
জটিলতা কাটিয়ে গতকাল বুধবার রাতে প্রকাশ হয়েছে প্রাথমিক বৃত্তির সংশোধিত ফল। রাত সাড়ে ১০টায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে এই বৃত্তির ফল প্রকাশের পর কারিগরি ত্রুটির কথা জানিয়ে বিকেলে তা স্থগিত করা হয়েছিল।
জানা গেছে, সংশোধিত ফল প্রকাশ করতে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই কাজ শুরু করে অধিদপ্তরের কারিগরি দল। তারা রাতভর কাজ করে। পরে গতকাল সকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শও নেওয়া হয়।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দুপুরে ফল প্রকাশের পর বিকেলে তা স্থগিত করে প্রকারন্তরে পঞ্চম শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘ছিনিমিনি’ খেলা হয়েছে। যা মোটেও উচিত হয়নি। আর এর মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থীর মনে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হলো। যারা এ ফল প্রকাশের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
এদিকে ফল প্রকাশ নিয়ে এই জগাখিচুড়ি অবস্থার কারণ খুঁজে বের করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটিতে প্রশাসনিক একজন কর্মকর্তার পাশাপাশি কারিগরি অভিজ্ঞতা থাকা আরও দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে কবে নাগাদ তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন তা জানানো হয়নি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রকাশিত ফলে বৃত্তি পেয়েছিল ৮২ হাজার ৩৮৩ জন। এর মধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) পেয়েছিল ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী এবং সাধারণ কোটায় পেয়েছিল ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন। তবে সংশোধিত ফল প্রকাশের পর পুরনো ফলে বৃত্তি পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বাদ পড়েছে। আবার নতুন করেও অনেকে বৃত্তি পেয়েছে। অবশ্য বৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা একই আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের কোডের ক্ষেত্রে ভুল করা হয়েছে। একাধিক উপজেলার কোড একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হয়তো বগুড়ার একটি উপজেলার শিক্ষার্থীর যে কোড ছিল, তা হয়তো রংপুরেরও কোনো উপজেলায়ও ছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে ফল তৈরির জন্য ডেটা নিয়ে যখন কাজ করা হয়, তখন একই কোড হওয়ায় ফলেও ভুল হয়েছে। দুই কোড যখন এক হয়ে গেছে, তখন হয়তো যে শিক্ষার্থীর বৃত্তি পাওয়ার কথা নয়, সেও বৃত্তির তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। আবার যার পাওয়ার কথা সেও বাদ পড়েছে।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে বৃত্তি দেওয়া হতো। প্রাথমিক সমাপনী ফল তৈরি হতো উপজেলাভিত্তিক। আর বৃত্তির ফলও তৈরি করা হয়েছে উপজেলাভিত্তিক। কিন্তু গত তিন বছর ধরে সমাপনী পরীক্ষা হয় না। আবার সমাপনী পরীক্ষার মতো করে এবার বৃত্তির ফল প্রকাশ করতে গিয়েই সমস্যাটি হয়েছে। আর এবার সমাপনী না হলেও হঠাৎ করেই বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত আলাদাভাবে বৃত্তির ফল প্রকাশ করতে গিয়েই কারিগরি দলের ভুলে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে গত বছর শেষ সময়ে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। আর গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ওইদিন সন্ধ্যায় তা স্থগিত করা হয়েছিল। কারণ অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিলেও তারা বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর আসে। আবার এক শিক্ষার্থীর নাম একাধিক তালিকায়ও এসেছে। ‘লেজেগোবরে’ এ অবস্থা নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
লিজে নেওয়া দুটি এয়ারক্রাফট গত বছর কিনতে বাধ্য হয় বিমান। নানা কৌশলে ‘রদ্দি মাল’ দুটি গছিয়ে দেওয়া হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে একই প্রক্রিয়ায় বহরের জন্য অনুপযুক্ত আরও একটি এয়ারক্রাফট গছানোর ‘ধান্দা’ শুরু করেছে একটি চক্র।
যদিও বিমানের ‘হাই অফিশিয়াল’ এ চক্রের ফাঁদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই এয়ারক্রাফট লিজ প্রক্রিয়ায় যেন বাণিজ্যিক মধ্যস্থতা না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রথমে লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। আর অনানুষ্ঠানিকভাবে তা কিনে নেওয়ার মুলা ঝোলানো হয়েছে। গত বছর যেহেতু লিজে নেওয়া এয়ারক্রাফট কিনে নিয়েছে এবারও কিনবে বা লিজের মেয়াদ বাড়াবে বিমানএমন ছক থেকেই দাবার বোর্ডের ঘুঁটি চালাচালির মতো ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে।
কিন্তু বিমানের শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, কেনা তো নয়ই, এই এয়ারক্রাফটের লিজের মেয়াদও বাড়ানো ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা ফেরত দিতে হবে। তা না হলে এই এয়ারক্রাফট লিজে নেওয়া অন্য এয়ারক্রাফটের মতো বিমানের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। আর ভবিষ্যতে লিজ থেকেও বের হয়ে আসতে হবে বিমানকে।
বিমানবহরে বর্তমানে ২১টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে ড্যাশ-৮ মডেলের রয়েছে ৪টি। ড্যাশগুলোর মধ্যে এমএসএন ৪২০৮ এস২-এজেডব্লিউ মডেলের এয়ারক্রাফটির লিজের মেয়াদ আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এয়ারক্রাফটটি নোরডিক এভিয়েশন থেকে মাসে ১ লাখ ২৬ হাজার ডলারে ৫ বছরের জন্য ড্রাই লিজে আনা হয়। ড্রাই লিজের শর্ত অনুযায়ী, এয়ারক্রাফট যে অবস্থায় আনা হয়, সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে; অর্থাৎ এয়ারক্রাফটির ইঞ্জিন, বডিসহ সবকিছুই লিজ নেওয়ার প্রথম দিনের মতো বা অবস্থায় থাকতে হবে। নোরডিক হচ্ছে বিশে^র অন্যতম নামকরা এয়ারক্রাফট লিজিং কোম্পানি। বিশ্বখ্যাত অনেকগুলো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে নোরডিকের। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক এই কোম্পানি থেকে এর আগেও এয়ারক্রাফট লিজ নিয়েছে বিমান। সেই সব লিজের পরিণতিও ভালো হয়নি।
লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকায় লিজদাতা বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। গত বছরের ৩ মাার্চ লিজদাতা কম ভাড়ায় এয়ারক্রাফটির লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এবারে তিন বছরের জন্য লিজ দিতে চায়। প্রতি মাসের ভাড়া ৬৩ হাজার ৫০০ ডলার। ১২ মাসের জন্য লিজ নিলে ভাড়ায় ২০ শতাংশ ছাড় দেবে। প্রস্তাবিত বর্ধিত মেয়াদের লিজ প্রক্রিয়ার মধ্যেই নোরডিক এভিয়েশন এয়ারক্রাফটির মালিকানা হাতবদল করতে চায়। তারা এয়ারক্রাফটি তাদেরই সহযোগী সংস্থা এনএসি এভিয়েশনের নামে হস্তান্তর করতে চায়। মেয়াদ বাড়ানোর পূর্বশর্ত হিসেবে বিমানকে মালিকানা হস্তান্তরে সহযোগিতার অঙ্গীকার করতে হবে।
লিজ প্রস্তাবের মেয়াদ গত বছরের ৪ মার্চ শেষ হয়ে গেলেও নোরডিক এভিয়েশন মৌখিকভাবে প্রস্তাবটি বহাল আছে বলে বিমানের পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। এ বিষয়ে নোরডিক বিমান কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। লিজদাতা এয়ারক্রাফটি কম দামে কিনে নেওয়ার জন্য বিমান কর্তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। বিমানের বাইরে থেকেও এ বিষয়ে লবিং করাচ্ছে লিজদাতা।
লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব গত ১৪ ডিসেম্বর বিমানের নির্বাহী পরিচালকমন্ডলীর সভায় উপস্থাপন করা হলে সভা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরকে ফেরত দেওয়ার খরচ নিরূপণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এয়ারক্রাফটটি যে অবস্থায় আনা হয়েছে, সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি কেনা এবং বাণিজ্যিক মধ্যস্থতা যেন না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার জন্য বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে কোনো সংস্থার সঙ্গে যেকোনো ধরনের চুক্তি করার আগে দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে চুক্তি করা হবে, যেন বিমানের আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতি না হয়এ সিদ্ধান্তও বৈঠকে নেওয়া হয়।
এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার জন্য নির্বাহী পরিচালকম-লীর গত ১৫ ফেব্রুয়ারির সভায় বলা হয়, ‘যেহেতু লিজকৃত এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিমানের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এবার ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।’
একজন পরিচালক জানিয়েছেন, অতীতের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা এবারও এড়াতে পারবে না বিমান। অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে লিজ নেওয়ার আগেই পরামর্শ করা হয়েছিল। লিজ নেওয়ার বিষয়ে তারা ভিন্ন কোনো মত দেয়নি। ফেরত দেওয়ার সময় অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেও ফলদায়ক কিছু হবে না। কারণ যা শর্ত আছে, তা থেকে বের হয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান বিমান বহরে থাকা ড্যাশ-৮-৪০০ এয়ারক্রাফট লিজের মেয়াদ শেষে ফেরত দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এয়ারক্রাফটের অনেক পার্টস বাজারে নেই। বাজারে পার্টসই যদি না থাকে তাহলে লিজ নেওয়ার সময়ের অবস্থানে কীভাবে নেওয়া যাবে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফটকে? তাহলে নির্ঘাত আরও একটি ঘটনা লিজকা-ে যোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
মিসরের ইজিপ্টএয়ার থেকে দুটি এয়ারক্রাফট লিজে এনে বিমানকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছিল। অসম চুক্তির কারণে লিজের সেসব এয়ারক্রাফট ফেরত দিতে বেগ পেতে হয় বিমানকে। ওই দুটি এয়ারক্রাফেটর জন্য রাষ্ট্রীয় এই এয়ারলাইনসকে মোট ৬০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। এ অভিযোগ এখনো তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এটা শুধু লিজকা-ের একমাত্র ঘটনা নয়। আরও অনেক অনেক ঘটনার একটি মাত্র।
নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারলাইনসের ২০ বছরের পুরনো এয়ারক্রাফট লিজে আনা নিয়েও জটিলতা হয়েছিল। কয়েকটি দেশ এ এয়ারক্রাফটটি নামতে বাধা দিয়েছিল। ডিসি ১০ এবং এয়ারবাসের দুটি এয়ারক্রাফট নিয়েও জটিলতা কম হয়নি। মাসের পর মাস বসিয়ে রেখে জরিমানা গুনতে হয়েছিল বিমানকে। লিজ নিয়ে নানা কা-ের পর একই পথে হাঁটছে বিমান। মন্ত্রণালয়ের কমিটি, বিশেষজ্ঞ কমিটি, এমনকি সংসদীয় কমিটির সাফ কথাবিমানকে লিজে এয়ারক্রাফট আনা বন্ধ করতে হবে। এসব কমিটির কথা আমলে না নিয়ে বিমান হাঁটছে নিজের মতো করে। অভিযোগ উঠেছে, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারাই নেপথ্যে থেকে বিমান কর্তৃপক্ষকে লিজ নেওয়া থেকে শুরু করে নতুন এয়ারক্রাফট কেনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পথ বাতলে দিচ্ছে।
বিমানবহরে অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারই আছে অর্ধডজন। বোয়িংয়ের ৭৩৭, এমনকি ছোট আকারের ড্যাশও আছে। এতগুলো নতুন এয়ারক্রাফট দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এয়ারলাইনসের নেই। সেই সব অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট হেলায় নষ্ট করছে। প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটকে কার্গো ফ্লাইটে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক, তা করেনি বিমান। এতে এয়ারক্রাফটের সিট, হ্যান্ড লাগেজ কেবিন, মনিটর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্গো বা মালামাল পরিবহন করে যা আয় হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে কেবিন, সিট বা মনিটর ভাঙার কারণে।
ড্যাশ ৮ এয়ারক্রাফটের মেয়াদ বাড়ানো বা কিনে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিমানের হাই অফিশিয়ালরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করেও তাদের কথা বলতে রাজি করানো যায়নি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমানের ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট লিজে আনা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বেসরকারি কয়েকটি এয়ারলাইনস শুরুতে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট নিয়ে এলেও তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এয়ারক্রাফট ফেরত দিয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে যখন প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলো ড্যাশ-৮ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, তখনো বিমান ড্যাশেই মজে আছে। এ ধরনের এয়ারক্রাফট নেওয়ার আগে তারা কোনো ফিন্যান্সিয়াল ফিজিবিলিটি স্টাডি করেনি।’
বিমান ড্রাই লিজ অনুসরণ করে কেন? এর বিশেষ কোনো সুবিধা আছে কি না জানতে চাইলে বিমানের সাবেক এ পরিচালক বলেন, বিমানের জন্য ড্রাই লিজ অত্যন্ত খারাপ একটা চুক্তি। এই চুক্তির সমস্যা হলো যে অবস্থায় এয়ারক্রাফট বহরে যোগ হলো, সেই অবস্থায় তা ফেরত দিতে হবে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। একটা চেয়ারও যদি পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয় তা আর আগের অবস্থায় ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। বিমান যতবার ড্রাই লিজ নিয়েছে, ততবারই ঝামেলা হয়েছে। প্রতিবার বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ড্রাই লিজের এয়ারক্রাফট ফেরত দিতে হয়েছে। ডিসি-১০সহ আরও কিছু ড্রাই লিজ থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যাহতি পায়নি বিমান। তখন বাধ্য হয়ে রেখে দিতে হয়।
এ জটিলতা থেকে বের হয়ে আসতে হলে এয়ারলাইনসগুলো কী করতে পারেজানতে চাইলে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, লিজের শুরুতেই মেইনটেন্যান্স রিজার্ভ বলে একটা ফান্ড করতে হয়। এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার সময় সেই ফান্ড থেকে খরচ করতে হয়। তাহলে এয়ারলাইনসগুলোকে বেগ পেতে হয় না। এয়ারলাইনসগুলোর জন্য সবচেয়ে ভালো হয় লিজ বেসিস পারচেজে যাওয়া। লিজের কিস্তির টাকা দিয়েই এয়ারক্রাফটের মালিক হওয়া যায়। এর প্রিমিয়ামটা একটু বেশি হলেও এটাই সুবিধাজনক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বীমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যথাযথ তদন্ত না করে যেকোনো স্থানের বা প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অগ্নিকা-ে কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বীমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবস-২০২৩-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও চাপের কাছে আপনারা মাথানত করবেন না, দয়া করে। আমিই বলেন বা আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের কাছে নানা ধরনের লোক আসে, তদবিরও করতে পারে সে ক্ষেত্রেও আপনাদের দেখতে হবে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার দাবি করবে বড় একটা কিন্তু তার প্রকৃত ক্ষতি যাচাই-বাছাই করেই আপনারা অর্থ পরিশোধ করবেন।’ খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গেও বীমা কোম্পানির যোগসূত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন এবং তাদের চড়াই-উতরাই-ভরা জীবনে এবং ’৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর পুনরায় গ্রেপ্তারের আগে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিকালীন প্রায় দুই বছর সময় তারাও একটু স্থিতিশীল হতে পেরেছিলেন। কাজেই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আত্মার একটা যোগাযোগ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার ব্যাপারে দেখব যেন যথাযথ বীমা ছাড়া এ সড়কে কোনো ধরনের পরিবহন যেন না চলে। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
বীমার অর্থ দাবির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে স্বার্থান্বেষী মহলের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়েও বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন আজকে এ কথা বলবেন, কারণ, তিনি যেহেতু এ পরিবারেরই একজন সদস্য (জাতির পিতাও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন) তাই এর বদনাম হোক তা তিনি চান না।
একসময় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ঘন ঘন অগ্নিকা- ঘটার প্রসঙ্গ টেনে তদন্ত করে তিনি বীমার মোটা অঙ্কের মিথ্যা অর্থ দাবির প্রমাণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। নাম উল্লেখ না করে কোনো একটি কোম্পানির এক নারীকর্মীকে দিয়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্নিকান্ড ঘটানো হয় বলেও তদন্তে বেরিয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘন ঘন একটা জায়গায় আগুন লাগবে কেন? ইন্স্যুরেন্সের দাবিদার হয়ে যায়, টাকা পায়। সে ক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং কর্র্তৃপক্ষ করে দিয়েছি তাদের এ ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা দরকার। কতটুকু ক্ষতি হলো তার যথাযথভাবে তদন্ত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না।’
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএর চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বীমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সোনার বাংলা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে সম্মাননা প্রদান করেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পশ্চিম মালিবাগের ইজাজুল হককে। ভোটদানের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় বা মেয়র যেকোনো নির্বাচনেই প্রতিবার ভোট দিতে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ দেয় এমন এক টেবিলে গেলে, দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান, আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে এবং আমার নামের পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া। অথচ আমি ভোট দিইনি। পরে আমি চ্যালেঞ্জ করলে তারা ভেতরে যেতে বলে। বুথে গেলে দেখা যায় সেখানেও আমার তালিকার পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া। পরে প্রিসাইডিং অফিসারের দেওয়া বিশেষ ব্যালেটে সিল মেরে দিয়ে আসি। শেষ পর্যন্ত ব্যালটটি জমা পড়েছে কি না, তা জানি না।’
শেখ ইফফাত হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভোটার হওয়ার পর প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ আসে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তবে সে বছর ভোট দেওয়া হয়নি। আশা করছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অপেক্ষা ঘুচবে। তবে আফসোস, দুই ভাগ হওয়া ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় ভোট দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। সে সময়কার সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, আমারও আর ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এর পরের বছর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও ভোট দেওয়া হয়নি ঢাকার বাইরে থাকায়। ২০১৮ সালে নিজের ভোটকেন্দ্রে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দিতে পারিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জন্য। একই কারণে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি ২০২০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও।’
ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমার এমন প্রেক্ষাপটে আজ ২ মার্চ বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোটার দিবস পালন করছে নির্বাচন কমিশন। এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দেব যোগ্যজনে’। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। নির্বাচনের মাধ্যমেই যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ভোটাররাই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু গত এক দশকে সাধারণ মানুষের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ কমেছে। ফলে নির্বাচনের মাঠেও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের একটি অংশ বিরত থাকছেন।
তারা বলছেন, সাধারণ ভোটাররা যাতে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে সে জন্য ভোটারদের উপস্থিতি ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ যাবৎকালে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮ দশমিক ০৪ এবং বিএনপির ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ৭ দশমিক ০৪ এবং জামায়াতের ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট পায়।
তবে সে হিসাব পাল্টে যায় ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেনি, যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছে সেখানেও ভোটার উপস্থিতি অর্ধেক কমে যায়। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে সেবার ভোট পড়ে ৪০ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলেও দিনের অর্ধেক সময় না যেতেই ভোট নিয়ে বিতর্ক ওঠে। অনেক দল নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশের ওপরে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ওই নির্বাচনে। যদিও এ তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ ওঠে উপজেলার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে। সেখানেও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। একই অবস্থা ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩০ শতাংশের মতো।
২০২২ সালে হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমিশনের শুরুর দিকে নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সব দলকে ভোটে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচনগুলোতে কঠোর অবস্থান দৃষ্টি কেড়েছিল। কিন্তু এত আয়োজন সত্ত্বেও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি।
আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি সংসদ উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এসব নির্বাচনে গড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ।
গত বছর ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম, ভোট পড়েছে মাত্র ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। একই অবস্থা ছিল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনেও। এসব আসনে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
নির্বাচনের পর ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কাক্সিক্ষতমাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় উপনির্বাচন নিরুত্তাপ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতিও তুলনামূলক কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ, নির্ভর করতে হবে। আমরা আমাদের নিষ্ঠা, দক্ষতা, সততা ও যে মনোবল সেটা দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করব। আমাদের চেষ্টা, প্রয়াস অব্যাহত থাকতে হবে।’
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন হোক বা স্থানীয় নির্বাচন হোক, ভোটারদের উপস্থিতি কমে এসেছে। এ জন্য ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোটের ফলাফল উল্টিয়ে দেওয়া, ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সংঘর্ষের আশঙ্কা এবং একের ভোট অন্যজন দিয়ে দেওয়াই অন্যতম কারণ। নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা বাড়ে যখন একজন ভোটার প্রতিবন্ধকতায় পড়েন। এর জন্য বিরাজমান যে রাজনৈতিক সংকট তা নিরসনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ যদি নির্বাচনে না থাকে, যদি সবার পছন্দের প্রার্থী না থাকে তখন সে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয় না। তখন ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারা বুঝে ফেলে নির্বাচনে কে জিতবে। ফলে সে নির্বাচনটা অর্থহীন নির্বাচনে রূপ নেয়। আর এসব কারণে সামগ্রিকভাবে, বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তাতে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। নির্বাচনে অংশীজন যারা তাদের আস্থা কমেছে। নির্বাচন কমিশনের যে কর্মপরিকল্পনা সেখানেও তারা বলেছে ভোটারদের অস্থা কমেছে।’
তিনি বলেন, যে নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ থাকে না বা উপস্থিতি থাকে না সে নির্বাচনকে সিদ্ধ নির্বাচন বলা যায় না। যখন সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন না হয় তখন তার মধ্যে আর গণতন্ত্রের ছাপ থাকে না। ফলে সেখানে গণতন্ত্র ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায়। তিনি বলেন, এটা একটি রাজনৈতিক সংকট। এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সব দল যদি আলাপ-আলোচনা শুরু করে সমঝোতায় আসতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কার্যত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ তারা ভোট দিতে পারে না, ভোট দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, ভোট গণনা হয় কি না বা যাকে ক্ষমতাসীনরা মনোনয়ন দেয় তারাই জিতে যায়, ভোটের কোনো মূল্য আছে কি না, এটাই অনেকের মনে প্রশ্ন? তাই তারা ভোট দিল কি দিল না তাতে কিছু আসে যায় না। ভোটার আছে, সেটা কাগজে আছে, কিন্তু ভোট কেন্দ্রে নেই।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য “ভোট দেব যোগ্যজনে”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্যজনটা নির্বাচিত হবে কী করে? যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হয়। অংশগ্রহণ মানে হলো শুধু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বিষয়টা এমন নয়। সেখানে জনগণেরও অংশগ্রহণ থাকতে হয়। ইসির এবারের স্লোগানটা ভালো। তবে স্লোগানটা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, ইসির এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘ভয়ভীতিহীন নির্বাচন ও ভোটের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ তৎপর। নিজেদের মেয়াদের প্রথম বছরে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে বাধা, অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার বিষয়ে কমিশন বদ্ধপরিকর। প্রত্যেক ভোটারের নাগরিক অধিকার তার ভোটাধিকার। এ অধিকার রক্ষায় কমিশনের দিক থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে।’
দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের বাজার বিলুপ্তির পথে। তেজগাঁও ডিমের আড়তে বিক্রি কমেছে পাঁচগুণ। একসময় এ বাজারে দিনে ৭০-৮০ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো; এখন হয় ১২-১৮ লাখ। ডিম ব্যবসায়ী ছিলেন ১২০ জন, এখন আছেন ২৮ জন। তাদের মধ্যে সচ্ছল ব্যবসায়ী আছেন ২০ জনের কম। বাকিরা ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ডিম বিক্রি করছেন। আর যারা এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়েছেন তারা অন্য কোথাও ডিমের ছোট দোকান দিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীরা ডিমের বাজার দখলে নিয়েছেন। তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডিম দিচ্ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন তেজগাঁও আড়তে কম আসছে। এ বাজারে আগে যেসব ক্ষুদ্র খামারির ডিম আসত তাদের বেশিরভাগ লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিদের লোকসান হচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘দেশে যেসব ক্ষুদ্র খামারি এখন খামার করছেন তাদের ডিমও তেজগাঁওয়ে আসছে না। ফলে তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়তদাররা চাহিদামতো ডিম পাচ্ছেন না। তারা মনে করেন, সরকার চাইলে এই এলাকায় আবার ব্যবসা চাঙ্গা করতে পারে। করপোরেট ব্যবসায়ীরা যদি এখানে উন্মুক্তভাবে ডিম বিক্রি করেন বা তাদের ডিম দেন তাহলে এখানে আবারও ক্রেতারা আসবে।’
১৯৮৮ সালে তেজগাঁওয়ে ডিমের বাজার হয়। কয়েকটি দোকান দিয়ে শুরু হয়েছিল। তখন ঢাকায় কোনো ডিমের আড়ত ছিল না। তখন এটি ডিমের বাজার হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০৫ সালের পর এখানে একশর বেশি দোকান ছিল। পরে কাপ্তান বাজারে ডিমের ব্যবসা শুরু হয়। ক্রমেই রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাজধানীতে ডিমের ব্যবসার সবচেয়ে বড় আড়ত তেজগাঁওয়েই।
ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়ত প্রতিষ্ঠার আগে গাজীপুরে ছিল সবচেয়ে বড় ডিমের আড়ত। গাজীপুরের আশপাশেই সবচেয়ে বেশি মুরগির খামার। গাজীপুরে যখন বড় বড় প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা গড়া শুরু হয় তখন থেকে খামারের সংখ্যা কমতে থাকে। গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা ঢাকামুখী হতে থাকেন। ২০০২ সালে গাজীপুরের ডিমের আড়ত একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সেখানে ছোট ছোট দোকানে ডিমের ব্যবসা চলত। এখন ডিমের ব্যবসা চলে গেছে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্যান্য এলাকায়।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যখন লেয়ার মুরগির লাল ডিম আসল তখন এ ডিম কেউ খেতেই চাইত না। বেচাকেনা খুব কম হতো। আমারই দেশে লাল ডিমের প্রসার ঘটিয়েছি। একসময় এই বাজারে দিনে ৭০-৮০ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো; এখন হয় ১২-১৮ লাখ। ১২০ জনের বেশি ব্যবসায়ীর জায়গায় এখন আছেন ২৮ জন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা চাঙ্গা থাকায় একসময় ব্যবসায়ীদের নিয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি হয়েছিল। ব্যবসায়ী কমে যাওয়ায় ২০১৫-১৬ সালের পরে সমিতির নতুন কমিটিও হয়নি।’
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আল-আমিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল-আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে বিবিএ-এমবিএ করেছি। সেখানে গাড়ির কোম্পানিতে চাকরিও করেছি। দেশে এসে নামি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। গত বছরের আগস্টে আমার বাবা হাজি মো. রওশন আলী মারা যান। তিনি এ বাজারে ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করেছেন। অনেক টাকা মাঠে পড়ে আছে। এ ব্যবসা ছাড়ার কোনো উপায় নেই। পারিবারিক এ ব্যবসার হাল আমাকেই ধরতে হয়েছে। আমরা একসময় প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ পিস ডিম বিক্রি করতাম। এখনো চাহিদা আছে। কিন্তু ডিম পাচ্ছি না। তাই ব্যবসাও সংকুচিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের বাজার এখন ধ্বংসের মুখে।’
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতারা বলেন, এখানে একটা দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। একদিকে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে খরচ বাড়ছে। পারিবারিক খরচ তো আছেই। আবার ডিমের দাম কমে গেলে মাঝেমধ্যে লসও হয়। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকায় অনেক ব্যবসায়ী তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছে।’
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকারের উন্নয়মূলক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ গত কয়েক বছর ধরে চলছে। তেজগাঁও রেলস্টেশন ধরে ফার্মগেটের দিকে কাজ এগিয়ে চলছে। কিছু দোকান ভেঙে দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলায় এখানে জায়গাও কমে গেছে। ফার্মগেট-তেজগাঁও-সাতরাস্তার কাজও চলছে। নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এখানে ডিমের ব্যবসা থাকবে কি না সন্দেহ।’
অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতের আসামের একটি আদালতের আপিল বিভাগ গত মঙ্গলবার বেকসুর খালাস দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠাতে ভারত সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে। এখন ভারত সরকার তাকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে শিগগিরই দেশে ফিরতে চান সালাহউদ্দিন। গতকাল বুধবার মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে সালাহউদ্দিনকে ভারতের আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ায় খুশি বিএনপির একাধিক নেতা। তারা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরে আসুক আমরা তা চাই। কিন্তু এখন ভারত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
মুঠোফোনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা ছোট ছিল, এখন বড় হয়ে গেছে। শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। ভারত সরকার সদয় হলে দেশে ফিরতে পারি। আদালতের রায়কে সামনে রেখে আমার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ শিলংয়ে এসেছিলেন। বেকসুর খালাস দেওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তার জন্য আমাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে।’
আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালতের রায়ে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছি। কিন্তু ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এর ফলে তখন দেশে ফিরতে পারিনি। দীর্ঘ চার বছর পর নিম্ন আদালতের ওই রায় বহাল রেখে ভারত সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় জজ আদালত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময় দেশে ফিরতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। ভারত সরকার আমাকে যখনই দেশে পাঠিয়ে দেবে বা ব্যবস্থা নেবে তখনই আমি দেশে ফিরব।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আদালতে বিচারের রায় আসার আগ পর্যন্ত আমাকে জামিন দিয়েছিল। আমি এখানে একটি ভাড়াবাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এখনো সেখানেই আছি। দেশ থেকে স্বজন, নেতাকর্মীরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিতে আসেন। এভাবেই কেটেছে এতগুলো দিন।’
বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ভারত সরকার সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে পাঠাতে বাধ্য। তারা এক্সিট ভিসা দিয়ে তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারে। আদালতের নির্দেশে বেকসুর খালাস পাওয়ায় তিনি এখন মুক্ত মানুষ। এরপর তিনি দেশে এলে মামলা থাকলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদের এক স্বজন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারত সরকার সালাহউদ্দিনকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) চিঠি দিতে হবে। কারণ ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সালাহউদ্দিনকে বিজিবির কাছে বুঝিয়ে দিলে তাকে যেন বিজিবি গ্রহণ করে দেশে প্রবেশ করতে দেয়। এ ছাড়া তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিতে হবে।
সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দেশেও অসংখ্য মামলা রয়েছে। দেশে ফিরলে তাকে নতুন করে আইনি মোকাবিলা করতে হতে পারে। ভারত সরকার তাকে দেশে পাঠালে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে। ভারত থেকে মুক্তি পেলেও দেশে ফিরে তাকে কারাগারে যেতে হবে।’
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পরদিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা-পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সালাহউদ্দিন যখন নিখোঁজ ছিলেন, তখন বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের মুখপাত্র হিসেবে ভিডিও বার্তা দিতেন।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন। ভারতে আটকের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। পরে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।