও। শরৎচন্দ্রের গল্প-উপন্যাসে এর বর্ণনা আছে। বরিশালের ব্রাহ্মসন্তান জীবনানন্দ দাশও এ থেকে মুক্ত ছিলেন না। ব্রাহ্ম হওয়ার কারণে হিন্দুপ্রধান কলকাতা শহরে জীবনানন্দের জীবন-জীবিকাও সংকটে পড়ে। কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করতে গিয়ে তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শেও তিনি শান্তি পাননি। ব্যক্তির এই সামাজিক হতাশা তার কাব্যে সংক্রমিত হয়। একটা কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, সাতচল্লিশের আগে ও পরে পূর্ববঙ্গের ‘বাঙাল’ আর দেব-দেবী বিদ্বেষী ব্রাহ্মদের জন্য মহানগর কলকাতা এক দুর্ভোগের স্থান হয়ে ওঠে।
বাংলা তো বিশ্বমানচিত্রের বাইরে নয়, বিশ্বেরই সে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের যে কোনো কম্পনই তাকে ছুঁয়ে যাবে। বিশ্বপুঁজির মহাসংকটের নগ্ন প্রকাশ ঘটে প্রথম মহাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তথাকথিত উন্নত ইউরোপ তো বটেই, উপনিবেশিক অনুন্নত দেশগুলোতেও মানুষের হতাশা, ভয়ংকর ভীতি ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর মৃত্যুর প্রেতছায়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর কম্পন-প্রকম্পন থামতে না থামতেই এসে যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। আরও জটিল, আরও বহুমাত্রিক বিভীষিকা নেমে আসে বিশ্বে। বঙ্গ-ভারতের গণমানসে মুক্তির স্পৃহা জেগে ওঠে। উপনিবেশিক শোষণ আর দেশীয় উৎপীড়ন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং সশস্ত্র লড়াই সামনে এসে দাঁড়ায়। শাসকরা দেশীয় বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটায় স্বাধীনতা, আজাদী, স্বরাজের নামে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া মানবসভ্যতা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেটা বুঝতে পেরে পুঁজিবাদী শক্তি ইউরোপের দেশে দেশে ব্যক্তির মুক্তি, সামাজিক মুক্তি এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে নানারকম নতুন নতুন দর্শনের উদ্ভব ঘটানোর জন্য একদল দার্শনিককে কাজে নামিয়ে দেয়। জীবনবিমুখ অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শনকে কবর থেকে টেনে তুলে আনে। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাবশিষ্যরাই বিস্ময়করভাবে আত্মসমর্পণ করে সোরেন কিয়ের্কগার্ড-এর বাতিল অস্তিত্ববাদের প্রেতের কাছে। তারা উচ্চকণ্ঠ হলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করলেন যে, হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদ, দুঃখবাদ আর আত্মবিচ্ছিন্নতার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব জীবনের সুখ-আনন্দ-পরম শান্তি।
দর্শনচর্চাকারী মাত্রই জানেন যে, কিয়ের্কগার্ড দর্শনের মৌল উপাদান হলো এই ধারণা যে, মানব অস্তিত্বের প্রকৃত রূপ নিঃসঙ্গতা, কোনো মানুষই এই নিঃসঙ্গতাকে ডিঙিয়ে যেতে পারে না। হেগেলের যুক্তিবাদকে খণ্ডন করে কিয়ের্কগার্ড দাবি করেন ঈশ্বরই হচ্ছে একমাত্র পথ। ব্যক্তিমানুষকে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াতে হবে পাপবোধ, আত্মগ্লানি, অনুতাপ, নৈরাশ্য, যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-উৎপীড়ন, হিংসা, হিংস্রতা থেকে মুক্তির জন্য। ব্যক্তির দুঃখ ভোগ যত বৃদ্ধি পাবে, ততই ব্যক্তির চেতনায় ধর্ম ও ঈশ্বরভাব জাগ্রত হবে। এতেই তার আত্মার মুক্তি ঘটবে।
কিয়ের্কগার্ডের জন্য দর্শনচর্চার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং মানুষের অবসাদ-নৈরাশ্য। সেই ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বে। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। সেই ভাষাই তার সংযোগ ঘটায় কিয়ের্কগার্ড দর্শনের সঙ্গে। রুশ বিপ্লব এবং বস্তুবাদী দর্শন তাকে আন্দোলিত করে না। তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য রেখে গেছেন তিনি নিজের লেখায়। ‘আধুনিক কবিতা : কবিতার কথা’ তার দলিল। দ্বিধাশূন্য জীবনানন্দ বলছেন, ‘কিয়ের্কগার্ড প্রভৃতি দার্শনিকের অস্তিত্ববাদ যা প্রমাণ করেছে সেটা মানুষের প্রাণধর্মে টিকে থাকার... দার্শনিক তথ্য হিসেবে মানুষকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন... তার সাহিত্যিক শিষ্যদের রীতির চেয়ে আরও নিপুণ ও নির্ভুল প্রয়োগে, মানুষের জীবনের এই অন্তর্নিঃসহায়তার কথা ফুটে উঠেছে...।’ সহজ কথায়, এটা নির্মম সত্য যে, জীবনানন্দ বাঙালি পাঠকদের ঘাড়ে তার নিজস্ব অন্তর্নিঃসহায়তার বোঝা চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন।
কেবল কিয়ের্কগার্ড নয়, ফ্রেডারিখ নিটসে, পাস্কাল, মনোবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড অ্যাডলার এবং আরও অনেকে বিজ্ঞানবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন যুদ্ধবিধ্বস্ত নৈরাশ্যবাদী ক্লান্ত মানুষের সামনে তুলে রেখে গেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তারা বিশ্বাস করতেন বুদ্ধি, মুক্তি, বিজ্ঞান নয়; বরং মানুষের বিশ্বাস, তার অনুভূতিই জীবন বাস্তবতার আসল সত্য। জীবনানন্দ যখন এসব চর্চা শুরু করেন তার আগেই সারা ইউরোপে যুক্তিবাদ আর বিজ্ঞানবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদকে মরণসংকট থেকে রক্ষা করা।
যুদ্ধ, ধ্বংস, চূড়ান্ত শোষণ, মানবতার মহাবিপর্যয় না ঘটিয়ে ব্যাধিতে আক্রান্ত যে পুঁজিবাদ টিকতে পারে না, এই বাস্তবতার ভেতর দার্শনিক রুশোর দর্শনে কথিত সেই ‘ঘধঃঁৎধষ গধহ’ সার্ত্রে-এর বিশ্বাসে কোনো রূপ নেয়? সার্ত্রে ব্যক্তিমানুষকে তার বাস্তব স্থান আর সময়কালের সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুক্ত ব্যক্তিসত্তার কল্পনার দিকে টেনে নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিমানুষ রাষ্ট্র ও সমাজের বন্ধন থেকে কোনোভাবেই মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারে না। সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদও ব্যক্তিমানুষকে তার প্রত্যাশিত মুক্তি এনে দিতে পারে না। ব্যক্তিমানুষ চূড়ান্তভাবেই নিঃসঙ্গ; পৃথিবীর বিপক্ষেও সে। একেবারেই একা।
সার্ত্রের ভাববাদী দর্শন ব্যক্তিমানবসত্তা সম্পর্কে কী বলে? অতলান্তিক কালস্রোতে ভাসমান মানুষ মুহূর্তকালের ভেতরই শূন্যতায় আক্রান্ত হয়। এই শূন্যতা তাকে আতঙ্কের ভেতর ঠেলে দেয় এবং দাঁড় করিয়ে দেয় বিমূর্ত এক সত্তার সামনে। সেই সত্তাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, বরং অতীন্দ্রিয়। স্বাধীনতা যেহেতু অসীম এবং নিরঙ্কুশ তাই প্রতিকূল সমাজে ব্যক্তিমানুষ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমন বিশ্বাসের ভেতর সার্ত্রে মনে করতেন উৎকণ্ঠা থেকে মানুষের মুক্তি নেই। ব্যক্তিমানুষ কখনো সমষ্টি বা সঙ্ঘের সঙ্গে মিলিত হতে পারে না, মিলিত হওয়ার চেষ্টাটা কেবলই দুঃস্বপ্ন। সার্ত্রের ভাবশিষ্যরা তো এই দর্শনই তাদের সাহিত্যের নানা শাখায় প্রয়োগ করেছেন।
সার্ত্রে কেবল ইউরোপ নয়, ইংরেজি ভাষাকে বাহন করে বঙ্গভারতে শিক্ষিত শ্রেণির একাংশের চেতনায় প্রবেশ করেন। জীবনানন্দ কিন্তু তাদেরই দলে। সার্ত্রে চিরন্তন সত্যবাদ, ঐতিহ্যবাদ, ধর্মবাদ এবং বুর্জোয়া নৈতিকতাবাদের বিরোধিতা করে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের পক্ষ নিলেও সামাজিক শ্রেণি ও শ্রেণি দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে সম্মত হননি। বস্তুজগৎ এবং মানবমনের দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন। তার দাবি ছিল, ‘No general ethics can shwo you what is to be done’ এবং ‘ও I have got to limit myself to what I see’
মানব অস্তিত্বরক্ষার সুনির্ধারিত কোনো অর্থ বা কারণ সার্ত্রের বিশ্বাসের দর্শনে নেই। তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন যে, চরম অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত মানুষ অন্ধের মতো আশ্রয় সন্ধানে আবর্তিত হবে। নিঃসঙ্গতা, আতঙ্ক, উদ্বেগ তার নিত্যসঙ্গী। জীবন ও জগৎ তার কাছে অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার হেঁয়ালি এবং যুক্তিশূন্য। তার গল্পের নায়ককে তাই উচ্চারণ করতে হয়, ‘The nausea is not inside me, I feel it out There... I am the one who is within it......’
বিস্ময়কর এটাই যে, অস্তিত্ববাদী এই দর্শনকে মহাযুদ্ধে বিধ্বস্ত মানুষদের একাংশ বরণ করে নেয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং ভয়াবহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মানবতা, অবক্ষয়ী নৈতিকতার ভেতর মনোলোকের এই অন্তঃসারশূন্যতা ব্যক্তিমানুষকে মহাশূন্যে ভাসমান মৃত গ্রহের ভগ্ন অণুর মতো ঘিরে ধরে। সে সময়ের কবিরা তো মানবচেতনার আশা-প্রত্যাশা আর নতুন স্বপ্নের বদলে দেখতে পেলেন চরাচরের চারদিকে কেবলই নির্জন শূন্যতা আর মৃত্যু। কাফ্কার মতো সংবেদনশীল শিল্পীও লিখলেন, ‘ÔI am separated from all things by a hollwo space...’। আলবেয়ার কামুও একই পথের পথিক। স্যামুয়েল বেকেট তো বলেই ফেললেন, ‘...I was born or not, have lived or not, am dead or merely dying...’। ইউরোপের অনেক কবি-সাহিত্যিক আত্মনিমগ্নতার ওই অন্ধকারে ডুব দেন।
আর ওই যে অস্তিত্ববাদী দর্শনের অভিঘাতে ইউরোপে জন্মাল Sur-realism, Dadaism, Futurism, বিশেষ করে পরাবাস্তববাদ। এর প্রভাব বাঙালি মননেও পড়ে। কলকাতার অনেক পরে, কবরে ভূত হয়ে যাওয়ার পর পরাবাস্তববাদ ঢাকাতেও উঁকি মারে। বাঙালি যখন গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লড়াই করছে, তখনই এই ভূত ঢাকায় এসে হাজির। বাংলাদেশের কাব্যদর্শনের এই দেউলিয়াপনার বাইরে মনুষ্যত্বের পক্ষে, মুক্তির প্রশ্নে একদল কবির আবির্ভাব ওই পরাবাস্তব প্রেতাত্মাকে পরাভূত করেছিল। ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র-গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধবিষয়ক কবিতার দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও লেখক