
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কাজ কারিকুলাম প্রণয়ন। এ জন্য তাদের নানা ধরনের গবেষণা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা। মূলত প্রতিটি বই নির্ভুলভাবে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরির দায়িত্ব তাদের। সে লক্ষ্যে সরকার এই প্রতিষ্ঠান করলেও এখন সেখান থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে। কারিকুলামে মন না দিয়ে তারা কোটি কোটি বই ছাপায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে রয়্যালটি বাবদ তারাও বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। ফলে ব্যাংকে টাকার পাহাড় আর বিপুল সম্পদের মালিক হলেও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ভুলে ভরা বই।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা, সোনালী ও অগ্রণীতে এনসিটিবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এফডিআর করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৬ বছর পার হয়েছে। এই সময়েও শতকোটি টাকা আয় হয়েছে। করোনাকালে ২০২০ সালে সরকার এনসিটিবি থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এখন আবার উদ্বৃত্ত টাকার ২৫ শতাংশ রেখে বাকিটা সরকারি ফান্ডে জমা দিতে হচ্ছে। এজন্যই তারা তড়িঘড়ি করে ওয়ারীতে তাদেরই জমিতে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র, কারিকুলাম তৈরি, বিভিন্ন ধরনের সম্মানী, নানা ভাতা, বই ছাপার কাজ তদারকিসহ নানা কাজে ইচ্ছেমতো ব্যয় হচ্ছে। ফলে এফডিআরের পরিমাণ আর বাড়েনি, বরং অনেক কমে গেছে।
জানা যায়, বিপুল অঙ্কের টাকার বাইরেও মতিঝিলে ১৮ কাঠা জমিতে এনসিটিবির নিজস্ব অফিস, ওয়ারীতে ২ বিঘা জমিতে কোয়ার্টার রয়েছে। তেজগাঁওয়ে পৌনে ২ বিঘা জমিতে একটি গুদাম আছে। আর টঙ্গীতে ১৫ বিঘা জমির কিছু অংশে আরেকটি গুদাম ও কিছু অংশ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে আছে। সবমিলিয়ে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় আমাদের এফডিআর করা টাকা থাকলেও এখন তেমন নেই। উদ্বৃত্ত টাকা সরকার তার কোষাগারে জমা নিচ্ছে। গত কয়েক বছর বই ছাপাতে গিয়ে সরকারি বরাদ্দের ঘাটতি আমাদের ফান্ড থেকে মেটাতে হয়েছে। যার পরিমাণ অনেক। এ ছাড়া কর্মচারী কল্যাণ ও প্রভিডেন্ট ফান্ডেও টাকা রাখতে হয়। ফলে এখন ফান্ডে ১৫০-২০০ কোটি টাকার বেশি নেই।’
জানা যায়, এনসিটিবির বড় বড় গুদাম থাকলেও তা এখন তেমনভাবে কাজে আসছে না। কারণ এখন মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বইগুলো সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যায়। এ ছাড়া আগে এনসিটিবি কাগজ কিনে মুদ্রাকরদের কাছে সরবরাহ করলেও গত কয়েক বছর ধরে তারা কাগজ কিনছে না। ফলে গুদামগুলোও অনেকটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিটিবির কর্মকর্তারা সাধারণত শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। আর কর্মচারীরা নিজস্ব। এরপরও সরকারের অর্থে তৈরি করা বই থেকে তারা রয়্যালিটি নেন। বইপ্রতি তাদের রয়্যালটি ২ টাকা ৮ পয়সা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরে প্রতি বছর ৩৫ কোটি বই ও ম্যানুয়াল ছাপা হয়। ভ্যাট বাবদ ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হয় সরকারকে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের বই থেকে কমপক্ষে সাড়ে ১১ শতাংশ রয়্যালিটি পান তারা। সেখান থেকেও ভ্যাট বাদ দিয়ে আয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু বছরে তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকার মতো। ফলে বছরে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
নাম প্রকাশ না করে একজন মুদ্রাকর বলেন, ‘সরকারি টাকা থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের রয়্যালিটি কোন যুক্তিতে নেয় তা বোধগম্য নয়। তারা যে রয়্যালিটি পায় তা সব মুদ্রাকর মিলেও লাভ করতে পারে না। তাদের প্রতি বছর যে খরচ সে টাকা আয় করলেই তো হয়। মূলত বেশি টাকা আয় করতে পারলে নানাভাবে বেশি টাকা খরচ করা যায়, সে সুযোগটিই তারা নিচ্ছে। তারাই এখন বড় ঠিকাদার হয়ে উঠছে।’
জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে তিনটি উৎসব ভাতা (বোনাস) পেলেও এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান ৮টি। দুই ঈদে দুটি ও বৈশাখী ভাতার পাশাপাশি বছরে তারা আরও ৫টি ভাতা পান। এই নিয়ম তারা নিজেরাই করে নিয়েছেন। মূলত ৪টি পর্যায়ের বইয়ের জন্য চারটি এবং বইয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর তারা আরও একটি বোনাস নেন। অর্থাৎ বেতনের বাইরেও প্রায় প্রতি দেড় মাসে একটি করে বোনাস পান। এ ছাড়া মার্চ-এপ্রিলের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র, মূল্যায়ন, কারিকুলাম তৈরি ও বই ছাপার কাজ থাকে। সেখানেও প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেন। ফলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-বোনাসের বাইরে নানা ধরনের সম্মানী পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া শত শত কোটি টাকার এফডিআর এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে হস্তান্তর হলেও অলিখিতভাবে বড় অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, এনসিটিবি মূলত বিশেষজ্ঞদের কাজ করার জায়গা। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেও যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন, তাদেরই এখানে প্রেষণে পাঠানোর কথা। কিন্তু এখন যার তদবির যত বেশি, সে-ই এনসিটিবিতে আগে পদায়ন পান। আবার কিছু কর্মকর্তা বছরের পর বছর এনসিটিবিতে প্রেষণে কাজ করছেন। অনেকেরই পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম তৈরি, রচনা, মুদ্রণ বিষয়ের মতো টেকনিক্যাল কাজের কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। ফলে নির্ভুল পাঠ্যবই মুদ্রণের বিষয়টি বারবারই হোঁচট খাচ্ছে। এমনকি এ বছর ভুল আর অসংগতির কারণে দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আরও তিনটি বইতে বড় ধরনের সংশোধনের কাজ চলছে।
নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং যদি যথাযথভাবে হতো, তাহলে হয়তো অনেক ভুলই এড়ানো যেত। এনসিটিবির পূর্বাচলে যে ২৫ বিঘা জমি আছে, সেখানে সহজেই তারা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ করতে পারে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকাও আছে। তাহলে তারা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই যেকোনো গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা সহজেই চালাতে পারবে। কিন্তু সে ব্যাপারে তাদের তেমন উদ্যোগ নেই।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যত নির্ভুল বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, সে চেষ্টা আমাদের সব সময়ের জন্য থাকে। আমরা পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি নিয়েছি মূলত ল্যাবরেটরি স্কুল করার জন্য। ওই স্কুলে আমরা পাঠ্যক্রম নিয়ে গবেষণা করব। আমাদের পরিকল্পনা আছে, এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের যুবসমাজকে কৃষিকাজে আরও সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেত। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নেই। সে লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। করোনাকালে যখন ধান কাটতে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না আমি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সব ছেলেমেয়েকে নির্দেশ দিলাম... তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে। তারা কিন্তু ধান কেটেছে।’
কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কৃষকদের সুবিধার জন্য ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছেন। পাকিস্তানের আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করেন। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ করা শুরু করেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনের গুরুত্বকে বেশি প্রাধান্য দেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না, যদি চাউল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে’। আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনার খাদ্য বাংলাদেশের প্রবেশ হয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, এটাকে আইন করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন তখনকার মানুষের যতটুকু চাহিদা মেটানো তার ব্যবস্থা তিনি করতে পেরেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়। ন্যায্য মুজরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাজেই আমরা সেসব জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল, কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমাদের বিপক্ষে ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি সারা জীবন ভিক্ষা চেয়ে চলবে আর বিদেশের ওপর নির্ভর করে চলবে? কেন চলব আমরা। স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনো সম্পদ নেই, রিজার্ভে টাকা নেই, কারেন্সি নোট নেই, সবকিছু বিধ্বস্ত, আপনি কী দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? তিনি একটা কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, এই আমি মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি ক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সবসময়ই মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। আমরা কৃষিনির্ভর দেশ, আমরা কৃষির ওপরে কৃষির গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ব্রি’র গৌরব ও সাফল্যের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পায়রা ও বেলুন ওড়ান। তিনি বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এর আগে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ও কৃষির বিভিন্ন ব্রিডিং প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ ম-ল, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, ধান ও কৃষিবিজ্ঞানীসহ কৃষিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য রাখছেন সে বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘এটি সরকারের একটি ফাঁদ। বিদেশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর চাপ ও দেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে চাপে সরকার যখন নাজেহাল তখন এসব কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা। তারা দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছেন। তাদের এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বরং বিএনপি রাজপথে যে যুগপৎ আন্দোলন করছে তা জোরদার করা হবে।’
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন। তাই আইনমন্ত্রী কিংবা তথ্যমন্ত্রী কী বলছেন, না বলছেন তা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের সময় নেই। আমরা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত আছি। স্থায়ী কমিটির সভায় আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনের যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
গত রবিবার ঢাকায় জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জেএটিআই) আয়োজিত নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হঠাৎ করে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না’ তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবেএ রকম কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদনের মধ্যে ছিল না।’
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।’ তখন শেখ সেলিমের এই বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। তার বাইরেও তিনি দেশের একজন নাগরিক। তাকে যে মামলায় সাজা দিয়েছে বিদ্যমান আইনে তার জামিন প্রাপ্য। সেখানে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করে তাকে জামিন দিচ্ছে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি, পারবেন না তা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন, পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকার দিশেহারা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।’ এখন আবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন।’ তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।’ তাদের নেতাদের এসব কথাবার্তায় প্রমাণ হয় তারা হয় বিএনপিকে বিদ্রƒপ করছে নয়তো তারা সময় নষ্ট করতে চাইছে। তাই তাদের এসব কথা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
এদিকে গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর প্রমুখ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১০ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এই দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি হলো কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি। বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন, নাকি করবেন না তা নির্ধারণ করবেন চেয়ারপারসন নিজে ও দলের নীতিনির্ধারকরা, সরকারের কথায় নয়। বিএনপি এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কারণ তিনি অসুস্থ এবং বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আগে সুস্থতা পরে রাজনীতি করা না করা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই, আবারও বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘তবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে তার ভাই যে আবেদনটা করেছেন, সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমাদের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। জনগণের কাছে যে দায়বদ্ধতা আছে সে দায়বদ্ধতা থেকে সংবিধান অনুযায়ীই আমরা একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংবিধানের এক চুলও বাইরে আমরা যাব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেট আছে বলেই আমরা সরকার চালাচ্ছি। মানুষ যদি ম্যান্ডেট না দিত তাহলে আমরা ২০১৪ সালে এবং পরে ২০১৮ সালে সরকার চালাতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে সবাই আসুক, কিন্তু কে আসবে কে আসবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’
‘রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশের কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়মুক্তি দিতে চায় না।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। এই অঞ্চলে মাদক পাচার ও উগ্রবাদের ঝুঁকিও বাড়ছে। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাচারও বাড়ছে। তবে যেভাবেই হোক আমরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে চাই।’
সাজা স্থগিত করে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) শর্ত সাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। খবর বাসস সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।’
একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী আর ভাষার বিরুদ্ধাচারীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বিএনপি আজগুবি অভিযোগ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা গায়েবানা অভিযোগ। গত বছর আমরা আমাদের মিছিলের পাশ দিয়ে বিএনপির মিছিল যেতে দিয়েছি, তারা ফুল দেওয়ার পর আমরা ফুল দিয়েছি। এতে আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছিল। এ বছর আমরা ফুল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড নীরবে দাঁড়িয়েছিলাম, পুরোপুরি এক মিনিটও না, তারপর চলে গেছি। বিএনপি দেরিতে শুরু করেছে এবং তখন শহীদ মিনারে ভিড় হয়ে গেছে। তাদের কে কোথায় বাধা দিল!’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে একুশের চেতনা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনোটাই বিএনপি ধারণ করে না। তারা একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলে আর সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাজনীতি করে, যারা আরবি হরফে বাংলা ভাষা চালু করা, রবিঠাকুরের গান প্রচার নিষিদ্ধ করা, ভাষা ইসলামিকরণের পক্ষে ছিল।’
করোনাভাইরাসের টিকার চতুর্থ ডোজ নিতে গিয়ে দেখি কোনো ভিড় নেই। আমি ডেস্কের সামনে টিকা কার্ড দিতেই নার্স একটি ট্যাব দিয়ে স্ক্যান করে ‘ফাইজার ফোর্থ ডোজ’ সংবলিত একটা সিল মেরে দিলেন। তার বাম পাশের রুম দেখিয়ে বললেন, ওই দিকে যান। গিয়ে দেখি আমার সামনে মাত্র দুজন লোক। একজন হাতে তুলা দিয়ে টিকার স্থান ধরে রেখেছেন। আরেকজন টিকা নেওয়ার জন্য কেবলই নির্দিষ্ট চেয়ারে গিয়ে বসলেন। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি।
অথচ প্রথম যেদিন করোনাভাইরাসের টিকা নিতে এসেছিলাম। সেদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। শত শত মানুষ এসেছিলেন টিকা নিতে। কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ সিরিয়াল দিচ্ছিলেন, কেউবা ডেস্কের সামনে তথ্য জেনে নিচ্ছিলেন। মাইকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল শুধু আজকের তারিখের যারা মেসেজ পেয়েছেন শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে। প্রবাসী, নন-প্রবাসী ও বিএমইটি এই তিনটি ডেস্কের কর্মীরা মানুষদের ম্যানেজ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। দশ জনের গ্রুপ করে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছিল।
আর আজকের চিত্র দেখে আমি তো অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বেজমেন্টে গাড়ির গ্যারেজে টিকা দেওয়া হচ্ছে দেখে। অবশ্য প্রথমে গিয়ে ভড়কে গিয়েছিলাম। চতুর্থ ডোজ নিতে এত মানুষ এসেছেন? এরপর জানলাম তারা হাসপাতালের ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়াল দিচ্ছেন।
দ্বিতীয়-তৃতীয় ডোজ নিতেও এই হাসপাতালের নিচতলা-দোতলায় সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। ভেতরে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির তরুণ-তরুণীরা হেল্প করছিলেন। একজন তরুণ বারবার বলছিলেন, টিকা নেওয়ার স্থানে সাবান-তেল-লোশন লাগাবেন না, ঘষামাজা করবেন না। ব্যথা কিংবা জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাবেন। আর আজ শুধু কয়েকজন নার্স বসে আছেন।
করোনা মহামারীর আতঙ্ক কমে গেলেও সংক্রমণ থেমে নেই। সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কভিড-১৯ টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। সারা দেশের স্থায়ী টিকাকেন্দ্রগুলোতে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ। এই ডোজ অ্যান্টিবডির ঘনত্ব এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করে।
গবেষণায় এখন পর্যন্ত চতুর্থ ডোজের ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত গুরুতর প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বরং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন রোগীদের মধ্যে তিনটি ডোজের পর অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া কম বা অপর্যাপ্ত পরিমাণে দেখায়, যা কভিড প্রতিরোধে অকার্যকর। তাই শনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পেতে তাদের চতুর্থ ডোজ প্রয়োজন। প্রথম ডোজ নিতে এসে কুর্মিটোলা হাসপাতালের ভিড় দেখে ভালোই লেগেছিল; মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ ডোজে ভিড় না দেখে মনে হচ্ছে এই ডোজটাকে অবহেলা করা হচ্ছে। আজ কারোরই মুখে মাস্ক দেখিনি। অথচ প্রথম দিকে টিকা নিতে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেই ডাবল মাস্ক পরে এসেছিলেন। কেউ কেউ তো মাস্কের ওপরে ফেসশিল্ডও পরেছিলেন।
ওই সময় একজন ইন্ডিয়ানকে দেখেছিলাম। তিনি কোথায় দাঁড়াবেন, কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। হাতে টিকা রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে পায়চারি করছিলেন। মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের একজন এগিয়ে এসে তাকে সোজা নিয়ে গেলেন ভেতরে। মিনিট পাঁচেক পর তিনি বের হলেন; মুখে অমলিন হাসি।
টিকা নিতে আসা এক তরুণী রেজিস্ট্রেশনের কাগজে মোবাইল নম্বর লেখেননি। তার কাছে কলমও নেই। এগিয়ে যান একজন বিজিবি সদস্য। তাকে কলম দিয়ে সাহায্য করেন। মাকে নিয়ে এসেছিলেন এক তরুণ। ভুল করে পাঁচ নম্বর দলে এসে বসেছেন। রেজিস্ট্রেশনের কাগজও জমা দেননি। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ তাকে কী করতে হবে বলে দেন। তরুণ তার মাকে নিয়ে ডেস্কের কাছে চলে যান।
প্রবাসীদের অনেকেই ছিলেন খুব টেনশনে। একবার বিএমইটি ডেস্কে যাচ্ছেন আরেকবার সিরিয়ালে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা না নিয়ে দশ জন করে সরাসরি ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। একজন বিজিবি সদস্য বারবার হ্যান্ড মাইকে বলছেন, প্রবাসীরা তার সামনে গিয়ে যেন লাইনে দাঁড়ান। এক দম্পতি ভুল করে প্রবাসীদের সিরিয়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ তাকে বুঝিয়ে জেনারেল ডেস্কে পাঠান। সেখানে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা দেন। তার সিরিয়াল পরে ৮ নম্বর দলে।
সেবার ভিড়ের কারণে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল ঘণ্টাখানেক। এত এত মানুষ, এরপরও কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখিনি। ভিড়-ভাট্টা ঠেলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই টিকা নিচ্ছিলেন। এবার পাঁচ মিনিটের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয়নি। ডেস্কের সামনে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ লেখা থাকলেও সেখানে কোনো ভিড় নেই। মানুষ টিকা নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে নাকি অবহেলা করছে?
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।