
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) এক ছাত্রীকে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে ইনস্টিটিউটের অভিযোগ তদন্ত কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম আতিফা হক শেফা। তিনি আইইআর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। শেফা তার যে বন্ধুকে দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন তিনি হলেন আইইআর একই বর্ষের শিক্ষার্থী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেছেন, কিছুদিন ধরে তিনি ইনস্টিটিউটের কয়েকজন বড় ভাই-বোনের মাধ্যমে ক্রমাগত মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। সেখানে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, ইতি মণ্ডল, শাহবাজ তন্ময় ও আতিফা হক শেফা উপস্থিত ছিলেন। তারা সেখানে বিভিন্ন অশালীন কথাবার্তা ও অপ্রত্যাশিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাদের (ভুক্তভোগী ছাত্রী ও সঙ্গে থাকা বড় ভাই) দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। পরে তারা আরও নানাভাবে মানসিকভাবে হেনস্তা করতে থাকেন। এরপর গত রবিবার মোবাইল ফোনে কল করে তাকে দেখা করার জন্য চাপ দিতে থাকেন আতিকুর ও শেফা। বাধ্য হয়ে তিনি তার কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে বিভাগের সামনের চায়ের দোকানে যান। সেখানে তার চরিত্র নিয়ে নানা কটু কথা, গালিগালাজ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা অন্য সহপাঠীদেরও হেনস্তা করা হয়। এ সময় তাকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন ছাত্রলীগ নেত্রী শেফা। এ ছাড়া তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। ছাত্রলীগ নেত্রী শেফা তাকে ক্রমাগত মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
তিনি আরও জানান, এর আগে তার বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে তাদের দুজনকে নিয়ে নানা রকম বাজে কথা বলা হয়। এ সময় তাকে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেন শেফা। ওই কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। যাতে শেফাকে বলতে শোনা যায়, ‘ওকে (ভুক্তভোগী ছাত্রী) হলে গিয়ে ধরব। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাচের মানুষের সাথে ও (ভুক্তভোগী) ঘুরে বেড়িয়েছে। ওকে (ভুক্তভোগী) প্রোটেকশন দিলে ওর লাইফ আরও দুর্বিষহ করব। ওরে (ভুক্তভোগী) যেখানে পাব সেখানেই... (ছাপার অযোগ্য শব্দ গালাগাল)। এবার ওরে (ভুক্তভোগী) এনে দেব, তোরা (ছাত্রলীগ নেত্রীর বন্ধু)...........(ধর্ষণের হুমকি)।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শেফা ও আতিকুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ইনস্টিটউটের তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আকতার বানু বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি অন্যান্য ডকুমেন্ট দিতে বলেছি। সব ডকুমেন্ট এখনো পাইনি। পেলে আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে তার (ছাত্রলীগ নেত্রী শেফা) বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তো নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগপত্রটি এখনো আমার হাতে আসেনি। যদি আমি অভিযোগ পাই, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রাবি ছাত্রলীগের ২ নেতার ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে হলে ডেকে নিয়ে মারধর ও শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসনের কাছে তদন্ত কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যাতে নির্যাতনের এই ঘটনায় অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ও যুগ্ম সম্পাদক মো. সোলাইমানের ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটি ও হল প্রশাসনের একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ও যুগ্ম সম্পাদক সোলাইমানের বিরুদ্ধে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে রুমে ডেকে নিয়ে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন কৃষ্ণ রায়। তিনি দাবি করেন, তাকে হত্যা করে শিবিরকর্মী বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই অভিযোগ তদন্তের পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন হলের আবাসিক শিক্ষক অনুপম হীরা মণ্ডলকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে বিভিন্ন কারণে তদন্ত কমিটি কয়েকদিন দেরিতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষ্ণকে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলে অনাবাসিক হওয়ায় তাদের সিট বালিত করা যাবে না। তবে তাদের যাতে ভবিষ্যতে আবাসিকতা না দেওয়া হয় সেজন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্তদের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অনুপম হীরা মণ্ডল বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। চেষ্টা করেছি প্রকৃত ঘটনা জানার। সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হল প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা সেই প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ অবস্থায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর কারণে দৈনন্দিন ব্যয় আরও বাড়বে। তবে বাড়তি দাম দিয়েও সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। যা চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। এর আগে একই কায়দায় গত ৩০ জানুয়ারি রাতে খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৫ ও ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়।
ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে গত দুই মাসে গ্রাহক পর্যায়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করেছে দুবার। গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে এ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ বার এবং পাইকারি পর্যায়ে ১০ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এত ঘন ঘন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসাবাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে গত অক্টোবরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকার অবশ্য বলছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে এ সংকট তৈরি হয়েছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এ দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে না গিয়ে আর্থিক ঘাটতির দোহায় দিয়ে দাম বৃদ্ধি করছে। এতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা গেলে কম দামে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষ কারোরই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অবিরাম বাড়তেই থাকবে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সরকার সেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এখন গণশুনানি ছাড়াই কমিশনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিইআরসি। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। যার পরিণতি ভয়াবহ। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এ দাম বাড়ানোর চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’
এদিকে দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরও ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির অভাবে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের সক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন এবং অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, চলতি বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। যদিও প্রকৃত চাহিদা এর চেয়েও বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা বলছেন, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট।
আগামী মার্চের শেষদিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চদামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং আরও কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলেও বড়জোর ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তবু ঘাটতি থেকে যাবে।
আসন্ন সংকট মোকাবিলায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুতের পাশাপাশি সরকারের বড় ভরসা কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা, রামপাল এবং ভারতে আদানির বিদ্যুৎ। এর মধ্যে রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে ডলার সংকটে।
ডলার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তারা চাহিদার ৭০ শতাংশ তেল আমদানি করতে পারছেন। বর্তমানে সাড়ে চার মাসের বিল ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসরকারি মালিকদের। তেল আমদানি ব্যাহত হলে বেসরকারি খাত থেকেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ মিলবে না।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ বছর দৈনিক প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকতে পারে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় যে জ্বালানির দরকার তার জোগান দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আশা করি, গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর প্রতি ইউনিটের দাম ৪.১৪ থেকে বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা, ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫, ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২.৬৩ থেকে বেড়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলছিলেন, ‘জিনিসপত্রের এত দাম বাড়ছে যে বাজারে যেতেই ভয় লাগে। রমজানে সাধারণত এমনিতেই দাম বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এভাবে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভাবতেই মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সহ্য-ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ সব মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।’
ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্লাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৪১ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৪৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ৮৫ পয়সা (আগে ১১ টাকা ২৯ পয়সা ছিল)।
বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৯৩ পয়সা (আগে ছিল ১১ টাকা ৩৬ পয়সা); অফ পিক ১০ টাকা ৭৩ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ২২ পয়সা) এবং পিক ১৪ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা)।
অন্যদিকে উচ্চচাপে শিল্পের জন্য ফ্লাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৭৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৩১ পয়সা), অফ পিকে ৮ টাকা ৮১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৩৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১২ টাকা ২২ পয়সা (আগে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা ছিল)। এ ছাড়া ধর্মীয়, দাতব্য, হাসপাতাল, পানির পাম্পসহ অন্যান্য সব খাতের গ্রাহকদের জন্য আনুপাতিক হারে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এমনিতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’
বিএনপির প্রতিবাদ : নির্বাহী আদেশে আবারও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রতিবাদ জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন বুলির আড়ালে লুটপাটের মহোৎসবের কাহিনি এখন মানুষের মুখে মুখে। বিদ্যুতের এ মূল্যবৃদ্ধি সরকারের লুটপাটেরই বহিঃপ্রকাশ। এ মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি কলকারখানা ও কৃষিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। প্রতিটি পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে। সরকারের প্রতিটি নীতি হচ্ছে হরিলুটের নীতি, জনগণ মরে যাক, তাতে সরকারের কিছুই আসে যায় না।’
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে দাবি আদায় করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ পানি প্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওর অঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড (উড়াল সড়ক) করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যেই জমি ভরাট না করে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে এবং বর্তমান সরকারের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন হবে এ বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সেই নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সে আবেদনই আপনাদের কাছে জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় জনগণের ওয়াদা চাইলে জনতা উচ্চকণ্ঠে দুই হাত তুলে সমর্থন ব্যক্ত করে। কিশোরগঞ্জ সফরে গিয়ে গতকাল বিকেলে মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং নৌকাসহ মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য সব সড়ক এলিভেটেড করা হবে।’
হাওর এলাকাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে আবদুল হামিদ সেনানিবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই এলাকা থেকে বারবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে তিনি (আবদুল হামিদ) তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপনের ইচ্ছা করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এ সেনানিবাস স্থাপন করেছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আবদুল হামিদ ডেপুটি লিডার, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির মতো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যে পদেই ছিলেন, সেখানেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি তিনি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও সফলভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই আমরা তার নামে সেনানিবাসের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ গঠনেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেনানিবাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করেন ও বেলুন উড়িয়ে দেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে একটি গাছের চাড়া রোপণ এবং পরিদর্শকদের বইতেও স্বাক্ষর করেন। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এ ছাড়াও সেখানে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার সাভার এরিয়া মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাপ্রধান এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া তাকে অভ্যর্থনা জানান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট প্রদানের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত। এ দেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন, তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এই মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রত্যেকটি সিটে গত নির্বাচনে এবং পরপর এই তিন নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। তাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নেই। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এ দেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এবং আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই যে দেশের উন্নতি হয় সেটা আজকে সর্বজনবিদিত।’
মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে আসলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সবসময় আছি।’
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল প্রমুখ। মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল হক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব সঞ্চালনা করেন।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে মিঠামইনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সফরের শুরুতে সকালে মিঠামইন সদরের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ২৭৫ একর জায়গায় নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন। সেখানে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে মিঠামইন সদরের কামালপুরে তার পৈতৃক বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জোহরের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা। এ সময় তাদের হাওরের ২৩ পদের মাছ ও এলাকার বিখ্যাত পনির দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বাঁশি বাজিয়ে, নানা সেøাগানে তারা মুখরিত করে রাখেন জনসভাস্থল। প্রধানমন্ত্রীর মিঠামইন আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় হাওরের প্রতিটি প্রবেশপথ ও পয়েন্ট। সাজানো হয় হাওরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্রের ছবির মাধ্যমে।
১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার মিঠামইন সফর করেন। তখন মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। ২৫ বছর পর গতকাল প্রধানমন্ত্রী মিঠামইন সফরে যান। বাসস
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
নিবন্ধনের জন্য ৯৮টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছিল। সেগুলো থেকে দ্বিতীয় দফায় ৭৭টি দলকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। এসব দলের কিছু নথির ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর দলগুলোর আবেদনের কাগজ যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।
এ প্রতিবেদন নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সূত্র জানিয়েছে,
এক-তৃতীয়াংশ দলই নিবন্ধনের জন্য শর্ত ঠিকভাবে পূরণ করতে পারেনি। যেসব দল বৈঠকের পর্যালোচনায় উতরে যাবে তারা তৃতীয় দফায় মাঠপর্যায়ে জরিপের জন্য যোগ্য হবে। জরিপ সম্পন্ন হলে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা করা হবে।
ইসি সূত্র বলেছে, তৃতীয় দফায়ও কয়েকটি দল নিবন্ধনের অযোগ্য হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় নিবন্ধনের জন্য মাঠপর্যায়ে কার্যক্রমের শর্তের কথা বলা রয়েছে। অধিকাংশ দলেরই মাঠের কার্যক্রম থাকে না। তৃতীয় দফায় উত্তীর্ণ দলের চূড়ান্ত তালিকা জুনে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ও ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম দফার প্রাথমিক বাছাইয়ে যেসব দলের নথির ঘাটতি ছিল তাদের প্রয়োজনীয় নথি কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবার জমা দিতে বলেছি আমরা। যেসব নথি এসেছে সেগুলোর যাচাই-বাছাই শেষে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কমিশনের সভা রয়েছে। সেখানে দলগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। কমিশন পরে জানাবে কতগুলো দল নিবন্ধনের জন্য তৃতীয় দফায় পর্যালোচনার জন্য যাবে। জুন মাসের আগেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলগুলোর বিষয়ে মাঠ জরিপ হবে কি না তা কমিশনের বৈঠকের পর জানা যাবে। প্রয়োজন হলে ইসির কর্মকর্তারাই জরিপের কাজটি করবেন।’
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। মে মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলেছে, এবার নিবন্ধন পেতে ৯৮টি দল কমিশনে আবেদন করেছিল। পাঁচটি দলের একাধিক আবেদন থাকায় একটি রেখে বাকিগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। দুটি দল আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ৯১টি আবেদন নিয়ে কাজ শুরু করে ইসি। নানা অসংগতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য জমা না দেওয়ায় প্রাথমিক বাছাইয়ে আরও ১৪টি দলের আবেদন বাতিল করে ইসি। শেষ পর্যন্ত ৭৭টি দলের আবেদন নিয়ে দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইসি সচিবালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন শেষে যেসব দলের প্রয়োজনীয় নথির ঘাটতি রয়েছে তা ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি ইস্যু করে ইসি। গত ২৬ জানুয়ারি সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। ১৫টি দল বাদে বাকিরা নথি জমা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় নথি যাচাই করে নির্বাচিত দলগুলোর একটি তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ইসির উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে তাতে টিকে থাকা দলগুলোর এক-তৃতীয়াংশই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ২০ থেকে ২৫টি দলের নিবন্ধনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। (ক) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, আবেদন দাখিল করার তারিখের আগের দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন পেতে হবে; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, ওইসব সংসদ নির্বাচনের কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে; (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর ও অন্যূন একশ উপজেলা বা মেট্রোপলিটান থানার প্রতিটিতে কার্যকর দপ্তরসহ কমপক্ষে দুইশ ভোটার সদস্য থাকতে হবে।
(খ) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য থাকতে হবে এবং কমিশনে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করা।
নিবন্ধন দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দুটি শর্ত পালন করা নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন। তৃতীয় শর্তকে প্রাধান্য দিয়ে দলগুলো আবেদন করেছে। তাদের নথিপত্রের তথ্যের সঙ্গে মাঠের কাজের মিল রয়েছে কি না তা জানতে মাঠ-তদন্ত হয়।
উপর্যুক্ত কর্মকর্তা জানান, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাছাইয়ে টিকে থাকা অধিকাংশ দলই তৃতীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। কারণ কাগজ-কলমে কার্যালয় থাকলেও বাস্তবে অনেক দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কারও কার্যালয় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ২০০ জনের স্বাক্ষরের যে বিধান রয়েছে সংগৃহীত স্বাক্ষরে তার মিল থাকে না।
প্রসঙ্গত, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এর আগে ৪৪টি দল নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১২৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও মাত্র ৩৯টি উত্তীর্ণ হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৪৩টি আবেদনের বিপরীতে ৩টি দল নিবন্ধন পায়। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৭৬টি দল আবেদন করলেও একটিও নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পেয়েছে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপি। এখন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অগ্নিঝরা মার্চ। একটি নতুন পতাকা, একটি বজ্রকণ্ঠ ভাষণ, একটি ভীষণ কালরাত; সবমিলিয়ে ১৯৭১-এর মার্চকে ধরা হয় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত মৌসুম। আজ পহেলা মার্চ। মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।
১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনের পথ ধরে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্বাধীনতার অমর কাব্যের এ পঙ্ক্তিটি বাঙালি জাতিকে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় বলীয়ান করে তোলে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে অতর্কিতে ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন গ্রেপ্তার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তের, তার সর্বশেষ বাণী বাংলার মানুষের কাছে পাঠান এই বলে, ‘এই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাক, যে অবস্থায়ই থাক, হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটিতে থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট শুরু হয় মার্চের প্রথম দিন থেকে। এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের সব কেন্দ্রে একযোগে প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা প্রচার করা হয়। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, দেশ আবার কঠোর সামরিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে এবং সামরিক আইন কঠোর করে ভেতরে ভেতরে কোনো গভীর প্রস্তুতি চলছে। দুপুরে রেডিওতে যখন জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ধারা বিবরণী চলছিল। তাই মাঠের ক্রিকেট দর্শকরাই রেডিওতে প্রথম ইয়াহিয়ার এ ঘোষণা শুনতে পান।
রেডিওতে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত করে স্টেডিয়ামের হাজার হাজার ক্রিকেট দর্শক। তারা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে ‘জয় বাংলা’ বলে। ধাওয়া করে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের এবং সেøাগানে উত্তাল হয়ে জঙ্গি মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের খবর শুনে পিআইএর বাঙালি কর্মচারীরাও জনসাধারণের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েন।
মিছিলকারীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ জানার জন্য হোটেল পূর্বাণী অভিমুখে মিছিলের পর মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলে। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেল পূর্বাণীতে। সেখানে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক হওয়ার কথা। লাখ লাখ মানুষের স্লোগান আর মিছিলে হোটেল পূর্বাণীর চত্বর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সবাই বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ শোনার জন্য উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনি মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান খানসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত তেজোদীপ্ত ভঙ্গিতে বলেন, অধিবেশন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি তিনি বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, আগামী ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে বলব।’ এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন অলিগলি পথ থেকে শত শত মিছিল পল্টন ময়দানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে জমায়েত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এ জমায়েত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তৃতা করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আর ৬ দফা, ১১ দফা নয়, এবার বাংলার মানুষের ১ দফার সংগ্রাম শুরু করব। আর এই এক দফা হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।
অগ্নিঝরা মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ ছয় দিনব্যাপী পথ নাটক উৎসবের আয়োজন করেছে। এদিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করবেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩৮ জন নাট্যকারকে যাদের রচিত পথনাটক বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের বিভিন্ন আয়োজনে অভিনীত হয়েছে, তাদের সম্মাননা জানানো হবে। ৬ মার্চ পর্যন্ত এ উৎসব চলবে।
প্রাথমিকের বৃত্তির ফল নিয়ে ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও বৃত্তি পেয়েছে। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে, একজন শিক্ষার্থী দুই জেলায় বৃত্তি পেয়েছে, দুবারই ট্যালেন্টপুলে। এমনসব অসংগতির অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আসার পরই বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরই স্থগিত করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে যখন উদযাপন চলছিল তখন গতকাল বিকেলে সেই ফল স্থগিত করা হয়। এতে প্রায় ৮২ হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবকের আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃত্তির ফল স্থগিত করা হয়েছে। মূলত সফটওয়্যারের কারিগরি ত্রুটির কারণে সন্দেহ দেখা দেয়। অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।’
পটুয়াখালীতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও এক শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলার গলাচিপা উপজেলার সুতাবাড়িয়া সার্কেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর এমন ফল হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃত্তি পরীক্ষায় তিনজনের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও অসুস্থ হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। অথচ সে বৃত্তি পেয়েছে।’
ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে এক শিক্ষার্থী। একই শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রামাঞ্চলের আরেকটি স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।
প্রাথমিক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বৃত্তিসংক্রান্ত সফটওয়্যারে কোডিং ভুলের কারণে ফল জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে কম নম্বর পেয়েও বৃত্তি পেয়েছে, আবার বেশি নম্বর পেয়েও বৃত্তি পায়নি। গতকাল বিকেলে অধিদপ্তরে ফলসংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তারা খোঁজ নিলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরের পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে। ফল জটিলতার তদন্তে গতকাল সন্ধ্যায়ই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্্ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফল পুনঃযাচাইয়ের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘কিছু জেলা থেকে পাওয়া কোডিংয়ে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পারার পরই মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবহিত করি এবং ফল স্থগিত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘হাতেগোনা কয়েকটি জেলা-উপজেলায় এমনটি হয়েছে। সংশোধিত ফলে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে বৃত্তির ফল প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পেয়েছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি পাবে।’
কারও কারও অভিযোগ, পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তালিকাভুক্ত করতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে। এর দায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার প্রকৌশলীদের। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একাধিক অভিভাবক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সন্তান বৃত্তি পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলাম। মিষ্টিও বিতরণ করেছি। কিন্তু ফল স্থগিতের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। সংশোধিত ফলে যদি দেখা যায়, আমার সন্তান বৃত্তি পায়নি, তাহলে এ ঘটনা কীভাবে মেনে নেব? বাচ্চারাই বা ব্যাপারটি কীভাবে নেবে? যারা এর জন্য দায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।’
২০২০ ও ’২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাক্রমের ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান চার বিষয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। মোট নম্বর ছিল ১০০ এবং সময় ছিল ২ ঘণ্টা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
কয়েক দফা বাড়ার পর রমজানের প্রথম দিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল শীর্ষ চার পোল্ট্রি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে তলব করে ভোক্তা অধিকার। পরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় মুরগির দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এখনও তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
এদিকে, বাজার তদারকিতে সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না।'
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।