
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই, আবারও বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘তবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে তার ভাই যে আবেদনটা করেছেন, সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমাদের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। জনগণের কাছে যে দায়বদ্ধতা আছে সে দায়বদ্ধতা থেকে সংবিধান অনুযায়ীই আমরা একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংবিধানের এক চুলও বাইরে আমরা যাব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেট আছে বলেই আমরা সরকার চালাচ্ছি। মানুষ যদি ম্যান্ডেট না দিত তাহলে আমরা ২০১৪ সালে এবং পরে ২০১৮ সালে সরকার চালাতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে সবাই আসুক, কিন্তু কে আসবে কে আসবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’
‘রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশের কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়মুক্তি দিতে চায় না।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। এই অঞ্চলে মাদক পাচার ও উগ্রবাদের ঝুঁকিও বাড়ছে। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাচারও বাড়ছে। তবে যেভাবেই হোক আমরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে চাই।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কাজ কারিকুলাম প্রণয়ন। এ জন্য তাদের নানা ধরনের গবেষণা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা। মূলত প্রতিটি বই নির্ভুলভাবে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরির দায়িত্ব তাদের। সে লক্ষ্যে সরকার এই প্রতিষ্ঠান করলেও এখন সেখান থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে। কারিকুলামে মন না দিয়ে তারা কোটি কোটি বই ছাপায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে রয়্যালটি বাবদ তারাও বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। ফলে ব্যাংকে টাকার পাহাড় আর বিপুল সম্পদের মালিক হলেও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ভুলে ভরা বই।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা, সোনালী ও অগ্রণীতে এনসিটিবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এফডিআর করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৬ বছর পার হয়েছে। এই সময়েও শতকোটি টাকা আয় হয়েছে। করোনাকালে ২০২০ সালে সরকার এনসিটিবি থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এখন আবার উদ্বৃত্ত টাকার ২৫ শতাংশ রেখে বাকিটা সরকারি ফান্ডে জমা দিতে হচ্ছে। এজন্যই তারা তড়িঘড়ি করে ওয়ারীতে তাদেরই জমিতে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র, কারিকুলাম তৈরি, বিভিন্ন ধরনের সম্মানী, নানা ভাতা, বই ছাপার কাজ তদারকিসহ নানা কাজে ইচ্ছেমতো ব্যয় হচ্ছে। ফলে এফডিআরের পরিমাণ আর বাড়েনি, বরং অনেক কমে গেছে।
জানা যায়, বিপুল অঙ্কের টাকার বাইরেও মতিঝিলে ১৮ কাঠা জমিতে এনসিটিবির নিজস্ব অফিস, ওয়ারীতে ২ বিঘা জমিতে কোয়ার্টার রয়েছে। তেজগাঁওয়ে পৌনে ২ বিঘা জমিতে একটি গুদাম আছে। আর টঙ্গীতে ১৫ বিঘা জমির কিছু অংশে আরেকটি গুদাম ও কিছু অংশ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে আছে। সবমিলিয়ে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় আমাদের এফডিআর করা টাকা থাকলেও এখন তেমন নেই। উদ্বৃত্ত টাকা সরকার তার কোষাগারে জমা নিচ্ছে। গত কয়েক বছর বই ছাপাতে গিয়ে সরকারি বরাদ্দের ঘাটতি আমাদের ফান্ড থেকে মেটাতে হয়েছে। যার পরিমাণ অনেক। এ ছাড়া কর্মচারী কল্যাণ ও প্রভিডেন্ট ফান্ডেও টাকা রাখতে হয়। ফলে এখন ফান্ডে ১৫০-২০০ কোটি টাকার বেশি নেই।’
জানা যায়, এনসিটিবির বড় বড় গুদাম থাকলেও তা এখন তেমনভাবে কাজে আসছে না। কারণ এখন মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বইগুলো সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যায়। এ ছাড়া আগে এনসিটিবি কাগজ কিনে মুদ্রাকরদের কাছে সরবরাহ করলেও গত কয়েক বছর ধরে তারা কাগজ কিনছে না। ফলে গুদামগুলোও অনেকটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিটিবির কর্মকর্তারা সাধারণত শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। আর কর্মচারীরা নিজস্ব। এরপরও সরকারের অর্থে তৈরি করা বই থেকে তারা রয়্যালিটি নেন। বইপ্রতি তাদের রয়্যালটি ২ টাকা ৮ পয়সা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরে প্রতি বছর ৩৫ কোটি বই ও ম্যানুয়াল ছাপা হয়। ভ্যাট বাবদ ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হয় সরকারকে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের বই থেকে কমপক্ষে সাড়ে ১১ শতাংশ রয়্যালিটি পান তারা। সেখান থেকেও ভ্যাট বাদ দিয়ে আয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু বছরে তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকার মতো। ফলে বছরে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
নাম প্রকাশ না করে একজন মুদ্রাকর বলেন, ‘সরকারি টাকা থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের রয়্যালিটি কোন যুক্তিতে নেয় তা বোধগম্য নয়। তারা যে রয়্যালিটি পায় তা সব মুদ্রাকর মিলেও লাভ করতে পারে না। তাদের প্রতি বছর যে খরচ সে টাকা আয় করলেই তো হয়। মূলত বেশি টাকা আয় করতে পারলে নানাভাবে বেশি টাকা খরচ করা যায়, সে সুযোগটিই তারা নিচ্ছে। তারাই এখন বড় ঠিকাদার হয়ে উঠছে।’
জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে তিনটি উৎসব ভাতা (বোনাস) পেলেও এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান ৮টি। দুই ঈদে দুটি ও বৈশাখী ভাতার পাশাপাশি বছরে তারা আরও ৫টি ভাতা পান। এই নিয়ম তারা নিজেরাই করে নিয়েছেন। মূলত ৪টি পর্যায়ের বইয়ের জন্য চারটি এবং বইয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর তারা আরও একটি বোনাস নেন। অর্থাৎ বেতনের বাইরেও প্রায় প্রতি দেড় মাসে একটি করে বোনাস পান। এ ছাড়া মার্চ-এপ্রিলের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র, মূল্যায়ন, কারিকুলাম তৈরি ও বই ছাপার কাজ থাকে। সেখানেও প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেন। ফলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-বোনাসের বাইরে নানা ধরনের সম্মানী পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া শত শত কোটি টাকার এফডিআর এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে হস্তান্তর হলেও অলিখিতভাবে বড় অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, এনসিটিবি মূলত বিশেষজ্ঞদের কাজ করার জায়গা। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেও যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন, তাদেরই এখানে প্রেষণে পাঠানোর কথা। কিন্তু এখন যার তদবির যত বেশি, সে-ই এনসিটিবিতে আগে পদায়ন পান। আবার কিছু কর্মকর্তা বছরের পর বছর এনসিটিবিতে প্রেষণে কাজ করছেন। অনেকেরই পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম তৈরি, রচনা, মুদ্রণ বিষয়ের মতো টেকনিক্যাল কাজের কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। ফলে নির্ভুল পাঠ্যবই মুদ্রণের বিষয়টি বারবারই হোঁচট খাচ্ছে। এমনকি এ বছর ভুল আর অসংগতির কারণে দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আরও তিনটি বইতে বড় ধরনের সংশোধনের কাজ চলছে।
নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং যদি যথাযথভাবে হতো, তাহলে হয়তো অনেক ভুলই এড়ানো যেত। এনসিটিবির পূর্বাচলে যে ২৫ বিঘা জমি আছে, সেখানে সহজেই তারা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ করতে পারে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকাও আছে। তাহলে তারা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই যেকোনো গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা সহজেই চালাতে পারবে। কিন্তু সে ব্যাপারে তাদের তেমন উদ্যোগ নেই।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যত নির্ভুল বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, সে চেষ্টা আমাদের সব সময়ের জন্য থাকে। আমরা পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি নিয়েছি মূলত ল্যাবরেটরি স্কুল করার জন্য। ওই স্কুলে আমরা পাঠ্যক্রম নিয়ে গবেষণা করব। আমাদের পরিকল্পনা আছে, এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের যুবসমাজকে কৃষিকাজে আরও সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেত। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নেই। সে লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। করোনাকালে যখন ধান কাটতে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না আমি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সব ছেলেমেয়েকে নির্দেশ দিলাম... তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে। তারা কিন্তু ধান কেটেছে।’
কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কৃষকদের সুবিধার জন্য ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছেন। পাকিস্তানের আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করেন। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ করা শুরু করেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনের গুরুত্বকে বেশি প্রাধান্য দেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না, যদি চাউল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে’। আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনার খাদ্য বাংলাদেশের প্রবেশ হয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, এটাকে আইন করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন তখনকার মানুষের যতটুকু চাহিদা মেটানো তার ব্যবস্থা তিনি করতে পেরেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়। ন্যায্য মুজরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাজেই আমরা সেসব জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল, কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমাদের বিপক্ষে ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি সারা জীবন ভিক্ষা চেয়ে চলবে আর বিদেশের ওপর নির্ভর করে চলবে? কেন চলব আমরা। স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনো সম্পদ নেই, রিজার্ভে টাকা নেই, কারেন্সি নোট নেই, সবকিছু বিধ্বস্ত, আপনি কী দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? তিনি একটা কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, এই আমি মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি ক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সবসময়ই মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। আমরা কৃষিনির্ভর দেশ, আমরা কৃষির ওপরে কৃষির গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ব্রি’র গৌরব ও সাফল্যের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পায়রা ও বেলুন ওড়ান। তিনি বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এর আগে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ও কৃষির বিভিন্ন ব্রিডিং প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ ম-ল, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, ধান ও কৃষিবিজ্ঞানীসহ কৃষিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য রাখছেন সে বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘এটি সরকারের একটি ফাঁদ। বিদেশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর চাপ ও দেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে চাপে সরকার যখন নাজেহাল তখন এসব কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা। তারা দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছেন। তাদের এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বরং বিএনপি রাজপথে যে যুগপৎ আন্দোলন করছে তা জোরদার করা হবে।’
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন। তাই আইনমন্ত্রী কিংবা তথ্যমন্ত্রী কী বলছেন, না বলছেন তা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের সময় নেই। আমরা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত আছি। স্থায়ী কমিটির সভায় আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনের যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
গত রবিবার ঢাকায় জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জেএটিআই) আয়োজিত নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হঠাৎ করে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না’ তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবেএ রকম কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদনের মধ্যে ছিল না।’
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।’ তখন শেখ সেলিমের এই বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। তার বাইরেও তিনি দেশের একজন নাগরিক। তাকে যে মামলায় সাজা দিয়েছে বিদ্যমান আইনে তার জামিন প্রাপ্য। সেখানে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করে তাকে জামিন দিচ্ছে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি, পারবেন না তা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন, পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকার দিশেহারা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।’ এখন আবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন।’ তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।’ তাদের নেতাদের এসব কথাবার্তায় প্রমাণ হয় তারা হয় বিএনপিকে বিদ্রƒপ করছে নয়তো তারা সময় নষ্ট করতে চাইছে। তাই তাদের এসব কথা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
এদিকে গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর প্রমুখ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১০ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এই দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি হলো কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি। বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন, নাকি করবেন না তা নির্ধারণ করবেন চেয়ারপারসন নিজে ও দলের নীতিনির্ধারকরা, সরকারের কথায় নয়। বিএনপি এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কারণ তিনি অসুস্থ এবং বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আগে সুস্থতা পরে রাজনীতি করা না করা।’
সাজা স্থগিত করে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) শর্ত সাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। খবর বাসস সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।’
একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী আর ভাষার বিরুদ্ধাচারীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বিএনপি আজগুবি অভিযোগ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা গায়েবানা অভিযোগ। গত বছর আমরা আমাদের মিছিলের পাশ দিয়ে বিএনপির মিছিল যেতে দিয়েছি, তারা ফুল দেওয়ার পর আমরা ফুল দিয়েছি। এতে আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছিল। এ বছর আমরা ফুল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড নীরবে দাঁড়িয়েছিলাম, পুরোপুরি এক মিনিটও না, তারপর চলে গেছি। বিএনপি দেরিতে শুরু করেছে এবং তখন শহীদ মিনারে ভিড় হয়ে গেছে। তাদের কে কোথায় বাধা দিল!’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে একুশের চেতনা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনোটাই বিএনপি ধারণ করে না। তারা একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলে আর সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাজনীতি করে, যারা আরবি হরফে বাংলা ভাষা চালু করা, রবিঠাকুরের গান প্রচার নিষিদ্ধ করা, ভাষা ইসলামিকরণের পক্ষে ছিল।’
করোনাভাইরাসের টিকার চতুর্থ ডোজ নিতে গিয়ে দেখি কোনো ভিড় নেই। আমি ডেস্কের সামনে টিকা কার্ড দিতেই নার্স একটি ট্যাব দিয়ে স্ক্যান করে ‘ফাইজার ফোর্থ ডোজ’ সংবলিত একটা সিল মেরে দিলেন। তার বাম পাশের রুম দেখিয়ে বললেন, ওই দিকে যান। গিয়ে দেখি আমার সামনে মাত্র দুজন লোক। একজন হাতে তুলা দিয়ে টিকার স্থান ধরে রেখেছেন। আরেকজন টিকা নেওয়ার জন্য কেবলই নির্দিষ্ট চেয়ারে গিয়ে বসলেন। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি।
অথচ প্রথম যেদিন করোনাভাইরাসের টিকা নিতে এসেছিলাম। সেদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। শত শত মানুষ এসেছিলেন টিকা নিতে। কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ সিরিয়াল দিচ্ছিলেন, কেউবা ডেস্কের সামনে তথ্য জেনে নিচ্ছিলেন। মাইকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল শুধু আজকের তারিখের যারা মেসেজ পেয়েছেন শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে। প্রবাসী, নন-প্রবাসী ও বিএমইটি এই তিনটি ডেস্কের কর্মীরা মানুষদের ম্যানেজ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। দশ জনের গ্রুপ করে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছিল।
আর আজকের চিত্র দেখে আমি তো অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বেজমেন্টে গাড়ির গ্যারেজে টিকা দেওয়া হচ্ছে দেখে। অবশ্য প্রথমে গিয়ে ভড়কে গিয়েছিলাম। চতুর্থ ডোজ নিতে এত মানুষ এসেছেন? এরপর জানলাম তারা হাসপাতালের ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়াল দিচ্ছেন।
দ্বিতীয়-তৃতীয় ডোজ নিতেও এই হাসপাতালের নিচতলা-দোতলায় সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। ভেতরে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির তরুণ-তরুণীরা হেল্প করছিলেন। একজন তরুণ বারবার বলছিলেন, টিকা নেওয়ার স্থানে সাবান-তেল-লোশন লাগাবেন না, ঘষামাজা করবেন না। ব্যথা কিংবা জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাবেন। আর আজ শুধু কয়েকজন নার্স বসে আছেন।
করোনা মহামারীর আতঙ্ক কমে গেলেও সংক্রমণ থেমে নেই। সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কভিড-১৯ টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। সারা দেশের স্থায়ী টিকাকেন্দ্রগুলোতে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ। এই ডোজ অ্যান্টিবডির ঘনত্ব এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করে।
গবেষণায় এখন পর্যন্ত চতুর্থ ডোজের ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত গুরুতর প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বরং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন রোগীদের মধ্যে তিনটি ডোজের পর অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া কম বা অপর্যাপ্ত পরিমাণে দেখায়, যা কভিড প্রতিরোধে অকার্যকর। তাই শনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পেতে তাদের চতুর্থ ডোজ প্রয়োজন। প্রথম ডোজ নিতে এসে কুর্মিটোলা হাসপাতালের ভিড় দেখে ভালোই লেগেছিল; মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ ডোজে ভিড় না দেখে মনে হচ্ছে এই ডোজটাকে অবহেলা করা হচ্ছে। আজ কারোরই মুখে মাস্ক দেখিনি। অথচ প্রথম দিকে টিকা নিতে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেই ডাবল মাস্ক পরে এসেছিলেন। কেউ কেউ তো মাস্কের ওপরে ফেসশিল্ডও পরেছিলেন।
ওই সময় একজন ইন্ডিয়ানকে দেখেছিলাম। তিনি কোথায় দাঁড়াবেন, কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। হাতে টিকা রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে পায়চারি করছিলেন। মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের একজন এগিয়ে এসে তাকে সোজা নিয়ে গেলেন ভেতরে। মিনিট পাঁচেক পর তিনি বের হলেন; মুখে অমলিন হাসি।
টিকা নিতে আসা এক তরুণী রেজিস্ট্রেশনের কাগজে মোবাইল নম্বর লেখেননি। তার কাছে কলমও নেই। এগিয়ে যান একজন বিজিবি সদস্য। তাকে কলম দিয়ে সাহায্য করেন। মাকে নিয়ে এসেছিলেন এক তরুণ। ভুল করে পাঁচ নম্বর দলে এসে বসেছেন। রেজিস্ট্রেশনের কাগজও জমা দেননি। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ তাকে কী করতে হবে বলে দেন। তরুণ তার মাকে নিয়ে ডেস্কের কাছে চলে যান।
প্রবাসীদের অনেকেই ছিলেন খুব টেনশনে। একবার বিএমইটি ডেস্কে যাচ্ছেন আরেকবার সিরিয়ালে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা না নিয়ে দশ জন করে সরাসরি ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। একজন বিজিবি সদস্য বারবার হ্যান্ড মাইকে বলছেন, প্রবাসীরা তার সামনে গিয়ে যেন লাইনে দাঁড়ান। এক দম্পতি ভুল করে প্রবাসীদের সিরিয়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ তাকে বুঝিয়ে জেনারেল ডেস্কে পাঠান। সেখানে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা দেন। তার সিরিয়াল পরে ৮ নম্বর দলে।
সেবার ভিড়ের কারণে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল ঘণ্টাখানেক। এত এত মানুষ, এরপরও কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখিনি। ভিড়-ভাট্টা ঠেলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই টিকা নিচ্ছিলেন। এবার পাঁচ মিনিটের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয়নি। ডেস্কের সামনে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ লেখা থাকলেও সেখানে কোনো ভিড় নেই। মানুষ টিকা নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে নাকি অবহেলা করছে?
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ব্রাজিলের সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার। তখন কাতালানদের মধ্যমণি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ চরমে। তবু সেসবকে পাশ কাটিয়ে দুজনে হয়ে ওঠেন বন্ধু।
ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে নেইমার পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। তবুও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তার টানেই মেসিকে যখন বার্সা ছেড়ে দেয়, তখন এই ব্রাজিলিয়ান পার্ক দে প্রিন্সেসে ভেড়াতে মধ্যস্ততা করেন।
পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে মেসির। কিংবদন্তি এই ফুটবলার এবার ফুটবল ছেড়ে যাচ্ছেন সকার খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।
মেসি নিজে সেই ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার দলবদল নিয়ে চলছিল নানা নাটকীয়তা। সেই সব রহস্যময় দিনগুলোতে নেইমার কি জানতেন মেসির ঠিকানা হতে চলেছে কোনটা?
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, 'আমি জানতাম মেসি মায়ামিতে যাবে (হাসি)।'
তারপর নেইমার যোগ করেন, 'মেসি আমার সেরা বন্ধুদের একজন। সে আমাকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য। আমি জানতাম সে মায়ামিতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। শহর ও জীবনযাত্রার কারণে মেসি সেখানে দারুণ সময় কাটাবে, এটা তাকে বলেছিলাম। আমি নিশ্চিত তার পদচারণায় দেশটির লিগে আসবে আমুল পরিবর্তন।'
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’