
কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি ও ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংস করছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও প্রভোস্ট সরানোর আদেশের সময় গতকাল বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেয়।
আদেশের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলে, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভূলুণ্ঠিত করছে। অনেকে বুঝে কিংবা না বুঝে এসব করে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে নবীনদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হাইকোর্ট। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে আদালত বলে, ‘দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট করে আবাসিক হল ও হোস্টেলগুলোতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় জড়িয়ে যায়। তারা নিষ্পাপ শিক্ষার্থী, বিশেষ করে নবীনদের নির্যাতন করে। ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের অবাধ্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ নষ্ট করে। অনেক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ের অপব্যবহার করে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তারা দলের ভাবমূর্তি ও ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভূলুণ্ঠিত করছে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরীকে নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলে, ‘আমরা এ ঘটনার বিচার করছি না, বিচার করবে বিশ্ববিদ্যালয়। এ ধরনের ঘটনায় অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
হাইকোর্ট আরও বলে, ‘ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আমরা ইতিহাসে দেখেছি। কিন্তু এটিকে ক্ষুণœ করতে অনেকে না বুঝে, অনেকে বুঝে এসব করে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
লিজে নেওয়া দুটি এয়ারক্রাফট গত বছর কিনতে বাধ্য হয় বিমান। নানা কৌশলে ‘রদ্দি মাল’ দুটি গছিয়ে দেওয়া হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে একই প্রক্রিয়ায় বহরের জন্য অনুপযুক্ত আরও একটি এয়ারক্রাফট গছানোর ‘ধান্দা’ শুরু করেছে একটি চক্র।
যদিও বিমানের ‘হাই অফিশিয়াল’ এ চক্রের ফাঁদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই এয়ারক্রাফট লিজ প্রক্রিয়ায় যেন বাণিজ্যিক মধ্যস্থতা না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রথমে লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। আর অনানুষ্ঠানিকভাবে তা কিনে নেওয়ার মুলা ঝোলানো হয়েছে। গত বছর যেহেতু লিজে নেওয়া এয়ারক্রাফট কিনে নিয়েছে এবারও কিনবে বা লিজের মেয়াদ বাড়াবে বিমানএমন ছক থেকেই দাবার বোর্ডের ঘুঁটি চালাচালির মতো ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে।
কিন্তু বিমানের শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, কেনা তো নয়ই, এই এয়ারক্রাফটের লিজের মেয়াদও বাড়ানো ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা ফেরত দিতে হবে। তা না হলে এই এয়ারক্রাফট লিজে নেওয়া অন্য এয়ারক্রাফটের মতো বিমানের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। আর ভবিষ্যতে লিজ থেকেও বের হয়ে আসতে হবে বিমানকে।
বিমানবহরে বর্তমানে ২১টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে ড্যাশ-৮ মডেলের রয়েছে ৪টি। ড্যাশগুলোর মধ্যে এমএসএন ৪২০৮ এস২-এজেডব্লিউ মডেলের এয়ারক্রাফটির লিজের মেয়াদ আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এয়ারক্রাফটটি নোরডিক এভিয়েশন থেকে মাসে ১ লাখ ২৬ হাজার ডলারে ৫ বছরের জন্য ড্রাই লিজে আনা হয়। ড্রাই লিজের শর্ত অনুযায়ী, এয়ারক্রাফট যে অবস্থায় আনা হয়, সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে; অর্থাৎ এয়ারক্রাফটির ইঞ্জিন, বডিসহ সবকিছুই লিজ নেওয়ার প্রথম দিনের মতো বা অবস্থায় থাকতে হবে। নোরডিক হচ্ছে বিশে^র অন্যতম নামকরা এয়ারক্রাফট লিজিং কোম্পানি। বিশ্বখ্যাত অনেকগুলো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে নোরডিকের। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক এই কোম্পানি থেকে এর আগেও এয়ারক্রাফট লিজ নিয়েছে বিমান। সেই সব লিজের পরিণতিও ভালো হয়নি।
লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকায় লিজদাতা বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। গত বছরের ৩ মাার্চ লিজদাতা কম ভাড়ায় এয়ারক্রাফটির লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এবারে তিন বছরের জন্য লিজ দিতে চায়। প্রতি মাসের ভাড়া ৬৩ হাজার ৫০০ ডলার। ১২ মাসের জন্য লিজ নিলে ভাড়ায় ২০ শতাংশ ছাড় দেবে। প্রস্তাবিত বর্ধিত মেয়াদের লিজ প্রক্রিয়ার মধ্যেই নোরডিক এভিয়েশন এয়ারক্রাফটির মালিকানা হাতবদল করতে চায়। তারা এয়ারক্রাফটি তাদেরই সহযোগী সংস্থা এনএসি এভিয়েশনের নামে হস্তান্তর করতে চায়। মেয়াদ বাড়ানোর পূর্বশর্ত হিসেবে বিমানকে মালিকানা হস্তান্তরে সহযোগিতার অঙ্গীকার করতে হবে।
লিজ প্রস্তাবের মেয়াদ গত বছরের ৪ মার্চ শেষ হয়ে গেলেও নোরডিক এভিয়েশন মৌখিকভাবে প্রস্তাবটি বহাল আছে বলে বিমানের পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। এ বিষয়ে নোরডিক বিমান কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। লিজদাতা এয়ারক্রাফটি কম দামে কিনে নেওয়ার জন্য বিমান কর্তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। বিমানের বাইরে থেকেও এ বিষয়ে লবিং করাচ্ছে লিজদাতা।
লিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব গত ১৪ ডিসেম্বর বিমানের নির্বাহী পরিচালকমন্ডলীর সভায় উপস্থাপন করা হলে সভা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরকে ফেরত দেওয়ার খরচ নিরূপণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এয়ারক্রাফটটি যে অবস্থায় আনা হয়েছে, সেই অবস্থায় ফেরত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি কেনা এবং বাণিজ্যিক মধ্যস্থতা যেন না ঘটে, সেদিকে নজর রাখার জন্য বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে কোনো সংস্থার সঙ্গে যেকোনো ধরনের চুক্তি করার আগে দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে চুক্তি করা হবে, যেন বিমানের আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতি না হয়এ সিদ্ধান্তও বৈঠকে নেওয়া হয়।
এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার জন্য নির্বাহী পরিচালকম-লীর গত ১৫ ফেব্রুয়ারির সভায় বলা হয়, ‘যেহেতু লিজকৃত এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিমানের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এবার ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।’
একজন পরিচালক জানিয়েছেন, অতীতের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা এবারও এড়াতে পারবে না বিমান। অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে লিজ নেওয়ার আগেই পরামর্শ করা হয়েছিল। লিজ নেওয়ার বিষয়ে তারা ভিন্ন কোনো মত দেয়নি। ফেরত দেওয়ার সময় অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেও ফলদায়ক কিছু হবে না। কারণ যা শর্ত আছে, তা থেকে বের হয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান বিমান বহরে থাকা ড্যাশ-৮-৪০০ এয়ারক্রাফট লিজের মেয়াদ শেষে ফেরত দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এয়ারক্রাফটের অনেক পার্টস বাজারে নেই। বাজারে পার্টসই যদি না থাকে তাহলে লিজ নেওয়ার সময়ের অবস্থানে কীভাবে নেওয়া যাবে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফটকে? তাহলে নির্ঘাত আরও একটি ঘটনা লিজকা-ে যোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
মিসরের ইজিপ্টএয়ার থেকে দুটি এয়ারক্রাফট লিজে এনে বিমানকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছিল। অসম চুক্তির কারণে লিজের সেসব এয়ারক্রাফট ফেরত দিতে বেগ পেতে হয় বিমানকে। ওই দুটি এয়ারক্রাফেটর জন্য রাষ্ট্রীয় এই এয়ারলাইনসকে মোট ৬০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। এ অভিযোগ এখনো তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এটা শুধু লিজকা-ের একমাত্র ঘটনা নয়। আরও অনেক অনেক ঘটনার একটি মাত্র।
নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারলাইনসের ২০ বছরের পুরনো এয়ারক্রাফট লিজে আনা নিয়েও জটিলতা হয়েছিল। কয়েকটি দেশ এ এয়ারক্রাফটটি নামতে বাধা দিয়েছিল। ডিসি ১০ এবং এয়ারবাসের দুটি এয়ারক্রাফট নিয়েও জটিলতা কম হয়নি। মাসের পর মাস বসিয়ে রেখে জরিমানা গুনতে হয়েছিল বিমানকে। লিজ নিয়ে নানা কা-ের পর একই পথে হাঁটছে বিমান। মন্ত্রণালয়ের কমিটি, বিশেষজ্ঞ কমিটি, এমনকি সংসদীয় কমিটির সাফ কথাবিমানকে লিজে এয়ারক্রাফট আনা বন্ধ করতে হবে। এসব কমিটির কথা আমলে না নিয়ে বিমান হাঁটছে নিজের মতো করে। অভিযোগ উঠেছে, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারাই নেপথ্যে থেকে বিমান কর্তৃপক্ষকে লিজ নেওয়া থেকে শুরু করে নতুন এয়ারক্রাফট কেনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পথ বাতলে দিচ্ছে।
বিমানবহরে অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারই আছে অর্ধডজন। বোয়িংয়ের ৭৩৭, এমনকি ছোট আকারের ড্যাশও আছে। এতগুলো নতুন এয়ারক্রাফট দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এয়ারলাইনসের নেই। সেই সব অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট হেলায় নষ্ট করছে। প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটকে কার্গো ফ্লাইটে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক, তা করেনি বিমান। এতে এয়ারক্রাফটের সিট, হ্যান্ড লাগেজ কেবিন, মনিটর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্গো বা মালামাল পরিবহন করে যা আয় হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে কেবিন, সিট বা মনিটর ভাঙার কারণে।
ড্যাশ ৮ এয়ারক্রাফটের মেয়াদ বাড়ানো বা কিনে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিমানের হাই অফিশিয়ালরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করেও তাদের কথা বলতে রাজি করানো যায়নি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমানের ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট লিজে আনা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বেসরকারি কয়েকটি এয়ারলাইনস শুরুতে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট নিয়ে এলেও তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং এয়ারক্রাফট ফেরত দিয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে যখন প্রাইভেট এয়ারলাইনসগুলো ড্যাশ-৮ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, তখনো বিমান ড্যাশেই মজে আছে। এ ধরনের এয়ারক্রাফট নেওয়ার আগে তারা কোনো ফিন্যান্সিয়াল ফিজিবিলিটি স্টাডি করেনি।’
বিমান ড্রাই লিজ অনুসরণ করে কেন? এর বিশেষ কোনো সুবিধা আছে কি না জানতে চাইলে বিমানের সাবেক এ পরিচালক বলেন, বিমানের জন্য ড্রাই লিজ অত্যন্ত খারাপ একটা চুক্তি। এই চুক্তির সমস্যা হলো যে অবস্থায় এয়ারক্রাফট বহরে যোগ হলো, সেই অবস্থায় তা ফেরত দিতে হবে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। একটা চেয়ারও যদি পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয় তা আর আগের অবস্থায় ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। বিমান যতবার ড্রাই লিজ নিয়েছে, ততবারই ঝামেলা হয়েছে। প্রতিবার বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ড্রাই লিজের এয়ারক্রাফট ফেরত দিতে হয়েছে। ডিসি-১০সহ আরও কিছু ড্রাই লিজ থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যাহতি পায়নি বিমান। তখন বাধ্য হয়ে রেখে দিতে হয়।
এ জটিলতা থেকে বের হয়ে আসতে হলে এয়ারলাইনসগুলো কী করতে পারেজানতে চাইলে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, লিজের শুরুতেই মেইনটেন্যান্স রিজার্ভ বলে একটা ফান্ড করতে হয়। এয়ারক্রাফট ফেরত দেওয়ার সময় সেই ফান্ড থেকে খরচ করতে হয়। তাহলে এয়ারলাইনসগুলোকে বেগ পেতে হয় না। এয়ারলাইনসগুলোর জন্য সবচেয়ে ভালো হয় লিজ বেসিস পারচেজে যাওয়া। লিজের কিস্তির টাকা দিয়েই এয়ারক্রাফটের মালিক হওয়া যায়। এর প্রিমিয়ামটা একটু বেশি হলেও এটাই সুবিধাজনক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বীমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যথাযথ তদন্ত না করে যেকোনো স্থানের বা প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অগ্নিকা-ে কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বীমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবস-২০২৩-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও চাপের কাছে আপনারা মাথানত করবেন না, দয়া করে। আমিই বলেন বা আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের কাছে নানা ধরনের লোক আসে, তদবিরও করতে পারে সে ক্ষেত্রেও আপনাদের দেখতে হবে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার দাবি করবে বড় একটা কিন্তু তার প্রকৃত ক্ষতি যাচাই-বাছাই করেই আপনারা অর্থ পরিশোধ করবেন।’ খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গেও বীমা কোম্পানির যোগসূত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন এবং তাদের চড়াই-উতরাই-ভরা জীবনে এবং ’৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর পুনরায় গ্রেপ্তারের আগে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিকালীন প্রায় দুই বছর সময় তারাও একটু স্থিতিশীল হতে পেরেছিলেন। কাজেই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আত্মার একটা যোগাযোগ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার ব্যাপারে দেখব যেন যথাযথ বীমা ছাড়া এ সড়কে কোনো ধরনের পরিবহন যেন না চলে। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
বীমার অর্থ দাবির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে স্বার্থান্বেষী মহলের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়েও বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন আজকে এ কথা বলবেন, কারণ, তিনি যেহেতু এ পরিবারেরই একজন সদস্য (জাতির পিতাও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন) তাই এর বদনাম হোক তা তিনি চান না।
একসময় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ঘন ঘন অগ্নিকা- ঘটার প্রসঙ্গ টেনে তদন্ত করে তিনি বীমার মোটা অঙ্কের মিথ্যা অর্থ দাবির প্রমাণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। নাম উল্লেখ না করে কোনো একটি কোম্পানির এক নারীকর্মীকে দিয়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্নিকান্ড ঘটানো হয় বলেও তদন্তে বেরিয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘন ঘন একটা জায়গায় আগুন লাগবে কেন? ইন্স্যুরেন্সের দাবিদার হয়ে যায়, টাকা পায়। সে ক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং কর্র্তৃপক্ষ করে দিয়েছি তাদের এ ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা দরকার। কতটুকু ক্ষতি হলো তার যথাযথভাবে তদন্ত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না।’
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএর চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বীমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সোনার বাংলা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে সম্মাননা প্রদান করেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পশ্চিম মালিবাগের ইজাজুল হককে। ভোটদানের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় বা মেয়র যেকোনো নির্বাচনেই প্রতিবার ভোট দিতে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ দেয় এমন এক টেবিলে গেলে, দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান, আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে এবং আমার নামের পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া। অথচ আমি ভোট দিইনি। পরে আমি চ্যালেঞ্জ করলে তারা ভেতরে যেতে বলে। বুথে গেলে দেখা যায় সেখানেও আমার তালিকার পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া। পরে প্রিসাইডিং অফিসারের দেওয়া বিশেষ ব্যালেটে সিল মেরে দিয়ে আসি। শেষ পর্যন্ত ব্যালটটি জমা পড়েছে কি না, তা জানি না।’
শেখ ইফফাত হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভোটার হওয়ার পর প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ আসে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তবে সে বছর ভোট দেওয়া হয়নি। আশা করছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অপেক্ষা ঘুচবে। তবে আফসোস, দুই ভাগ হওয়া ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় ভোট দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। সে সময়কার সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, আমারও আর ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এর পরের বছর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও ভোট দেওয়া হয়নি ঢাকার বাইরে থাকায়। ২০১৮ সালে নিজের ভোটকেন্দ্রে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দিতে পারিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জন্য। একই কারণে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি ২০২০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও।’
ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমার এমন প্রেক্ষাপটে আজ ২ মার্চ বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোটার দিবস পালন করছে নির্বাচন কমিশন। এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দেব যোগ্যজনে’। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। নির্বাচনের মাধ্যমেই যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ভোটাররাই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু গত এক দশকে সাধারণ মানুষের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ কমেছে। ফলে নির্বাচনের মাঠেও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের একটি অংশ বিরত থাকছেন।
তারা বলছেন, সাধারণ ভোটাররা যাতে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে সে জন্য ভোটারদের উপস্থিতি ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ যাবৎকালে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮ দশমিক ০৪ এবং বিএনপির ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ৭ দশমিক ০৪ এবং জামায়াতের ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট পায়।
তবে সে হিসাব পাল্টে যায় ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেনি, যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছে সেখানেও ভোটার উপস্থিতি অর্ধেক কমে যায়। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে সেবার ভোট পড়ে ৪০ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলেও দিনের অর্ধেক সময় না যেতেই ভোট নিয়ে বিতর্ক ওঠে। অনেক দল নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশের ওপরে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ওই নির্বাচনে। যদিও এ তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ ওঠে উপজেলার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে। সেখানেও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। একই অবস্থা ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩০ শতাংশের মতো।
২০২২ সালে হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমিশনের শুরুর দিকে নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সব দলকে ভোটে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচনগুলোতে কঠোর অবস্থান দৃষ্টি কেড়েছিল। কিন্তু এত আয়োজন সত্ত্বেও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হয়নি।
আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি সংসদ উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এসব নির্বাচনে গড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ।
গত বছর ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম, ভোট পড়েছে মাত্র ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। একই অবস্থা ছিল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনেও। এসব আসনে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
নির্বাচনের পর ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কাক্সিক্ষতমাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় উপনির্বাচন নিরুত্তাপ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতিও তুলনামূলক কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ, নির্ভর করতে হবে। আমরা আমাদের নিষ্ঠা, দক্ষতা, সততা ও যে মনোবল সেটা দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করব। আমাদের চেষ্টা, প্রয়াস অব্যাহত থাকতে হবে।’
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন হোক বা স্থানীয় নির্বাচন হোক, ভোটারদের উপস্থিতি কমে এসেছে। এ জন্য ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোটের ফলাফল উল্টিয়ে দেওয়া, ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সংঘর্ষের আশঙ্কা এবং একের ভোট অন্যজন দিয়ে দেওয়াই অন্যতম কারণ। নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা বাড়ে যখন একজন ভোটার প্রতিবন্ধকতায় পড়েন। এর জন্য বিরাজমান যে রাজনৈতিক সংকট তা নিরসনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ যদি নির্বাচনে না থাকে, যদি সবার পছন্দের প্রার্থী না থাকে তখন সে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয় না। তখন ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারা বুঝে ফেলে নির্বাচনে কে জিতবে। ফলে সে নির্বাচনটা অর্থহীন নির্বাচনে রূপ নেয়। আর এসব কারণে সামগ্রিকভাবে, বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তাতে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। নির্বাচনে অংশীজন যারা তাদের আস্থা কমেছে। নির্বাচন কমিশনের যে কর্মপরিকল্পনা সেখানেও তারা বলেছে ভোটারদের অস্থা কমেছে।’
তিনি বলেন, যে নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ থাকে না বা উপস্থিতি থাকে না সে নির্বাচনকে সিদ্ধ নির্বাচন বলা যায় না। যখন সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন না হয় তখন তার মধ্যে আর গণতন্ত্রের ছাপ থাকে না। ফলে সেখানে গণতন্ত্র ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায়। তিনি বলেন, এটা একটি রাজনৈতিক সংকট। এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সব দল যদি আলাপ-আলোচনা শুরু করে সমঝোতায় আসতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কার্যত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ তারা ভোট দিতে পারে না, ভোট দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, ভোট গণনা হয় কি না বা যাকে ক্ষমতাসীনরা মনোনয়ন দেয় তারাই জিতে যায়, ভোটের কোনো মূল্য আছে কি না, এটাই অনেকের মনে প্রশ্ন? তাই তারা ভোট দিল কি দিল না তাতে কিছু আসে যায় না। ভোটার আছে, সেটা কাগজে আছে, কিন্তু ভোট কেন্দ্রে নেই।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য “ভোট দেব যোগ্যজনে”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্যজনটা নির্বাচিত হবে কী করে? যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হয়। অংশগ্রহণ মানে হলো শুধু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বিষয়টা এমন নয়। সেখানে জনগণেরও অংশগ্রহণ থাকতে হয়। ইসির এবারের স্লোগানটা ভালো। তবে স্লোগানটা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, ইসির এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘ভয়ভীতিহীন নির্বাচন ও ভোটের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ তৎপর। নিজেদের মেয়াদের প্রথম বছরে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে বাধা, অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার বিষয়ে কমিশন বদ্ধপরিকর। প্রত্যেক ভোটারের নাগরিক অধিকার তার ভোটাধিকার। এ অধিকার রক্ষায় কমিশনের দিক থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে।’
দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের বাজার বিলুপ্তির পথে। তেজগাঁও ডিমের আড়তে বিক্রি কমেছে পাঁচগুণ। একসময় এ বাজারে দিনে ৭০-৮০ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো; এখন হয় ১২-১৮ লাখ। ডিম ব্যবসায়ী ছিলেন ১২০ জন, এখন আছেন ২৮ জন। তাদের মধ্যে সচ্ছল ব্যবসায়ী আছেন ২০ জনের কম। বাকিরা ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ডিম বিক্রি করছেন। আর যারা এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়েছেন তারা অন্য কোথাও ডিমের ছোট দোকান দিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীরা ডিমের বাজার দখলে নিয়েছেন। তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডিম দিচ্ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন তেজগাঁও আড়তে কম আসছে। এ বাজারে আগে যেসব ক্ষুদ্র খামারির ডিম আসত তাদের বেশিরভাগ লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিদের লোকসান হচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘দেশে যেসব ক্ষুদ্র খামারি এখন খামার করছেন তাদের ডিমও তেজগাঁওয়ে আসছে না। ফলে তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়তদাররা চাহিদামতো ডিম পাচ্ছেন না। তারা মনে করেন, সরকার চাইলে এই এলাকায় আবার ব্যবসা চাঙ্গা করতে পারে। করপোরেট ব্যবসায়ীরা যদি এখানে উন্মুক্তভাবে ডিম বিক্রি করেন বা তাদের ডিম দেন তাহলে এখানে আবারও ক্রেতারা আসবে।’
১৯৮৮ সালে তেজগাঁওয়ে ডিমের বাজার হয়। কয়েকটি দোকান দিয়ে শুরু হয়েছিল। তখন ঢাকায় কোনো ডিমের আড়ত ছিল না। তখন এটি ডিমের বাজার হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০৫ সালের পর এখানে একশর বেশি দোকান ছিল। পরে কাপ্তান বাজারে ডিমের ব্যবসা শুরু হয়। ক্রমেই রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাজধানীতে ডিমের ব্যবসার সবচেয়ে বড় আড়ত তেজগাঁওয়েই।
ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়ত প্রতিষ্ঠার আগে গাজীপুরে ছিল সবচেয়ে বড় ডিমের আড়ত। গাজীপুরের আশপাশেই সবচেয়ে বেশি মুরগির খামার। গাজীপুরে যখন বড় বড় প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা গড়া শুরু হয় তখন থেকে খামারের সংখ্যা কমতে থাকে। গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা ঢাকামুখী হতে থাকেন। ২০০২ সালে গাজীপুরের ডিমের আড়ত একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সেখানে ছোট ছোট দোকানে ডিমের ব্যবসা চলত। এখন ডিমের ব্যবসা চলে গেছে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্যান্য এলাকায়।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যখন লেয়ার মুরগির লাল ডিম আসল তখন এ ডিম কেউ খেতেই চাইত না। বেচাকেনা খুব কম হতো। আমারই দেশে লাল ডিমের প্রসার ঘটিয়েছি। একসময় এই বাজারে দিনে ৭০-৮০ লাখ পিস ডিম বিক্রি হতো; এখন হয় ১২-১৮ লাখ। ১২০ জনের বেশি ব্যবসায়ীর জায়গায় এখন আছেন ২৮ জন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা চাঙ্গা থাকায় একসময় ব্যবসায়ীদের নিয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি হয়েছিল। ব্যবসায়ী কমে যাওয়ায় ২০১৫-১৬ সালের পরে সমিতির নতুন কমিটিও হয়নি।’
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আল-আমিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল-আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে বিবিএ-এমবিএ করেছি। সেখানে গাড়ির কোম্পানিতে চাকরিও করেছি। দেশে এসে নামি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। গত বছরের আগস্টে আমার বাবা হাজি মো. রওশন আলী মারা যান। তিনি এ বাজারে ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করেছেন। অনেক টাকা মাঠে পড়ে আছে। এ ব্যবসা ছাড়ার কোনো উপায় নেই। পারিবারিক এ ব্যবসার হাল আমাকেই ধরতে হয়েছে। আমরা একসময় প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ পিস ডিম বিক্রি করতাম। এখনো চাহিদা আছে। কিন্তু ডিম পাচ্ছি না। তাই ব্যবসাও সংকুচিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের বাজার এখন ধ্বংসের মুখে।’
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতারা বলেন, এখানে একটা দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। একদিকে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে খরচ বাড়ছে। পারিবারিক খরচ তো আছেই। আবার ডিমের দাম কমে গেলে মাঝেমধ্যে লসও হয়। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকায় অনেক ব্যবসায়ী তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছে।’
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকারের উন্নয়মূলক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ গত কয়েক বছর ধরে চলছে। তেজগাঁও রেলস্টেশন ধরে ফার্মগেটের দিকে কাজ এগিয়ে চলছে। কিছু দোকান ভেঙে দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলায় এখানে জায়গাও কমে গেছে। ফার্মগেট-তেজগাঁও-সাতরাস্তার কাজও চলছে। নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এখানে ডিমের ব্যবসা থাকবে কি না সন্দেহ।’
অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতের আসামের একটি আদালতের আপিল বিভাগ গত মঙ্গলবার বেকসুর খালাস দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠাতে ভারত সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে। এখন ভারত সরকার তাকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে শিগগিরই দেশে ফিরতে চান সালাহউদ্দিন। গতকাল বুধবার মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে সালাহউদ্দিনকে ভারতের আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ায় খুশি বিএনপির একাধিক নেতা। তারা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরে আসুক আমরা তা চাই। কিন্তু এখন ভারত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
মুঠোফোনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা ছোট ছিল, এখন বড় হয়ে গেছে। শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। ভারত সরকার সদয় হলে দেশে ফিরতে পারি। আদালতের রায়কে সামনে রেখে আমার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ শিলংয়ে এসেছিলেন। বেকসুর খালাস দেওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তার জন্য আমাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে।’
আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালতের রায়ে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছি। কিন্তু ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এর ফলে তখন দেশে ফিরতে পারিনি। দীর্ঘ চার বছর পর নিম্ন আদালতের ওই রায় বহাল রেখে ভারত সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় জজ আদালত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময় দেশে ফিরতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। ভারত সরকার আমাকে যখনই দেশে পাঠিয়ে দেবে বা ব্যবস্থা নেবে তখনই আমি দেশে ফিরব।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আদালতে বিচারের রায় আসার আগ পর্যন্ত আমাকে জামিন দিয়েছিল। আমি এখানে একটি ভাড়াবাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এখনো সেখানেই আছি। দেশ থেকে স্বজন, নেতাকর্মীরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিতে আসেন। এভাবেই কেটেছে এতগুলো দিন।’
বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ভারত সরকার সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে পাঠাতে বাধ্য। তারা এক্সিট ভিসা দিয়ে তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারে। আদালতের নির্দেশে বেকসুর খালাস পাওয়ায় তিনি এখন মুক্ত মানুষ। এরপর তিনি দেশে এলে মামলা থাকলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদের এক স্বজন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারত সরকার সালাহউদ্দিনকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) চিঠি দিতে হবে। কারণ ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সালাহউদ্দিনকে বিজিবির কাছে বুঝিয়ে দিলে তাকে যেন বিজিবি গ্রহণ করে দেশে প্রবেশ করতে দেয়। এ ছাড়া তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিতে হবে।
সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দেশেও অসংখ্য মামলা রয়েছে। দেশে ফিরলে তাকে নতুন করে আইনি মোকাবিলা করতে হতে পারে। ভারত সরকার তাকে দেশে পাঠালে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে। ভারত থেকে মুক্তি পেলেও দেশে ফিরে তাকে কারাগারে যেতে হবে।’
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পরদিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা-পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সালাহউদ্দিন যখন নিখোঁজ ছিলেন, তখন বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের মুখপাত্র হিসেবে ভিডিও বার্তা দিতেন।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন। ভারতে আটকের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। পরে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে এমন কিছু চরিত্র আছে, যারা সব সময়ই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, ক্ষেত্র বিশেষে এরা নীতিনির্ধারকও হয়ে ওঠে। ক্ষমতার মধু আহরণে এরা সামনের কাতারে থাকলেও, পালাবদলের আগেই ওরা রূপ পাল্টাতে শুরু করে! ওদের কাছে কি কোনো বার্তা আছে বদলে যাওয়া বা বদলে ফেলার বার্তা?
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রবাসের মাটিতে কেমন যেন একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হতাশা, অনিশ্চয়তা নিয়ে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, এরাও যেন দৃশ্যপটে আসতে শুরু করেছে। রূপ পাল্টে যারা আওয়ামী সেজে এতদিন চারদিক দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন, খোলস পাল্টাতে এদের কেউ কেউ প্রস্তুতি শুরু করেছেন, প্রবাসের মাটিতে এরা রূপ পাল্টিয়ে ইতিমধ্যে নতুন রূপ ধারণ করতে শুরু করেছেন। এরা কি তাহলে নতুন কোনো আগমনী বার্তায় উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন? কী সেই বার্তা? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তনের বার্তা দেওয়ার মালিক জনগণ, আর তার একমাত্র উপায় গণভোট। এখনো সেই গণভোটের বাকি এক বছর, তাহলে বসন্তের কোকিলদের মাঝে এত দৌড়ঝাঁপ কেন?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দাতা নামের লগ্নিকারকদের দারুণ প্রভাব। সরকার ও রাজনীতিতে আড়ালে-আবডালে এরা নানাভাবে কলকাঠি নাড়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, উন্নয়ন অংশীদার বা দাতা পরিচয়ে এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নানারকম কর্মকা- চালায়। সোজাসাপ্টা ভাষায়, আমরা যাদের ডিপ্লোমেট বা কূটনীতিক নামে চিনি, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এদের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়েও এরা তৎপর হয়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে মানবাধিকারের নামে চাপাচাপির বার্তা চালায়।
প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, নিষেধাজ্ঞার খড়্গ আসতেই পারে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো, তাদের মানবাধিকার তখন জাগ্রত হলো না!
একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ যারা নিহত হলেন, তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হলো, পার্লামেন্টারিয়ান আহসান উল্লাহ মাস্টার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক, অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হলেন, তখনো এদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না! সাঈদীকে চাঁদ দেখার গুজব রটিয়ে শত শত মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হলো, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে অঙ্গার হয়ে অসার দেহ পড়ে থাকল, তখনো তাদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না!
একুশ বছরে বিকৃত ইতিহাস জেনে গড়ে উঠে একটি প্রজন্ম। এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস-ই সত্যরূপে আবির্ভূত হয়। গত এক যুগে একাত্তরের পরাজিত আদর্শের অনুসারী একদল সুবিধাবাদী রঙ পাল্টিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এই ধারাটি শুধু দেশে নয়, প্রবাসের মাটিতেও সক্রিয় ছিল। কূটনীতিকদের লম্ফঝম্ফ দেখে এরা আবারও রূপ পাল্টাতে শুরু করেছে। এতদিন ‘জয়বাংলা’ বলে যারা হুঙ্কার ছেড়েছিল, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে তাদের আপত্তি!
অগ্নিঝরা মার্চ আর বিজয়ের ডিসেম্বর! এ মাস দুটি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অর্জনের মাস। তবুও এ মাসগুলোতেই যেন কিছু মানুষের হৃদয়ের দহন বেড়ে যায়! যন্ত্রণায় এদের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। অন্তরাত্মাকে শীতল করতে এরা প্রচন্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। এর অন্তরালে কাজ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার এক সুদূরপ্রসারী হীন প্রচেষ্টা। এই ঘৃণ্য অপশক্তির প্রথম টার্গেট ছিল ১৫ আগস্ট।
একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিন। পনেরো আগস্ট, ৩ নভেম্বর বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কময় দিবস। প্রবাসে থাকলেও এসব দিবসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারি না। ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকেই নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। ২০২২-এর বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আয়োজকদের মতে, প্রবাসের নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকশিত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। উপস্থিত বারোজন সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধার একজন বাদে কেউই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলেননি! এ মহান নেতার নামটিও উচ্চারণ করেননি। সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুকে এড়িয়ে চলার এমন হীন চেষ্টা দেখে বিস্মিত হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছেন, বিশ্বব্যাংককে অবজ্ঞা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারের মতো বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে রাত-দিন কাজ করছেন, তবুও চারদিকে এত ষড়যন্ত্র কেন?
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নায়ক শাসক দলের ব্যাপক ক্ষমতাবান নেতাদের মুহূর্তে কপর্দকহীন করে শেখ হাসিনা তাদের আইনের মুখোমুখি করেছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ চক্র, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে রেল আর সড়ক যোগাযোগে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত অবধি বিস্তৃত হচ্ছে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, গড়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ বড় বড় মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এতসবের পরও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আবারও বঙ্গবন্ধুর নামকে মুছে দিতে দেশি-বিদেশি লম্ফঝম্ফ দৃশ্যমান হচ্ছে! স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করেই এই ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, এরা দেশপ্রেমের ছদ্মাবরণে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সোল এজেন্ট, এদের রুখতেই হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও উন্নয়ন গবেষক
ক্যালগেরি, কানাডা
ভারতীয় পারিবারিক হিন্দি চলচ্চিত্র ‘অভিমান’। ১৯৭৩ সালের সাড়া জাগানো এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। অর্ধশত বছর পার করলেও অভিমানের আবেদন এখনো অটুট। লিখেছেন নাসরিন শওকত
অমিতাভ-জয়া জুটি
১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্থানি’ চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় অমিতাভ বচ্চনের। তখন একের পর এক চলচ্চিত্র মুখ থুবড়ে পড়ায় বলিউডে অস্তিত্ব¡ সংকটের মুখে পড়েন অভিনেতা। ঠিক তখনই মুক্তি পায় ‘দিওয়ার’। অমিতাভের সেই ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজে মজেন ভারতীয়রা। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলিউডের আজকের ‘শাহেনশাহ’ এবং মেগাসুপারস্টার বিগ বি’কে। অন্যদিকে নায়িকা হিসেবে জয়ার ক্যারিয়ার শুরু হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ (১৯৭১ সালে) চলচ্চিত্র দিয়ে। অমিতাভের সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি, যার মধ্যে অন্যতম ‘জাঞ্জির’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘অভিমান’, ‘মিলি’, ‘শোলে’, ‘সিলসিলা’।
একসময় বলিউডের চলচ্চিত্রশিল্পে অমিতাভ-জয়ার প্রেম ছিল চর্চিত বিষয়। অমিতাভ বচ্চন যখন ক্যারিয়ার শুরু করেন, ততদিনে জয়া ভাদুড়ি প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। ১৯৭১ সালে যখন ‘গুড্ডি’ মুক্তি পায়, তখন থেকেই অমিতাভের সঙ্গে জয়ার প্রেমের সূত্রপাত। শোনা যায়, ওই চলচ্চিত্রের সেট থেকেই জয়ার প্রতি অনুরাগের শুরু তার। এরপর ‘এক নজর’ চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে জয়াতে নিজেকে হারান অমিতাভ। পরে ‘জঞ্জির’ বক্স অফিসে সাফল্য পেলে লন্ডন বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এই জুটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী লন্ডনের টিকিট কেটে ফেলেন অমিতাভ ও জয়া। কিন্তু তাদের লন্ডন ভ্রমণে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বয়ং অমিতাভের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। ছেলেকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে না করে একসঙ্গে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
বাবার নির্দেশ অনুয়ায়ী, পরদিন সকালে পরিবার ও বন্ধুদের খবর দেওয়া হয়। ডেকে আনা হয় পুরোহিতকে। রাতে লন্ডনের বিমানে ওঠার কথা ছিল দুজনের। তাই ওই দিন সকালে একেবারে সাদাসিদেভাবে অমিতাভ-জয়ার বিয়ের আসর বসে। বরের পোশাক পরেই অমিতাভ গাড়ি চালিয়ে গিয়ে মালাবার হিলস থেকে তুলে আনেন জয়াকে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই (১৯৭৩ সালের ৩ জুন ) বিয়ে হয়ে যায় তাদের। বিয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নবদম্পতি রাতে লন্ডনের বিমানে ওঠেন। বিয়ের ১ বছর পর (১৯৭৪ সালে) প্রথম সন্তানের মা হন জয়া বচ্চন। মেয়ের নাম রাখেন শে^তা। এর দুবছর পর জন্ম হয় ছেলে অভিষেকের। বিয়ের পর একেবারে সংসারী হয়ে ওঠেন জয়া। অভিনয় জীবন থেকে লম্বা বিরতি নেন। মন দেন দুই সন্তান শ্বেতা ও অভিষেককে বড় করার দিকে।
অমিতাভ-জয়াকে বলিউডের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেখতে দেখতে দাম্পত্যেরও অর্ধশত বছর পার করেছেন তারা। বর্তমানে ৩ নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার তাদের। অভিষেক-ঐশ্বর্যের মেয়ে আরাধ্য। অন্যদিকে শে^তা বচ্চন নন্দার দুই ছেলেমেয়ে অগাস্ত্য ও নভ্যা নভেলি নন্দা। দীর্ঘ এই দাম্পত্য জীবনে বহু চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী থেকেছেন অমিতাভ-জয়া। তারপরও শক্ত করে ধরে রেখেছেন একে অপরের হাত ।
সুপারহিট ‘অভিমান’
বাঙালি পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অভিমান’ নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। পরিচালক হৃষিকেশ অমিতাভকে তার স্ত্রী জয়ার সঙ্গে জুটি বাঁধিয়েছিলেন, যে জুটি চুটিয়ে প্রেম করছেন তখন । অভিমান মুক্তির এক মাস আগেই বিয়ে করেন তারা। কিন্তু এরই মধ্যে রুপালি পর্দার নবদম্পতির ব্যক্তিত্বের সংঘাত বাস্তব জীবনে সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে জয়া উমা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন।
‘অভিমান’-এর বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা হয়তো পরিচালক হৃষিকেশের মাথায় আগে থেকেই ছিল (বাস্তবের অভিমান সব শ্রেণির দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়)। কিন্তু চলচ্চিত্রটিতে ঠুনকো অহংকার ও ভঙ্গুর মানসিকতার কারণে সৃষ্টি হয় দাম্পত্য কলহ, যার সহজাত কিন্তু গভীর উপলব্ধির পুঙ্খানুপঙ্খ চিত্রায়নের মধ্যেই মূলত লুকিয়ে ছিল এর স্থায়ী আবেদন ।
অভিমানে অমিতাভ ‘সুবির’ নামের এক গায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি পপগানের জন্য সবার কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। স্টেজে তাকে বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমার ও মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে গাওয়া নানা সুপারহিট গান গাইতে দেখা যায়। মাঝরাতে উন্মত্ত নারী অনুরাগীদের টেলিফোন কলের জ¦ালাতন এবং চিত্রার মতো ধনী ও অভিজাত বান্ধবীর তার প্রতি গভীর অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও ওই গানের নিঃসঙ্গতার মতোই সুবীর নিজেকে বড্ড একা অনুভব করে। এমন একসময়েই সুবীর তার প্রিয় মাসি দুর্গা মৌসির (দুর্গা খোটে) দূরের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। যেখানে ঘটনাচক্রে এক শাস্ত্রীয় সংগীতকারের মেয়ে উমার (জয়া ভাদুরী) সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সুবীর প্রথমে উমার শিববন্দনার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং একসময় সে উমার প্রতিও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
মজার বিয়ষ হলো, এই দম্পতি যে তখন বাস্তব জীবনেও একে অপরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, পরিচালক হৃষিকেশ সূক্ষ্মভাবে অভিমানের মধ্য দিয়েই ভিন্ন আঙ্গিকে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সুবীরের পরামর্শে উমা মঞ্চে তার সঙ্গে একটি দ্বৈত গান গাইতে রাজি হয়। পরে সে একক গানের প্রস্তাব পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনাচক্রে উমা যখন জনপ্রিয়তায় তাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন সুবীর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। এই কয়েক দৃশ্যে পরিচালক হৃষিকেশ এই দম্পতির মধ্যকার বৈপরীত্যকে গভীর মমতায় সেলুলয়েডে তুলে আনেন।
চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃশ্যে অন্তজর্¦ালায় জ¦লতে থাকা সুবীরকে (যে কিনা এরই মধ্যে চিত্রার বাড়িতে সময় কাটানো শুরু করেছে) বলতে শোনা যায়, ‘প্রথমেও একাই ছিলাম, আজও একাই আছি।’ তখন চিত্রা উপলব্ধি করে, একাকিত্ব হলো নিজের সৃষ্ট এক ব্যথা, যার জন্ম ছোট ছোট অভিমান আর অহংকার থেকে।
এ সময় উমা স্বেচ্ছায় গান গাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এরই মধ্যে সুবীরের ক্ষতবিক্ষত মন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনই এক চরম মুহূর্তে উমাকে সে বলে বসে, তাকে আর তার প্রয়োজন নেই। সুবীরের সন্তানকে গর্ভে নিয়ে উমা তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। চরম এক বিপর্যয়ের মুহূর্তে উমা তার সন্তানকে হারায়। একপর্যায়ে অনুতপ্ত হয়ে উমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে সুবীর। কিন্তু শোকে কাতর উমা একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন উমার নীরবতা ভাঙার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে সুবীর। শেষ পর্যন্ত স্টেজ শো করে তাদের দুজনের প্রিয় গান গায় (তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে র্যায়না), যা উমাকে স্বামীর ভালোবাসায় ফিরিয়ে আনে আবার। সুবীর উমাকে আবার গান গাইতে অনুরোধ করে।
অমিতাভ-জয়ার দুর্দান্ত অভিনয়ই অভিমানের প্রাণশক্তি। প্রাথমিক অবস্থায় চলচ্চিত্রটির নাম রাখা হয় ‘রাগ রাগিনী’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিচালক হৃষিকেশ এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘অভিমান’। চলচ্চিত্রটি মুক্তির মাত্র এক মাস আগে অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি বিয়ে করেন। তাই এর প্রথম দিকের দৃশ্যগুলোতে এই দম্পতিকে বিয়ের প্রাথমিক ঘনিষ্ঠতা উপভোগ করতে দেখা যায়, যা ছিল জীবনঘনিষ্ঠ। এর সংগীত পরিচালক ছিলেন এস ডি বর্মণ।
অভিমান-এর পোস্টমর্টেম
১৯৮০-র দশকের শুরুর দিককার কথা। তখন বলিউডে বারবার অ্যাকশন হিরোর চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজ গড়ে ওঠে অমিতাভের। তখন ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’ ও ‘জাঞ্জির’-এর মতো ব্যবসাসফল অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, সে সময়ের সংগীতের নাটকীয়তাকে ঘিরে এক নবদম্পতির ঈর্ষাপরায়ণতা, ভালোবাসা ও মান-অভিমানের কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘অভিমান’ ছিল অমিতাভ অভিনীত সবচেয়ে ভালো চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি।
‘অভিমান’ এবছর অর্ধশত বছর পূর্ণ করেছে। ১৯৭৩ সালে অমিতাভের কমপক্ষে অর্ধ ডজন চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, যার মধ্যে ‘অভিমান’ একটি। এই তালিকায় রয়েছে ‘সওদাগর’, যেটি আনুষ্ঠানিকভাবে সে বছর ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে যায় এবং আরেকটি ছিল ‘জাঞ্জির’, ব্লকবাস্টার এই চলচ্চিত্রটি অমিতাভকে ভারতের শীর্ষ ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘অভিমান’ ছিল ওই বছরের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র এবং সে বছরে তার (অমিতাভ) সবচেয়ে বড় হিট চলচ্চিত্রও’’। ‘অভিমান’ দেখতে ভক্তরা দলে দলে ছুটে যান সিনেমা হলগুলোতে। বাবা-মা এবং ছোট বাচ্চাসহ পুরো পরিবারে ভরে যায় থিয়েটারগুলো। সমান তালে ভিড় থাকে ম্যাটিনি ও সান্ধ্য শোতে।
বছরের পর বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পের ভক্ত, সমালোচক এবং বচ্চন দম্পতির সহকর্মীদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘অভিমান’। অমিতাভ বচ্চন নিজেও সুযোগ পেলেই ‘অভিমান’-এর প্রতি তার ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘এটি সেই চলচ্চিত্র, যা আমাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় সৃজনশীল কাজ করাতে জয়া ও আমাকে একত্রিত করেছে এবং এর গানগুলো কোনোভাবেই ভোলার নয়। অনেকের কাছেই এখনো তা স্বপ্নের মতোই।’
লেখক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ ‘অভিমান’কে সব সময় বচ্চনের ক্যারিয়ারের ‘একটি শীর্ষ সময়’ হিসেবে আলোচনা করতে হবে। কারণ এটি ছিল এমন একটি চলচ্চিত্র, যেখানে তাকে গতানুগতিক পৌরুষদীপ্ত, তেজী বা রাগী যুবক হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। এটি এমন একটি চরিত্র ছিল, যেখানে তার ভিন্ন এক রূপ দেখানো হয়েছে। সেখানে তিনি একজন সত্যিকারের নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, একজন সত্যিকারের মানুষ যিনি নিরাপত্তাহীনতায় ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠেন এবং এখানেই তিনি একজন বহুমুখী অভিনেতার পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হন। প্রমাণ করেন যে, পরিচালক তার জন্য যে চরিত্রই লেখেন না কেন, তিনি তাতে পারদর্শী।’ ”
সময় যত গড়িয়েছে, ‘অভিমান’-এর কাহিনিকে ঘিরে অনুমানের চর্চাও তত বেড়েছে। তখন ধারণা করা হতো যে, চলচ্চিত্রটি তার দুই প্রধান তারকার সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই নির্মাণ করা হয়েছিল। কেননা অমিতাভ তখন বলিউডে একজন নবাগত হলেও জয়া এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আবার কখনো সেতারবাদক রবিশঙ্কর ও তার প্রথম স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গেও এর তুলনা করা হয়েছে, যিনি নিজেও একজন প্রতিভাবান সেতারবাদক ছিলেন। কিন্তু পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় এসব তুলনা প্রত্যাখ্যান করেন।
এ ছাড়াও ‘অভিমান’কে হলিউডের চলচ্চিত্র ‘এ স্টার ইজ বর্ন’-এর সঙ্গেও তুলনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই একই কাহিনি নিয়ে হলিউডে মোট চারটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। প্রথমটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে এবং এর সবশেষ সংস্করণটি ২০১৮ সালে নির্মাণ হয়। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন বিশ্ববিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগা ও অভিনেতা ব্রাডলি কুপার। যদিও এই তুলনাকে কখনোই স্বীকার করেননি ‘অভিমান’-র পরিচালক হৃষিকেশ। এর পরিবর্তে তিনি বলেছিলেন, তার চলচ্চিত্রটি বলিউডের কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমার ও তার প্রথম স্ত্রী রুমা দেবীর জীবনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের একজন সফল অভিনেত্রী ও গায়িকা। এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক হৃষিকেশ বলেন, ‘অভিনেত্রী রুমা কম প্রতিভাবান ছিলেন না। যেহেতু কিশোর তার ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছুটা সংগ্রাম করছিলেন, তাই অভিনয়শিল্পী হিসেবে রুমার প্রতিভার বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতেন তিনি।’
তবে আজকাল কিছু নারীবাদী ‘অভিমান’-এ জয়াকে নম্র ও পতিব্রতা স্ত্রী হিসেবে চিত্রিত করার জন্য চলচ্চিত্রটির সমালোচনা করেন। যিনি কখনোই নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করেননি, যার কাছে তার স্বামীই মুখ্য।
রমজানের পঞ্চম দিনেও রাজধানী ছিল তীব্র যানজটের কবলে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এবার রোজার শুরুতে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের ছুটি মিলিয়ে তিন দিন বন্ধ থাকায় রোজার চতুর্থ দিন সোমবার তীব্র যানজটের কবলে পড়েছিল ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার সে তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সবরাই অভিযোগ, সেবা সংস্থাগুলো তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গার রাস্তা কাটায় যান চলাচাল ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তি বেড়েছে পথাচারীদের।
গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বেশ কটি এলাকা ঘুরে সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকা পড়ে অনেককে হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে আবার বাসে দীর্ঘ সময় বসে থেকে পরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় শুধু সড়ক নয়, ফ্লাইওভারে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর অনেক জায়গায় রাস্তাঘাটের সংস্কারকাজ চলায় বিকল্প পথ ব্যবহারের কারণে যানজটের শিকার বেশি হতে হচ্ছে ওইসব এলাকার যাত্রীদের। বিশেষ করে অফিসের শুরু ও শেষের দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাস্তাঘাটের যানজট এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো জায়গায় ঠিকমতো যাওয়া যায় না। তাছাড়া কোনো কিছুরই সঠিক পরিকল্পনা নেই। এক রাস্তা কয়েকবার কাটতে দেখা যায়। আর এজন্যই মূলত এত যানজট।’
যানজটের কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ গণপরিবহনের চালক ও কর্মীরাও। দিশারী পরিবহনের চালক মো. সানোয়ার বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। সোমবারের থেকে আজ (গতকাল) আরও যানজট বেড়েছে। কোনোভাবেই গাড়ি সামনে যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি শহরের জন্য যতটুকু পরিমাণ রাস্তাঘাট দরকার তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না এই নগরীতে। আর প্রতিদিন কী পরিমাণ যানবাহন সড়কে চলছে তার সঠিক সংখ্যাও জানা নেই বিআরটিএর। আর গণপরিবহন ব্যবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। সে জন্য ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। যার জন্য সড়কে যানজট বাড়ছে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার অনুমতি দিয়ে নতুন একটি আইনের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব সরকার। নতুন এই আইন পাস হলে বিদেশিরা দেশটিতে যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন। অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরমতো বাংলাদেশিরাও এই সুযোগ পাবেন। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার কৌশলের অংশ হিসেবে আবাসন খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতেই এমন পরিকল্পনা বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটির (আরইজিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল্লাহ আলহাম্মাদদের বরাতে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিদের সম্পত্তি কেনা সম্পর্কিত নতুন একটি আইন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এই আইনের আওতায় সৌদি নাগরিক নন, এমন বিদেশিরা মক্কা, মদিনাসহ সৌদি আরবের যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইনটির বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার বিষয়ে ২০২১ সালে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল সৌদি আরব। এই নির্দেশনায় সৌদির নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিসহ দেশটিতে থাকা বৈধ বাসিন্দাদের শর্ত সাপেক্ষে একক সম্পত্তি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, সৌদিতে রিয়েল এস্টেটের মালিকানার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের চেয়ে নতুন আইনটি আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক হবে। নতুন আইনের অধীন বিদেশিরা সৌদিতে বাণিজ্যিক, আবাসিক, কৃষিসহ যেকোনো ধরনের সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আগের আইনে সৌদির পবিত্র শহরগুলোতে বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ সৌদি আরবের সব জায়গায় বিদেশিরা সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন।
নতুন আইনের মাধ্যমে সৌদি আরব তার আবাসন খাতে একটা রূপান্তর আনতে চাইছে। তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। সৌদি কর্র্তৃপক্ষ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান আরও বাড়াতে আগ্রহী।
সৌদির রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটি নতুন যে আইনটির কথা বলছে, তা কার্যকর হলে দেশটি প্রবাসী ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের একটি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
সংলাপে নয়, আলোচনার জন্য বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘মূল জিনিসটা হলো, আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি। সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই উনাদের (বিএনপি) সংলাপে ডাকিনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি আনুষ্ঠানিক না হলেও (আনুষ্ঠানিক মানে সংলাপ) অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে এ আহ্বানটা করেছি।’
বিএনপিকে চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কক্ষের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপিকে চিঠি দেওয়ায় ইসির কোনো ‘কূটকৌশল’ ছিল না, কোনো মহলের ‘চাপও নেই’। অনানুষ্ঠানিকপত্র দিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে। চিঠি বৃহস্পতিবার শেষবেলায় দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় চিঠিটা উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে কোনো জবাব আসেনি। ধরে নিচ্ছি উনারা পেয়েছেন। অনেকে বলতে চেয়েছেন এটা সরকারের একটি কূটকৌশল। আমি আপনাদের মাধ্যম পুরো জাতিকে অবহিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই এ পত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সংস্রব নেই, সংশ্লিষ্টতা ছিল না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি কেউ এটাকে কূটকৌশল হিসেবে মনে করতে চান তাহলে এটা নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে, সরকারের নয়। আর নির্বাচন কমিশন কখনো কূটকৌশল হিসেবে এ কাজটি করেনি।’
সিইসি বলেন, ‘ইসি একেবারে প্রথম থেকেই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে। আমরা ব্যথিত হই যখন বলা হয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। আজ্ঞা বহন করিনি। আমরা নির্বাচন নিয়ে আলাপ করি, আমাদের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়।’
বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এখনো আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি আপনাদের (বিএনপির) যদি কোনো কৌশল থাকে তার ওপর ইসির কোনো মন্তব্য থাকবে না। তার পরও আমরা আলোচনা করতে চাই আপনাদের সঙ্গে। ফল ইতিবাচক হতেও পারে, নাও হতে পারে। প্রয়াস থাকবে। প্রয়াস গ্রহণ করতে বাধা থাকা উচিত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা কোনো চিঠি পাইনি। আমি চিঠি দিয়েছি, যেকোনো রেসপন্স আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে। আমরা আশা করি, যেহেতু বিএনপি মহাসচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছি। যেকোনো বক্তব্য আমাদের কাছে পত্রের মাধ্যমে আসে সেটাই কাক্সিক্ষত। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। আগাম কোনো মন্তব্য নেই।’
বিএনপি যদি আসে তাদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনারা কী বলবেন, আমরা কী বলব আগাম কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। বিএনপি যদি আলোচনার জন্য এজেন্ডা ঠিক করে দেয়, তার পরও বসা বিষয়ে ইতিবাচক’ বলে জানান সিইসি।
কূটনৈতিক মহলে সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই। আমাদের চিন্তা থেকে, উদ্ভূত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপে বিএনপিকে ডাকা হয়নি।’
বিএনপির জবাব পেতে কত দিন অপেক্ষা করবে কমিশন এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান সিইসি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাইবান্ধা ভোট বন্ধের ইস্যুতে ১৩৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারও পদক্ষেপ নেবে ইসি।
সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।