
পাকিস্তানের অর্থনীতি পৌঁছেছে খাদের কিনারে। মূল্যস্ফীতিতে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে দিন কাটাচ্ছে আতঙ্ক আর উদ্বেগে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারও। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে (রিজার্ভ) টান পড়ার পাশাপাশি বিপুল ঋণ শোধের চাপে আক্ষরিক অর্থেই দিশেহারা দেশটি। তারপরও দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দিকেই তাকিয়ে আছে দেশটি। তবে নানা শর্তের কারণে আইএমএফের সঙ্গে ১০ দিনের আলোচনায় কোনো দিশা পায়নি দেশটি। তাই শেষ অবধি জনগণের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর পথেই হাঁটছে দেশটি। গত সোমবার এ লক্ষ্যে একটি বিলও পাস করা হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী সাড়ে চার মাসের মধ্যে শাহবাজ শরিফ সরকার নতুন করে রাজস্ব হিসেবে ১৭ হাজার কোটি রুপি বাড়তি আদায় করতে চায়। আইএমএফ দেশটিকে বছরে ৮৫ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। আর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন সম্পূরক অর্থ বিলটি পাস করা হয়েছে। ডন বলছে, বিলে সিগারেটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং সাধারণ বিক্রয় কর হার ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। এই দুটি ব্যবস্থা থেকে ১১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি আয় হবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার।
বিক্রয় কর বা জিএসটি এক শতাংশ বাড়লেও বিলাস দ্রব্যের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৩টি খাতে বিক্রয় কর ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। দামি মোবাইল ফোন, আমদানি করা খাদ্য, সাজসজ্জার উপকরণ ও বিলাস দ্রব্য বিক্রির ওপর থেকে এই বাড়তি আয় করা হবে। উড়োজাহাজে প্রথম শ্রেণি ও বিজনেস ক্লাসে ৫০ হাজার রুপির ওপর ভাড়ায় ২০ শতাংশ ফেডারেল এক্সাইজ ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। এই খাত থেকে বাড়তি এক হাজার কোটি রুপি আসবে। এ ছাড়া বিয়ের হল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা বাণিজ্যিক অবকাশযাপন কেন্দ্র, ক্লাব বা অন্য কোথাও কোনো আয়োজনের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ অগ্রিম কর। এই খাত থেকে ১০০ থেকে ২০০ কোটি রুপি আয় হবে বলে আশা সরকারের। এর বাইরে আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম উৎপাদন মূল্যে রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা আছে।
এই পদক্ষেপগুলো নিত্যপণের দাম বাড়িয়ে দেবে বলে যে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, তা থেকে গরিব মানুষকে রক্ষায় একটি বিশেষ উদ্যোগের কথাও বলা আছে বিলে। বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রামের বাজেট ৩৬ হাজার কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি। আইএমএফ আগামী ১ মার্চের মধ্যে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের শর্ত দিয়েছে।
আইএমএফের ঋণ পাওয়ার আশায় গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ দিন আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে দেশটির সরকার। তবে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি। তবে দুই পক্ষই জানায়, আলোচনা এখনো ভেস্তে যায়নি। চুক্তি চূড়ান্ত করতে আগামী দিনেও আলোচনা চালু থাকবে। এদিকে রয়টার্স বলছে, আইএমএফ থেকে ঋণ যদি মেলেও, তারপরও পুরোপুরি স্বস্তিতে থাকতে পারছে না পাকিস্তান। কারণ চলতি বছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সেই পরিমাণ ডলার জোগাড় করা কঠিন হয়ে যাবে দেশটির জন্য। এক হিসাব অনুযায়ী আগামী ১২ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে। এ অবস্থায় বিল পাস করালেও আইএমএফের সঙ্গে শর্তের দরকষাকষিকে পেরেশানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। তবে তার ভাষ্য, এরপরও তাদেরকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে দেশের অর্থনীতি আরও তলানিতে নামবে। তার দাবি, তারা যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে চাইছেন, তা দেশটির গরিব মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। এটি কেবল বিলাস দ্রব্য আমদানি ও বিক্রির ওপর থেকে নেওয়া হবে।
এদিকে আইএমএফের ঋণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা এবং সরকারের এসব নতুন পদক্ষেপ দেশের সাধারণ মানুষ এবং শিল্প খাতে চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে, এমন আশঙ্কার মধ্যে গত সোমবার দেশটির পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এক দিনেই মূল্যসূচক কমেছে ৪৪৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৮ শতাংশ।
আবা আলি হাবিব সিকিউরিটিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা শাখার প্রধান সালমান নাকভি মনে করেন, এই দরপতনে অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা, দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চিত করতে না পারার মতো কয়েকটি নেতিবাচক বিষয় ভূমিকা রেখেছে।
এর মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়াতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে দেশটির আর্থিক খাতে। বলা হচ্ছে, আগামী ১৩ মার্চ এ বিষয়ে দেশটির মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক থাকলেও এর আগেই তা জারি হতে পারে।
এর মধ্যে অবশ্য গত রবিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের খাজা আসিফের একটি বক্তব্য আলোড়ন ফেলে দেয়। পাকিস্তান ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে, এমন মন্তব্য করে এজন্য ক্ষমতাচক্র, আমলাতন্ত্র, রাজনীতিবিদসহ সবাইকে দায়ী করেন তিনি। তার বক্তব্য সরকারি ভাষ্য না হলেও পাকিস্তানকে বিপুল ঋণ দেওয়া সৌদি আরব, চীন, আরব আমিরাত পাশে না দাঁড়ালে শিগগিরই সত্যি হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা হওয়া থেকে ফেরা সম্ভব হবে না দেশটির সরকারের পক্ষে।
বাংলাদেশে যেহেতু বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ হতে পারে। ঢাকা সফরে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন বার্তাই দিতে চেয়েছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগও সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক থেকে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েই এগোতে চায়। দলটির পরিকল্পনা হলো, পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করে সহশীলতা দেখিয়ে বিএনপির রাজনীতিকে নির্বিষ রাখা। সে কারণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলের সফরের পরদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সংলাপের প্রসঙ্গটি আসে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেছে, তার মূল বিষয় হলো বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখাই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। সরকারবিরোধী এ আন্দোলন দুর্বল করে রাখতে পারলে বিদেশি চাপও সামলে নিতে পারবে ক্ষমতাসীনরা। তাই সরকারি দলের সব মনোযোগ এখন বিএনপির আন্দোলন দুর্বল করে রাখা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে মাঠে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি অবস্থান ও চাপ বিএনপির আন্দোলনের ধরন দেখে ওঠানামা করবে। তাই নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা করার মতো কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগ দিতে চায় না। তারা আরও বলেন, বিএনপির দাবিগুলো জোরালো নয়। তাদের সাত দফায় জনগণের কথা নেই। আছে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করার কথা। ফলে জনসম্পৃক্ত কোনো ইস্যু না থাকায় বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন জমবে না ধরে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর ফলে বিদেশি চাপও দুর্বল হয়ে পড়বে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির অন্যায়-অন্যায্য দাবি যেমন মানা হবে না, তেমনি ভোটের আগে ভোট বানচাল করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, বিএনপির সেটাও সহ্য করা হবে না। পেট্রলবোমা, অগ্নিসন্ত্রাস করার কোনো সুযোগ বিএনপিকে দেওয়া হবে না।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সামনে রোজা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং বর্ষাকাল। এ সময়ে কঠোর আন্দোলন করতে গেলে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হবে। এভাবে বছরও কেটে যাবে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসবে। এ বিবেচনা থেকে নির্বাচন ডিসেম্বরে করে ফেলারও পরিকল্পনা নিতে পারে আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বলেন, সে কারণেই দলের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে রাখা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, বিএনপির পক্ষে জনসম্পৃক্ততা ঘটানো সম্ভব হলে শুধু বিদেশিদের চাপ বাড়তে পারে। তা না হলে সরকারের পক্ষেই থাকবে বিদেশিরা। তারা আরও বলেন, বিদেশিদের এমন অবস্থানের বার্তা তারা পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু গত জানুয়ারিতে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা গত সপ্তাহে ঢাকা সফর করেছেন। এ সময় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। তাদের কেউ বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেননি। এরপর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও সক্রিয় হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল কারণ হলো আন্দোলনের নামে সংঘাত-সহিংসতার সুযোগ যাতে বিএনপি ও তাদের সমমনারা না পায়। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের ভাবনা সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারলে বেগতিক অবস্থা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তা না হলে নিশ্চিন্তেই কাটাতে পারবে সরকারÑ এমন তৃপ্তিও আছে অনেকের ভেতরে। নানা সমালোচনার ভেতরেও বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণও মাঠের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এ নেতা বলেন, মাঠে থাকার বিষয়ে সমালোচনা আমলে নেবে না দল। ‘পাহারাদার’ হিসেবে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকছে, এটা প্রতিষ্ঠিত করতে চান তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টি করবে আর আওয়ামী লীগ ও সরকার তা বসে বসে দেখবে? তাহলে বিএনপির কর্মসূচি সারা বছর থাকবে, আওয়ামী লীগ বা অন্য রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করবে না? ফলে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পাল্টাপাল্টি হিসেবে দেখা বা বলা কতটুকু প্রাসঙ্গিক।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি অবস্থান এখন যেরকম তাতে নির্বাচন পর্যন্ত দেশে স্বাভাবিক ও শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য। তাই বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মাঠে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সহনশীলতাও দেখাবে। কারণ তাদের লক্ষ্য রাজনীতির মাঠ নিস্তরঙ্গ রাখা। এ কারণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি এড়াতে আওয়ামী লীগ নিজেরাও সতর্ক থাকবে। যাতে অন্য কেউ অর্থাৎ দেশি-বিদেশি কেউ সুযোগ নিতে না পারে।
বিদেশিদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার করে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা সরকারের সঙ্গেই আছে, সব পরিস্থিতি ঠিক থাকলে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে বিদেশি চাপ বাড়বে। জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকলে বিদেশিরাও থাকবে না। ফলে বিএনপির চলমান আন্দোলন বেশ সতর্কভাবে মোকাবিলা করা হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। নির্বাচন পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে নরম ও গরম দুই পন্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ আছে। ওই সময় তিনি প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে বলেন, বিএনপি তো সংলাপে আসতে চায় না।
আওয়ামী লীগের নেতারা সেদিন সংলাপের সম্ভাবনার কথাও বলেছেন দেশ রূপান্তরকে। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু করণীয়ও ঠিক করেছেন তারা। কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে।
এর পরই বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীর জামিন হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আইনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে আইনি বাধা নেই। দুটি দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হয়। এরপর তাকে জেলে পাঠানো হয়। দেশের করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না এবং বিদেশে যেতে পারবেন না। এরপর বহুবার আবেদন করেও অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে পারেননি তার স্বজনরা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাপ সৃষ্টিকারী বিদেশি শক্তিগুলো সরকারকে অবহিত করেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না তারা। সরকারে যেই থাকুক তারা সে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। তবে পরিস্থিতি সংঘাতময় হওয়া যাবে না।
ভাষা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে বিদ্যমান সব ভাষা সংরক্ষণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের। আমি মনে করি সারা বিশ্বে বিদ্যমান সব ভাষাকে সংরক্ষণ, এর ওপর গবেষণা করা এবং এগুলোর ইতিহাস জানা এ ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্বের বিপন্ন ভাষাগুলো এখানে সংরক্ষণ এবং তার ওপর গবেষণা করা হোক। এ গবেষণার ওপরই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ভাষা সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অনেক অবদান রাখতে পারে। এখানে যে কেউ যেকোনো ভাষা শিখতে চাইলেও আসতে পারবেন। ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।’
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাংলা ভাষাকে হিন্দুর আর উর্দুকে মুসলমানের ভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো মন-মানসিকতার অধিকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের মানসিক দৈন্যতায় যারা ভোগেন তাদের জন্যই ভাষার ইতিহাস ও উৎপত্তিস্থল জানা একান্তভাবে দরকার।
এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বিশ্বের ১৬টি ভাষায় বহুভাষী পকেট অভিধান করার ব্যবস্থা নিয়েছে। পাশাপাশি মাতৃভাষা পিডিয়া তৈরির প্রকল্প গ্রহণ এবং ভাষা-সাহিত্যকর্ম, বাংলা অনুবাদ ও বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলন শীর্ষক প্রামান্য চিত্র বিভিন্ন ভাষায় করার উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শেখ হাসিনা ভাষার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক’ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক’ তুলে দেন।
হাবিবুর রহমান ও রঞ্জিত সিংহকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয় এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহেন্দ্র কুমার মিশ্র ও মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব ওয়ার্ল্ড সোসাইটি, ভ্যাঙ্কুভার, কানাডাকে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সোসাইটির পক্ষে এর সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম পদক গ্রহণ করেন।
শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং ইউনেস্কোর ঢাকা অফিসের অফিসার ইনচার্জ সুসান মারি ভাইজ।
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার ‘বহুভাষিক বিশ্বে বহুভাষিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা’র ওপর আলোকপাত করে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’ শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এর আগে জাতীয় সংগীত এবং অমর একুশের সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ পরিবেশিত হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, জাপান, চীন, রাশিয়া ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের শিশুরা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় শুভেচ্ছা জানায়।
সরকারপ্রধান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি মনে করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার এবং সে জন্য ফান্ড লাগলে আমি তার ব্যবস্থা করে দেব। কারণ আমি সবসময় গবেষণায় বেশি জোর দিই। গবেষণা ছাড়া কোনো বিষয়েই উৎকষর্তা সাধন করা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশের অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক যে ইংরেজি ভাষাটা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমনভাবে চলে গেছে, শিক্ষা-দীক্ষাসহ সবকিছুতে এ ভাষাই পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে গেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে নিজের ভাষা শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। নিজের ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি অন্য যেকোনো এক বা দুটি ভাষা আমাদের ছেলেমেয়েরা শিখতে পারে। আর এখন ডিজিটাল যুগে ডিজিটালি ও শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি নিউ স্টার্ট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ভøাদিমির পুতিন। গতকাল মঙ্গলবার তার বার্ষিক স্টেট অব দ্য ন্যাশন ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এ ঘোষণা দিলেন। ওই ভাষণে তিনি যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের দায়ী করে বলেছেন, রাশিয়াকে ধ্বংস করতে বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে চায় তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আকস্মিক সফরের পরদিনই পুতিনের এমন ঘোষণা বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ বিষয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্র কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও পুতিনকে বিষয়টি ফের বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শুধু নিউ স্টার্ট চুক্তিই কার্যকর ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ২০১০ সালে এ চুক্তিতে সই করেছিলেন। চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মোট কী পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে, তার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তাতে উভয় দেশের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৫০টি দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের সুযোগ ছিল। ২০২১ সালে চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়েছিল সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই দেশ। সে হিসেবে ২০২৬ সাল অবধি মেয়াদ ছিল ওই চুক্তির। তবে পরিস্থিতির বিবেচনায় গতকাল তা বাতিল ঘোষণা করেন পুতিন।
পুতিন তার ভাষণে বলেন, আমি আজ এ ঘোষণা দিতে বাধ্য হলাম যে স্ট্র্যাটেজিক অফেনসিভ আর্মস ট্রিটিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র যদি দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তাহলে রাশিয়ারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়া দরকার।
রয়টার্স বলছে, পুতিন তার ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ বাড়িয়ে তোলার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সংঘাতের মঞ্চে মস্কোকে পরাজিত করতে পারবে, এমন একটি ভুল ধারণা নিয়ে তারা এটা করছে।
পশ্চিমাদের বৈশ্বিক সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে এ যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট তিনি অনুধাবন করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের জনগণ কিয়েভের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও তাদের পশ্চিমা তাঁবেদারদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যারা দেশটিকে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরোপুরি দখল করে আছে।
পশ্চিমা দেশগুলো আঞ্চলিক একটি যুদ্ধকে বৈশ্বিক সংঘাতের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় মন্তব্য করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমাদের তৎপরতাকে রাশিয়া ঠিক এভাবেই দেখছে। এর যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। কারণ এটা রাশিয়ার অস্তিত্বের বিষয়।
যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করে পুতিন বলেন, রুশ সমাজকে বিভক্ত করতে পশ্চিমাদের যে চেষ্টা, তার সামনে কখনো নতিস্বীকার করবে না রাশিয়া। আর ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে বেশিরভাগ রুশ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে।
ভাষণে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। পাশাপাশি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তা ‘সাবধানে ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টার’ মধ্য দিয়ে সমাধান করা হবে।
এদিকে পুতিনের এমন ঘোষণার তাৎক্ষণিক অফিশিয়াল কোনো প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে আসেনি। তবে গ্রিস সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, রাশিয়ার সিদ্ধান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং মস্কো আসলে কী করে তা দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে।
অন্যদিকে গতকাল ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোটটির প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক জায়গায় পরিণত করেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা এবং ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেলের পাশে দাঁড়িয়ে স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, আরও পারমাণবিক অস্ত্র এবং কম অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।
পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে বলে পুতিনের অভিযোগের জবাবে স্টলটেনবার্গ বলেন, প্রায় এক বছর আগে মস্কো ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল। প্রেসিডেন্ট পুতিনই এ সাম্রাজ্যিক বিজয়ের যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনি আরও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটা আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা এবং পুরো বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হবে। তিনি মস্কোকে চুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করারও আহ্বান জানিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রভৃতি ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি। অভিন্ন দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট।
গণতন্ত্র মঞ্চ পেশ করেছে ১৪ দফা দাবি। আবার গণফোরামের একাংশ ঘোষণা করেছে ৮ দফা দাবি। সবার দাবি আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বয় করে ৭ দফায় প্রকাশ করা হবে। দাবিনামা চলতি মাসের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এই ৭ দফাই হবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ‘যৌথ ইশতেহার’। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানিয়েছেন।
‘যৌথ ইশতেহার’-এর বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য বিএনপি-গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আলাদাভাবে তাদের দাবি পেশ করেছে। এসব দাবি পর্যালোচনা করে সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম দফা চূড়ান্ত করে যৌথ ইশতেহার হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’
কবে নাগাদ ঘোষণা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ চলছে। সময় হলেই ঘোষণা করা হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি তাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে যৌথ ইশতেহার চূড়ান্ত করবে। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা নিজেদের ফোরামে আলোচনা করব। বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবে। তারপর যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি-গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দফা ছিল ১০টি। গণতন্ত্র মঞ্চের দফা ছিল ১৪টি। ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে দফাগুলোর পর্যালোচনা হয়। প্রাথমিকভাবে ন্যূনতম ৭ দফা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বরকতউল্লা বুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল ও ৫ বাম দলÑ এই ৩ জোট সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘যুক্ত ঘোষণা’ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে বর্তমান অবৈধ সরকারকে হঠাতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। শিগগির আলোচনা করে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।’
বিএনপি-গঠিত লিয়াজোঁ কমিটি ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে যৌথ ইশতেহারে যে দফাগুলো আসতে পারে তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো
এক. বর্তমান অনির্বাচিত ও অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য স্বাধীন নিরপেক্ষ ইসি গঠন করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে, মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, অগণতান্ত্রিক আরপিআর সংশোধন করতে হবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পরিবর্তন আনতে হবে, ইভিএম বাতিল করে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বাতিল করবে।
দুই. রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে সাংবিধানিক ক্ষমতাকাঠামো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার আইনকানুনের ন্যূনতম সংস্কার করতে হবেÑ প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক জবাবদিহিহীন স্বেচ্ছাচারী ও কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথককরণ ও যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ইসিসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন করতে হবে।
তিন. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দন্ডপ্রাপ্ত সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর সাজা বাতিল, হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সব রাজনৈতিক কারাবন্দির অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-সহ মৌলিক অধিকার হরণকারী আইন বাতিল করতে হবে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ করে আগের সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, খুনের যথাযথ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশি ব্যবস্থার নামে শ্রমিক আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সাংবিধানিক অধিকার সভা, সমাবেশ, মিছিল ও মিটিংয়ে কোনো বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। নতুন কোনো মামলায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দলীয় পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
চার. বিগত সময়ে বিদেশে অর্থ পাচার এবং ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, শেয়ার মার্কেট, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতসহ সব খাতে দুর্নীতি ও এর দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করতে হবে। এসবের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাশাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাম-শহরের গরিব ও স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য রেশন ও নগদ অর্থসহায়তার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানিসহ সব সেবার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের, বিশেষ করে কুইক রেন্টাল প্রকল্পবিষয়ক দায়মুক্তি আইন বাতিল করতে হবে। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; সুলভে গণপরিবহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী শ্রমিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদর জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং দেশে হয়রানিমুক্ত সেবা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
পাঁচ. রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে বিনিয়োগে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিমালা করতে হবে। ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে, বন্ধ কলকারখানা চালু করতে হবে, শ্রমিক ও শ্রমজীবীর বাঁচার মতো মজুরি ঘোষণা এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ বাড়াতে ও বেসরকারি খাতে মুনাফার লাগাম টেনে ধরতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রকৃতি-পরিবেশকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ছয়. নারীর অধিকার ও ধর্মীয় অধিকার, সব জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সাত. জাতীয় স্বার্থ, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পররাষ্ট্রনীতিতে সমতা, ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। পারস্পরিক স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানের উড়ালপথগুলো দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এগুলো আখ্যা পাচ্ছে ডেঞ্জারাস ফ্লাইওভারের। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে এসব স্থান। বিশেষ করে ছিনতাইকারী ও ভাসমান অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অন্য কোথাও হত্যা করে লাশ ডাম্পিং করা হয় ফ্লাইওভারে।
গত দশ বছরে অন্তত ৪০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ফ্লাইওভার থেকে। ফ্লাইওভারে নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি ফ্লাইওভারে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকার কথা থাকলেও নেই। এই নিয়ে মহানগর পুলিশ ও সিটি করপোরেশন চিঠি চালাচালি করছে। কিন্তু এখনো অবস্থার বদল হয়নি।
গত মাসেও পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, সবকটি ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। সড়কবাতি নিয়মিত জ¦ালানো ও পুলিশ টহল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত পুলিশের টহল থাকতে হবে। এই নির্দেশ না মানলে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে পুলিশের বার্তায়।
নগর পরিস্থিতির বিশ্লেষকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উড়ালপথগুলোকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে সংঘবদ্ধ একাধিক অপরাধীচক্র। ছিনতাই, খুন এবং বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের কারণে ফ্লাইওভারগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীরা অন্ধকারে ফ্লাইওভারের ওপর গাড়ি পার্কিং করে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে। এদের কারণে রাতে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল আরোহীরা বিপদে পড়ছেন। আবার ফ্লাইওভারের নিচে ও আশপাশের এলাকায় মাদকের কেনাবেচা চলে।
বেশিরভাগ ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল করে দোকান, অবৈধ পার্কিং, ফলের দোকান, মাছের হাট বসিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। কিছু ফ্লাইওভার যৌনলীলার অবৈধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। উড়ালপথগুলোতে সিসি ক্যামেরা নেই। থাকে না পুলিশি টহল ব্যবস্থাও। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নিরাপত্তা না বাড়ালে ফ্লাইওভারে যানবাহন ওঠা এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্লাইওভারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাতে পুলিশি টহল বাড়ানোর পাশাপাশি উড়ালপথগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। অপরাধীরা যাতে ফ্লাইওভারগুলো ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য বিশেষ নজর দিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকায় যেসব স্থানে ফ্লাইওভার আছে সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ফ্লাইওভারগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুলিশি টহল বাড়াতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দেশ রপান্তরকে বলেন, ফ্লাইওভারে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত পুলিশের টহল রাখতে আমরা কাজ করছি। থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাত যত গভীর হয়, ফ্লাইওভারগুলো ততই নীরব হয়ে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা ফ্লাইওভারগুলোতে ছিনতাইসহ নানা অপর্কম করে। ছিনতাইকারীরা মানুষ খুন করতে দ্বিধা করছে না। নিরাপদ জোন মনে করে লাশ ফেলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। গত ১০ বছরে প্রায় ৪০টি লাশ ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত দুই বছরে ফ্লাইওভারে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অন্তত বিশ জন মারা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনের সড়কে ও ফ্লাইওভারে ভুতুড়ে অন্ধকার থাকে। সড়কে ও ফ্লাইওভারে অধিকাংশ লাইটপোস্টে বাতি জ¦লে না। রেলক্রসিং পার হয়ে এফডিসির সামনে দিয়ে হাতিরঝিলের শুরু পর্যন্ত এই অবস্থা। মগবাজার, মহাখালী, মৌচাক, বাংলামোটর ফ্লাইওভারের অধিকাংশ ল্যাম্পপোস্টে বাতি না জ্বলায় ভুতুড়ে অবস্থা তৈরি হয়। ভ্রাম্যমাণ মাদকসেবী আর ভাসমান যৌনকর্মীরা তখন সক্রিয় থাকে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফ্লাইওভারে মাসে ২৫-৩০টি ছিনতাই ঘটছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই থানায় অভিযোগ করেন না। রাতে ফ্লাইওভার বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ছিনতাই হয় অহরহ। পথচারীরা নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়ান। পুলিশকে অভিযোগ করে কেউ প্রতিকার পায় না। অপরাধীর আনাগোনার পাশাপাশি উচ্ছৃঙ্খল তরুণরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এসব হয়।
খিলগাঁও উড়ালসেতু রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম উড়ালসেতু। একদিক রাজারবাগকে, অন্যদিক মালিবাগকে এবং তৃতীয় দিকের লুপ মাদারটেক, কদমতলী, বাসাবো এলাকাকে যুক্ত করেছে। এখানে দিনরাত টানা পার্টি থাকে ও মাদকের কেনাবেচা চলে। রাতে ছিনতাইকারী ও ভাসমান যৌনকর্মীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রতিদিন অনেকে ছিনতাইয়ের শিকার হয়।
কুড়িল উড়ালসেতু চারটি লুপের সমন্বয়ে নির্মিত দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন একটি উড়ালপথ। সড়কটি রাত বাড়লে অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। সেখানে মাদকের কেনাবেচা চলে এবং ভাসমান যৌনকর্মীদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
পুলিশ-সূত্র জানায়, ফ্লাইওভারগুলোতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে একট বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনারদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্লাইওভারগুলো সিটি করপোরেশনের দেখভাল করার কথা। তারা সে কাজটি করে না। বাধ্য হয়ে পুলিশকে করতে হচ্ছে। তবে পুলিশের টহল থাকে না। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সব ফ্লাইওভারেই সারা রাত অপরাধ সংঘটিত হয়। থানা পুলিশকে বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নিয়মিত ফ্লাইওভারে টহল দিতে। তাছাড়া সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ইতিমধ্যে সেই বার্তা পাঠানো হয়েছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপরে সোনারগাঁও প্রান্তে রেলক্রসিং বরাবর এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র মিজানুর রহমানের লাশ পাওয়া যায়। ঘটনায়-সংশ্লিষ্ট তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিতে জানায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে মিজানকে খুন করা হয় বিমানবন্দর সড়কের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। পরে তার লাশ মগবাজার ফ্লাইওভারে ফেলে যাওয়া হয়। হাতিরপুল উড়াল সড়কের পাশের ঝিল থেকে আজিজুল ইসলাম মেহেদী নামে এক শিক্ষার্থীর বিকৃত লাশ উদ্ধার হয়। তাকে খুন করে উড়াল সড়কের পাশের ঝিলে ফেলে যাওয়া হয়। এই রকম আরও অনেক ঘটনার তথ্য আমরা পেয়েছি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্লাইওভারগুলোর রক্ষাণাবেক্ষণ আসলেই করা হয় না। কোনো ফ্লাইওভারেই সিসি ক্যামেরা নেই। পুলিশকে আমরা বলেছি, দুই সংস্থার খরচে প্রতিটি ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি দুই মেয়র অবগত আছেন। আমরা চেষ্টা করছি ফ্লাইওভারের দেখভাল বাড়াতে। পুলিশি টহল থাকলে এসব স্থানে কোনো অপরাধ হতো না।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
তুমি জয়ী তুমি বীর
তুমি দুর্ভেদ্য প্রাচীর
তুমি অগ্নি তুমি সেই জ¦লন্ত মশাল
যাতে চিরন্তন প্রজ্বলিত থাকে অগ্নিশিখা
বৈরীর আঘাতে যখন তুমি হও ক্ষতবিক্ষত
অস্ত্র চলে ক্ষিপ্ত বেগে বজ্রশক্তির মতো
সৈনিক তুমি দাউ দাউ করে জ¦লতে থাকা
প্রজ¦লিত অগ্নিশিখা
সেনাবাহিনী তুমি বাংলা মায়ের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়
দুই সীমানায় ঘাত-বিঘাতে শহীদ হওয়া হাজার প্রাণ
সেনাবাহিনী মানে সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না
সেনাবাহিনী মানে বাংলার মানুষের পূর্ণ আস্থা ও ভরসা
সেনাবাহিনী মানে দেশের সেবা অক্ষুন্ন রেখে
দেশবাসীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে পথচলা
হয়তো তার মনের অবচেতনে জেগে ওঠে
মা-বাবা আর আপনজন
তব্ওু মনের গভীরে জেগে রয় তার শপথ বাণী
কখনো তোমার সম্মান ক্ষুন্ন হতে দেব না মাগো
তুমি যে আমার বঙ্গমাতা
তুমি যে সব দেশের রানী
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ রবিবার (৪ জুন) জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, এক সময় চা ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা শিল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৭ সালে 'উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প' অনুমোদন দিয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধিসহ তাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাসস্থান, শৌচাগার ও নলকূপ স্থাপন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্প পুনর্গঠনে বাগান মালিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে শ্রীমঙ্গলের টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) হিসেবে দেশের চা গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বছর চা দিবসের প্রতিপাদ্য 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প' অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
মো. সাহাবুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডসহ চা শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি 'জাতীয় চা দিবস ২০২৩' উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।