
‘বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না। তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তালিমপুর তেলিহাটি (টিটি) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না, যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নন। খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমান দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। খালেদা জিয়ার ছেলে যাকে নেতা বানিয়েছে, সে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না, সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে কীভাবে। যারা ওই দুই দল বড় দল বলেন তারা ভুল করেন।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা যে দলগুলো আছে, জামায়াত এরা কারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং স্বাধীনতার সুফল আজ বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে ইনশাল্লাহ।
সরকারপ্রধান বলেন, এখানে একটি কথা বলতে চাই, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল। তারা পেয়েছিল বাকি সব আসন। তাহলে এই দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে।
বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলার ৫শ’ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে। দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন তারা। ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি, বরং মানুষের অর্থকড়ি সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেনের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও স্থানীয় নেতারা।
এর আগে, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী এসে পৌঁছালে সেøাগান ও করতালির মাধ্যমে সমাবেশে আগত জনতা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে এর উত্তর দেন। কোটালীপাড়া উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে আগের নির্বাচনী জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং অপর পাঁচটি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আনতেই হবে সরকারকে এ অবস্থান নিয়েছে বিদেশিরা। কোন পথে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে তা নিয়ে সরকারকে বিদেশিরা সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন দেয়নি। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিও তাদের বার্তা নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি নির্বাচনের ছয় মাস আগে সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিষ্কার করতে বিদেশিদের কৌশল নিতে অনুরোধ করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সরকার যেমন বিএনপিকে বাইরে রেখে আগামী সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে পারবে না। তেমনি বিএনপিও নানা কারণে নির্বাচনের বাইরে থাকতে পারবে না। তাই সরকারকে যেমন নমনীয় অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, তেমননি বিএনপির মধ্যেও ভাবনা-চিন্তার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিদলীয় একাধিক সূত্রে দুই দলের ওপর বিদেশিদের চাপ থাকার বিষয়টি জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শক্তিগুলো সুনির্দিষ্ট করে কোনো পথ এখন পর্যন্ত বাতলে দেয়নি। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের বাইরে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারেও তারা কোনো কথা বলেনি। নির্বাচনকেন্দ্রিক উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয়েছে বিদেশিরা সেটা দেখতে চায়।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপিকে তারাও নির্বাচনে আনতে চান। তবে বিএনপির দাবির কাছে নতি স্বীকার করে নয়। এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সেই নিশ্চয়তাকে আমলে নিতে হবে বিএনপির। বিএনপির দাবি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে হলেও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। সেই ক্ষেত্রে সংবিধানের বাইরে এক চুলও সরবে না সরকার এমনটাই এখন পর্যন্ত বলে আসছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ‘সাপও মরতে চায়, আবার লাঠিও ভাঙবে না’ এ নীতি অনুসরণ করতে চায়। কিন্তু কোন পথে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাবে, তা এখনো খুঁজে পায়নি ক্ষমতাসীনরা।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে বিদেশি এ অবস্থান টের পেয়ে সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহ আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ এক ধাপ এগিয়েছে।
গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছেন। দেশের রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতাও বেশ চোখে পড়ছে। তারা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারত ছাড়া প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূতরা সব দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চান বলে জানিয়েছেন।
উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে, কোনো দলের ভগ্নাংশ নির্বাচনে এলেও হবে না, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রমাণ করতে সব দলকেই আনতে হবে নির্বাচনে। তাদের এ চাওয়া কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেটাই চিন্তা করতে শুরু করেছে সরকার। সাজা স্থগিত হওয়ায় খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলেও রাজনীতি করতে পারবেন আইনমন্ত্রী নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের নেতা ও সরকারের অন্য মন্ত্রীরা উল্টো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
হঠাৎ উদয় হওয়া খালেদা ইস্যুতে আলাদা আলাদা বক্তব্য ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ একেবারেই নেতিবাচক। আর বিএনপি এখন তারেকের হাতের মুঠোয়। তার হাত থেকে বিএনপিকে বের করে আনতে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেনএমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছে রাজনৈতিক মহল। এ ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব বোঝার পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপে ফেলার জন্য খালেদা জিয়াকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো সহজ হবে বলে মনে করছেন তারা।
বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে আওয়ামী লীগের এমন একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা, গণতন্ত্র হুমকির পাশাপাশি তাদের বড় বিনিয়োগের ক্ষতিসাধন হবে। তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকা- চলমান রয়েছে। বিদেশিদের এমন অবস্থান ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা বিএনপিকেও জানিয়েছে বিদেশিরা। বাংলাদেশ সফরে আসা বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক না হলেও কূটনীতিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে উন্নয়ন সহযোগীদের এমন অবস্থানে আওয়ামী লীগের ভেতরে উদ্বেগের কথা উঠে এলেও এই মূহূর্তে পর্দার অন্তরালের থাকা বিষয় নিয়ে প্রকাশ্য কোনো বক্তব্য দিতে চান না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। উন্নয়ন সহযোগীদের অনুরোধ নিয়ে দলটির সভাপতি ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনীতিতে সব সময় সংলাপের সম্ভাবনা আছে।’ তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা সংলাপ নিয়ে কোনো পরামর্শ আওয়ামী লীগকে দেয়নি। তবে তারা চায় আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, সংলাপ কখন ও কীভাবে হবে তা সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
শুধু আওয়ামী লীগের ওপরই নয়, নির্বাচনে আসতে হবে- বিদেশিদের এমন চাপ রয়েছে বিএনপির ওপরও। বিএনপির সঙ্গে কূটনীতিকদের একাধিক বৈঠকে এ চাপ দেওয়া হয়েছে। কোন পথ অনুসরণ করে তারা আসবে, সে ব্যাপারে বিএনপিকে সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ দেয়নি বিদেশিরা। তবে বিএনপি মনে করছে, সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্য তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা।
দলটি বলছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানা না হলে তারা কোনো সংলাপেও বসবেন না।
গত মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও জ্যেষ্ঠ এক নেতা মন্তব্য করেছেন, ‘সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য তাদের কাছ থেকে আরও আসবে। এসব কথার প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সংলাপ হলে কীভাবে এগোবে, তা নিয়ে অন্যদের মতো বিএনপির নেতাদেরও বড় ধরনের কৌতূহল রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এরই মধ্যে পর্দার আড়ালে সংলাপের গুঞ্জন চাউর হলেও বিএনপি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চায় না।
দলটির তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত সবাইকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, সংলাপের নামে চায়ের আসর বা আসন ভাগাভাগির মতো কোনো প্রস্তাবে সমঝোতা হবে না। কেননা, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তৎকালীন রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টাও সফল হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সংলাপ হয় গণভবনে। ফল হয়েছে উল্টো।
বিএনপির বরং নির্বাচনের ছয় মাস আগে সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিষ্কার করতে বিদেশিদের কৌশল নিতে অনুরোধ করেছে। দলটির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে থাকা বিদেশি দপ্তরগুলোতে গত বছর চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে নির্বাচনের অন্তত ৬ মাস আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ পরিষ্কার করতে সরকার যাতে বাধ্য হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে বিএনপি।
ওই চিঠিতে বলা হয়, সরকার কি বর্তমান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন করবে, নাকি সব দলকে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়, সেটি যেন তারা পরিষ্কার করে। বিএনপি যে বিদেশি দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে তা নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে অভিযোগ করেছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘শুধু জাপানকে কেন আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহু দেশকে। এটা সত্য।’
চিঠি তৈরি ও বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে য্ক্তু বিএনপির দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, নানা বিষয়ের পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ওই চিঠিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ আরেকটি একতরফা সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে টানা ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না; বরং বিরোধী দলের ওপর মামলা, নির্যাতন, কর্মসূচিতে বাধার হার আরও বেড়েছে।
ঈদুল ফিতরের পর সংলাপ হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। তবে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি এ বিষয়ে স্পষ্ট করেনি। সমঝোতা ছাড়াই সরকার একতরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা নিলে সে ক্ষেত্রে কী হবে? বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই সরকার যত বেশি সম্ভব দলগুলোকে নানা পন্থায় নির্বাচনে আনার প্রচেষ্টা চালাবে। সেটি আমলে নিয়ে বিএনপি মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালনে মনোযোগী। মার্চ মাসের পর সমঝোতার দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আন্দোলনকে নতুন পর্যায়ে নিতে কাজ করবেন তারা। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, সেটির ওপর ভিত্তি করেই তাদের নির্বাচনী পদক্ষেপ পরিচালিত হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে সরকার ও তার দলের লোকেরা যেসব কথা বলছে, সেটা আমরা আমলেই নিচ্ছি না। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো না। আমাদের কথা একেবারেই স্পষ্ট। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সরকার সেটার ব্যবস্থা না করলে আমাদের আন্দোলন চলমান আছে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।’ বিদেশি মিশনগুলোতে বিএনপি চিঠি দিয়েছে এমনটি জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবাধিকার, হত্যা-গুম-খুনসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তাতে উল্লেখ রয়েছে।
বিদেশিদের চাপ বিএনপির ওপর নেই দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিরা বাংলাদেশের জনগণের দাবির পক্ষে কথা বলছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফেরত পেতে চায়। স্বাভাবিক জীবনযাপনের গ্যারান্টি চায়।’
বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির দায়িত্বে থাকা এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলের চিত্র চিঠির মাধ্যমে বিদেশিদের আমরা জানিয়েছি। সরকারের অপকর্ম তুলে ধরে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি।’
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার মধ্য দিয়ে জেলা পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবারের এই কর্মসূচি ঘিরে বেশ কয়েকটি জায়গায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসহতায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ৪১ নেতাকর্মীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বিভিন্ন জেলায় দলের পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বিএনপির গণআন্দোলনে ভীত হয়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা, গুলি ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :
কুমিল্লায় পুলিশের টিয়ারশেল, ফাঁকা গুলি ও লাঠিপেটা : কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ বাধা দিয়ে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খাদঘর ও চান্দিনা এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতা এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল। কিন্তু ওই স্থানে পুলিশ কর্মসূচি পালনের অনুমতি না দেওয়ায় তারা চলে আসেন মহাসড়কের খাদঘর এলাকায়। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ আবারও বাধা দেয়। তখন পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বাগ্বিত-া শুরু হলে এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা এবং টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে ২০ নেতাকর্মী আহত হন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, ‘পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং গুলিবর্ষণ করে।’
তবে চান্দিনা থানার ওসি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসড়কে নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তাদের ইটপাটকেলে আমাদের দুজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
ঝালকাঠিতে সংঘর্ষ, আটক ১৬ : ঝালকাঠিতে পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য ও বিএনপির ১৪ জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় সদর থানার ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। আর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় তাদের অন্তত ৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে পুলিশের ওপরে হামলার অভিযোগে জেলা যুবদলের সদস্য সচিবসহ ১৬ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের আমতলা সড়কে পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে এসব ঘটনা ঘটে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, কর্মসূচি শেষে তারা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেনসহ ৮ নেতাকর্মী আহত হয়।
বাগেরহাটে কেন্দ্রীয় নেতাসহ গ্রেপ্তার ২৫ : বাগেরহাটে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বিএনপি’র অভিযোগ পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে অন্তত ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শেখ ওবায়দুল ইসলাম এই দাবি করেন। অন্যদিকে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এর আগে সকাল ১০টার দিকে শহরের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় জেলা বিএনপি’র কয়েকশ নেতাকর্মী জড়ো হয়ে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরে সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি আকরাম হোসেন তালিম ও সাবেক সভাপতি এম এ সালাম। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একই সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিএনপিকে আজকের কর্মসূচি স্থগিত রাখতে বলা হয়। কিন্তু বিএনপি পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পদযাত্রা বের করে। এই পদযাত্রাটি ছিল মারমুখী। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় সেখানে অভিযান চালিয়ে ২০-২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
পটুয়াখালীতে পদযাত্রায় পুলিশের ধাওয়া : পটুয়াখালীতে পদযাত্রায় ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেয় পুলিশ। সকালে কলেজ রোডে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। পদযাত্রাটি পৌরসভা মোড়ে যাওয়ার পথে পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় ৬ নেতাকর্মী আহত হওয়ার দাবি করেছে জেলা বিএনপি। সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামানের দাবি, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পদযাত্রা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এদিকে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে শোডাউন করে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির’ বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে।
নীলফামারীতে আ. লীগ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : নীলফামারীতে একই সময়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পৌর সুপার মার্কেটের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে ৫০ গজ দূরে ওই মার্কেটে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৈরি করা মঞ্চে পদযাত্রার জন্য সমবেত হয় জেলা বিএনপির একাংশের নেতৃবৃন্দ। নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার। উভয় দিক থেকে পাল্টাপাল্টি সেøাগানে উত্তেজনা সৃষ্টির এক পর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকারসহ কয়েকজন যুবক বিএনপির মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়ে সেখানে টাঙানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে চেয়ার ভাঙচুর করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফেনীতে পদযাত্রা পুলিশের বাধা : ফেনী শহরের বড় মসজিদের সামনে থেকে শুরুর পর পুলিশের বাধায় প্রায় ২০০ গজের মাথায় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়েই শেষ হয়ে যায় পদযাত্রা। পরে বড় বাজারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সংক্ষিপ্ত পদযাত্রার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। এদিকে রাজপথে ছিল যুবলীগ। সকালে পৌরসভার সামনে শান্তি সমাবেশ করে জেলা যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সমাবেশের আগে একটি মিছিল ফেনী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ : বিভিন্ন জেলায় দলের পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে অভিযোগ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিএনপির গণআন্দোলনে ভীত হয়ে দলের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা, গুলি ও গ্রেপ্তার করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জড়িয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের পন্থা অবলম্বন করেছে। এর একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত রেখে আবারও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়ে চলমান গণআন্দোলনকে দমন করা যাবে না। মানুষ এখন জেগে উঠেছে। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না ঘটিয়ে জনগণ ঘরে ফিরে যাবে না।’
প্রতিবেদনটি নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিদের তথ্যে তৈরি
শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত বিধি ভেঙে দুই শিক্ষক নেতাকে সহযোগী অধ্যাপক (গ্রেড-৪) বানাতে নানা আয়োজন করছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ম-ল আসাদ।
তারা দুজনই আবার নিয়োগসংক্রান্ত প্ল্যানিং কমিটির সদস্য। তারা নিজেরাই নিজেদের যোগ্য ঘোষণা করেছেন। আগামীকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাছাই বোর্ডের দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ কথা বলতে রাজি হননি। জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি। জনসংযোগ উপপরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধি ভেঙে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ডাকা হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা ভালো বলতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগে দুজন সহযোগী অধ্যাপক ও ইংরেজি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপকের পদ রয়েছে। গত বছরের ২২ নভেম্বর এসব পদে আবেদনের শেষ সময় ছিল।
সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্যতা চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ পিএইচডি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছরসহ কমপক্ষে সাত বছরের সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। এমফিল ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঁচ বছরসহ মোট ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একটি শর্ত শিথিলযোগ্য।
জানা গেছে, লোকপ্রশাসন বিভাগের দুটি সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে চারজন প্রার্থী আবেদন করেছেন। তাদের তিনজন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তারা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. জুবায়ের ইবনে তাহের, মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী। বেরোবির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কেউই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে আবেদনের যোগ্য নন। তবে অভ্যন্তরীণ শিক্ষক পদ আপগ্রেডেশন নীতিমালা অনুযায়ী শুধু জুবায়ের ইবনে তাহের সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদের সর্বসাকল্যে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আট বছর এক মাস নয় দিন এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর মোট চাকরিকাল আট বছর এক মাস আট দিন। তাদের কারোরই পিএইচডি বা এমফিল ডিগ্রি না থাকায় বর্তমান অভিজ্ঞতায় তারা সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্য হননি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শূন্যপদে আবেদন করা অপর প্রার্থী ড. মো. রুহুল আমিন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১২ বছরের বেশি। ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তার। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা থেকে জানা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে যে তিনজন বেরোবির তারা প্ল্যানিং কমিটিরও সদস্য। তারা আবেদনকারী চার প্রার্থীকেই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে যোগ্য মনোনীত করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় বাছাই বোর্ডের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যদের কাছে প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে।
যোগ্যতা না থাকার পরও কীভাবে প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হলো জানতে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে গতকাল রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শর্ত শিথিল করে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ব্যাপারটি জানেন ভিসি অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ। নিয়োগ নির্বিঘ্ন করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিতর্কিত শিক্ষককে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ-সদস্য হিসেবে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তিনি আবার আসাদুজ্জামান মন্ডল ও সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর এমফিল প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তাদের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
বেরোবির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, যোগ্যতা অর্জনের আগেই বিধি ভেঙে দুজন জুনিয়র শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তাদের জ্যেষ্ঠতা হারাবেন। একাডেমিক ডিগ্রি শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগের নজির বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খান দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিবপুর থানা সংলগ্ন বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তার ওপর হামলার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটখোলা মোড়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৪ ঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হারুনুর রশীদ খানের ওপর হামলাকারীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তারের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় বিক্ষোভকারীরা।
স্বজন এবং অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানকে গুলি করার পুরো মিশনটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের আরিফ সরকার নামে এক ব্যক্তি। জেলা ছাত্রলীগ নেতা মাহিন হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলার আসামি এই আরিফ স্থানীয় রাজনীতিতে এলাকার সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বটতলীকান্দী থেকে গতকাল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক সদস্যের (মেম্বার) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই দিনে দুই জনপ্রতিনিধিকে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার দুটি ঘটনায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
ছেলে তাপস খান জানান, চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান গতকাল ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে যান। নামাজ শেষে শিবপুর থানা থেকে ১০০ গজ দূরে শিবপুর বাজারের বাড়িতে আসেন। তখন তিনজন লোক মসজিদের অনুদানের ব্যাপারে কথা বলতে চান জানিয়ে তার কাছে আসেন। তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষে বাড়ির অফিস কক্ষে ঢোকার সময় পেছন থেকে তারা হারুনুর রশীদকে লক্ষ্য করে পরপর ৩টি গুলি করেন। যার সবগুলোই তার পিঠে বিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনা জানাজানি হলে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা উপজেলার কলেজ গেট মোড়ে ইটখোলা-মঠখোলা আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটখোলা মোড়ে নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নিলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রতিক্রিয়ায় ব্যস্ততম এই মহাসড়কের দুই পাশে উপজেলার বরইতলা থেকে কুন্দারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান এবং পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস ও জনভোগান্তির কথা জানালে তারা মহাসড়ক থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে চলে যায়। এরপর ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উপজেলার প্রবীণ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হারুনুর রশীদ খানকে বাড়িতে ঢুকে গুলির ঘটনায় পুরো জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, মান-অভিমান থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকবে না। চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন ভূঁইয়া বলেন, ‘হারুনুর রশীদ খান আমাদের শিবপুর আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ। তার ছায়াতলে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজনীতি করে। তাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার নীলনকশা করা হয়েছে। যারাই এই বর্বর হামলার সাথে জড়িত থাক না কেন তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিল বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক কারণে হামলা নাকি অন্য কোনো কারণে তার ওপর হামলা করা হয়েছে তা আমরা প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছি।’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম মাহবুবুল হাসান মাহবুব বলেন, ‘হামলার মদদদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের একটাই দাবি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
স্বজন ও অনুসারী নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাতে পুটিয়ার আরিফ সরকার চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানকে ফোন করে তার এলাকার মসজিদের জন্য অনুদান চান। চেয়ারম্যান সকালে লোক পাঠানোর কথা বললে আরিফ লোক পাঠান। সেই লোকরাই চেয়ারম্যানকে গুলি করেন। তবে চেয়ারম্যানের ওপর হামলা পরিকল্পনার মিশন গুছিয়ে শুক্রবার রাতেই আরিফ দেশ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি।
এই আরিফ সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের অনুসারী অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি, এমপি মোহনের লোকেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের স্বজনদেরও একই দাবি।
এদিকে গতকাল সকালে এম জহিরুল হক ভূঞা মোহন গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলেও দ্রুত ফিরে যান। হাসপাতালে আহত চেয়ারম্যানের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সহসভাপতি ডা. রউফ সরদার, মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরুসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানের ভাতিজা রাব্বি খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাকা সবাইকে চিনতে পেরেছেন। তারপর সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সন্ত্রাসীদের আটক করা হোক।’
চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীর কোনো অন্য পরিচয় থাকতে পারে না। পুটিয়ার আরিফের কোনো দলীয় পদ নেই। গত ৫ বছরেও আমার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। সে অপরাধী হলে আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। শিবপুরে হারুন খানের যেখানে নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি না।’
জেলার পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, ‘হামলার রহস্য উন্মোচনে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কী কারণে এই হামলা বা কারা হামলা করেছে সে বিষয়ে আমরা দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অতিদ্রুত তারা জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।’
এর আগে ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ উপজেলা চেয়ারম্যানের বড় ভাই রবিউল আওয়াল খান কিরণ উপজেলার যোশর ইউনিয়নের লেটাবর বাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সভা শেষে শিবপুরের বাড়িতে ফেরার পথে সিঅ্যান্ডবি ব্রিজসংলগ্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
‘এটা কী প্যান্ট পরেছ? জিন্সের প্যান্ট নেই?’
‘ঠিক আছে ভাই জিন্সের প্যান্টই পরব।’
‘চুলও তো ঠিক নাই।’
‘চুলের কী সমস্যা ভাই?’
‘এই তেল দেওয়া চুলে চলবে না। চুলের দুটো স্টাইল আছে, একটা আর্মি কাট, মানে সাইড পাতলা। আরেকটা পাংকু স্টাইল। দুটোর একটা হতে হবে।’
‘পাংকুটা থাক ভাই। আর্মিটাই ভালো।’
‘আর গেস্টরুমে বসতে হবে। নেতৃবৃন্দ কোথাও গেলে সঙ্গে যেতে হবে।’
‘যাব ভাই। নেতৃবৃন্দকে সম্মান করতে হবে। তারা তো সম্মানীয় মানুষ।’
ছাত্ররাজনীতি কিংবা ছাত্রনেতাদের নিয়ে কোথাও আলোচনা শুরু হলেই ২৫ বছর আগের দৃশ্যটা স্মৃতি থেকে হানা দেয়। নিজের চোখের সামনে ঘটা এই ছবিটাই আমার কাছে ছাত্ররাজনীতির সারাংশ। যিনি সাক্ষাৎকারটা নিচ্ছিলেন তিনি উঠতি ছাত্রনেতা। যে দিচ্ছিল সে তার হবু কর্মী এবং এই এরা মিলেই ছাত্ররাজনীতি।
ছবি বদলেছে? তাহলে কয়েক মাস আগের একটা অভিজ্ঞতা শোনাই। পরীবাগে বন্ধুর বাসা। রাতের দিকে চায়ের দোকানে বসে আছি। সামনে শ’খানেক তরুণের ভিড়। গোটা পঞ্চাশেক মোটরসাইকেল। খুব বেশি খোঁজখবর করতে হলো না। জানা গেল, ছাত্রলীগের বড় এক নেতা এখানে থাকেন। তাকে প্রটোকল দিতেই এই জমায়েত। এসব উগ্র জমায়েত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাই এখন এ দেশের নিয়ম। তবু খুব দেখার দৃশ্য বলে খেয়াল করছিলাম। হঠাৎ একটা উত্তেজনা দেখা গেল জটলায়। নেতা নেমেছেন। ভিড়ের দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি ফোন নিয়ে হেঁটে হেঁটে ভিড় ছেড়ে এগোলেন। ঠিক পেছন পেছন এগোলো মৌমাছির মতো একটা দল এবং একটা সময় ওরা নেতাকে পেছনে ফেলে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বন্ধ করে দিল রাস্তার যাতায়াত। পরের কয়েক মিনিটের দৃশ্যটা হলো, চারদিকে নেতাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জনা পঞ্চাশেক তরুণ। নেতা ফোনে কথা বলছেন। ওদিকে রাস্তা বন্ধ। হলিউড-বলিউডের সিনেমায় দাপুটে ডনদের দেখেছি। মনে হলো এটা বোধ হয় সেরকমই কোনো ছবির শ্যুটিং।
ছবি তাই একটুও বদলায়নি। ২৫-৩০ বছর আগে যা। এখনো তা। ছাত্রদল যা, ছাত্রলীগও তা। প্রথম ঘটনাটা ছাত্রদলের রাজত্বের আমলের। পরেরটা! বুঝতেই পারছেন। ইদানীংকার ঘটনা। ছাত্রলীগ না হয়ে যায় না।
ছাত্ররাজনীতির গল্প বলতে শুরু করলে দেখি উপচে বেরিয়ে আসে অনেক গল্প। মধ্য নব্বইয়ের দশকে একবার একটা হল দখল করে নিল ছাত্রদলের একটা বিদ্রোহী গ্র“প। যিনি এই দখল কার্যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার নাম ‘ডগ অমুক (নামটা উল্লেখ করা বোধ হয় উচিত নয়)।’ নামের আগে ডগ কেন? প্রতিষ্ঠিত গল্পটা হলো, তিনি একবার কাঁটাবনে পশু-পাখির দোকানে গিয়ে দেখলেন টাকা দিয়ে মানুষ কুকুর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তখন নিজে হলের সামনে থেকে একটা কুকুর ধরে নিয়ে সেটা বিক্রির চেষ্টা করলেন। দেশি বেয়াড়া শ্রেণির কুকুর তো আর বিক্রয়যোগ্য নয়। দোকানদার কিনবে না। ভাই গর্জে উঠলেন, ‘কেন নেবে না?’
‘স্যার এটা দেশি কুকুর। আমরা তো কিনি বিদেশি কুকুর।’
‘কী? শুধু বিদেশি কুকুর... তোমাদের তো দেশপ্রেম নেই। দেশদ্রোহী সব।’
এই গল্প ক্যাম্পাসে সংগত কারণেই সুপার হিট। গল্পে নানান শাখা-প্রশাখা যোগ হলো। আর তিনি হয়ে গেলেন ‘ডগ ...।’
সেই ডগ ভাইয়ের সমাপ্তিটা অবশ্য অত্যন্ত ট্র্যাজিক। দিন-রাত জেগে হল পাহারা দিতেন। কিছুদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা সংহত হয়েছে মনে করে তিনি একদিন গেলেন নিউমার্কেটে। সেই ফাঁকেই বিরোধী পক্ষ সাঁড়াশি আক্রমণে হল দখল করে নেয়। তিনি ফিরে দেখেন হল বেদখল। নিজে আর ঢুকতে পারছেন না। হলের সামনে দাঁড়িয়ে তার যে কী কান্না। একজন শিক্ষকও ছিলেন, হাউজ টিউটরই হবেন, ডগ ভাই তাকে উদ্দেশ করে আর্তনাদ করলেন, ‘স্যার আমার হল... আমার হল...।’ একেবারে আশির দশকের আলমগীর-শাবানার ছবির মতো ট্র্যাজেডি দৃশ্য।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের ছবির দৃশ্য আছে, ট্র্যাজেডি আছে। কমেডি! তা-ও আছে। একবার একজন ব্যবসায়ীকে ধরে আনা হলো। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। দেননি। গেস্ট রুমে অনেক হুমকিধমকির পরও ভদ্রলোককে নত করাতে না পেরে শেষে দোতলায় নিয়ে তাকে ওখান থেকে ফেলে দেওয়া হলো। যারা ফেলেছিল ওদের ধারণা ছিল, পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে এবার ভদ্রলোক রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু যে ঘটনা ঘটল, এর জন্য বোধ হয় কেউ প্রস্তুত ছিল না। পতিত হয়েও মানুষটির তেমন কোনো শারীরিক ক্ষতি হলো না। পায়ে সামান্য একটু চোট লেগেছিল বোধ হয়। তাই নিয়েই দিলেন দৌড়। দোতলা থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধরা হয়তো সম্ভব ছিল; কিন্তু ওরা মানুষটার প্রাণশক্তিতে এত বিস্মিত হয়েছিল যে, তাড়া করার কথা ভুলেই গিয়েছিল। ফলে সেটা হয়ে গেল হাসির গল্প। কমেডি দৃশ্য। আর সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস-হল-ছাত্ররাজনীতি আসলে সিনেমার মতোই অবিশ্বাস্য।
না, ছবি বদলায়নি। একভাবে চিন্তা করলে বদলেছে। এখন আক্রমণ-নির্যাতনের নতুন নতুন শাখা যোগ হয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা এমন ফলবান বৃক্ষ যে, তার আশেপাশে গেলেই মাথায় আঘাত পড়বে। আগে শুধু নিচে গেলে ঝামেলা হতো। এখন অতদূর যাওয়া লাগে না।
নতুন ছাত্ররা রাজনীতির কারণে আগে নির্যাতিত হতো, এখন স্রেফ নতুন হওয়ার কারণে আরেক দফা ঝামেলায় পড়ে। র্যাগিং বা নতুনদের নিয়ে খেলার ব্যাপারটা তখন বোধ হয় সেভাবে ছিল না। আরও ব্যাপার আছে। আগে, যেহেতু কোনো একপক্ষের চিরস্থায়িত্ব ছিল না; ফলে সবকিছুর মধ্যে একটা কিন্তু কাজ করত। পাঁচ বছর পর বিপদে পড়ার ভীতি। গত এক-দেড় দশকের একমুখিতায় সেই ভীতিও গেছে। ফলে ছাত্ররাজনীতির নামে নানা অপচর্চা আরও বেশি করে চলে। ও, হ্যাঁ, ছাত্রনেত্রীদের অতটা হিংস্র হওয়ার খবর শোনা যেত না। মোটামুটি ধরে নেওয়া হতো যে, ছাত্রীদের হলে রাজনীতি যেমনই থাকুক, তারা সীমা ছাড়াবে না। নারীরা কখনোই নিষ্ঠুরতার ছবি নন, রাজনীতিতে সেই ধারা কম বেশি ছিল। এখন আর নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী ভেদাভেদ নেই। একভাবে দেখলে অবশ্য ভালো। বেশ একটা সাম্য চলে এসেছে। নির্যাতন-নিপীড়নে এক কাতারে দাঁড়িয়ে প্রায় নজরুলের কবিতা, ‘যা কিছু অকল্যাণকর অর্ধেক তার করছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
ছাত্রলীগকে বাগে আনার অনেক চেষ্টা চলছে। সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শাসন করেছেন একাধিকবার। শাস্তি-শাসন এসব চললেও কাজ হচ্ছে না কোনো। মোটা দাগে বলা যায়, দলের বা সরকারের কোনো না কোনো পক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ায় কাজের কাজ কিছু হয় না। প্রথমত, যারা তাদের শক্তিকে ভাড়া করে কাজে লাগায় তাদের আর ছাত্রদের শাসন করার নৈতিক শক্তি থাকে না। ফলে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, এই সমাজে ছাত্ররাই একমাত্র সংগঠিত শক্তি। ধরুন, একজন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র কোথাও গিয়ে আক্রান্ত হলো, দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে শত শত সঙ্গী জুটে যাচ্ছে প্রতিবাদে। সেই ছাত্রটিই কয়েক বছর পর, ছাত্রত্ব শেষ হলে একইরকম ঘটনার মুখে পড়লে তেমন প্রতিবাদ হবে না। কারণ বন্ধুরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। এখন আর দলবদ্ধতা নেই। আর এখানেই সমীকরণটা। এই দলবদ্ধ শক্তিটাকে উপরের স্তরের রাজনীতির জন্য খুব দরকার। এরা না থাকলে একটা বাহিনী পালতে হতো, এখানে একেবারে তৈরি দল। প্রশ্রয় দিলেই হয়। আর তরুণদের রক্তের নেশাই হলো রোমাঞ্চ, নিজেকে বড় করে দেখানো। রাজনীতির ছায়া বা অপচ্ছায়া তার সামনে ক্ষমতার, বড়ত্বের, বাহাদুরির মঞ্চটা বানিয়ে দেয়। অবাধ বাহাদুরির এই সুযোগ একজন ১৯-২০ বছরের তরুণ গ্রহণ করবে না ভাবলে আমরা সমাজ সম্পর্কে ভুল ধারণা করে বসে আছি।
বদলানোর উপায়! ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দাও। কেউ কেউ বলবেন। এবং অবশ্যই ভুল করবেন। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলেও দলবদ্ধ তরুণদের মধ্যে কোনো না কোনো বিনাশী প্রবণতা থাকবেই। ঠেকানোর উপায় হলো খুব সম্ভব, সেই দলবদ্ধতার মধ্যে শৃঙ্খলা আনা। বাহাদুরি ব্যাপারটাকে অন্যভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। এখন, একটা ছাত্র সংগঠনের নেতা সে-ই হয়, যাকে মূল দল পছন্দ করে। ফলে, নেতৃত্ব পাওয়ার পথ বড় ভাইয়ের পায়ে পায়ে চলা। হাতে হাত রাখা। মুখে হ্যাঁ-হুঁ বলে ফেনা তুলে ফেলা। এবং বড় ভাইরাও নিজের বশংবদ-পছন্দের জনকেই নিরাপদ ভেবে সামনে আনবেন। তাতে সমস্যা নেই কোনো। তিনি যাকে নেতা বানাচ্ছেন, তাকে দিয়েই কাজ চলছে। কিন্তু যদি, এমন হতো যে সে-ই নেতাকে ছাত্রদের মুখোমুখি হতে হবে, লড়াই করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে নেতৃত্ব, তাহলে হতো গুণের লড়াই। যে ভালো বক্তৃতা দেয় বা যে পরোপকারী বা যে ভালো ছাত্রতেমনি কোনো একটা গুণ থাকতে হতো। গুণভিত্তিক নেতৃত্ব হলে, সে-ই নেতৃত্বের কর্মী বাছাইয়ে গুণের কদর থাকত। আর এসবই সম্ভব হতো যদি সঠিক সময়ে, সঠিক প্রক্রিয়ায় ডাকসু ও নির্বাচন অক্ষুন্ন থাকত। জানি কেউ কেউ বলবেন, আরে, ডাকসু বা নির্বাচন মানেই তো আরেক দফা মারামারি। গোলাগুলি। বটে। সর্বশেষ যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে সেটাও মানের দিক দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু মনে রাখতে হবে তোফায়েল আহমেদ, আখতারুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান মান্না, ওবায়দুল কাদেররা সেই সময়েরই ছাত্রনেতাযখন ছাত্ররাজনীতির নির্বাচনী চরিত্র ছিল। তখনও গোলমাল হতো, গুলি-বোমাবাজি এখনকার চেয়ে বেশিই ছিল। কিন্তু তখন দুটো ভাগ ছিল। একদল লিডার। আরেক দল ক্যাডার। এখন লিডার আর ক্যাডার একাকার হয়ে গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আগে লড়াই ছিল রাজনৈতিক আধিপত্যের। এখন নিরীহদের নির্যাতনের।
ঠিক এই সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন সাদ্দাম। এখনকার সময়ের মূলধারার নেতাদের তুলনায় পরিচ্ছন্ন ইমেজের। ভালো সাবজেক্টে পড়াশোনা। রাজনৈতিক বাগ্মিতা আছে। পড়াশোনার চর্চাও কম বেশি আছে বলেই জানি। কোথায় ভাবলাম, পরিস্থিতি বদলাবে। তার জায়গায় এত এত অপকীর্তির খবর যে, পত্রিকার এক পাতায় সব ধরানোও সম্ভব হয় না।
ভেবে ভেবে মনে হচ্ছে, নেতা বা মাথা দিয়ে বদলানোর দিনও বোধ হয় গেছে। আসলে দিনই তো নেই। ছাত্ররাজনীতিতে এখন নিশুতি রাত। ঘোর অন্ধকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’