
সাবেক বিএনপি নেতা ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি)। গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে আলোচিত এই রাজনীতিবিদের। মাত্র তিন দিন আগে নিজের নতুন দল তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন পেয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী নাজমুল হুদা।
তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আক্কাস আলী দেশ রূপান্তরকে নাজমুল হুদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত শুক্রবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে মৃত্যু হয় তার।
তিনি আরও জানান, রাতে মরদেহ ধানমন্ডির বাসভবনে রাখা হবে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ধানম-ি সাত মসজিদ রোডের মসজিদে হবে প্রথম জানাজা। পরে তার মরদেহ নেওয়া হবে নিজ এলাকা দোহারে। বাদ জোহর সেখানে আরেক দফা জানাজা শেষে শাইনপুকুর গ্রামে সমাহিত করা হবে তাকে।
১৯৪৩ সালের ৬ জানুয়ারি দোহারেই জন্মেছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। আইন বিষয়ে পড়তে যান ব্রিটেনে। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের জাগো দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে গঠিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়ে হন দলটির সর্বকনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর তিনবার তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। ১/১১’র পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। তখন তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বহিষ্কৃত হলেও তিনি বিএনপির দলীয় কাজ করতে থাকেন এবং ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৬ জুন নাজমুল হুদা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। ওই বছর নাজমুল হুদা ও আবুল কালাম মিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাস পর আবুল কালাম তাকে বিএনএফ থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। ২০১৫ সালে হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে আরও একটি নতুন দল গঠন করেন। দলটি তিন দিন আগেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে।
খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে বেসরকারি খাতের ১২ কেজি ওজনের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দাম ১৪৯৮ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১২৩২ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮৫০ টাকা দরে।
চলতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাতে আগের মাসের চেয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ২৬৬ টাকা। এর সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন আরও ২০০-৩৫০ টাকা। সব মিলে গত মাসের তুলনায় এ মাসে ১২ কেজি এলপিজির জন্য প্রায় ৬০০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ভোক্তার।
খুচরা এলপি গ্যাস বিক্রিতারা সব খরচ বাদ দিয়েই ১২ কেজির সিলিন্ডারপ্রতি ৩৮ টাকা মুনাফা পায়।
অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৫৯১ টাকা হলেও এর সরবরাহের পরিমাণ এতই কম যে, সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছায় না।
এদিকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করে ওই বছরের ১ মার্চের মধ্যে সিলিন্ডারের গায়ে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশনাও বাস্তবায়ন নেই।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আবাসিকে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ১.৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার কারণে এই নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। এলপিজি খাতের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই এটা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের এপ্রিলে দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একবার দাম সমন্বয় করা হলেও কখনোই এ দামে এলপিজি পান না ভোক্তারা। দাম নির্ধারণের পর তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে কমিশনের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। ফলে এলপিজির বাজারে দাম নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে চরম নৈরাজ্য। যার শিকার ভোক্তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজার যাচাই করে দেখা গেছে বর্তমানে কমিশন নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। তিনি বলেন, ‘আমরা লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠানও না আবার এলপিজির দামও নির্ধারণ করি না। তারপরও ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় বিভিন্ন সময় বাজার মনিটরিং করছি। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানা করছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যে দপ্তরের এ কাজ করার দায়িত্ব তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। না হলে শুধু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে একা এ নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’
২০১০ সালে সরকার আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে দেশে এলপি গ্যাসের মোট ব্যবহার ছিল যেখানে ৫০ হাজার টন, সেখানে বর্তমানে চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন।
রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে দেশে প্রতি বছর এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে গড়ে ৩৫ শতাংশ করে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা হবে প্রায় ৭৮ লাখ টন। বর্তমানে ১৩ শতাংশ রান্নায় পাইপলাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারকারী। তবে অনেক সময় চাপ কম থাকায় চুলা না জ¦লায় তাদের একটা অংশ এলপিজি ব্যবহার করছেন বাধ্য হয়ে।
বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস না পাওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার এবং অবৈধভাবে বড় থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ ভূরি ভূরি। এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিবার মতবিনিময় সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তারা চিঠিও দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এলপিজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক বলেন, এলপিজির দাম সরকার যেটুকু বাড়ায়, খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয় তার চেয়ে বেশি। এমনটা হলে সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামের কোনো কার্যকারিতা থাকে না।
সভায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেওয়ার সময় এলপিজি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিলারদের থেকে কত টাকা রাখবে অর্থাৎ তাদের কমিশন কত হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ডিলাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখছেন। তখন নিরুপায় হয়ে তাদেরও বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয়। এ সমস্যার সমাধান হলে ভালোভাবে ব্যবসা করা যাবে বলে মনে করেন এসব ব্যবসায়ী।
ওই সভায় বিইআরসি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বাড়লেই ওই পণ্য দেশে প্রবেশ করার আগেই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত দামের বেশি রাখলে সেটা অপরাধ, কারণ উৎপাদকের মূল্য ও খুচরা মূল্য বিবেচনায় এনে এলপিজির দাম বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরও বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।
বাড়তি দাম দেওয়ার পরও কেন ভোক্তারা অভিযোগ করেন না তা জানতে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়, যাদের প্রায় সবাই একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এদেরই একজন মিরপুরের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলছিলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা কমিশনে অভিযোগ করা কিছুটা ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার। এরপরও অভিযোগ জানালে হয়তো সাময়িক প্রতিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরে অন্য ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে তো তাদের কাছ থেকেই গ্যাস নিতে হবে।
ভোক্তাদের কেউ কেউ আবার জানেন না কোথায় কীভাবে এর প্রতিকার পাবেন। ফলে মুখ বুঁজে ব্যবসায়ীদের সব নৈরাজ্য সহ্য করেন মাসের পর মাস।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের বাজারমূল্য ৫৯১ টাকা। বেসরকারি এলপিজির দাম প্রতি মাসে বাড়লেও দেশে উৎপাদন হওয়ায় এর দাম একই থাকে। ওজনে বেশি, দামে সাশ্রয়ী সরকারি এলপিজির মার্কেট শেয়ার মাত্র ১.৫ শতাংশ হওয়ায় এ গ্যাস সাধারণ ভোক্তা পর্যন্ত খুব একটা পৌঁছায় না। ফলে বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এলপিজির সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
১৯৭৭-৭৮ সালে চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় একটি প্রকল্পের আওতায় এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্ল্যান্ট নির্মাণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। ১৯৮৩ সালে এ প্রকল্পটি ‘এলপি গ্যাস লিমিটেড’ নামে বিপিসির একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে এলপিজি বোতলজাত ও বাজারজাত করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বিপিসি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলায় আরও একটি এলপিজি স্টোরেজ, বটলিং ও ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যান্ট তৈরি হয় যা ১৯৯৮ সালে উৎপাদনে যায়। এ দুটি প্ল্যান্ট এলপি গ্যাস লিমিটেডের অধীনে।
বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের চট্টগ্রামে সাড়ে ১৪ হাজার টন এবং সিলেটের কৈলাশটিলায় সাড়ে ৯ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে। এর মধ্যে কাঁচামালের অভাবে বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কৈলাশটিলা প্ল্যান্ট।
ভোক্তাদের সাশ্রয়ী দামে এলপিজি সরবরাহের জন্য কয়েক বছর ধরে এলপিজি আমদানির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টন এলপিজি সরবরাহের সক্ষমতা সম্পন্ন টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে কক্সবাজারে। এতে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কমতে পারে। কিন্তু এ উদ্যোগ এখনো পরিকল্পনাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘কমিশন নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম আদায় করা গর্হিত অপরাধ। যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের যে সক্ষমতা তা দিয়ে ভোক্তার স্বার্থরক্ষা করা যাবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেট শেয়ার বাড়লে এ নৈরাজ্য কমবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সোচ্চার হতে হবে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে এলপিজি কিনলে বিইআরসি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ছাড়া ক্যাবের কাছে অভিযোগ করলেও আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে সহায়তা করব।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত দাম আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করতে চাইলে এলপিজি কেনার রসিদসহ তাদের কাছে আবেদন করতে হবে। অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মোট জরিমানার ২৫ শতাংশ পাবেন ওই অভিযোগকারী। অধিদপ্তরের www. dncrp.com এ ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও তার সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামের গেরস্তবাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন বিরল উদাহরণ।
গণভবনের বিশাল আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাকসবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি।
গণভবন সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজারদর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মণ পেঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁচজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি হিসেবে পেঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজে ৭০০-৮০০ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।
করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তিনি সরকারি, বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙ্গিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, এ দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।
ইহসানুল করিম জানান, প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, গণভবন আঙ্গিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বথুয়াশাক, বরোকলি, টমেটো, লাউ, শিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছেন।
এ ছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষাক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার। এ ছাড়াও গণভবনের আঙ্গিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগি, তিতির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতলা, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি।
গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারিদের অন্যতম খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া মালয়েশিয়া গেছেন। তার সঙ্গে আরও দুজন সহযোগীও গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিদেশি একটি এয়ারলাইনসে পাড়ি দেন মালয়েশিয়ায়। তিনি আর দেশে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এর আগে খালেদ দুইবার থাইল্যান্ড ও দুবাই যান বলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। যদিও জামিনের শর্ত অনুযায়ী, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন না।
খালেদের পাশাপাশি আরেক শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারি ইসমাইল হোসেন চৌধরী সম্রাটসহ আরও অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। তারা ‘ওপরের মহলের গ্রিন সিগন্যালের’ অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে, ক্যাসিনোকান্ডে আলোচিত পুরান ঢাকার দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া কারাগার থেকে মুক্ত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এমনকি ক্যাসিনোকান্ডে আরেক আলোচিত সেলিম প্রধানও কারাগার থেকে বের হতে মরিয়া। গত ৩১ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আসা সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ কিছুদিন প্রকাশ্য থাকলেও এখন তিনি অনেকটা আত্মগোপনে চলে গেছেন। বন্ধুবান্ধব ও স্বজনরাও জানেন না তার অবস্থানের কথা। যদিও সাঈদ সব কটি মামলায় জামিনে আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল ও খিলগাঁও এলাকার দুই ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে জামিনে মুক্ত হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। মুক্ত হওয়ার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার বেশির ভাগ সময়ই থাকতেন হাসপাতালের কেবিনে। আসলে তার কোনো অসুখই ছিল না। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে খালেদ দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটিয়েছেন। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর এলাকায় ফিরে এলেও গোপনে থাকতেন। গত দুই মাসের ব্যবধানে খালেদ দুইবার থাইল্যান্ড ও দুবাই গিয়ে কিছুদিন থেকে আবার দেশে ফিরে আসেন।
ওই দুই ব্যবসায়ী আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিদেশি এয়ারলাইনসে মালয়েশিয়ায় যান খালেদ। তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সহযোগী। কবে আসবেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তার দুটি পাসপোর্ট আছে বলে ওই দুই ব্যবসায়ী জানেন। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনবার দেশের বাইরে গেছেন। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে খালেদের ব্যবসা রয়েছে। সম্রাটসহ আরও অনেকেই দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ওই দিন রাতেই গুলশানের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন খালেদ। এরপরই তাকে যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাবেক কাউন্সিলর মমিমুল হক সাঈদকে ধরতে র্যাব ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। র্যাবের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিঙ্গাপুর পালিয়ে যান সাঈদ। আর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ধরা পড়েন সম্রাট। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় একসময় ওয়ান টেন ও থ্রি কার্ডের মতো জুয়ার আসর চলত। যুবলীগের কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রণেই মূলত ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও ভবনে বিদেশের আদলে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে পড়ে। অভিযানে সম্রাট, ঠিকাদার জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে এখনো কয়েকজন কারাগারে আছেন। সম্রাট ও খালেদ জামিনে বের হয়ে আসেন। যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশেও পালিয়ে আছেন। আবার কেউ দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে ছিলেন। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার কারণে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনো বেতে শীর্ষ কারবারিদের অবাধ চলাচল আবার শুরু হয়েছে। সম্রাট, খালেদ ও সাঈদের সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনো বেতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তারা একটি মহলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারি খালেদ দেশের বাইরে গেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। অনেকেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তার দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি শীর্ষ মহলকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্রাটও যেকোনো সময় দেশের বাইরে চলে যাবেন। ক্যাসিনো সেলিম, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া কারাগার থেকে মুক্ত হতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তারা যেকোনো সময় জামিন নিয়ে কারামুক্ত হয়ে দেশের বাইরে যাবেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২ সেপ্টেম্বর খালেদ ও ২৭ আগস্ট সম্রাট কারামুক্ত হন। খালেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলায় জামিন পান। সর্বশেষ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত থেকে জামিন পান খালেদ। ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ক্যাসিনো কারবার চালাতেন তিনি। গত বছরের ২১ মার্চ অর্থ পাচার ও মাদক আইনের দুই মামলায় খালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ত াছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে সাড়ে ৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকার মতিঝিল এলাকায় খালেদ ক্যাসিনোর পাশাপাশি গড়ে তোলেন অস্ত্রের ভান্ডার। ওই সময় যুবলীগ নেতা র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত মিল্কী ও তার ক্যাডার বাহিনীর হাতে প্রায় শতাধিক অস্ত্র ছিল। মিল্কীর অস্ত্রধারী ক্যাডারদের কথা চিন্তা করেই অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলতে হয় তাকে। খালেদের দুই ভাই মাকসুদ ও হাসানও তার অপকর্মের সাক্ষী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান একসময় তার অন্যতম সহযোগী ছিল। ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও গণপূর্ত ভবন, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন স্থানে যেখানে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ। সম্রাটও খালেদকে সব ধরনের সহায়তা করতেন।
মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৩১ জানুয়ারি সাবেক কাউন্সিলর সাঈদ দেশে আসার পর গোপনেই ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি প্রকাশ্য হকি ফেডারেশনের বৈঠকে গেলে আলোচনার ঝড় ওঠে। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তবে বেইলি রোডের অ্যাপার্টমেন্টে মাঝেমধ্যে আসেন। গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক এবং তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াও ফকিরাপুল ও মতিঝিলে ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। সম্রাট, খালেদ ও সাঈদ তাকে সহায়তা করতেন।
করোনা মহামারির ক্ষতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটে ব্যয় বৃদ্ধিসহ ২০২২ সালে নানা সংকটে কেটেছে দেশের শিল্প খাত। এ জন্য শিল্পে উৎপাদন ঠিক রাখতে নানা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবুও বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তবে আশার দিক হচ্ছে, বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে খেলাপি বাড়ার পর শেষ প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্তের কারণে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য চলছে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর ২০২১ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা ছিল সে সময়ের মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ; অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা।
তবে খেলাপির এই পরিমাণ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও বেশি ছিল। সে সময় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা ছিল খেলাপি ঋণ। বছরের শেষ প্রান্তিকে এসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কমে যায়। তবে হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণের খেলাপি কমে যাওয়ার তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীবিদরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রান্তিক অনুযায়ী খেলাপি কমলেও বছর হিসেবে বেড়েছে ১৭ হাজার কোটিরও বেশি। সুতরাং এটা খুব বেশি উল্লেখযোগ্য কিছু না। আর এক কথায় কাগুজে হিসাব। বাস্তবে খেলাপি ঋণের কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। মূলত আইএমএফকে দেখানোর জন্যই একটা গাণিতিক হিসাব দেখানো হয়েছে। যদি পুনঃতফসিল আর অবলোপন বাড়ে তাহলে খেলাপির উন্নতি কীভাবে হলোÑ এমন প্রশ্ন রাখেন এই অর্থনীতিবিদ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের যে সংজ্ঞা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই সময়ে কী পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে, আদালতের আদেশে ঋণের কী পরিমাণ অর্থ আটকে আছে, আর কী পরিমাণ অবলোপন করা হয়েছে, তা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দেখাচ্ছে প্রকৃত খেলাপি তার চেয়ে অনেক বেশি। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকও তাদের মতামত দিয়েছে।
আইএমএফকে দেখানোর জন্য কমিয়ে দেখানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আইএমএফকে মুখে হিসাব দেখালেই তো চলবে না। তারা খেলাপি ঋণের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইবে। এই সময়ে যদি পুনঃতফসিল, অবলোপন বা কোর্টে আটকা পড়া ঋণের পরিমাণ বাড়ে, তাহলে বুঝতে হবে বাস্তবে খেলাপি ঋণ কমেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ঘাটতি কমেছে ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম বলে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে।
দেশের ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৪৬ দশমিক ৭৯ শতাংশই সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক মানদ-ে খেলাপির পরিমাণ ৩ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। সরকারকে আইএমএফের ঋণের সব কিস্তি পেতে হলে ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে হতে হবে।
২০২২ সালে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, যা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময়ে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের ব্যাংক খাতের প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল ৮৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে ৭৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। আর ঘাটতি রয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঘাটতি ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা; অর্থাৎ মোট প্রভিশন ঘাটতি ৮০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর।
আবদুর রউফ তালকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে খেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে এই ছাড় দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো।
দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের শর্তে রাজনীতি না করার কোনো মুচলেকা নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক স্বাধীনতায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করেন তিনি।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রক্রিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলটির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বলেছেন, আইনমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, তা টার্গেটিং কথাবার্তা। দেশের জনগণ ও বিদেশিদের শোনাতে তারা রাজনৈতিক ভন্ডামি করছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আইনমন্ত্রী কেন এ ব্যাখ্যা দিলেন, তা বোধগম্য নয় তাদের।
গতকাল রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দাবি করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না এমন মুচলেকা দিয়েছেন এবং এর ভিত্তিতে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। তার বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। গতকাল আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘যে চিঠিটা লেখা হয়েছে, সেখানে যা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে, তার শারীরিক অবস্থা এমন ছিল যে সুচিকিৎসা না করলে তার জীবন বিপন্ন হচ্ছে। আপনারাই বিচার করেন, যিনি অসুস্থ তিনি কি রাজনীতি করতে পারেন? যদি সেটা আপনাদের বিবেচনায় হয় তিনি পারেন, তাহলে আমার মনে হয় যে আপনাদের বিবেচনা সম্বন্ধে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাহলে পারেন। কিন্তু যিনি অসুস্থ তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না এটাই হচ্ছে আমার মনে হয় দ্য বেস্ট জাজমেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ। তিনি কি করবেন, সেটা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাকে যখন ৪০১ ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধি) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে অসুস্থ বিবেচনায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে আমরা কখনোই লিখে রাখিনি যে তিনি কখনো রাজনীতি করতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটো শর্ত দিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে এ রকম কোনো শর্ত সেটার মধ্যে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে কারও স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করাটা ঠিক হবে না।’
খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করতে পারবেন কি না, এ কথা যদি বলা হয় তাহলে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে যেতে হবে। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি দুই বছর বা তার ঊর্ধ্বে সাজা হয় তাহলে এমপি নির্বাচন করতে পারবেন না। এগুলো তো স্পষ্ট। আমার মনে হয় না যে আমার মুখ দিয়ে এগুলো বের করার প্রয়োজন আছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- পাওয়া খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করলে কারাবাস থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, পরিপাকতন্ত্র, কিডনিতে জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়ে আসছেন। নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। বিএনপি তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কথা বললেও সরকার বরাবরই বলে আসছে, শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তিতে থাকায় তাকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলটির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বলেছেন, ৪০১ ধারায় বলা আছে, শর্তহীন বা শর্তমুক্তভাবে মামলা স্থগিত করার কথা। তারা খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার সময় তাহলে কেন শর্ত দিয়ে দিল যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং রাজনীতি করতে পারবেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তারা (সরকার) নিজেরাই তো নিজেদের কথায় ধরা খেল। শর্ত দিয়েছে রাজনীতি করতে পারবেন না। এখন তারা বলছে, রাজনীতি করতে বাধা নেই। তারা টার্গেটিং কথা বলছেন। জনসাধারণ ও বিদেশিদের বোঝাতে চাইছেন আমরা তো বাধা দিচ্ছি না।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আজম খান বলেন, যদি সরকার শর্ত না দিত, তাহলে খালেদা জিয়াকে কেন তার কার্যালয়ে বসতে বাধা দেওয়া হয়। সমাবেশে যেতে দেওয়া হয় না। কেন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আকুল আবেদনের পরেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকার এসব কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সরকার তো চাইলে খালেদা জিয়াকে শর্তহীন মুক্তি দিতে পারত। আর তার মামলার দুটি আপিলে বহাল আছে। আপিলে বহাল থাকলে ধরে নিতে হবে চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তাই আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নির্বাচন করতে বাধা নেই বলেও জানান এই আইনজীবী।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমি কী বলব, আমার সঙ্গে এগুলার কী সম্পর্ক। এগুলো তো অনেক বিতর্কিত বিষয়, এগুলো বড় বড় মন্ত্রী বলেন। আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এগুলো নিয়ে আলাপও হয় না আমাদের দলীয় কোনো ফোরামে।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আল্টিমেটলি খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না এটাই বোঝানো হয়েছে। আসলে বেশি ছাড় দিয়ে দিয়েছে তো নেত্রী, তাই এত কথা।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইচ্ছে করলে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, এ কথাটা আইনমন্ত্রী কীভাবে বললেন আমার বোধগম্য নয়। আইনমন্ত্রী এটা কোন আইন দেখিয়ে বললেন আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আইনমন্ত্রী আইনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।’
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।