
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাত ১টার দিকে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামে সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল জলিলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট নিয়ে যায়। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে একই গ্রামের তিন বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ডিআইজি আবদুল জলিলের বাবা, মাসহ কাজের লোকেরা থাকেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাবা আবদুল বাতেন বলেন, শনিবার রাতের খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১টার দিকে মুখে কালো মুখোশধারী সাত-আটজন ডাকাত মই ব্যবহার করে বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভেতর ঢুকে গেটের তালা ভেঙে রামদা ও ছুরি হাতে ঘরে প্রবেশ করে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বাড়ির সব সদস্যকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। মুখোশ পরিহিত ডাকাতরা অন্তত ঘণ্টাব্যাপী লুটপাট চালায়। তারা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিশেষ অনুষ্ঠানে পরার জন্য অতিরিক্ত ডিআইজির ইউনিফর্ম (টিউনিক) লুটে নেয় তারা।
প্রতিবেশীরা জানান, ডাকাতি শেষে ওই বাড়ির লোকজনের চিৎকারে তারা ঘটনাস্থলে যান। তারা বাড়ির লোকজনকে বাঁধা অবস্থায় পান। পরে তাদের উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন। তারা জানান, সপ্তাহ আগেই এ গ্রামের আলমগীরের বাড়িতে বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। এরও সপ্তাহ আগে আরও এক বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল। ১৫ দিনের ব্যবধানে ফের এক বাড়িতে ডাকাতি। গত দুই মাসে বিভিন্ন সড়কেও বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এখনো সেসব ডাকাতির কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। লুণ্ঠিত মালামালও উদ্ধার হয়নি। পরপর ডাকাতির এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিন্টু মোল্ল্যা বলেন, ডাকাতরা পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল জলিলের বাড়ির পেছন দিকে কাঁটাতারের বেড়া মই দিয়ে টপকে ভেতরে ঢোকে। এরপর তারা আধপাকা টিনশেড বারান্দায় থাকা থাই গ্লাস খুলে আবদুল বাতেনের শোবার ঘরে ছুরি, শাবল ও রড নিয়ে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে সফলতা আসবে।
এদিকে শ্রীপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তবে পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, ডাকাতির ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তেরো বছর আগে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৯০ শতাংশের মতো। পুরো কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেই কেন্দ্রটি থেকে আদৌ পুরো সক্ষমতায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।
অথচ এই কেন্দ্রের ৪ বছর পর পটুয়াখালীর পায়রায় একই ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ-চীনের যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০২০ সালে। সেখানে সমান সক্ষমতার আরও একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, যেটি ২০২৫ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে এমন দাবি তুলে শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজ। যদিও সরকারের দাবি, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এই কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথভাবে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) গঠন করে কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণসহায়তায় কেন্দ্রটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড (ভেল)।
কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়। পরে দুই দেশের সমান অংশীদারিত্বে গঠিত হয় নতুন কোম্পানি। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল ক্রয় চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ক্রয় চুক্তির সময় কেন্দ্র থেকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৮ দশমিক ৮৫ টাকা ধরা হলেও বর্তমানে কয়লার মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম দিতে হবে ১৪ থেকে ১৫ টাকা।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রামপাল কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। শুরুতেই এই কেন্দ্র নিয়ে আশঙ্কা করা হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। এটি যখন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনো এই কেন্দ্রের বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল না। আর এখন সরকারের দাবি অনুযায়ী, চাহিদার চেয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। ফলে এখন এই কেন্দ্র একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। উপরন্তু নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে ঋণের কিস্তি। এককথায় বলা যায়, কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে অনেক ভোগাবে।’
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শুরু থেকেই মিথ্যাচার ও লুকোচুরির অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছিল কেন্দ্রটি নির্মাণে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। বেশ পরে জানা গেল, আসলে সেখানে সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রযুক্তির চেয়ে প্রথম প্রযুক্তি ব্যবহারে কয়লার দূষণ হয় কম।
দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ সম্পর্কিত তথ্য সহজে পাওয়া গেলেও রামপাল কেন্দ্রের সঠিক তথ্য কখনোই পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশ জটিল। সেখান থেকেও সহজে তথ্য পাওয়া বেশ মুশকিল। নানা কসরতে সাধারণ কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেখানে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি রামপাল কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। ওই দলে এই প্রতিবেদকও ছিলেন। কিন্তু সেখানেও একধরনের লুকোচুরি চোখে পড়ে। সেখানে প্রকল্প পরিচালকের ব্রিফিং, বাইরের কিছু ছবি তোলা আর কয়লার জেটি পরিদর্শন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনা পরিদর্শন করার সুযোগ হয়নি নিরাপত্তার খোঁড়া অজুহাতে। ফলে কেন্দ্রটির ভেতরের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়নি। অথচ দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে সবকিছুই দেখানো হয়।
তবে বাইরে থেকে যতটুকু দেখা গেছে, তাতে প্রায় পুরো প্রকল্প এলাকাজুড়ে অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষতার ছাপ চোখে পড়েছে। চারদিকে ধুলা আর আবর্জনায় ভরা। কোনো কোনো যন্ত্রপাতিতে মাকড়সার জাল ও মরিচা ধরার চিহ্ন পাওয়া গেছে। কয়লা আমদানির জেটিতে যাওয়ার রাস্তা কাদাবালিতে একাকার। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জেটির নিচে বড় বড় ঘাস জন্মেছে। কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এখানে যাওয়ার পথে সারি সারি কয়েকটি পুকুর চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এগুলো সব ‘অ্যাশ পন্ড’, যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই রাখা হবে। তবে গর্ত করে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। এ ছাড়া কেন্দ্রে ব্যবহৃত পানি ব্যবস্থাপনার পাইপলাইনেও একাধিক ফাটল দেখা গেছে।
সাধারণত কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯০ দিনের জ্বালানি মজুদ রাখা বাধ্যতামূলক হলেও রামপালের প্রথম ইউনিট চালুর ২৩ দিনের মাথায় কয়লার অভাবে গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা আমদানির পর ১৬ ফেব্রয়ারি কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে।
বর্তমানে কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা। গত ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের শর্ত পূরণ করেছে এমন দাবি করেছেন বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আকরাম উল্লাহ।
গতকাল রবিবার তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট প্রস্তুত। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।
অ্যাশ পন্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ছাই সরাসরি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অ্যাশ পন্ডের কোনো দরকার হচ্ছে না। তবে জরুরি মুহূর্তের জন্যই এটা নির্মাণ করা হবে। নির্মাণকাজের অগ্রগতি কতটুকু তা জেনে জানাতে পারবেন বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, পরীক্ষামূলক উৎপাদনের পর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য এত বেশি সময় নেওয়ার নজির নেই। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রটিতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে পূর্ণ ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট হলেও ৬০০ মেগাওয়াট লোডে বেশি সময় ধরে চললে বয়লারের টিউব ফেটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। তখন কেন্দ্রটি বন্ধ করতে হচ্ছে। এমন ঘটনা একাধিকবার সৃষ্টি হওয়ায় ভবিষ্যতে কেন্দ্রটির পূর্ণক্ষমতায় উৎপাদন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এর আগে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। তাড়াহুড়া করে কেন্দ্রটি নির্মাণ করায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই বন্ধ থাকায় সেখানে আরও একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি কয়লা সংকটের কারণে এই কেন্দ্র থেকেও ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। কত দিন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তা নিয়েও কর্মকর্তাদের অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটি এখন পিডিবির জন্য অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আবার বোঝা হয়ে দাঁড়ায় কি না, তা নিয়েও রয়েছে একধরনের সংশয়। তবে এ সংশয় সত্যি হলে তা দীর্ঘদিন ভোগাবে দেশকে। কারণ উৎপাদন না করলেও ২৫ বছর পর্যন্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি কেন্দ্রটি নির্মাণে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেটিও পরিশোধ করতে হবে।
দেশের অন্য সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে রামপালকে। কেন্দ্রটি উৎপাদন করুক বা না করুক প্রতি ইউনিটের জন্য কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে ৪ দশমিক ৮৫ সেন্ট। দুটি ইউনিট একসঙ্গে চালু হলে বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে কেন্দ্রভাড়া গুনতে হবে পিডিবিকে। অন্যদিকে দেশে তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট গড়ে ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পা-ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। ডলারসংকটের কারণে সময়মতো কয়লা আমদানি করতে না পারায় কিছুদিন কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পাইপলাইনে যে কয়লা রয়েছে, তা দিয়ে একটি ইউনিট আগামী এপ্রিল পর্যন্ত চালানো যাবে। এর মধ্যে আমদানি জটিলতা না কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।
তবে একাধিক সূত্রমতে, বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার আগে যে পরিমাণ কয়লা মজুদের দরকার, তা করা হয়নি। ডলারসংকট হয় এর পরে। ক্যাপাসিটি চার্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি না নিয়েই তড়িঘড়ি করে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
আগামী জুন মাসে কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে প্রকল্প পরিচালক এমন তথ্য জানালেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকৌশলী জানান, কাজের যে অগ্রগতি তাতে পুরো কাজ শেষ করতে চলতি বছর লেগে যাবে।
বয়লার টিউব ফেটে যাওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘অনেক দিন আগে টিউব এনে সেগুলো গুদামে ফেলে রাখার কারণে সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা আর থাকবে না। ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রেও এ ধরনের সমস্যা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে পটুয়াখালীর পায়রায় উৎপাদনে থাকা একই সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ ধরনের কোনো সমস্যার কথা এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন যেকোনো কিছুর শুরুতেই অনেক ঝামেলা হয়। রামপালের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই এই কেন্দ্র নির্মাণের কারণে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। যেটা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে হয়নি। তবে এটা সত্যি, আরও আগে রামপাল উৎপাদনে এলে গত বছর বিদ্যুৎ নিয়ে যে সংকট ছিল তা মোকাবিলায় সহায়ক হতো। সবকিছুর পরও কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষের দিকে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নিম্নমানের যন্ত্রপাতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ভালো না হলেও অন্তত ওই কেন্দ্রের মতো গুণগত মান যেন রামপালে ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে আমরা বলেছি।’
বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘কোয়ালিটি ফেইল’ করছে। সেখানে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যারা এই কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, তারাই বলেছেন সবকিছু বিবেচনায় রামপাল আর পায়রার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। রামপাল যারা নির্মাণ করছে, তারা কেন গুণগত মান ঠিক করল না, সেটা দেখার বিষয়। না হলে পুরো বিষয় ভেস্তে যাবে; যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। কারণ নির্ধারিত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারলে অন্য কেন্দ্রের ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়। রামপালের ক্ষেত্রে এটা হলে সেই জরিমানা তো বাংলাদেশকেও দিতে হবে।
তিনি বলেন, সবার আগে এই কেন্দ্রের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঠিকমতো কাজ শেষ হয়নি। এখানে সম্পূর্ণ অদক্ষতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদের যে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা একটা অসিলামাত্র। সত্যিকার অর্থে তাদের বাধার কারণে এক দিনের জন্যও নির্মাণকাজ বন্ধ থাকেনি। এই কেন্দ্রের অনেক পরে পায়রা বিদ্যুতের কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের আগে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে নির্মাণকাজ শেষ করেছে নির্ধারিত বাজেটের চেয়েও কম টাকায়। রামপালের ক্ষেত্রে কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
শুরুতেই মুঠোভর্তি বেতন। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের সুযোগ। বহির্বিশে^ ব্যাপক চাহিদা। সবকিছুই মিলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চাকরিতে। এ কারণেই অন্য যেকোনো চাকরির তুলনায় মেধাবীরা ভিড় জমাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে।
এত সুযোগ-সুবিধার চাকরি বলেই তদবিরটাও আকাশচুম্বী। স্থানীয় প্রভাবশালী, জাতীয় রাজনীতিক, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের তদবির আর তদবির। বাদ নেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। কিন্তু কোনো তদবিরেই কারও তকদির ফিরছে না। সব তদবির পাশে রেখে মেধাভিত্তিক জনবল বাছাই নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে সরাসরি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের তত্ত্বাবধানে। মৌখিক পরীক্ষায়ও বুয়েটের প্রতিনিধি থাকেন। প্রকল্পের কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়, মনস্তত্ত্ববিদসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রার্থী বাছাই করেন।
চার বছর আগে প্রথম দিনের মৌখিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান হাজির হয়েছিলেন। পরীক্ষা বোর্ডেই প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন প্রার্থীদের তদবির আমলে নেওয়া হবে কি না। মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার নিজের কোনো তদবির নেই। কাজেই আমার দিক থেকে কোনো চাপ নেই। বাকি কাজটা আপনারা নির্ভয়ে করতে পারবেন তো?’ মন্ত্রীর এ অভয়বাণী শুনে আশান্বিত হয়ে ওঠেন প্রকল্প পরিচালক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারও তদবির আমলে নেওয়া হয়নি।
ইয়াফেস ওসমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনবলও তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতের উন্নত জাতি গঠনের জন্য পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ উপলব্ধি থেকেই নির্মোহভাবে জনবল বাছাই করা হচ্ছে। কোনো ধরনের তদবির মানা হয়নি। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেশের সেরা মেধাবীদের হাতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী।
দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের জন্য জনবল লাগবে ২ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে ধাপে ধাপে নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৯২৭ জন। তাদের মধ্যে ৮৫১ জনকে রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সাতজন কর্মকর্তা ২০১৮ সাল থেকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ¦ালানি আসার আগেই রাশিয়া থেকে রূপপুর ফিরবেন। আরও ৫৬৪ পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব পদের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ২৫ হাজার। প্রতি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৪৪টি। এসব কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানেই রূপপুরের দুটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পর যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাকরি ছেড়ে দেন তখন কী হবে। সেই ব্যবস্থাও পাকা করে রেখেছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে তাদের বন্ড সই দিতে হয়েছে যে, ১১ বছরের আগে কোনো অবস্থাতেই তারা চাকরি ছাড়তে পারবেন না। এর আগে চাকরি ত্যাগ করলে তাদের পেছনে প্রশিক্ষণ বাবদ বা তাদের গড়ে তুলতে সরকারের যে খরচ হয়েছে তা তাকে ফেরত দিতে হবে। তবে ১১ বছর চাকরির পর কেউ ইচ্ছা করলে চাকরি ছাড়তে পারবেন।
১১ বছর পর কিছু লোক চাকরি ছাড়তে পারেন, তখন শূন্যতা তৈরি হবে কি না জানতে চাইলে শৌকত আকবর বলেন, ‘সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছি। ততদিনে তার বেতনও অনেক বেড়ে যাবে। এ কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চাকরির বেতন অন্য যেকোনো চাকরির চেয়ে বেশি।’
প্রকল্পে যোগদানের পর দুই বছর প্রশিক্ষণ চলবে। এরপর চাকরি স্থায়ী হলে সেকশন লিড ইঞ্জিনিয়ার পদের বেসিক বা মূল বেতন হবে ৬২ হাজার ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা যোগ হবে। কর্মীদের আকৃষ্ট করার জন্য ৪০ শতাংশ হারে প্রজেক্ট অ্যালাউন্স দেওয়া হচ্ছে। সব মিলে মোট বেতন দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) বাছাই প্রক্রিয়া শেষে যারা বিসিএস বিভিন্ন ক্যাডারে যোগ দেন তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে শুরুতেই একটা ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়ে মূল বেতন দাঁড়ায় ২৩ হাজার টাকার কিছু বেশি।
কারা প্রকল্পের বিভিন্ন পদে বাছাই হচ্ছেন জানতে চাইলে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এই চাকরিতে আসছেন। বুয়েট ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন।
দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে পদোন্নতি দেওয়া হয় সিনিয়রিটির ভিত্তিতে। বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে পদোন্নতির ভিত্তি হবে লিখিত পরীক্ষা এমন প্রস্তাব ছিল সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়ায়। এ নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলেন জুনিয়র কর্মকর্তারা। তাদের বক্তব্য ছিল, একবার পরীক্ষা দিয়ে তারা চাকরি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়ার জন্য তারা আবার পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। তাদের আরও যুক্তি ছিল, যে সিনিয়র কর্মকর্তারা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি পাওয়ার বিধান চালু করতে চান তারা সারা জীবন পদোন্নতি পেয়েছেন সিনিয়রিটির ভিত্তিতে। সিনিয়ররা যদি সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদোন্নতি পান জুনিয়ররা কেন পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি পাবেন এ নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল প্রশাসনে। শেষ পর্যন্ত জুনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে নতি স্বীকার করে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতির বিধান থেকে সরে আসে সরকার।
এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, রূপপুরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি কীভাবে হবে। বিষয়টি জানার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পরমাণু শক্তি কমিশনের রূপপুর প্রকল্প অফিসে মুখোমুখি হলে প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর বলেন, পদোন্নতি পেতে হলে পরীক্ষায় বসতে হবে। পরীক্ষা দিয়ে ধাপে ধাপে পদোন্নতি নিতে হবে রূপপুরের কর্মকর্তাদের। একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট পদে দীর্ঘদিন চাকরি করেও পরবর্তী পদের জন্য অযোগ্য হতে পারেন। কাজেই পদোন্নতির জন্য অবশ্যই পরীক্ষা দিতে হবে।
দেশের সাধারণ মানুষ কবে নাগাদ পরমাণু বিদ্যুৎ পাবে জানতে চাইলে শৌকত আকবর চুপ হয়ে যান। তার দৃষ্টি চলে যায় অফিস রুমের সুপরিসর জানালা ভেদ করে অসীম আকাশে। চুপচাপ মনে মনে যোগ-বিয়োগ করে জানালেন, সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের অক্টোবরে জ্বালানি আসবে। তারপর ধাপে ধাপে উৎপাদনে যাবে সবচেয়ে দামি এ প্রকল্প।
শৌকত আকবরের চেয়ারে বসেই টিএসসির পাশ দিয়ে যাওয়া মেট্রোরেল দেখা যায়। টিএসসির পূর্বপাশের দেবদারু গাছের ফাঁক গলে মেট্রোরেল দেখিয়ে প্রকল্প পরিচালক বললেন, ‘ভালো জিনিসের জন্য কারোরই তর সয় না। আমাদেরও সইছে না। আশা করি শিগগিরই এর দেখা মিলবে।’
পার্বত্য তিন জেলায় অভিযানের মুখে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩৯ জঙ্গি পালিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে বলে পুলিশের একটি সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে। সংস্থার একটি সূত্র বলছে, এ জঙ্গিদের সহায়তা করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের ধরতে সহয়তা চেয়ে ভারতকে অনুরোধ জানানো হবে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। জঙ্গিরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিএসএফ তৎপর বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশ থেকে পুরোদমে জঙ্গি নির্মূল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে পুরনো জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাসহ অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে। তবে নতুন একটি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালালেও তাদের সেই স্বপ্নপূরণ হবে না। কোমলমতি তরুণ-তরুণীদের তারা টার্গেট করেছে। তবে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে না কেউ। যারা ভুলে চলে গিয়েছিল তারা আবার ফেরত এসেছে। যারা আসেনি তাদের ধরতে পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘পাহাড় অঞ্চলে এ সংগঠনের সদস্যরা আছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। সেই আলোকে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। তবে জঙ্গিদের হামলা বা তৎপরতা চালানোর শক্তি নেই। তাদের শক্তি খর্ব করা হয়েছে।’
পুলিশের ওই সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপাস্তরকে জানান, সম্প্রতি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শারক্বীয়ার শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলা শায়েখের কাছ থেকে নানা বিষয়ে তথ্য জানা যাচ্ছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে কারা কারা সহায়তা করছে সে ব্যাপারে মুখ খুলেছেন তিনি। আত্মগোপনে থাকা সদস্যরা কোথায় কোথায় অবস্থান করছেন সেই তথ্যও তিনি দিচ্ছেন। পুলিশের ওই সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে, মিজোরাম সীমান্তে অবস্থান করা শারক্বীয়ার ৩৯ সদস্যের মধ্যে সংগঠনটির আমির মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, অর্থ শাখার প্রধান এবং দাওয়াতি শাখার প্রধানও রয়েছেন। এ ছাড়া আছেন শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন, মোশারফ হোসেন, শামীম মাহফুজ। এর আগে শায়েখসহ ৪০ জন পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে তারা ফের বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে চলে আসে। কেএনএফ পাহাড়ে শারক্বীয়াকে আশ্রয়, প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করছে।
গত বছর আগস্টে কুমিল্লা থেকে আট যুবক নিখোঁজের খবর আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। পরে জানা যায়, দেশের ১৯ জেলা থেকে নিখোঁজ হয়েছে ৫৫ জন। এ নিখোঁজ তরুণদের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নাম জানতে পারে। নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ‘সামরিক বাহিনীর’ পোশাক পরিধান করে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। এ পর্যন্ত অর্ধশত সদস্যকে ধরা হয়েছে। গত বছর অক্টোবর থেকে র্যাব এ পর্যন্ত আটটি বড় ধরনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায়। অভিযানের একটি ছিল রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায়। ওই অভিযানে কেএনএফের তিন এবং শারক্বীয়ার সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম অঞ্চলে ১২ থেকে ১৩টি ক্যাম্প রয়েছে। কেএনএফ সদস্যরাই এসব ক্যাম্পে শারক্বীয়া সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। র্যাবের অভিযানের পর জঙ্গি সংগঠনটির দুটি দল বান্দরবানের সিপ্পি পাহাড়ের কাছে (রামজুদান ক্যাম্পে) প্রশিক্ষণ নেয়। পরে ওই পাহাড় থেকে দক্ষিণে অন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দিকে রওনা হয়।
পুলিশের ওই সংস্থাটি জানায়, শারক্বীয়া নেতা কারছের নেতৃত্বে থাকা ২১ জনের দলটি মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই টিমের সদস্যরাই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ধাওয়ায় আবার বান্দরবানে ফিরে আসে। এদের মধ্যে মহিবুল্লাহ ছাড়া কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মূলত তারা মিজোরামের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা অভিযানের মুখে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে তারা পাহাড়ি অঞ্চলেই রয়েছে। তাদের সর্বশেষ অবস্থান মিজোরাম সীমান্ত এলাকায় বলে চিহ্নিত করেছি। এদের গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে পাহাড়ি এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় অভিযান শুরুর আগে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া তাদের কার্যক্রম শুরু করে। গত বছর সেপ্টেম্বরের দিকে আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য পাই। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে র্যাবের অভিযানের মুখে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বর্তমানে তাদের কোনো হামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বাইরে থাকলেও তাদের মূল প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় বড় কয়েকজন নেতাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন তাদের হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা নেই।
পুলিশ সূত্র জানায়, কেএনএফের সদস্যদের অনেকের বাড়ি ভারতের মিজোরামে। তারা সেখান থেকে দেশের পার্বত্য এলাকায় অস্থিরতার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা অতি গোপনে দেশের সীমান্ত এলাকার পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলে। এরপর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য কেএনএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কয়েকজন পালিয়ে আসার পর বিষয়টি টের পায় র্যাব ও পুলিশ।
গত ৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আবদুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন (অর্থদাতা), আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ (অর্থদাতা) এবং দাওয়াতি কাজে যুক্ত রনি মিয়াকে। ৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ধরা হয় গোলাম সারোয়ার (শারীরিক ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষক), সাকির মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন ও ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈমকে। ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও বেয়াংছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে নিজাম উদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ, সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা, সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন, বাইজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ ওরফে বাইরু এবং ইমরান বিন রহমান শিথিল ওরফে বিল্লালকে। ২৩ জানুয়ারি ইয়াহিয়া গার্ডনের গহিন বনে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় মাসুদুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ (শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম ওরফে কয়কে। ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করে পুলিশ ও র্যাব।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিজোরাম সীমান্তে ৩৯ জঙ্গি অবস্থানের বিষয়ে ভারতকে আমরা অবহিত করেছি। ওইসব জঙ্গি ধরতে ভারতের সহায়তা চাওয়া হবে। নতুন জঙ্গি সংগঠনটি নিয়ে আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। তাদের যে চক্রটি সহায়তা করছে তারা ভয়ংকর প্রকৃতির। ইতিমধ্যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে জঙ্গিরা কিছু একটা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি।’
চিনির দামে লাগাম টানতে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে গতকাল রবিবার এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। চিনি আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, শুল্ক প্রত্যাহারের এ সুবিধা নিয়ে আমদানি করা চিনি আগামী মাসের (মার্চ) প্রথম ভাগে দেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ভারত থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন বা ১ কোটি ২৫ লাখ কেজি চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১১ জানুয়ারি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ চিনিও রমজানের আগে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফলে আগামী রমজানে চিনির দাম বাড়বে না বলে মনে করছেন সরকারি নীতিনির্ধারকরা।
তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অতীতে দেখা গেছে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও কোনো না কোনো অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে সাধারণ ক্রেতাকে কষ্টে ফেলেছে। তাই শুধু আমদানি করলেই হবে না বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ থাকায় দেশের চিনির বাজার বেসরকারি খাতের মুষ্ঠিমেয় কিছু আমদানিকারকের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি খাত থেকে মূলত অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে দেশেই পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। অনেকে আবার পরিশোধিত চিনিও আমদানি করে থাকে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভায় আমদানি, সরবরাহ পরিস্থিতি ও বাজারমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে যে গত ছয় মাসে প্রায় দুই লাখ টন চিনি কম আমদানি হয়েছে। মূলত ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারার কারণে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে টাস্কফোর্সের সভায় জানানো হয়। এতে রমজানে চাহিদার তুলনায় চিনির সংকট দেখা দিতে পারে। দাম আবারও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়। এ পরিস্থিতি এড়াতে টাস্কফোর্সের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনি আমদানি বাড়িয়ে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়। সভায় আশা প্রকাশ করা হয়, আমদানি বাড়লে আসছে মাসের শবেবরাত ও রমজানে চিনির চাহিদা বাড়লেও দাম স্থিতিশীল থাকবে।
দেশের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ^জিৎ সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা নিয়ে চিনি আমদানি করা হলে তা দেশে পৌঁছতে মার্চের প্রথম ভাগ লাগবে। শুল্ক সুবিধায় আমদানি করা চিনি দেশের বাজারে ছাড়া হলে চিনির দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো শুনেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের সভায় বলা হয়েছে চিনি আমদানি কম হয়েছে। আশা করছি শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধায় আমদানি করা চিনি বাজারে ছাড়া হলে দাম স্থিতিশীল থাকবে।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তারকে বলেন, শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে অবশ্যই চিনির বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। তবে শুধু আমদানিতে সুবিধা দিলেই হবে না। কোনো অজুহাতেই যাতে সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম বাড়ানোর সুযোগ না পায় তার নজরদারিও থাকতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেতন থাকতে হবে।
সম্প্রতি এক সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, সরকার রমজানে সব ধরনের পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চেষ্টা করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণেও নজরদারি করা হবে। সাধারণ ক্রেতা যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি চিনি আমদানিতে রাজস্ব সুবিধা দেওয়া হলে বাজানে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শুল্ক প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করায় আগামী ৩০ মে পর্যন্ত আমদানিকারকরা বিনা শুল্কে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি খালাস করতে পারবেন। আগে প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৬ হাজার টাকা ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩ হাজার টাকা শুল্ক কর নির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণমূলক শুল্ক আরোপিত ছিল। দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এটি কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এ সুবিধা চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে প্রতি টন চিনি আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ৩ হাজার টাকা, সংরক্ষণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে চিনি আমদানি ডিউটি পড়ে প্রায় ৬১ শতাংশ।
কয়েক মাস থেকে দেশে চিনির সংকট চলছে। ক্ষেত্রবিশেষে ১২০ টাকা দিয়েও এক কেজি চিনি কিনতে পারেননি ভোক্তা এমন ঘটনাও আছে। এখনো সেই সংকট পুরোপুরি কাটেনি। উচ্চ দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। এদিকে আসছে মাসেই রমজান। সারা বছর ১২-১৩ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। তবে রমজান মাসে অন্য সময়ের তুলনায় চিনির চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে চিনির চাহিদা দুই লাখ টন ছাড়িয়ে যায়।
অন্যদিকে এনবিআরসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূলত রোজায় নিরবচ্ছিন্ন চিনির সরবরাহ এবং দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকার চিনি কিনছে : ভারত থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন বা ১ কোটি ২৫ লাখ কেজি চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ চিনির জন্য কেজিপ্রতি খরচ হবে ৫৬ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গত ১১ জানুয়ারি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতের কলকাতার শ্রীনোভা ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এ চিনি কেনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এ চিনি কিনতে খরচ হবে ৭০ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনি কিনতে খরচ হবে ৫৬ টাকা ২ পয়সা। এর আগে গত বছর ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ব্রাজিল থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টিসিবির জন্য কেনা ওই চিনির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৬২৫ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। প্রতি টন চিনির দাম ধরা হয় ৫২৪ ডলার। সরকারের কেনা এসব চিনিও রমজানের আগে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের সব থেকে বড় এ রুটকে সরকার মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ আসে। গতকালের বৈঠকে ওই সুপারিশের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি হিসেবে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করে চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির আগের বৈঠকে (গত ১৫ জানুয়ারি) সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী প্রসঙ্গটি তোলেন। মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছাকাছি অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ মাদকে আক্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ভারত থেকে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে ঢুকছে। পরে তিনি সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধে নিিদ্র সীমান্ত নিশ্চিতকরণ, স্যাটেলাইট ইমেজারি প্রযুক্তি স্থাপন এবং চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী ও বৈঠকে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান মাদক ও অস্ত্র আটক, চোরাচালানে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার বিপদের কথা বলেন।
বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। রোহিঙ্গা ডেটাবেজটি এনটিএমসিকে দেওয়া হলেও ২০১৮ সাল-পরবর্তী সময়ে তা হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে বর্তমানের ডেটাবেজ না থাকায় আইনপ্রয়োগকারী ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এতে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার বিষয়টি আবারও উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদক পাচার ও কারবারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যিনিই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এখানে বাস করতে হলে আমাদের দেশের আইন মানতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এমন কর্মকা- থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। এসব বন্ধ না করলে হয় তারা তাদের দেশে ফেরত যাবে, না হয় অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া কাটলেই গুলি চালায়। এখানে তারের বেড়া কাটলে আমাদেরও কঠোর হতে হবে। কক্সবাজার অঞ্চল মাদকপ্রবণ এলাকা বলেই এখানে সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।
কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, মাদক পাচারের বিভিন্ন রুটের মধ্যে কক্সবাজার রুটেই বেশিরভাগ মাদক আসার কথা জানা যায়। বর্তমানে মাদক পাচার প্রায় তিনগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২০ সালে একশর বেশি তালিকাভুক্ত মাদক পাচারকারী আত্মসমর্পণ করেছিল। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা আবারও এ পাচার কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার এলাকায় মাদক পাচার রোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বিশেষ ভাতার আওতায় আনার কথাও বলেন এ সদস্য।
পরে বৈঠকে কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ জিরো পয়েন্টে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মাদক পাচারের বড় রুট হিসেবে এ পয়েন্টটি চিহ্নিত হয়েছে।
মাদক পাচারকারী, অবৈধ মাদক কারবারি, সব রোহিঙ্গা এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরির বিষয়ে অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাদক কারবারিদের একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলমান বলেও বৈঠকের অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মাদকের (ইয়াবা) চালান মিয়ানমার থেকে ওইদিক দিয়ে আসে (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার)। সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করা হলে গুরুত্ব পায়। তবে সেটা ঘোষণা হলে একটা অ্যাটেনশন হবে ওখানে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটছে কি না। তাই বিষয়টি আলোচনার মধ্যে আছে।’
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।