
সাজা স্থগিত করে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) শর্ত সাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। খবর বাসস সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।’
একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী আর ভাষার বিরুদ্ধাচারীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বিএনপি আজগুবি অভিযোগ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা গায়েবানা অভিযোগ। গত বছর আমরা আমাদের মিছিলের পাশ দিয়ে বিএনপির মিছিল যেতে দিয়েছি, তারা ফুল দেওয়ার পর আমরা ফুল দিয়েছি। এতে আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছিল। এ বছর আমরা ফুল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড নীরবে দাঁড়িয়েছিলাম, পুরোপুরি এক মিনিটও না, তারপর চলে গেছি। বিএনপি দেরিতে শুরু করেছে এবং তখন শহীদ মিনারে ভিড় হয়ে গেছে। তাদের কে কোথায় বাধা দিল!’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে একুশের চেতনা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনোটাই বিএনপি ধারণ করে না। তারা একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলে আর সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাজনীতি করে, যারা আরবি হরফে বাংলা ভাষা চালু করা, রবিঠাকুরের গান প্রচার নিষিদ্ধ করা, ভাষা ইসলামিকরণের পক্ষে ছিল।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কাজ কারিকুলাম প্রণয়ন। এ জন্য তাদের নানা ধরনের গবেষণা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা। মূলত প্রতিটি বই নির্ভুলভাবে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরির দায়িত্ব তাদের। সে লক্ষ্যে সরকার এই প্রতিষ্ঠান করলেও এখন সেখান থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে। কারিকুলামে মন না দিয়ে তারা কোটি কোটি বই ছাপায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে রয়্যালটি বাবদ তারাও বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। ফলে ব্যাংকে টাকার পাহাড় আর বিপুল সম্পদের মালিক হলেও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ভুলে ভরা বই।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা, সোনালী ও অগ্রণীতে এনসিটিবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এফডিআর করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৬ বছর পার হয়েছে। এই সময়েও শতকোটি টাকা আয় হয়েছে। করোনাকালে ২০২০ সালে সরকার এনসিটিবি থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এখন আবার উদ্বৃত্ত টাকার ২৫ শতাংশ রেখে বাকিটা সরকারি ফান্ডে জমা দিতে হচ্ছে। এজন্যই তারা তড়িঘড়ি করে ওয়ারীতে তাদেরই জমিতে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র, কারিকুলাম তৈরি, বিভিন্ন ধরনের সম্মানী, নানা ভাতা, বই ছাপার কাজ তদারকিসহ নানা কাজে ইচ্ছেমতো ব্যয় হচ্ছে। ফলে এফডিআরের পরিমাণ আর বাড়েনি, বরং অনেক কমে গেছে।
জানা যায়, বিপুল অঙ্কের টাকার বাইরেও মতিঝিলে ১৮ কাঠা জমিতে এনসিটিবির নিজস্ব অফিস, ওয়ারীতে ২ বিঘা জমিতে কোয়ার্টার রয়েছে। তেজগাঁওয়ে পৌনে ২ বিঘা জমিতে একটি গুদাম আছে। আর টঙ্গীতে ১৫ বিঘা জমির কিছু অংশে আরেকটি গুদাম ও কিছু অংশ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে আছে। সবমিলিয়ে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় আমাদের এফডিআর করা টাকা থাকলেও এখন তেমন নেই। উদ্বৃত্ত টাকা সরকার তার কোষাগারে জমা নিচ্ছে। গত কয়েক বছর বই ছাপাতে গিয়ে সরকারি বরাদ্দের ঘাটতি আমাদের ফান্ড থেকে মেটাতে হয়েছে। যার পরিমাণ অনেক। এ ছাড়া কর্মচারী কল্যাণ ও প্রভিডেন্ট ফান্ডেও টাকা রাখতে হয়। ফলে এখন ফান্ডে ১৫০-২০০ কোটি টাকার বেশি নেই।’
জানা যায়, এনসিটিবির বড় বড় গুদাম থাকলেও তা এখন তেমনভাবে কাজে আসছে না। কারণ এখন মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বইগুলো সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যায়। এ ছাড়া আগে এনসিটিবি কাগজ কিনে মুদ্রাকরদের কাছে সরবরাহ করলেও গত কয়েক বছর ধরে তারা কাগজ কিনছে না। ফলে গুদামগুলোও অনেকটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিটিবির কর্মকর্তারা সাধারণত শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। আর কর্মচারীরা নিজস্ব। এরপরও সরকারের অর্থে তৈরি করা বই থেকে তারা রয়্যালিটি নেন। বইপ্রতি তাদের রয়্যালটি ২ টাকা ৮ পয়সা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরে প্রতি বছর ৩৫ কোটি বই ও ম্যানুয়াল ছাপা হয়। ভ্যাট বাবদ ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হয় সরকারকে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের বই থেকে কমপক্ষে সাড়ে ১১ শতাংশ রয়্যালিটি পান তারা। সেখান থেকেও ভ্যাট বাদ দিয়ে আয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু বছরে তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকার মতো। ফলে বছরে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
নাম প্রকাশ না করে একজন মুদ্রাকর বলেন, ‘সরকারি টাকা থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের রয়্যালিটি কোন যুক্তিতে নেয় তা বোধগম্য নয়। তারা যে রয়্যালিটি পায় তা সব মুদ্রাকর মিলেও লাভ করতে পারে না। তাদের প্রতি বছর যে খরচ সে টাকা আয় করলেই তো হয়। মূলত বেশি টাকা আয় করতে পারলে নানাভাবে বেশি টাকা খরচ করা যায়, সে সুযোগটিই তারা নিচ্ছে। তারাই এখন বড় ঠিকাদার হয়ে উঠছে।’
জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে তিনটি উৎসব ভাতা (বোনাস) পেলেও এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান ৮টি। দুই ঈদে দুটি ও বৈশাখী ভাতার পাশাপাশি বছরে তারা আরও ৫টি ভাতা পান। এই নিয়ম তারা নিজেরাই করে নিয়েছেন। মূলত ৪টি পর্যায়ের বইয়ের জন্য চারটি এবং বইয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর তারা আরও একটি বোনাস নেন। অর্থাৎ বেতনের বাইরেও প্রায় প্রতি দেড় মাসে একটি করে বোনাস পান। এ ছাড়া মার্চ-এপ্রিলের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র, মূল্যায়ন, কারিকুলাম তৈরি ও বই ছাপার কাজ থাকে। সেখানেও প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেন। ফলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-বোনাসের বাইরে নানা ধরনের সম্মানী পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া শত শত কোটি টাকার এফডিআর এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে হস্তান্তর হলেও অলিখিতভাবে বড় অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, এনসিটিবি মূলত বিশেষজ্ঞদের কাজ করার জায়গা। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেও যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন, তাদেরই এখানে প্রেষণে পাঠানোর কথা। কিন্তু এখন যার তদবির যত বেশি, সে-ই এনসিটিবিতে আগে পদায়ন পান। আবার কিছু কর্মকর্তা বছরের পর বছর এনসিটিবিতে প্রেষণে কাজ করছেন। অনেকেরই পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম তৈরি, রচনা, মুদ্রণ বিষয়ের মতো টেকনিক্যাল কাজের কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। ফলে নির্ভুল পাঠ্যবই মুদ্রণের বিষয়টি বারবারই হোঁচট খাচ্ছে। এমনকি এ বছর ভুল আর অসংগতির কারণে দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আরও তিনটি বইতে বড় ধরনের সংশোধনের কাজ চলছে।
নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং যদি যথাযথভাবে হতো, তাহলে হয়তো অনেক ভুলই এড়ানো যেত। এনসিটিবির পূর্বাচলে যে ২৫ বিঘা জমি আছে, সেখানে সহজেই তারা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ করতে পারে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকাও আছে। তাহলে তারা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই যেকোনো গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা সহজেই চালাতে পারবে। কিন্তু সে ব্যাপারে তাদের তেমন উদ্যোগ নেই।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যত নির্ভুল বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, সে চেষ্টা আমাদের সব সময়ের জন্য থাকে। আমরা পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি নিয়েছি মূলত ল্যাবরেটরি স্কুল করার জন্য। ওই স্কুলে আমরা পাঠ্যক্রম নিয়ে গবেষণা করব। আমাদের পরিকল্পনা আছে, এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের যুবসমাজকে কৃষিকাজে আরও সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেত। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নেই। সে লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। করোনাকালে যখন ধান কাটতে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না আমি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সব ছেলেমেয়েকে নির্দেশ দিলাম... তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে। তারা কিন্তু ধান কেটেছে।’
কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কৃষকদের সুবিধার জন্য ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছেন। পাকিস্তানের আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করেন। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ করা শুরু করেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনের গুরুত্বকে বেশি প্রাধান্য দেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না, যদি চাউল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে’। আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনার খাদ্য বাংলাদেশের প্রবেশ হয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, এটাকে আইন করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন তখনকার মানুষের যতটুকু চাহিদা মেটানো তার ব্যবস্থা তিনি করতে পেরেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়। ন্যায্য মুজরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাজেই আমরা সেসব জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল, কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমাদের বিপক্ষে ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি সারা জীবন ভিক্ষা চেয়ে চলবে আর বিদেশের ওপর নির্ভর করে চলবে? কেন চলব আমরা। স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনো সম্পদ নেই, রিজার্ভে টাকা নেই, কারেন্সি নোট নেই, সবকিছু বিধ্বস্ত, আপনি কী দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? তিনি একটা কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, এই আমি মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি ক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সবসময়ই মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। আমরা কৃষিনির্ভর দেশ, আমরা কৃষির ওপরে কৃষির গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ব্রি’র গৌরব ও সাফল্যের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পায়রা ও বেলুন ওড়ান। তিনি বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এর আগে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ও কৃষির বিভিন্ন ব্রিডিং প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ ম-ল, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, ধান ও কৃষিবিজ্ঞানীসহ কৃষিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য রাখছেন সে বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘এটি সরকারের একটি ফাঁদ। বিদেশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর চাপ ও দেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে চাপে সরকার যখন নাজেহাল তখন এসব কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা। তারা দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছেন। তাদের এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বরং বিএনপি রাজপথে যে যুগপৎ আন্দোলন করছে তা জোরদার করা হবে।’
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন। তাই আইনমন্ত্রী কিংবা তথ্যমন্ত্রী কী বলছেন, না বলছেন তা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের সময় নেই। আমরা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত আছি। স্থায়ী কমিটির সভায় আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনের যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
গত রবিবার ঢাকায় জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জেএটিআই) আয়োজিত নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হঠাৎ করে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না’ তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবেএ রকম কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদনের মধ্যে ছিল না।’
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।’ তখন শেখ সেলিমের এই বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। তার বাইরেও তিনি দেশের একজন নাগরিক। তাকে যে মামলায় সাজা দিয়েছে বিদ্যমান আইনে তার জামিন প্রাপ্য। সেখানে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করে তাকে জামিন দিচ্ছে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি, পারবেন না তা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন, পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকার দিশেহারা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।’ এখন আবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন।’ তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।’ তাদের নেতাদের এসব কথাবার্তায় প্রমাণ হয় তারা হয় বিএনপিকে বিদ্রƒপ করছে নয়তো তারা সময় নষ্ট করতে চাইছে। তাই তাদের এসব কথা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
এদিকে গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর প্রমুখ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১০ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এই দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি হলো কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি। বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন, নাকি করবেন না তা নির্ধারণ করবেন চেয়ারপারসন নিজে ও দলের নীতিনির্ধারকরা, সরকারের কথায় নয়। বিএনপি এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কারণ তিনি অসুস্থ এবং বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আগে সুস্থতা পরে রাজনীতি করা না করা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই, আবারও বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘তবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে তার ভাই যে আবেদনটা করেছেন, সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমাদের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। জনগণের কাছে যে দায়বদ্ধতা আছে সে দায়বদ্ধতা থেকে সংবিধান অনুযায়ীই আমরা একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংবিধানের এক চুলও বাইরে আমরা যাব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেট আছে বলেই আমরা সরকার চালাচ্ছি। মানুষ যদি ম্যান্ডেট না দিত তাহলে আমরা ২০১৪ সালে এবং পরে ২০১৮ সালে সরকার চালাতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে সবাই আসুক, কিন্তু কে আসবে কে আসবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’
‘রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশের কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়মুক্তি দিতে চায় না।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। এই অঞ্চলে মাদক পাচার ও উগ্রবাদের ঝুঁকিও বাড়ছে। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাচারও বাড়ছে। তবে যেভাবেই হোক আমরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে চাই।’
করোনাভাইরাসের টিকার চতুর্থ ডোজ নিতে গিয়ে দেখি কোনো ভিড় নেই। আমি ডেস্কের সামনে টিকা কার্ড দিতেই নার্স একটি ট্যাব দিয়ে স্ক্যান করে ‘ফাইজার ফোর্থ ডোজ’ সংবলিত একটা সিল মেরে দিলেন। তার বাম পাশের রুম দেখিয়ে বললেন, ওই দিকে যান। গিয়ে দেখি আমার সামনে মাত্র দুজন লোক। একজন হাতে তুলা দিয়ে টিকার স্থান ধরে রেখেছেন। আরেকজন টিকা নেওয়ার জন্য কেবলই নির্দিষ্ট চেয়ারে গিয়ে বসলেন। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি।
অথচ প্রথম যেদিন করোনাভাইরাসের টিকা নিতে এসেছিলাম। সেদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। শত শত মানুষ এসেছিলেন টিকা নিতে। কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ সিরিয়াল দিচ্ছিলেন, কেউবা ডেস্কের সামনে তথ্য জেনে নিচ্ছিলেন। মাইকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল শুধু আজকের তারিখের যারা মেসেজ পেয়েছেন শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে। প্রবাসী, নন-প্রবাসী ও বিএমইটি এই তিনটি ডেস্কের কর্মীরা মানুষদের ম্যানেজ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। দশ জনের গ্রুপ করে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছিল।
আর আজকের চিত্র দেখে আমি তো অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বেজমেন্টে গাড়ির গ্যারেজে টিকা দেওয়া হচ্ছে দেখে। অবশ্য প্রথমে গিয়ে ভড়কে গিয়েছিলাম। চতুর্থ ডোজ নিতে এত মানুষ এসেছেন? এরপর জানলাম তারা হাসপাতালের ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়াল দিচ্ছেন।
দ্বিতীয়-তৃতীয় ডোজ নিতেও এই হাসপাতালের নিচতলা-দোতলায় সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। ভেতরে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির তরুণ-তরুণীরা হেল্প করছিলেন। একজন তরুণ বারবার বলছিলেন, টিকা নেওয়ার স্থানে সাবান-তেল-লোশন লাগাবেন না, ঘষামাজা করবেন না। ব্যথা কিংবা জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাবেন। আর আজ শুধু কয়েকজন নার্স বসে আছেন।
করোনা মহামারীর আতঙ্ক কমে গেলেও সংক্রমণ থেমে নেই। সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কভিড-১৯ টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। সারা দেশের স্থায়ী টিকাকেন্দ্রগুলোতে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ডোজ নেওয়ার চার মাস পর নেওয়া যাবে চতুর্থ ডোজ। এই ডোজ অ্যান্টিবডির ঘনত্ব এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করে।
গবেষণায় এখন পর্যন্ত চতুর্থ ডোজের ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত গুরুতর প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বরং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন রোগীদের মধ্যে তিনটি ডোজের পর অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া কম বা অপর্যাপ্ত পরিমাণে দেখায়, যা কভিড প্রতিরোধে অকার্যকর। তাই শনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পেতে তাদের চতুর্থ ডোজ প্রয়োজন। প্রথম ডোজ নিতে এসে কুর্মিটোলা হাসপাতালের ভিড় দেখে ভালোই লেগেছিল; মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ ডোজে ভিড় না দেখে মনে হচ্ছে এই ডোজটাকে অবহেলা করা হচ্ছে। আজ কারোরই মুখে মাস্ক দেখিনি। অথচ প্রথম দিকে টিকা নিতে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেই ডাবল মাস্ক পরে এসেছিলেন। কেউ কেউ তো মাস্কের ওপরে ফেসশিল্ডও পরেছিলেন।
ওই সময় একজন ইন্ডিয়ানকে দেখেছিলাম। তিনি কোথায় দাঁড়াবেন, কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। হাতে টিকা রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে পায়চারি করছিলেন। মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের একজন এগিয়ে এসে তাকে সোজা নিয়ে গেলেন ভেতরে। মিনিট পাঁচেক পর তিনি বের হলেন; মুখে অমলিন হাসি।
টিকা নিতে আসা এক তরুণী রেজিস্ট্রেশনের কাগজে মোবাইল নম্বর লেখেননি। তার কাছে কলমও নেই। এগিয়ে যান একজন বিজিবি সদস্য। তাকে কলম দিয়ে সাহায্য করেন। মাকে নিয়ে এসেছিলেন এক তরুণ। ভুল করে পাঁচ নম্বর দলে এসে বসেছেন। রেজিস্ট্রেশনের কাগজও জমা দেননি। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ তাকে কী করতে হবে বলে দেন। তরুণ তার মাকে নিয়ে ডেস্কের কাছে চলে যান।
প্রবাসীদের অনেকেই ছিলেন খুব টেনশনে। একবার বিএমইটি ডেস্কে যাচ্ছেন আরেকবার সিরিয়ালে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা না নিয়ে দশ জন করে সরাসরি ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। একজন বিজিবি সদস্য বারবার হ্যান্ড মাইকে বলছেন, প্রবাসীরা তার সামনে গিয়ে যেন লাইনে দাঁড়ান। এক দম্পতি ভুল করে প্রবাসীদের সিরিয়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ তাকে বুঝিয়ে জেনারেল ডেস্কে পাঠান। সেখানে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা দেন। তার সিরিয়াল পরে ৮ নম্বর দলে।
সেবার ভিড়ের কারণে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল ঘণ্টাখানেক। এত এত মানুষ, এরপরও কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখিনি। ভিড়-ভাট্টা ঠেলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই টিকা নিচ্ছিলেন। এবার পাঁচ মিনিটের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয়নি। ডেস্কের সামনে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ লেখা থাকলেও সেখানে কোনো ভিড় নেই। মানুষ টিকা নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে নাকি অবহেলা করছে?
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।