
মিরপুরের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকার সঙ্গে রাজশাহীর এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বিয়ে হয় ২০১১ সালে। তাদের এক কন্যাসন্তান। টানাপড়েনের জেরে ২০১৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজতের অধিকার পেতে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন শিশুর মা।
মামলার সময় শিশুর বয়স ছিল পাঁচ বছর। একই দাবিতে শিশুর বাবা ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর রাজশাহী পারিবারিক আদালতে পাল্টা মামলা করেন। বাবা-মায়ের মামলার জেরে বিপাকে পড়ে ওই শিশু। আদালত সন্তানকে বাবার হেফাজতে দিলেও মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার এবং সন্তানকে দেখভাল করার আদেশও ছিল। সন্তানকে একান্তে পাওয়ার জন্য ২০২১ সালের মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন মা। হাইকোর্ট ঢাকার মামলাটি অবিলম্বে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। এর মধ্যে বাবার পক্ষের আইনজীবীরা ঢাকার মামলা রাজশাহীতে বদলি চেয়ে রিট করলে গত বছর মার্চে ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে বদলি প্রশ্নে রুল দেয় হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, রুলটি এখনো বিচারাধীন। এর মধ্যে শিশুটির বয়স হয়েছে আট বছর।
সন্তানের অভিভাবকত্ব কিংবা হেফাজত পাওয়ার এমন অনেক মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পারিবারিক আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭৬ হাজার ৪৮৮।
বেসরকারি সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) হিসাবে প্রতি কর্মদিবসে ঢাকার তিনটি পারিবারিক আদালতের একটিতে ৯০ থেকে ৯৮টি, একটিতে ১০০ থেকে ১১২টি এবং একটিতে ৮০ থেকে ৮৫টি মামলার শুনানি হয়। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলার শুনানি হয় সন্তান নিয়ে।
ভূমিবিরোধবিষয়ক মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা প্রায়ই বলেন, দেওয়ানি মামলার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। পারিবারিক আদালতের মামলা নিয়েও আইনজীবীদের মুখে এমন হতাশার কথা শোনা যায়। অধস্তন পারিবারিক আদালত থেকে হাইকোর্ট, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ; এরপর আদালতের আদেশ পালনে অনীহা প্রভৃতির আরজি নিয়ে আবারও অধস্তন আদালত থেকে উচ্চ আদালত এভাবে মামলা চলতেই থাকে। সন্তান বড় হতে থাকে, কিন্তু বাবা-মায়ের মামলা শেষ হয় না।
অনেক ক্ষেত্রে আদালত কিংবা আইনজীবীদের আপস-মীমাংসার পরামর্শ থাকলেও আবেগের কাছে তা ঠুনকো হয়ে যায়। কোনো কোনো বাবা-মায়ের ইগো বা অহং অর্থাৎ ছাড় না দেওয়ার মানসিকতার কাছে পরাস্ত হয় সব যুক্তি বা আইন। ফলে ব্যাঘাত ঘটে শিশুর মানসিক ও অন্যান্য বিকাশে। হাইকোর্ট প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিক আদালতে সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে করা মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলেও তার প্রায় কিছুই প্রতিপালিত হয়নি।
প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লিখিত মামলায় শিশুর বাবাকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘মামলাজটের কারণে পারিবারিক আদালতের মামলা এখন অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আদালত আদেশ দিলেও কিছুদিনের মধ্যেই কোনো কোনো অভিযোগে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এসব মামলার সমাধান পাওয়াই যায় না। সন্তানসম্পর্কিত আবেগের বিষয়ে আদালতও কঠোর হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘অসংখ্য শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এসব ব্যাপারে মামলা করার আগে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির বিধান বাধ্যতামূলক করতে পারলে এবং সংশ্লিষ্ট আইনে কিছু সংশোধন আনতে পারলে সমাধান আসতে পারে।’
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবীর চেম্বারে কথা হয় মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে। দুই ছেলেকে কাছে পেতে ২০২১ সালের মার্চে রিট করেছেন তিনি। বড় ছেলেটির বয়স এখন ১২ আর ছোট ছেলেটির ৯ বছর। ওই বছরের ১৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে দুই শিশুকে হাজির করার নির্দেশ দেয়। ৩১ মার্চ হাইকোর্ট শিশুদের সঙ্গে একান্তে কথা বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, বাস্তবতা বিবেচনায় শিশু দুটি থাকবে বাবার কাছে। তবে মা যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে সন্তানদের সান্নিধ্য পাবেন।
ওই নারীর অভিযোগ, হাইকোর্টের কোনো নির্দেশনাই মানছে না শিশু দুটির বাবা। ফলে আবারও তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছেলেদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। মায়ের সান্নিধ্যও পাচ্ছে না। বাবার পরিবার প্রভাবশালী। আমাকে ছেলেদের কাছে ভিড়তে দেওয়া হয় না। ছেলেদের আমি কাছে পেতে চাই।’
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টানাপড়েন এখন বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে কর্মজীবী নারী ও পুরুষের মধ্যে। এখন যৌথ পরিবার কমে যাচ্ছে। ফলে সন্তানের দেখাশোনার বিষয়টি এখন কঠিন। ফলে মামলা বাড়ছে। মামলার নিষ্পত্তি হতে সাত বছরও লেগে যায়। আমার মনে হয়, সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে উভয়পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। সমঝোতার বিকল্প নেই।’
সুপ্রিম কোর্টে এ ধরনের মামলায় প্রায়ই বাবা অথবা মাকে আইনি সহায়তা দেন এমন একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত সাত বছরে অন্তত ৬৫টি অভিভাবকত্ব কিংবা জিম্মার মামলা পরিচালনা করেছি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সন্তানের ভবিষ্যতের চাইতে বাবা-মার জেদ অর্থাৎ হার না মানার মানসিকতা বেশি কাজ করে। তারা মনে করে, কোনোভাবে মামলা পক্ষে এলেই অন্যপক্ষ হেরে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার বাদী কিংবা বিবাদীদের আস্থায় আনা যায়; কিন্তু বাবা-মায়ের মামলায় সমঝোতার চেষ্টায় আদালত এবং আমাদের ব্যর্থ হতে হয়। ফলে মামলার নিষ্পত্তিও জটিলতায় পড়ে।’
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, ‘দুপক্ষের আপস-মীমাংসার উদ্যোগের ব্যাপারেই এখন গুরুত্ব দিতে হবে। বিচারক ও আইনজীবীদের উপলব্ধি করতে হবে যে, এখানে শিশুর সুস্থ বিকাশের মতো স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। তারা দুপক্ষকে আস্থায় নিয়ে সমাধান দিতে পারেন। এ উপলব্ধি না এলে পরিস্থিতি সুখকর হবে না।’
আপত্তি আদালতের পরিবেশ নিয়েও : ঢাকার জেলা আদালতের নিচতলায় দুটি পারিবারিক আদালত ঘুরে দেখেছেন দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদক। ঢাকা জেলা জজ আদালতের নিচে ছোট দুটি কক্ষে কোনোরকমে বসানো হয়েছে আদালত। এজলাসের সামনে কয়েকটি পুরনো কাঠের বেঞ্চ। বসতে হয় গাদাগাদি করে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আদালতের বারান্দায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে আসা শিশুদেরও এ যন্ত্রণাময় পরিবেশে থাকতে হয়। আশপাশে কোনো বিশ্রামকক্ষ বা শৌচাগার নেই।
একাধিক আইনজীবী বলেছেন, আদালতের এমন পরিবেশে অনেক শিশু ভড়কে যায়। কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে। গরমের সময়ে পরিস্থিতি হয় খুব নাজুক। ঢাকা বারের সদস্য, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিয়েশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট নাসিমা আখতার লাভলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এগুলোকে কোনোভাবেই পারিবারিক আদালত বলার সুযোগ নেই। এজলাস আরও বড় হওয়া দরকার। নারী ও শিশুরা যাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে না পড়ে তার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।’
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ ও গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০-এ নাবালক শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব, তত্ত্বাবধান বা ভরণপোষণের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। আইন অনুযায়ী, নাবালকের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক বাবা হলেও বাবার অনুপস্থিতি কিংবা অযোগ্যতায় মা অভিভাবক হতে পারেন। আর নাবালক শিশুর সার্বিক কল্যাণ ও তত্ত্বাবধানে মায়ের অগ্রাধিকার রয়েছে। ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে সাত বছর ও কন্যার ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মায়ের জিম্মায় থাকার কথা বলা আছে।
প্রতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পরিশোধ করে মাত্র ১১০টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান বদলালেও সংখ্যাটি বেশ কয়েক বছর ধরে একই আছে। অথচ এখন অনলাইনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩ লাখ। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এনবিআরে ভ্যাট-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত লাখ।
প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে বাজেটের জোগান বাড়ানোর চাপ। ভ্যাট বা মূসক খাতে লক্ষ্যমাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। ভ্যাট বা মূসক সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে কড়ায়গ-ায় আদায় করা হয়। আদায় করা হলেও ভ্যাট-ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীরা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় সামান্যই বা একেবারেই দেয় না। তারা নিজের পকেট ভরে। যারা নিয়মিত ভ্যাট দেয় শেষ পর্যন্ত সেই ১১০ প্রতিষ্ঠানই গড়ে মোট লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পরিশোধ করে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রায় প্রতি বছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। ভ্যাট আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রার বেশির ভাগ পরিশোধ করে বড় মাপের প্রতিষ্ঠানগুলো। যারা নিয়মিত ভ্যাট দেয় তাদের ওপরই বাড়তি ভ্যাট পরিশোধের চাপ বাড়ে। ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হলে ভ্যাট প্রদানে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়বে। এতে নিয়মিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ কমলেও মোট আদায় বাড়বে।
গত অর্থবছরে মোট আদায়কৃত ভ্যাট ১ লাখ ৩০০ কোটি টাকা। ১১০টি প্রতিষ্ঠান আদায়কৃত ভ্যাটের প্রায় ৫৩ শতাংশ পরিশোধ করেছে, যার পরিমাণ ৫২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ভ্যাটের অর্ধেকের বেশি এসেছে সিগারেট খাত থেকেÑ ২৭ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হিসাব কষে ভ্যাট নেয় এনবিআরের এলটিইউ (ভ্যাট) শাখা। পর পর তিন বছরের যে কোনো এক বছর বার্র্ষিক লেনদেন ১০ কোটি টাকার কম হলে এখানকার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এ দপ্তরের আওতায় দুইশর বেশি প্রতিষ্ঠান থাকলেও গত দশ বছরে কিছু প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ১০ কোটি টাকার কম হওয়ায় তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার বার্ষিক লেনদেন ১০ কোটির বেশি হওয়ায় নতুন করে কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্তও হয়েছে। যোগ-বিয়োগের পর গত চার বছর ধরে এদিক-ওদিক করে ১১০টি প্রতিষ্ঠানই ভ্যাটদাতার তালিকায় রয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরেও ১১০টি প্রতিষ্ঠান আদায়কৃত ভ্যাটের প্রায় ৫২ শতাংশ দিয়েছে, যার পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। সে বছর ভ্যাট খাতে আদায় হয়েছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ১১০টি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ৪২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আদায়কৃত ভ্যাটের প্রায় ৫০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় হয়েছে আগের বছরের মতো।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বড় মাপের ১১০টি প্রতিষ্ঠান আদায়কৃত ভ্যাটের ৫৫ শতাংশ দিয়েছিল। তারা দিয়েছিল ৪৫ হাজার ২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
গত চার অর্থবছরের প্রতি বছরই বড় মাপের প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত ভ্যাটের ৫০ শতাংশ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড কোম্পানি (বিএটিবি) একাই পরিশোধ করেছে।
বিএটিবি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, ২০১৯-২০-এ ২০ হাজার ৭৬৬ কোটি, ২০১৮-১৯-এ ১৯ হাজার ৬৯৬ কোটি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট দিয়েছে।
গত অর্থবছরে ভ্যাটপ্রদানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল যথাক্রমে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি। আগের অর্থবছরও এই দুই প্রতিষ্ঠান একই অবস্থানে ছিল। গত অর্থবছরে গ্রামীণফোন দিয়েছে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এই ১১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে সিমেন্ট খাতের শাহ সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, সেভেন রিং সিমেন্ট; ওষুধ খাতের স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপটা; ব্যাংক খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও আরএকে সিরামিকস প্রভৃতি।
সম্প্রতি এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে গত অর্থবছরের সেরা ভ্যাটদাতা হিসেবে ৯ প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করেছে। উৎপাদন খাতে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়ে এনবিআরের তালিকায় আছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ও এসএমসি এন্টারপ্রাইজ। ব্যবসায়-শ্রেণিতে আছে ওয়ালটন, আগোরা লিমিটেড ও ইউনিমার্ট লিমিটেড। সেবা-শ্রেণিতে তিন সেরা ভ্যাটদাতা হলো বিকাশ লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক ও নগদ লিমিটেড।
গত চার অর্থবছর সিগারেট, মুঠোফোন, ওষুধ, ব্যাংক, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিতরণ, কোমল পানীয়, সাবান, সিমেন্ট ও পানি সরবরাহকারীÑ এই ১০ খাত থেকে এলটিইউ বেশির ভাগ ভ্যাট আদায় করেছে।
এনবিআর অনলাইনে ভ্যাট-নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। অনলাইন ভ্যাট-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। এর আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লাখ। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতাকালে দাবি করেছিলেন, দেশে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ লাখ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, এনবিআরের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আরও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও লোকবলের স্বল্পতার কারণে তারা ভ্যাট ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে পারছে না।
এনবিআর সদস্য (মূসক মূল্যায়ন ও কার্যকর করা) মইনুল খান বলেন, ভ্যাট ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করতে এনবিআর জরিপ শুরু করেছে। আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে এরই মধ্যে সারা দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে ইএফডি যন্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। গত নভেম্বরে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৩০টি ইএফডি যন্ত্র বসানো হয়েছে। প্রথম ধাপে তিন লাখ ইএফডি যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ইএফডি যন্ত্রের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা হবে।
ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ইএফডি (ইলেকট্রিক ফিসক্যাল ডিভাইস) ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। প্রাথমিকভাবে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্র বিক্রয়কেন্দ্র, পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র, বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, মোবাইল ও মোবাইলের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান, গৃহস্থালি সামগ্রী বিক্রয়কেন্দ্র, অলংকার বিক্রিয়কেন্দ্র প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ইএফডি সরবরাহে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইএফডি সরবরাহের ধীরগতি রয়েছে। এ যন্ত্র কাউকে দেওয়া হচ্ছে আর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। আমার পরামর্শ, এই কাজে একাধিক কোম্পানিকে কাজে লাগানো হোক। তাহলে ইএফডি দ্রুত সরবরাহ করা যাবে। রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া উদ্ধারকারীদের প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এরপরও তারা সফলভাবে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত করায় তুরস্ক সরকার ও সেখানকার মানুষ বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। উদ্ধার অভিযান শেষে দেশে ফিরে এসব কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাজী আলাউদ্দীন রোডে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, তুরস্কে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজ পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্ধারকারী দল পাঠানো ছাড়াও আমরা তুরস্কের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উষ্ণ বস্ত্র পাঠিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পাঁচ সদস্যের উদ্ধারকারী একটি দলের দলনেতা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, ‘একটি ছয়তলা ভবন ভেঙে একতলা হয়ে গিয়েছে। সেখান ভেতর থেকে একজন ভুক্তভোগী বের করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। বড় একেকটি ভবন বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে ছিল, সেখানে আমরা যখন প্রবেশ করি আমাদের জীবনের ঝুঁকি ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। আর সেখানে বারবার আফটার শক হচ্ছিল। প্রতিনিয়ত আমাদের কষ্ট করে থাকতে হয়েছে। আমরা দুই থেকে তিন কিলোমিটার হেঁটে গেছি, আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো কাঁধে করে নিয়ে গেছি। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু সেখানকার মানুষ আমাদের বলেছে, আমরা বন্ধু না, আমরা ভাই। আমরা সেখানে কাজ করে ভুক্তভোগী উদ্ধার করেছি, আমাদের মিশন সফল হয়েছে। সেখানকার মানুষ আমাদের কাজ দেখে এত অভিভূত হয়েছিল যে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আদিয়ামানে গেলাম তখন দেখলাম পুরো শহর বিধ্বস্ত জনমানবশূন্য, কিন্তু শহরটি ছিল পুরো পরিকল্পিত। বড় বড় রাস্তাঘাট সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দুই-একটি বাড়ি দাঁড়ানো ছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল ফাটল ধরা, বসবাসের অনুপযোগী। কোনো মানুষ নেই, কিছু পালিত পশুপাখি বিড়াল, কুকুর হাঁটাহাঁটি করছে। যেসব ভবনে ভুক্তভোগীর উপস্থিতি ছিল সেগুলোতে আমরা কাজ করেছি।’
উদ্ধার অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, উদ্ধার অভিযানে সেখানকার শীত আমাদের কষ্টের কারণ ছিল। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য। আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা পরে বাংলাদেশে এমন দুর্যোগ এলে কাজে লাগাতে পারব।
বাংলাদেশে এমন ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস কতটা সক্ষমÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের বর্তমানে ১৪ হাজার কর্মী সবাই প্রশিক্ষিত। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা দেশি-বিদেশি উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করছি। এ প্রস্তুতি আমাদের জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত নয়। আমরা ড্রি (ডিজাস্টার রেসপন্স এক্সারসাইজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ) নামের একটি এক্সারসাইজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন আছে, ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) তৈরি করার জন্য। আমরা ৫০ হাজার ইতিমধ্যে তৈরি করেছি। ২০২২ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজারের ওপর শুধু গার্মেন্টস কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা বলব আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিএমডিসি কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ৯ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে ৪৬ সদস্যের উদ্ধারকারী দল ঢাকা ত্যাগ করে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ২৪ জন, সেনাবাহিনী মেডিকেল টিমের ১০ ও ফায়ার সার্ভিসের ১২ জন। তারা দুটি প্রদেশের ১১টি ভবনে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে তারা একজন তরুণীকে জীবিত এবং ২৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি নিউ স্টার্ট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ভøাদিমির পুতিন। গত মঙ্গলবার পুতিনের এ ঘোষণার পরই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের এ ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আশঙ্কা করেছে পারমাণবিক যুদ্ধের। যদিও পোল্যান্ডে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, পুতিন এখনো পশ্চিমাদের দৃঢ়তা বুঝতে পারেননি। তিনি চুক্তি স্থগিত করে কত বড় ভুল করেছেন সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই তার।
গতকাল বুধবার পোল্যান্ড সফরের দ্বিতীয় দিনে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন বাইডেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে পুতিন বিরাট ভুল করেছেন। আর গত মঙ্গলবার বাইডেন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে গেলে পশ্চিমাদের শক্তি কমে আসবে বলে মনে করছেন মস্কোর নেতারা। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো পশ্চিমাদের দৃঢ়তা বুঝতে পারেননি।
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘(ভেঙে যাওয়া) একটি সাম্রাজ্য পুনর্গঠনে একজন স্বৈরশাসকের অভিলাষ কখনই স্বাধীনতার প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে কমিয়ে দিতে পারবে না। বর্বরতা কখনই স্বাধীন মানুষের ইচ্ছাকে দমিয়ে দিতে পারবে না। ইউক্রেন কখনই রাশিয়ার কাছে বিজয় রূপে আসবে না।’
তিনি বলেন, তিনি (পুতিন) মনে করেছিলেন, তার মতো স্বৈরশাসকরা কঠোর হন, আর গণতন্ত্রের নেতারা নরম হন। তবে এরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়সংকল্পের মুখোমুখি হলেন। আর সারা বিশ্বে এমন সব দেশের সামনে পড়লেন, যারা ভয়ের মাধ্যমে শাসিত বিশ্বব্যবস্থা মেনে নিল না। এ সময় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো নিয়ে বাইডেন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় এক বছর পর এসে ন্যাটো এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি একতাবদ্ধ। ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলেও জানান বাইডেন।
ওইদিন তিনি কিয়েভ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, প্রায় এক বছর আগে আমি এখানে এসেছিলাম। এক বছর আগে মানুষের প্রশ্ন ছিল, কিয়েভের পতন নিয়ে। কিন্তু আমি কিয়েভ ঘুরে আসছি। আমি আপনাদের জানাচ্ছি, কিয়েভ শক্ত হয়ে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কিয়েভ গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সবচেয়ে বড় কথা কিয়েভ স্বাধীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
বাইডেন বলেন, সামনে আরও কঠিন ও তিক্ত দিন আসছে। আমেরিকা ও ইউরোপ আগামী দিনেও একইরকমভাবে ইউক্রেনের পাশে থাকবে।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত এ-সংক্রান্ত কমিটি। নীতিমালার খসড়ায় চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ ফি ৩০০ ও সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ১ মার্চ থেকে ঢাকায় ও আগস্টের মধ্যে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
তবে এই খসড়া নীতিমালার কিছু প্রস্তাবনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন কমিটির কয়েকজন সদস্য। তারা সর্বোচ্চ ৬০০ ও সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা আরও বলেছেন, তাড়াহুড়ো না করে ভেবেচিন্তে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা উচিত; বিশেষ করে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পক্ষে। তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগে চিকিৎসকরা অসন্তুষ্ট হলে মানুষের কাছে সরকারের ব্যাপারে ভুল বার্তা যাবে এবং নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কমিটি এ পর্যন্ত দুটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন সদস্য দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ‘ব্যক্তিগত চেম্বার’ চালুর বিষয়ে গত ২২ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি এবং সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালকদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির সদস্যসংখ্যা ২৬।
কমিটি ব্যক্তিগত চেম্বার পরিচালনায় ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ নামের একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে এবং এখন পর্যন্ত দুটি বৈঠক করেছে। আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কমিটির আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে গত দুই দফায় সদস্যদের মধ্য থেকে আসা বিভিন্ন মত নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কমিটির প্রধান সাইদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নীতিমালা এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। বিষয়টি নতুন। সময় লাগবে চূড়ান্ত হতে। এখন এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখনো চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ হয়নি। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা আরও বসব। সবার মত নেব। সবকিছু ঠিক করতে সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত মন্ত্রী মহোদয়ের কথা অনুযায়ী মার্চ থেকে শুরু করার চিন্তাভাবনা আছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, দেখা যাক।’
খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে, এসব চেম্বারে চিকিৎসকরা বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন। রোগীদের আগে থেকেই সিরিয়াল নিতে হবে না। তবে হাসপাতালে এসে টিকিট কাটতে হবে।
কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ধরনের চেম্বারে বসার ব্যাপারে কোনো চিকিৎসককে বাধ্য করা হবে না। তারা এখানে রোগী দেখার পর হাসপাতালের বাইরে তাদের চেম্বারেও রোগী দেখতে পারবেন।
এসব চেম্বারে আসা রোগীরা ওই হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে পারবেন এবং এ জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালের পরীক্ষাগার খোলা থাকবে। এ জন্য তাকে সরকার নির্ধারিত পরীক্ষা ফি দিতে হবে। চেম্বারে একজন অধ্যাপক সপ্তাহে দুই দিন, সহযোগী অধ্যাপক দুই দিন ও সহকারী অধ্যাপক দুই দিন রোগী দেখবেন।
তবে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান কমিটির সদস্য বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের ফি নির্দিষ্ট হয়নি। জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্য ৩০০ হতে পারে এবং সিনিয়র অভিজ্ঞদের জন্য ৬০০ টাকা। আরেকটু চিন্তাভাবনা করে ঠিক করা দরকার। জুনিয়র চিকিৎসকরা বাইরে চেম্বার করেন। বাইরে তারা যেটা নেন, এখানেও সে রকমই করতে হবে। যাতে এটা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো ধরনের অসন্তোষ তৈরি না হয়। আমরা মনে করি হিসাব করে করা উচিত। এখন অনেক তরুণও অধ্যাপক হয়েছেন। অধ্যাপকদের মধ্যে যারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তাদের একটা আলাদা ফি নির্ধারণ করা উচিত। সরকার যদি এ রকম চিন্তা করে, তাহলে ভালো হবে।’
খসড়া নীতিমালার প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত কিছু বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাইরের কয়েকজন সদস্য। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মত দিয়েছি এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নির্বাচনের পর বাস্তবায়নের। এখন এগুলোর দরকার নেই।’
চিকিৎসকদের ফির ব্যাপারে এসব সদস্য বলেন, আমাদের যে জুনিয়র চিকিৎসকরা, তারা তাদের চেম্বারে ফি নেন ৫০০ টাকা। সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখলে তার ফি অবশ্যই বাড়াতে হবে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করতে হবে।
এই সদস্যরা সর্বশেষ বৈঠকে বলেন, এখন বারডেম করছে। তাদের আরও সক্রিয় করতে বলেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় সপ্তাহে মাত্র দুই দিন করে। সপ্তাহে ওদের ছয় দিন করতে বলেন। তা হলে মানুষের আগ্রহ আসবে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হোক। পরে ধাপে ধাপে সারা দেশে করেন। ঢাকা শহরের সরকারি হাসপাতালে চালু করতে করতে জাতীয় নির্বাচন চলে আসবে। পরে দেশের অন্যান্য স্থানে শুরু করা যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করল। পরে এগুলো চালু করলে মানুষ সেটা আরও ভালোভাবে নেবে। এগুলো যদি আগেই ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে চিকিৎসকদের মধ্যে ভিন্ন ধারণা জন্ম নিতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বলেছি পরে করেন। আমলারা বাস্তবতার সঙ্গে থাকেন না।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও অভিযুক্তরা। গতকাল বুধবার দুপুর ৩টার দিকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন অ্যাকাডেমিক ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে তাদের মুখোমুখি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। কথা বলা শেষে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও মুখ খুলেননি অভিযুক্তরা। তারা গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে মুখ লুকিয়ে চলে যান।
এদিকে নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুনের কাছে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় ফুলপরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে ফুলপরীর এই বক্তব্যের বিষয়ে অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী কোনো কথা বলেননি।
তদন্ত কমিটির ডাকে গতকাল বেলা ১২টার দিকে পাবনার গ্রামের বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে আসেন ফুলপরী খাতুন। এ সময় সঙ্গে তার ভ্যানচালক বাবাও ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সহকারী প্রক্টরের তত্ত্বাবধানে তাদের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ফুলপরীর সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেন। অন্যদিকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা গোপনে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। এমনকি বিষয়টি গোপন রাখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটি। পরে দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা ম-লের কক্ষে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের ঢোকানো হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তরা ছাড়াও ছিলেন তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, হালিমা খাতুন উর্মি ও ইশরাত জাহান মীম।
সেখান থেকে বেরিয়ে ফুলপরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কাছে আমি নির্যাতনকারীদের চিনিয়ে দিয়েছি। এ সময় তারা আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু আমি যা সত্য তাই বলেছি। এছাড়াও তারা কান্না কান্না ভাব নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির কাছে আমি নির্যাতনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি।’
নির্যাতনকারীদের দেখে ভয় পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনোরকম ভয় পাইনি। বরং তাদের সামনেই সব বলেছি।’
পরে ফুলপরীর বাবা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনার পরে মেয়েকে নিয়ে চারবার ক্যাম্পাসে এলাম। মেয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবুও তদন্তের স্বার্থে আসতে হয়েছে। এছাড়াও আর্থিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবুও এর সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।’ সঠিক বিচার না পেলে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।
ফুলপরীর হাত-পা ধরে অভিযুক্তদের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সত্য কি না, তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কাছে তা জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ক্যাম্পাসে : নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে গতকাল বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে আসেন হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারা প্রক্টরের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলেন। পরে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এদিকে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে গতকাল মানববন্ধন করেছে শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’। মানববন্ধন থেকে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।