
এক ব্যক্তিকে হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দিতে চাইছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক রাজস্ব কর্মকর্তা। বিনিময়ে গ্রাহকের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। গ্রাহক ৭০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও কাজটি করতে পারবেন না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। সম্প্রতি কর অঞ্চল-১ উত্তরার রাজস্ব শাখার কর্মকর্তার রুমে এমন চিত্র দেখা যায়।
দেখা যায়, উত্তরা অঞ্চল-১-এর হিসাব সহকারী (রাজস্ব শাখা) মো. সোহেল রানা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের এক বাড়ির মালিকের প্রতিনিধির সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ে কথা বলছিলেন। ট্যাক্সে ফাইলটি কয়েক দিন আগে দিয়ে গেছেন তিনি। সোহেল রানা বলছিলেন, ‘আপনার ফাইলটিতে বছরে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আসবে। আর যদি আপনার আপিল করেন, তাহলে ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ট্যাক্স করতে পারবেন। আর যদি ১৫ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেয়, তাহলে ১ লাখ ২০ হতে পারে। আর যদি আপনি সেগুনবাগিচা গিয়ে করেন, তাহলে ১ লাখ ১০ হাজার করতে পারবেন। প্রতি বছরের জন্য ফিক্সড হয়ে যাবে এই টাকা। আর যদি আমার এখানে করেন, তাহলে ট্যাক্সটা আরও কমে যাবে। সর্বমোট বছরে ট্যাক্স আসবে মাত্র ৬৮ হাজার টাকা। এ কাজটি সম্পূর্ণ করতে ১ লাখ টাকা দিতে হবে।’
বাড়ির মালিকের প্রতিনিধি সোহেল রানার কাছে জানতে চান, ‘পরে কোনো রকম হয়রানির বা ঝাই-ঝামেলার শিকার হতে হবে কি না? তখন সোহেল রানা বলেন, ‘কিসের ঝাই-ঝামেলা, সব অফিসারের সিগনেচার থাকবে, ডকুমেন্ট থাকবে, তদন্ত রিপোর্ট দেখবে। আর আপনারা যদি বলেন, আমরা টাকার বিনিময়ে হোল্ডিং ট্যাক্স করে দিয়েছি, তাহলে ঝামেলায় পড়তে পারি।’
এ সময় সোহেল রানা একটি কৌশল শিখিয়ে দিয়ে বলেন, কেউ যদি তদন্তে যায়, তখন বলবেন এ বাসায় আগে নিজেরা বসবাস করতেন, এখন ভাড়া দিয়েছেন। আর কেউ যদি না যায়, তাহলে কিছুই না। আর এ ফাইল তো আমার কাছে থাকবে, তেমন কেউ খুঁজবে না।’
সোহেল রানা ১ লাখ টাকা কেন, কোথায় দিতে হবে, সে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘সেগুনবাগিচার অফিসে সারা দেশের আপিল শুনানি করা হয়। আমি নাম বলে দেব তাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই আপিল শুনানি একবার হয়; যা করার এখনই করতে হবে, পরে আর কমানোর সুযোগ নেই। আর এখানে কিছু কর্মকর্তা আছে তাদেরও ২০ হাজার টাকার মতো দিতে হবে। আমার হাতে ১৫ পার্সেন্ট কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। আর আমি কাজ করে দেব, আমার কিছু টাকা না থাকলে আমি কেন কাজ করব?’
তিনি বলেন, ‘এই মালিকের এখন টাকাপয়সা থাকতে পারে, কিন্তু ১০ বছর পর ১০ হাজার টাকা অনেক কিছু। তাই বিপদ-আপদের কথা চিন্তা করেই ট্যাক্সের টাকা কমিয়ে নেওয়া ভালো। এখানে অনেক ইন্সপেক্টর আছে, যারা এখন এক কথা বলে, পরে অন্য কাজ করে। কিন্তু আমার কাছে এ রকম কিছু পাবেন না। কারণ আজকের সম্পর্ক হয়েছে ১০ বছর, ২০ বছর পর দেখা হলে বলবেন, কী অবস্থা। এমনভাবে কাজ করব সবাই জানবে এটা আমার আত্মীয়ের ফাইল। আমি যে এত টাকা নিয়েছি, কাউকে বলব না। যত কম টাকা দিয়ে করতে পারি, আমি করব। আর আপনি যখন কাজ করবেন, এটা আপনার বেপার, আমি আপনাকে সহায়তা করব। কত কমাতে পারবেন, সেটা আপনার বিষয়।’
এ সময় তিনি অপ্রত্যাশিত একটি ফাইলের কাজ সমাপ্ত করার উদাহরণ দেন। এ ছাড়া টাকা কম-বেশি দিলে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তারও উদাহরণ দেন এই কর্মকর্তা। ৭০ হাজার টাকায় কাজটি করার কথা বলে চলে যেতে চাইলে সোহেল রানা অট্টহাসি দিয়ে বলেন, ‘আমি আটকিয়ে যাব। না না না, ৭০ হাজার টাকায় করলে আমি ওই খানে আটকিয়ে যাব। দেখেন আমি আপনাকে কিছু বলব না। এই অফিস, ওই অফিস ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়ে যাবে, আপনি একটু শব্দও করতে পারবেন না। বলব, আপনার ফাইল তৈরি আছে কিন্তু অন্য জনের কাছে পাঠিয়েছি টাকা দেন এমন কোনো কিছু করতে চাই না। কীভাবে কাজ করবেন, আমাকে জানান আমি আছি।’
মো. সোহেল রানার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সিটি করপোরেশনে নিয়োগ পান রানা। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অঞ্চল-১-এ হিসাব সহকারী (রাজস্ব শাখা) হিসেবে কর্মরত। তিনি উত্তরা ৭ ও ১০ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের। অনেকে দাবি করেছেন, একই জায়গায় দীর্ঘ সময় থাকার সুবাদে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
অঞ্চল-১ কর কর্মকর্তা, রাজস্ব বিভাগ মো. মনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এ দায় তার। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য আমাদের অথরিটির কাছে জানাই তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অন্যদিকে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. জুলকার নায়ন দেশ রূপান্তরকে জানান, ট্যাক্সের কার্যক্রম অনলাইনকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এখানে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। ট্যাক্সের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যে বোর্ডে একজন কাউন্সিলর চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পান। একজন গ্রাহককে ট্যাক্সের কাগজ পেতে হলে চারটি ধাপ পার করতে হয়। কিন্তু আপনি যে কথা বলেন, কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব। এমন কিছু হলে সেই ক্ষেত্রে হেড অফিসে আমরা চিঠি দিই। তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে অথরিটি।’
দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ অবস্থায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর কারণে দৈনন্দিন ব্যয় আরও বাড়বে। তবে বাড়তি দাম দিয়েও সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। যা চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। এর আগে একই কায়দায় গত ৩০ জানুয়ারি রাতে খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৫ ও ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়।
ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে গত দুই মাসে গ্রাহক পর্যায়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করেছে দুবার। গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে এ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ বার এবং পাইকারি পর্যায়ে ১০ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এত ঘন ঘন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসাবাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে গত অক্টোবরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকার অবশ্য বলছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে এ সংকট তৈরি হয়েছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এ দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে না গিয়ে আর্থিক ঘাটতির দোহায় দিয়ে দাম বৃদ্ধি করছে। এতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা গেলে কম দামে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষ কারোরই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অবিরাম বাড়তেই থাকবে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সরকার সেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এখন গণশুনানি ছাড়াই কমিশনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিইআরসি। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। যার পরিণতি ভয়াবহ। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এ দাম বাড়ানোর চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’
এদিকে দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরও ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির অভাবে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের সক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন এবং অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, চলতি বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। যদিও প্রকৃত চাহিদা এর চেয়েও বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা বলছেন, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট।
আগামী মার্চের শেষদিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চদামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং আরও কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলেও বড়জোর ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তবু ঘাটতি থেকে যাবে।
আসন্ন সংকট মোকাবিলায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুতের পাশাপাশি সরকারের বড় ভরসা কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা, রামপাল এবং ভারতে আদানির বিদ্যুৎ। এর মধ্যে রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে ডলার সংকটে।
ডলার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তারা চাহিদার ৭০ শতাংশ তেল আমদানি করতে পারছেন। বর্তমানে সাড়ে চার মাসের বিল ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসরকারি মালিকদের। তেল আমদানি ব্যাহত হলে বেসরকারি খাত থেকেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ মিলবে না।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ বছর দৈনিক প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকতে পারে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় যে জ্বালানির দরকার তার জোগান দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আশা করি, গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর প্রতি ইউনিটের দাম ৪.১৪ থেকে বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা, ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫, ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২.৬৩ থেকে বেড়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলছিলেন, ‘জিনিসপত্রের এত দাম বাড়ছে যে বাজারে যেতেই ভয় লাগে। রমজানে সাধারণত এমনিতেই দাম বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এভাবে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভাবতেই মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সহ্য-ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ সব মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।’
ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্লাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৪১ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৪৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ৮৫ পয়সা (আগে ১১ টাকা ২৯ পয়সা ছিল)।
বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৯৩ পয়সা (আগে ছিল ১১ টাকা ৩৬ পয়সা); অফ পিক ১০ টাকা ৭৩ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ২২ পয়সা) এবং পিক ১৪ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা)।
অন্যদিকে উচ্চচাপে শিল্পের জন্য ফ্লাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৭৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৩১ পয়সা), অফ পিকে ৮ টাকা ৮১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৩৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১২ টাকা ২২ পয়সা (আগে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা ছিল)। এ ছাড়া ধর্মীয়, দাতব্য, হাসপাতাল, পানির পাম্পসহ অন্যান্য সব খাতের গ্রাহকদের জন্য আনুপাতিক হারে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এমনিতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’
বিএনপির প্রতিবাদ : নির্বাহী আদেশে আবারও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রতিবাদ জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন বুলির আড়ালে লুটপাটের মহোৎসবের কাহিনি এখন মানুষের মুখে মুখে। বিদ্যুতের এ মূল্যবৃদ্ধি সরকারের লুটপাটেরই বহিঃপ্রকাশ। এ মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি কলকারখানা ও কৃষিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। প্রতিটি পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে। সরকারের প্রতিটি নীতি হচ্ছে হরিলুটের নীতি, জনগণ মরে যাক, তাতে সরকারের কিছুই আসে যায় না।’
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে দাবি আদায় করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ পানি প্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওর অঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড (উড়াল সড়ক) করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যেই জমি ভরাট না করে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে এবং বর্তমান সরকারের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন হবে এ বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সেই নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সে আবেদনই আপনাদের কাছে জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় জনগণের ওয়াদা চাইলে জনতা উচ্চকণ্ঠে দুই হাত তুলে সমর্থন ব্যক্ত করে। কিশোরগঞ্জ সফরে গিয়ে গতকাল বিকেলে মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং নৌকাসহ মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য সব সড়ক এলিভেটেড করা হবে।’
হাওর এলাকাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে আবদুল হামিদ সেনানিবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই এলাকা থেকে বারবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে তিনি (আবদুল হামিদ) তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপনের ইচ্ছা করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এ সেনানিবাস স্থাপন করেছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আবদুল হামিদ ডেপুটি লিডার, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির মতো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যে পদেই ছিলেন, সেখানেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি তিনি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও সফলভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই আমরা তার নামে সেনানিবাসের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ গঠনেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেনানিবাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করেন ও বেলুন উড়িয়ে দেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে একটি গাছের চাড়া রোপণ এবং পরিদর্শকদের বইতেও স্বাক্ষর করেন। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এ ছাড়াও সেখানে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার সাভার এরিয়া মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাপ্রধান এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া তাকে অভ্যর্থনা জানান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট প্রদানের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত। এ দেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন, তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এই মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রত্যেকটি সিটে গত নির্বাচনে এবং পরপর এই তিন নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। তাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নেই। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এ দেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এবং আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই যে দেশের উন্নতি হয় সেটা আজকে সর্বজনবিদিত।’
মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে আসলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সবসময় আছি।’
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল প্রমুখ। মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল হক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব সঞ্চালনা করেন।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে মিঠামইনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সফরের শুরুতে সকালে মিঠামইন সদরের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ২৭৫ একর জায়গায় নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন। সেখানে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে মিঠামইন সদরের কামালপুরে তার পৈতৃক বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জোহরের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা। এ সময় তাদের হাওরের ২৩ পদের মাছ ও এলাকার বিখ্যাত পনির দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বাঁশি বাজিয়ে, নানা সেøাগানে তারা মুখরিত করে রাখেন জনসভাস্থল। প্রধানমন্ত্রীর মিঠামইন আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় হাওরের প্রতিটি প্রবেশপথ ও পয়েন্ট। সাজানো হয় হাওরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্রের ছবির মাধ্যমে।
১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার মিঠামইন সফর করেন। তখন মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। ২৫ বছর পর গতকাল প্রধানমন্ত্রী মিঠামইন সফরে যান। বাসস
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
নিবন্ধনের জন্য ৯৮টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছিল। সেগুলো থেকে দ্বিতীয় দফায় ৭৭টি দলকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। এসব দলের কিছু নথির ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর দলগুলোর আবেদনের কাগজ যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।
এ প্রতিবেদন নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সূত্র জানিয়েছে,
এক-তৃতীয়াংশ দলই নিবন্ধনের জন্য শর্ত ঠিকভাবে পূরণ করতে পারেনি। যেসব দল বৈঠকের পর্যালোচনায় উতরে যাবে তারা তৃতীয় দফায় মাঠপর্যায়ে জরিপের জন্য যোগ্য হবে। জরিপ সম্পন্ন হলে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা করা হবে।
ইসি সূত্র বলেছে, তৃতীয় দফায়ও কয়েকটি দল নিবন্ধনের অযোগ্য হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় নিবন্ধনের জন্য মাঠপর্যায়ে কার্যক্রমের শর্তের কথা বলা রয়েছে। অধিকাংশ দলেরই মাঠের কার্যক্রম থাকে না। তৃতীয় দফায় উত্তীর্ণ দলের চূড়ান্ত তালিকা জুনে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ও ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম দফার প্রাথমিক বাছাইয়ে যেসব দলের নথির ঘাটতি ছিল তাদের প্রয়োজনীয় নথি কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবার জমা দিতে বলেছি আমরা। যেসব নথি এসেছে সেগুলোর যাচাই-বাছাই শেষে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কমিশনের সভা রয়েছে। সেখানে দলগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। কমিশন পরে জানাবে কতগুলো দল নিবন্ধনের জন্য তৃতীয় দফায় পর্যালোচনার জন্য যাবে। জুন মাসের আগেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলগুলোর বিষয়ে মাঠ জরিপ হবে কি না তা কমিশনের বৈঠকের পর জানা যাবে। প্রয়োজন হলে ইসির কর্মকর্তারাই জরিপের কাজটি করবেন।’
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। মে মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলেছে, এবার নিবন্ধন পেতে ৯৮টি দল কমিশনে আবেদন করেছিল। পাঁচটি দলের একাধিক আবেদন থাকায় একটি রেখে বাকিগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। দুটি দল আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ৯১টি আবেদন নিয়ে কাজ শুরু করে ইসি। নানা অসংগতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য জমা না দেওয়ায় প্রাথমিক বাছাইয়ে আরও ১৪টি দলের আবেদন বাতিল করে ইসি। শেষ পর্যন্ত ৭৭টি দলের আবেদন নিয়ে দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইসি সচিবালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন শেষে যেসব দলের প্রয়োজনীয় নথির ঘাটতি রয়েছে তা ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি ইস্যু করে ইসি। গত ২৬ জানুয়ারি সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। ১৫টি দল বাদে বাকিরা নথি জমা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় নথি যাচাই করে নির্বাচিত দলগুলোর একটি তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ইসির উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে তাতে টিকে থাকা দলগুলোর এক-তৃতীয়াংশই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ২০ থেকে ২৫টি দলের নিবন্ধনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। (ক) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, আবেদন দাখিল করার তারিখের আগের দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন পেতে হবে; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, ওইসব সংসদ নির্বাচনের কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে; (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর ও অন্যূন একশ উপজেলা বা মেট্রোপলিটান থানার প্রতিটিতে কার্যকর দপ্তরসহ কমপক্ষে দুইশ ভোটার সদস্য থাকতে হবে।
(খ) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য থাকতে হবে এবং কমিশনে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করা।
নিবন্ধন দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দুটি শর্ত পালন করা নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন। তৃতীয় শর্তকে প্রাধান্য দিয়ে দলগুলো আবেদন করেছে। তাদের নথিপত্রের তথ্যের সঙ্গে মাঠের কাজের মিল রয়েছে কি না তা জানতে মাঠ-তদন্ত হয়।
উপর্যুক্ত কর্মকর্তা জানান, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাছাইয়ে টিকে থাকা অধিকাংশ দলই তৃতীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। কারণ কাগজ-কলমে কার্যালয় থাকলেও বাস্তবে অনেক দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কারও কার্যালয় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ২০০ জনের স্বাক্ষরের যে বিধান রয়েছে সংগৃহীত স্বাক্ষরে তার মিল থাকে না।
প্রসঙ্গত, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এর আগে ৪৪টি দল নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১২৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও মাত্র ৩৯টি উত্তীর্ণ হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৪৩টি আবেদনের বিপরীতে ৩টি দল নিবন্ধন পায়। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৭৬টি দল আবেদন করলেও একটিও নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পেয়েছে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপি। এখন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অগ্নিঝরা মার্চ। একটি নতুন পতাকা, একটি বজ্রকণ্ঠ ভাষণ, একটি ভীষণ কালরাত; সবমিলিয়ে ১৯৭১-এর মার্চকে ধরা হয় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত মৌসুম। আজ পহেলা মার্চ। মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।
১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনের পথ ধরে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্বাধীনতার অমর কাব্যের এ পঙ্ক্তিটি বাঙালি জাতিকে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় বলীয়ান করে তোলে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে অতর্কিতে ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন গ্রেপ্তার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তের, তার সর্বশেষ বাণী বাংলার মানুষের কাছে পাঠান এই বলে, ‘এই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাক, যে অবস্থায়ই থাক, হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটিতে থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট শুরু হয় মার্চের প্রথম দিন থেকে। এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের সব কেন্দ্রে একযোগে প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা প্রচার করা হয়। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, দেশ আবার কঠোর সামরিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে এবং সামরিক আইন কঠোর করে ভেতরে ভেতরে কোনো গভীর প্রস্তুতি চলছে। দুপুরে রেডিওতে যখন জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ধারা বিবরণী চলছিল। তাই মাঠের ক্রিকেট দর্শকরাই রেডিওতে প্রথম ইয়াহিয়ার এ ঘোষণা শুনতে পান।
রেডিওতে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত করে স্টেডিয়ামের হাজার হাজার ক্রিকেট দর্শক। তারা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে ‘জয় বাংলা’ বলে। ধাওয়া করে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের এবং সেøাগানে উত্তাল হয়ে জঙ্গি মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের খবর শুনে পিআইএর বাঙালি কর্মচারীরাও জনসাধারণের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েন।
মিছিলকারীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ জানার জন্য হোটেল পূর্বাণী অভিমুখে মিছিলের পর মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলে। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেল পূর্বাণীতে। সেখানে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক হওয়ার কথা। লাখ লাখ মানুষের স্লোগান আর মিছিলে হোটেল পূর্বাণীর চত্বর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সবাই বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ শোনার জন্য উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনি মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান খানসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত তেজোদীপ্ত ভঙ্গিতে বলেন, অধিবেশন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি তিনি বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, আগামী ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে বলব।’ এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন অলিগলি পথ থেকে শত শত মিছিল পল্টন ময়দানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে জমায়েত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এ জমায়েত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তৃতা করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আর ৬ দফা, ১১ দফা নয়, এবার বাংলার মানুষের ১ দফার সংগ্রাম শুরু করব। আর এই এক দফা হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।
অগ্নিঝরা মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ ছয় দিনব্যাপী পথ নাটক উৎসবের আয়োজন করেছে। এদিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করবেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩৮ জন নাট্যকারকে যাদের রচিত পথনাটক বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের বিভিন্ন আয়োজনে অভিনীত হয়েছে, তাদের সম্মাননা জানানো হবে। ৬ মার্চ পর্যন্ত এ উৎসব চলবে।
প্রাথমিকের বৃত্তির ফল নিয়ে ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও বৃত্তি পেয়েছে। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে, একজন শিক্ষার্থী দুই জেলায় বৃত্তি পেয়েছে, দুবারই ট্যালেন্টপুলে। এমনসব অসংগতির অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আসার পরই বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরই স্থগিত করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে যখন উদযাপন চলছিল তখন গতকাল বিকেলে সেই ফল স্থগিত করা হয়। এতে প্রায় ৮২ হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবকের আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃত্তির ফল স্থগিত করা হয়েছে। মূলত সফটওয়্যারের কারিগরি ত্রুটির কারণে সন্দেহ দেখা দেয়। অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।’
পটুয়াখালীতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও এক শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলার গলাচিপা উপজেলার সুতাবাড়িয়া সার্কেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর এমন ফল হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃত্তি পরীক্ষায় তিনজনের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও অসুস্থ হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। অথচ সে বৃত্তি পেয়েছে।’
ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে এক শিক্ষার্থী। একই শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রামাঞ্চলের আরেকটি স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।
প্রাথমিক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বৃত্তিসংক্রান্ত সফটওয়্যারে কোডিং ভুলের কারণে ফল জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে কম নম্বর পেয়েও বৃত্তি পেয়েছে, আবার বেশি নম্বর পেয়েও বৃত্তি পায়নি। গতকাল বিকেলে অধিদপ্তরে ফলসংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তারা খোঁজ নিলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরের পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে। ফল জটিলতার তদন্তে গতকাল সন্ধ্যায়ই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্্ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফল পুনঃযাচাইয়ের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘কিছু জেলা থেকে পাওয়া কোডিংয়ে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পারার পরই মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবহিত করি এবং ফল স্থগিত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘হাতেগোনা কয়েকটি জেলা-উপজেলায় এমনটি হয়েছে। সংশোধিত ফলে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে বৃত্তির ফল প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পেয়েছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি পাবে।’
কারও কারও অভিযোগ, পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তালিকাভুক্ত করতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে। এর দায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার প্রকৌশলীদের। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একাধিক অভিভাবক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সন্তান বৃত্তি পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলাম। মিষ্টিও বিতরণ করেছি। কিন্তু ফল স্থগিতের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। সংশোধিত ফলে যদি দেখা যায়, আমার সন্তান বৃত্তি পায়নি, তাহলে এ ঘটনা কীভাবে মেনে নেব? বাচ্চারাই বা ব্যাপারটি কীভাবে নেবে? যারা এর জন্য দায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।’
২০২০ ও ’২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাক্রমের ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান চার বিষয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। মোট নম্বর ছিল ১০০ এবং সময় ছিল ২ ঘণ্টা।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।