
উচ্চশিক্ষায় আসছে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’। ৪ হাজার কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ বছর। যা ২০২৩ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ অর্থ দেবে সরকার। আর বাকি ৪৫ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, স্থায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, চাইল্ড কেয়ার নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। এতে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৩ কোটি টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৭ শতাংশ।
ইতিমধ্যে ‘হিট’ প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামান্য কিছু সংশোধন শেষে আগামী মাসে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিট প্রকল্পটির পিইসি সভা শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি বা শেষে তা একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
প্রকল্পটির ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) পরামর্শক সেবা ক্রয় বাবদ প্রায় ২৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৭ শতাংশ। কিন্তু এই পরামর্শক ব্যয় নিয়ে পিইসি’র তৃতীয় সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তারা বলছে, পরামর্শক ব্যয়ের প্রস্তাবসমূহের মধ্যে সমন্বয়, লিংক বা মিল থাকা প্রয়োজন। এছাড়া পরামর্শকদের কার্যপরিধি থাকলেও এত অধিক সংখ্যক পরামর্শকের প্রয়োজনীতা বা যৌক্তিকতা, তাদের সুস্পষ্ট যোগ্যতা এবং টর (টার্মস অব রেফারেন্স)-সহ সংশ্লিষ্ট তথ্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর জন্য প্রকল্পে ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে ২৩৫ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরামর্শক (নকশা প্রণয়ন, সুপারভিশন ও মনিটরিং) বাবদ ১১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পরামর্শক ব্যয় নির্মাণ কাজের ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে যা অনেক উচ্চ বলা হয়েছে পিইসি’র তৃতীয় সভায়। ডিপিপিতে কোথায় কাজ হবে, কত আয়তনের কত তলা ভবন নির্মাণ হবে তা উল্লেখ নেই। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পিইসি।
নাম প্রকাশ না করে শিক্ষার আরেকটি প্রকল্পের সাবেক একজন পরামর্শক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি প্রকল্পের কম্পোনেন্টের ওপর নির্ভর করে তাতে কতজন পরামর্শক থাকবেন। দেখা যায়, এমন কিছু কম্পোনেন্ট আছে যেখানে প্রেষণে কোনো কর্মকর্তাকে আনা যায় না বা ওই বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারি কর্মকর্তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে পুরোটাই পরামর্শকের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে যেগুলো রেগুলার কম্পোনেন্ট যেখানে প্রেষণে কিছু কর্মকর্তারা কাজ করতে পারেন, সেখানে তিন-চারজনের বেশি পরামর্শক লাগার কথা নয়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি প্রকল্পে কত শতাংশ পরামর্শক ব্যয় থাকতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে একটু বেশি পরামর্শক ব্যয় হতে পারে, তবে তা প্রকল্পের মোট খরচের চার থেকে পাঁচ শতাংশের বেশি নয়। আর নন-টেকনিক্যাল বা নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পে তেমন একটা পরামর্শক ব্যয়েরই প্রয়োজন নেই।
জানা যায়, উচ্চশিক্ষার আগের প্রকল্প হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) শেষ হয় ২০১৮ সালে। দুই হাজার ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে চারটি কম্পোনেন্ট ছিল। তিনটি কম্পোনেন্টে পরামর্শক ছিলেন ২০ জনের মতো। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সেবা চালুর কম্পোনেন্ট ‘বিডিরেন’-এ প্রায় ২০ জন পরামর্শক ছিলেন। কারণ বিডিরেন-এ পরামর্শকের বাইরে আর কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না।
‘হিট’ এর ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই প্রকল্পেও চারটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। সেগুলো হলো হায়ার এডুকেশন স্তরে ইন্টারন্যাশনাল এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ শক্তিশালীকরণ, ট্রান্সফরমিং হায়ার এডুকেকশন ইন বাংলাদেশ, এনহ্যান্সিং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও রেজাল্ট মনিটরিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন এবং কন্টিনজেন্ট ইমার্জেন্সি রেসপন্স কম্পোনেন্ট।
সূত্র জানায়, ‘হিট’ প্রকল্পের অধীনে ৩২০ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে আর ১৯ হাজার ৭৯০ জনের দেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চাইল্ড কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পিইসি সভায় চাইল্ড কেয়ার নির্মাণে এত অধিক ব্যয়ের প্রস্তাবের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
জানা যায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পৃথক কোনো ইনস্টিটিউট নেই। ফলে শিক্ষকরা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে পারতেন না। এ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের ল্যাবরেটরির মান উন্নয়ন, নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ একাধিক প্রয়োজনীয় প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রকল্পে একটি ১ লাখ ২০ হাজার বগ মিটারের আবাসিক ভবন নির্মাণ, একটি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ বর্গ মিটারের অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, ১ লাখ ৪৯ হাজার ২০৯ ঘন মিটারের ভূমি উন্নয়ন, ১৩টি যানবাহন, ৮০টি কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয়, ৮টি টেলি-কমিউনিকেশন সরঞ্জাম ক্রয়, ৪০ হাজার ৪৬টি আইসিটি সরঞ্জাম ক্রয়, ২৭টি অফিস সরঞ্জাম ও ২টি ক্যামেরা ও যন্ত্রাংশ ক্রয়, প্রকল্প অনুদান, গবেষণা অনুদান, সাংস্কৃতিক অনুদান ও অন্যান্য অনুদান, ৭ প্যাকেজ আসবাবপত্র, ৫১৫ জনের বৃত্তি ও স্কলারশিপ, পরামর্শকসেবা ক্রয়, ৩৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ৬টি ডাটাবেজ ক্রয়, ৬ প্যাকেজ বই ও সাময়িকী ক্রয়, বছরে ৫টি প্রকাশনা করা, অফিস ভাড়া, দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ, ২৫টি সার্ভেসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষিতদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ প্রায় ৩৯ শতাংশ এবং কলেজ থেকে স্নাতক ও পাস কোর্স সম্পন্ন ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নারীদের উন্নয়নের একটি বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে, তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্পটি গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, ঋণদাতা সংস্থার সংস্কার প্রস্তাব মেনে চলা প্রভৃতি নানামুখী চাপে রয়েছে সরকার। সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের খুশি করার প্রয়াস থাকছে।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বাতিল করার দাবি জানালেও আগামী বাজেটে তা কার্যকর করা হবে না। বরং শিল্প খাতে টাকার জোগান বাড়াতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হবে।
আইএমএফ থেকে ঋণ ছাড় করাতে নতুন খাতে শুল্ক-কর-ভ্যাট আরোপ, বিদ্যমান শুল্কহার বাড়ানো এবং মওকুফ সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ বাতিলের শর্তের সবটা মানা হবে না। বরং দেশি শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে অধিক ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে রাজস্ব ছাড় ও রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে।
শিল্পের ১৯টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। করপোরেট করে নতুন হার যোগ করা হবে না বলে জানা গেছে।
বৈশ্বিক মন্দায় শিল্পের অনেক খাতে ক্রেতা কমেছে। দেশি শিল্পে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী বাজেটে বিদেশে পণ্যের নতুন বাজার তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ডলার সংকটেও শিল্প খাতে গতি বাড়াতে বেশি ব্যবহৃত শতাধিক পণ্যের তালিকা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেওয়া হবে। দেশি শিল্পের সুরক্ষায় নতুন করে সম্পূরক শুল্ক কমানো হবে না।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে শিল্প খাতের জন্য এসব ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। রূপরেখায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব খাতেই অস্থিরতা চলছে। তাই বাজেটে শিল্প খাতের সংকট কাটাতে সরকারের নগদ প্রণোদনা দরকার। উৎসে করে ও অগ্রিম করে ছাড় দেওয়া হলে শিল্প খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এইচএসকোডজনিত জটিলতার কারণে পাওনা রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণে বড় অঙ্কের পার্থক্য দেখা দেয়। এ কারণে মামলাও হয়। এ জটিলতা দূর করতে আগামী বাজেটে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রযোজন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া না হলে দেশের শিল্প খাত শেষ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে কাঁচামালের সংকট অনেক বেশি। শিল্প খাতের এ অস্থিরতার মধ্যে উৎসে কর ও অগ্রিম কর পরিশোধের চাপে আছি। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে দেশের শিল্প খাতে খারাপ সময় যাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্প টিকিয়ে রাখতে কোনো সংস্থার সুপারিশ নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেখতে হবে সরকারকে।
অর্থনীতির বিশ্লেষক সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার নিজেই সংকটে রয়েছে। আগামী বাজেট নির্বাচনের আগের বাজেট। দেশের শিল্প খাত খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। তাই চাপে থেকেও সরকারকে শিল্প খাতের সুবিধায় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প নেই। এটা খুব কঠিন কাজও নয়।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে আগামী বাজেটে দেশি শিল্প খাতের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ সামনে রেখে আগামী বাজেট প্রস্তাবে শিল্প খাতের জন্য কতটা এবং কী কী সুবিধা দেওয়া যায় তা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশন প্রভৃতি।
এসব বৈঠকে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ও এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করবে। পরে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনা করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর আগামী বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জাতীয় সংসদে আলোচনার পর সংশোধনী শেষে বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। অতঃপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব পদক্ষেপ শিল্প খাতের আইন গণ্য হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী বাজেটে শিল্প খাতের জন্য কী থাকা উচিত সরকার-সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক রূপরেখায় তার সুপারিশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় কিছু যোগ বা বিয়োগ করলে বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে।
রূপরেখায় বলা হয়েছে, বাজেটে আমদানিকৃত মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত বা উৎপাদিত মোটরসাইকেলে বেশি সুবিধা রাখা প্রয়োজন। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিম্ন হারে শুল্ক বহাল রাখা হবে আগামীতেও।
বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে অনেক পণ্যের অর্ডার কমে গেছে। সামনে শিল্প খাতে বড় সংকট আসতে পারে। এর মোকাবিলা উদ্যোক্তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য নীতিসহায়তা প্রয়োজন। আগামী বাজেটে নতুন বাজার সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। এতে বৈশ্বিক মন্দায় টিকে থাকা সহজ হবে। স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও গত কয়েক অর্থবছরে বাজেটে তিন হাজারের বেশি পণ্যের সম্পূরক শুল্কের হার কমানো হয়েছে। যেসব পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে সেসবের আমদানি খরচ কমেছে। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য সমজাতীয় পণ্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে। এবার স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় সম্পূরক শুল্ক না কমিয়ে কোনো কোনো পণ্যে নতুনভাবে সম্পূরক শুল্ক বসানো যেতে পারে।
রূপরেখায় বলা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক ও এর সহযোগী খাত থেকে। তৈরি পোশাকশিল্পের ওভেন খাতের ৬০ শতাংশ ও নিট খাতের ১৫ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ব্যবহার্য রাসায়নিকের ৭০ শতাংশই আমদানি করা হয়। ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লোহার রড, স্ক্র্যাব, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতির অধিকাংশ এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, টায়ার-টিউব, প্রসাধনী, খেলনা, জুয়েলারির কাঁচামালও আমদানি করা হয়। জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা, টেক্সটাইল, চামড়া খাতের কাঁচামাল আমদানি হয়। আবাসন খাতের ওপর নির্ভরশীল শিল্পের শতাধিক খাত। এসব খাতের কাঁচামালও আমদানিনির্ভর। দেশি টেলিভিশন, ফ্রিজার, এসি, মোবাইল, ওষুধ ও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি করা হয়।
এ ছাড়া পেপার ও পেপার বোর্ড, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও অ্যাডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, সুতা, কাপড়, বৈদুত্যিক তার আমদানিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। ওষুধশিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক ও এ জাতীয় পণ্য, সিমেন্টের জন্য ক্লিংকার ও লাইম স্টোন, বিপি শিট, টিন প্লেট, পুরনো জাহাজ আমদানি, লোহা ও ইস্পাত, লৌহবহির্ভূত বিভিন্ন খনিজ ধাতু আমদানিতে অগ্রাধিকার দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
এভাবে হিসাব কষে রূপরেখায় শতাধিক শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড়ের সুপারিশ করা হয়েছে। রূপরেখায় শুধু কাঁচামাল নয়, মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানিতেও সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি ও প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহার্য উপকরণ আমদানিতেও রেয়াতি সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
রূপরেখা অনুসারে আগামী বাজেটে নির্মাণ শিল্প খাতকে একক খাত হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের শুল্ক ও কর কমানো হবে। বোল্ডার স্টোন, ক্রাশড স্টোন, ফেরো অ্যালয়, বিলেট, বার রড, অ্যাঙ্গেল, ফ্লাই অ্যাশে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। সিরামিকস ও রাবার শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের শুল্ক বা কর কমানো হবে। পেট্রোলিয়াম জেলি, প্যারাফিন ওয়াং, কাঁচা রাবার, রাবার প্রসেসিং অয়েল, গাম রেজিনে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। ইলেকট্রিক খাতের বিকাশে যেসব উপকরণে নিম্ন হারে শুল্ক থাকবে তার মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া রেজিন, ডিওপি, রোল আকারের অ্যাডহেসিভ টেপ, ফাইবার গ্লাস, কম্প্রেশারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ।
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি (ওএমএস) কার্ডের মাধ্যমে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান এ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনায় কিছু ঘাটতি সরকারের নজরে আসায় তিনি এ নির্দেশ দেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশসহ বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
কার্ড কীভাবে ও কাদের দেওয়া হবে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঠিক করবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আর কার্ড না হওয়া পর্যন্ত এখনকার মতোই ওএমএসের কার্যক্রম চলবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখন এক কোটি পরিবারকে টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে সহযোগিতা করা হয়, ওএমএসও সেভাবে কার্ডের মাধ্যমে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেন লোকজনকে অহেতুক দীর্ঘমেয়াদি ভিড় করতে না হয়। তাদের মধ্যে যেন শৃঙ্খলা থাকে।
অব্যবস্থাপনার ধরন বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, নানারকম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, তার নজরে এসেছে। এজন্য উনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে চাল ও আটা বিক্রি করছে খাদ্য অধিদপ্তর। একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা কিনতে পারেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা প্রতি কেজি ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওএমএস পণ্যের ক্রেতারা বলছেন, তারা প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি কিনতে পারেন। তাতে তাদের ব্যয় হয় ১৫০ টাকা। অথচ বাজারে একই পরিমাণ চালের দাম ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। তারচেয়েও বেশি সাশ্রয় হচ্ছে আটায়। কারণ, প্রতি কেজি ওএমএসের আটার দাম ২৪ টাকা, যা বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ফলে ওএমএসের ৫ কেজি আটায় তাদের সাশ্রয় হয় ২০০ টাকারও বেশি।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, কম দামের কারণে কলোবাজারে সরকারের আটা ও চাল চলে যাচ্ছে। মূলত এ অনিয়ম বন্ধে সরকার কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস দিতে চাচ্ছে।
বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে ওএমএসের চাল ও আটার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের অপেক্ষা নতুন নয়। এসব ডিলারের দোকানের সামনে বিশৃঙ্খলাও এখন নিত্যদিনের চিত্র। বিশেষত বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের চাহিদা তুঙ্গে।
আরও ৪৪ দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাবেন বাংলাদেশিরা
আরও ৪৪টি দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরা। এজন্য এসব দেশ যুক্ত করে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে এসআরও জারির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এর আগে ৫৭টি দেশে বাংলাদেশিদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা ছিল। নতুন করে ৪৪টি দেশ যুক্ত হওয়ায় এখন মোট ১০১টি দেশের নাগরিকত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা পাবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আগে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ মোট ৫৭টি দেশ ছিল।
নতুন ৪৪টি দেশের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি দেশ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে- ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে- কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং ওশেনিয়া মহাদেশের ফিজিসহ মোট ৪৪টি দেশকে এসআরওতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভিসির মেয়াদ বাড়াতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধন
উপচার্যের মেয়াদ বাড়াতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মান্ত্রিসভা।
অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য বা কোষাধক্ষ্যের মেয়াদ হয় চার বছর, কিন্তু বর্তমান আইনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব পদের মেয়াদ তিন বছর আছে। সংশোধনীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চার বছর করার জন্য প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।
এখানে আগে ৩০ জন সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এখন ৩১ জন করা হয়েছে। আগে স্পিকারের মাধ্যমে তিনজন সংসদ সদস্য সিন্ডিকেটে ছিলেন। এখন এর মধ্যে একজন নারী সংসদ সদস্য থাকবেন। সিন্ডিকেটে আগে শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি থাকলেও এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিও থাকবেন ।
কাতারে কাজ করবেন ১ হাজার ১২৯ জন সেনা সদস্য
কুয়েতের পর এবার কাতারে কাজ করবেন বাংলাদেশের ১ হাজার ১২৯ জন সেনা সদস্য। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং কুয়েতের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে এবং তার আওতায় ৫ হাজারের বেশি সেনাবাহিনীর সদস্য সেখানে কাজ করেন। কাতারের সঙ্গেও একটি চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যার আওতায় ১ হাজার ১২৯ জন আর্মড ফোর্সের সদস্য ওখানে লিয়নে বা ডেপুটেশনে কাজ করবেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নতুন চিন্তাধারার প্রয়োগ ঘটান : ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নবীন বিসিএস ক্যাডারদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি চাই নতুন কর্মকর্তারা দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে তাদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৪তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
গত ১৪ বছরে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নবীনদের পরিবর্তনের ধারা বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের একমাত্র লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে দেশবাসীর জন্য উন্নত ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা। নতুন বিসিএস ক্যাডারদের ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আজকের অফিসাররাই হবে আগামী দিনের সৈনিক।
তিনি বলেন, সরকারের প্রণীত ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য এটির বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
ওই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন।
মিঠামইন যাচ্ছেন আজ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাওর উপজেলা মিঠামইন সফরে যাবেন। তার এ ঐতিহাসিক সফরকে কেন্দ্র করে পুরো হাওর এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর উপলক্ষে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হাওরবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর কিশোরগঞ্জ সফর উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন।
দিনব্যাপী সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন সদরের কামালপুরে রাষ্ট্রপতির পৈতৃক বাড়িতে সপরিবারে তিনি আতিথ্য গ্রহণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়ন করা হবে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ২০টি রেসিপি ও অষ্টগ্রামের বিখ্যাত পনির দিয়ে।
এরপর বিকেল ৩টায় স্থানীয় হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির সভায় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেক রহমানকে দলের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় সামনে রেখে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বলা হয়, রায়ে সাজা হলে দল পরিচালনা করবেন তারেক রহমান। তাই খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর থেকে তারেক রহমানই দল পরিচালনা করছেন। কিন্তু কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সরকার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এখনো রাজনীতিতে এক অর্থে নিষ্ক্রিয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে বাধা নেই বলা হলেও আদতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি নিয়ে ভারছেন না তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে খালেদা জিয়া ভাবছেন না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ডেকে পাঠান। এই মুহূর্তে তার একটাই চিন্তাÑ কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কারণ তিনি শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে কষ্ট সহ্য করছেন। কয়েক দিন আগে শরীরে ব্যথা ছিল। এখন নেই।’ তিনি বলেন, ‘দলের চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের বাইরে কাউকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ফিরোজা ভবনে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সঙ্গে ছিলেন। এর আগে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় গেছেন খালেদা জিয়া। রাতে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিরিয়াস কিছু নয়। রুটিন চেকআপের জন্য ম্যাডামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছু টেস্ট করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরেছেন ম্যাডাম। আজ মঙ্গলবার টেস্টের ফলাফল পাওয়া গেলে সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকরা চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাওয়া জরুরি। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছে না।’
রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সক্রিয় হওয়া নিয়ে কিছু দিন ধরেই আলোচান হচ্ছে। আইনমন্ত্রী সম্প্রতি তার রাজনীতিতে বাধা নেই বলে মন্তব্য করার পর এ আলোচনার সূত্রপাত। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দল পরিচালনা করছেন। তার নেতৃত্বে দল এখন অনেক শক্তিশালী। সময় হলে চেয়ারপারসন নিজে ও দল সিদ্ধান্ত নেবে তার রাজনীতির বিষয়ে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেলেও অসুস্থ খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। এমনকি দলের কোনো পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎও দিচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারকে ডেকে পাঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস কারাভোগের পর গত ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। এরপর ২০ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়েছিলেন। এক ঘণ্টা ফিরোজায় ছিলেন মির্জা ফখরুল। দলের মহাসচিবের অসুস্থতার কথা শুনে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
বহু বছর ধরে খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নানা শারীরিক জটিলতায় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস তিনি সিসিইউতে ছিলেন। ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। এর মধ্যে করোনার টিকা নেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান। ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন তিনি।
গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে আছে, চেয়ারপারসন কোনো কারণে সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান। গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার ‘গ’-এর ২ উপধারায় রয়েছে, চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে তারেকের জন্য সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি সৃষ্টি করা হয়।’
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে তিনি তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন।
৪৫ বছর পর আবারও বাংলাদেশে দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে সফররত আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরোকে সঙ্গে নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজধানীর বনানীতে দূতাবাস উদ্বোধন করেন।
দূতাবাস উদ্বোধনকালে শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু হওয়া একটি আনন্দের মুহূর্ত। এটা দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। এটাকে আমি শুধু কূটনৈতিক বিষয় বলব না, এটা আবেগঘন একটি মুহূর্ত আমার কাছে।’
এ দূতাবাস উদ্বোধনের লক্ষ্যেই গতকাল সকালে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাফিয়েরো। তাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিকেলে ক্যাফিয়েরো দূতাবাস উদ্বোধন করেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে তিনটি চুক্তি ও এমওইউ সই করেন তারা। সেগুলো হচ্ছেÑ দুই দেশের ফুটবল সহযোগিতা, ভিসা ওয়েভার ও পররাষ্ট্র একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা। কূটনৈতিক এবং অফিশিয়াল পাসপোর্টে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে অফিশিয়াল পাসপোর্ট ও কূটনীতিকদের আর্জেন্টিনা যেতে ভিসা লাগবে না।
বৈঠক সম্পর্কে এবং দূতাবাস চালুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ৪৫ বছর পর দেশটি এখানে আবারও দূতাবাস চালু করেছে। তারা এখানে দূতাবাস খুলেছিল স্বাধীনতার পরে। এরপর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। মন্ত্রী মনে করেন, এবার দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুপক্ষীয় বিষয়ে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের যে, আর্জেন্টিনার দূতাবাস হয়েছে এখানে। এখন আমাদেরও দায়-দায়িত্ব হলো আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশ দূতাবাস খোলা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বড় প্রতিনিধিদল এসেছে এবং তারা এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। লাতিন আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মারকেশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনা এবং সেই জোটে ঢোকার জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যে আবেদন করেছে বলে জানান ড. মোমেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে আর্জেন্টিনা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং ঢাকায় দূতাবাস খোলা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের শেষের দিকে আর্জেন্টিনা ঢাকায় দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেয়।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফুটবল বিশ্বকাপ এই দূতাবাস খোলাকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার ভক্ত এবং লিওনেল মেসিকে নিয়ে উন্মাদনার বিষয়টি কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের বিশেষ নজর কাড়ে। বিশ্ব গণমাধ্যমেও এটি আলোচনায় এসেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের এ ঘটনায় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীর সিট স্থায়ীভাবে বাতিল করেছে হল কর্র্তৃপক্ষ। নির্যাতনের ঘটনায় হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
যে পাঁচজনের হলের সিট বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল শাখার সহসভাপতি তাবাসসুম ইসলাম এবং কর্মী মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা আক্তার ঊর্মি। তাদের আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে অভিযুক্তদের শাস্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ তাকিয়ে আছে হাইকোর্টের নির্দেশনার দিকে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত তাকে ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন ফুলপরী। এ ঘটনার বিচার চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঘটনা কাউকে জানালে জীবননাশের হুমকিও দেন তারা। রাতের ওই ঘটনার পর বিপর্যস্ত ফুলপরী সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। ঘটনাটি তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্র্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এর বাইরে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় এবং ইবি শাখা ছাত্রলীগ আরও দুটি কমিটি করেছে। এর মধ্যে গত রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
দেশরতœ শেখ হাসিনা হল প্রশাসন গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হলের ছাত্রী, কর্মচারীসহ ২৮ জন সাক্ষাৎকার নেয়। এসব পর্যালোচনা করে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হলের প্রভোস্ট কক্ষে জরুরি সভা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন হলটির প্রভোস্টসহ আবাসিক শিক্ষকরা। সভা শেষে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের হলের আবাসিকতা স্থায়ীভাবে বাতিল করে হল কর্র্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার পরের দিনেই আমি হল থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটি সব যাচাই-বাছাই করে গত রবিবার আমার কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। এতে ছাত্রী নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে। সেই মোতাবেক অভিযুক্ত পাঁচজনের স্থায়ীভাবে আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে।’
বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের সত্যতা আছে, এটা বললাম। তবে অভিযুক্ত ঊর্মির ফোনটি পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। এ জন্য বিষয়টি আমি প্রক্টরকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি।’
জানা গেছে, ফুলপরীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয় ছাত্রলীগকর্মী ও চারুকলা বিভাগের ছাত্রী হালিমা আক্তার ঊর্মির মোবাইল ফোন দিয়ে। হলের তদন্ত কমিটি তাকে তার মোবাইল ফোনটি জমা দিতে বলে। কিন্তু ঊর্মি তার ফোনটি হারিয়ে গেছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেন।
ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের : হল কর্র্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও হাইকোর্টের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি গত রবিবার রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু উপাচার্য ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে। সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ উপাচার্য আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত ছুটিতে থাকবেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘটনার ১৪ দিন পেরোলেও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। অথচ সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের ঘটনার এক দিন পরই অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু ইবি প্রশাসন তাকিয়ে আছে হাইকোর্টের দিকে। যা লজ্জাজনক। অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার চান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য এখন ছুটিতে ঢাকায় আছেন। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরলে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপাচার্যের অনুপস্থিতিকালে আমি শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করি।’
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।