
কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির সভায় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেক রহমানকে দলের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় সামনে রেখে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বলা হয়, রায়ে সাজা হলে দল পরিচালনা করবেন তারেক রহমান। তাই খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর থেকে তারেক রহমানই দল পরিচালনা করছেন। কিন্তু কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সরকার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এখনো রাজনীতিতে এক অর্থে নিষ্ক্রিয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে বাধা নেই বলা হলেও আদতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি নিয়ে ভারছেন না তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে খালেদা জিয়া ভাবছেন না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ডেকে পাঠান। এই মুহূর্তে তার একটাই চিন্তাÑ কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কারণ তিনি শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে কষ্ট সহ্য করছেন। কয়েক দিন আগে শরীরে ব্যথা ছিল। এখন নেই।’ তিনি বলেন, ‘দলের চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের বাইরে কাউকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ফিরোজা ভবনে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সঙ্গে ছিলেন। এর আগে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় গেছেন খালেদা জিয়া। রাতে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিরিয়াস কিছু নয়। রুটিন চেকআপের জন্য ম্যাডামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছু টেস্ট করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরেছেন ম্যাডাম। আজ মঙ্গলবার টেস্টের ফলাফল পাওয়া গেলে সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকরা চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাওয়া জরুরি। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছে না।’
রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সক্রিয় হওয়া নিয়ে কিছু দিন ধরেই আলোচান হচ্ছে। আইনমন্ত্রী সম্প্রতি তার রাজনীতিতে বাধা নেই বলে মন্তব্য করার পর এ আলোচনার সূত্রপাত। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দল পরিচালনা করছেন। তার নেতৃত্বে দল এখন অনেক শক্তিশালী। সময় হলে চেয়ারপারসন নিজে ও দল সিদ্ধান্ত নেবে তার রাজনীতির বিষয়ে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেলেও অসুস্থ খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। এমনকি দলের কোনো পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎও দিচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারকে ডেকে পাঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস কারাভোগের পর গত ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। এরপর ২০ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়েছিলেন। এক ঘণ্টা ফিরোজায় ছিলেন মির্জা ফখরুল। দলের মহাসচিবের অসুস্থতার কথা শুনে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
বহু বছর ধরে খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নানা শারীরিক জটিলতায় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে ছিলেন। ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। এর মধ্যে করোনার টিকা নেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান। ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন তিনি।
গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে আছে, চেয়ারপারসন কোনো কারণে সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান। গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার ‘গ’-এর ২ উপধারায় রয়েছে, চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে তারেকের জন্য সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি সৃষ্টি করা হয়।’
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে তিনি তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, ঋণদাতা সংস্থার সংস্কার প্রস্তাব মেনে চলা প্রভৃতি নানামুখী চাপে রয়েছে সরকার। সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের খুশি করার প্রয়াস থাকছে।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বাতিল করার দাবি জানালেও আগামী বাজেটে তা কার্যকর করা হবে না। বরং শিল্প খাতে টাকার জোগান বাড়াতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হবে।
আইএমএফ থেকে ঋণ ছাড় করাতে নতুন খাতে শুল্ক-কর-ভ্যাট আরোপ, বিদ্যমান শুল্কহার বাড়ানো এবং মওকুফ সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ বাতিলের শর্তের সবটা মানা হবে না। বরং দেশি শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে অধিক ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে রাজস্ব ছাড় ও রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে।
শিল্পের ১৯টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। করপোরেট করে নতুন হার যোগ করা হবে না বলে জানা গেছে।
বৈশ্বিক মন্দায় শিল্পের অনেক খাতে ক্রেতা কমেছে। দেশি শিল্পে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী বাজেটে বিদেশে পণ্যের নতুন বাজার তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ডলার সংকটেও শিল্প খাতে গতি বাড়াতে বেশি ব্যবহৃত শতাধিক পণ্যের তালিকা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেওয়া হবে। দেশি শিল্পের সুরক্ষায় নতুন করে সম্পূরক শুল্ক কমানো হবে না।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে শিল্প খাতের জন্য এসব ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। রূপরেখায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব খাতেই অস্থিরতা চলছে। তাই বাজেটে শিল্প খাতের সংকট কাটাতে সরকারের নগদ প্রণোদনা দরকার। উৎসে করে ও অগ্রিম করে ছাড় দেওয়া হলে শিল্প খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এইচএসকোডজনিত জটিলতার কারণে পাওনা রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণে বড় অঙ্কের পার্থক্য দেখা দেয়। এ কারণে মামলাও হয়। এ জটিলতা দূর করতে আগামী বাজেটে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রযোজন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া না হলে দেশের শিল্প খাত শেষ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে কাঁচামালের সংকট অনেক বেশি। শিল্প খাতের এ অস্থিরতার মধ্যে উৎসে কর ও অগ্রিম কর পরিশোধের চাপে আছি। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে দেশের শিল্প খাতে খারাপ সময় যাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্প টিকিয়ে রাখতে কোনো সংস্থার সুপারিশ নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেখতে হবে সরকারকে।
অর্থনীতির বিশ্লেষক সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার নিজেই সংকটে রয়েছে। আগামী বাজেট নির্বাচনের আগের বাজেট। দেশের শিল্প খাত খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। তাই চাপে থেকেও সরকারকে শিল্প খাতের সুবিধায় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প নেই। এটা খুব কঠিন কাজও নয়।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে আগামী বাজেটে দেশি শিল্প খাতের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ সামনে রেখে আগামী বাজেট প্রস্তাবে শিল্প খাতের জন্য কতটা এবং কী কী সুবিধা দেওয়া যায় তা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশন প্রভৃতি।
এসব বৈঠকে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ও এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করবে। পরে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনা করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর আগামী বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জাতীয় সংসদে আলোচনার পর সংশোধনী শেষে বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। অতঃপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব পদক্ষেপ শিল্প খাতের আইন গণ্য হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী বাজেটে শিল্প খাতের জন্য কী থাকা উচিত সরকার-সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক রূপরেখায় তার সুপারিশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় কিছু যোগ বা বিয়োগ করলে বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে।
রূপরেখায় বলা হয়েছে, বাজেটে আমদানিকৃত মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত বা উৎপাদিত মোটরসাইকেলে বেশি সুবিধা রাখা প্রয়োজন। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিম্ন হারে শুল্ক বহাল রাখা হবে আগামীতেও।
বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে অনেক পণ্যের অর্ডার কমে গেছে। সামনে শিল্প খাতে বড় সংকট আসতে পারে। এর মোকাবিলা উদ্যোক্তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য নীতিসহায়তা প্রয়োজন। আগামী বাজেটে নতুন বাজার সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। এতে বৈশ্বিক মন্দায় টিকে থাকা সহজ হবে। স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও গত কয়েক অর্থবছরে বাজেটে তিন হাজারের বেশি পণ্যের সম্পূরক শুল্কের হার কমানো হয়েছে। যেসব পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে সেসবের আমদানি খরচ কমেছে। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য সমজাতীয় পণ্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে। এবার স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় সম্পূরক শুল্ক না কমিয়ে কোনো কোনো পণ্যে নতুনভাবে সম্পূরক শুল্ক বসানো যেতে পারে।
রূপরেখায় বলা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক ও এর সহযোগী খাত থেকে। তৈরি পোশাকশিল্পের ওভেন খাতের ৬০ শতাংশ ও নিট খাতের ১৫ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ব্যবহার্য রাসায়নিকের ৭০ শতাংশই আমদানি করা হয়। ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লোহার রড, স্ক্র্যাব, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতির অধিকাংশ এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, টায়ার-টিউব, প্রসাধনী, খেলনা, জুয়েলারির কাঁচামালও আমদানি করা হয়। জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা, টেক্সটাইল, চামড়া খাতের কাঁচামাল আমদানি হয়। আবাসন খাতের ওপর নির্ভরশীল শিল্পের শতাধিক খাত। এসব খাতের কাঁচামালও আমদানিনির্ভর। দেশি টেলিভিশন, ফ্রিজার, এসি, মোবাইল, ওষুধ ও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি করা হয়।
এ ছাড়া পেপার ও পেপার বোর্ড, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও অ্যাডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, সুতা, কাপড়, বৈদুত্যিক তার আমদানিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। ওষুধশিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক ও এ জাতীয় পণ্য, সিমেন্টের জন্য ক্লিংকার ও লাইম স্টোন, বিপি শিট, টিন প্লেট, পুরনো জাহাজ আমদানি, লোহা ও ইস্পাত, লৌহবহির্ভূত বিভিন্ন খনিজ ধাতু আমদানিতে অগ্রাধিকার দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
এভাবে হিসাব কষে রূপরেখায় শতাধিক শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড়ের সুপারিশ করা হয়েছে। রূপরেখায় শুধু কাঁচামাল নয়, মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানিতেও সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি ও প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহার্য উপকরণ আমদানিতেও রেয়াতি সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
রূপরেখা অনুসারে আগামী বাজেটে নির্মাণ শিল্প খাতকে একক খাত হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের শুল্ক ও কর কমানো হবে। বোল্ডার স্টোন, ক্রাশড স্টোন, ফেরো অ্যালয়, বিলেট, বার রড, অ্যাঙ্গেল, ফ্লাই অ্যাশে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। সিরামিকস ও রাবার শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের শুল্ক বা কর কমানো হবে। পেট্রোলিয়াম জেলি, প্যারাফিন ওয়াং, কাঁচা রাবার, রাবার প্রসেসিং অয়েল, গাম রেজিনে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। ইলেকট্রিক খাতের বিকাশে যেসব উপকরণে নিম্ন হারে শুল্ক থাকবে তার মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া রেজিন, ডিওপি, রোল আকারের অ্যাডহেসিভ টেপ, ফাইবার গ্লাস, কম্প্রেশারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ।
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি (ওএমএস) কার্ডের মাধ্যমে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান এ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনায় কিছু ঘাটতি সরকারের নজরে আসায় তিনি এ নির্দেশ দেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশসহ বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
কার্ড কীভাবে ও কাদের দেওয়া হবে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঠিক করবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আর কার্ড না হওয়া পর্যন্ত এখনকার মতোই ওএমএসের কার্যক্রম চলবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখন এক কোটি পরিবারকে টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে সহযোগিতা করা হয়, ওএমএসও সেভাবে কার্ডের মাধ্যমে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেন লোকজনকে অহেতুক দীর্ঘমেয়াদি ভিড় করতে না হয়। তাদের মধ্যে যেন শৃঙ্খলা থাকে।
অব্যবস্থাপনার ধরন বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, নানারকম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, তার নজরে এসেছে। এজন্য উনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে চাল ও আটা বিক্রি করছে খাদ্য অধিদপ্তর। একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা কিনতে পারেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা প্রতি কেজি ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওএমএস পণ্যের ক্রেতারা বলছেন, তারা প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি কিনতে পারেন। তাতে তাদের ব্যয় হয় ১৫০ টাকা। অথচ বাজারে একই পরিমাণ চালের দাম ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। তারচেয়েও বেশি সাশ্রয় হচ্ছে আটায়। কারণ, প্রতি কেজি ওএমএসের আটার দাম ২৪ টাকা, যা বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ফলে ওএমএসের ৫ কেজি আটায় তাদের সাশ্রয় হয় ২০০ টাকারও বেশি।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, কম দামের কারণে কলোবাজারে সরকারের আটা ও চাল চলে যাচ্ছে। মূলত এ অনিয়ম বন্ধে সরকার কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস দিতে চাচ্ছে।
বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে ওএমএসের চাল ও আটার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের অপেক্ষা নতুন নয়। এসব ডিলারের দোকানের সামনে বিশৃঙ্খলাও এখন নিত্যদিনের চিত্র। বিশেষত বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের চাহিদা তুঙ্গে।
আরও ৪৪ দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাবেন বাংলাদেশিরা
আরও ৪৪টি দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরা। এজন্য এসব দেশ যুক্ত করে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে এসআরও জারির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এর আগে ৫৭টি দেশে বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা ছিল। নতুন করে ৪৪টি দেশ যুক্ত হওয়ায় এখন মোট ১০১টি দেশের নাগরিকত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা পাবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আগে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ মোট ৫৭টি দেশ ছিল।
নতুন ৪৪টি দেশের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি দেশ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে- ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে- কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং ওশেনিয়া মহাদেশের ফিজিসহ মোট ৪৪টি দেশকে এসআরওতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভিসির মেয়াদ বাড়াতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধন
উপচার্যের মেয়াদ বাড়াতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মান্ত্রিসভা।
অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য বা কোষাধক্ষ্যের মেয়াদ হয় চার বছর, কিন্তু বর্তমান আইনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব পদের মেয়াদ তিন বছর আছে। সংশোধনীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চার বছর করার জন্য প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।
এখানে আগে ৩০ জন সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এখন ৩১ জন করা হয়েছে। আগে স্পিকারের মাধ্যমে তিনজন সংসদ সদস্য সিন্ডিকেটে ছিলেন। এখন এর মধ্যে একজন নারী সংসদ সদস্য থাকবেন। সিন্ডিকেটে আগে শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি থাকলেও এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিও থাকবেন ।
কাতারে কাজ করবেন ১ হাজার ১২৯ জন সেনা সদস্য
কুয়েতের পর এবার কাতারে কাজ করবেন বাংলাদেশের ১ হাজার ১২৯ জন সেনা সদস্য। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং কুয়েতের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে এবং তার আওতায় ৫ হাজারের বেশি সেনাবাহিনীর সদস্য সেখানে কাজ করেন। কাতারের সঙ্গেও একটি চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যার আওতায় ১ হাজার ১২৯ জন আর্মড ফোর্সের সদস্য ওখানে লিয়নে বা ডেপুটেশনে কাজ করবেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নতুন চিন্তাধারার প্রয়োগ ঘটান : ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নবীন বিসিএস ক্যাডারদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি চাই নতুন কর্মকর্তারা দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে তাদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৪তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
গত ১৪ বছরে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নবীনদের পরিবর্তনের ধারা বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের একমাত্র লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে দেশবাসীর জন্য উন্নত ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা। নতুন বিসিএস ক্যাডারদের ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আজকের অফিসাররাই হবে আগামী দিনের সৈনিক।
তিনি বলেন, সরকারের প্রণীত ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য এটির বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
ওই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন।
মিঠামইন যাচ্ছেন আজ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাওর উপজেলা মিঠামইন সফরে যাবেন। তার এ ঐতিহাসিক সফরকে কেন্দ্র করে পুরো হাওর এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর উপলক্ষে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হাওরবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর কিশোরগঞ্জ সফর উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন।
দিনব্যাপী সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন সদরের কামালপুরে রাষ্ট্রপতির পৈতৃক বাড়িতে সপরিবারে তিনি আতিথ্য গ্রহণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়ন করা হবে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ২০টি রেসিপি ও অষ্টগ্রামের বিখ্যাত পনির দিয়ে।
এরপর বিকেল ৩টায় স্থানীয় হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
উচ্চশিক্ষায় আসছে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’। ৪ হাজার কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ বছর। যা ২০২৩ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ অর্থ দেবে সরকার। আর বাকি ৪৫ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, স্থায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, চাইল্ড কেয়ার নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। এতে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৩ কোটি টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৭ শতাংশ।
ইতিমধ্যে ‘হিট’ প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামান্য কিছু সংশোধন শেষে আগামী মাসে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিট প্রকল্পটির পিইসি সভা শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি বা শেষে তা একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
প্রকল্পটির ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) পরামর্শক সেবা ক্রয় বাবদ প্রায় ২৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৭ শতাংশ। কিন্তু এই পরামর্শক ব্যয় নিয়ে পিইসি’র তৃতীয় সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তারা বলছে, পরামর্শক ব্যয়ের প্রস্তাবসমূহের মধ্যে সমন্বয়, লিংক বা মিল থাকা প্রয়োজন। এছাড়া পরামর্শকদের কার্যপরিধি থাকলেও এত অধিক সংখ্যক পরামর্শকের প্রয়োজনীতা বা যৌক্তিকতা, তাদের সুস্পষ্ট যোগ্যতা এবং টর (টার্মস অব রেফারেন্স)-সহ সংশ্লিষ্ট তথ্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর জন্য প্রকল্পে ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে ২৩৫ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরামর্শক (নকশা প্রণয়ন, সুপারভিশন ও মনিটরিং) বাবদ ১১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পরামর্শক ব্যয় নির্মাণ কাজের ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে যা অনেক উচ্চ বলা হয়েছে পিইসি’র তৃতীয় সভায়। ডিপিপিতে কোথায় কাজ হবে, কত আয়তনের কত তলা ভবন নির্মাণ হবে তা উল্লেখ নেই। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পিইসি।
নাম প্রকাশ না করে শিক্ষার আরেকটি প্রকল্পের সাবেক একজন পরামর্শক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি প্রকল্পের কম্পোনেন্টের ওপর নির্ভর করে তাতে কতজন পরামর্শক থাকবেন। দেখা যায়, এমন কিছু কম্পোনেন্ট আছে যেখানে প্রেষণে কোনো কর্মকর্তাকে আনা যায় না বা ওই বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারি কর্মকর্তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে পুরোটাই পরামর্শকের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে যেগুলো রেগুলার কম্পোনেন্ট যেখানে প্রেষণে কিছু কর্মকর্তারা কাজ করতে পারেন, সেখানে তিন-চারজনের বেশি পরামর্শক লাগার কথা নয়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি প্রকল্পে কত শতাংশ পরামর্শক ব্যয় থাকতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে একটু বেশি পরামর্শক ব্যয় হতে পারে, তবে তা প্রকল্পের মোট খরচের চার থেকে পাঁচ শতাংশের বেশি নয়। আর নন-টেকনিক্যাল বা নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পে তেমন একটা পরামর্শক ব্যয়েরই প্রয়োজন নেই।
জানা যায়, উচ্চশিক্ষার আগের প্রকল্প হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) শেষ হয় ২০১৮ সালে। দুই হাজার ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে চারটি কম্পোনেন্ট ছিল। তিনটি কম্পোনেন্টে পরামর্শক ছিলেন ২০ জনের মতো। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সেবা চালুর কম্পোনেন্ট ‘বিডিরেন’-এ প্রায় ২০ জন পরামর্শক ছিলেন। কারণ বিডিরেন-এ পরামর্শকের বাইরে আর কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না।
‘হিট’ এর ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই প্রকল্পেও চারটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। সেগুলো হলো হায়ার এডুকেশন স্তরে ইন্টারন্যাশনাল এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ শক্তিশালীকরণ, ট্রান্সফরমিং হায়ার এডুকেকশন ইন বাংলাদেশ, এনহ্যান্সিং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও রেজাল্ট মনিটরিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন এবং কন্টিনজেন্ট ইমার্জেন্সি রেসপন্স কম্পোনেন্ট।
সূত্র জানায়, ‘হিট’ প্রকল্পের অধীনে ৩২০ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে আর ১৯ হাজার ৭৯০ জনের দেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চাইল্ড কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পিইসি সভায় চাইল্ড কেয়ার নির্মাণে এত অধিক ব্যয়ের প্রস্তাবের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
জানা যায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পৃথক কোনো ইনস্টিটিউট নেই। ফলে শিক্ষকরা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে পারতেন না। এ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের ল্যাবরেটরির মান উন্নয়ন, নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ একাধিক প্রয়োজনীয় প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রকল্পে একটি ১ লাখ ২০ হাজার বগ মিটারের আবাসিক ভবন নির্মাণ, একটি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ বর্গ মিটারের অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, ১ লাখ ৪৯ হাজার ২০৯ ঘন মিটারের ভূমি উন্নয়ন, ১৩টি যানবাহন, ৮০টি কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয়, ৮টি টেলি-কমিউনিকেশন সরঞ্জাম ক্রয়, ৪০ হাজার ৪৬টি আইসিটি সরঞ্জাম ক্রয়, ২৭টি অফিস সরঞ্জাম ও ২টি ক্যামেরা ও যন্ত্রাংশ ক্রয়, প্রকল্প অনুদান, গবেষণা অনুদান, সাংস্কৃতিক অনুদান ও অন্যান্য অনুদান, ৭ প্যাকেজ আসবাবপত্র, ৫১৫ জনের বৃত্তি ও স্কলারশিপ, পরামর্শকসেবা ক্রয়, ৩৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ৬টি ডাটাবেজ ক্রয়, ৬ প্যাকেজ বই ও সাময়িকী ক্রয়, বছরে ৫টি প্রকাশনা করা, অফিস ভাড়া, দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ, ২৫টি সার্ভেসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষিতদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ প্রায় ৩৯ শতাংশ এবং কলেজ থেকে স্নাতক ও পাস কোর্স সম্পন্ন ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নারীদের উন্নয়নের একটি বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে, তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্পটি গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়।
৪৫ বছর পর আবারও বাংলাদেশে দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে সফররত আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরোকে সঙ্গে নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজধানীর বনানীতে দূতাবাস উদ্বোধন করেন।
দূতাবাস উদ্বোধনকালে শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু হওয়া একটি আনন্দের মুহূর্ত। এটা দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। এটাকে আমি শুধু কূটনৈতিক বিষয় বলব না, এটা আবেগঘন একটি মুহূর্ত আমার কাছে।’
এ দূতাবাস উদ্বোধনের লক্ষ্যেই গতকাল সকালে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাফিয়েরো। তাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিকেলে ক্যাফিয়েরো দূতাবাস উদ্বোধন করেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে তিনটি চুক্তি ও এমওইউ সই করেন তারা। সেগুলো হচ্ছেÑ দুই দেশের ফুটবল সহযোগিতা, ভিসা ওয়েভার ও পররাষ্ট্র একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা। কূটনৈতিক এবং অফিশিয়াল পাসপোর্টে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে অফিশিয়াল পাসপোর্ট ও কূটনীতিকদের আর্জেন্টিনা যেতে ভিসা লাগবে না।
বৈঠক সম্পর্কে এবং দূতাবাস চালুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ৪৫ বছর পর দেশটি এখানে আবারও দূতাবাস চালু করেছে। তারা এখানে দূতাবাস খুলেছিল স্বাধীনতার পরে। এরপর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। মন্ত্রী মনে করেন, এবার দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুপক্ষীয় বিষয়ে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের যে, আর্জেন্টিনার দূতাবাস হয়েছে এখানে। এখন আমাদেরও দায়-দায়িত্ব হলো আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশ দূতাবাস খোলা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বড় প্রতিনিধিদল এসেছে এবং তারা এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। লাতিন আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মারকেশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনা এবং সেই জোটে ঢোকার জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যে আবেদন করেছে বলে জানান ড. মোমেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে আর্জেন্টিনা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং ঢাকায় দূতাবাস খোলা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের শেষের দিকে আর্জেন্টিনা ঢাকায় দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেয়।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফুটবল বিশ্বকাপ এই দূতাবাস খোলাকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার ভক্ত এবং লিওনেল মেসিকে নিয়ে উন্মাদনার বিষয়টি কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের বিশেষ নজর কাড়ে। বিশ্ব গণমাধ্যমেও এটি আলোচনায় এসেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের এ ঘটনায় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীর সিট স্থায়ীভাবে বাতিল করেছে হল কর্র্তৃপক্ষ। নির্যাতনের ঘটনায় হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
যে পাঁচজনের হলের সিট বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল শাখার সহসভাপতি তাবাসসুম ইসলাম এবং কর্মী মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা আক্তার ঊর্মি। তাদের আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে অভিযুক্তদের শাস্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ তাকিয়ে আছে হাইকোর্টের নির্দেশনার দিকে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত তাকে ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন ফুলপরী। এ ঘটনার বিচার চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঘটনা কাউকে জানালে জীবননাশের হুমকিও দেন তারা। রাতের ওই ঘটনার পর বিপর্যস্ত ফুলপরী সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। ঘটনাটি তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্র্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এর বাইরে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় এবং ইবি শাখা ছাত্রলীগ আরও দুটি কমিটি করেছে। এর মধ্যে গত রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
দেশরতœ শেখ হাসিনা হল প্রশাসন গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হলের ছাত্রী, কর্মচারীসহ ২৮ জন সাক্ষাৎকার নেয়। এসব পর্যালোচনা করে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হলের প্রভোস্ট কক্ষে জরুরি সভা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন হলটির প্রভোস্টসহ আবাসিক শিক্ষকরা। সভা শেষে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের হলের আবাসিকতা স্থায়ীভাবে বাতিল করে হল কর্র্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার পরের দিনেই আমি হল থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটি সব যাচাই-বাছাই করে গত রবিবার আমার কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। এতে ছাত্রী নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে। সেই মোতাবেক অভিযুক্ত পাঁচজনের স্থায়ীভাবে আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে।’
বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের সত্যতা আছে, এটা বললাম। তবে অভিযুক্ত ঊর্মির ফোনটি পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। এ জন্য বিষয়টি আমি প্রক্টরকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি।’
জানা গেছে, ফুলপরীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয় ছাত্রলীগকর্মী ও চারুকলা বিভাগের ছাত্রী হালিমা আক্তার ঊর্মির মোবাইল ফোন দিয়ে। হলের তদন্ত কমিটি তাকে তার মোবাইল ফোনটি জমা দিতে বলে। কিন্তু ঊর্মি তার ফোনটি হারিয়ে গেছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেন।
ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের : হল কর্র্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও হাইকোর্টের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি গত রবিবার রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু উপাচার্য ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে। সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ উপাচার্য আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত ছুটিতে থাকবেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘটনার ১৪ দিন পেরোলেও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। অথচ সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের ঘটনার এক দিন পরই অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু ইবি প্রশাসন তাকিয়ে আছে হাইকোর্টের দিকে। যা লজ্জাজনক। অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার চান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য এখন ছুটিতে ঢাকায় আছেন। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরলে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপাচার্যের অনুপস্থিতিকালে আমি শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।