
২০২২ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসছিল, ঠিক তখনই রশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। আর এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সব অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয়। করোনার ক্ষতির মুখ থেকে দেশগুলো যখন পুনরুদ্ধারে ফিরে আসছিল তখন এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এর ফলে জ¦ালানি তেল, এলএনজি থেকে শুরু করে সব ধরনের কাঁচামালের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। বিশে্বর দেশে দেশে তৈরি হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি। উচ্চমূল্যে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সংকট মেটাতে নানা সংস্কারের শর্ত মেনে ঋণ চেয়েও পাচ্ছে না অনেক দেশ।
যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এই এক বছরে অনেক দেশই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিপদের মধ্যে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দেশ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিসর। আর বাংলাদেশে ওএমএসের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। যদিও দীর্ঘ আলোচনা ও বিভিন্ন সংস্কারের শর্তে বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে। কিন্তু এই ঋণের শর্তের কারণে সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিদেশি মুদ্রা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে তা আরও কয়েক বছর চলবে। প্রাক-মহামারী পর্যায়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে প্রবৃদ্ধি ছিল সে অবস্থায় ফিরে আসতে অন্তত আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এক পূর্বাভাস জানিয়েছে।
২০২৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। মহামারীর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কম। চলতি অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি প্রাক-মহামারী আমলের নিচেই থাকবে বলে আইএমএফ পূর্বাভাসে জানিয়েছে। এরপর থেকেই আবার তা বাড়তে শুরু করবে।
তার আগ পর্যন্ত রপ্তানি আয়, ভোগ ব্যয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখতে পাবে বাংলাদেশ। আগামীতে সরকারের ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। বিদেশি মুদ্রা সংকটের কারণে ২০২৩ সালে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে আইএমএফ। মূল্যস্ফীতির চাপও এ সময়টাতে আরও বাড়বে। তবে আগামী বছর থেকে মূল্যস্ফীতির চাপ ধীরে ধীরে কমে আসবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। তবে আগে থেকেই বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে সমস্যা, মুদ্রা পাচার ও দুর্নীতি ব্যাপকভাবে থাকার কারণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। এই মুহূর্তে যদি আমাদের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই ব্যাংকিং খাতের সংকট দূর করতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রা পাচার ও দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে।
আগামীতে বাংলাদেশের সংকট প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে আর বাংলাদেশ নীতি পরিবর্তন না করলে টাকার আরও অবমূল্যায়ন হবে। রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না এবং পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যুদ্ধের প্রভাবে সব পণ্যের দাম বাড়লেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দফায় দফায় সুদ হার বাড়াতে থাকলে সারা বিশে^ অন্যান্য সব মুদ্রার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হতে থাকে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র সুবিধা পেলেও বাংলাদেশের মতো দেশ দ্বিমুখী ক্ষতির মুখে পড়ে। একদিকে আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন এই দুই কারণে উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। ফলে মানুষকে বেশি দরে পণ্য কিনতে হচ্ছে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্প।
টাকার অবমূল্যায়ন : বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা, যা গতকাল ১০৫ টাকা ৪১ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। ফলে এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়, রেকর্ড প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়ে দেশ। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের প্রথম কিস্তির ঋণ পাওয়ার পর গতকাল তা ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়নে নেমেছে।
থাকবে মূল্যস্ফীতির খড়গ : আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে পুরো বিশ্ব। ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতেই বাংলাদেশের মানুষের মাথাব্যথার কারণ ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আইএমএফ তাদের পরিসংখ্যানে পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে বৈ কমবে না। সংস্থাটি বলছে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকবে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে। তবে এ মূল্যস্ফীতি পরের বছর থেকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামবে এবং পরের বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে কমে ২০২৭ সালে তা সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
অসহনীয় নিত্যপণ্যের মূল্য : খোদ সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবেই গত এক বছরে শুধু আটার দামই বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এ সময়ে গরিবের অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। আদা, রসুন, শুকনা মরিচসহ বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ৪২ শতাংশ, গরুর মাংসের দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ডিমের দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। সব ধরনের শুল্ক ছাড়ের পরও সয়াবিনের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাড়বে সরকারের ঋণের বোঝা : গত বছরের মার্চে বিদেশি ঋণ ছিল ৬৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসে দাঁড়ায় ৬৯ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভের সংকট ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ চাইলেও কাক্সিক্ষত পরিমাণে পায়নি। এ কারণে নানামুখী সংস্কারের শর্ত মাথায় নিয়ে সরকারকে আইএমএফের দারস্থ হতে হয়েছে। পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়ায় এক বছরে বিদেশি ঋণের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। অবশ্য স্থানীয়ভাবে সরকারের ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সরকারের ঋণ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এক বছরে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণের বোঝা আরও বাড়বে বলে মনে করছে আইএমএফ। আইএমএফ বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল মোট জিডিপির ৩২ শতাংশ, যার মধ্যে বিদেশি ঋণ ছিল ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণ গিয়ে ঠেকবে ৪২ দশমিক ১ শতাংশে, যেখানে বিদেশি ঋণই থাকবে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৭ সালে জিডিপির তুলনায় সরকারের ঋণ হবে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ।
ভোগ ব্যয় : ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ নাগাদ বেসরকারি খাতে ভোক্তা ব্যয় ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। সেটির প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন সরকারি খাতে ভোগ ব্যয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, কিন্তু ২০২৩ অর্থবছর শেষে ভোগ ব্যয় তো ইতিবাচক থাকবেই না বরং ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। জানা গেছে, সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের উদ্যোগের কারণেই সরকারি খাতের ভোগ ব্যয় ঋণাত্মক সূচকে গিয়ে ঠেকবে। সরকারের ভোগ ব্যয় ২০২৬ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকবে।
আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কা : ইতিমধ্যেই কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি বছরের সামনের দিনগুলোতে রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে। ২০২২ শেষে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৩ দশমিক ২ শতাংশ। আইএমএফের পূর্বাভাসে ২০২৩ সালে রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমবে। সংস্থাটির দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৭ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৩-এ গিয়ে ঠেকবে। গত অর্থবছর শেষে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২৩ অর্থবছর শেষে তা ২২ দশমিক ৬ শতাংশ কমবে বলে মনে করছে আইএমএফ। অবশ্য চলতি অর্থবছরে ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে না পারায় বাণিজ্য ঘাটতিও কমে আসবে। এছাড়া বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত প্রবাসী আয়ে চলতি অর্থবছর শেষে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কাজ কারিকুলাম প্রণয়ন। এ জন্য তাদের নানা ধরনের গবেষণা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করার কথা। মূলত প্রতিটি বই নির্ভুলভাবে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরির দায়িত্ব তাদের। সে লক্ষ্যে সরকার এই প্রতিষ্ঠান করলেও এখন সেখান থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে। কারিকুলামে মন না দিয়ে তারা কোটি কোটি বই ছাপায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে রয়্যালটি বাবদ তারাও বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। ফলে ব্যাংকে টাকার পাহাড় আর বিপুল সম্পদের মালিক হলেও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ভুলে ভরা বই।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা, সোনালী ও অগ্রণীতে এনসিটিবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এফডিআর করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৬ বছর পার হয়েছে। এই সময়েও শতকোটি টাকা আয় হয়েছে। করোনাকালে ২০২০ সালে সরকার এনসিটিবি থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এখন আবার উদ্বৃত্ত টাকার ২৫ শতাংশ রেখে বাকিটা সরকারি ফান্ডে জমা দিতে হচ্ছে। এজন্যই তারা তড়িঘড়ি করে ওয়ারীতে তাদেরই জমিতে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া দরপত্র, কারিকুলাম তৈরি, বিভিন্ন ধরনের সম্মানী, নানা ভাতা, বই ছাপার কাজ তদারকিসহ নানা কাজে ইচ্ছেমতো ব্যয় হচ্ছে। ফলে এফডিআরের পরিমাণ আর বাড়েনি, বরং অনেক কমে গেছে।
জানা যায়, বিপুল অঙ্কের টাকার বাইরেও মতিঝিলে ১৮ কাঠা জমিতে এনসিটিবির নিজস্ব অফিস, ওয়ারীতে ২ বিঘা জমিতে কোয়ার্টার রয়েছে। তেজগাঁওয়ে পৌনে ২ বিঘা জমিতে একটি গুদাম আছে। আর টঙ্গীতে ১৫ বিঘা জমির কিছু অংশে আরেকটি গুদাম ও কিছু অংশ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ে আছে। সবমিলিয়ে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় আমাদের এফডিআর করা টাকা থাকলেও এখন তেমন নেই। উদ্বৃত্ত টাকা সরকার তার কোষাগারে জমা নিচ্ছে। গত কয়েক বছর বই ছাপাতে গিয়ে সরকারি বরাদ্দের ঘাটতি আমাদের ফান্ড থেকে মেটাতে হয়েছে। যার পরিমাণ অনেক। এ ছাড়া কর্মচারী কল্যাণ ও প্রভিডেন্ট ফান্ডেও টাকা রাখতে হয়। ফলে এখন ফান্ডে ১৫০-২০০ কোটি টাকার বেশি নেই।’
জানা যায়, এনসিটিবির বড় বড় গুদাম থাকলেও তা এখন তেমনভাবে কাজে আসছে না। কারণ এখন মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বইগুলো সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যায়। এ ছাড়া আগে এনসিটিবি কাগজ কিনে মুদ্রাকরদের কাছে সরবরাহ করলেও গত কয়েক বছর ধরে তারা কাগজ কিনছে না। ফলে গুদামগুলোও অনেকটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিটিবির কর্মকর্তারা সাধারণত শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। আর কর্মচারীরা নিজস্ব। এরপরও সরকারের অর্থে তৈরি করা বই থেকে তারা রয়্যালিটি নেন। বইপ্রতি তাদের রয়্যালটি ২ টাকা ৮ পয়সা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরে প্রতি বছর ৩৫ কোটি বই ও ম্যানুয়াল ছাপা হয়। ভ্যাট বাবদ ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হয় সরকারকে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের বই থেকে কমপক্ষে সাড়ে ১১ শতাংশ রয়্যালিটি পান তারা। সেখান থেকেও ভ্যাট বাদ দিয়ে আয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু বছরে তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকার মতো। ফলে বছরে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
নাম প্রকাশ না করে একজন মুদ্রাকর বলেন, ‘সরকারি টাকা থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের রয়্যালিটি কোন যুক্তিতে নেয় তা বোধগম্য নয়। তারা যে রয়্যালিটি পায় তা সব মুদ্রাকর মিলেও লাভ করতে পারে না। তাদের প্রতি বছর যে খরচ সে টাকা আয় করলেই তো হয়। মূলত বেশি টাকা আয় করতে পারলে নানাভাবে বেশি টাকা খরচ করা যায়, সে সুযোগটিই তারা নিচ্ছে। তারাই এখন বড় ঠিকাদার হয়ে উঠছে।’
জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে তিনটি উৎসব ভাতা (বোনাস) পেলেও এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান ৮টি। দুই ঈদে দুটি ও বৈশাখী ভাতার পাশাপাশি বছরে তারা আরও ৫টি ভাতা পান। এই নিয়ম তারা নিজেরাই করে নিয়েছেন। মূলত ৪টি পর্যায়ের বইয়ের জন্য চারটি এবং বইয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর তারা আরও একটি বোনাস নেন। অর্থাৎ বেতনের বাইরেও প্রায় প্রতি দেড় মাসে একটি করে বোনাস পান। এ ছাড়া মার্চ-এপ্রিলের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র, মূল্যায়ন, কারিকুলাম তৈরি ও বই ছাপার কাজ থাকে। সেখানেও প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেন। ফলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-বোনাসের বাইরে নানা ধরনের সম্মানী পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া শত শত কোটি টাকার এফডিআর এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে হস্তান্তর হলেও অলিখিতভাবে বড় অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, এনসিটিবি মূলত বিশেষজ্ঞদের কাজ করার জায়গা। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেও যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন, তাদেরই এখানে প্রেষণে পাঠানোর কথা। কিন্তু এখন যার তদবির যত বেশি, সে-ই এনসিটিবিতে আগে পদায়ন পান। আবার কিছু কর্মকর্তা বছরের পর বছর এনসিটিবিতে প্রেষণে কাজ করছেন। অনেকেরই পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম তৈরি, রচনা, মুদ্রণ বিষয়ের মতো টেকনিক্যাল কাজের কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। ফলে নির্ভুল পাঠ্যবই মুদ্রণের বিষয়টি বারবারই হোঁচট খাচ্ছে। এমনকি এ বছর ভুল আর অসংগতির কারণে দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আরও তিনটি বইতে বড় ধরনের সংশোধনের কাজ চলছে।
নাম প্রকাশ না করে এনসিটিবির সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং যদি যথাযথভাবে হতো, তাহলে হয়তো অনেক ভুলই এড়ানো যেত। এনসিটিবির পূর্বাচলে যে ২৫ বিঘা জমি আছে, সেখানে সহজেই তারা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ করতে পারে। তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকাও আছে। তাহলে তারা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই যেকোনো গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা সহজেই চালাতে পারবে। কিন্তু সে ব্যাপারে তাদের তেমন উদ্যোগ নেই।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যত নির্ভুল বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, সে চেষ্টা আমাদের সব সময়ের জন্য থাকে। আমরা পূর্বাচলে ২৫ বিঘা জমি নিয়েছি মূলত ল্যাবরেটরি স্কুল করার জন্য। ওই স্কুলে আমরা পাঠ্যক্রম নিয়ে গবেষণা করব। আমাদের পরিকল্পনা আছে, এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের যুবসমাজকে কৃষিকাজে আরও সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেত। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নেই। সে লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। করোনাকালে যখন ধান কাটতে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না আমি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সব ছেলেমেয়েকে নির্দেশ দিলাম... তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে। তারা কিন্তু ধান কেটেছে।’
কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কৃষকদের সুবিধার জন্য ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছেন। পাকিস্তানের আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করেন। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ করা শুরু করেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনের গুরুত্বকে বেশি প্রাধান্য দেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না, যদি চাউল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে’। আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনার খাদ্য বাংলাদেশের প্রবেশ হয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, এটাকে আইন করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন তখনকার মানুষের যতটুকু চাহিদা মেটানো তার ব্যবস্থা তিনি করতে পেরেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়। ন্যায্য মুজরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাজেই আমরা সেসব জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল, কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমাদের বিপক্ষে ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি সারা জীবন ভিক্ষা চেয়ে চলবে আর বিদেশের ওপর নির্ভর করে চলবে? কেন চলব আমরা। স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনো সম্পদ নেই, রিজার্ভে টাকা নেই, কারেন্সি নোট নেই, সবকিছু বিধ্বস্ত, আপনি কী দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? তিনি একটা কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, এই আমি মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি ক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সবসময়ই মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। আমরা কৃষিনির্ভর দেশ, আমরা কৃষির ওপরে কৃষির গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ব্রি’র গৌরব ও সাফল্যের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পায়রা ও বেলুন ওড়ান। তিনি বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এর আগে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ও কৃষির বিভিন্ন ব্রিডিং প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ ম-ল, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, ধান ও কৃষিবিজ্ঞানীসহ কৃষিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য রাখছেন সে বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘এটি সরকারের একটি ফাঁদ। বিদেশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর চাপ ও দেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে চাপে সরকার যখন নাজেহাল তখন এসব কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা। তারা দলের মধ্যে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছেন। তাদের এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বরং বিএনপি রাজপথে যে যুগপৎ আন্দোলন করছে তা জোরদার করা হবে।’
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন। তাই আইনমন্ত্রী কিংবা তথ্যমন্ত্রী কী বলছেন, না বলছেন তা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের সময় নেই। আমরা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত আছি। স্থায়ী কমিটির সভায় আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনের যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
গত রবিবার ঢাকায় জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জেএটিআই) আয়োজিত নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হঠাৎ করে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না’ তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবেএ রকম কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদনের মধ্যে ছিল না।’
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।’ তখন শেখ সেলিমের এই বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। তার বাইরেও তিনি দেশের একজন নাগরিক। তাকে যে মামলায় সাজা দিয়েছে বিদ্যমান আইনে তার জামিন প্রাপ্য। সেখানে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করে তাকে জামিন দিচ্ছে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি, পারবেন না তা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা একেক সময়ে একেক কথা বলছেন, পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকার দিশেহারা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।’ এখন আবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন।’ তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।’ তাদের নেতাদের এসব কথাবার্তায় প্রমাণ হয় তারা হয় বিএনপিকে বিদ্রƒপ করছে নয়তো তারা সময় নষ্ট করতে চাইছে। তাই তাদের এসব কথা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
এদিকে গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন বলে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর প্রমুখ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১০ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এই দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি হলো কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি। বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন, নাকি করবেন না তা নির্ধারণ করবেন চেয়ারপারসন নিজে ও দলের নীতিনির্ধারকরা, সরকারের কথায় নয়। বিএনপি এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কারণ তিনি অসুস্থ এবং বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আগে সুস্থতা পরে রাজনীতি করা না করা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই, আবারও বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘তবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে তার ভাই যে আবেদনটা করেছেন, সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমাদের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। জনগণের কাছে যে দায়বদ্ধতা আছে সে দায়বদ্ধতা থেকে সংবিধান অনুযায়ীই আমরা একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংবিধানের এক চুলও বাইরে আমরা যাব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেট আছে বলেই আমরা সরকার চালাচ্ছি। মানুষ যদি ম্যান্ডেট না দিত তাহলে আমরা ২০১৪ সালে এবং পরে ২০১৮ সালে সরকার চালাতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে সবাই আসুক, কিন্তু কে আসবে কে আসবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’
‘রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশের কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়মুক্তি দিতে চায় না।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। এই অঞ্চলে মাদক পাচার ও উগ্রবাদের ঝুঁকিও বাড়ছে। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাচারও বাড়ছে। তবে যেভাবেই হোক আমরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে চাই।’
সাজা স্থগিত করে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) শর্ত সাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। খবর বাসস সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।’
একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী আর ভাষার বিরুদ্ধাচারীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বিএনপি আজগুবি অভিযোগ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা গায়েবানা অভিযোগ। গত বছর আমরা আমাদের মিছিলের পাশ দিয়ে বিএনপির মিছিল যেতে দিয়েছি, তারা ফুল দেওয়ার পর আমরা ফুল দিয়েছি। এতে আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছিল। এ বছর আমরা ফুল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড নীরবে দাঁড়িয়েছিলাম, পুরোপুরি এক মিনিটও না, তারপর চলে গেছি। বিএনপি দেরিতে শুরু করেছে এবং তখন শহীদ মিনারে ভিড় হয়ে গেছে। তাদের কে কোথায় বাধা দিল!’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে একুশের চেতনা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনোটাই বিএনপি ধারণ করে না। তারা একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলে আর সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাজনীতি করে, যারা আরবি হরফে বাংলা ভাষা চালু করা, রবিঠাকুরের গান প্রচার নিষিদ্ধ করা, ভাষা ইসলামিকরণের পক্ষে ছিল।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।