
দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের শর্তে রাজনীতি না করার কোনো মুচলেকা নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক স্বাধীনতায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করেন তিনি।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রক্রিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলটির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বলেছেন, আইনমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, তা টার্গেটিং কথাবার্তা। দেশের জনগণ ও বিদেশিদের শোনাতে তারা রাজনৈতিক ভন্ডামি করছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আইনমন্ত্রী কেন এ ব্যাখ্যা দিলেন, তা বোধগম্য নয় তাদের।
গতকাল রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দাবি করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না এমন মুচলেকা দিয়েছেন এবং এর ভিত্তিতে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। তার বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। গতকাল আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘যে চিঠিটা লেখা হয়েছে, সেখানে যা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে, তার শারীরিক অবস্থা এমন ছিল যে সুচিকিৎসা না করলে তার জীবন বিপন্ন হচ্ছে। আপনারাই বিচার করেন, যিনি অসুস্থ তিনি কি রাজনীতি করতে পারেন? যদি সেটা আপনাদের বিবেচনায় হয় তিনি পারেন, তাহলে আমার মনে হয় যে আপনাদের বিবেচনা সম্বন্ধে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাহলে পারেন। কিন্তু যিনি অসুস্থ তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না এটাই হচ্ছে আমার মনে হয় দ্য বেস্ট জাজমেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ। তিনি কি করবেন, সেটা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাকে যখন ৪০১ ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধি) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে অসুস্থ বিবেচনায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে আমরা কখনোই লিখে রাখিনি যে তিনি কখনো রাজনীতি করতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটো শর্ত দিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে এ রকম কোনো শর্ত সেটার মধ্যে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে কারও স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করাটা ঠিক হবে না।’
খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করতে পারবেন কি না, এ কথা যদি বলা হয় তাহলে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে যেতে হবে। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি দুই বছর বা তার ঊর্ধ্বে সাজা হয় তাহলে এমপি নির্বাচন করতে পারবেন না। এগুলো তো স্পষ্ট। আমার মনে হয় না যে আমার মুখ দিয়ে এগুলো বের করার প্রয়োজন আছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- পাওয়া খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করলে কারাবাস থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, পরিপাকতন্ত্র, কিডনিতে জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়ে আসছেন। নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। বিএনপি তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কথা বললেও সরকার বরাবরই বলে আসছে, শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তিতে থাকায় তাকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলটির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বলেছেন, ৪০১ ধারায় বলা আছে, শর্তহীন বা শর্তমুক্তভাবে মামলা স্থগিত করার কথা। তারা খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার সময় তাহলে কেন শর্ত দিয়ে দিল যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং রাজনীতি করতে পারবেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তারা (সরকার) নিজেরাই তো নিজেদের কথায় ধরা খেল। শর্ত দিয়েছে রাজনীতি করতে পারবেন না। এখন তারা বলছে, রাজনীতি করতে বাধা নেই। তারা টার্গেটিং কথা বলছেন। জনসাধারণ ও বিদেশিদের বোঝাতে চাইছেন আমরা তো বাধা দিচ্ছি না।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আজম খান বলেন, যদি সরকার শর্ত না দিত, তাহলে খালেদা জিয়াকে কেন তার কার্যালয়ে বসতে বাধা দেওয়া হয়। সমাবেশে যেতে দেওয়া হয় না। কেন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আকুল আবেদনের পরেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকার এসব কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সরকার তো চাইলে খালেদা জিয়াকে শর্তহীন মুক্তি দিতে পারত। আর তার মামলার দুটি আপিলে বহাল আছে। আপিলে বহাল থাকলে ধরে নিতে হবে চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তাই আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নির্বাচন করতে বাধা নেই বলেও জানান এই আইনজীবী।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমি কী বলব, আমার সঙ্গে এগুলার কী সম্পর্ক। এগুলো তো অনেক বিতর্কিত বিষয়, এগুলো বড় বড় মন্ত্রী বলেন। আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এগুলো নিয়ে আলাপও হয় না আমাদের দলীয় কোনো ফোরামে।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আল্টিমেটলি খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না এটাই বোঝানো হয়েছে। আসলে বেশি ছাড় দিয়ে দিয়েছে তো নেত্রী, তাই এত কথা।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইচ্ছে করলে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, এ কথাটা আইনমন্ত্রী কীভাবে বললেন আমার বোধগম্য নয়। আইনমন্ত্রী এটা কোন আইন দেখিয়ে বললেন আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগরে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আইনমন্ত্রী আইনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।’
খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে বেসরকারি খাতের ১২ কেজি ওজনের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দাম ১৪৯৮ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১২৩২ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮৫০ টাকা দরে।
চলতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাতে আগের মাসের চেয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ২৬৬ টাকা। এর সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন আরও ২০০-৩৫০ টাকা। সব মিলে গত মাসের তুলনায় এ মাসে ১২ কেজি এলপিজির জন্য প্রায় ৬০০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ভোক্তার।
খুচরা এলপি গ্যাস বিক্রিতারা সব খরচ বাদ দিয়েই ১২ কেজির সিলিন্ডারপ্রতি ৩৮ টাকা মুনাফা পায়।
অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৫৯১ টাকা হলেও এর সরবরাহের পরিমাণ এতই কম যে, সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছায় না।
এদিকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করে ওই বছরের ১ মার্চের মধ্যে সিলিন্ডারের গায়ে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশনাও বাস্তবায়ন নেই।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আবাসিকে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ১.৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার কারণে এই নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। এলপিজি খাতের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই এটা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের এপ্রিলে দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একবার দাম সমন্বয় করা হলেও কখনোই এ দামে এলপিজি পান না ভোক্তারা। দাম নির্ধারণের পর তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে কমিশনের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। ফলে এলপিজির বাজারে দাম নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে চরম নৈরাজ্য। যার শিকার ভোক্তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজার যাচাই করে দেখা গেছে বর্তমানে কমিশন নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। তিনি বলেন, ‘আমরা লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠানও না আবার এলপিজির দামও নির্ধারণ করি না। তারপরও ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় বিভিন্ন সময় বাজার মনিটরিং করছি। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানা করছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যে দপ্তরের এ কাজ করার দায়িত্ব তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। না হলে শুধু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে একা এ নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’
২০১০ সালে সরকার আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে দেশে এলপি গ্যাসের মোট ব্যবহার ছিল যেখানে ৫০ হাজার টন, সেখানে বর্তমানে চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন।
রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে দেশে প্রতি বছর এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে গড়ে ৩৫ শতাংশ করে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা হবে প্রায় ৭৮ লাখ টন। বর্তমানে ১৩ শতাংশ রান্নায় পাইপলাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারকারী। তবে অনেক সময় চাপ কম থাকায় চুলা না জ¦লায় তাদের একটা অংশ এলপিজি ব্যবহার করছেন বাধ্য হয়ে।
বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস না পাওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার এবং অবৈধভাবে বড় থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ ভূরি ভূরি। এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিবার মতবিনিময় সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তারা চিঠিও দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এলপিজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক বলেন, এলপিজির দাম সরকার যেটুকু বাড়ায়, খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয় তার চেয়ে বেশি। এমনটা হলে সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামের কোনো কার্যকারিতা থাকে না।
সভায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেওয়ার সময় এলপিজি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিলারদের থেকে কত টাকা রাখবে অর্থাৎ তাদের কমিশন কত হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ডিলাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখছেন। তখন নিরুপায় হয়ে তাদেরও বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয়। এ সমস্যার সমাধান হলে ভালোভাবে ব্যবসা করা যাবে বলে মনে করেন এসব ব্যবসায়ী।
ওই সভায় বিইআরসি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বাড়লেই ওই পণ্য দেশে প্রবেশ করার আগেই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত দামের বেশি রাখলে সেটা অপরাধ, কারণ উৎপাদকের মূল্য ও খুচরা মূল্য বিবেচনায় এনে এলপিজির দাম বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরও বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।
বাড়তি দাম দেওয়ার পরও কেন ভোক্তারা অভিযোগ করেন না তা জানতে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়, যাদের প্রায় সবাই একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এদেরই একজন মিরপুরের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলছিলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা কমিশনে অভিযোগ করা কিছুটা ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার। এরপরও অভিযোগ জানালে হয়তো সাময়িক প্রতিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরে অন্য ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে তো তাদের কাছ থেকেই গ্যাস নিতে হবে।
ভোক্তাদের কেউ কেউ আবার জানেন না কোথায় কীভাবে এর প্রতিকার পাবেন। ফলে মুখ বুঁজে ব্যবসায়ীদের সব নৈরাজ্য সহ্য করেন মাসের পর মাস।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের বাজারমূল্য ৫৯১ টাকা। বেসরকারি এলপিজির দাম প্রতি মাসে বাড়লেও দেশে উৎপাদন হওয়ায় এর দাম একই থাকে। ওজনে বেশি, দামে সাশ্রয়ী সরকারি এলপিজির মার্কেট শেয়ার মাত্র ১.৫ শতাংশ হওয়ায় এ গ্যাস সাধারণ ভোক্তা পর্যন্ত খুব একটা পৌঁছায় না। ফলে বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এলপিজির সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
১৯৭৭-৭৮ সালে চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় একটি প্রকল্পের আওতায় এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্ল্যান্ট নির্মাণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। ১৯৮৩ সালে এ প্রকল্পটি ‘এলপি গ্যাস লিমিটেড’ নামে বিপিসির একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে এলপিজি বোতলজাত ও বাজারজাত করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বিপিসি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলায় আরও একটি এলপিজি স্টোরেজ, বটলিং ও ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যান্ট তৈরি হয় যা ১৯৯৮ সালে উৎপাদনে যায়। এ দুটি প্ল্যান্ট এলপি গ্যাস লিমিটেডের অধীনে।
বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের চট্টগ্রামে সাড়ে ১৪ হাজার টন এবং সিলেটের কৈলাশটিলায় সাড়ে ৯ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে। এর মধ্যে কাঁচামালের অভাবে বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কৈলাশটিলা প্ল্যান্ট।
ভোক্তাদের সাশ্রয়ী দামে এলপিজি সরবরাহের জন্য কয়েক বছর ধরে এলপিজি আমদানির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টন এলপিজি সরবরাহের সক্ষমতা সম্পন্ন টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে কক্সবাজারে। এতে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কমতে পারে। কিন্তু এ উদ্যোগ এখনো পরিকল্পনাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘কমিশন নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম আদায় করা গর্হিত অপরাধ। যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেডের যে সক্ষমতা তা দিয়ে ভোক্তার স্বার্থরক্ষা করা যাবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেট শেয়ার বাড়লে এ নৈরাজ্য কমবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সোচ্চার হতে হবে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে এলপিজি কিনলে বিইআরসি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ছাড়া ক্যাবের কাছে অভিযোগ করলেও আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে সহায়তা করব।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত দাম আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করতে চাইলে এলপিজি কেনার রসিদসহ তাদের কাছে আবেদন করতে হবে। অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মোট জরিমানার ২৫ শতাংশ পাবেন ওই অভিযোগকারী। অধিদপ্তরের www. dncrp.com এ ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও তার সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামের গেরস্তবাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন বিরল উদাহরণ।
গণভবনের বিশাল আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাকসবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি।
গণভবন সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজারদর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মণ পেঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁচজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি হিসেবে পেঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজে ৭০০-৮০০ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।
করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তিনি সরকারি, বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙ্গিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, এ দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।
ইহসানুল করিম জানান, প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, গণভবন আঙ্গিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বথুয়াশাক, বরোকলি, টমেটো, লাউ, শিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছেন।
এ ছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষাক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার। এ ছাড়াও গণভবনের আঙ্গিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগি, তিতির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতলা, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি।
গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারিদের অন্যতম খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া মালয়েশিয়া গেছেন। তার সঙ্গে আরও দুজন সহযোগীও গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিদেশি একটি এয়ারলাইনসে পাড়ি দেন মালয়েশিয়ায়। তিনি আর দেশে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এর আগে খালেদ দুইবার থাইল্যান্ড ও দুবাই যান বলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। যদিও জামিনের শর্ত অনুযায়ী, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন না।
খালেদের পাশাপাশি আরেক শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারি ইসমাইল হোসেন চৌধরী সম্রাটসহ আরও অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। তারা ‘ওপরের মহলের গ্রিন সিগন্যালের’ অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে, ক্যাসিনোকান্ডে আলোচিত পুরান ঢাকার দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া কারাগার থেকে মুক্ত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এমনকি ক্যাসিনোকান্ডে আরেক আলোচিত সেলিম প্রধানও কারাগার থেকে বের হতে মরিয়া। গত ৩১ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আসা সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ কিছুদিন প্রকাশ্য থাকলেও এখন তিনি অনেকটা আত্মগোপনে চলে গেছেন। বন্ধুবান্ধব ও স্বজনরাও জানেন না তার অবস্থানের কথা। যদিও সাঈদ সব কটি মামলায় জামিনে আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল ও খিলগাঁও এলাকার দুই ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে জামিনে মুক্ত হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। মুক্ত হওয়ার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার বেশির ভাগ সময়ই থাকতেন হাসপাতালের কেবিনে। আসলে তার কোনো অসুখই ছিল না। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে খালেদ দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটিয়েছেন। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর এলাকায় ফিরে এলেও গোপনে থাকতেন। গত দুই মাসের ব্যবধানে খালেদ দুইবার থাইল্যান্ড ও দুবাই গিয়ে কিছুদিন থেকে আবার দেশে ফিরে আসেন।
ওই দুই ব্যবসায়ী আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিদেশি এয়ারলাইনসে মালয়েশিয়ায় যান খালেদ। তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সহযোগী। কবে আসবেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তার দুটি পাসপোর্ট আছে বলে ওই দুই ব্যবসায়ী জানেন। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনবার দেশের বাইরে গেছেন। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে খালেদের ব্যবসা রয়েছে। সম্রাটসহ আরও অনেকেই দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ওই দিন রাতেই গুলশানের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন খালেদ। এরপরই তাকে যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাবেক কাউন্সিলর মমিমুল হক সাঈদকে ধরতে র্যাব ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। র্যাবের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিঙ্গাপুর পালিয়ে যান সাঈদ। আর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ধরা পড়েন সম্রাট। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় একসময় ওয়ান টেন ও থ্রি কার্ডের মতো জুয়ার আসর চলত। যুবলীগের কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রণেই মূলত ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও ভবনে বিদেশের আদলে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে পড়ে। অভিযানে সম্রাট, ঠিকাদার জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে এখনো কয়েকজন কারাগারে আছেন। সম্রাট ও খালেদ জামিনে বের হয়ে আসেন। যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশেও পালিয়ে আছেন। আবার কেউ দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে ছিলেন। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার কারণে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনো বেতে শীর্ষ কারবারিদের অবাধ চলাচল আবার শুরু হয়েছে। সম্রাট, খালেদ ও সাঈদের সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনো বেতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তারা একটি মহলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারি খালেদ দেশের বাইরে গেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। অনেকেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তার দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি শীর্ষ মহলকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্রাটও যেকোনো সময় দেশের বাইরে চলে যাবেন। ক্যাসিনো সেলিম, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া কারাগার থেকে মুক্ত হতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তারা যেকোনো সময় জামিন নিয়ে কারামুক্ত হয়ে দেশের বাইরে যাবেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২ সেপ্টেম্বর খালেদ ও ২৭ আগস্ট সম্রাট কারামুক্ত হন। খালেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলায় জামিন পান। সর্বশেষ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত থেকে জামিন পান খালেদ। ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ক্যাসিনো কারবার চালাতেন তিনি। গত বছরের ২১ মার্চ অর্থ পাচার ও মাদক আইনের দুই মামলায় খালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ত াছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে সাড়ে ৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকার মতিঝিল এলাকায় খালেদ ক্যাসিনোর পাশাপাশি গড়ে তোলেন অস্ত্রের ভান্ডার। ওই সময় যুবলীগ নেতা র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত মিল্কী ও তার ক্যাডার বাহিনীর হাতে প্রায় শতাধিক অস্ত্র ছিল। মিল্কীর অস্ত্রধারী ক্যাডারদের কথা চিন্তা করেই অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলতে হয় তাকে। খালেদের দুই ভাই মাকসুদ ও হাসানও তার অপকর্মের সাক্ষী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান একসময় তার অন্যতম সহযোগী ছিল। ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও গণপূর্ত ভবন, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন স্থানে যেখানে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ। সম্রাটও খালেদকে সব ধরনের সহায়তা করতেন।
মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৩১ জানুয়ারি সাবেক কাউন্সিলর সাঈদ দেশে আসার পর গোপনেই ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি প্রকাশ্য হকি ফেডারেশনের বৈঠকে গেলে আলোচনার ঝড় ওঠে। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তবে বেইলি রোডের অ্যাপার্টমেন্টে মাঝেমধ্যে আসেন। গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক এবং তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াও ফকিরাপুল ও মতিঝিলে ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। সম্রাট, খালেদ ও সাঈদ তাকে সহায়তা করতেন।
সাবেক বিএনপি নেতা ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি)। গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে আলোচিত এই রাজনীতিবিদের। মাত্র তিন দিন আগে নিজের নতুন দল তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন পেয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী নাজমুল হুদা।
তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আক্কাস আলী দেশ রূপান্তরকে নাজমুল হুদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত শুক্রবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে মৃত্যু হয় তার।
তিনি আরও জানান, রাতে মরদেহ ধানমন্ডির বাসভবনে রাখা হবে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ধানম-ি সাত মসজিদ রোডের মসজিদে হবে প্রথম জানাজা। পরে তার মরদেহ নেওয়া হবে নিজ এলাকা দোহারে। বাদ জোহর সেখানে আরেক দফা জানাজা শেষে শাইনপুকুর গ্রামে সমাহিত করা হবে তাকে।
১৯৪৩ সালের ৬ জানুয়ারি দোহারেই জন্মেছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। আইন বিষয়ে পড়তে যান ব্রিটেনে। সেখান থেকে ফিরে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের জাগো দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে গঠিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়ে হন দলটির সর্বকনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর তিনবার তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। ১/১১’র পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। তখন তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বহিষ্কৃত হলেও তিনি বিএনপির দলীয় কাজ করতে থাকেন এবং ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৬ জুন নাজমুল হুদা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। ওই বছর নাজমুল হুদা ও আবুল কালাম মিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাস পর আবুল কালাম তাকে বিএনএফ থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। ২০১৫ সালে হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে আরও একটি নতুন দল গঠন করেন। দলটি তিন দিন আগেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে।
করোনা মহামারির ক্ষতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটে ব্যয় বৃদ্ধিসহ ২০২২ সালে নানা সংকটে কেটেছে দেশের শিল্প খাত। এ জন্য শিল্পে উৎপাদন ঠিক রাখতে নানা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবুও বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তবে আশার দিক হচ্ছে, বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে খেলাপি বাড়ার পর শেষ প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্তের কারণে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য চলছে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর ২০২১ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা ছিল সে সময়ের মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ; অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা।
তবে খেলাপির এই পরিমাণ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও বেশি ছিল। সে সময় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা ছিল খেলাপি ঋণ। বছরের শেষ প্রান্তিকে এসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কমে যায়। তবে হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণের খেলাপি কমে যাওয়ার তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীবিদরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রান্তিক অনুযায়ী খেলাপি কমলেও বছর হিসেবে বেড়েছে ১৭ হাজার কোটিরও বেশি। সুতরাং এটা খুব বেশি উল্লেখযোগ্য কিছু না। আর এক কথায় কাগুজে হিসাব। বাস্তবে খেলাপি ঋণের কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। মূলত আইএমএফকে দেখানোর জন্যই একটা গাণিতিক হিসাব দেখানো হয়েছে। যদি পুনঃতফসিল আর অবলোপন বাড়ে তাহলে খেলাপির উন্নতি কীভাবে হলোÑ এমন প্রশ্ন রাখেন এই অর্থনীতিবিদ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের যে সংজ্ঞা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই সময়ে কী পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে, আদালতের আদেশে ঋণের কী পরিমাণ অর্থ আটকে আছে, আর কী পরিমাণ অবলোপন করা হয়েছে, তা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দেখাচ্ছে প্রকৃত খেলাপি তার চেয়ে অনেক বেশি। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকও তাদের মতামত দিয়েছে।
আইএমএফকে দেখানোর জন্য কমিয়ে দেখানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আইএমএফকে মুখে হিসাব দেখালেই তো চলবে না। তারা খেলাপি ঋণের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইবে। এই সময়ে যদি পুনঃতফসিল, অবলোপন বা কোর্টে আটকা পড়া ঋণের পরিমাণ বাড়ে, তাহলে বুঝতে হবে বাস্তবে খেলাপি ঋণ কমেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ঘাটতি কমেছে ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম বলে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে।
দেশের ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৪৬ দশমিক ৭৯ শতাংশই সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক মানদ-ে খেলাপির পরিমাণ ৩ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। সরকারকে আইএমএফের ঋণের সব কিস্তি পেতে হলে ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে হতে হবে।
২০২২ সালে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, যা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময়ে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের ব্যাংক খাতের প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল ৮৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে ৭৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। আর ঘাটতি রয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঘাটতি ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা; অর্থাৎ মোট প্রভিশন ঘাটতি ৮০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর।
আবদুর রউফ তালকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে খেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে এই ছাড় দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
কয়েক দফা বাড়ার পর রমজানের প্রথম দিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল শীর্ষ চার পোল্ট্রি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে তলব করে ভোক্তা অধিকার। পরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় মুরগির দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এখনও তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
এদিকে, বাজার তদারকিতে সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না।'
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।