
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় হল প্রভোস্ট, হাউজ টিউটরসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলা পেয়েছে আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি। ফুলপরী খাতুন নামের এই শিক্ষার্থীকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্তরা এ ঘটনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদন দুটি দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
হাইকোর্ট আজ বুধবার আদেশের জন্য দিন রেখেছে। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীনে প্রণীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে তা দেখাতে এবং বিশ্ববিদ্যলয়টির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতেও বলেছে আদালত।
প্রসঙ্গত, ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন ছাত্রী ফুলপরীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন এবং তা ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। পরে র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১৬ ফেব্রুয়ারি এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
নির্যাতনের অভিযোগটি তদন্ত করতে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক এবং প্রশাসন ক্যাডারের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করতে বলে হাইকোর্ট। কমিটির প্রতিবেদন পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে জমা দিতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা কমিটির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে দাখিল করতে বলে আদালত।
এর ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রতিবেদন দুটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। পরে আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষ পড়ে শোনান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিটের পক্ষে গাজী মো. মহসীন শুনানিতে ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ফুলপরীকে র্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের হুকুমদাতা। ওই অমানবিক, পাশবিক, ন্যক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, ময়াবিয়া জাহান জড়িত। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। এতে বলা হয়, সরাসরি নির্যাতন করেন মুন্নী, মীম, তাবাসসুম ও ময়াবিয়া। তাবাসসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রতীয়মান হয়, ১১ ফেব্রুয়ারি হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সময় ঊর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করেন। তবে কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গণরুমে উপস্থিত ছাত্রীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আল আমিনের ফুলপরীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা মিলেছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির ভাষ্য, তাবাসসুম ফুলপরীকে ৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে বলেন। পরে দেখা করায় তাবাসসুম এটিকে বেয়াদবি হিসেবে মনে করেন। এ কারণে তাবাসসুম ব্যক্তিগতভাবে ফুলপরীর ওপর রেগে যান। এটিই তাবাসসুম প্রচার করেন, ফুলপরী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এ থেকে ঘটনার সূত্রপাত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাবাসসুমের নেতৃত্বে রুমে একজনের উপস্থিতিতে ফুলপরীকে ওই দিন রাত ৮টায় অন্য মেয়েদের উপস্থিতিতে গণরুমে হেনস্তা করা হয়। আজেবাজে কথা বলা হয়। পরে অন্তরার উপস্থিতিতে ৩০৬ নম্বর রুমে নিয়ে ফুলপরীকে মেয়েদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ, গালিগালাজ ও আজেবাজে কথা বলে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি সেই রাতে ওই রুমে থাকা মেয়েদের প্রত্যেককে ফুলপরীকে একটা করে চড় মারতে নির্দেশ দেন অন্তরা। ফুলপরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেন লিমা ও তাবাসসুম। নির্যাতনের একপর্যায়ে ফুলপরী অন্তরার পা ধরতে বাধ্য হন। অন্তরার নির্দেশে তাকে পাহারা দিয়ে রাখা হয়।
অন্তরার জোরজবরদস্তির কারণে প্রভোস্ট ফুলপরীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন বলে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। বলা হয়েছে, এরপর প্রভোস্ট হলে উপস্থিত থাকা অবস্থায়ই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, ঊর্মি, ময়াবিয়াসহ অন্য মেয়েরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্তা করেন। পরে ফুলপরীকে প্রভোস্ট শামসুল আলম বরাবর মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভোস্ট শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুর রাজ্জাক, শাখার কর্মকর্তা হামিদা খাতুন, আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার ও সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাহানের দায়িত্বে চরম অবহেলা ও গাফিলতি ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের ভূমিকা উদাসীন ও দায়সারা গোছের বলে প্রতিবেদনে এসেছে।
দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ অবস্থায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর কারণে দৈনন্দিন ব্যয় আরও বাড়বে। তবে বাড়তি দাম দিয়েও সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। যা চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। এর আগে একই কায়দায় গত ৩০ জানুয়ারি রাতে খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৫ ও ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়।
ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে গত দুই মাসে গ্রাহক পর্যায়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করেছে দুবার। গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে এ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ বার এবং পাইকারি পর্যায়ে ১০ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এত ঘন ঘন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসাবাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে গত অক্টোবরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকার অবশ্য বলছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে এ সংকট তৈরি হয়েছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এ দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে না গিয়ে আর্থিক ঘাটতির দোহায় দিয়ে দাম বৃদ্ধি করছে। এতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা গেলে কম দামে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষ কারোরই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অবিরাম বাড়তেই থাকবে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সরকার সেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এখন গণশুনানি ছাড়াই কমিশনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিইআরসি। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। যার পরিণতি ভয়াবহ। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এ দাম বাড়ানোর চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’
এদিকে দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরও ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির অভাবে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের সক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন এবং অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, চলতি বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। যদিও প্রকৃত চাহিদা এর চেয়েও বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা বলছেন, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট।
আগামী মার্চের শেষদিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চদামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং আরও কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলেও বড়জোর ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তবু ঘাটতি থেকে যাবে।
আসন্ন সংকট মোকাবিলায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুতের পাশাপাশি সরকারের বড় ভরসা কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা, রামপাল এবং ভারতে আদানির বিদ্যুৎ। এর মধ্যে রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে ডলার সংকটে।
ডলার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তারা চাহিদার ৭০ শতাংশ তেল আমদানি করতে পারছেন। বর্তমানে সাড়ে চার মাসের বিল ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসরকারি মালিকদের। তেল আমদানি ব্যাহত হলে বেসরকারি খাত থেকেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ মিলবে না।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ বছর দৈনিক প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকতে পারে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় যে জ্বালানির দরকার তার জোগান দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আশা করি, গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর প্রতি ইউনিটের দাম ৪.১৪ থেকে বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা, ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫, ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২.৬৩ থেকে বেড়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলছিলেন, ‘জিনিসপত্রের এত দাম বাড়ছে যে বাজারে যেতেই ভয় লাগে। রমজানে সাধারণত এমনিতেই দাম বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এভাবে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভাবতেই মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সহ্য-ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ সব মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।’
ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্লাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৪১ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৪৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ৮৫ পয়সা (আগে ১১ টাকা ২৯ পয়সা ছিল)।
বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৯৩ পয়সা (আগে ছিল ১১ টাকা ৩৬ পয়সা); অফ পিক ১০ টাকা ৭৩ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ২২ পয়সা) এবং পিক ১৪ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা)।
অন্যদিকে উচ্চচাপে শিল্পের জন্য ফ্লাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৭৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৩১ পয়সা), অফ পিকে ৮ টাকা ৮১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৩৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১২ টাকা ২২ পয়সা (আগে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা ছিল)। এ ছাড়া ধর্মীয়, দাতব্য, হাসপাতাল, পানির পাম্পসহ অন্যান্য সব খাতের গ্রাহকদের জন্য আনুপাতিক হারে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এমনিতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’
বিএনপির প্রতিবাদ : নির্বাহী আদেশে আবারও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রতিবাদ জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন বুলির আড়ালে লুটপাটের মহোৎসবের কাহিনি এখন মানুষের মুখে মুখে। বিদ্যুতের এ মূল্যবৃদ্ধি সরকারের লুটপাটেরই বহিঃপ্রকাশ। এ মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি কলকারখানা ও কৃষিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। প্রতিটি পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে। সরকারের প্রতিটি নীতি হচ্ছে হরিলুটের নীতি, জনগণ মরে যাক, তাতে সরকারের কিছুই আসে যায় না।’
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে দাবি আদায় করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ পানি প্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওর অঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড (উড়াল সড়ক) করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যেই জমি ভরাট না করে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে এবং বর্তমান সরকারের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন হবে এ বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সেই নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সে আবেদনই আপনাদের কাছে জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় জনগণের ওয়াদা চাইলে জনতা উচ্চকণ্ঠে দুই হাত তুলে সমর্থন ব্যক্ত করে। কিশোরগঞ্জ সফরে গিয়ে গতকাল বিকেলে মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং নৌকাসহ মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য সব সড়ক এলিভেটেড করা হবে।’
হাওর এলাকাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে আবদুল হামিদ সেনানিবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী করা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই এলাকা থেকে বারবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে তিনি (আবদুল হামিদ) তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এখানে একটি সেনানিবাস স্থাপনের ইচ্ছা করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এ সেনানিবাস স্থাপন করেছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আবদুল হামিদ ডেপুটি লিডার, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির মতো পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যে পদেই ছিলেন, সেখানেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি তিনি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও সফলভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই আমরা তার নামে সেনানিবাসের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ গঠনেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেনানিবাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করেন ও বেলুন উড়িয়ে দেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে একটি গাছের চাড়া রোপণ এবং পরিদর্শকদের বইতেও স্বাক্ষর করেন। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এ ছাড়াও সেখানে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার সাভার এরিয়া মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাপ্রধান এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া তাকে অভ্যর্থনা জানান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট প্রদানের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত। এ দেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন, তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এই মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রত্যেকটি সিটে গত নির্বাচনে এবং পরপর এই তিন নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। তাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নেই। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এ দেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এবং আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই যে দেশের উন্নতি হয় সেটা আজকে সর্বজনবিদিত।’
মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে আসলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সবসময় আছি।’
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল প্রমুখ। মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল হক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব সঞ্চালনা করেন।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে মিঠামইনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সফরের শুরুতে সকালে মিঠামইন সদরের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ২৭৫ একর জায়গায় নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন। সেখানে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে মিঠামইন সদরের কামালপুরে তার পৈতৃক বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জোহরের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা। এ সময় তাদের হাওরের ২৩ পদের মাছ ও এলাকার বিখ্যাত পনির দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বাঁশি বাজিয়ে, নানা সেøাগানে তারা মুখরিত করে রাখেন জনসভাস্থল। প্রধানমন্ত্রীর মিঠামইন আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় হাওরের প্রতিটি প্রবেশপথ ও পয়েন্ট। সাজানো হয় হাওরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্রের ছবির মাধ্যমে।
১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার মিঠামইন সফর করেন। তখন মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। ২৫ বছর পর গতকাল প্রধানমন্ত্রী মিঠামইন সফরে যান। বাসস
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
নিবন্ধনের জন্য ৯৮টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছিল। সেগুলো থেকে দ্বিতীয় দফায় ৭৭টি দলকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। এসব দলের কিছু নথির ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর দলগুলোর আবেদনের কাগজ যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।
এ প্রতিবেদন নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সূত্র জানিয়েছে,
এক-তৃতীয়াংশ দলই নিবন্ধনের জন্য শর্ত ঠিকভাবে পূরণ করতে পারেনি। যেসব দল বৈঠকের পর্যালোচনায় উতরে যাবে তারা তৃতীয় দফায় মাঠপর্যায়ে জরিপের জন্য যোগ্য হবে। জরিপ সম্পন্ন হলে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা করা হবে।
ইসি সূত্র বলেছে, তৃতীয় দফায়ও কয়েকটি দল নিবন্ধনের অযোগ্য হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় নিবন্ধনের জন্য মাঠপর্যায়ে কার্যক্রমের শর্তের কথা বলা রয়েছে। অধিকাংশ দলেরই মাঠের কার্যক্রম থাকে না। তৃতীয় দফায় উত্তীর্ণ দলের চূড়ান্ত তালিকা জুনে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ও ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম দফার প্রাথমিক বাছাইয়ে যেসব দলের নথির ঘাটতি ছিল তাদের প্রয়োজনীয় নথি কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবার জমা দিতে বলেছি আমরা। যেসব নথি এসেছে সেগুলোর যাচাই-বাছাই শেষে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কমিশনের সভা রয়েছে। সেখানে দলগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। কমিশন পরে জানাবে কতগুলো দল নিবন্ধনের জন্য তৃতীয় দফায় পর্যালোচনার জন্য যাবে। জুন মাসের আগেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলগুলোর বিষয়ে মাঠ জরিপ হবে কি না তা কমিশনের বৈঠকের পর জানা যাবে। প্রয়োজন হলে ইসির কর্মকর্তারাই জরিপের কাজটি করবেন।’
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। মে মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলেছে, এবার নিবন্ধন পেতে ৯৮টি দল কমিশনে আবেদন করেছিল। পাঁচটি দলের একাধিক আবেদন থাকায় একটি রেখে বাকিগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। দুটি দল আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ৯১টি আবেদন নিয়ে কাজ শুরু করে ইসি। নানা অসংগতি ও প্রয়োজনীয় তথ্য জমা না দেওয়ায় প্রাথমিক বাছাইয়ে আরও ১৪টি দলের আবেদন বাতিল করে ইসি। শেষ পর্যন্ত ৭৭টি দলের আবেদন নিয়ে দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইসি সচিবালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন শেষে যেসব দলের প্রয়োজনীয় নথির ঘাটতি রয়েছে তা ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি ইস্যু করে ইসি। গত ২৬ জানুয়ারি সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। ১৫টি দল বাদে বাকিরা নথি জমা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় নথি যাচাই করে নির্বাচিত দলগুলোর একটি তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ইসির উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে তাতে টিকে থাকা দলগুলোর এক-তৃতীয়াংশই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ২০ থেকে ২৫টি দলের নিবন্ধনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। (ক) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, আবেদন দাখিল করার তারিখের আগের দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন পেতে হবে; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, ওইসব সংসদ নির্বাচনের কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে; (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর ও অন্যূন একশ উপজেলা বা মেট্রোপলিটান থানার প্রতিটিতে কার্যকর দপ্তরসহ কমপক্ষে দুইশ ভোটার সদস্য থাকতে হবে।
(খ) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য থাকতে হবে এবং কমিশনে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করা।
নিবন্ধন দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দুটি শর্ত পালন করা নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন। তৃতীয় শর্তকে প্রাধান্য দিয়ে দলগুলো আবেদন করেছে। তাদের নথিপত্রের তথ্যের সঙ্গে মাঠের কাজের মিল রয়েছে কি না তা জানতে মাঠ-তদন্ত হয়।
উপর্যুক্ত কর্মকর্তা জানান, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাছাইয়ে টিকে থাকা অধিকাংশ দলই তৃতীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। কারণ কাগজ-কলমে কার্যালয় থাকলেও বাস্তবে অনেক দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কারও কার্যালয় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ২০০ জনের স্বাক্ষরের যে বিধান রয়েছে সংগৃহীত স্বাক্ষরে তার মিল থাকে না।
প্রসঙ্গত, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এর আগে ৪৪টি দল নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১২৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও মাত্র ৩৯টি উত্তীর্ণ হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৪৩টি আবেদনের বিপরীতে ৩টি দল নিবন্ধন পায়। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৭৬টি দল আবেদন করলেও একটিও নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পেয়েছে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপি। এখন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অগ্নিঝরা মার্চ। একটি নতুন পতাকা, একটি বজ্রকণ্ঠ ভাষণ, একটি ভীষণ কালরাত; সবমিলিয়ে ১৯৭১-এর মার্চকে ধরা হয় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত মৌসুম। আজ পহেলা মার্চ। মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।
১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনের পথ ধরে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্বাধীনতার অমর কাব্যের এ পঙ্ক্তিটি বাঙালি জাতিকে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় বলীয়ান করে তোলে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে অতর্কিতে ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন গ্রেপ্তার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তের, তার সর্বশেষ বাণী বাংলার মানুষের কাছে পাঠান এই বলে, ‘এই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাক, যে অবস্থায়ই থাক, হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটিতে থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট শুরু হয় মার্চের প্রথম দিন থেকে। এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের সব কেন্দ্রে একযোগে প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা প্রচার করা হয়। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, দেশ আবার কঠোর সামরিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে এবং সামরিক আইন কঠোর করে ভেতরে ভেতরে কোনো গভীর প্রস্তুতি চলছে। দুপুরে রেডিওতে যখন জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানরত পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ধারা বিবরণী চলছিল। তাই মাঠের ক্রিকেট দর্শকরাই রেডিওতে প্রথম ইয়াহিয়ার এ ঘোষণা শুনতে পান।
রেডিওতে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত করে স্টেডিয়ামের হাজার হাজার ক্রিকেট দর্শক। তারা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে ‘জয় বাংলা’ বলে। ধাওয়া করে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের এবং সেøাগানে উত্তাল হয়ে জঙ্গি মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের খবর শুনে পিআইএর বাঙালি কর্মচারীরাও জনসাধারণের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েন।
মিছিলকারীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ জানার জন্য হোটেল পূর্বাণী অভিমুখে মিছিলের পর মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলে। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেল পূর্বাণীতে। সেখানে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক হওয়ার কথা। লাখ লাখ মানুষের স্লোগান আর মিছিলে হোটেল পূর্বাণীর চত্বর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সবাই বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নির্দেশ শোনার জন্য উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনি মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান খানসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত তেজোদীপ্ত ভঙ্গিতে বলেন, অধিবেশন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি তিনি বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, আগামী ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে বলব।’ এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন অলিগলি পথ থেকে শত শত মিছিল পল্টন ময়দানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে জমায়েত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এ জমায়েত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তৃতা করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আর ৬ দফা, ১১ দফা নয়, এবার বাংলার মানুষের ১ দফার সংগ্রাম শুরু করব। আর এই এক দফা হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।
অগ্নিঝরা মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ ছয় দিনব্যাপী পথ নাটক উৎসবের আয়োজন করেছে। এদিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করবেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩৮ জন নাট্যকারকে যাদের রচিত পথনাটক বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের বিভিন্ন আয়োজনে অভিনীত হয়েছে, তাদের সম্মাননা জানানো হবে। ৬ মার্চ পর্যন্ত এ উৎসব চলবে।
প্রাথমিকের বৃত্তির ফল নিয়ে ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও বৃত্তি পেয়েছে। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে, একজন শিক্ষার্থী দুই জেলায় বৃত্তি পেয়েছে, দুবারই ট্যালেন্টপুলে। এমনসব অসংগতির অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আসার পরই বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরই স্থগিত করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে যখন উদযাপন চলছিল তখন গতকাল বিকেলে সেই ফল স্থগিত করা হয়। এতে প্রায় ৮২ হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবকের আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃত্তির ফল স্থগিত করা হয়েছে। মূলত সফটওয়্যারের কারিগরি ত্রুটির কারণে সন্দেহ দেখা দেয়। অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।’
পটুয়াখালীতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও এক শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলার গলাচিপা উপজেলার সুতাবাড়িয়া সার্কেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর এমন ফল হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃত্তি পরীক্ষায় তিনজনের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও অসুস্থ হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। অথচ সে বৃত্তি পেয়েছে।’
ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে এক শিক্ষার্থী। একই শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রামাঞ্চলের আরেকটি স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।
প্রাথমিক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বৃত্তিসংক্রান্ত সফটওয়্যারে কোডিং ভুলের কারণে ফল জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে কম নম্বর পেয়েও বৃত্তি পেয়েছে, আবার বেশি নম্বর পেয়েও বৃত্তি পায়নি। গতকাল বিকেলে অধিদপ্তরে ফলসংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তারা খোঁজ নিলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরের পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে। ফল জটিলতার তদন্তে গতকাল সন্ধ্যায়ই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্্ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফল পুনঃযাচাইয়ের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘কিছু জেলা থেকে পাওয়া কোডিংয়ে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পারার পরই মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবহিত করি এবং ফল স্থগিত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘হাতেগোনা কয়েকটি জেলা-উপজেলায় এমনটি হয়েছে। সংশোধিত ফলে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে বৃত্তির ফল প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পেয়েছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি পাবে।’
কারও কারও অভিযোগ, পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তালিকাভুক্ত করতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে। এর দায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার প্রকৌশলীদের। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একাধিক অভিভাবক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সন্তান বৃত্তি পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলাম। মিষ্টিও বিতরণ করেছি। কিন্তু ফল স্থগিতের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। সংশোধিত ফলে যদি দেখা যায়, আমার সন্তান বৃত্তি পায়নি, তাহলে এ ঘটনা কীভাবে মেনে নেব? বাচ্চারাই বা ব্যাপারটি কীভাবে নেবে? যারা এর জন্য দায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।’
২০২০ ও ’২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাক্রমের ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান চার বিষয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। মোট নম্বর ছিল ১০০ এবং সময় ছিল ২ ঘণ্টা।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
এক লোক হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) কে প্রশ্ন করল, নামাজের সময় কাতারের কোন পাশে দাঁড়ানো উত্তম? প্রথম কাতারের ডান পাশে না কি বাম পাশে? তখন সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, প্রথমে দেখো খাবারের জন্য রুটির যে টুকরোটা নিয়েছে তা হালাল না কি হারাম? তুমি কাতারের যেখানেই নামাজ আদায় করো তা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তুমি নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করো, তুমি নামাজ কোথায় আদায় করবে? অথচ তুমি এমন একটি কাজে লিপ্ত যা তোমাকে নামাজ কবুল হওয়া থেকে বিরত রাখে!
একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমরা কি জানো প্রকৃত দরিদ্র কে? তারা বললেন, দরিদ্র তো সে যার কোনো দিনার-দেরহাম নেই (অর্থকড়ি নেই)। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র সে, কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাতের সওয়াব নিয়ে আসবে; কিন্তু সে একে গালি দিয়েছে, ওকে প্রহার করেছে, অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ করেছে, তখন এই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, ওই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, অতঃপর যখন তার সওয়াব শেষ হয়ে যাবে তখন অন্য পাওনাদাররা তাদের অপরাধগুলো এই লোককে দিয়ে দেবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর সুফিয়ান সাওরি (রহ.) লোকটিকে বলেন, তুমি প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করলে তাতে কী লাভ; যদি তুমি মানুষের হক নষ্ট করো, অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো? সুতরাং তুমি হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো।
নবী কারিম (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না এবং তিনি মুমিন বান্দাদের তাই আদেশ করেছেন যা তিনি নবী-রাসুলদের আদেশ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুলরা, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎ কাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।’ সুরা মুমিনুন : ৫১
এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা পবিত্র খাবারকে নেক আমলের পূর্বে এনেছেন। অর্থাৎ নামাজ আদায়, দিনের বেলা রোজাপালন, রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি ও কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে হালাল খাবারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এখানে রাসুলদের উদ্দেশ করে বলেছেন, হে রাসুলরা! তোমরা হালাল খাবার গ্রহণ করো। এরপর তিনি বলেছেন এবং সৎ আমল করো। অর্থাৎ নেক আমলের পূর্বে হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, যাতে হারাম খাবার গ্রহণের কারণে নেক আমলগুলো নষ্ট না হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা পবিত্র বস্তু গ্রহণ করো এবং সৎ আমল করো।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত ধূলোমলিন চুল ও চেহারাওয়ালা এক লোকের উপমা দিয়ে বলেছেন, সে আসমানের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! তিনি বলেন, অথচ তার খানাপিনা হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম, সে যা ভক্ষণ করে তা হারাম, তাহলে তার দোয়া কবুল হবে কীভাবে?
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, হালাল খাবার মানুষের মেধা, ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সুতরাং এ প্রশ্ন করা অবান্তর, আমাদের দোয়া কবুল করা হয় না। দোয়া কবুল না হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ না করা। বস্তুত সমস্যা দোয়ার মধ্যে নয়, সমস্যা আমার-আপনার মধ্যে। আপনি খাবারকে পবিত্র রাখুন, দেখবেন আপনার দোয়াগুলো কবুল হচ্ছে।
একজন হারাম কজে লিপ্ত, অন্যায়ভাবে মানুষের হক ভক্ষণকারী, শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেন না, বাড়ির অসহায় কাজের মেয়েটির প্রাপ্য ভাতা প্রদান করেন না, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না আর সেই আপনিই আবার অভিযোগ করেন আমার দোয়া কবুল হয় না?
একটু ভাবুন, চিন্তা করুন। সর্বদা পবিত্র খাবার খাওয়ার, পবিত্র পোশাক পরিধানের চেষ্টা করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাকে বঞ্চিত করবেন না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।