
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার এবং হাউজ টিউটরদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। নির্যাতনের ওই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়।
যাদের সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী ও ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং ছাত্রলীগকর্মী চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের পর গতকালই হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। আর নির্যাতনে জড়িত পাঁচ ছাত্রীর বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্যাতনে জড়িত পাঁচ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
তবে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারে হাইকোর্টের আদেশেও আতঙ্ক কাটেনি নির্যাতনের শিকার ফুলপরীর। অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ফুলপরী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া আদালত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা।
গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে বিচারিক তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্তের যে দুটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, তাতে ফুলপরীকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া এ ঘটনায় হল প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের চরম অবহেলা ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে কমিটি এবং অন্তরা এ ঘটনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা। প্রতিবেদনটির ওপর গত মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে গতকাল আদেশের জন্য ধার্য রাখে হাইকোর্ট। গতকাল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। আর ইবির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
আইনজীবী গাজী মহসীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো হলে সিট বরাদ্দ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষকে এবং তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে কুষ্টিয়া ও পাবনার এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্যাতনের ঘটনার দৃশ্য যে মোবাইলে ধারণ করা হয়েছিল, সেটি উদ্ধার করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’ আদালতের এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা কতটুকু প্রতিপালিত হয়েছে, তা আগামী ৮ মের মধ্যে হাইকোর্টকে জানাতে হবে বলেও জানান তিনি।
জড়িত পাঁচ ছাত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার : হাইকোর্টের নির্দেশনার পর দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করেছে ইবি প্রশাসন। হলটির জ্যেষ্ঠ আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহসানুল হককে সাময়িকভাবে প্রভোস্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর জড়িত পাঁচ ছাত্রীর বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। গতকাল ইবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করেছি এবং হলের সিনিয়র হাউজ টিউটরকে সাময়িকভাবে হল চালানোর জন্য বলা হয়েছে। ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। তিনি ক্যাম্পাসে এলে প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বহিষ্কারের বিষয়ে শনিবার শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে হাইকোর্টের নির্দেশার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি পরে জরুরি সিন্ডিকেটের প্রয়োজন হয় তাহলে সভা আহ্বান করা হবে।’
অন্তরা ও চার কর্মী ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার : নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ইবির পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গতকাল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এই বহিষ্কারাদেশ স্থায়ী নাকি অস্থায়ী, তা জানতে চাইলে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের উৎসগুলো থেকে তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছি। সবার সংশ্লিষ্টতা আছে, এটা নিশ্চিত। এখন অপরাধ কতটুকু এটা তো বিবেচ্য বিষয়। এখানে তাদের ভুল বা অন্যায় যেটাই হোক। তার গভীরতার ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। এটা স্থায়ীও হতে পারে, অস্থায়ীও হতে পারে।’
আতঙ্ক কাটেনি ফুলপরীর : হাইকোর্টের গতকালের আদেশের পরও আতঙ্ক কাটেনি নির্যাতনের শিকার ফুলপরীর। অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ফুলপরী ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফুলপরীর গ্রামের বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুরে গিয়ে জানা যায়, দরিদ্র ভ্যানচালক আতাউর রহমানের মেয়ে ফুলপরী। নিজে নিরক্ষর হলেও চার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্নে সংগ্রামী জীবন আতাউরের। বড় ছেলেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করিয়েছেন। বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তৃতীয় সন্তান ফুলপরীকেও ভর্তি করেছেন ইবিতে। কিন্তু ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের শিকারের পর প্রাণভয়ে পালিয়ে বাড়ি চলে আসেন ফুলপরী। পরিবারকে জানানোর পর নির্যাতনের ঘটনায় ভেঙে না পড়ে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেয় ফুলপরীর পরিবার। কিন্তু অভিযুক্তরা স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়ায় ক্যাম্পাসে ফেরার সাহস পাচ্ছেন না ফুলপরী। গতকাল দুপুরে ফুলপরীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ফুলপরী বলেন, ‘আমার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ায় আমি হাইকোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তারা স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়ায় আমি হতাশ। কারণ অভিযুক্তরা আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার ও পড়ার কোনো যোগ্যতা নেই ওদের। আমি তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। ন্যায়বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমি কুষ্টিয়ার আদালতে মামলা করব। মামলার প্রস্তুতি চলছে। অন্যায়ভাবে যারা আমাকে পাশবিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে, দ্রুত তাদের বিচার চাই, শাস্তি চাই।’
ফুলপরীর বড় ভাই হজরত আলী বলেন, ‘অভিযুক্তরা যে ধরনের অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তারা স্থায়ী বহিষ্কার ও শাস্তির আওতায় না এলে এমন ঘটনার আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আমরা চাই এ ঘটনায় দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক, যাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন নিষ্ঠুর র্যাগিং সংস্কৃতির মূলোৎপাটন হয়।’
ফুলপরীর প্রতিবাদ ও সাহসিকতা সারা দেশে প্রশংসিত হওয়ায় তাকে নিয়ে গর্বিত এলাকাবাসী। তারাও এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। ফুলপরীর প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বলেন, ‘নীরবে অন্যায় সহ্য না করে প্রতিবাদ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফুলপরী। ফুলপরীর বাবা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করছেন। ফুলপরীকেও তিনি প্রতিবাদ করতে সাহস জুগিয়েছেন। ফুলপরীকে নির্যাতনে জড়িতদের সঠিক বিচার হলে, সবাই নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে অনুপ্রেরণা পাবে।’
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। তারা ওই ছাত্রীকে মারধরের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করতে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক এবং প্রশাসন ক্যাডারের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন পাবনা ও ইবি প্রতিনিধি
লিজে নেওয়া দুটি এয়ারক্রাফট গত বছর কিনতে বাধ্য হয় বিমান। নানা কৌশলে ‘রদ্দি মাল’ দুটি গছিয়ে দেওয়া হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে একই প্রক্রিয়ায় বহরের জন্য অনুপযুক্ত আরও একটি এয়ারক্রাফট গছানোর ‘ধান্দা’ শুরু করেছে একটি চক্র।
যদিও বিমানের ‘হাই অফিশিয়াল’ এ চক্রের ফাঁদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই এয়ারক্রাফট লিজ প্রক্রিয়ায় যেন বাণিজ্যিক মধ্যস্থতা না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রথমে লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। আর অনানুষ্ঠানিকভাবে তা কিনে নেওয়ার মুলা ঝোলানো হয়েছে। গত বছর যেহেতু লিজে নেওয়া এয়ারক্রাফট কিনে নিয়েছে এবারও কিনবে বা লিজের মেয়াদ বাড়াবে বিমানএমন ছক থেকেই দাবার বোর্ডের ঘুঁটি চালাচালির মতো ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে।
কিন্তু বিমানের শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, কেনা তো নয়ই, এই এয়ারক্রাফটের লিজের মেয়াদও বাড়ানো ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা ফেরত দিতে হবে। তা না হলে এই এয়ারক্রাফট লিজে নেওয়া অন্য এয়ারক্রাফটের মতো বিমানের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। আর ভবিষ্যতে লিজ থেকেও বের হয়ে আসতে হবে বিমানকে।
বিমানবহরে বর্তমানে ২১টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে ড্যাশ-৮ মডেলের রয়েছে ৪টি। ড্যাশগুলোর মধ্যে এমএসএন ৪২০৮ এস২-এজেডব্লিউ মডেলের এয়ারক্রাফটির লিজের মেয়াদ আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এয়ারক্রাফটটি নোরডিক এভিয়েশন থেকে মাসে ১ লাখ ২৬ হাজার ডলারে ৫ বছরের জন্য ড্রাই লিজে আনা হয়। ড্রাই লিজের শর্ত অনুযায়ী, এয়ারক্রাফট যে অবস্থায় আনা হয়, সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে; অর্থাৎ এয়ারক্রাফটির ইঞ্জিন, বডিসহ সবকিছুই লিজ নেওয়ার প্রথম দিনের মতো বা অবস্থায় থাকতে হবে। নোরডিক হচ্ছে বিশে^র অন্যতম নামকরা এয়ারক্রাফট লিজিং কোম্পানি। বিশ্বখ্যাত অনেকগুলো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে নোরডিকের। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক এই কোম্পানি থেকে এর আগেও এয়ারক্রাফট লিজ নিয়েছে বিমান। সেই সব লিজের পরিণতিও ভালো হয়নি।
লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকায় লিজদাতা বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। গত বছরের ৩ মাার্চ লিজদাতা কম ভাড়ায় এয়ারক্রাফটির লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এবারে তিন বছরের জন্য লিজ দিতে চায়। প্রতি মাসের ভাড়া ৬৩ হাজার ৫০০ ডলার। ১২ মাসের জন্য লিজ নিলে ভাড়ায় ২০ শতাংশ ছাড় দেবে। প্রস্তাবিত বর্ধিত মেয়াদের লিজ প্রক্রিয়ার মধ্যেই নোরডিক এভিয়েশন এয়ারক্রাফটির মালিকানা হাতবদল করতে চায়। তারা এয়ারক্রাফটি তাদেরই সহযোগী সংস্থা এনএসি এভিয়েশনের নামে হস্তান্তর করতে চায়। মেয়াদ বাড়ানোর পূর্বশর্ত হিসেবে বিমানকে মালিকানা হস্তান্তরে সহযোগিতার অঙ্গীকার করতে হবে।
লিজ প্রস্তাবের মেয়াদ গত বছরের ৪ মার্চ শেষ হয়ে গেলেও নোরডিক এভিয়েশন মৌখিকভাবে প্রস্তাবটি বহাল আছে বলে বিমানের পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। এ বিষয়ে নোরডিক বিমান কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। লিজদাতা এয়ারক্রাফটি কম দামে কিনে নেওয়ার জন্য বিমান কর্তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। বিমানের বাইরে থেকেও এ বিষয়ে লবিং করাচ্ছে লিজদাতা।
লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব গত ১৪ ডিসেম্বর বিমানের নির্বাহী পরিচালকমন্ডলীর সভায় উপস্থাপন করা হলে সভা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরকে ফেরত দেওয়ার খরচ নিরূপণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এয়ারক্রাফটটি যে অবস্থায় আনা হয়েছে, সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি কেনা এবং বাণিজ্যিক মধ্যস্থতা যেন না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার জন্য বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে কোনো সংস্থার সঙ্গে যেকোনো ধরনের চুক্তি করার আগে দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে চুক্তি করা হবে, যেন বিমানের আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতি না হয়এ সিদ্ধান্তও বৈঠকে নেওয়া হয়।
এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার জন্য নির্বাহী পরিচালকম-লীর গত ১৫ ফেব্রুয়ারির সভায় বলা হয়, ‘যেহেতু লিজকৃত এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিমানের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এবার ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।’
একজন পরিচালক জানিয়েছেন, অতীতের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা এবারও এড়াতে পারবে না বিমান। অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে লিজ নেওয়ার আগেই পরামর্শ করা হয়েছিল। লিজ নেওয়ার বিষয়ে তারা ভিন্ন কোনো মত দেয়নি। ফেরত দেওয়ার সময় অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেও ফলদায়ক কিছু হবে না। কারণ যা শর্ত আছে, তা থেকে বের হয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান বিমান বহরে থাকা ড্যাশ-৮-৪০০ এয়ারক্রাফট লিজের মেয়াদ শেষে ফেরত দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এয়ারক্রাফটের অনেক পার্টস বাজারে নেই। বাজারে পার্টসই যদি না থাকে তাহলে লিজ নেওয়ার সময়ের অবস্থানে কীভাবে নেওয়া যাবে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফটকে? তাহলে নির্ঘাত আরও একটি ঘটনা লিজকা-ে যোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
মিসরের ইজিপ্টএয়ার থেকে দুটি এয়ারক্রাফট লিজে এনে বিমানকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছিল। অসম চুক্তির কারণে লিজের সেসব এয়ারক্রাফট ফেরত দিতে বেগ পেতে হয় বিমানকে। ওই দুটি এয়ারক্রাফেটর জন্য রাষ্ট্রীয় এই এয়ারলাইনসকে মোট ৬০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। এ অভিযোগ এখনো তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এটা শুধু লিজকা-ের একমাত্র ঘটনা নয়। আরও অনেক অনেক ঘটনার একটি মাত্র।
নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারলাইনসের ২০ বছরের পুরনো এয়ারক্রাফট লিজে আনা নিয়েও জটিলতা হয়েছিল। কয়েকটি দেশ এ এয়ারক্রাফটটি নামতে বাধা দিয়েছিল। ডিসি ১০ এবং এয়ারবাসের দুটি এয়ারক্রাফট নিয়েও জটিলতা কম হয়নি। মাসের পর মাস বসিয়ে রেখে জরিমানা গুনতে হয়েছিল বিমানকে। লিজ নিয়ে নানা কা-ের পর একই পথে হাঁটছে বিমান। মন্ত্রণালয়ের কমিটি, বিশেষজ্ঞ কমিটি, এমনকি সংসদীয় কমিটির সাফ কথাবিমানকে লিজে এয়ারক্রাফট আনা বন্ধ করতে হবে। এসব কমিটির কথা আমলে না নিয়ে বিমান হাঁটছে নিজের মতো করে। অভিযোগ উঠেছে, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারাই নেপথ্যে থেকে বিমান কর্তৃপক্ষকে লিজ নেওয়া থেকে শুরু করে নতুন এয়ারক্রাফট কেনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পথ বাতলে দিচ্ছে।
বিমানবহরে অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারই আছে অর্ধডজন। বোয়িংয়ের ৭৩৭, এমনকি ছোট আকারের ড্যাশও আছে। এতগুলো নতুন এয়ারক্রাফট দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এয়ারলাইনসের নেই। সেই সব অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট হেলায় নষ্ট করছে। প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটকে কার্গো ফ্লাইটে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক, তা করেনি বিমান। এতে এয়ারক্রাফটের সিট, হ্যান্ড লাগেজ কেবিন, মনিটর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্গো বা মালামাল পরিবহন করে যা আয় হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে কেবিন, সিট বা মনিটর ভাঙার কারণে।
ড্যাশ ৮ এয়ারক্রাফটের মেয়াদ বাড়ানো বা কিনে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিমানের হাই অফিশিয়ালরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করেও তাদের কথা বলতে রাজি করানো যায়নি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমানের ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট লিজে আনা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বেসরকারি কয়েকটি এয়ারলাইনস শুরুতে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট নিয়ে এলেও তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এয়ারক্রাফট ফেরত দিয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে যখন প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলো ড্যাশ-৮ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, তখনো বিমান ড্যাশেই মজে আছে। এ ধরনের এয়ারক্রাফট নেওয়ার আগে তারা কোনো ফিন্যান্সিয়াল ফিজিবিলিটি স্টাডি করেনি।’
বিমান ড্রাই লিজ অনুসরণ করে কেন? এর বিশেষ কোনো সুবিধা আছে কি না জানতে চাইলে বিমানের সাবেক এ পরিচালক বলেন, বিমানের জন্য ড্রাই লিজ অত্যন্ত খারাপ একটা চুক্তি। এই চুক্তির সমস্যা হলো যে অবস্থায় এয়ারক্রাফট বহরে যোগ হলো, সেই অবস্থায় তা ফেরত দিতে হবে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। একটা চেয়ারও যদি পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয় তা আর আগের অবস্থায় ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। বিমান যতবার ড্রাই লিজ নিয়েছে, ততবারই ঝামেলা হয়েছে। প্রতিবার বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ড্রাই লিজের এয়ারক্রাফট ফেরত দিতে হয়েছে। ডিসি-১০সহ আরও কিছু ড্রাই লিজ থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যাহতি পায়নি বিমান। তখন বাধ্য হয়ে রেখে দিতে হয়।
এ জটিলতা থেকে বের হয়ে আসতে হলে এয়ারলাইনসগুলো কী করতে পারেজানতে চাইলে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, লিজের শুরুতেই মেইনটেন্যান্স রিজার্ভ বলে একটা ফান্ড করতে হয়। এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার সময় সেই ফান্ড থেকে খরচ করতে হয়। তাহলে এয়ারলাইনসগুলোকে বেগ পেতে হয় না। এয়ারলাইনসগুলোর জন্য সবচেয়ে ভালো হয় লিজ বেসিস পারচেজে যাওয়া। লিজের কিস্তির টাকা দিয়েই এয়ারক্রাফটের মালিক হওয়া যায়। এর প্রিমিয়ামটা একটু বেশি হলেও এটাই সুবিধাজনক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বীমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যথাযথ তদন্ত না করে যেকোনো স্থানের বা প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অগ্নিকা-ে কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বীমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবস-২০২৩-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও চাপের কাছে আপনারা মাথানত করবেন না, দয়া করে। আমিই বলেন বা আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের কাছে নানা ধরনের লোক আসে, তদবিরও করতে পারে সে ক্ষেত্রেও আপনাদের দেখতে হবে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার দাবি করবে বড় একটা কিন্তু তার প্রকৃত ক্ষতি যাচাই-বাছাই করেই আপনারা অর্থ পরিশোধ করবেন।’ খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গেও বীমা কোম্পানির যোগসূত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন এবং তাদের চড়াই-উতরাই-ভরা জীবনে এবং ’৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর পুনরায় গ্রেপ্তারের আগে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিকালীন প্রায় দুই বছর সময় তারাও একটু স্থিতিশীল হতে পেরেছিলেন। কাজেই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আত্মার একটা যোগাযোগ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার ব্যাপারে দেখব যেন যথাযথ বীমা ছাড়া এ সড়কে কোনো ধরনের পরিবহন যেন না চলে। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
বীমার অর্থ দাবির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে স্বার্থান্বেষী মহলের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়েও বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন আজকে এ কথা বলবেন, কারণ, তিনি যেহেতু এ পরিবারেরই একজন সদস্য (জাতির পিতাও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন) তাই এর বদনাম হোক তা তিনি চান না।
একসময় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ঘন ঘন অগ্নিকা- ঘটার প্রসঙ্গ টেনে তদন্ত করে তিনি বীমার মোটা অঙ্কের মিথ্যা অর্থ দাবির প্রমাণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। নাম উল্লেখ না করে কোনো একটি কোম্পানির এক নারীকর্মীকে দিয়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্নিকান্ড ঘটানো হয় বলেও তদন্তে বেরিয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘন ঘন একটা জায়গায় আগুন লাগবে কেন? ইন্স্যুরেন্সের দাবিদার হয়ে যায়, টাকা পায়। সে ক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং কর্র্তৃপক্ষ করে দিয়েছি তাদের এ ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা দরকার। কতটুকু ক্ষতি হলো তার যথাযথভাবে তদন্ত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না।’
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএর চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বীমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সোনার বাংলা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে সম্মাননা প্রদান করেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পশ্চিম মালিবাগের ইজাজুল হককে। ভোটদানের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় বা মেয়র যেকোনো নির্বাচনেই প্রতিবার ভোট দিতে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ দেয় এমন এক টেবিলে গেলে, দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান, আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে এবং আমার নামের পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া। অথচ আমি ভোট দিইনি। পরে আমি চ্যালেঞ্জ করলে তারা ভেতরে যেতে বলে। বুথে গেলে দেখা যায় সেখানেও আমার তালিকার পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া। পরে প্রিসাইডিং অফিসারের দেওয়া বিশেষ ব্যালেটে সিল মেরে দিয়ে আসি। শেষ পর্যন্ত ব্যালটটি জমা পড়েছে কি না, তা জানি না।’
শেখ ইফফাত হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভোটার হওয়ার পর প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ আসে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তবে সে বছর ভোট দেওয়া হয়নি। আশা করছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অপেক্ষা ঘুচবে। তবে আফসোস, দুই ভাগ হওয়া ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় ভোট দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। সে সময়কার সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, আমারও আর ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এর পরের বছর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও ভোট দেওয়া হয়নি ঢাকার বাইরে থাকায়। ২০১৮ সালে নিজের ভোটকেন্দ্রে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দিতে পারিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জন্য। একই কারণে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি ২০২০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও।’
ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমার এমন প্রেক্ষাপটে আজ ২ মার্চ বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোটার দিবস পালন করছে নির্বাচন কমিশন। এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দেব যোগ্যজনে’। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। নির্বাচনের মাধ্যমেই যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ভোটাররাই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু গত এক দশকে সাধারণ মানুষের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ কমেছে। ফলে নির্বাচনের মাঠেও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের একটি অংশ বিরত থাকছেন।
তারা বলছেন, সাধারণ ভোটাররা যাতে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে সে জন্য ভোটারদের উপস্থিতি ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ যাবৎকালে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮ দশমিক ০৪ এবং বিএনপির ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ৭ দশমিক ০৪ এবং জামায়াতের ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট পায়।
তবে সে হিসাব পাল্টে যায় ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেনি, যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছে সেখানেও ভোটার উপস্থিতি অর্ধেক কমে যায়। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে সেবার ভোট পড়ে ৪০ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলেও দিনের অর্ধেক সময় না যেতেই ভোট নিয়ে বিতর্ক ওঠে। অনেক দল নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশের ওপরে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ওই নির্বাচনে। যদিও এ তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ ওঠে উপজেলার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে। সেখানেও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। একই অবস্থা ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩০ শতাংশের মতো।
২০২২ সালে হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমিশনের শুরুর দিকে নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সব দলকে ভোটে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচনগুলোতে কঠোর অবস্থান দৃষ্টি কেড়েছিল। কিন্তু এত আয়োজন সত্ত্বেও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি।
আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি সংসদ উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এসব নির্বাচনে গড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ।
গত বছর ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম, ভোট পড়েছে মাত্র ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। একই অবস্থা ছিল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনেও। এসব আসনে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
নির্বাচনের পর ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কাক্সিক্ষতমাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় উপনির্বাচন নিরুত্তাপ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতিও তুলনামূলক কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ, নির্ভর করতে হবে। আমরা আমাদের নিষ্ঠা, দক্ষতা, সততা ও যে মনোবল সেটা দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করব। আমাদের চেষ্টা, প্রয়াস অব্যাহত থাকতে হবে।’
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন হোক বা স্থানীয় নির্বাচন হোক, ভোটারদের উপস্থিতি কমে এসেছে। এ জন্য ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোটের ফলাফল উল্টিয়ে দেওয়া, ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সংঘর্ষের আশঙ্কা এবং একের ভোট অন্যজন দিয়ে দেওয়াই অন্যতম কারণ। নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা বাড়ে যখন একজন ভোটার প্রতিবন্ধকতায় পড়েন। এর জন্য বিরাজমান যে রাজনৈতিক সংকট তা নিরসনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ যদি নির্বাচনে না থাকে, যদি সবার পছন্দের প্রার্থী না থাকে তখন সে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয় না। তখন ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারা বুঝে ফেলে নির্বাচনে কে জিতবে। ফলে সে নির্বাচনটা অর্থহীন নির্বাচনে রূপ নেয়। আর এসব কারণে সামগ্রিকভাবে, বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তাতে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। নির্বাচনে অংশীজন যারা তাদের আস্থা কমেছে। নির্বাচন কমিশনের যে কর্মপরিকল্পনা সেখানেও তারা বলেছে ভোটারদের অস্থা কমেছে।’
তিনি বলেন, যে নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ থাকে না বা উপস্থিতি থাকে না সে নির্বাচনকে সিদ্ধ নির্বাচন বলা যায় না। যখন সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন না হয় তখন তার মধ্যে আর গণতন্ত্রের ছাপ থাকে না। ফলে সেখানে গণতন্ত্র ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায়। তিনি বলেন, এটা একটি রাজনৈতিক সংকট। এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সব দল যদি আলাপ-আলোচনা শুরু করে সমঝোতায় আসতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কার্যত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ তারা ভোট দিতে পারে না, ভোট দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, ভোট গণনা হয় কি না বা যাকে ক্ষমতাসীনরা মনোনয়ন দেয় তারাই জিতে যায়, ভোটের কোনো মূল্য আছে কি না, এটাই অনেকের মনে প্রশ্ন? তাই তারা ভোট দিল কি দিল না তাতে কিছু আসে যায় না। ভোটার আছে, সেটা কাগজে আছে, কিন্তু ভোট কেন্দ্রে নেই।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য “ভোট দেব যোগ্যজনে”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্যজনটা নির্বাচিত হবে কী করে? যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হয়। অংশগ্রহণ মানে হলো শুধু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বিষয়টা এমন নয়। সেখানে জনগণেরও অংশগ্রহণ থাকতে হয়। ইসির এবারের স্লোগানটা ভালো। তবে স্লোগানটা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, ইসির এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘ভয়ভীতিহীন নির্বাচন ও ভোটের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ তৎপর। নিজেদের মেয়াদের প্রথম বছরে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে বাধা, অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার বিষয়ে কমিশন বদ্ধপরিকর। প্রত্যেক ভোটারের নাগরিক অধিকার তার ভোটাধিকার। এ অধিকার রক্ষায় কমিশনের দিক থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে।’
দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের বাজার বিলুপ্তির পথে। তেজগাঁও ডিমের আড়তে বিক্রি কমেছে পাঁচগুণ। একসময় এ বাজারে দিনে ৭০-৮০ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো; এখন হয় ১২-১৮ লাখ। ডিম ব্যবসায়ী ছিলেন ১২০ জন, এখন আছেন ২৮ জন। তাদের মধ্যে সচ্ছল ব্যবসায়ী আছেন ২০ জনের কম। বাকিরা ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ডিম বিক্রি করছেন। আর যারা এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়েছেন তারা অন্য কোথাও ডিমের ছোট দোকান দিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীরা ডিমের বাজার দখলে নিয়েছেন। তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডিম দিচ্ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন তেজগাঁও আড়তে কম আসছে। এ বাজারে আগে যেসব ক্ষুদ্র খামারির ডিম আসত তাদের বেশিরভাগ লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিদের লোকসান হচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘দেশে যেসব ক্ষুদ্র খামারি এখন খামার করছেন তাদের ডিমও তেজগাঁওয়ে আসছে না। ফলে তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়তদাররা চাহিদামতো ডিম পাচ্ছেন না। তারা মনে করেন, সরকার চাইলে এই এলাকায় আবার ব্যবসা চাঙ্গা করতে পারে। করপোরেট ব্যবসায়ীরা যদি এখানে উন্মুক্তভাবে ডিম বিক্রি করেন বা তাদের ডিম দেন তাহলে এখানে আবারও ক্রেতারা আসবে।’
১৯৮৮ সালে তেজগাঁওয়ে ডিমের বাজার হয়। কয়েকটি দোকান দিয়ে শুরু হয়েছিল। তখন ঢাকায় কোনো ডিমের আড়ত ছিল না। তখন এটি ডিমের বাজার হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০৫ সালের পর এখানে একশর বেশি দোকান ছিল। পরে কাপ্তান বাজারে ডিমের ব্যবসা শুরু হয়। ক্রমেই রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাজধানীতে ডিমের ব্যবসার সবচেয়ে বড় আড়ত তেজগাঁওয়েই।
ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়ত প্রতিষ্ঠার আগে গাজীপুরে ছিল সবচেয়ে বড় ডিমের আড়ত। গাজীপুরের আশপাশেই সবচেয়ে বেশি মুরগির খামার। গাজীপুরে যখন বড় বড় প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা গড়া শুরু হয় তখন থেকে খামারের সংখ্যা কমতে থাকে। গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা ঢাকামুখী হতে থাকেন। ২০০২ সালে গাজীপুরের ডিমের আড়ত একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সেখানে ছোট ছোট দোকানে ডিমের ব্যবসা চলত। এখন ডিমের ব্যবসা চলে গেছে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্যান্য এলাকায়।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যখন লেয়ার মুরগির লাল ডিম আসল তখন এ ডিম কেউ খেতেই চাইত না। বেচাকেনা খুব কম হতো। আমারই দেশে লাল ডিমের প্রসার ঘটিয়েছি। একসময় এই বাজারে দিনে ৭০-৮০ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো; এখন হয় ১২-১৮ লাখ। ১২০ জনের বেশি ব্যবসায়ীর জায়গায় এখন আছেন ২৮ জন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা চাঙ্গা থাকায় একসময় ব্যবসায়ীদের নিয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি হয়েছিল। ব্যবসায়ী কমে যাওয়ায় ২০১৫-১৬ সালের পরে সমিতির নতুন কমিটিও হয়নি।’
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আল-আমিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল-আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে বিবিএ-এমবিএ করেছি। সেখানে গাড়ির কোম্পানিতে চাকরিও করেছি। দেশে এসে নামি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। গত বছরের আগস্টে আমার বাবা হাজি মো. রওশন আলী মারা যান। তিনি এ বাজারে ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করেছেন। অনেক টাকা মাঠে পড়ে আছে। এ ব্যবসা ছাড়ার কোনো উপায় নেই। পারিবারিক এ ব্যবসার হাল আমাকেই ধরতে হয়েছে। আমরা একসময় প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ পিস ডিম বিক্রি করতাম। এখনো চাহিদা আছে। কিন্তু ডিম পাচ্ছি না। তাই ব্যবসাও সংকুচিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের বাজার এখন ধ্বংসের মুখে।’
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতারা বলেন, এখানে একটা দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। একদিকে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে খরচ বাড়ছে। পারিবারিক খরচ তো আছেই। আবার ডিমের দাম কমে গেলে মাঝেমধ্যে লসও হয়। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকায় অনেক ব্যবসায়ী তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছে।’
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকারের উন্নয়মূলক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ গত কয়েক বছর ধরে চলছে। তেজগাঁও রেলস্টেশন ধরে ফার্মগেটের দিকে কাজ এগিয়ে চলছে। কিছু দোকান ভেঙে দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলায় এখানে জায়গাও কমে গেছে। ফার্মগেট-তেজগাঁও-সাতরাস্তার কাজও চলছে। নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এখানে ডিমের ব্যবসা থাকবে কি না সন্দেহ।’
অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতের আসামের একটি আদালতের আপিল বিভাগ গত মঙ্গলবার বেকসুর খালাস দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠাতে ভারত সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে। এখন ভারত সরকার তাকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে শিগগিরই দেশে ফিরতে চান সালাহউদ্দিন। গতকাল বুধবার মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে সালাহউদ্দিনকে ভারতের আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ায় খুশি বিএনপির একাধিক নেতা। তারা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরে আসুক আমরা তা চাই। কিন্তু এখন ভারত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
মুঠোফোনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা ছোট ছিল, এখন বড় হয়ে গেছে। শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। ভারত সরকার সদয় হলে দেশে ফিরতে পারি। আদালতের রায়কে সামনে রেখে আমার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ শিলংয়ে এসেছিলেন। বেকসুর খালাস দেওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তার জন্য আমাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে।’
আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালতের রায়ে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছি। কিন্তু ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এর ফলে তখন দেশে ফিরতে পারিনি। দীর্ঘ চার বছর পর নিম্ন আদালতের ওই রায় বহাল রেখে ভারত সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় জজ আদালত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময় দেশে ফিরতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। ভারত সরকার আমাকে যখনই দেশে পাঠিয়ে দেবে বা ব্যবস্থা নেবে তখনই আমি দেশে ফিরব।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আদালতে বিচারের রায় আসার আগ পর্যন্ত আমাকে জামিন দিয়েছিল। আমি এখানে একটি ভাড়াবাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এখনো সেখানেই আছি। দেশ থেকে স্বজন, নেতাকর্মীরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিতে আসেন। এভাবেই কেটেছে এতগুলো দিন।’
বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ভারত সরকার সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে পাঠাতে বাধ্য। তারা এক্সিট ভিসা দিয়ে তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারে। আদালতের নির্দেশে বেকসুর খালাস পাওয়ায় তিনি এখন মুক্ত মানুষ। এরপর তিনি দেশে এলে মামলা থাকলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদের এক স্বজন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারত সরকার সালাহউদ্দিনকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) চিঠি দিতে হবে। কারণ ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সালাহউদ্দিনকে বিজিবির কাছে বুঝিয়ে দিলে তাকে যেন বিজিবি গ্রহণ করে দেশে প্রবেশ করতে দেয়। এ ছাড়া তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিতে হবে।
সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দেশেও অসংখ্য মামলা রয়েছে। দেশে ফিরলে তাকে নতুন করে আইনি মোকাবিলা করতে হতে পারে। ভারত সরকার তাকে দেশে পাঠালে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে। ভারত থেকে মুক্তি পেলেও দেশে ফিরে তাকে কারাগারে যেতে হবে।’
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পরদিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা-পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সালাহউদ্দিন যখন নিখোঁজ ছিলেন, তখন বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের মুখপাত্র হিসেবে ভিডিও বার্তা দিতেন।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন। ভারতে আটকের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। পরে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী সড়ক অবরোধ করা হয়। সোয়া ৩টার দিকে ঢাকাগামী অপর সড়কটিও অবরোধ করা হয়। এর আগে পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ তিন দাবি জানান। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো শামসুজ্জামান শামস ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে শামস ভাইকে মুক্ত করতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তির আগ পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখব। শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন, তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাই এর নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, তা নাহলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের খবরে সেখানে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ প্রশাসনসংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
সুপারস্টার শাকিব খানের জন্মদিন ছিল ২৮ মার্চ। বিশেষ দিনটিতে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছায় সিক্ত হন নায়ক। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান তাকে।
বিশেষ ওই দিনটি ঘরোয়া আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন তিনি। পরিবারের সদস্য এবং দুই ছেলে আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীরের সঙ্গে কেক কাটেন তিনি। সমাজমাধ্যম ছড়িয়ে আছে সেসব ছবি।
অভিনেতার জন্মদিনে ছেলে বীরকে নিয়ে শাকিবের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন বুবলী। তারই একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন বুবলী।
নায়িকা ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখেন—'বাবার জন্মদিনে যখন বাবা ছেলের দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি।' এর পরই জুড়ে দেন একটি রেড হার্ট ইমো।
বুবলীর পোস্ট করা নজরকাড়া ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখবার দেখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্তব্য পড়েছে প্রায় তিন হাজার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।