
চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের সব থেকে বড় এ রুটকে সরকার মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ আসে। গতকালের বৈঠকে ওই সুপারিশের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি হিসেবে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করে চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির আগের বৈঠকে (গত ১৫ জানুয়ারি) সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী প্রসঙ্গটি তোলেন। মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছাকাছি অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ মাদকে আক্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ভারত থেকে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে ঢুকছে। পরে তিনি সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধে নিিদ্র সীমান্ত নিশ্চিতকরণ, স্যাটেলাইট ইমেজারি প্রযুক্তি স্থাপন এবং চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী ও বৈঠকে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান মাদক ও অস্ত্র আটক, চোরাচালানে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার বিপদের কথা বলেন।
বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। রোহিঙ্গা ডেটাবেজটি এনটিএমসিকে দেওয়া হলেও ২০১৮ সাল-পরবর্তী সময়ে তা হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে বর্তমানের ডেটাবেজ না থাকায় আইনপ্রয়োগকারী ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এতে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার বিষয়টি আবারও উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদক পাচার ও কারবারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যিনিই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এখানে বাস করতে হলে আমাদের দেশের আইন মানতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এমন কর্মকা- থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। এসব বন্ধ না করলে হয় তারা তাদের দেশে ফেরত যাবে, না হয় অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া কাটলেই গুলি চালায়। এখানে তারের বেড়া কাটলে আমাদেরও কঠোর হতে হবে। কক্সবাজার অঞ্চল মাদকপ্রবণ এলাকা বলেই এখানে সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।
কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, মাদক পাচারের বিভিন্ন রুটের মধ্যে কক্সবাজার রুটেই বেশিরভাগ মাদক আসার কথা জানা যায়। বর্তমানে মাদক পাচার প্রায় তিনগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২০ সালে একশর বেশি তালিকাভুক্ত মাদক পাচারকারী আত্মসমর্পণ করেছিল। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা আবারও এ পাচার কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার এলাকায় মাদক পাচার রোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বিশেষ ভাতার আওতায় আনার কথাও বলেন এ সদস্য।
পরে বৈঠকে কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ জিরো পয়েন্টে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মাদক পাচারের বড় রুট হিসেবে এ পয়েন্টটি চিহ্নিত হয়েছে।
মাদক পাচারকারী, অবৈধ মাদক কারবারি, সব রোহিঙ্গা এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরির বিষয়ে অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাদক কারবারিদের একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলমান বলেও বৈঠকের অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মাদকের (ইয়াবা) চালান মিয়ানমার থেকে ওইদিক দিয়ে আসে (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার)। সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করা হলে গুরুত্ব পায়। তবে সেটা ঘোষণা হলে একটা অ্যাটেনশন হবে ওখানে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটছে কি না। তাই বিষয়টি আলোচনার মধ্যে আছে।’
তেরো বছর আগে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৯০ শতাংশের মতো। পুরো কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেই কেন্দ্রটি থেকে আদৌ পুরো সক্ষমতায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।
অথচ এই কেন্দ্রের ৪ বছর পর পটুয়াখালীর পায়রায় একই ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ-চীনের যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০২০ সালে। সেখানে সমান সক্ষমতার আরও একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, যেটি ২০২৫ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে এমন দাবি তুলে শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজ। যদিও সরকারের দাবি, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এই কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথভাবে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) গঠন করে কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণসহায়তায় কেন্দ্রটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড (ভেল)।
কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়। পরে দুই দেশের সমান অংশীদারিত্বে গঠিত হয় নতুন কোম্পানি। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল ক্রয় চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ক্রয় চুক্তির সময় কেন্দ্র থেকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৮ দশমিক ৮৫ টাকা ধরা হলেও বর্তমানে কয়লার মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম দিতে হবে ১৪ থেকে ১৫ টাকা।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রামপাল কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। শুরুতেই এই কেন্দ্র নিয়ে আশঙ্কা করা হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। এটি যখন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনো এই কেন্দ্রের বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল না। আর এখন সরকারের দাবি অনুযায়ী, চাহিদার চেয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। ফলে এখন এই কেন্দ্র একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। উপরন্তু নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে ঋণের কিস্তি। এককথায় বলা যায়, কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে অনেক ভোগাবে।’
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শুরু থেকেই মিথ্যাচার ও লুকোচুরির অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছিল কেন্দ্রটি নির্মাণে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। বেশ পরে জানা গেল, আসলে সেখানে সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রযুক্তির চেয়ে প্রথম প্রযুক্তি ব্যবহারে কয়লার দূষণ হয় কম।
দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ সম্পর্কিত তথ্য সহজে পাওয়া গেলেও রামপাল কেন্দ্রের সঠিক তথ্য কখনোই পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশ জটিল। সেখান থেকেও সহজে তথ্য পাওয়া বেশ মুশকিল। নানা কসরতে সাধারণ কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেখানে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি রামপাল কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। ওই দলে এই প্রতিবেদকও ছিলেন। কিন্তু সেখানেও একধরনের লুকোচুরি চোখে পড়ে। সেখানে প্রকল্প পরিচালকের ব্রিফিং, বাইরের কিছু ছবি তোলা আর কয়লার জেটি পরিদর্শন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনা পরিদর্শন করার সুযোগ হয়নি নিরাপত্তার খোঁড়া অজুহাতে। ফলে কেন্দ্রটির ভেতরের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়নি। অথচ দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে সবকিছুই দেখানো হয়।
তবে বাইরে থেকে যতটুকু দেখা গেছে, তাতে প্রায় পুরো প্রকল্প এলাকাজুড়ে অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষতার ছাপ চোখে পড়েছে। চারদিকে ধুলা আর আবর্জনায় ভরা। কোনো কোনো যন্ত্রপাতিতে মাকড়সার জাল ও মরিচা ধরার চিহ্ন পাওয়া গেছে। কয়লা আমদানির জেটিতে যাওয়ার রাস্তা কাদাবালিতে একাকার। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জেটির নিচে বড় বড় ঘাস জন্মেছে। কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এখানে যাওয়ার পথে সারি সারি কয়েকটি পুকুর চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এগুলো সব ‘অ্যাশ পন্ড’, যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই রাখা হবে। তবে গর্ত করে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। এ ছাড়া কেন্দ্রে ব্যবহৃত পানি ব্যবস্থাপনার পাইপলাইনেও একাধিক ফাটল দেখা গেছে।
সাধারণত কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯০ দিনের জ্বালানি মজুদ রাখা বাধ্যতামূলক হলেও রামপালের প্রথম ইউনিট চালুর ২৩ দিনের মাথায় কয়লার অভাবে গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা আমদানির পর ১৬ ফেব্রয়ারি কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে।
বর্তমানে কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা। গত ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের শর্ত পূরণ করেছে এমন দাবি করেছেন বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আকরাম উল্লাহ।
গতকাল রবিবার তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট প্রস্তুত। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।
অ্যাশ পন্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ছাই সরাসরি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অ্যাশ পন্ডের কোনো দরকার হচ্ছে না। তবে জরুরি মুহূর্তের জন্যই এটা নির্মাণ করা হবে। নির্মাণকাজের অগ্রগতি কতটুকু তা জেনে জানাতে পারবেন বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, পরীক্ষামূলক উৎপাদনের পর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য এত বেশি সময় নেওয়ার নজির নেই। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রটিতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে পূর্ণ ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট হলেও ৬০০ মেগাওয়াট লোডে বেশি সময় ধরে চললে বয়লারের টিউব ফেটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। তখন কেন্দ্রটি বন্ধ করতে হচ্ছে। এমন ঘটনা একাধিকবার সৃষ্টি হওয়ায় ভবিষ্যতে কেন্দ্রটির পূর্ণক্ষমতায় উৎপাদন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এর আগে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। তাড়াহুড়া করে কেন্দ্রটি নির্মাণ করায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই বন্ধ থাকায় সেখানে আরও একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি কয়লা সংকটের কারণে এই কেন্দ্র থেকেও ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। কত দিন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তা নিয়েও কর্মকর্তাদের অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটি এখন পিডিবির জন্য অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আবার বোঝা হয়ে দাঁড়ায় কি না, তা নিয়েও রয়েছে একধরনের সংশয়। তবে এ সংশয় সত্যি হলে তা দীর্ঘদিন ভোগাবে দেশকে। কারণ উৎপাদন না করলেও ২৫ বছর পর্যন্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি কেন্দ্রটি নির্মাণে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেটিও পরিশোধ করতে হবে।
দেশের অন্য সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে রামপালকে। কেন্দ্রটি উৎপাদন করুক বা না করুক প্রতি ইউনিটের জন্য কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে ৪ দশমিক ৮৫ সেন্ট। দুটি ইউনিট একসঙ্গে চালু হলে বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে কেন্দ্রভাড়া গুনতে হবে পিডিবিকে। অন্যদিকে দেশে তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট গড়ে ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পা-ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। ডলারসংকটের কারণে সময়মতো কয়লা আমদানি করতে না পারায় কিছুদিন কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পাইপলাইনে যে কয়লা রয়েছে, তা দিয়ে একটি ইউনিট আগামী এপ্রিল পর্যন্ত চালানো যাবে। এর মধ্যে আমদানি জটিলতা না কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।
তবে একাধিক সূত্রমতে, বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার আগে যে পরিমাণ কয়লা মজুদের দরকার, তা করা হয়নি। ডলারসংকট হয় এর পরে। ক্যাপাসিটি চার্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি না নিয়েই তড়িঘড়ি করে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
আগামী জুন মাসে কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে প্রকল্প পরিচালক এমন তথ্য জানালেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকৌশলী জানান, কাজের যে অগ্রগতি তাতে পুরো কাজ শেষ করতে চলতি বছর লেগে যাবে।
বয়লার টিউব ফেটে যাওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘অনেক দিন আগে টিউব এনে সেগুলো গুদামে ফেলে রাখার কারণে সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা আর থাকবে না। ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রেও এ ধরনের সমস্যা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে পটুয়াখালীর পায়রায় উৎপাদনে থাকা একই সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ ধরনের কোনো সমস্যার কথা এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন যেকোনো কিছুর শুরুতেই অনেক ঝামেলা হয়। রামপালের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই এই কেন্দ্র নির্মাণের কারণে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। যেটা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে হয়নি। তবে এটা সত্যি, আরও আগে রামপাল উৎপাদনে এলে গত বছর বিদ্যুৎ নিয়ে যে সংকট ছিল তা মোকাবিলায় সহায়ক হতো। সবকিছুর পরও কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষের দিকে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নিম্নমানের যন্ত্রপাতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ভালো না হলেও অন্তত ওই কেন্দ্রের মতো গুণগত মান যেন রামপালে ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে আমরা বলেছি।’
বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘কোয়ালিটি ফেইল’ করছে। সেখানে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যারা এই কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, তারাই বলেছেন সবকিছু বিবেচনায় রামপাল আর পায়রার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। রামপাল যারা নির্মাণ করছে, তারা কেন গুণগত মান ঠিক করল না, সেটা দেখার বিষয়। না হলে পুরো বিষয় ভেস্তে যাবে; যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। কারণ নির্ধারিত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারলে অন্য কেন্দ্রের ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়। রামপালের ক্ষেত্রে এটা হলে সেই জরিমানা তো বাংলাদেশকেও দিতে হবে।
তিনি বলেন, সবার আগে এই কেন্দ্রের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঠিকমতো কাজ শেষ হয়নি। এখানে সম্পূর্ণ অদক্ষতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদের যে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা একটা অসিলামাত্র। সত্যিকার অর্থে তাদের বাধার কারণে এক দিনের জন্যও নির্মাণকাজ বন্ধ থাকেনি। এই কেন্দ্রের অনেক পরে পায়রা বিদ্যুতের কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের আগে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে নির্মাণকাজ শেষ করেছে নির্ধারিত বাজেটের চেয়েও কম টাকায়। রামপালের ক্ষেত্রে কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
শুরুতেই মুঠোভর্তি বেতন। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের সুযোগ। বহির্বিশে^ ব্যাপক চাহিদা। সবকিছুই মিলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চাকরিতে। এ কারণেই অন্য যেকোনো চাকরির তুলনায় মেধাবীরা ভিড় জমাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে।
এত সুযোগ-সুবিধার চাকরি বলেই তদবিরটাও আকাশচুম্বী। স্থানীয় প্রভাবশালী, জাতীয় রাজনীতিক, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের তদবির আর তদবির। বাদ নেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। কিন্তু কোনো তদবিরেই কারও তকদির ফিরছে না। সব তদবির পাশে রেখে মেধাভিত্তিক জনবল বাছাই নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে সরাসরি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের তত্ত্বাবধানে। মৌখিক পরীক্ষায়ও বুয়েটের প্রতিনিধি থাকেন। প্রকল্পের কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়, মনস্তত্ত্ববিদসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রার্থী বাছাই করেন।
চার বছর আগে প্রথম দিনের মৌখিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান হাজির হয়েছিলেন। পরীক্ষা বোর্ডেই প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন প্রার্থীদের তদবির আমলে নেওয়া হবে কি না। মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার নিজের কোনো তদবির নেই। কাজেই আমার দিক থেকে কোনো চাপ নেই। বাকি কাজটা আপনারা নির্ভয়ে করতে পারবেন তো?’ মন্ত্রীর এ অভয়বাণী শুনে আশান্বিত হয়ে ওঠেন প্রকল্প পরিচালক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারও তদবির আমলে নেওয়া হয়নি।
ইয়াফেস ওসমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনবলও তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতের উন্নত জাতি গঠনের জন্য পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ উপলব্ধি থেকেই নির্মোহভাবে জনবল বাছাই করা হচ্ছে। কোনো ধরনের তদবির মানা হয়নি। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেশের সেরা মেধাবীদের হাতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী।
দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের জন্য জনবল লাগবে ২ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে ধাপে ধাপে নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৯২৭ জন। তাদের মধ্যে ৮৫১ জনকে রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সাতজন কর্মকর্তা ২০১৮ সাল থেকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ¦ালানি আসার আগেই রাশিয়া থেকে রূপপুর ফিরবেন। আরও ৫৬৪ পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব পদের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ২৫ হাজার। প্রতি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৪৪টি। এসব কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানেই রূপপুরের দুটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পর যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাকরি ছেড়ে দেন তখন কী হবে। সেই ব্যবস্থাও পাকা করে রেখেছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে তাদের বন্ড সই দিতে হয়েছে যে, ১১ বছরের আগে কোনো অবস্থাতেই তারা চাকরি ছাড়তে পারবেন না। এর আগে চাকরি ত্যাগ করলে তাদের পেছনে প্রশিক্ষণ বাবদ বা তাদের গড়ে তুলতে সরকারের যে খরচ হয়েছে তা তাকে ফেরত দিতে হবে। তবে ১১ বছর চাকরির পর কেউ ইচ্ছা করলে চাকরি ছাড়তে পারবেন।
১১ বছর পর কিছু লোক চাকরি ছাড়তে পারেন, তখন শূন্যতা তৈরি হবে কি না জানতে চাইলে শৌকত আকবর বলেন, ‘সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছি। ততদিনে তার বেতনও অনেক বেড়ে যাবে। এ কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চাকরির বেতন অন্য যেকোনো চাকরির চেয়ে বেশি।’
প্রকল্পে যোগদানের পর দুই বছর প্রশিক্ষণ চলবে। এরপর চাকরি স্থায়ী হলে সেকশন লিড ইঞ্জিনিয়ার পদের বেসিক বা মূল বেতন হবে ৬২ হাজার ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা যোগ হবে। কর্মীদের আকৃষ্ট করার জন্য ৪০ শতাংশ হারে প্রজেক্ট অ্যালাউন্স দেওয়া হচ্ছে। সব মিলে মোট বেতন দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) বাছাই প্রক্রিয়া শেষে যারা বিসিএস বিভিন্ন ক্যাডারে যোগ দেন তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে শুরুতেই একটা ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়ে মূল বেতন দাঁড়ায় ২৩ হাজার টাকার কিছু বেশি।
কারা প্রকল্পের বিভিন্ন পদে বাছাই হচ্ছেন জানতে চাইলে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এই চাকরিতে আসছেন। বুয়েট ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন।
দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে পদোন্নতি দেওয়া হয় সিনিয়রিটির ভিত্তিতে। বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে পদোন্নতির ভিত্তি হবে লিখিত পরীক্ষা এমন প্রস্তাব ছিল সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়ায়। এ নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলেন জুনিয়র কর্মকর্তারা। তাদের বক্তব্য ছিল, একবার পরীক্ষা দিয়ে তারা চাকরি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়ার জন্য তারা আবার পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। তাদের আরও যুক্তি ছিল, যে সিনিয়র কর্মকর্তারা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি পাওয়ার বিধান চালু করতে চান তারা সারা জীবন পদোন্নতি পেয়েছেন সিনিয়রিটির ভিত্তিতে। সিনিয়ররা যদি সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদোন্নতি পান জুনিয়ররা কেন পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি পাবেন এ নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল প্রশাসনে। শেষ পর্যন্ত জুনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে নতি স্বীকার করে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতির বিধান থেকে সরে আসে সরকার।
এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, রূপপুরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি কীভাবে হবে। বিষয়টি জানার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পরমাণু শক্তি কমিশনের রূপপুর প্রকল্প অফিসে মুখোমুখি হলে প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর বলেন, পদোন্নতি পেতে হলে পরীক্ষায় বসতে হবে। পরীক্ষা দিয়ে ধাপে ধাপে পদোন্নতি নিতে হবে রূপপুরের কর্মকর্তাদের। একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট পদে দীর্ঘদিন চাকরি করেও পরবর্তী পদের জন্য অযোগ্য হতে পারেন। কাজেই পদোন্নতির জন্য অবশ্যই পরীক্ষা দিতে হবে।
দেশের সাধারণ মানুষ কবে নাগাদ পরমাণু বিদ্যুৎ পাবে জানতে চাইলে শৌকত আকবর চুপ হয়ে যান। তার দৃষ্টি চলে যায় অফিস রুমের সুপরিসর জানালা ভেদ করে অসীম আকাশে। চুপচাপ মনে মনে যোগ-বিয়োগ করে জানালেন, সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের অক্টোবরে জ্বালানি আসবে। তারপর ধাপে ধাপে উৎপাদনে যাবে সবচেয়ে দামি এ প্রকল্প।
শৌকত আকবরের চেয়ারে বসেই টিএসসির পাশ দিয়ে যাওয়া মেট্রোরেল দেখা যায়। টিএসসির পূর্বপাশের দেবদারু গাছের ফাঁক গলে মেট্রোরেল দেখিয়ে প্রকল্প পরিচালক বললেন, ‘ভালো জিনিসের জন্য কারোরই তর সয় না। আমাদেরও সইছে না। আশা করি শিগগিরই এর দেখা মিলবে।’
পার্বত্য তিন জেলায় অভিযানের মুখে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩৯ জঙ্গি পালিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে বলে পুলিশের একটি সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে। সংস্থার একটি সূত্র বলছে, এ জঙ্গিদের সহায়তা করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের ধরতে সহয়তা চেয়ে ভারতকে অনুরোধ জানানো হবে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। জঙ্গিরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিএসএফ তৎপর বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশ থেকে পুরোদমে জঙ্গি নির্মূল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে পুরনো জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাসহ অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে। তবে নতুন একটি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালালেও তাদের সেই স্বপ্নপূরণ হবে না। কোমলমতি তরুণ-তরুণীদের তারা টার্গেট করেছে। তবে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে না কেউ। যারা ভুলে চলে গিয়েছিল তারা আবার ফেরত এসেছে। যারা আসেনি তাদের ধরতে পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘পাহাড় অঞ্চলে এ সংগঠনের সদস্যরা আছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। সেই আলোকে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। তবে জঙ্গিদের হামলা বা তৎপরতা চালানোর শক্তি নেই। তাদের শক্তি খর্ব করা হয়েছে।’
পুলিশের ওই সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপাস্তরকে জানান, সম্প্রতি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শারক্বীয়ার শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলা শায়েখের কাছ থেকে নানা বিষয়ে তথ্য জানা যাচ্ছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে কারা কারা সহায়তা করছে সে ব্যাপারে মুখ খুলেছেন তিনি। আত্মগোপনে থাকা সদস্যরা কোথায় কোথায় অবস্থান করছেন সেই তথ্যও তিনি দিচ্ছেন। পুলিশের ওই সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে, মিজোরাম সীমান্তে অবস্থান করা শারক্বীয়ার ৩৯ সদস্যের মধ্যে সংগঠনটির আমির মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, অর্থ শাখার প্রধান এবং দাওয়াতি শাখার প্রধানও রয়েছেন। এ ছাড়া আছেন শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন, মোশারফ হোসেন, শামীম মাহফুজ। এর আগে শায়েখসহ ৪০ জন পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে তারা ফের বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে চলে আসে। কেএনএফ পাহাড়ে শারক্বীয়াকে আশ্রয়, প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করছে।
গত বছর আগস্টে কুমিল্লা থেকে আট যুবক নিখোঁজের খবর আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। পরে জানা যায়, দেশের ১৯ জেলা থেকে নিখোঁজ হয়েছে ৫৫ জন। এ নিখোঁজ তরুণদের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নাম জানতে পারে। নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ‘সামরিক বাহিনীর’ পোশাক পরিধান করে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। এ পর্যন্ত অর্ধশত সদস্যকে ধরা হয়েছে। গত বছর অক্টোবর থেকে র্যাব এ পর্যন্ত আটটি বড় ধরনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায়। অভিযানের একটি ছিল রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায়। ওই অভিযানে কেএনএফের তিন এবং শারক্বীয়ার সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম অঞ্চলে ১২ থেকে ১৩টি ক্যাম্প রয়েছে। কেএনএফ সদস্যরাই এসব ক্যাম্পে শারক্বীয়া সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। র্যাবের অভিযানের পর জঙ্গি সংগঠনটির দুটি দল বান্দরবানের সিপ্পি পাহাড়ের কাছে (রামজুদান ক্যাম্পে) প্রশিক্ষণ নেয়। পরে ওই পাহাড় থেকে দক্ষিণে অন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দিকে রওনা হয়।
পুলিশের ওই সংস্থাটি জানায়, শারক্বীয়া নেতা কারছের নেতৃত্বে থাকা ২১ জনের দলটি মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই টিমের সদস্যরাই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ধাওয়ায় আবার বান্দরবানে ফিরে আসে। এদের মধ্যে মহিবুল্লাহ ছাড়া কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মূলত তারা মিজোরামের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা অভিযানের মুখে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে তারা পাহাড়ি অঞ্চলেই রয়েছে। তাদের সর্বশেষ অবস্থান মিজোরাম সীমান্ত এলাকায় বলে চিহ্নিত করেছি। এদের গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে পাহাড়ি এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় অভিযান শুরুর আগে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া তাদের কার্যক্রম শুরু করে। গত বছর সেপ্টেম্বরের দিকে আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য পাই। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে র্যাবের অভিযানের মুখে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বর্তমানে তাদের কোনো হামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বাইরে থাকলেও তাদের মূল প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় বড় কয়েকজন নেতাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন তাদের হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা নেই।
পুলিশ সূত্র জানায়, কেএনএফের সদস্যদের অনেকের বাড়ি ভারতের মিজোরামে। তারা সেখান থেকে দেশের পার্বত্য এলাকায় অস্থিরতার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা অতি গোপনে দেশের সীমান্ত এলাকার পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলে। এরপর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য কেএনএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কয়েকজন পালিয়ে আসার পর বিষয়টি টের পায় র্যাব ও পুলিশ।
গত ৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আবদুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন (অর্থদাতা), আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ (অর্থদাতা) এবং দাওয়াতি কাজে যুক্ত রনি মিয়াকে। ৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ধরা হয় গোলাম সারোয়ার (শারীরিক ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষক), সাকির মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন ও ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈমকে। ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও বেয়াংছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে নিজাম উদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ, সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা, সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন, বাইজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ ওরফে বাইরু এবং ইমরান বিন রহমান শিথিল ওরফে বিল্লালকে। ২৩ জানুয়ারি ইয়াহিয়া গার্ডনের গহিন বনে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় মাসুদুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ (শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম ওরফে কয়কে। ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করে পুলিশ ও র্যাব।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিজোরাম সীমান্তে ৩৯ জঙ্গি অবস্থানের বিষয়ে ভারতকে আমরা অবহিত করেছি। ওইসব জঙ্গি ধরতে ভারতের সহায়তা চাওয়া হবে। নতুন জঙ্গি সংগঠনটি নিয়ে আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। তাদের যে চক্রটি সহায়তা করছে তারা ভয়ংকর প্রকৃতির। ইতিমধ্যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে জঙ্গিরা কিছু একটা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি।’
চিনির দামে লাগাম টানতে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে গতকাল রবিবার এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। চিনি আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, শুল্ক প্রত্যাহারের এ সুবিধা নিয়ে আমদানি করা চিনি আগামী মাসের (মার্চ) প্রথম ভাগে দেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ভারত থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন বা ১ কোটি ২৫ লাখ কেজি চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১১ জানুয়ারি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ চিনিও রমজানের আগে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফলে আগামী রমজানে চিনির দাম বাড়বে না বলে মনে করছেন সরকারি নীতিনির্ধারকরা।
তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অতীতে দেখা গেছে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও কোনো না কোনো অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে সাধারণ ক্রেতাকে কষ্টে ফেলেছে। তাই শুধু আমদানি করলেই হবে না বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ থাকায় দেশের চিনির বাজার বেসরকারি খাতের মুষ্ঠিমেয় কিছু আমদানিকারকের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি খাত থেকে মূলত অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে দেশেই পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। অনেকে আবার পরিশোধিত চিনিও আমদানি করে থাকে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভায় আমদানি, সরবরাহ পরিস্থিতি ও বাজারমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে যে গত ছয় মাসে প্রায় দুই লাখ টন চিনি কম আমদানি হয়েছে। মূলত ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারার কারণে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে টাস্কফোর্সের সভায় জানানো হয়। এতে রমজানে চাহিদার তুলনায় চিনির সংকট দেখা দিতে পারে। দাম আবারও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়। এ পরিস্থিতি এড়াতে টাস্কফোর্সের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনি আমদানি বাড়িয়ে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়। সভায় আশা প্রকাশ করা হয়, আমদানি বাড়লে আসছে মাসের শবেবরাত ও রমজানে চিনির চাহিদা বাড়লেও দাম স্থিতিশীল থাকবে।
দেশের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ^জিৎ সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা নিয়ে চিনি আমদানি করা হলে তা দেশে পৌঁছতে মার্চের প্রথম ভাগ লাগবে। শুল্ক সুবিধায় আমদানি করা চিনি দেশের বাজারে ছাড়া হলে চিনির দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো শুনেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের সভায় বলা হয়েছে চিনি আমদানি কম হয়েছে। আশা করছি শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধায় আমদানি করা চিনি বাজারে ছাড়া হলে দাম স্থিতিশীল থাকবে।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তারকে বলেন, শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে অবশ্যই চিনির বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। তবে শুধু আমদানিতে সুবিধা দিলেই হবে না। কোনো অজুহাতেই যাতে সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম বাড়ানোর সুযোগ না পায় তার নজরদারিও থাকতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেতন থাকতে হবে।
সম্প্রতি এক সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, সরকার রমজানে সব ধরনের পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চেষ্টা করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণেও নজরদারি করা হবে। সাধারণ ক্রেতা যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি চিনি আমদানিতে রাজস্ব সুবিধা দেওয়া হলে বাজানে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শুল্ক প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করায় আগামী ৩০ মে পর্যন্ত আমদানিকারকরা বিনা শুল্কে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি খালাস করতে পারবেন। আগে প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৬ হাজার টাকা ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা শুল্ক কর নির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণমূলক শুল্ক আরোপিত ছিল। দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এটি কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এ সুবিধা চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে প্রতি টন চিনি আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ৩ হাজার টাকা, সংরক্ষণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে চিনি আমদানি ডিউটি পড়ে প্রায় ৬১ শতাংশ।
কয়েক মাস থেকে দেশে চিনির সংকট চলছে। ক্ষেত্রবিশেষে ১২০ টাকা দিয়েও এক কেজি চিনি কিনতে পারেননি ভোক্তা এমন ঘটনাও আছে। এখনো সেই সংকট পুরোপুরি কাটেনি। উচ্চ দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। এদিকে আসছে মাসেই রমজান। সারা বছর ১২-১৩ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। তবে রমজান মাসে অন্য সময়ের তুলনায় চিনির চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে চিনির চাহিদা দুই লাখ টন ছাড়িয়ে যায়।
অন্যদিকে এনবিআরসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূলত রোজায় নিরবচ্ছিন্ন চিনির সরবরাহ এবং দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকার চিনি কিনছে : ভারত থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন বা ১ কোটি ২৫ লাখ কেজি চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ চিনির জন্য কেজিপ্রতি খরচ হবে ৫৬ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গত ১১ জানুয়ারি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতের কলকাতার শ্রীনোভা ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এ চিনি কেনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এ চিনি কিনতে খরচ হবে ৭০ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনি কিনতে খরচ হবে ৫৬ টাকা ২ পয়সা। এর আগে গত বছর ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ব্রাজিল থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টিসিবির জন্য কেনা ওই চিনির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৬২৫ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। প্রতি টন চিনির দাম ধরা হয় ৫২৪ ডলার। সরকারের কেনা এসব চিনিও রমজানের আগে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। একদিন এই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার তার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ডা. এস এ মালেক স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অডিটরিয়ামে এ সভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর এক দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ডা. এস এ মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে কয়জন অবদান রেখে গেছেন তার মধ্যে ডা. এস এ মালেক একজন। অত্যন্ত বৈরী পরিবেশের মধ্যেও তিনি জাতির পিতার আদর্শকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতাকর্মীদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি তিনি অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার লেখনীর মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শকে তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও তিনি লিখে গেছেন। আমি মনে করি সেগুলো আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ হিসেবে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার, মানুষের মাঝে জনমত সৃষ্টি, লেখালেখি এবং সংগঠন করার ক্ষেত্রে তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা ভাবেননি। কিন্তু ১৯৮১ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আমার অনুপস্থিতিতে সভাপতি করায় আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, ড. মালেক ও মোহাম্মদ হানিফ তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কারণ তারা জনমত তৈরি করেছেন এবং দলীয় ফোরামে নিয়ে গেছেন। এমনকি তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য বারবার জোর দেওয়ার জন্য ডা. এস এ মালেককে তিরস্কার করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আলোচনা সভায় সিনিয়র সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার ডা. এস এ মালেক ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-আলোয় আঁকা সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক এবং ডা. এস এ মালেকের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন।
ডা. মালেককে রাজনীতি সচেতন হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল।
মুক্তিযুদ্ধে ডা. মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালেক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তার যুদ্ধক্ষেত্র কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এয়ার রেইড চলার সময়ও তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ডা. মালেক ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজবাড়ী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন প্রসঙ্গে বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করতে এবং তার আদর্শ জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্যই এর সৃষ্টি। কেননা সে সময় শেখ মুজিব নামটাও নিষিদ্ধ ছিল। আর মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াকে সেনাপ্রধান করার ৩ মাসের মধ্যে জিয়া ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলে এই বঙ্গবন্ধু পরিষদই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রচার করার প্রয়াস নেয়। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সৃষ্টির পেছনে ড. মতিন চোধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এর দায়িত্বে থাকা বেগম সুফিয়া কামাল, বিচারপতি কে এম সোবহানসহ অন্যদের অবদানকেও স্মরণ তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই এদেশকে গড়ে তুলছি। করোনা অতিমারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাই আমাদের প্রচেষ্টা। এজন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশ একদিন উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে।
তিনি মরহুম ডা. এস এ মালেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। গতকাল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলোজি ডিপার্টমেন্ট অব ইনিওস ইনস্টিটিউটের অ্যান্টিমাইক্রোবাইয়াল রিসার্চের পরিচালক প্রফেসর টিমোথি ই ওয়ালশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমের কাছে ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ‘চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, একসময় দেশের বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতো। কিন্তু এখন তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।’
অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সবস্থানেই অ্যান্টিবয়োটিকের বিক্রি বন্ধ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
টিমোথি ই ওয়ালশ বলেন, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেস্টিস্ট্যান্স (এএমআর) এখন বিশ্বে একটি মহামারী আকারে আবির্ভূত হয়েছে। এখনই যদি এটা বন্ধ করা না হয় তবে ভবিষ্যতে এটা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রফেসর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এর কারণে লাখো মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে।’
এ সময় তিনি এএমআর বিষয়ক গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, হৃদরোগ, বক্ষব্যাধি, ক্যানসার ও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের মতো বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ দেশের স্বাস্থ্য খাতে সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার কৃষি, মৌলিক বিজ্ঞান ও ওষুধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের ব্যাপারে তিনি বলেন, বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা বিশেষত পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টরাল ও গবেষণাক্ষেত্রের জন্য ২০০টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠককালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ইনিওস ইনস্টিটিউট অব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রিসার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু-আইওআই ফেলোশিপের অধীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার জন্য স্কলারশিপ প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে এই ফেলোশিপের ব্যাপারে তার সম্মতি প্রকাশ করেন।
এ ছাড়াও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ককাসের সঙ্গে এএমআর বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অংশীদারত্বের একটি প্রস্তাবও দেন টিমোথি ই ওয়ালশ এবং প্রধানমন্ত্রী এতে ইতিবাচক সাড়া দেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ্। বাসস
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’