
বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আনতেই হবে সরকারকে এ অবস্থান নিয়েছে বিদেশিরা। কোন পথে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে তা নিয়ে সরকারকে বিদেশিরা সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন দেয়নি। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিও তাদের বার্তা নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি নির্বাচনের ছয় মাস আগে সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিষ্কার করতে বিদেশিদের কৌশল নিতে অনুরোধ করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সরকার যেমন বিএনপিকে বাইরে রেখে আগামী সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে পারবে না। তেমনি বিএনপিও নানা কারণে নির্বাচনের বাইরে থাকতে পারবে না। তাই সরকারকে যেমন নমনীয় অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, তেমননি বিএনপির মধ্যেও ভাবনা-চিন্তার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিদলীয় একাধিক সূত্রে দুই দলের ওপর বিদেশিদের চাপ থাকার বিষয়টি জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শক্তিগুলো সুনির্দিষ্ট করে কোনো পথ এখন পর্যন্ত বাতলে দেয়নি। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের বাইরে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারেও তারা কোনো কথা বলেনি। নির্বাচনকেন্দ্রিক উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয়েছে বিদেশিরা সেটা দেখতে চায়।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপিকে তারাও নির্বাচনে আনতে চান। তবে বিএনপির দাবির কাছে নতি স্বীকার করে নয়। এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সেই নিশ্চয়তাকে আমলে নিতে হবে বিএনপির। বিএনপির দাবি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে হলেও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। সেই ক্ষেত্রে সংবিধানের বাইরে এক চুলও সরবে না সরকার এমনটাই এখন পর্যন্ত বলে আসছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ‘সাপও মরতে চায়, আবার লাঠিও ভাঙবে না’ এ নীতি অনুসরণ করতে চায়। কিন্তু কোন পথে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাবে, তা এখনো খুঁজে পায়নি ক্ষমতাসীনরা।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে বিদেশি এ অবস্থান টের পেয়ে সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহ আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ এক ধাপ এগিয়েছে।
গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছেন। দেশের রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতাও বেশ চোখে পড়ছে। তারা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত ছাড়া প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূতরা সব দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চান বলে জানিয়েছেন।
উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে, কোনো দলের ভগ্নাংশ নির্বাচনে এলেও হবে না, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রমাণ করতে সব দলকেই আনতে হবে নির্বাচনে। তাদের এ চাওয়া কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেটাই চিন্তা করতে শুরু করেছে সরকার। সাজা স্থগিত হওয়ায় খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলেও রাজনীতি করতে পারবেন আইনমন্ত্রী নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের নেতা ও সরকারের অন্য মন্ত্রীরা উল্টো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
হঠাৎ উদয় হওয়া খালেদা ইস্যুতে আলাদা আলাদা বক্তব্য ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ একেবারেই নেতিবাচক। আর বিএনপি এখন তারেকের হাতের মুঠোয়। তার হাত থেকে বিএনপিকে বের করে আনতে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেনএমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছে রাজনৈতিক মহল। এ ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব বোঝার পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপে ফেলার জন্য খালেদা জিয়াকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো সহজ হবে বলে মনে করছেন তারা।
বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে আওয়ামী লীগের এমন একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা, গণতন্ত্র হুমকির পাশাপাশি তাদের বড় বিনিয়োগের ক্ষতিসাধন হবে। তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকা- চলমান রয়েছে। বিদেশিদের এমন অবস্থান ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা বিএনপিকেও জানিয়েছে বিদেশিরা। বাংলাদেশ সফরে আসা বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক না হলেও কূটনীতিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে উন্নয়ন সহযোগীদের এমন অবস্থানে আওয়ামী লীগের ভেতরে উদ্বেগের কথা উঠে এলেও এই মূহূর্তে পর্দার অন্তরালের থাকা বিষয় নিয়ে প্রকাশ্য কোনো বক্তব্য দিতে চান না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। উন্নয়ন সহযোগীদের অনুরোধ নিয়ে দলটির সভাপতি ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনীতিতে সব সময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে।’ তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা সংলাপ নিয়ে কোনো পরামর্শ আওয়ামী লীগকে দেয়নি। তবে তারা চায় আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, সংলাপ কখন ও কীভাবে হবে তা সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
শুধু আওয়ামী লীগের ওপরই নয়, নির্বাচনে আসতে হবে- বিদেশিদের এমন চাপ রয়েছে বিএনপির ওপরও। বিএনপির সঙ্গে কূটনীতিকদের একাধিক বৈঠকে এ চাপ দেওয়া হয়েছে। কোন পথ অনুসরণ করে তারা আসবে, সে ব্যাপারে বিএনপিকে সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ দেয়নি বিদেশিরা। তবে বিএনপি মনে করছে, সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্য তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা।
দলটি বলছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানা না হলে তারা কোনো সংলাপেও বসবেন না।
গত মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও জ্যেষ্ঠ এক নেতা মন্তব্য করেছেন, ‘সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য তাদের কাছ থেকে আরও আসবে। এসব কথার প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সংলাপ হলে কীভাবে এগোবে, তা নিয়ে অন্যদের মতো বিএনপির নেতাদেরও বড় ধরনের কৌতূহল রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এরই মধ্যে পর্দার আড়ালে সংলাপের গুঞ্জন চাউর হলেও বিএনপি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চায় না।
দলটির তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত সবাইকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, সংলাপের নামে চায়ের আসর বা আসন ভাগাভাগির মতো কোনো প্রস্তাবে সমঝোতা হবে না। কেননা, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তৎকালীন রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টাও সফল হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সংলাপ হয় গণভবনে। ফল হয়েছে উল্টো।
বিএনপির বরং নির্বাচনের ছয় মাস আগে সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিষ্কার করতে বিদেশিদের কৌশল নিতে অনুরোধ করেছে। দলটির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে থাকা বিদেশি দপ্তরগুলোতে গত বছর চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে নির্বাচনের অন্তত ৬ মাস আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিষ্কার করতে সরকার যাতে বাধ্য হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে বিএনপি।
ওই চিঠিতে বলা হয়, সরকার কি বর্তমান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন করবে, নাকি সব দলকে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়, সেটি যেন তারা পরিষ্কার করে। বিএনপি যে বিদেশি দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে তা নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে অভিযোগ করেছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘শুধু জাপানকে কেন আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহু দেশকে। এটা সত্য।’
চিঠি তৈরি ও বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে য্ক্তু বিএনপির দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, নানা বিষয়ের পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ওই চিঠিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ আরেকটি একতরফা সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে টানা ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না; বরং বিরোধী দলের ওপর মামলা, নির্যাতন, কর্মসূচিতে বাধার হার আরও বেড়েছে।
ঈদুল ফিতরের পর সংলাপ হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। তবে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি এ বিষয়ে স্পষ্ট করেনি। সমঝোতা ছাড়াই সরকার একতরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা নিলে সে ক্ষেত্রে কী হবে? বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই সরকার যত বেশি সম্ভব দলগুলোকে নানা পন্থায় নির্বাচনে আনার প্রচেষ্টা চালাবে। সেটি আমলে নিয়ে বিএনপি মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালনে মনোযোগী। মার্চ মাসের পর সমঝোতার দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আন্দোলনকে নতুন পর্যায়ে নিতে কাজ করবেন তারা। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, সেটির ওপর ভিত্তি করেই তাদের নির্বাচনী পদক্ষেপ পরিচালিত হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে সরকার ও তার দলের লোকেরা যেসব কথা বলছে, সেটা আমরা আমলেই নিচ্ছি না। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো না। আমাদের কথা একেবারেই স্পষ্ট। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সরকার সেটার ব্যবস্থা না করলে আমাদের আন্দোলন চলমান আছে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।’ বিদেশি মিশনগুলোতে বিএনপি চিঠি দিয়েছে এমনটি জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবাধিকার, হত্যা-গুম-খুনসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তাতে উল্লেখ রয়েছে।
বিদেশিদের চাপ বিএনপির ওপর নেই দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিরা বাংলাদেশের জনগণের দাবির পক্ষে কথা বলছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফেরত পেতে চায়। স্বাভাবিক জীবনযাপনের গ্যারান্টি চায়।’
বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির দায়িত্বে থাকা এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলের চিত্র চিঠির মাধ্যমে বিদেশিদের আমরা জানিয়েছি। সরকারের অপকর্ম তুলে ধরে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি।’
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মধ্য দিয়ে জেলা পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবারের এই কর্মসূচি ঘিরে বেশ কয়েকটি জায়গায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসহতায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ৪১ নেতাকর্মীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বিভিন্ন জেলায় দলের পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বিএনপির গণআন্দোলনে ভীত হয়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা, গুলি ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :
কুমিল্লায় পুলিশের টিয়ারশেল, ফাঁকা গুলি ও লাঠিপেটা : কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ বাধা দিয়ে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খাদঘর ও চান্দিনা এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতা এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল। কিন্তু ওই স্থানে পুলিশ কর্মসূচি পালনের অনুমতি না দেওয়ায় তারা চলে আসেন মহাসড়কের খাদঘর এলাকায়। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ আবারও বাধা দেয়। তখন পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বাগ্বিত-া শুরু হলে এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা এবং টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে ২০ নেতাকর্মী আহত হন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, ‘পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং গুলিবর্ষণ করে।’
তবে চান্দিনা থানার ওসি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসড়কে নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তাদের ইটপাটকেলে আমাদের দুজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
ঝালকাঠিতে সংঘর্ষ, আটক ১৬ : ঝালকাঠিতে পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য ও বিএনপির ১৪ জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় সদর থানার ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। আর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় তাদের অন্তত ৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে পুলিশের ওপরে হামলার অভিযোগে জেলা যুবদলের সদস্য সচিবসহ ১৬ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের আমতলা সড়কে পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে এসব ঘটনা ঘটে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, কর্মসূচি শেষে তারা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেনসহ ৮ নেতাকর্মী আহত হয়।
বাগেরহাটে কেন্দ্রীয় নেতাসহ গ্রেপ্তার ২৫ : বাগেরহাটে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বিএনপি’র অভিযোগ পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে অন্তত ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শেখ ওবায়দুল ইসলাম এই দাবি করেন। অন্যদিকে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এর আগে সকাল ১০টার দিকে শহরের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় জেলা বিএনপি’র কয়েকশ নেতাকর্মী জড়ো হয়ে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরে সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি আকরাম হোসেন তালিম ও সাবেক সভাপতি এম এ সালাম। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একই সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিএনপিকে আজকের কর্মসূচি স্থগিত রাখতে বলা হয়। কিন্তু বিএনপি পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পদযাত্রা বের করে। এই পদযাত্রাটি ছিল মারমুখী। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় সেখানে অভিযান চালিয়ে ২০-২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
পটুয়াখালীতে পদযাত্রায় পুলিশের ধাওয়া : পটুয়াখালীতে পদযাত্রায় ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেয় পুলিশ। সকালে কলেজ রোডে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। পদযাত্রাটি পৌরসভা মোড়ে যাওয়ার পথে পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় ৬ নেতাকর্মী আহত হওয়ার দাবি করেছে জেলা বিএনপি। সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামানের দাবি, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পদযাত্রা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এদিকে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে শোডাউন করে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির’ বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে।
নীলফামারীতে আ. লীগ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : নীলফামারীতে একই সময়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পৌর সুপার মার্কেটের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে ৫০ গজ দূরে ওই মার্কেটে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৈরি করা মঞ্চে পদযাত্রার জন্য সমবেত হয় জেলা বিএনপির একাংশের নেতৃবৃন্দ। নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার। উভয় দিক থেকে পাল্টাপাল্টি সেøাগানে উত্তেজনা সৃষ্টির এক পর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকারসহ কয়েকজন যুবক বিএনপির মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়ে সেখানে টাঙানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে চেয়ার ভাঙচুর করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফেনীতে পদযাত্রা পুলিশের বাধা : ফেনী শহরের বড় মসজিদের সামনে থেকে শুরুর পর পুলিশের বাধায় প্রায় ২০০ গজের মাথায় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়েই শেষ হয়ে যায় পদযাত্রা। পরে বড় বাজারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সংক্ষিপ্ত পদযাত্রার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। এদিকে রাজপথে ছিল যুবলীগ। সকালে পৌরসভার সামনে শান্তি সমাবেশ করে জেলা যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সমাবেশের আগে একটি মিছিল ফেনী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ : বিভিন্ন জেলায় দলের পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে অভিযোগ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিএনপির গণআন্দোলনে ভীত হয়ে দলের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা, গুলি ও গ্রেপ্তার করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জড়িয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের পন্থা অবলম্বন করেছে। এর একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত রেখে আবারও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়ে চলমান গণআন্দোলনকে দমন করা যাবে না। মানুষ এখন জেগে উঠেছে। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না ঘটিয়ে জনগণ ঘরে ফিরে যাবে না।’
প্রতিবেদনটি নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিদের তথ্যে তৈরি
‘বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না। তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তালিমপুর তেলিহাটি (টিটি) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না, যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নন। খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমান দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। খালেদা জিয়ার ছেলে যাকে নেতা বানিয়েছে, সে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না, সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে কীভাবে। যারা ওই দুই দল বড় দল বলেন তারা ভুল করেন।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা যে দলগুলো আছে, জামায়াত এরা কারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং স্বাধীনতার সুফল আজ বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে ইনশাল্লাহ।
সরকারপ্রধান বলেন, এখানে একটি কথা বলতে চাই, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল। তারা পেয়েছিল বাকি সব আসন। তাহলে এই দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে।
বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলার ৫শ’ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে। দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন তারা। ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি, বরং মানুষের অর্থকড়ি সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেনের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও স্থানীয় নেতারা।
এর আগে, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী এসে পৌঁছালে সেøাগান ও করতালির মাধ্যমে সমাবেশে আগত জনতা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে এর উত্তর দেন। কোটালীপাড়া উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে আগের নির্বাচনী জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং অপর পাঁচটি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত বিধি ভেঙে দুই শিক্ষক নেতাকে সহযোগী অধ্যাপক (গ্রেড-৪) বানাতে নানা আয়োজন করছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ম-ল আসাদ।
তারা দুজনই আবার নিয়োগসংক্রান্ত প্ল্যানিং কমিটির সদস্য। তারা নিজেরাই নিজেদের যোগ্য ঘোষণা করেছেন। আগামীকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাছাই বোর্ডের দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ কথা বলতে রাজি হননি। জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি। জনসংযোগ উপপরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধি ভেঙে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ডাকা হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা ভালো বলতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগে দুজন সহযোগী অধ্যাপক ও ইংরেজি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপকের পদ রয়েছে। গত বছরের ২২ নভেম্বর এসব পদে আবেদনের শেষ সময় ছিল।
সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্যতা চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ পিএইচডি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছরসহ কমপক্ষে সাত বছরের সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। এমফিল ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঁচ বছরসহ মোট ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একটি শর্ত শিথিলযোগ্য।
জানা গেছে, লোকপ্রশাসন বিভাগের দুটি সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে চারজন প্রার্থী আবেদন করেছেন। তাদের তিনজন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তারা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. জুবায়ের ইবনে তাহের, মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী। বেরোবির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কেউই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে আবেদনের যোগ্য নন। তবে অভ্যন্তরীণ শিক্ষক পদ আপগ্রেডেশন নীতিমালা অনুযায়ী শুধু জুবায়ের ইবনে তাহের সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদের সর্বসাকল্যে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আট বছর এক মাস নয় দিন এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর মোট চাকরিকাল আট বছর এক মাস আট দিন। তাদের কারোরই পিএইচডি বা এমফিল ডিগ্রি না থাকায় বর্তমান অভিজ্ঞতায় তারা সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্য হননি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শূন্যপদে আবেদন করা অপর প্রার্থী ড. মো. রুহুল আমিন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১২ বছরের বেশি। ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তার। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা থেকে জানা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে যে তিনজন বেরোবির তারা প্ল্যানিং কমিটিরও সদস্য। তারা আবেদনকারী চার প্রার্থীকেই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে যোগ্য মনোনীত করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় বাছাই বোর্ডের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যদের কাছে প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে।
যোগ্যতা না থাকার পরও কীভাবে প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হলো জানতে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে গতকাল রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শর্ত শিথিল করে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ব্যাপারটি জানেন ভিসি অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ। নিয়োগ নির্বিঘ্ন করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিতর্কিত শিক্ষককে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ-সদস্য হিসেবে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তিনি আবার আসাদুজ্জামান মন্ডল ও সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর এমফিল প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তাদের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
বেরোবির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, যোগ্যতা অর্জনের আগেই বিধি ভেঙে দুজন জুনিয়র শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তাদের জ্যেষ্ঠতা হারাবেন। একাডেমিক ডিগ্রি শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগের নজির বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খান দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিবপুর থানা সংলগ্ন বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তার ওপর হামলার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটখোলা মোড়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৪ ঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হারুনুর রশীদ খানের ওপর হামলাকারীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তারের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় বিক্ষোভকারীরা।
স্বজন এবং অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানকে গুলি করার পুরো মিশনটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের আরিফ সরকার নামে এক ব্যক্তি। জেলা ছাত্রলীগ নেতা মাহিন হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলার আসামি এই আরিফ স্থানীয় রাজনীতিতে এলাকার সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বটতলীকান্দী থেকে গতকাল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক সদস্যের (মেম্বার) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই দিনে দুই জনপ্রতিনিধিকে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার দুটি ঘটনায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
ছেলে তাপস খান জানান, চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান গতকাল ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে যান। নামাজ শেষে শিবপুর থানা থেকে ১০০ গজ দূরে শিবপুর বাজারের বাড়িতে আসেন। তখন তিনজন লোক মসজিদের অনুদানের ব্যাপারে কথা বলতে চান জানিয়ে তার কাছে আসেন। তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষে বাড়ির অফিস কক্ষে ঢোকার সময় পেছন থেকে তারা হারুনুর রশীদকে লক্ষ্য করে পরপর ৩টি গুলি করেন। যার সবগুলোই তার পিঠে বিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনা জানাজানি হলে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা উপজেলার কলেজ গেট মোড়ে ইটখোলা-মঠখোলা আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটখোলা মোড়ে নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নিলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রতিক্রিয়ায় ব্যস্ততম এই মহাসড়কের দুই পাশে উপজেলার বরইতলা থেকে কুন্দারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান এবং পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস ও জনভোগান্তির কথা জানালে তারা মহাসড়ক থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে চলে যায়। এরপর ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উপজেলার প্রবীণ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হারুনুর রশীদ খানকে বাড়িতে ঢুকে গুলির ঘটনায় পুরো জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, মান-অভিমান থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকবে না। চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন ভূঁইয়া বলেন, ‘হারুনুর রশীদ খান আমাদের শিবপুর আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ। তার ছায়াতলে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজনীতি করে। তাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার নীলনকশা করা হয়েছে। যারাই এই বর্বর হামলার সাথে জড়িত থাক না কেন তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিল বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক কারণে হামলা নাকি অন্য কোনো কারণে তার ওপর হামলা করা হয়েছে তা আমরা প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছি।’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম মাহবুবুল হাসান মাহবুব বলেন, ‘হামলার মদদদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের একটাই দাবি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
স্বজন ও অনুসারী নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাতে পুটিয়ার আরিফ সরকার চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানকে ফোন করে তার এলাকার মসজিদের জন্য অনুদান চান। চেয়ারম্যান সকালে লোক পাঠানোর কথা বললে আরিফ লোক পাঠান। সেই লোকরাই চেয়ারম্যানকে গুলি করেন। তবে চেয়ারম্যানের ওপর হামলা পরিকল্পনার মিশন গুছিয়ে শুক্রবার রাতেই আরিফ দেশ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি।
এই আরিফ সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের অনুসারী অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি, এমপি মোহনের লোকেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের স্বজনদেরও একই দাবি।
এদিকে গতকাল সকালে এম জহিরুল হক ভূঞা মোহন গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলেও দ্রুত ফিরে যান। হাসপাতালে আহত চেয়ারম্যানের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সহসভাপতি ডা. রউফ সরদার, মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরুসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানের ভাতিজা রাব্বি খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাকা সবাইকে চিনতে পেরেছেন। তারপর সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সন্ত্রাসীদের আটক করা হোক।’
চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীর কোনো অন্য পরিচয় থাকতে পারে না। পুটিয়ার আরিফের কোনো দলীয় পদ নেই। গত ৫ বছরেও আমার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। সে অপরাধী হলে আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। শিবপুরে হারুন খানের যেখানে নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি না।’
জেলার পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, ‘হামলার রহস্য উন্মোচনে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কী কারণে এই হামলা বা কারা হামলা করেছে সে বিষয়ে আমরা দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অতিদ্রুত তারা জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।’
এর আগে ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ উপজেলা চেয়ারম্যানের বড় ভাই রবিউল আওয়াল খান কিরণ উপজেলার যোশর ইউনিয়নের লেটাবর বাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সভা শেষে শিবপুরের বাড়িতে ফেরার পথে সিঅ্যান্ডবি ব্রিজসংলগ্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
‘এটা কী প্যান্ট পরেছ? জিন্সের প্যান্ট নেই?’
‘ঠিক আছে ভাই জিন্সের প্যান্টই পরব।’
‘চুলও তো ঠিক নাই।’
‘চুলের কী সমস্যা ভাই?’
‘এই তেল দেওয়া চুলে চলবে না। চুলের দুটো স্টাইল আছে, একটা আর্মি কাট, মানে সাইড পাতলা। আরেকটা পাংকু স্টাইল। দুটোর একটা হতে হবে।’
‘পাংকুটা থাক ভাই। আর্মিটাই ভালো।’
‘আর গেস্টরুমে বসতে হবে। নেতৃবৃন্দ কোথাও গেলে সঙ্গে যেতে হবে।’
‘যাব ভাই। নেতৃবৃন্দকে সম্মান করতে হবে। তারা তো সম্মানীয় মানুষ।’
ছাত্ররাজনীতি কিংবা ছাত্রনেতাদের নিয়ে কোথাও আলোচনা শুরু হলেই ২৫ বছর আগের দৃশ্যটা স্মৃতি থেকে হানা দেয়। নিজের চোখের সামনে ঘটা এই ছবিটাই আমার কাছে ছাত্ররাজনীতির সারাংশ। যিনি সাক্ষাৎকারটা নিচ্ছিলেন তিনি উঠতি ছাত্রনেতা। যে দিচ্ছিল সে তার হবু কর্মী এবং এই এরা মিলেই ছাত্ররাজনীতি।
ছবি বদলেছে? তাহলে কয়েক মাস আগের একটা অভিজ্ঞতা শোনাই। পরীবাগে বন্ধুর বাসা। রাতের দিকে চায়ের দোকানে বসে আছি। সামনে শ’খানেক তরুণের ভিড়। গোটা পঞ্চাশেক মোটরসাইকেল। খুব বেশি খোঁজখবর করতে হলো না। জানা গেল, ছাত্রলীগের বড় এক নেতা এখানে থাকেন। তাকে প্রটোকল দিতেই এই জমায়েত। এসব উগ্র জমায়েত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাই এখন এ দেশের নিয়ম। তবু খুব দেখার দৃশ্য বলে খেয়াল করছিলাম। হঠাৎ একটা উত্তেজনা দেখা গেল জটলায়। নেতা নেমেছেন। ভিড়ের দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি ফোন নিয়ে হেঁটে হেঁটে ভিড় ছেড়ে এগোলেন। ঠিক পেছন পেছন এগোলো মৌমাছির মতো একটা দল এবং একটা সময় ওরা নেতাকে পেছনে ফেলে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বন্ধ করে দিল রাস্তার যাতায়াত। পরের কয়েক মিনিটের দৃশ্যটা হলো, চারদিকে নেতাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জনা পঞ্চাশেক তরুণ। নেতা ফোনে কথা বলছেন। ওদিকে রাস্তা বন্ধ। হলিউড-বলিউডের সিনেমায় দাপুটে ডনদের দেখেছি। মনে হলো এটা বোধ হয় সেরকমই কোনো ছবির শ্যুটিং।
ছবি তাই একটুও বদলায়নি। ২৫-৩০ বছর আগে যা। এখনো তা। ছাত্রদল যা, ছাত্রলীগও তা। প্রথম ঘটনাটা ছাত্রদলের রাজত্বের আমলের। পরেরটা! বুঝতেই পারছেন। ইদানীংকার ঘটনা। ছাত্রলীগ না হয়ে যায় না।
ছাত্ররাজনীতির গল্প বলতে শুরু করলে দেখি উপচে বেরিয়ে আসে অনেক গল্প। মধ্য নব্বইয়ের দশকে একবার একটা হল দখল করে নিল ছাত্রদলের একটা বিদ্রোহী গ্র“প। যিনি এই দখল কার্যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার নাম ‘ডগ অমুক (নামটা উল্লেখ করা বোধ হয় উচিত নয়)।’ নামের আগে ডগ কেন? প্রতিষ্ঠিত গল্পটা হলো, তিনি একবার কাঁটাবনে পশু-পাখির দোকানে গিয়ে দেখলেন টাকা দিয়ে মানুষ কুকুর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তখন নিজে হলের সামনে থেকে একটা কুকুর ধরে নিয়ে সেটা বিক্রির চেষ্টা করলেন। দেশি বেয়াড়া শ্রেণির কুকুর তো আর বিক্রয়যোগ্য নয়। দোকানদার কিনবে না। ভাই গর্জে উঠলেন, ‘কেন নেবে না?’
‘স্যার এটা দেশি কুকুর। আমরা তো কিনি বিদেশি কুকুর।’
‘কী? শুধু বিদেশি কুকুর... তোমাদের তো দেশপ্রেম নেই। দেশদ্রোহী সব।’
এই গল্প ক্যাম্পাসে সংগত কারণেই সুপার হিট। গল্পে নানান শাখা-প্রশাখা যোগ হলো। আর তিনি হয়ে গেলেন ‘ডগ ...।’
সেই ডগ ভাইয়ের সমাপ্তিটা অবশ্য অত্যন্ত ট্র্যাজিক। দিন-রাত জেগে হল পাহারা দিতেন। কিছুদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা সংহত হয়েছে মনে করে তিনি একদিন গেলেন নিউমার্কেটে। সেই ফাঁকেই বিরোধী পক্ষ সাঁড়াশি আক্রমণে হল দখল করে নেয়। তিনি ফিরে দেখেন হল বেদখল। নিজে আর ঢুকতে পারছেন না। হলের সামনে দাঁড়িয়ে তার যে কী কান্না। একজন শিক্ষকও ছিলেন, হাউজ টিউটরই হবেন, ডগ ভাই তাকে উদ্দেশ করে আর্তনাদ করলেন, ‘স্যার আমার হল... আমার হল...।’ একেবারে আশির দশকের আলমগীর-শাবানার ছবির মতো ট্র্যাজেডি দৃশ্য।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের ছবির দৃশ্য আছে, ট্র্যাজেডি আছে। কমেডি! তা-ও আছে। একবার একজন ব্যবসায়ীকে ধরে আনা হলো। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। দেননি। গেস্ট রুমে অনেক হুমকিধমকির পরও ভদ্রলোককে নত করাতে না পেরে শেষে দোতলায় নিয়ে তাকে ওখান থেকে ফেলে দেওয়া হলো। যারা ফেলেছিল ওদের ধারণা ছিল, পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে এবার ভদ্রলোক রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু যে ঘটনা ঘটল, এর জন্য বোধ হয় কেউ প্রস্তুত ছিল না। পতিত হয়েও মানুষটির তেমন কোনো শারীরিক ক্ষতি হলো না। পায়ে সামান্য একটু চোট লেগেছিল বোধ হয়। তাই নিয়েই দিলেন দৌড়। দোতলা থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধরা হয়তো সম্ভব ছিল; কিন্তু ওরা মানুষটার প্রাণশক্তিতে এত বিস্মিত হয়েছিল যে, তাড়া করার কথা ভুলেই গিয়েছিল। ফলে সেটা হয়ে গেল হাসির গল্প। কমেডি দৃশ্য। আর সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস-হল-ছাত্ররাজনীতি আসলে সিনেমার মতোই অবিশ্বাস্য।
না, ছবি বদলায়নি। একভাবে চিন্তা করলে বদলেছে। এখন আক্রমণ-নির্যাতনের নতুন নতুন শাখা যোগ হয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা এমন ফলবান বৃক্ষ যে, তার আশেপাশে গেলেই মাথায় আঘাত পড়বে। আগে শুধু নিচে গেলে ঝামেলা হতো। এখন অতদূর যাওয়া লাগে না।
নতুন ছাত্ররা রাজনীতির কারণে আগে নির্যাতিত হতো, এখন স্রেফ নতুন হওয়ার কারণে আরেক দফা ঝামেলায় পড়ে। র্যাগিং বা নতুনদের নিয়ে খেলার ব্যাপারটা তখন বোধ হয় সেভাবে ছিল না। আরও ব্যাপার আছে। আগে, যেহেতু কোনো একপক্ষের চিরস্থায়িত্ব ছিল না; ফলে সবকিছুর মধ্যে একটা কিন্তু কাজ করত। পাঁচ বছর পর বিপদে পড়ার ভীতি। গত এক-দেড় দশকের একমুখিতায় সেই ভীতিও গেছে। ফলে ছাত্ররাজনীতির নামে নানা অপচর্চা আরও বেশি করে চলে। ও, হ্যাঁ, ছাত্রনেত্রীদের অতটা হিংস্র হওয়ার খবর শোনা যেত না। মোটামুটি ধরে নেওয়া হতো যে, ছাত্রীদের হলে রাজনীতি যেমনই থাকুক, তারা সীমা ছাড়াবে না। নারীরা কখনোই নিষ্ঠুরতার ছবি নন, রাজনীতিতে সেই ধারা কম বেশি ছিল। এখন আর নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী ভেদাভেদ নেই। একভাবে দেখলে অবশ্য ভালো। বেশ একটা সাম্য চলে এসেছে। নির্যাতন-নিপীড়নে এক কাতারে দাঁড়িয়ে প্রায় নজরুলের কবিতা, ‘যা কিছু অকল্যাণকর অর্ধেক তার করছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
ছাত্রলীগকে বাগে আনার অনেক চেষ্টা চলছে। সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শাসন করেছেন একাধিকবার। শাস্তি-শাসন এসব চললেও কাজ হচ্ছে না কোনো। মোটা দাগে বলা যায়, দলের বা সরকারের কোনো না কোনো পক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ায় কাজের কাজ কিছু হয় না। প্রথমত, যারা তাদের শক্তিকে ভাড়া করে কাজে লাগায় তাদের আর ছাত্রদের শাসন করার নৈতিক শক্তি থাকে না। ফলে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, এই সমাজে ছাত্ররাই একমাত্র সংগঠিত শক্তি। ধরুন, একজন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র কোথাও গিয়ে আক্রান্ত হলো, দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে শত শত সঙ্গী জুটে যাচ্ছে প্রতিবাদে। সেই ছাত্রটিই কয়েক বছর পর, ছাত্রত্ব শেষ হলে একইরকম ঘটনার মুখে পড়লে তেমন প্রতিবাদ হবে না। কারণ বন্ধুরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। এখন আর দলবদ্ধতা নেই। আর এখানেই সমীকরণটা। এই দলবদ্ধ শক্তিটাকে উপরের স্তরের রাজনীতির জন্য খুব দরকার। এরা না থাকলে একটা বাহিনী পালতে হতো, এখানে একেবারে তৈরি দল। প্রশ্রয় দিলেই হয়। আর তরুণদের রক্তের নেশাই হলো রোমাঞ্চ, নিজেকে বড় করে দেখানো। রাজনীতির ছায়া বা অপচ্ছায়া তার সামনে ক্ষমতার, বড়ত্বের, বাহাদুরির মঞ্চটা বানিয়ে দেয়। অবাধ বাহাদুরির এই সুযোগ একজন ১৯-২০ বছরের তরুণ গ্রহণ করবে না ভাবলে আমরা সমাজ সম্পর্কে ভুল ধারণা করে বসে আছি।
বদলানোর উপায়! ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দাও। কেউ কেউ বলবেন। এবং অবশ্যই ভুল করবেন। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলেও দলবদ্ধ তরুণদের মধ্যে কোনো না কোনো বিনাশী প্রবণতা থাকবেই। ঠেকানোর উপায় হলো খুব সম্ভব, সেই দলবদ্ধতার মধ্যে শৃঙ্খলা আনা। বাহাদুরি ব্যাপারটাকে অন্যভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। এখন, একটা ছাত্র সংগঠনের নেতা সে-ই হয়, যাকে মূল দল পছন্দ করে। ফলে, নেতৃত্ব পাওয়ার পথ বড় ভাইয়ের পায়ে পায়ে চলা। হাতে হাত রাখা। মুখে হ্যাঁ-হুঁ বলে ফেনা তুলে ফেলা। এবং বড় ভাইরাও নিজের বশংবদ-পছন্দের জনকেই নিরাপদ ভেবে সামনে আনবেন। তাতে সমস্যা নেই কোনো। তিনি যাকে নেতা বানাচ্ছেন, তাকে দিয়েই কাজ চলছে। কিন্তু যদি, এমন হতো যে সে-ই নেতাকে ছাত্রদের মুখোমুখি হতে হবে, লড়াই করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে নেতৃত্ব, তাহলে হতো গুণের লড়াই। যে ভালো বক্তৃতা দেয় বা যে পরোপকারী বা যে ভালো ছাত্রতেমনি কোনো একটা গুণ থাকতে হতো। গুণভিত্তিক নেতৃত্ব হলে, সে-ই নেতৃত্বের কর্মী বাছাইয়ে গুণের কদর থাকত। আর এসবই সম্ভব হতো যদি সঠিক সময়ে, সঠিক প্রক্রিয়ায় ডাকসু ও নির্বাচন অক্ষুন্ন থাকত। জানি কেউ কেউ বলবেন, আরে, ডাকসু বা নির্বাচন মানেই তো আরেক দফা মারামারি। গোলাগুলি। বটে। সর্বশেষ যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে সেটাও মানের দিক দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু মনে রাখতে হবে তোফায়েল আহমেদ, আখতারুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান মান্না, ওবায়দুল কাদেররা সেই সময়েরই ছাত্রনেতাযখন ছাত্ররাজনীতির নির্বাচনী চরিত্র ছিল। তখনও গোলমাল হতো, গুলি-বোমাবাজি এখনকার চেয়ে বেশিই ছিল। কিন্তু তখন দুটো ভাগ ছিল। একদল লিডার। আরেক দল ক্যাডার। এখন লিডার আর ক্যাডার একাকার হয়ে গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আগে লড়াই ছিল রাজনৈতিক আধিপত্যের। এখন নিরীহদের নির্যাতনের।
ঠিক এই সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন সাদ্দাম। এখনকার সময়ের মূলধারার নেতাদের তুলনায় পরিচ্ছন্ন ইমেজের। ভালো সাবজেক্টে পড়াশোনা। রাজনৈতিক বাগ্মিতা আছে। পড়াশোনার চর্চাও কম বেশি আছে বলেই জানি। কোথায় ভাবলাম, পরিস্থিতি বদলাবে। তার জায়গায় এত এত অপকীর্তির খবর যে, পত্রিকার এক পাতায় সব ধরানোও সম্ভব হয় না।
ভেবে ভেবে মনে হচ্ছে, নেতা বা মাথা দিয়ে বদলানোর দিনও বোধ হয় গেছে। আসলে দিনই তো নেই। ছাত্ররাজনীতিতে এখন নিশুতি রাত। ঘোর অন্ধকার।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।