
ছাত্রলীগ আর বিতর্ক একাকার। কেউ কাউকে ছাড়ছে না। সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলা, নির্যাতন ও মারধরের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। গত এক মাসেই এমন অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বারবার শাস্তি দিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না সংগঠনটির বেপরোয়া নেতাকর্মীদের।
কেন এসব ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন কারণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো আধিপত্য ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা। দ্বিতীয় কারণ হলো সাংগঠনিক জেলা কমিটি নতুন নেতৃত্ব যেন বিলুপ্ত না করে। বিলুপ্ত করলে অচল হয়ে যাবে ওই এলাকা। তাছাড়া সামনে নির্বাচন, ক্ষমতা বা আধিপত্য রয়েছে এমনটা জানান দিতে ব্যর্থ হলে কদর পাবেন না দায়িত্বশীল নেতারা। এ ছাড়াও গত কমিটির কমিটি-বাণিজ্য অন্যতম। রয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের এক ধরনের ইন্ধনও।
সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে নিয়মিত সম্মেলন না করার কারণেও এক ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন একই নেতৃত্ব থাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে একটি পক্ষ। অন্যদিকে নিয়মিত সম্মেলন হয় না বলে নেতৃত্ব না পাওয়ায় হতাশ হয়ে বিদ্যমান কমিটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে অপকর্ম জড়ায় বিপক্ষ।
ছাত্রলীগের গত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকায় কয়েকটি ইউনিটে সম্মেলন হয় না দীর্ঘদিন। ঢাকায়ও শুরু হবে নানা অপকর্ম।’ তিনি জানান, ঢাকা কলেজে কমিটি নেই প্রায় এক দশক। সেখানেও নেতৃত্বে আসতে না পারা পক্ষটি যেকোনো সময়ে ফুঁসে উঠতে পারে। অন্য কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই কারণে নেতিবাচক ঘটনা ঘটার সুযোগ আছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্র থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাস্তির ব্যবস্থা করে অপকর্ম বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ নিলেও দমানো যাচ্ছে না অপকর্ম। বরং নতুন করে অন্য কোনো সাংগঠনিক ইউনিট বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তারুণ্যের অবক্ষয়, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড না থাকা ও র্যাগিংয়ের কালচার গড়ে ওঠা এসবই কারণ। তাছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া ও এসব ঘটনার কারণ বলা যায়।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। শিগগিরই অপকর্ম থেমে যাবে। র্যাগিংবিরোধী ক্যাম্পেইন শুরু করব আগামী সপ্তাহ থেকে।’
ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে সভাপতি রেজোয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন। চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কে জড়ালে নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই তাদের অব্যাহতি দিয়ে আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারাও বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেননি। তাদের সময়ে চাঁদাবাজি, কমিটি-বাণিজ্য ও অনুপ্রবেশকারীর প্রবেশদ্বার হওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হতে থাকে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠনটি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ইতিবাচক প্রচার ম্লান হয়ে যায় ছাত্রলীগের অপকর্মে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের টনক নড়ে। এ অবস্থায় উপায়ান্তর না দেখে দ্রুত জয়-লেখককে বিদায় করতে তৎপর হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। গত ৬ ডিসেম্বর ৩০তম সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বকে সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সভাপতি করা হয় সাদ্দাম হোসাইনকে। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানকে।
সমালোচনামুক্ত ও নির্ভার থাকতে সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেও তাতে কাজ হয়নি। নির্ভারও থাকতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগের মতো খবরের শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে নতুন নেতৃত্বকে। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইনান সাধ্যমতো চেষ্টা করলেও সামাল দিতে পারছেন না। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা বিরক্ত।
১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ তা ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেত্রীকে অভিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২২ ফেব্রুয়ারি দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে ৩০ ছাত্রকে পিটুনি দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাদ যাননি দুজন শিক্ষানবিশ সংবাদকর্মীও। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ না দেওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকে ছাত্রাবাসের কক্ষে কক্ষে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাতে ছাত্রাবাসে উপস্থিত হন কলেজের অধ্যক্ষ ও আরেকজন সহযোগী অধ্যাপক। ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের সামনেই শিক্ষার্থীদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের নামে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
২১ ফেব্রুয়ারি ইডেন কলেজে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে শিক্ষার্থীর হাতের আঙুল ভাঙেন এক ছাত্রলীগ নেত্রী। ৭-৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে চার ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কৃষ্ণ রায় নামে এক ছাত্রকে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পাশাপাশি অভিযুক্তরা শিবির অ্যাখ্যা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থী। গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে। কৃষ্ণ রায়কে নির্যাতনে অভিযুক্তদের শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছেন, চারুকলার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতবিরোধের ফলে হামলার ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে তাদের সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতিকে মারধর ও হেনস্তা করে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের মামলায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের কেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না জবাব চেয়ে তাদের শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে। চিঠি পাওয়ার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ওই দুই নেতাকে এর জবাব দিতে হবে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। ওই দুই নেতা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সদস্য রাহুল রায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানজির আরাফাত ওরফে তুষার। রাহুল আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ আর তানজির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
গত ১৫ জানুয়ারি রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতিকে মারধর ও হেনস্তা করে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলায় দুদিন পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা তানজির আরাফাত। তবে এক দিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে আবার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। একই মামলার আরেক আসামি ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা রাহুল রায়।
তানজির ও রাহুলের বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রাহুল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন আর তানজির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারী। তাদের মধ্যে রাহুলকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকার ‘ছিনতাইকারী গ্যাংয়ের প্রধান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন খোদ তানভীর হাসান।
কাভার্ড ভ্যান আটকে টাকা ছিনতাই ও চালককে মারধরের অভিযোগে করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীসহ তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মসজিদের সামনে ছিনতাইয়ের ওই ঘটনা ঘটে। টহলরত পুলিশ ওই তিন ছাত্রকে হাতেনাতে আটক করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভাসমান দোকানি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, গ্রেপ্তার নাভিদ ওরফে অননের নেতৃত্বে কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় একটি ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপ ও উপগ্রুপ রয়েছে। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটছে প্রায়ই। সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সংগঠনের দুটি পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি।
ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্ব থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব অঘটনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণের কথা বলা যাবে না। যেখানেই যে ঘটনা ঘটবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যবস্থা নেবেন এবং নিচ্ছেন। শিগগিরই এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার অবসান ঘটবে।’
দ্বিতীয় বছরে গড়াল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গতকাল শুক্রবার যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে সবাইকে পরাজিত করে জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার পশ্চিমা মিত্ররাও রাশিয়ার ওপর নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পাশাপাশি ইউক্রেনকে আরও সামরিক ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার মিত্র চীন যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হিসেবে ১২ দফা প্রস্তাবের একটি নথি প্রকাশ করেছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। গত বৃহস্পতিবারও দেশটি ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আনা নিন্দা প্রস্তাবনায় ভোটদানে বিরত থেকেছে।
জয়ের জন্য আমরা সবকিছু করব : বিবিসি বলছে, গতকাল যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে জেলেনস্কি এক ভিডিওতে দেশের জনগণের কাছে সবাইকে পরাজিত করার বার্তা দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, আমরা শক্তিশালী। আমরা যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত। আমরা প্রত্যেককে পরাজিত করব।
এক বছর আগে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর স্মরণে জেলেনস্কি বলেন, এভাবেই ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি শুরু হয়েছিল। সেটি ছিল আমাদের জীবনের দীর্ঘতম দিন। আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন দিন। আমরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি এবং তারপর থেকে ঘুমাইনি।
গতকাল জেলেনস্কির এবারের ভাষণটি ছিল ১৫ মিনিটের। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ইউক্রেনের জনগণের প্রশংসা করেছেন তিনি। বলেছেন, আমরা বিশাল এক আর্মিতে পরিণত হয়েছি। আমরা একটি টিম হয়েছি। এই টিমে প্রত্যেকেরই অবদান আছে।
২০২২ সালকে সহনশীলতা, সাহস, বেদনা এবং ঐক্যের বছর বলে বর্ণনা করে জেলেনস্কি বলেন, এর প্রধান উপসংহার হলো আমরা বেঁচে গেছি। আমরা পরাজিত হইনি। এ বছর জয়ের জন্য আমরা সবকিছু করব।
যুদ্ধবিরতিসহ ১২ প্রস্তাব চীনের : যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে আগ্রহী চীন। দেশটির ভাষ্য, আলোচনা ও মধ্যস্থতাই এ সংকট সমাধানের দৃশ্যত একমাত্র উপায়। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ১২ দফা প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনা ক্রমেই হ্রাস করার কথা বিস্তৃতভাবে বলা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চীনা মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব মূলত রাশিয়া গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ভাষায় শুরু করা ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ পর পেইচিং যেভাবে কথা বলেছে, তারই ধারাবাহিকতা। চীন এখন পর্যন্ত তার মিত্র রাশিয়াকে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য নিন্দা জানায়নি কিংবা প্রতিবেশী দেশে মস্কোর আক্রমণকে ‘আগ্রাসন’ অ্যাখ্যাও দেয়নি। তারা রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞারও কড়া সমালোচনা করে আসছে।
গতকাল প্রকাশিত চীনা মন্ত্রণালয়ের ওই নথিতে বলা হয়েছে, সংঘাত ও যুদ্ধে কারও লাভ নেই। সব পক্ষেরই যুক্তিসংগত ও সংযত আচরণ করা উচিত, উচিত উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আগুনে ঘি ঢালা বন্ধ করা এবং এ সংকট যেন আরও বাজে অবস্থায় না যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেদিকে নজর দেওয়া।
তবে চীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত জর্জ টলেডো বলেছেন, চীনের নথিটি মোটেও শান্তি প্রস্তাবের নয়। তিনি বলেন, ইইউ নথিটি ভালোভাবে পড়ছে, তবে সেখানে যে আগ্রাসনকারীর নাম বলা হয়নি তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। পেইচিংয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ দেওয়া ব্রিফিংয়ে টলেডো বলেছেন, জাতিসংঘ সনদের মূল্যবোধের সুরক্ষা ও সেটি ঊর্ধ্বে তুল ধরা চীনের বিশেষ দায়িত্ব।
অবশ্য একই ব্রিফিংয়ে ইউক্রেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ঝানা লেশচিনস্কি চীনের নথিটিকে ‘শুভলক্ষণ’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন পেইচিংয়ের কাছ থেকে আরও বেশি রাজনৈতিক সমর্থন চাইছে। চীন রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং মস্কোর সেনাদের ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানাবে বলেও কিয়েভ আশা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চীন এ সংঘাতে তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবেন বলে মনে করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে লেশচিনস্কি বলেন, তারা যদি নিরপেক্ষ হয়, তাহলে তারা রাশিয়া, ইউক্রেন উভয়পক্ষের সঙ্গেই কথা বলত। এখন আমরা দেখছি, চীন মূলত রাশিয়ার সঙ্গেই কথা বলছে, ইউক্রেনের সঙ্গে নয়।
যদিও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, শান্তি প্রস্তাব নিয়ে পেইচিংয়ের দেওয়া নথি নিয়ে কিছু কূটনৈতিকের সমালোচনার কোনো ভিত্তিই নেই। আর সেসব সমালোচনার লক্ষ্য হচ্ছে চীনের গায়ে কালি লাগানো। আমরা উত্তেজনা বৃদ্ধি, যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো দেশেরই জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরোধী।
নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি চীন-ভারত : ইউক্রেনে এক বছর আগে রাশিয়ার শুরু করা আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আনা নিন্দা প্রস্তাবনায় আবারও ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত, চীন, ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ৩২টি দেশ। ওই তালিকায় আছে বাংলাদেশও।
বিবিসি জানায়, প্রস্তাবনাটির পক্ষে পড়েছে ১৪১ ভোট এবং বিপক্ষে পড়েছে ৭ ভোট। রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, মালি, ইরিত্রিয়া ও নিকারাগুয়া বিপক্ষে ভোট দেয়।
ভারত আগ্রাসনের বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, শান্তিপূর্ণ সংলাপই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র পথ। ভারতের ভাষ্য, কোনো যুদ্ধই কাম্য নয় বললেও এ যুদ্ধে তারা কোনো পক্ষ অবলম্বন করতে ইচ্ছুক নয়।
নিউইয়র্কে দুদিনব্যাপী জাতিসংঘের বিশেষ বৈঠক চলার পর ভোটাভুটি হয়েছে সাধারণ সভায়। বহু আলোচনার পর জার্মানি প্রস্তাবনা পেশ করে। সেখানে বলা হয়, জাতিসংঘের চার্টার মেনে ইউক্রেনে অবিলম্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখ-তাকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় প্রস্তাবনায়। তাছাড়া ইউক্রেন থেকে অবিলম্বে নিঃশর্তে রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং বৈরিতা বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে জাতিসংঘ প্রস্তাবনায়।
এমন অজাতশত্রু মানুষ, খুব বেশি দেখা যায় না। সত্তরোর্ধ্ব এই মুক্তিযোদ্ধা, এখনো বুক ফুলিয়ে হাঁটেন। প্রাইভেট কার চালিয়ে ছুটে যান গন্তব্যে। ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর জুয়েল আইচ, শুধু জাদুশিল্পে নিজেকে আটকে রাখেননি। উপস্থাপনা, বাঁশি, চিত্রকলা, বইলেখা এমনকি কবিতা আবৃত্তিতেও তার জুড়ি মেলা ভার।
তিনি যখন কথা বলেন, আমরা তন্ময় হয়ে শুনি। তার উপস্থাপনা, একসময় ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের প্রাণ। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মানুষ তার কথা শুনতেন। যখন হাসেন, আমরা অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। এভাবে চোখ-মুখ-ঠোঁট এবং হাতের মাধ্যমে অনুভূতির প্রকাশসব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু জুয়েল আইচ, খুব স্বাভাবিকভাবেই সেসব পারেন। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তিনি বাসাতেও যে রকম, মঞ্চ-টিভিতেও একইরকম।
আপনি এত সুন্দর করে, কীভাবে কথা বলেন? এমন প্রশ্ন শুনে হো হো করে অনেকক্ষণ হাসলেন। হাসতে হাসতেই বললেন, শোনো, জীবনে অনেক সুন্দর মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছি। খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনতাম। খেয়াল করতাম, কোন ভঙ্গিতে তারা কথা বলছেন। মনে মনে ভাবতামআহা, কোনোদিন যদি আমি তাদের মতো করে বলতে পারতাম! এখন কতটুকু পারি, জানি না।
ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সাধারণ এই মানুষ, এক কন্যাসন্তানের জনক। স্ত্রী বিপাশা আইচ এবং একমাত্র কন্যা খেয়া আইচকে নিয়েই তার সংসার। উত্তরার বিশাল ফ্ল্যাটে, তিনজনের বসবাসভুলিয়ে দেয় ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা। তিনি নিয়মিত গান শোনেন। কখনো আপন খেয়ালে গেয়ে ওঠেন। কী যে দরদি কণ্ঠ তার! একজন মানুষের মধ্যে, এমন বহুমাত্রিক প্রতিভা কীভাবে থাকতে পারে? তিনি হাসেন। হো হো করে। বলেন, তুমিও পারবে। মানুষ পারে না, এমন কিছু নেই। চেষ্টা করলেই হয়। আমাদের সমস্যা হলো, চেষ্টা করি না। কিন্তু পেতে চাই! এটা কি হয়? বলো... স্ত্রী বিপাশা আইচকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। জুয়েল আইচের বাড়ি, পিরোজপুর। সেখানে যে কলেজে তিনি পড়তেন, সেই কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন বিপাশা আইচের বাবা। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হন, দরবেশ আলী খান। তারই কন্যা পাশা খসনু। যাকে আমরা জানি, বিপাশা আইচ নামে। আবার জুয়েল আইচের জুনিয়র বন্ধু ছিলেন বিপাশা আইচের বড় ভাই। থাকতেন পাশাপাশি বাসায়। সেই সুবাদে, প্রায়ই যেতেন বাসায়। সেখানেই প্রথম দেখা বিপাশা আইচকে। কিন্তু জুয়েল আইচের বাচনভঙ্গি, আচরণ ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ ছিলেন বিপাশা আইচ। সেখান থেকেই দুর্বলতা। বিষয়টি জুয়েল আইচ টের পেয়েছিলেন। একটু সাহস করেই বলেন একদিনপ্রণয়ের কথা। বিপাশা আইচ মুচকি হেসে সম্মতি জানান। ব্যস, হয়ে গেল! কিন্তু তিনি জানতেন, প্রণয়ের সময় বেশি দিতে নেই। দ্রুত শুভ পরিণয় উত্তম। হয়ে যান ‘যুগল’।
আপনারা বিয়ে করলেন, কত সালে? জুয়েল আইচ চিন্তিত হলেন। বললেন, এইতো ঠেকালে! ভুলে গেছি যে? সাবধান! তোমার বৌদি যেন, না জানে! হা হা হা। মনে পড়েছে, মনে পড়েছে১৯৮৬ সালে। তবে আমি কিন্তু অন্য কারও মতোন, নামের টাইটেল পাল্টাইনি। হা হা হা...।
তার কথাএকটা জিনিস সবসময় মনে রাখবে, ভালোবাসার মৃত্যু নেই। সেটা হারিয়ে যেতে পারে। তার মানে তো এই নয় যে, ওটার মৃত্যু হয়েছে! তাই কি? সবসময় ভালোবাসতে চাইবে, ভালোবাসবে মানুষকে। একান্তজন তো থাকলই। তার আসন আলাদা। ওটা হৃদয়ের অনেক গভীরে থাকে। তুমি চাইলেও সে সাড়া দেবে, না চাইলেও।
কিন্তু জানো কিআমার না, মনে একটা কষ্ট আছে। কেউ তা বলে না। আমি ছোটবেলা থেকেই, আতশবাজির পাগল ছিলাম। স্বাধীনতার পরপর, আমি চাইছিলাম আমাদের এলাকায় আতশবাজি ওড়াতে। তখন অনেকেই না করল। কেন জান? আমাকে বলা হলো দ্যাখো, তুমি মুক্তিযুদ্ধ করেছ। তোমাদের বাড়ি, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা ঘেরাও করেছিল। যদি তোমার বাবাকে তারা পেত, তাহলে হত্যা করত। এখনো কিন্তু পাকিস্তানপন্থিরা সক্রিয়। থানায় অনেক পুলিশ আছে, যারা পাকিস্তানপন্থি। তখন তারা বলবে এটা বারুদ দিয়ে তৈরি। তখন তোমাকে কিন্তু বিস্ফোরক আইনে, গ্রেপ্তার করবে। আমার কাছে, তাদের যুক্তিটা যৌক্তিক মনে হলো। এখনো আতশবাজিতে আমার প্রচ- আগ্রহ। আমি নিজস্ব কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে ওটা তৈরি করেছিলাম। সেটা আকাশে অনেকক্ষণ থাকত। ১-২ সেকেন্ড নয়; প্রায় তিন মিনিট থেকে, হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বহুদূর গিয়ে রং পাল্টাতে পাল্টাতে মিলিয়ে যেত। এখনো পারব। কিন্তু সাহস করি না। বেশ রিস্কি। জীবনে আনন্দ পাওয়া যায়, এমন কিছু বাদ রাখিনি। সব, সব করেছি। এ জন্য, জীবনের কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা।
চিরতরুণ এই মানুষটি, চমৎকার আঁকেন। রং-তুলির ব্যবহার কীভাবে করতে হয়, তাও জানেন। শিল্পকলার এত আঙ্গিনায় তার পথচলা যে, নিজেই ভুলে যান কখন কী করা মঙ্গলকর। তিনি মনে করেন, মানুষের চিন্তার মধ্যে যদি কোনো দূষণ না থাকেতাহলে মানুষ যা করবে, তাই-ই সুন্দর হতে বাধ্য।
চিরতরুণ জুয়েল আইচ সবজি, ফলমূল খেতে ভালোবাসেন। বলেন, আমি মাছ-মাংস খাই, তবে কম। কষ্ট হয়। কেন হয়, জানো? যখন খেতে বসি, তখন ওদের কথা মনে হয়। মুখের স্বাদ চলে যায়। অনেক চেষ্টা করেছি, পারি না। এই সমস্যাটা বেশি হয়, বিদেশে গেলে। ওখানে তো, আমাদের মতন সবকিছু সহজলভ্য না। তাই না?
জীবনের সমাপ্তি নিয়ে তেমন ক্লান্ত নন জুয়েল আইচ। বলেন, জীবন চলবে জীবনের মতন। তাকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কীভাবে চালাতে হয়তা নির্ভর করে প্রত্যেক মানুষের ওপর। সমস্ত প্রাণীর যেমন মৃত্যু আছে, মানুষেরও আছে। এটা নিয়ে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। জীবনে কোনোকিছুই সিরিয়াস করতে নেই। সব স্বাভাবিকভাবে নেওয়াই ভালো। যা হওয়ার, তাকে তো আটকানো যাবে না। সমাধান যেহেতু আমার হাতে নেই, তাই না? পৃথিবীতে এসেছি, একমসয় চলে যাব। যদি পারি, রেখে যাব সুন্দর কিছু। জান তো, সুন্দরের মৃত্যু নেই। এই সুন্দরই, ভালোবাসা।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার বিচারিক আদালত হয়ে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হতে লেগেছে ৮ বছর। তবে আপিল বিভাগে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে দেশের ফৌজদারি মামলার ইতিহাসের সর্বাধিক আসামির এ মামলা।
একই ঘটনায় বিচারিক আদালতে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটিও। আড়াইশোর বেশি সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন ইতিমধ্যে। হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ২৭৮ জনও বিস্ফোরক মামলার আসামি।
হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে আসামিদের পক্ষে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা হলে চলতি বছরেই শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। চলতি বছরেই বিস্ফোরক মামলার নিষ্পত্তির কথাও জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, ১ হাজার ৩০০-এর বেশি সাক্ষীর এ মামলায় এখন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। ১৪ বছর আগে সংঘটিত হত্যকান্ডে বিডিআরের (এখন বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুই দিন পর রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।
সারসংক্ষেপ পেলেই হত্যা মামলায় শুনানি
পিলখানা হত্যাকান্ডে আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- অনুমোদন) ও আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্টে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।
২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয় ১৮৫ জনের। যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডিত ২৮৩ জন খালাস পান। তিন বিচারপতির সই করা ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।
উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড পাওয়া অন্তত ২১০ আসামির পক্ষে আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন তারা। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে ২৬টি আপিল, বিচারিক আদালতে খালাসের পর হাইকোর্টে যাদের সাজা হয়েছে, তাদের পক্ষে ২৯টি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে ২৬টি আপিল করা হয়েছে।’
অন্যদিকে হাইকোর্টে অপর্যাপ্ত দন্ড বা খালাসপ্রাপ্ত ৮৩ আসামির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ২০টির বেশি আপিল হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আপিল করলেও সারসংক্ষেপ দাখিল না হওয়ায় শুনানি শুরু করা যাচ্ছে না।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন গত বুধবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাজার বিরুদ্ধে ৩৩ জন আপিল করলেও সারসংক্ষেপ জমা দেননি। এ কারণে মামলাটির শুনানি হচ্ছে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘শুনানি এ বছরই শুরু হবে কি না, তা আদালতের ওপর নির্ভর করে। আদালতই তারিখ ঠিক করবে। গত বছর শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পর্যাপ্ত বিচারক ছিল না। এখন ৮ জন আছে। আশা করি শুনানি শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘আর্থিক কারণে কেউ যদি আপিল করতে না পারে, তাহলে তার পক্ষে জেল-আপিল হবে। তখন রাষ্ট্র তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ করবে।’
অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার আগে আপিল বিভাগ থেকে নোটিস ইস্যু হয়। আমরা এখনো নোটিস পাইনি। শুনেছি, দেশের বিভিন্ন এলাকায় আসামিদের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কয়েকজন যোগাযোগও করেছেন। যেহেতু অবগত হয়েছি, আগামী এক মাসের মধ্যে আবেদনকারীদের পক্ষে সারসংক্ষেপ জমা দেব।’
তিনি বলেন, ‘আপিলের খরচ অনেক বেশি। অনেক আসামি আপিল করতে পারেনি। তবে, শুধু আবেদনের মাধ্যমে আপিল যেন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়, সে জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। জেল-আপিল করতে হলে জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করতে হবে। আমার জানামতে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামির পক্ষে জেল-আপিল হয়নি।’
বিস্ফোরক মামলার বিচার চলছে ধীরগতিতে ৮৩৪ আসামির এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫৭ জনকে। ২০১০ সালের ২৭ জুন অভিযোগ গঠন হয়। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান। মামলাটির বিচারকাজ চলছে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৭৮ জন আসামি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছিলেন। তারা বিস্ফোরক আইনের মামলায়ও আসামি। কিন্তু এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় হত্যা মামলায় যারা খালাস পেয়েছেন, তারাও মুক্তি পাচ্ছেন না, জামিনও হচ্ছে না।’
বিস্ফোরক মামলার আসামিদের অন্যতম আইনজীবী আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ হত্যা মামলা দ্রুত শেষ করেছে। আর এই মামলা চলছে শ্লথগতিতে। ১০ বছর বা অন্য মেয়াদে কারাদন্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামির সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এই মামলার কারণে তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। তারা দোষী না নির্দোষ তা-ও জানতে পারছেন না। এর অর্থ হলো হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামিরা যাতে বেরোতে না পারে, সে জন্যই এই মামলায় ধীরগতি।’
বিস্ফোরক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। মামলাটি ভালোভাবে পরিচালনা করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এত বেশিসংখ্যক সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে এ বছরেই বিচার নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে দেশটির জোহানেসবার্গ থেকে কেপটাউনে যাওয়ার পথে বাফেলো এলাকায় মালবোঝাই লরির সঙ্গে একটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়।
এদিকে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নিহতরা হলেন ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৩৮), দাগনভূঞা উপজেলার দক্ষিণ নেয়াজপুর গ্রামের রাজু আহমেদ (৩৪), একই উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মমারিজপুর গ্রামের মো. মোস্তফা (৪০), সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর গ্রামের আবুল হোসেন (৪৫) ও তার ছেলে নাদিম হোসেন (১০)।
গুরুতর আহতরা হলেন বাংলাদেশগামী যাত্রী আনিসুল হক মিলন (৩৮) ও নাহিদ আহমেদ (৩৫)। আনিসুলের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞায় এবং নাহিদের বাড়ি গোপালগঞ্জে।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া দুজন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন এবং একজন আহত হয়েছেন বলে জানান। ফেনী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন একজন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ হোসেন জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার মজলিশপুর গ্রামে দুজন মারা গেছেন তিনি জেনেছেন।
নিহত ইসমাইল হোসেনের বাবা শরীয়ত উল্লাহ বলেন, আগামী দুই মাস পর ছেলের দেশে এসে বিয়ে করার কথা। সে ১১ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকে। ছেলেকে হারিয়েছি তবে লাশটি দ্রুত ফেরত চাই।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী শওকত বিন আশরাফ বলেন, গতকাল সকাল ৯টার দিকে আনিসুল হক নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার পথে কেপটাউনের বাফেলো নামক জায়গায় মালবোঝাই এক লরির সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়। আহত হয় বাংলাদেশগামী যাত্রী আনিসুল হকসহ অন্য বাংলাদেশি।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. তারিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খোঁজখবর রাখছেন।
ওমরাহ করতে গিয়ে সড়কে ২ জন নিহত : পবিত্র ওমরাহ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা-মদিনা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধারচর পূর্বপাড়া গ্রামের আবদুল মালেক মেম্বার (৭৪) ও তার ভাগিনা শাকিল আহমেদের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (২০)।
আর আহতরা হলেন মালেক মেম্বারের ছেলে জেদ্দা বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা শাখার পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, তার স্ত্রী, মেয়ে, ভাগিনা শাকিল আহমেদ ও শ্যালক। তারা বর্তমানে মদিনার স্থানীয় ওয়াদি ফারাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাধারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদ আহমেদ জানান, মালেক মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। গত বুধবার তিনি বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে ছেলে তার গাড়িতে করে পরিবারসহ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে জেদ্দা থেকে মদিনা যাচ্ছিলেন। পরে জেদ্দা-মদিনা সড়কে তাদের গাড়ির সঙ্গে আরেকটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মালেক মেম্বার ও ভাগিনার স্ত্রী তাসলিমা মারা যান। বাকিরাও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দুজনের মরদেহ দেশে আনা হবে, নাকি ওখানেই দাফন করা হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিবারের সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে মরদেহের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদনটি নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা এবং নরসিংদী ও ফেনী প্রতিনিধির তথ্যে তৈরি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনার পেরিয়েছে ১৩ দিন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হওয়ায় সেদিনের ঘটনার তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন এবং হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। তদন্তের অংশ হিসেবে এসব কমিটির সদস্যরা হলের ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছে। কিন্তু সাধারণ ছাত্রীরা তদন্ত কমিটির কাছে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মাঝে। বিশেষ করে গণরুমে অবস্থানরত ছাত্রীরা বেশি আতঙ্কে আছেন বলে জানা গেছে। কেননা ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজন এখনো হলে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটির সদস্য ও সাক্ষ্য দিতে ডাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও অভিযুক্ত ছাড়াও গণরুমের অন্য ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অবলম্বন করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হলেও আতঙ্কে অনেকেই তদন্ত কমিটিকে সব তথ্য দিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণরুমের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, এখনো হলে থাকা অভিযুক্তরা এবং তাদের সহযোগীরা বিভিন্নভাবে গণরুমের ছাত্রীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তদন্ত কমিটির কাছে কথা না বলতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। ওই দিনের ঘটনার যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বা পাশের কয়েকটি কক্ষে ছিলেন, সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। তদন্ত কমিটি ডেকে কথা বলছে, কিন্তু ভয়ে সবকিছু বলতে পারিনি। পরে আবার কোনোভাবে যদি আমার নাম সামনে চলে আসে। ওইদিন ওই কক্ষে কী কী ঘটেছে সবাই খুব ভালোভাবেই জানে। কিন্তু আমি শুধু চড়-থাপ্পড়ের শব্দ শোনার বিষয়টি ছাড়া ভয়ে আর কিছু বলার সাহস পাইনি। অন্যরা বলেছে কি না আমার জানা নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রী বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না। আমাদের যেহেতু অনেক দিন হলে থাকতে হবে তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। এ ছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর সহযোগীদের সবসময় নজরদারিতে থাকতে হচ্ছে সবার। সকাল-সন্ধ্যায় একাধিকবার তারা গণরুমে এসে ঘুরে যায়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আমরা গোপনীয়তা রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি বলা যাবে না। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য পাচ্ছি। সবকিছু পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
একই প্রশ্নের জবাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। হলের তদন্ত কমিটির কাজ শেষের দিকে।’
অভিযুক্ত ছাত্রীদের হলে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট যেহেতু শুধু দুজনকে বাইরে রাখতে বলেছেন, এ জন্য অন্যদের হলে থাকতে নিষেধ করা যায় না। তবে হলে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি নাম প্রকাশ না করেও অভিযোগ করে আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া আমাকেও কোনো ছাত্রী অভিযোগ জানালে তার নাম গোপন রেখে ব্যবস্থা নেব।’
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরীকে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার সহযোগী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, হালিমা খাতুন ঊর্মি ও ইশরাত জাহান মীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ফুলপরীকে মারধরের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। এ ঘটনার পর সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ফুলপরী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইবি শাখা ছাত্রলীগ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়াও তদন্ত করছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।