
গন্তব্য কমলাপুর রেলস্টেশন। গুগল ম্যাপ জানাচ্ছে বাসে যেতে সময় লাগবে ৩৫ মিনিট আর হেঁটে এক ঘণ্টা। বাসে উঠে শাহবাগের জ্যাম দিয়ে শুরু। এরকম আরও কয়েকবার জ্যাম ও সিগন্যাল পেরিয়ে ১ ঘণ্টা ১১ মিনিট পর মতিঝিল পৌঁছলাম। জ্যামে আর বসে থাকতে ইচ্ছে হলো না। তাই এখানে নেমে গিয়ে বাকিটা পথ হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যখন কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছলাম তখন বিকেল ৪টা ৩ মিনিট।
স্টেশনে ঢুকতেই চোখে পড়ল বড় করে লেখা ‘ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন’ সাইনবোর্ডে। মুহূর্তেই থমকে দাঁড়ালাম। ভুল করে অন্য কোনো স্টেশনে চলে এলাম না তো। জানি না আমার মতো এমন করে আর কেউ বিভ্রান্ত হন কি না। তবে যারা প্রথমবার আসেন তাদের নিয়ে এরকম বিভ্রান্তি হলেও হতে পারে। আসলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনটি বহুকাল ধরেই কমলাপুর রেলস্টেশন নামেই পরিচিত।
মনের দ্বিধা দূর করে পা বাড়ালাম। একটু সামনে এগোতেই কানে এলো রিকশা, বাইক আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ড্রাইভারদের চিল্লাচিল্লি। এই মামা কই যাবেন, মামা চলেন যাই। চালক-যাত্রী দেনদরবার। ঢাকা শহরে বাসিন্দাদের দৈনন্দিন সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাড়া বিড়ম্বনা। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এক যাত্রী স্টেশন থেকে মিরপুর-১ যেতে মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দেনদরবার করছেন। যাত্রীর দাবিঅ্যাপসে যা আছে তাই দেবেন। চালক পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেনএখন অফিস টাইম, রাস্তায় জ্যাম, তাই ভাড়া বেশি। ভাড়া নিয়ে অন্য যাত্রী ও ড্রাইভারদের দরকষাকষি পেছনে রেখে আমি সামনে পা বাড়ালাম।
এর মধ্যে চোখে পড়ল কয়েকটি ছেলে হাতে আমড়া, বরই, পেয়ারা, ঠান্ডা পানি হাতে নিয়ে, বিক্রির চেষ্টা করছে। কথা বলতে চাইলে একজন জানাল, এখন কথা বলার সময় নেই। ট্রেন আসছে। যাত্রীরা স্টেশন থেকে বের হবে। বিক্রি করতে হবে বলেই সে চলে গেল।
স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে পা ফেলতেই মনে পড়ল আজ ১ মার্চ থেকে নতুন পদ্ধতিতে টিকিট দেওয়া হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইনে এবং অফলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণে জরিমানা করা এবং ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলযাত্রীদের একটা বড় অংশ প্রযুক্তি সুবিধার বাইরে, তাদের অনেকের অনলাইনে বা অফলাইনে নিবন্ধন বা লগ ইন করার পদ্ধতি জানা নেই, ডিভাইস নেই, ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। নতুন পদ্ধতিতে টিকিট নিয়ে মানুষের ভাবনা, অভিজ্ঞতা আর বিড়ম্বনার কথা শুনতে চাই।
এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তার অ্যানড্রয়েড মোবাইল নেই। মগবাজারের একটা কম্পিউটারের দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি কয়েকবার ট্রেনে যাতায়াত করেন। এখন ট্রেনে চড়তে হলে প্রতিবার তার কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যদিও পাশের যাত্রী জানালেন নতুন পদ্ধতিতে টিকিট চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন কালোবাজারিরা টিকিট নিলেও বিক্রি করতে পারবে না। যার যার এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ট্রেনে ভ্রমণের সময় এনআইডির ফটোকপি দেখাতে হবে, ফলে টিকিট কালোবাজারিদের দিন শেষ।
আজ টিকিট অন্যরকম। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছে। আশপাশে কোনো দালাল নেই। আরএনবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা যাত্রীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ১৪ নম্বর টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখতে পেলাম, টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত এক মহিলা কাউন্টারে এক তরুণকে, তার এনআইডি সঙ্গে আছে কি না জানতে চাইলেন। বুঝলাম, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। একটু সময় নিয়ে কয়েকবার কম্পিউটারে যাচাই করে জানালেন, আপনার নিবন্ধন হয়নি। ৭ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে আবার নিবন্ধন করে নিয়ে আসুন।
প্রায় প্রতিটি কাউন্টারের সামনে বাংলা ও ইংরেজিতে কাউন্টার টিকিটের জন্য ব্যবহারকারী নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেখা বিজ্ঞাপন আছে।
টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশে পা বাড়ালাম। প্রবেশপথেই দেখা মিলল ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক ও টিকিট কালেকটর গ্রেড-২ কর্মকর্তাদের তৎপরতা। টিকিট ছাড়া তারা কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। যাদের টিকিট নেই তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে বলা হচ্ছে। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম, টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোনো উপায়ে তারা কাউকে প্রবেশ করতে দেন কি না সেটা দেখার জন্য। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম তারা আজ সততার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে টাকা দিয়ে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে চায়নি বিষয়টা এমন নয়, তবে তারা প্রলোভনে রাজি হননি।
এর মধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখলাম প্রতিটি বগির দরজা আটকানো। বাইরে দাঁড়িয়ে অ্যাটেনডেন্ট টিটিইরা টিকিট চেক করে তারপর যাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব অনেক বেশি। ভিড়ের মধ্যে বাচ্চাদের টেনে নিয়ে যাওয়া কিংবা তুলনামূলকভাবে যাদের বয়স একটু বেশি কিংবা শরীর অসুস্থ তাদের জন্য এ যাত্রাপথ কিন্তু বেশ ভোগান্তির। প্ল্যাটফর্ম কাছাকাছি হলে সুবিধা হতোএমন কথা জানান আনোয়ার হুসেন নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, আপনাদের মতো বয়স থাকতে মাইলের পর মেইল হেঁটে গিয়েছি। দুই হাতে ব্যগ নিয়েও গিয়েছি। কিন্তু এখন শরীরের বল কমে এসেছে, সহজে ক্লান্ত হয়ে যাই।
কথা শেষ করতেই চোখে পড়ল লাল জামা পরিহিত এক কুলির সঙ্গে ঝগড়ার সুরে কথা বলছেন এক মধ্যবয়সী। তার সঙ্গে অনেকগুলো মালামাল। সেগুলো নিয়ে যেতে টাকার পরিমাণ নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের হুইসেল বেজে ওঠে। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা উঠে বসেছেন ট্রেনে। ট্রেনের চাকা ঘুরতে শুরু করে। আমি ফিরে যাই আমার গন্তব্যের পথে।
এক দশক আগে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ কংগ্রেস নামের একটি রাজনৈতিক দল। শুরুর দিকে কিছু কর্মসূচি থাকলেও ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর রাজনীতির মাঠে তেমন কোনো সক্রিয়তা নেই দলটির। কালেভদ্রে কিছু ইস্যুতে ঢাকায় মানববন্ধন করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ দলের কার্যক্রম। একই অবস্থা নিবন্ধিত আরেক দল গণতন্ত্রী পার্টির। পুরানা পল্টনে ভাড়া করা ছোট একটি কক্ষে দলটির কার্যালয়। তবে সেখানে নেই কোনো সাইনবোর্ড বা নামফলক।
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমন কিছু দল সরব হতে শুরু করেছে। কোনো কোনো দল ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছে। যদিও বছরজুড়ে দলগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না রাজনৈতিক অঙ্গনে। তারা দেশের জনগণের কোনো চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে না, যদিও দলগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। এ অবস্থায় গত বছর অদ্ভুত নামের প্রায় শখানেক দল নিবন্ধন চাওয়ার পরই বিষয়টি আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্যমতে, দেশে এখন ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ দলের অবস্থায়ই কাগজে আছে কাজে নেই অবস্থা। কয়েকটি দল ইস্যু বা দিবসভিত্তিক কর্মসূচি দিলেও তা পালন করার মতো লোকবলই নেই তাদের। আবার ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কয়েকটি বিদেশের ইস্যু নিয়ে মাদ্রাসা বা মসজিদকেন্দ্রিক কিছু কর্মসূচি করলেও জাতীয় ইস্যুতে তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। ৯০ শতাংশ দল ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্র সংগঠনও অকার্যকর।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মতো দলগুলোর গত কয়েক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়।
কয়েক দলের কার্যালয়ে গিয়ে বা ফোনে যোগাযোগ করা হয় নেতাদের সঙ্গে। তবে কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় সন্ধান মেলেনি বেশ কয়েকটি দলের কার্যালয়ের। এমনকি যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে তাতেও কয়েকটি দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিটি নাগরিকের রাজনীতি করা, সংগঠন করা, রাজনৈতিক দল করার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। বাংলাদেশের যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা বেশিরভাগই ক্রিয়াশীল নয়। ফলে দেশের রাজনীতির সংস্কৃতিতে যেমন এর প্রভাব পড়ছে। নিবন্ধনের এমন প্রক্রিয়া চলমান থাকলে অনেক ক্রিয়াশীল দলও রাজনীতি থেকে ছিটকে যাবে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিবন্ধন থাকার পরও যেসব দল রাজনীতির মাঠের সক্রিয় না, নির্বাচন এলে এক ধরনের জট সৃষ্টি করে। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তাদেরও বেগ পেতে হয়। আমার মনে হয় আরও বেশি যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়া উচিত। ঢালাওভাবে নিবন্ধন না দিয়ে কমিশন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এসব করে কি না? তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে এসব দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কমিশনের সেই ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোর মিনিমাম শর্ত পালন করা উচিত। অন্যদিকে অনেক দল আছে যারা ক্রিয়াশীল কিন্তু দীর্ঘ সময় তারা চেষ্টা করেও নিবন্ধন পাচ্ছে। না হলে দল ও রাজনীতির প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হবে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর বাংলা মোটরে হ্যাপি রহমান প্লাজায় (চতুর্থতলা) বাংলাদেশ কংগ্রেসের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক কক্ষবিশিষ্ট রুমে দুটি টেবিল ও ৮-১০ চেয়ার রয়েছে। মাঠের রাজনীতিতে সংক্রিয় না থাকলেও গত ১০ বছরে দুটি কাউন্সিল করছে দলটি। আগামী মাসে তৃতীয় কাউন্সিল হবে। তাছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায় তারা।
অফিসে দলের কোনো শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের পাওয়া না গেলেও কথা হয় দপ্তর সম্পাদক তুষারের সঙ্গে। তিনি জানান, মাঝেমধ্যে এখানে দলের নেতাকর্মীরা আসেন। এখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। বর্তমানে কেন্দ্রের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। আমাদের ৫৪টি জেলা ও ২০০ উপজেলায় কমিটি রয়েছে। শিগগিরই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তবে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনেক জেলায় দলটির কমিটি থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। অনেক জেলায় আবার দলীয় অফিসও নেই। বরগুনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. ওলিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোকবল কম থাকায় জেলাপর্যায়ে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। তবে বিভিন্ন দিবস ধরে কর্মসূচি পালন করা হয়।
দলটির মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, দল ছোট বলে আমরা মিডিয়া কাভারেজ পাই না। তাই আমাদের দলের প্রচার কম। এখন আমাদের ৪০টি জেলা কমিটি রয়েছে। নিবন্ধিত দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বলা থাকলেও মাত্র কয়েকজন নারী প্রতিনিধি রয়েছে দলটিতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নারীদের বিষয়ে যে শর্ত দিয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। নারীরা রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা চাইলে নারীদের দলে ভেড়াতে পারছি না। তবে আমাদের চার-পাঁচ নারী প্রতিনিধি রয়েছে।
একই অবস্থা আরেক রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী পার্টির। পুরানা পল্টন, ইশরাত টাওয়ার ১০ তলা ভবনটির ছোট একটি কক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওই ভবনে গিয়ে দেখা গেছে দলীয় কোনো সাইনবোর্ড নেই। ১০ তলায় ছোট একটি রুম থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইস্যুভিত্তিক কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বিভিন্ন দিবস ধরে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবে সেসব কার্যালয়ের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
কেন্দ্রের বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই। ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় কমিটি রয়েছে তারাও নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী। তিনি বলেন, আমরা ১৪ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ। বড় কোনো কর্মসূচি আমাদের নেওয়া হয় না। নানারকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে কিছু কর্মসূচি হয়। তবে কেন্দ্রের উদ্যোগে দিবস ধরে কর্মসূচি হয়। আমাদের ২৫-৩০ জেলায় কমিটি রয়েছে। সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্থায়ী কোনো অফিস নেই। ভাড়া নিয়ে কার্যালয় পরিচালনা করতে হয়। ভবন কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ম রয়েছে। ফলে সাইনবোর্ড লাগানো যাচ্ছে না।
নিবন্ধন থাকলেও কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের। নির্বাচন কমিশনে তথ্যানুযায়ী, দলটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত স্বজন টাওয়ার-২। ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, এরকম দলের অফিস আছে বলে জানা নেই। তাদের কারও ফোন নাম্বার থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নাম্বারগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার তোপখানা রোড। ৫০০-৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি ভাড়া কক্ষে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলের তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিও না থাকলেও জোটের কর্মসূচিতে সক্রিয় দলটি। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে নিয়মিত বিবৃতি ও প্রেস রিলিজ নির্ভর দলটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে মাত্র কয়েকটি জেলায় দলীয় কার্যক্রম ও অফিস রয়েছে। নারীকর্মীও হাতেগোনা কয়েকজন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কোনো দলের পক্ষেই ইসির শর্তগুলো শতভাগ মেনে চলা সম্ভব নয়। তবে মেজর যে শর্ত রয়েছে আমাদের দল তা পূরণ করেছে। ইসি যেসব শর্ত দিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান পরিপন্থী। রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করা উচিত।
২০১৩ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট। নিবন্ধন পাওয়ার পর দলটির কোনো কার্যক্রম নেই। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে দলটির কোনো সাইনবোর্ড বা অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া দুটি টেলিফোন নাম্বারেও তাদের পাওয়া যায়নি।
একই অবস্থা ইসলামি দলগুলোর। নির্বাচন কমিশনে তথ্যানুযায়ী ১০টি ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে। ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে এসব দলের সরব উপস্থিতি থাকলেও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি নেই। বিবৃতি আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে দলীয় কার্যক্রম। অনেক দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্থানীয় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দল মূলত মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল পরিচালিত হয়। স্থানীয় মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আমাদের কার্যালয়। বছরের অর্ধেক সময় ছাত্র-শিক্ষকরা পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকছে। ফলে মাঠের রাজনীতিতে আমাদের বড় কোনো কাজ করতে পারছি না। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকি। কমিশনের শর্ত মেনেই দল চলছে।
নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে আগ্রহী দলটিতে যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন, যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে। দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল থাকতে হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখা, বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না এসব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গত বছর অক্টোবরে নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে চলছে কি না সে তথ্য চেয়ে এসব দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে সব দলই নির্বাচন কমিশনে তথ্য সরবরাহ করেছে। তবে সেসব এখন যাচাই-বাছাই চলছে।
এর আগে কেএম নুরুল হুদা কমিশনও দলগুলো শর্ত পালন করছে কি না, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি এবং ২০২১ সালে জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে।
এসব নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত মেনে দল পরিচালনা করছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছিলাম। সব দল তথ্য জমা দিয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে। কোনো অসংগতি পেলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
আবাসিক হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে তিন দিনের ব্যবধানে দুই দফা সংঘর্ষে জড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের একটি উপপক্ষের দুই গ্রুপ। এ ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ দুটি হল থেকে ৯টি রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে। কিন্তু এসব অস্ত্র উদ্ধারের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। আটক বা গ্রেপ্তারও হয়নি কেউ।
শুধু হলের কক্ষ দখল নয়, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গত এক মাসে অন্তত পাঁচবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আগে কয়েকটি ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িতদের যেমন বিচার হয় না, তেমনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে তারাও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেপরোয়া কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিরা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন এবং অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকা-ের কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমীন দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। এর মধ্যে ১৭ জুলাই যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক নারী শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। আগস্ট মাসে অন্য মামলাটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এ দুটি মামলা এখনো তদন্তাধীন।
অথচ গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত বছর ১৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে ভিত্তিক উপপক্ষ বিজয় ও সিএফসি, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সিক্সটি নাইন ও এপিটাপ, ৫ সেপ্টেম্বর সিএফসি ও সিক্সটি নাইন, ২ ডিসেম্বর রাতে ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও বিজয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুল ইসলাম জানান, কতটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সে হিসাব তাদের কাছে নেই। একটি গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে গত বছর ১৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। ওই তিনটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তথ্যমতে, গত ৩৩ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি হত্যাকা- ঘটেছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা রাজনৈতিক কারণে। খুনোখুনির এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অসংখ্য তদন্ত কমিটি গঠন করলেও রিপোর্টগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার, মামলা করলেও ৩০ বছরে এসব হত্যাকা-ের একটিরও বিচার শেষ হয়নি। ২২ বছর ধরে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা চৌধুরী হত্যাকা-ের বিচার। কিন্তু ২১ খুনের মামলার একটিরও নিষ্পত্তি বা রায় হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, মারামারি নিরসনে তাদের রাজনৈতিক ‘গুরুদের’ও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নাছির সমর্থকদের নয়টি ও নওফেল সমর্থকদের দুটি উপপক্ষ।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কোনো অনুসারী নেই বলে দাবি করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। গত রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শিক কারণে মারামারি নেই। মূল হচ্ছে আসন সংকট। কারণ অনেকের ছাত্রত্ব নেই। তারা হলের আসন দখল করে আছে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিতে থাকছে। অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।’
এমফিল বা পিএইচডির শিক্ষার্থী ছাড়া ১০ বছরের ঊর্ধ্বে একজন অছাত্র কেন হলে থাকবে এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থাকার কারণে তারা পেশিশক্তি দেখাতে কক্ষ দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। র্যাগিং করছে। মূল অপরাধ ঢাকার জন্য বা নিজেকে সেফ করার জন্য তারা অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের অনুসারী বলে প্রচার করছে।’
একমাত্র শিক্ষকরাই এ সংকট নিরসন করতে পারেন, এমন দাবি করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি হল থেকে অছাত্রদের বের করে দিলে সংঘাত, মারামারি ৯০ শতাংশ কমে যাবে। ব্যক্তিগত অনুসারী সৃষ্টির রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না এবং অনুসারী পরিচয়ে যারা অপরাধ করেছে বা করছে, তাদের পক্ষে থাকা বা সমর্থন আমি কখনোই করিনি এবং আগামীতেও করব না।’
সম্প্রতি ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের পরও থানায় মামলা না করা প্রসঙ্গে চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মারামারি, সংঘাতের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। থানায় মামলা বা জিডি করা না হলেও সব ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তিনি জানান, ২০২১ সালের অক্টোবরে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে ছাত্রলীগের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তবে এর মধ্যে আটজন মুচলেকা দেওয়ায় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ১১ জানুয়ারি সাংবাদিক হেনস্তা, আবাসিক হলে ভাঙচুর ও ছাত্রী হলে মারামারিসহ ছয় ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের ১৭ নেতাকর্মীসহ ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
একাধিকবার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরও মারামারি ও হানাহানি বন্ধ করতে পারেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আরও দুই দফা রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রশিবির বা ছাত্রদলের দৃশ্যত কোনো রাজনৈতিক কর্মকা- নেই। এখন ছাত্রলীগ নিজেরাই নিত্যদিন মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়োগ নিয়ে নানা দুর্নীতির সংবাদ, ফোনালাপ গণমাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে। যদি প্রশাসনিক দুর্বলতা থেকে থাকে তাহলে এর সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছে ছাত্রলীগ নামধারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চেইন অব কমান্ড নেই। নিজেদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখে পুলিশ হতাশ। হাটহাজারী থানা শুধু কি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের জন্য? এ থানার তো অনেক কাজ আছে। যদি সরষের মধ্যে ভূত থাকে, ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়, তাহলে ছাত্রলীগের সংঘাত থামাতে পারবে না। এসব রোধ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগে নিজেকে আস্থায় আনতে হবে। প্রশাসন যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় সেই সুযোগ নেবে বারবার সংঘাতে লিপ্ত ছাত্রলীগ নামধারীরা।’
চট্টগ্রাম আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে কিছু স্বার্থবাদী লোক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশকে ব্যবহার করছেন। ছাত্রলীগ নামধারীরা নিজেরা অপকর্মের দায় থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার অনুসারী বলে প্রচার করছে। আমি জানি না যেসব নেতার সমর্থক বলে তারা প্রচার করছে সেসব নেতারা তাদের সমর্থন দিচ্ছে কি না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রায় রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) চেয়ে করা আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রইল।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত আট বিচারকের আপিল বিভাগ রিভিউ খারিজের রায় দেয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অধ্যাপক তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে একই বিভাগের শিক্ষক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রয়েছে আবদুস সালাম ও নাজমুল আলমের।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, দণ্ডের বিরুদ্ধে এই দুজনের আইনি লড়াই শেষ হলো। তাদের সামনে এখন শুধু দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার
আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এ আবেদন খারিজ হলে কারাবিধি অনুযায়ী দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২ মার্চ (গতকাল) রায়ের জন্য ধার্য করে আপিল বিভাগ। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
মোর্শেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের মধ্যে সালাম রিভিউ আবেদন করেছিলেন। তার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ফলে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে দণ্ড ভোগ করতে হবে।
আপিল বিভাগের রিভিউ রায়ের সময় অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী ও শাকিলা রওশন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হাইকোর্টে রায় থেকে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের দণ্ড বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল গত বছরের ৫ এপ্রিল খারিজ করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এতে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজাও বহাল থাকে। বিচারিক আদালতের রায়ে এ চারজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর একটি আদালত রায়ে চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেয়। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এবং নাজমুল ও আবদুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ নিখোঁজ হন। দুদিন পর শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাতে অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন মুনশি এবং সালামের আত্মীয় নাজমুলকে আসামি করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করার কাজে লাগান। তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এসব প্রতারণা প্রমাণিত হয়।
সেই অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাহেরকে বাসায় হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের কাছে শেষবার ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৪ থেকে ঘরের মাঠে টানা ছয় সিরিজ জয়ের সাফল্য ছিল টাইগারদের। ২০১৬তে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ এ সিরিজ হারের পর গত ডিসেম্বরে ভারতকে হারানো পর্যন্ত টানা সাত সিরিজ জয়ের তৃপ্তি আছে। সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ড আবারও বাংলাদেশের দুর্গ ভাঙার পথে এগিয়ে আছে। শেষবার প্রথম ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয়টিতে জিতে বাংলাদেশ সিরিজে সমতা আনে। তবে চট্টগ্রামে হেরে সিরিজ আর হাতে তোলা হয়নি বাংলাদেশের। ঠিক একই অবস্থা আবার। মিরপুরে আজ জয়ে না ফিরলে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে ওয়ানডে সুপার লিগে হোমে অক্ষত থাকার রেকর্ডও ভেঙে যাবে। অবশ্য আজ বাংলাদেশ জিতলে হোমে অজেয় থাকার রেকর্ড ধরে রাখার আশা টিকে থাকবে।
বাংলাদেশ সবশেষ নিজেদের ইতিহাসের সাফল্যের বছরেই প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও সিরিজ জিতেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ২০১৫ সালে প্রথম ম্যাচ হারের পর টানা দুই ম্যাচ জিতে ২-১ এ সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ওই সিরিজ বাদে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেও লড়াইয়ে ফেরার দারুণ নজির গড়ে বাংলাদেশ। সেবার সিরিজে ২-০তে পিছিয়ে পড়েও শেষ তিন ম্যাচ জিতে ৩-২ এ সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সিরিজে টিকে থাকতে কাল শেষ মুহূর্তে দলে পরিবর্তন এনেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিপিএল ভালো করা শামিম হোসেনকে যুক্ত করায় বাংলাদেশ দল এখন ১৫ জনের। আগে টি-টোয়েন্টি দলে থাকা যুব বিশ্বকাপজয়ী শামিম এই প্রথম ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন। নির্বাচকরা বলছেন চোটগ্রস্ত দুজনের ব্যাকআপ হিসেবে আনা হয়েছে তাকে। তার খেলার সম্ভাবনা কম। খেললেও অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে নামতে পারেন।
প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমই বেশি দায়ী থাকবেন। দুজনই স্পিনারদের বিপক্ষে সøগ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। মিরপুরের উইকেট বুঝে খেলার অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। এ নিয়ে মুশফিক চিন্তিত থাকলেও, সাকিব চিন্তায় ছিলেন বলে মনে হয় না। ম্যাচের পরদিন ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও মুশফিক দলের কোচিং স্টাফদের নিয়ে গতকাল চলে আসেন মিরপুরে। করেছেন ব্যাটিং অনুশীলন। প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ১৬ রানে আউট হওয়ার ভুল নিয়ে কাজ করেছেন অবশ্যই। অনুশীলনের এক পর্যায়ে নেট বোলারের থ্রোতে বল হাতে লাগায় ব্যথাও পেয়েছেন। অবশ্য বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন মুশফিকের চোট গুরুতর নয়। এদিকে সাকিব কাল ম্যাচে আগের দিন সন্ধ্যায় ছিলেন নিজের স্পন্সর কাজ নিয়ে ব্যস্ত। টিম হোটেল ত্যাগ করে একটি ব্র্যান্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এ কারণেই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন কাল সন্ধ্যায় বিরক্তি নিয়েই উপস্থিত হয়েছিলেন টিম হোটেলে।
ক্রিকেটারদের ভুল শটে আউট হওয়াই প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হারের কারণ। পাশাপাশি বিপক্ষে একজন ডাভিড মালান থাকলে চ্যালেঞ্জটা বেশি। প্রথম ম্যাচে জস বাটলার, জেসন রয়দের মতো বিধ্বংসী ব্যাটারদের দ্রুত ফেরাতে পেরেছেন বোলাররা। কিন্তু মালানকে ফেরাতে পারেননি। গত ১০ বছরে প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএল মিলিয়ে বাংলাদেশে ৫০টির মতো ম্যাচ খেলা মালান প্রথমবার দেশের জার্সিতে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে নামেন। আর প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন। এটা অবশ্যই ওই ৫০ ম্যাচ খেলার ফল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রথম ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে তুলেছেন দলকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও তাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মালান। তাকে দ্রুত ফেরানো গেলেই বাংলাদেশের অর্ধেক কাজ এগিয়ে থাকবে।
কোচ হাথুরুসিংহের অধীনে স্পিন শক্তি নিয়েই শুরু করেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের পিচে স্পিন খেলা রপ্ত করা মালান সেই শক্তিকে দমিয়ে দিয়েছেন। আজও একই পরিণতি হলে সাত সিরিজ পর দেশের মাটিতে সিরিজ হারের স্বাদ নিতে হবে বাংলাদেশকে।
অদূর ভবিষ্যতে মেশিন মানুষের মতো ‘ব্যক্তিত্ব, ‘যুক্তি’ ও ‘চিন্তা’ অর্জন করতে পারবে কি পারবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আপাতত নেই। তবে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। মেশিন চিন্তা ও সৃষ্টি করতে পারলে তা কি খুব অকল্যাণকর হবে মানুষের জন্য? সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে চ্যাটজিপিটির কারণে। বলা হচ্ছে চ্যাটজিপিটি অতি দক্ষতা ও নিজের মতো কাজ করতে পারার কারণে মানুষের কর্মসংস্থারের সুযোগ কমে যাবে, বেকারত্ব বাড়বে। অন্যদিকে একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করা মানুষ আর নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে না, এটাও সত্য। এতে সামাজিক, অর্থনৈতিক সমতার পরিবর্তে বিপুল অসাম্য রচিত হতে পারে। তবে বেকারত্ব খুব বড় কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। ন্যানোটেক, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন, বাইরে থেকে মানুষের ব্রেনে দক্ষতা প্রতিস্থাপনের প্রযুক্তি ও নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হওয়াতে এগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে। দুনিয়ায় মেশিননির্ভর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, কম্পিউটার প্রযুক্তির বিপ্লব সাধিত হলেও মানুষের কর্মসংস্থান ও উন্নততর সেবাদানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চ্যাটজিপিটি সে ক্ষেত্রে আশীর্বাদ।
মানুষ যেদিন প্রথম বীজ রোপণ করেছিল সেদিন কৃষিবিজ্ঞানের সূচনা। সভ্যতারও শুরু। সেই সূচনালগ্নে মানুষ কি জানত এর ভবিষ্যৎ কী? সেই আদি মানুষের ক্ষুদ্র কৃষিজ্ঞান-পরবর্তী দুনিয়ার সমাজ, বাসস্থান, ভূমি ব্যবস্থা, রাজনীতি, ক্ষমতা কাঠামো, ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন, জীবনযাপন, সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসসহ সবকিছুকে প্রভাবিত করেছে। সফল আবিষ্কার পুরো দুনিয়ার বিপুল পরিবর্তন ঘটায়, নতুন যুগের সূচনা করে। কিন্তু সেই সূচনার অভিমুখ ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা বর্তমানে বসে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পনেরো শতকের গুটেনবার্গের প্রিন্টিং মেশিন মানুষের জ্ঞানকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। আঠারো শতকের স্ট্রিম ইঞ্জিন আর ইলেকট্রিসিটির বা পরবর্তীকালে টেলিগ্রাম, রেডিও, টেলিভিশন যুগান্তকারী সব পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির প্রভাবেই রাজতন্ত্র ভেঙে গিয়েছে, দাস প্রথা বিপুপ্ত হয়েছে, উন্নত চিকিৎসা, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, গণমানুষের অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ও সাম্য ব্যবস্থার পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলো অন্যান্য মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে নির্মম শাসন ও শোষণ চালিয়েছে, ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে; হত্যা জিঘাংসার হাহাকার মাটিতে কান পাতলে এখনো পাওয়া যায়। দুটো বিশ্বযুদ্ধে রক্ত দিয়ে প্রযুক্তির ঋণ আমাদের শোধ করতে হয়েছে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে মূল ভূমির মালিকরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
প্রিন্ট মেশিন, বিদ্যুৎ বা ইঞ্জিন আবিষ্কারের সময় আমরা কি জানতাম এর ভবিষ্যৎ ফলাফল এতটা করুণ, ভয়াবহ ও রক্তাক্ত? আগে থেকে জানলে আমরা কি নতুন আবিষ্কৃত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও দর্শনকে স্বাগত জানাতাম, নাকি প্রতিরোধ করতাম? এরও কোনো সঠিক উত্তর নেই। যারা ইতিহাস জানেন তারা মানবেন, এ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত ইন্টারনেট মূলত মিলিটারি টেকনোলজি। এর ইতিবাচক প্রভাব যেমন সুদূরপ্রসারী; তেমনি এর দ্বারা মানুষের চিন্তাকে নজরদারি কার হচ্ছে রাষ্ট্রের তরফ থেকে। চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণও করা যায়। চ্যাটজিপিটিও প্রকারান্তরে এই মিলিটারি প্রযুক্তির উন্নততর সংস্করণ। এর দ্বারা দৃশ্যত প্রযুক্তি, দক্ষতা, সুযোগ-সুবিধা, কর্মসংস্থান, শিক্ষাব্যবস্থা, বিনোদন, চিকিৎসা, গড় আয়ু, ইনকাম, জিডিপি, হ্যাপিনেস ইনডেক্স, অবসর, যোগাযোগ, খাদ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদির সুযোগ-সুবিধা বাড়বে নিশ্চিত। তবে পঞ্চাশ বা ষাট দশকে শুরু হওয়া আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বৈশ্বিক ফলাফলের চূড়ান্ত রূপটা ঠিকভাবে বুঝে উঠতে আরও সময় লাগবে।
চ্যাটজিপিটির মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুনিয়ায় মানুষের ভবিষ্যৎ কী? সায়েন্স ফিকশন নভেল বা মুভিতে রোবট কর্র্তৃক দুনিয়া দখলের যে ভয়ংকর গল্প দেখি তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কেননা রাজনৈতিকভাবে মানুষ এমন কিছু তৈরি করবে না যা তার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ‘মানবিক অনুভূতি’ ব্যাপারটা জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা শতকোটি বছর নানা বিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গিয়ে মানুষ অর্জন করেছে। ফলে সৃজনশীল কর্মের দক্ষতা এআইএর অর্জন করা প্রায় অসম্ভব। কেননা এ ট্রান্সফরমার তাই তৈরি করতে পারে যা আগে মানুষ করে রেখেছে। এ কারণেই অটোপাইলট দিয়ে চালানো বিমানে বৈমানিক লাগে। কেননা নতুন তৈরি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা এদের নেই।
কিন্তু অদৃশ্যত দুনিয়ার ক্ষমতা কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করে ফেলবে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি। এ ধরনের এআইয়ে বিনিয়োগ করেছে জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। অল্প কিছু মানুষ বা গুটিকয় করপোরেট মিলে একক (সিঙ্গুলার) এক দুনিয়া তৈরি করতে চাইছে। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই একই ভাষায় কথা বলবে, একই বিষয় পছন্দ করবে, একই দলকে ভোট দেবে বা দেওয়ার প্রয়োজনই হয়তো হবে না। রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামো ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট, টুইটার, ফেসবুক, গুগলসহ এমন গুটিকয় করপোরেটের হাতে চলে যাবে। মূলত মেশিনের গুটিকয় পরিচালকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সব। লক্ষ করবেন, চ্যাটজিপিটিতে সূচনা থেকে বিনিয়োগ করেছে লিংকডইন, পেপল, টেসলা, স্পেস এক্স ও টুইটার, আমাজন, মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। গুগল ও ফেসবুকের নিজস্ব বিনিয়োগ আছে এআইতে। ফলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে দুনিয়ার ক্ষমতা কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করবে। এআই সাঁজোয়া সোশ্যাল মিডিয়া নিজের শক্তি পরীক্ষা করেছে ২০১০ সালে আরব বসন্তের ভেতর দিয়ে। বসন্ত শুরু হয় তিউনেশিয়ায়, এর ফুল ঠিকই ফুটেছে লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইনে। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাকবোনে ব্যবহৃত অ্যালগরিদমের ব্যাপক ভূমিকা ছিল বলে সন্দেহ করা হয়। ফলে বেন আলি, গাদ্দাফি, হোসনি মোবারক, আলি আবদুল্লাহ সালেহ দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা গদি রক্ষা করতে পারেনি। এই এআই তার শক্তির পরীক্ষা দেখিয়েছে ২০২০ সালের আমেরিকা নির্বাচনে। টুইটার বা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও একহাত দেখিয়েছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এমন ক্ষমতা আগে দেখা যায়নি। যতই দিন যাবে গুটি কয়েক করপোরেট দুনিয়ার মানুষের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেবে। চ্যাটজিপিটিও এই একই খেলার অংশ সম্ভবত। সেনাবাহিনী পূর্বে রাষ্ট্র রক্ষা করত, এআইর মতো মিলিটারি টেকনোলজি এখন প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ঠিক রাখবে। চ্যাটজিপিটি বিশ্বস্ত শিক্ষক হয়ে উঠবে। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে মনের খবর জেনে যাবে। একসময় আস্থা অর্জিত হওয়ার পর আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে যা শেখাবে ও জানাবে তা দিয়ে অবচেতনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। চ্যাটজিপিটির বাইরের আর কোনো জ্ঞানই আমাদের আর বিশ্বাস হবে না। বৈচিত্র্যপূর্ণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে মানুষের অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হবে। আর তখনই মানুষ হয়ে উঠবে জৈব-মেশিনের এক সত্তা যার স্বাধীন কোনো অস্তিত্ব নেই। ইলন মাস্ক তার কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এআই নিউক্লিয়ার বোমা থেকেও ভয়াবহ।’
লাখ লাখ বছরে দুনিয়ায় মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন ও প্রাপ্তি হলো তার স্বাধীনতা। এ যেন শেষ না হয়ে যায়। দুনিয়ার মানুষ যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তার সমাধান প্রযুক্তি ও দর্শন দিয়ে করা হয়ে থাকে। ফলে এআই বা চ্যাটজিপিটি থেকে তৈরিকৃত সমস্যার সমাধান প্রযুক্তি, চিন্তা ও সৃজনশীলতা দিয়েই করতে হবে। চ্যাটজিপিটি বা এআইয়ের দুনিয়ায় মানুষ মানবিকভাবে আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। তার সৃজনশীলতা ও চিন্তাকে বাস্তবায়ন করার মতো অতি দক্ষ টুলস থাকবে হাতে। ফলে আশা করি মানুষ তার স্বাধীনতার রক্ষার পক্ষে এ প্রযুক্তি ও তার স্বাধীন চিন্তা নিয়ে বিপুল বিক্রমে দাঁড়াবে। মানুষের স্বাধীনতার জন্য তার পাশে যা দাঁড়িয়ে থাকবে তা একটা মেশিন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।