
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে রাতভর শারীরিক নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটির ডাকে এক সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার পাবনার গ্রামের বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসেন ওই ছাত্রী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাবা ও মামা। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কথা বলার পর নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চেয়ে ফের বাড়িতে ফিরে যান ওই ছাত্রী।
এদিকে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা নির্যাতনের এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও নীরব রয়েছেন শিক্ষকরা। তাদের একটি সংগঠনও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা প্রতিবাদ জানায়নি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রী নির্যাতনের এই ঘটনা তদন্তে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্র্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তের স্বার্থে হল কর্র্তৃপক্ষ গতকাল ওই ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে আসতে বলে। দুপুর ১২টার দিকে সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন নিরাপত্তা দিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে হলে নিয়ে আসেন। পরে হলের প্রভোস্ট রুমে তার কাছ থেকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই তদন্তকাজ চালান কমিটির সদস্যরা। এ সময় হল কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই ছাত্রীকে ঘটনাস্থলেও নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আহসানুল হক ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। তদন্ত কমিটির সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর বাবা ও মামার সঙ্গে ফের বাড়ি চলে যান ওই ছাত্রী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা আমি স্যারদের বলেছি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।’
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্তের জন্য আমরা হলে গিয়েছিলাম। মেয়েটি যে যে রুমে ছিলেনপ্রজাপতি, দোয়েল-২ এবং ৩০৬ নম্বর রুম সেসব রুমে আমরা সরেজমিনে গিয়েছি। আমরা ওইসব রুমে যাদেরকে পেয়েছি তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আর যাদের পাইনি তাদেরও সাক্ষাৎকার আগামীকাল নেওয়া হবে। আর অভিযুক্তদের (ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীরা) সাক্ষাৎকার নিতে আমরা হল প্রভোস্ট মহোদয়কে তাদের আগামী পরশুদিন সকাল ১০টায় তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত থাকতে চিঠির মাধ্যমে জানাতে বলেছি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের প্রয়োজনে আরও সাক্ষাৎকার আমরা নেব।’
ছাত্রী নির্যাতন ইস্যুতে নীরব ভূমিকার কারণ জানতে চাইলে ইবির শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। তবে শিক্ষক সমিতিকে আমরা বিষয়টি অবহিত করেছি।’
সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিস একটি উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যাতে ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা লিখিত আকারে বা সশরীরে আগামী সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলের অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত রবিবার রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছেন প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এই ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী গত বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
সরকার কেন ব্যবসা করবে-হরদম এ প্রশ্ন শোনা যায়। সরকার পলিসি করবে, যার আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করবে। সেই ব্যবসা তদারকি করবে সরকার-এটাকে আদর্শ মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
সরকার ব্যবসা করতে চায় না। তারপরও সরকারকে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। সাধারণ মানুষ যেন বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি না হয়ে পড়ে সেজন্য কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কোনো বিশেষ সময়ে প্রয়োজনে যাতে হস্তক্ষেপ করা যায়, সেজন্যই এমন উদ্যোগ।
জনকল্যাণের জন্য সরকার এ ধরনের কাজে নামলেও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানই এই কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সেবার দাম না দিয়ে, প্রয়োজনের সময় সাড়া না দিয়ে কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাফ পাওয়ার আশায় বকেয়ার বিষয়গুলো জিইয়ে রাখে। এক সরকারি প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে মামলা-মোকদ্দমা করে। এসব বাধা ডিঙ্গিয়ে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে পারে না। ধুঁকতে থাকা এসব বাণিজ্যিক সংস্থার আন্তঃলেনদেনে সরকারি আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাজ হচ্ছে আকাশ পথে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা বা নিরাপদ করা। এই যান চলাচল নিরাপদ করতে গিয়ে এভিয়েশন অথরিটি বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এই বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যয় করে বলেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বছরে আড়াই থেকে তিনশ কোটি টাকা মুনাফার গল্প বানাতে পারে। বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোও চুটিয়ে মুনাফা করতে পারে। বিমান নিজে মুনাফার দাবি করলেও সিভিল এভিয়েশনের পাওনা টাকা পরিশোধ করে না। বছরের পর বছর তারা বকেয়া টাকা আটকে রাখে। সিভিল এভিয়েশন সুদে আসলে সেই টাকার হিসাব রাখে বছরের পর বছর। এই হিসাব রাখতে গিয়ে সিভিল এভিয়েশনকে তাদের হিসাব বিভাগের বহর বাড়াতে হয়। আর বিমান তক্কে তক্কে থাকে কখন এই দায় থেকে অব্যাহতি চাইবে। জরুরি প্রয়োজনে যখন সরকারের তরফ থেকে বিমানকে ডাকা হয়, তখনই বিমান বলে তার পিঠের ওপর চাপানো দায় শোধ করার জন্য।
গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিমানের কাছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির বকেয়া পাওনা ৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে মূল বিল ৯৮৮ কোটি টাকা, ভ্যাট ও আয়কর ৪৩১ কোটি টাকা এবং বকেয়া রাজস্বের ওপর সারচার্জ ৬ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এ পাওনা আদায়ের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
কিন্তু বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, আরে ধুৎ, এত হয় কী করে। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা হতে পারে। এভিয়েশন অথরিটি লিখে রাখলেই হলো নাকি।
বিমানের ওই কর্মকর্তা তুড়ি মেরে সিভিল এভিয়েশনের পাওনা অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ বাণিজ্যিক সংস্থাটি দেনার দায়ে জর্জরিত। জেট ফুয়েল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বিমানের দেনা ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণের দায় সোনালী ব্যাংকের কাঁধে।
বিমানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। কর্মীদের মধ্যে ‘ওনারশিপ’ গড়ে না ওঠায় অপচয়ের চিত্র সর্বত্র। বিমানকে দায়দেনা থেকে বের করতে কমাতে হবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, নিতে হবে দূরদর্শী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। লাগাম টানতে হবে অপচয় ও দুর্নীতিতেএমনটাই মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
এক বিমান তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে রেখেছে। বিমান নিজে দাঁড়াতে পারছে না, অন্য প্রতিষ্ঠানকেও পেছনে টেনে ধরে রাখছে।
এই চিত্র শুধু বিমানে নয়, বিদ্যুতেও একই দশা। গত বছরের শেষ দিকে যখন সারা দেশে বিদ্যুৎ নিয়ে হইচই চলছিল, ঠিক তখন সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের কত বকেয়া তার হিসাব দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সংসদে দেওয়া তার হিসাবের ভিত্তিতেই বলা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা আছে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। অবশ্য এক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন স্থানীয় সরকার বিভাগ। ৯০৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগ। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদ এবং সংস্থা এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পরই আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি টাকার বিদু্যুৎ বিল বকেয়া রেখে রানার্সআপ তারা।
বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবায়নে অদক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব থাকায় রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর বকেয়া দিনে দিনে গাণিতিক হারে বাড়ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ আবার সরকারের বকেয়ার তালিকাতেও চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সরকার পায় ৯১ হাজার ১০ কোটি টাকা। এমন বিশৃঙ্খলা সরকারের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই।
বর্তমানের ডিপিডিসির (সাবেক ডেসা) কাছে দীর্ঘদিন ধরে ১৬৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে পিডিবির।
পিডিবি, ইজিসিবি (ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ লিমিটেড) ও বিভিন্ন সার কারখানার কাছে দীর্ঘদিন ধরে ২৯৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তিতাস গ্যাসের। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনাগ্রহে এ পাওনা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে তিতাস।
বিদ্যুৎ বিভাগের দেনা-পাওনার হিসাব একটু ভুতুড়ে। এ বিভাগের ১৩টি কোম্পানি একে অপরের কাছে পাবে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। তবে আন্তঃসংস্থাগুলোর দেনা-পাওনার ২০ হাজার কোটি টাকাই সুদ। কবে এ পাওনা আদায় হবে বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেরা তো জানেই না, খোদ সরকারও জানে না আদায় কীভাবে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তার তিন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কাছে ১৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা পাবে। সাবসিডিয়ারি এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি বছরই বিপিসির পাওনা বেড়ে চলেছে। আবার বিপিসির পাওনা পরিশোধ না করে সাবসিডিয়ারিগুলো উল্লিখিত বকেয়ার একটি বড় অংশই বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখে বিপুল পরিমাণের সুদ আয় করছে, যা কিনা ওই সব প্রতিষ্ঠানের মুনাফার প্রধান উৎস।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের এসব হিসাব আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির সঙ্গে করা দরকার। তাদের নিজেদেরও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা করতে অসুবিধা হয়, সরকারেরও রাজস্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।
সরকারের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা যে এ বকেয়া বাড়ার প্রধান কারণ, সেটিও জানিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, কোনটার মূল্য কী নির্ধারণ করলে সরকার তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারবে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে চলতে পারবে এসব বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এগুলোর ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে। এর মধ্যে কিছু আছে সরকারের মালিকানায়, কিছু আছে স্বায়ত্তশাসনে, কিছু প্রতিষ্ঠানে সরকারের শেয়ার আছে। এ জায়গাগুলোতে অনেক ধরনের অস্বচ্ছতাও আছে, অ্যাকাউন্টিং প্র্যাকটিস নিয়েও প্রশ্ন আছে। কীভাবে হিসাব করা হবে সেগুলো নিয়ে দ্বিমত-ত্রিমত আছে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষার হিসাবে, শুধু সরকারি ১১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছেই সরকারের পাওনা আছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১ লাখ কোটি টাকা বেশি দেনা খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই। এখন এসব আদায় করতে গেলে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। প্রভাব পড়বে দেশের মূল্যস্ফীতিতে। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতার হিস্যা দিতে হতে পারে সেবা গ্রহীতাদেরই।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান বকেয়া আদায় করলে তারা চলতে পারবে কি না সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এমনকি এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে, আমরা সেটিও ঠিক করতে পারছি না। এসব সরকারি বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্বাধীন পর্যালোচনা করে বা পরামর্শ নিয়ে যদি করা যায়, তাহলে কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে, কীভাবে ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে করা যায়, সরকারও কীভাবে উত্তরণ পায় সেগুলো দেখতে হবে। কারণ সরকারেরও বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিক থেকে সরকার এক হাতে দেয় আবার আরেক হাতে নেয়। কিন্তু সরকার নিতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠান সবই জনগণের করের টাকায় চলে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদেরও আয় আছে, সরকারের নিজেদেরও ব্যয় আছে। এ জায়গাগুলোতে স্বচ্ছতা ও অ্যাকাউন্টিং প্র্যাকটিসে পরিবর্তন আনার জন্য পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার।
তিনি বলেন, এখন সরকারের টাকা লাগছে বলে এগুলোর ওপর চাপ দিলে সমস্যা আরও গভীর হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করা দরকার সেগুলো তো করতে পারবে না। তখন আমরাই আবার বলব বিপিসি এক্সপ্লোরেশন করল না, দেশে তো গ্যাস নেই। এখন দেখতে হবে, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে কিনা, টাকা ঠিকমতো বিনিয়োগ করছে কিনা এসবই হলো মধ্যমেয়াদি কৌশল। স্বল্পমেয়াদে টানাপড়েনে পড়ছে বলে এগুলোকে চাপ দিলে আমাদের মধ্যমেয়াদে ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে খেলাপি হওয়ার নজিরও আছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ সময় পর্যন্ত সরকারের ৬টি শিল্প করপোরেশনের কাছেই বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বকেয়া আদায়ের জন্য এ মুহূর্তে জরুরি পদক্ষেপ নিতে গেলে দেখা যাবে, এগুলোর মধ্যে আবার অনেকগুলোই জনগণের সেবার সঙ্গে জড়িত। এখন পিডিবির ক্ষেত্রে সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিতে গেলে দেখা যাবে তারা বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, তার জ্বালানি কেনার পয়সা থাকবে না। তখন কী হবে? এসব কোনো স্বল্প মেয়াদি সংকট নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত থাকে। সরকার তো তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এখন কথা হলো, তাদের কাছে যদি উদ্বৃত্ত থাকে, তাদের যদি কোনো অসুবিধা না হয়, সরকার ভেবে দেখতে পারে। কিন্তু সমস্যাটি আরও গভীরে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে শ্রম আইন রয়েছে তা আরও যুগোপযোগী ও শ্রমিকবান্ধব করে সংশোধনের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকার বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে যে শ্রম আইনের সংশোধন করলেই কেবল বন্ধ থাকা ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস’ বা (জিএসপি) সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা চালু হবে।
বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটি আরও জানিয়েছে, দ্রুত জিএসপি সুবিধা পেতে চাইলে বাংলাদেশকে শ্রম আইন সংশোধন করতেই হবে।
ঢাকায় সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দেশটির এ অবস্থান জানিয়ে যান বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। দেশ রূপান্তরকে তারা বলেন, এখনই শ্রম আইন সংশোধন করার সুযোগ সরকারের হাতে নেই।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্যভুক্ত এবং স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। এর অন্যতম একটি সুবিধা হলো বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য-সুবিধা।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পেতে শুরু করে। ২০১৩ সালের জুনে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, শ্রমিকদের অধিকার ও শ্রমিকদের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রভাবশালী এ দেশটি বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেন বলে জানিয়েছেন এ দুটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য।
গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান। উপস্থিত ছিলেন দুই কমিটির সদস্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মজিদ খান, নাবিল আহমেদ ও নিজাম উদ্দিন জলিল ডন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা ও দেশের সব ইপিজেডে শ্রমিকদের দাবি আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সংশ্লিষ্ট আইনে রাখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান ডোনাল্ড লু। বৈঠকে তিনি বলেন, শ্রম আইনে শ্রমিকের কল্যাণ নিহিত থাকতে হবে। সব শিল্প ও শিল্পাঞ্চল শ্রমিকবান্ধব করে তুলতে আইনি নীতিমালা থাকতে হবে।
অবশ্য বৈঠকে দুই মন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে অবহিত করেন যে শ্রম আইন সংশোধন এখনই সম্ভব নয়; বিশেষ করে ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিয়ে শ্রম আইন সংশোধন করা সম্ভব নয়।
দুই মন্ত্রীই লুকে আরও বলেন, ইপিজেডে ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আশ^স্ত করা হয়েছে এখানে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকবে না। এখন শ্রম আইন সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি দেওয়া হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেঁকে বসতে পারে। ওই সব অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন না করতে নির্দেশনা থাকলেও ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি করার অনুমোদন আছে। তাতে করে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে লুর কাছ থেকে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই বৈঠক সূত্র আরও জানায়, শ্রম আইন সংশোধন করার পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে বন্ধ থাকা জিএসপি সুবিধার জটিলতা শিগগিরই সমাধান হবে না তাদের এমন অবস্থান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ডোনাল্ড লু জানিয়ে দিয়েছেন, জিএসপি জট খুলতে শ্রম আইন সংশোধন করা খুবই জরুরি। শ্রমিক কল্যাণ সমিতি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সেটা যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার মনে করে, শ্রমিক ইউনিয়ন-জাতীয় কোনো সংগঠন ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে তোলার সুযোগ পেলে যেকোনো ইস্যুতে শ্রমিকরা আন্দোলন সংঘটিত করার চেষ্টা করবেন। তাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কাজের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। এসব শঙ্কা মাথায় রেখেই শ্রম আইন এখনই সংশোধন করতে চায় না সরকার।
সরকার না চাইলেও শ্রম আইন সংশোধন এখন না করলে বাংলাদেশের জন্য আরও বিপদ অপেক্ষা করছে বলে জানান আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। তারা বলছেন, ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ না দিলে বাংলাদেশ বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। তাই বিষয়টি সরকার বিবেচনায় রেখেছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই তো ট্রেড ইউনিয়ন চান না। দেখা যাক, ভবিষ্যতে কী হয়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভুলে যান। এই অসাংবিধানিক ব্যবস্থা আর ফিরবে না। বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে, সংবিধান থেকে আওয়ামী লীগ এক চুলও নড়বে।
গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ এ কথা বলেন কাদের। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যারা যেসব অপকর্ম করছে, তারা দুর্বৃত্ত। আমরা উন্নয়ন করছি গুটিকয়েক অপকর্ম করে সরকারের অর্জন ম্লান করবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধেও খেলা হবে। এসব দুর্বৃত্তের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই। এখানে তাদের থাকার অধিকার নেই। শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেয় না। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বজিৎ ও আবরার হত্যার বিচার হয়নি, হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীরা সাবধান হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হচ্ছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। ১৪ বছর আগে লুটপাটের বাংলাদেশ ছিল। আজকের বাংলাদেশ আলোর পথে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর অন্ধকার, লুটপাটের দিকে যাবে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে নামি নাই। আমরা পাহারাদার হিসেবে মাঠে রয়েছি। ক্ষমতায় আছি জনগণের জানমালের স্বার্থে, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মাঠে আছি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এটা আমাদের দায়িত্ব। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ, সদস্য সংগ্রহসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগ আপনাদের ভয় পায় না। জনগণ ভয় পায় আপনাদের অগ্নিসন্ত্রাসকে।’
বিএনপির উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বন্ধু, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, তাদের ক্ষমতায় আসার দরকার নেই। তাদের ক্ষমতায় বসার অধিকার নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন রুহুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, যে বাংলাদেশ একসময় ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, সেই দেশকে উন্নয়ন আর অগ্রগতির দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এ শান্তি সমাবেশ।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলন আন্দোলন খেলা বন্ধ করুন। এটা করে আপনারা এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবেন না; বরং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করে মানুষের আস্থা অর্জন করুন। তা না হলে অতীতের মতো আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবেন।’
ময়মনসিংহ : বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় জয় বাংলা চত্বরে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে সমবেত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
খুলনা : বিএনপি-জামায়াতের পদযাত্রার নাটক, সন্ত্রাস, সহিংস রাজনীতি, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং জনগণ ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খুলনা মহানগর যুবলীগ। গতকাল শনিবার নগরীর শঙ্খ মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ।
আওয়ামী লীগ এতিম হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো আর পথ নেই। রাজপথে জনগণকে নিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে হবে। আওয়ামী লীগ এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, পুলিশের পিছে পিছে ঘুরছে। আর ছুরি, লাঠি, দা নিয়ে তারা শান্তি সমাবেশ করছে। ওরা নাকি জনগণের সম্পদ রক্ষা করবে।
সরকারের পদত্যাগ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বাইরে বাকি মহানগরগুলোতে গতকাল শনিবার পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরি নুর আহম্মেদ সড়কে পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকারকে পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বিশ^ বিবেক আজ বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছে। যদি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিচের দিকে যায়, তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কও নিচের দিকে যাবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যদি আগের নির্বাচনের মতো করেন, দিনের ভোট রাতে চুরি করেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বুঝিয়ে দেবে ‘কত ধানে কত চাল’।
জনগণ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, আজ লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমে গেছে। এরা কেউ বাড়ি ফিরে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে তারা বিদায় করবে। জনগণ এই ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেশে নিরপেক্ষ সংসদ ও নিরপেক্ষ সরকার আনবে। যাদের সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি থাকবে।
নগরীর কাজির দেউরি নুর আহম্মেদ সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে লাভলেইন মোড়, জুবিলি রোড়, তিনপুলের মাথা, বোস ব্রাদার্স, ডিসি হিল, বৌদ্ধমন্দির, লাভলেইন হয়ে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে এসে শেষ হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় পদযাত্রা শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মীর নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মেগা পদযাত্রা শুরু করলাম। আরেকটা দলের ছটফটানি শুরু হয়ে গেছে। সেই দল হচ্ছে চোরের দল, ডাকাতদের দল, ব্যাংক লুটেরাদের দল, মানি লন্ডারিংয়ের দল। সেই দলের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। যদি আস্থা থাকত পুলিশ বাহিনীর সমর্থন নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করত না। আমরা রাস্তায় আছি, থাকব। এই সরকারের পদত্যাগ করিয়েই আমরা ক্ষান্ত হব।’
জয়নাল আবদীন ফারুক বলেন, ‘যে সরকারের অধীনে কবর থেকে উঠে এসে মরা মানুষ ভোট দেয়, তাদের অধীনে নির্বাচন আমরা মানি না। আওয়ামী লীগকে বিশ^াস করেছিলাম একবার আর বিশ্বাস করব না।’
গাজীপুরে দুই গ্রুপের পৃথক কর্মসূচি : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজীপুর মহানগর বিএনপি তাদের পদযাত্রা কর্মসূচি পুলিশের বাধায় করতে পারেনি। শনিবার সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে তাদের কর্মসূচি সম্পন্ন করে। অপরদিকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা বিএনপির ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
বিএনপির বিভক্ত কর্মসূচির কারণে পুলিশ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে দেয়নি। বিপুলসংখ্যক পুলিশ রাজবাড়ী রোডে দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ঘিরে রাখে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ের অদূরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে শহরের রাজবাড়ী রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে তারা। অপরদিকে মহানগরীর জজ কোর্ট এলাকা থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা বিএনপির ছাত্রনেতারা একটি বিশাল পদযাত্রা নিয়ে শহরের মধ্য ছায়াবীথির জোড়পুকুরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
সিলেট : মহানগর বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশে নতুন করে দারিদ্র্যের সংখ্যা প্রায় চার কোটিতে দাঁড়িয়েছে। মানুষ দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। যার প্রমাণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শতকরা ১৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। আওয়ামী লীগ মুখে শুধু গণতন্ত্রের কথা বলে, বাস্তবে তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই।’ তিনি বলেছেন, বাধ্য হয়ে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন; অর্থাৎ কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। এমন দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এই সরকারের বিদায় চায়। জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
রাষ্ট্রপতিরা নির্বাচিত হয়ে নানারকম চমক উপহার দেন। মো. সাহাবুদ্দিন, যার সংক্ষিপ্ত চুপ্পু নামটাই বেশি পরিচিত, তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেই চমকে দিলেন। সম্ভাবনার চৌহদ্দির অনেক বাইরে থেকে আসা একজনের রাষ্ট্রপতি হওয়া এমন চমকানো সিদ্ধান্ত ছিল যে, খোদ আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতারই হজম করতে সমস্যা হয়েছে। মিডিয়াও সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত। তাদের কেউই ধারণা করতে পারেনি যে..। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, এই বিষয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে একটা আক্ষেপ তৈরি হয়। মনে হয়, ইস্, অমুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হয়তো...। এভাবে ভাবলে হয়তো...। এই বিষয় নিয়ে কাজ করা সহকর্মী পাভেল হায়দার চৌধুরীকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বললাম, ‘এখানে কারোই ব্যর্থতা বোধ করার কিছু নেই। আমরা যদি সম্ভাব্য ১০০ জনের তালিকা করতাম তবু হয়তো তার নাম আসত না।’ জবাবে পাভেল ক্ষীণ গলায় জানাল, ‘একটা ক্লু ছিল।’
‘তাহলে জানালে না কেন?’
উত্তর হলো, ‘জানিয়ে লাভ হতো না। কাউকে ঠিক বিশ্বাস করানো যেত না।’
যার নাম কেউ জানতে পারে না কিংবা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার কিছু ইশারা পেয়েও বিশ্বাসযোগ্য করতে পারবে না বলে এড়িয়ে যায়, তিনিই ভাবনার সব সীমাকে জয় করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
আমরা শিরোনাম করেছিলাম, ‘বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য থেকে মহামান্য’। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্যে পরে আসি, আগে মহামান্যের গল্প।
কয়েক বছর আগে সিলেট ক্যাডেট কলেজের একটা পুনর্মিলনী। প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে যিনি তিনি বারবার বলছিলেন, ‘মহামান্যের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে’ ‘মহামান্যের ব্যক্তিগত কর্তারা বলছেন।’ বিশেষ্য বাদ দিয়ে বিশেষণ। ভাবলাম, নিজে সরাসরি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কাজ করেন বলেই হয়তো, গুণমুগ্ধ হয়ে এই নামে ডাকছেন। ভুল। তিনি একা নন, প্রশাসন বা সরকারি পর্যায়ের সবার কাছে রাষ্ট্রপতির পরিচয়মহামান্য। সেই মহামান্য আমাদের অনুষ্ঠানে গেলেন এবং তার প্রতি মহামান্যের নিদর্শন দেখে আমরা স্তম্ভিত। তিনি যেখানে আসবেন, যেদিক দিয়ে যাবেন সবকিছুতে প্রবেশাধিকার সীমিত। তাদের প্রটোকলের ব্যাপারটা আমরা বুঝি, তবু সাধারণত ধরে নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেই এমন সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থাকবে। একে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জীবনের ওপর আক্রমণ এসেছে বারবার। তা ছাড়া সরকারপ্রধান বলে, তিনিই কার্যকর এক নম্বর। রাষ্ট্রপতি অলঙ্কার। সংসদে ভাষণ দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বাইরে তো প্রকাশ্যে তেমন কিছু করতে দেখা যায় না তাকে। তাহলে এই মান্যতা প্রদর্শন কি চিরাচরিত অভ্যাসের ফল, নাকি বাস্তব কোনো ভিত আছে।
কিছু বাস্তব ভিত দেখা গেল। মহামান্য প্রধান অতিথি হওয়াতে অনুষ্ঠানের মর্যাদা বেড়ে গেল। স্পনসর-বিজ্ঞাপনদাতারা অর্থ ছাড়ে ভীষণ উদার। অন্য অতিথিরাও সাগ্রহে আসতে রাজি। রাষ্ট্রপতির প্রটোকলের জন্য নানান হ্যাপাও হাসিমুখে মেনে নিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বুঝলাম, নির্বাহী ক্ষমতাশূন্য হলেও এক নম্বরের ধার এবং ভার আছে বটে। সেই ভার নিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন। এখন কাঙ্ক্ষিত ধার তিনি দেখাতে পারবেন! গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতির বছর। আসছে নির্বাচন। তারও আগে আসছে সম্ভাব্য নানান গোলমাল। সামাল দিতে নিজেকে কতটা মেলে ধরবেন এবং তারও আগে প্রশ্ন, মেলে ধরার সুযোগটা আসলে তার কোথায়? আমাদের সংবিধান তার সীমানাকে এত ছোট করে রেখেছে যে, মাঝেমধ্যে তাদের কারও কারও নিজেরও হাঁসফাঁস লাগে। কেউ কেউ আফসোসের কথা নানাভাবে বলেছেনও।
১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। লম্বা সময়। সবাইকে খুশি রাখা যায় না। তা ছাড়া দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতায় কিছু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ধরে নানারকম আপত্তিকর কাজ করছেন সরকার সমর্থকদের কেউ কেউ। তাই আওয়ামী লীগকে সমালোচনাই শুনতে হয় বেশি। আর এসবের ভিড়ে অনেক ভালো কাজও হারিয়ে যায়। যেমন হারিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদকে সর্বজনীন করার চেষ্টা।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। দলের কাউকে রাষ্ট্রপতি বানানো যেত এবং ২১ বছর পর ফেরা দলের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা দলের বাইরের একজনকে প্রায় জোর করে রাজি করালেন রাষ্ট্রপতি হতে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের প্রতি তার এই অনুরাগের কারণ ছিল, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি একটা সর্বজনশ্রদ্ধেয় ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছিলেন। অনেক বলে-কয়ে তাকে রাজি করালেন। প্রাপ্য মর্যাদা দিলেন। প্রাপ্য পাওনাটা অবশ্য পেলেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে যে সদ্যবিদায়ী আওয়ামী লীগের প্রতি সৎ ছেলের মতো আচরণ শুরু করল সেটা তিনি শুধু দেখে গেলেন। সংবিধান অনুযায়ী এমন কিছু করার ছিল না তার, তার দিক থেকে সেটাই যুক্তি নিশ্চয়; কিন্তু এই জায়গাতেই ব্যক্তির নিজেকে প্রকাশের সুযোগ। তিনি সেটা না করে সংবিধান অনুযায়ী দোষ করেননি, কিন্তু মহামান্য হিসেবে বোধ হয় নিজের প্রতি খুব মর্যাদাও দেখাননি। এটুকু পর্যন্ত তবু মানা যায়, কিন্তু পরে সংসদে বিএনপি সরকারের প্রশংসা করে যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন সেটা মানা যায় না। তিনি অন্তত বলতে পারতেন, এটা সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণ, তিনি পাঠ করতে বাধ্য, যা নতুন সরকার আসার পর অন্য রাষ্ট্রপতিদের কেউ কেউ করেছেন। তিনি তা-ও উল্লেখ না করে যে যাতনা আওয়ামী লীগকে দিয়েছিলেন সেটা আওয়ামী লীগের পাওনা ছিল না। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচন বাতিলের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে খুব সুবিবেচনার কাজ করেননি। এসময় করা নানা কটুকাটব্যও গ্রহণযোগ্য নয় নিশ্চয়। আওয়ামী লীগ শেষভাগে তার প্রতি ন্যায্য আচরণ করেনি, কিন্তু তিনিও অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায্য আচরণ করেছিলেন।
ভুল উদাহরণ ভালো কাজের পথ আটকে দেয়। এখানেও দিল। এরপর আর কেউ সর্বজনশ্রদ্ধেয়র পথে না হেঁটে নিজেদের এমন লোককে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন যে, তাদের কেউ কেউ মহামান্যের মর্যাদা বঙ্গভবনের ধুলোয় মিশিয়েছেন।
আগেও সেরকম ঘটনা কিছু ঘটেছে। বিচারপতি সায়েম, বিচারপতি সাত্তার, বিচারপতি আহ্সান উদ্দীনের নামগুলো মনে করুন। সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার কাজে তাদের ডেকে আনা হয়েছে এবং নতমস্তকে সেটা করে তারা ধন্য হয়েছেন। আসলে হয়েছেন ঘৃণ্য। এর মধ্যে ঘৃণ্যতম খন্দকার মোশতাক, যিনি বিশ্বাসঘাতকতায় রাষ্ট্রপতি হয়ে জাতির জনকের পরিবারের খুনকে জায়েজ করেছেন খুনিদের সূর্যসন্তান আখ্যা দিয়ে। পরে দল করে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেও জিয়া-এরশাদের রাষ্ট্রপতিত্বে উত্তরণও এই পদের মর্যাদার গায়ে কালো দাগ। হুমায়ুন আজাদ রাষ্ট্রপতি সায়েম সম্পর্কে এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘তিনি উচ্চতায় খাটো। মানুষ হিসাবেও খাটো।’ এরকম বহু মাননীয় এবং মহামান্য আমাদের আছেন, যারা মানুষ হিসেবে ভীষণ খাটো। তাদের ভাগ্য যে, হুমায়ুন আজাদ একজনই ছিলেন এবং এখন নেই।
আপত্তিকর কাজ আরও আছে। ভাবা যায়, সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি পরে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তা-ও কী, আওয়ামী লীগ আমলের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এমপি হয়েছেন বিএনপির মার্কায়। আরেকজন, আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সেই ভাগ্য হয়নি। বিএনপি তাকে এমপি পদে মনোনয়ন না দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদকে আরেক দফা পতনের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। অবশ্য স্বাধীনতাবিরোধী আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি পদকে যথেষ্টই পতিত করে গেছেন। বিএনপি সংসদীয় ব্যবস্থায় রাজি ছিল না, শেষপর্যন্ত রাজি হলেও নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির হাতে রেখেছিল দ্বাদশ সংশোধনীতে, আব্দুর রহমান বিশ্বাস সেটার অপব্যবহার করে সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে আরেকটু হলে নির্বাচনকেই ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান দেখিয়েছিলেন ব্যক্তিত্বের ঝাঁজ কেমন হতে পারে। দেখিয়েছিলেন কাগুজে ক্ষমতা না থাকলেও উচ্চতর বিবেক আর উচ্চাঙ্গের বোধ দিয়ে করা যায় অনেক কিছু। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তার ব্যবহৃত শব্দ এবং বাক্য এমন অসামান্য উচ্চতার ছিল যে, সেদিন বোঝা গিয়েছিল নিয়মের নিগড়ে বাঁধা পড়ে থেকেও নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। ‘রাষ্ট্রপতি স্বীয় বিবেচনায় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’ বলে সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিজের মতভিন্নতা জানালেন। আবার ‘বড় দুঃখী এই মাটি, ভাইয়ের রক্তে যেন রঞ্জিত না হয়’ এই ধরনের কথায় থাকল বিবদমান পক্ষগুলোর প্রতি সংযত হওয়ার আকুতিও। তিনি ক্ষমতার সীমানাও মানলেন। আবার নিজের ব্যক্তিত্বও প্রকাশ করলেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কাছেও এই প্রত্যাশা ছিল। তিনি পূরণ করেননি। অতএব, এরপর আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাও হেঁটেছেন চিরাচরিত লাইনে। জিল্লুর রহমান এবং আবদুল হামিদের মতো দলের পোড়খাওয়া দুই নেতাই রাষ্ট্রপতি। মো. সাহাবুদ্দিন ঠিক সেই সারির নন এবং এখানেই তিনি অন্যরকম।
ঐ যে বলছিলাম, আমাদের শিরোনামের ‘বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য’ অংশ। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মাঠে নেমেছেন। সেই হিসেবে মাঠের রাজনীতিক। আবার পরে সরকারি চাকরিতে গিয়ে নানান দায়িত্ব পালন করে সরকারি কর্তা। আর কোনো রাষ্ট্রপতির বেলায় কি এমন মিশ্রণ ছিল! উত্তর খুব সম্ভবত না। অন্যদের তুলনায় অচেনা হয়তো, হয়তো সবচেয়ে লো প্রোফাইল থেকে রাষ্ট্রপতি, কিন্তু একইসঙ্গে একটা অনন্যতাও আছে। তিনি দলীয় অনুগত। আবার সরকারি অভিজ্ঞতাপুষ্টও। এই অনন্যতা মহামান্য হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে!
আসলে সেসব কিছু নয়। বিষয় হলো ব্যক্তিত্বে। রাষ্ট্রপতির কিছু করার নেই বলে বসে থাকলে দোষ নেই। আবার দেশের দুর্যোগে অভিভাবকের ছাতা হাতে দাঁড়াতে চাইলে সরানোর সুযোগও নেই। প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। আমাদের মতোই অলঙ্কার, কিন্তু যিনি রাজনীতির চানক্য তিনি রাষ্ট্র্রপতি ভবনের কাগুজে ফুল হয়ে থাকতে চাননি। আইন এবং নীতির এমন কিছু দিক দেখিয়ে গেছেন যা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের জন্য উপদ্রব মনে হলেও সামগ্রিকভাবে সহায়কই হয়েছে।
সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিত্ব তাই বেশ মজার। অলংকার হয়ে থাকতে চাইলেও দোষ নেই আবার অভিভাবক হয়ে উঠলেও বেশ হয়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।