
গন্তব্য কমলাপুর রেলস্টেশন। গুগল ম্যাপ জানাচ্ছে বাসে যেতে সময় লাগবে ৩৫ মিনিট আর হেঁটে এক ঘণ্টা। বাসে উঠে শাহবাগের জ্যাম দিয়ে শুরু। এরকম আরও কয়েকবার জ্যাম ও সিগন্যাল পেরিয়ে ১ ঘণ্টা ১১ মিনিট পর মতিঝিল পৌঁছলাম। জ্যামে আর বসে থাকতে ইচ্ছে হলো না। তাই এখানে নেমে গিয়ে বাকিটা পথ হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যখন কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছলাম তখন বিকেল ৪টা ৩ মিনিট।
স্টেশনে ঢুকতেই চোখে পড়ল বড় করে লেখা ‘ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন’ সাইনবোর্ডে। মুহূর্তেই থমকে দাঁড়ালাম। ভুল করে অন্য কোনো স্টেশনে চলে এলাম না তো। জানি না আমার মতো এমন করে আর কেউ বিভ্রান্ত হন কি না। তবে যারা প্রথমবার আসেন তাদের নিয়ে এরকম বিভ্রান্তি হলেও হতে পারে। আসলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনটি বহুকাল ধরেই কমলাপুর রেলস্টেশন নামেই পরিচিত।
মনের দ্বিধা দূর করে পা বাড়ালাম। একটু সামনে এগোতেই কানে এলো রিকশা, বাইক আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ড্রাইভারদের চিল্লাচিল্লি। এই মামা কই যাবেন, মামা চলেন যাই। চালক-যাত্রী দেনদরবার। ঢাকা শহরে বাসিন্দাদের দৈনন্দিন সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাড়া বিড়ম্বনা। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এক যাত্রী স্টেশন থেকে মিরপুর-১ যেতে মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দেনদরবার করছেন। যাত্রীর দাবিঅ্যাপসে যা আছে তাই দেবেন। চালক পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেনএখন অফিস টাইম, রাস্তায় জ্যাম, তাই ভাড়া বেশি। ভাড়া নিয়ে অন্য যাত্রী ও ড্রাইভারদের দরকষাকষি পেছনে রেখে আমি সামনে পা বাড়ালাম।
এর মধ্যে চোখে পড়ল কয়েকটি ছেলে হাতে আমড়া, বরই, পেয়ারা, ঠান্ডা পানি হাতে নিয়ে, বিক্রির চেষ্টা করছে। কথা বলতে চাইলে একজন জানাল, এখন কথা বলার সময় নেই। ট্রেন আসছে। যাত্রীরা স্টেশন থেকে বের হবে। বিক্রি করতে হবে বলেই সে চলে গেল।
স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে পা ফেলতেই মনে পড়ল আজ ১ মার্চ থেকে নতুন পদ্ধতিতে টিকিট দেওয়া হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইনে এবং অফলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণে জরিমানা করা এবং ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলযাত্রীদের একটা বড় অংশ প্রযুক্তি সুবিধার বাইরে, তাদের অনেকের অনলাইনে বা অফলাইনে নিবন্ধন বা লগ ইন করার পদ্ধতি জানা নেই, ডিভাইস নেই, ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। নতুন পদ্ধতিতে টিকিট নিয়ে মানুষের ভাবনা, অভিজ্ঞতা আর বিড়ম্বনার কথা শুনতে চাই।
এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তার অ্যানড্রয়েড মোবাইল নেই। মগবাজারের একটা কম্পিউটারের দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি কয়েকবার ট্রেনে যাতায়াত করেন। এখন ট্রেনে চড়তে হলে প্রতিবার তার কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যদিও পাশের যাত্রী জানালেন নতুন পদ্ধতিতে টিকিট চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন কালোবাজারিরা টিকিট নিলেও বিক্রি করতে পারবে না। যার যার এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ট্রেনে ভ্রমণের সময় এনআইডির ফটোকপি দেখাতে হবে, ফলে টিকিট কালোবাজারিদের দিন শেষ।
আজ টিকিট অন্যরকম। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছে। আশপাশে কোনো দালাল নেই। আরএনবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা যাত্রীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ১৪ নম্বর টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখতে পেলাম, টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত এক মহিলা কাউন্টারে এক তরুণকে, তার এনআইডি সঙ্গে আছে কি না জানতে চাইলেন। বুঝলাম, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। একটু সময় নিয়ে কয়েকবার কম্পিউটারে যাচাই করে জানালেন, আপনার নিবন্ধন হয়নি। ৭ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে আবার নিবন্ধন করে নিয়ে আসুন।
প্রায় প্রতিটি কাউন্টারের সামনে বাংলা ও ইংরেজিতে কাউন্টার টিকিটের জন্য ব্যবহারকারী নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেখা বিজ্ঞাপন আছে।
টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশে পা বাড়ালাম। প্রবেশপথেই দেখা মিলল ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক ও টিকিট কালেকটর গ্রেড-২ কর্মকর্তাদের তৎপরতা। টিকিট ছাড়া তারা কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। যাদের টিকিট নেই তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে বলা হচ্ছে। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম, টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোনো উপায়ে তারা কাউকে প্রবেশ করতে দেন কি না সেটা দেখার জন্য। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম তারা আজ সততার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে টাকা দিয়ে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে চায়নি বিষয়টা এমন নয়, তবে তারা প্রলোভনে রাজি হননি।
এর মধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখলাম প্রতিটি বগির দরজা আটকানো। বাইরে দাঁড়িয়ে অ্যাটেনডেন্ট টিটিইরা টিকিট চেক করে তারপর যাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব অনেক বেশি। ভিড়ের মধ্যে বাচ্চাদের টেনে নিয়ে যাওয়া কিংবা তুলনামূলকভাবে যাদের বয়স একটু বেশি কিংবা শরীর অসুস্থ তাদের জন্য এ যাত্রাপথ কিন্তু বেশ ভোগান্তির। প্ল্যাটফর্ম কাছাকাছি হলে সুবিধা হতোএমন কথা জানান আনোয়ার হুসেন নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, আপনাদের মতো বয়স থাকতে মাইলের পর মেইল হেঁটে গিয়েছি। দুই হাতে ব্যগ নিয়েও গিয়েছি। কিন্তু এখন শরীরের বল কমে এসেছে, সহজে ক্লান্ত হয়ে যাই।
কথা শেষ করতেই চোখে পড়ল লাল জামা পরিহিত এক কুলির সঙ্গে ঝগড়ার সুরে কথা বলছেন এক মধ্যবয়সী। তার সঙ্গে অনেকগুলো মালামাল। সেগুলো নিয়ে যেতে টাকার পরিমাণ নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের হুইসেল বেজে ওঠে। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা উঠে বসেছেন ট্রেনে। ট্রেনের চাকা ঘুরতে শুরু করে। আমি ফিরে যাই আমার গন্তব্যের পথে।
এক দশক আগে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ কংগ্রেস নামের একটি রাজনৈতিক দল। শুরুর দিকে কিছু কর্মসূচি থাকলেও ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর রাজনীতির মাঠে তেমন কোনো সক্রিয়তা নেই দলটির। কালেভদ্রে কিছু ইস্যুতে ঢাকায় মানববন্ধন করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ দলের কার্যক্রম। একই অবস্থা নিবন্ধিত আরেক দল গণতন্ত্রী পার্টির। পুরানা পল্টনে ভাড়া করা ছোট একটি কক্ষে দলটির কার্যালয়। তবে সেখানে নেই কোনো সাইনবোর্ড বা নামফলক।
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমন কিছু দল সরব হতে শুরু করেছে। কোনো কোনো দল ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছে। যদিও বছরজুড়ে দলগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না রাজনৈতিক অঙ্গনে। তারা দেশের জনগণের কোনো চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে না, যদিও দলগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। এ অবস্থায় গত বছর অদ্ভুত নামের প্রায় শখানেক দল নিবন্ধন চাওয়ার পরই বিষয়টি আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্যমতে, দেশে এখন ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ দলের অবস্থায়ই কাগজে আছে কাজে নেই অবস্থা। কয়েকটি দল ইস্যু বা দিবসভিত্তিক কর্মসূচি দিলেও তা পালন করার মতো লোকবলই নেই তাদের। আবার ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কয়েকটি বিদেশের ইস্যু নিয়ে মাদ্রাসা বা মসজিদকেন্দ্রিক কিছু কর্মসূচি করলেও জাতীয় ইস্যুতে তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। ৯০ শতাংশ দল ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্র সংগঠনও অকার্যকর।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মতো দলগুলোর গত কয়েক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়।
কয়েক দলের কার্যালয়ে গিয়ে বা ফোনে যোগাযোগ করা হয় নেতাদের সঙ্গে। তবে কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় সন্ধান মেলেনি বেশ কয়েকটি দলের কার্যালয়ের। এমনকি যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে তাতেও কয়েকটি দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিটি নাগরিকের রাজনীতি করা, সংগঠন করা, রাজনৈতিক দল করার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। বাংলাদেশের যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা বেশিরভাগই ক্রিয়াশীল নয়। ফলে দেশের রাজনীতির সংস্কৃতিতে যেমন এর প্রভাব পড়ছে। নিবন্ধনের এমন প্রক্রিয়া চলমান থাকলে অনেক ক্রিয়াশীল দলও রাজনীতি থেকে ছিটকে যাবে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিবন্ধন থাকার পরও যেসব দল রাজনীতির মাঠের সক্রিয় না, নির্বাচন এলে এক ধরনের জট সৃষ্টি করে। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তাদেরও বেগ পেতে হয়। আমার মনে হয় আরও বেশি যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়া উচিত। ঢালাওভাবে নিবন্ধন না দিয়ে কমিশন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এসব করে কি না? তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে এসব দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কমিশনের সেই ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোর মিনিমাম শর্ত পালন করা উচিত। অন্যদিকে অনেক দল আছে যারা ক্রিয়াশীল কিন্তু দীর্ঘ সময় তারা চেষ্টা করেও নিবন্ধন পাচ্ছে। না হলে দল ও রাজনীতির প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হবে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর বাংলা মোটরে হ্যাপি রহমান প্লাজায় (চতুর্থতলা) বাংলাদেশ কংগ্রেসের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক কক্ষবিশিষ্ট রুমে দুটি টেবিল ও ৮-১০ চেয়ার রয়েছে। মাঠের রাজনীতিতে সংক্রিয় না থাকলেও গত ১০ বছরে দুটি কাউন্সিল করছে দলটি। আগামী মাসে তৃতীয় কাউন্সিল হবে। তাছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায় তারা।
অফিসে দলের কোনো শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের পাওয়া না গেলেও কথা হয় দপ্তর সম্পাদক তুষারের সঙ্গে। তিনি জানান, মাঝেমধ্যে এখানে দলের নেতাকর্মীরা আসেন। এখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। বর্তমানে কেন্দ্রের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। আমাদের ৫৪টি জেলা ও ২০০ উপজেলায় কমিটি রয়েছে। শিগগিরই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তবে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনেক জেলায় দলটির কমিটি থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। অনেক জেলায় আবার দলীয় অফিসও নেই। বরগুনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. ওলিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোকবল কম থাকায় জেলাপর্যায়ে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। তবে বিভিন্ন দিবস ধরে কর্মসূচি পালন করা হয়।
দলটির মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, দল ছোট বলে আমরা মিডিয়া কাভারেজ পাই না। তাই আমাদের দলের প্রচার কম। এখন আমাদের ৪০টি জেলা কমিটি রয়েছে। নিবন্ধিত দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বলা থাকলেও মাত্র কয়েকজন নারী প্রতিনিধি রয়েছে দলটিতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নারীদের বিষয়ে যে শর্ত দিয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। নারীরা রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা চাইলে নারীদের দলে ভেড়াতে পারছি না। তবে আমাদের চার-পাঁচ নারী প্রতিনিধি রয়েছে।
একই অবস্থা আরেক রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী পার্টির। পুরানা পল্টন, ইশরাত টাওয়ার ১০ তলা ভবনটির ছোট একটি কক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওই ভবনে গিয়ে দেখা গেছে দলীয় কোনো সাইনবোর্ড নেই। ১০ তলায় ছোট একটি রুম থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইস্যুভিত্তিক কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বিভিন্ন দিবস ধরে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবে সেসব কার্যালয়ের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
কেন্দ্রের বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই। ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় কমিটি রয়েছে তারাও নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী। তিনি বলেন, আমরা ১৪ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ। বড় কোনো কর্মসূচি আমাদের নেওয়া হয় না। নানারকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে কিছু কর্মসূচি হয়। তবে কেন্দ্রের উদ্যোগে দিবস ধরে কর্মসূচি হয়। আমাদের ২৫-৩০ জেলায় কমিটি রয়েছে। সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্থায়ী কোনো অফিস নেই। ভাড়া নিয়ে কার্যালয় পরিচালনা করতে হয়। ভবন কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ম রয়েছে। ফলে সাইনবোর্ড লাগানো যাচ্ছে না।
নিবন্ধন থাকলেও কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের। নির্বাচন কমিশনে তথ্যানুযায়ী, দলটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত স্বজন টাওয়ার-২। ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, এরকম দলের অফিস আছে বলে জানা নেই। তাদের কারও ফোন নাম্বার থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নাম্বারগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার তোপখানা রোড। ৫০০-৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি ভাড়া কক্ষে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলের তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিও না থাকলেও জোটের কর্মসূচিতে সক্রিয় দলটি। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে নিয়মিত বিবৃতি ও প্রেস রিলিজ নির্ভর দলটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে মাত্র কয়েকটি জেলায় দলীয় কার্যক্রম ও অফিস রয়েছে। নারীকর্মীও হাতেগোনা কয়েকজন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কোনো দলের পক্ষেই ইসির শর্তগুলো শতভাগ মেনে চলা সম্ভব নয়। তবে মেজর যে শর্ত রয়েছে আমাদের দল তা পূরণ করেছে। ইসি যেসব শর্ত দিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান পরিপন্থী। রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করা উচিত।
২০১৩ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট। নিবন্ধন পাওয়ার পর দলটির কোনো কার্যক্রম নেই। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে দলটির কোনো সাইনবোর্ড বা অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া দুটি টেলিফোন নাম্বারেও তাদের পাওয়া যায়নি।
একই অবস্থা ইসলামি দলগুলোর। নির্বাচন কমিশনে তথ্যানুযায়ী ১০টি ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে। ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে এসব দলের সরব উপস্থিতি থাকলেও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি নেই। বিবৃতি আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে দলীয় কার্যক্রম। অনেক দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্থানীয় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দল মূলত মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল পরিচালিত হয়। স্থানীয় মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আমাদের কার্যালয়। বছরের অর্ধেক সময় ছাত্র-শিক্ষকরা পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকছে। ফলে মাঠের রাজনীতিতে আমাদের বড় কোনো কাজ করতে পারছি না। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকি। কমিশনের শর্ত মেনেই দল চলছে।
নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে আগ্রহী দলটিতে যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন, যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে। দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল থাকতে হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখা, বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না এসব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গত বছর অক্টোবরে নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে চলছে কি না সে তথ্য চেয়ে এসব দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে সব দলই নির্বাচন কমিশনে তথ্য সরবরাহ করেছে। তবে সেসব এখন যাচাই-বাছাই চলছে।
এর আগে কেএম নুরুল হুদা কমিশনও দলগুলো শর্ত পালন করছে কি না, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি এবং ২০২১ সালে জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে।
এসব নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত মেনে দল পরিচালনা করছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছিলাম। সব দল তথ্য জমা দিয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে। কোনো অসংগতি পেলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
আবাসিক হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে তিন দিনের ব্যবধানে দুই দফা সংঘর্ষে জড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের একটি উপপক্ষের দুই গ্রুপ। এ ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ দুটি হল থেকে ৯টি রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে। কিন্তু এসব অস্ত্র উদ্ধারের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। আটক বা গ্রেপ্তারও হয়নি কেউ।
শুধু হলের কক্ষ দখল নয়, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গত এক মাসে অন্তত পাঁচবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আগে কয়েকটি ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িতদের যেমন বিচার হয় না, তেমনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে তারাও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেপরোয়া কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিরা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন এবং অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকা-ের কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমীন দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। এর মধ্যে ১৭ জুলাই যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক নারী শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। আগস্ট মাসে অন্য মামলাটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এ দুটি মামলা এখনো তদন্তাধীন।
অথচ গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত বছর ১৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে ভিত্তিক উপপক্ষ বিজয় ও সিএফসি, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সিক্সটি নাইন ও এপিটাপ, ৫ সেপ্টেম্বর সিএফসি ও সিক্সটি নাইন, ২ ডিসেম্বর রাতে ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও বিজয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুল ইসলাম জানান, কতটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সে হিসাব তাদের কাছে নেই। একটি গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে গত বছর ১৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। ওই তিনটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তথ্যমতে, গত ৩৩ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি হত্যাকা- ঘটেছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা রাজনৈতিক কারণে। খুনোখুনির এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অসংখ্য তদন্ত কমিটি গঠন করলেও রিপোর্টগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার, মামলা করলেও ৩০ বছরে এসব হত্যাকা-ের একটিরও বিচার শেষ হয়নি। ২২ বছর ধরে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা চৌধুরী হত্যাকা-ের বিচার। কিন্তু ২১ খুনের মামলার একটিরও নিষ্পত্তি বা রায় হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, মারামারি নিরসনে তাদের রাজনৈতিক ‘গুরুদের’ও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নাছির সমর্থকদের নয়টি ও নওফেল সমর্থকদের দুটি উপপক্ষ।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কোনো অনুসারী নেই বলে দাবি করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। গত রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শিক কারণে মারামারি নেই। মূল হচ্ছে আসন সংকট। কারণ অনেকের ছাত্রত্ব নেই। তারা হলের আসন দখল করে আছে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিতে থাকছে। অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।’
এমফিল বা পিএইচডির শিক্ষার্থী ছাড়া ১০ বছরের ঊর্ধ্বে একজন অছাত্র কেন হলে থাকবে এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থাকার কারণে তারা পেশিশক্তি দেখাতে কক্ষ দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। র্যাগিং করছে। মূল অপরাধ ঢাকার জন্য বা নিজেকে সেফ করার জন্য তারা অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের অনুসারী বলে প্রচার করছে।’
একমাত্র শিক্ষকরাই এ সংকট নিরসন করতে পারেন, এমন দাবি করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি হল থেকে অছাত্রদের বের করে দিলে সংঘাত, মারামারি ৯০ শতাংশ কমে যাবে। ব্যক্তিগত অনুসারী সৃষ্টির রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না এবং অনুসারী পরিচয়ে যারা অপরাধ করেছে বা করছে, তাদের পক্ষে থাকা বা সমর্থন আমি কখনোই করিনি এবং আগামীতেও করব না।’
সম্প্রতি ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের পরও থানায় মামলা না করা প্রসঙ্গে চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মারামারি, সংঘাতের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। থানায় মামলা বা জিডি করা না হলেও সব ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তিনি জানান, ২০২১ সালের অক্টোবরে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে ছাত্রলীগের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তবে এর মধ্যে আটজন মুচলেকা দেওয়ায় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ১১ জানুয়ারি সাংবাদিক হেনস্তা, আবাসিক হলে ভাঙচুর ও ছাত্রী হলে মারামারিসহ ছয় ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের ১৭ নেতাকর্মীসহ ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
একাধিকবার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরও মারামারি ও হানাহানি বন্ধ করতে পারেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আরও দুই দফা রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রশিবির বা ছাত্রদলের দৃশ্যত কোনো রাজনৈতিক কর্মকা- নেই। এখন ছাত্রলীগ নিজেরাই নিত্যদিন মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়োগ নিয়ে নানা দুর্নীতির সংবাদ, ফোনালাপ গণমাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে। যদি প্রশাসনিক দুর্বলতা থেকে থাকে তাহলে এর সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছে ছাত্রলীগ নামধারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চেইন অব কমান্ড নেই। নিজেদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখে পুলিশ হতাশ। হাটহাজারী থানা শুধু কি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের জন্য? এ থানার তো অনেক কাজ আছে। যদি সরষের মধ্যে ভূত থাকে, ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়, তাহলে ছাত্রলীগের সংঘাত থামাতে পারবে না। এসব রোধ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগে নিজেকে আস্থায় আনতে হবে। প্রশাসন যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় সেই সুযোগ নেবে বারবার সংঘাতে লিপ্ত ছাত্রলীগ নামধারীরা।’
চট্টগ্রাম আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে কিছু স্বার্থবাদী লোক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশকে ব্যবহার করছেন। ছাত্রলীগ নামধারীরা নিজেরা অপকর্মের দায় থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার অনুসারী বলে প্রচার করছে। আমি জানি না যেসব নেতার সমর্থক বলে তারা প্রচার করছে সেসব নেতারা তাদের সমর্থন দিচ্ছে কি না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রায় রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) চেয়ে করা আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রইল।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত আট বিচারকের আপিল বিভাগ রিভিউ খারিজের রায় দেয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অধ্যাপক তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে একই বিভাগের শিক্ষক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রয়েছে আবদুস সালাম ও নাজমুল আলমের।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, দণ্ডের বিরুদ্ধে এই দুজনের আইনি লড়াই শেষ হলো। তাদের সামনে এখন শুধু দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার
আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এ আবেদন খারিজ হলে কারাবিধি অনুযায়ী দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২ মার্চ (গতকাল) রায়ের জন্য ধার্য করে আপিল বিভাগ। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
মোর্শেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের মধ্যে সালাম রিভিউ আবেদন করেছিলেন। তার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ফলে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে দণ্ড ভোগ করতে হবে।
আপিল বিভাগের রিভিউ রায়ের সময় অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী ও শাকিলা রওশন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হাইকোর্টে রায় থেকে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের দণ্ড বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল গত বছরের ৫ এপ্রিল খারিজ করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এতে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজাও বহাল থাকে। বিচারিক আদালতের রায়ে এ চারজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর একটি আদালত রায়ে চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেয়। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এবং নাজমুল ও আবদুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ নিখোঁজ হন। দুদিন পর শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাতে অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন মুনশি এবং সালামের আত্মীয় নাজমুলকে আসামি করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করার কাজে লাগান। তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এসব প্রতারণা প্রমাণিত হয়।
সেই অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাহেরকে বাসায় হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের কাছে শেষবার ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৪ থেকে ঘরের মাঠে টানা ছয় সিরিজ জয়ের সাফল্য ছিল টাইগারদের। ২০১৬তে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ এ সিরিজ হারের পর গত ডিসেম্বরে ভারতকে হারানো পর্যন্ত টানা সাত সিরিজ জয়ের তৃপ্তি আছে। সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ড আবারও বাংলাদেশের দুর্গ ভাঙার পথে এগিয়ে আছে। শেষবার প্রথম ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয়টিতে জিতে বাংলাদেশ সিরিজে সমতা আনে। তবে চট্টগ্রামে হেরে সিরিজ আর হাতে তোলা হয়নি বাংলাদেশের। ঠিক একই অবস্থা আবার। মিরপুরে আজ জয়ে না ফিরলে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে ওয়ানডে সুপার লিগে হোমে অক্ষত থাকার রেকর্ডও ভেঙে যাবে। অবশ্য আজ বাংলাদেশ জিতলে হোমে অজেয় থাকার রেকর্ড ধরে রাখার আশা টিকে থাকবে।
বাংলাদেশ সবশেষ নিজেদের ইতিহাসের সাফল্যের বছরেই প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও সিরিজ জিতেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ২০১৫ সালে প্রথম ম্যাচ হারের পর টানা দুই ম্যাচ জিতে ২-১ এ সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ওই সিরিজ বাদে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেও লড়াইয়ে ফেরার দারুণ নজির গড়ে বাংলাদেশ। সেবার সিরিজে ২-০তে পিছিয়ে পড়েও শেষ তিন ম্যাচ জিতে ৩-২ এ সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সিরিজে টিকে থাকতে কাল শেষ মুহূর্তে দলে পরিবর্তন এনেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিপিএল ভালো করা শামিম হোসেনকে যুক্ত করায় বাংলাদেশ দল এখন ১৫ জনের। আগে টি-টোয়েন্টি দলে থাকা যুব বিশ্বকাপজয়ী শামিম এই প্রথম ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন। নির্বাচকরা বলছেন চোটগ্রস্ত দুজনের ব্যাকআপ হিসেবে আনা হয়েছে তাকে। তার খেলার সম্ভাবনা কম। খেললেও অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে নামতে পারেন।
প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমই বেশি দায়ী থাকবেন। দুজনই স্পিনারদের বিপক্ষে সøগ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। মিরপুরের উইকেট বুঝে খেলার অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। এ নিয়ে মুশফিক চিন্তিত থাকলেও, সাকিব চিন্তায় ছিলেন বলে মনে হয় না। ম্যাচের পরদিন ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও মুশফিক দলের কোচিং স্টাফদের নিয়ে গতকাল চলে আসেন মিরপুরে। করেছেন ব্যাটিং অনুশীলন। প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ১৬ রানে আউট হওয়ার ভুল নিয়ে কাজ করেছেন অবশ্যই। অনুশীলনের এক পর্যায়ে নেট বোলারের থ্রোতে বল হাতে লাগায় ব্যথাও পেয়েছেন। অবশ্য বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন মুশফিকের চোট গুরুতর নয়। এদিকে সাকিব কাল ম্যাচে আগের দিন সন্ধ্যায় ছিলেন নিজের স্পন্সর কাজ নিয়ে ব্যস্ত। টিম হোটেল ত্যাগ করে একটি ব্র্যান্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এ কারণেই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন কাল সন্ধ্যায় বিরক্তি নিয়েই উপস্থিত হয়েছিলেন টিম হোটেলে।
ক্রিকেটারদের ভুল শটে আউট হওয়াই প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হারের কারণ। পাশাপাশি বিপক্ষে একজন ডাভিড মালান থাকলে চ্যালেঞ্জটা বেশি। প্রথম ম্যাচে জস বাটলার, জেসন রয়দের মতো বিধ্বংসী ব্যাটারদের দ্রুত ফেরাতে পেরেছেন বোলাররা। কিন্তু মালানকে ফেরাতে পারেননি। গত ১০ বছরে প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএল মিলিয়ে বাংলাদেশে ৫০টির মতো ম্যাচ খেলা মালান প্রথমবার দেশের জার্সিতে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে নামেন। আর প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন। এটা অবশ্যই ওই ৫০ ম্যাচ খেলার ফল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রথম ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে তুলেছেন দলকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও তাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মালান। তাকে দ্রুত ফেরানো গেলেই বাংলাদেশের অর্ধেক কাজ এগিয়ে থাকবে।
কোচ হাথুরুসিংহের অধীনে স্পিন শক্তি নিয়েই শুরু করেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের পিচে স্পিন খেলা রপ্ত করা মালান সেই শক্তিকে দমিয়ে দিয়েছেন। আজও একই পরিণতি হলে সাত সিরিজ পর দেশের মাটিতে সিরিজ হারের স্বাদ নিতে হবে বাংলাদেশকে।
অদূর ভবিষ্যতে মেশিন মানুষের মতো ‘ব্যক্তিত্ব, ‘যুক্তি’ ও ‘চিন্তা’ অর্জন করতে পারবে কি পারবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আপাতত নেই। তবে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। মেশিন চিন্তা ও সৃষ্টি করতে পারলে তা কি খুব অকল্যাণকর হবে মানুষের জন্য? সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে চ্যাটজিপিটির কারণে। বলা হচ্ছে চ্যাটজিপিটি অতি দক্ষতা ও নিজের মতো কাজ করতে পারার কারণে মানুষের কর্মসংস্থারের সুযোগ কমে যাবে, বেকারত্ব বাড়বে। অন্যদিকে একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করা মানুষ আর নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে না, এটাও সত্য। এতে সামাজিক, অর্থনৈতিক সমতার পরিবর্তে বিপুল অসাম্য রচিত হতে পারে। তবে বেকারত্ব খুব বড় কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। ন্যানোটেক, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন, বাইরে থেকে মানুষের ব্রেনে দক্ষতা প্রতিস্থাপনের প্রযুক্তি ও নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হওয়াতে এগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে। দুনিয়ায় মেশিননির্ভর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, কম্পিউটার প্রযুক্তির বিপ্লব সাধিত হলেও মানুষের কর্মসংস্থান ও উন্নততর সেবাদানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চ্যাটজিপিটি সে ক্ষেত্রে আশীর্বাদ।
মানুষ যেদিন প্রথম বীজ রোপণ করেছিল সেদিন কৃষিবিজ্ঞানের সূচনা। সভ্যতারও শুরু। সেই সূচনালগ্নে মানুষ কি জানত এর ভবিষ্যৎ কী? সেই আদি মানুষের ক্ষুদ্র কৃষিজ্ঞান-পরবর্তী দুনিয়ার সমাজ, বাসস্থান, ভূমি ব্যবস্থা, রাজনীতি, ক্ষমতা কাঠামো, ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন, জীবনযাপন, সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসসহ সবকিছুকে প্রভাবিত করেছে। সফল আবিষ্কার পুরো দুনিয়ার বিপুল পরিবর্তন ঘটায়, নতুন যুগের সূচনা করে। কিন্তু সেই সূচনার অভিমুখ ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা বর্তমানে বসে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পনেরো শতকের গুটেনবার্গের প্রিন্টিং মেশিন মানুষের জ্ঞানকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। আঠারো শতকের স্ট্রিম ইঞ্জিন আর ইলেকট্রিসিটির বা পরবর্তীকালে টেলিগ্রাম, রেডিও, টেলিভিশন যুগান্তকারী সব পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির প্রভাবেই রাজতন্ত্র ভেঙে গিয়েছে, দাস প্রথা বিপুপ্ত হয়েছে, উন্নত চিকিৎসা, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, গণমানুষের অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ও সাম্য ব্যবস্থার পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলো অন্যান্য মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে নির্মম শাসন ও শোষণ চালিয়েছে, ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে; হত্যা জিঘাংসার হাহাকার মাটিতে কান পাতলে এখনো পাওয়া যায়। দুটো বিশ্বযুদ্ধে রক্ত দিয়ে প্রযুক্তির ঋণ আমাদের শোধ করতে হয়েছে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে মূল ভূমির মালিকরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
প্রিন্ট মেশিন, বিদ্যুৎ বা ইঞ্জিন আবিষ্কারের সময় আমরা কি জানতাম এর ভবিষ্যৎ ফলাফল এতটা করুণ, ভয়াবহ ও রক্তাক্ত? আগে থেকে জানলে আমরা কি নতুন আবিষ্কৃত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও দর্শনকে স্বাগত জানাতাম, নাকি প্রতিরোধ করতাম? এরও কোনো সঠিক উত্তর নেই। যারা ইতিহাস জানেন তারা মানবেন, এ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত ইন্টারনেট মূলত মিলিটারি টেকনোলজি। এর ইতিবাচক প্রভাব যেমন সুদূরপ্রসারী; তেমনি এর দ্বারা মানুষের চিন্তাকে নজরদারি কার হচ্ছে রাষ্ট্রের তরফ থেকে। চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণও করা যায়। চ্যাটজিপিটিও প্রকারান্তরে এই মিলিটারি প্রযুক্তির উন্নততর সংস্করণ। এর দ্বারা দৃশ্যত প্রযুক্তি, দক্ষতা, সুযোগ-সুবিধা, কর্মসংস্থান, শিক্ষাব্যবস্থা, বিনোদন, চিকিৎসা, গড় আয়ু, ইনকাম, জিডিপি, হ্যাপিনেস ইনডেক্স, অবসর, যোগাযোগ, খাদ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদির সুযোগ-সুবিধা বাড়বে নিশ্চিত। তবে পঞ্চাশ বা ষাট দশকে শুরু হওয়া আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বৈশ্বিক ফলাফলের চূড়ান্ত রূপটা ঠিকভাবে বুঝে উঠতে আরও সময় লাগবে।
চ্যাটজিপিটির মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুনিয়ায় মানুষের ভবিষ্যৎ কী? সায়েন্স ফিকশন নভেল বা মুভিতে রোবট কর্র্তৃক দুনিয়া দখলের যে ভয়ংকর গল্প দেখি তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কেননা রাজনৈতিকভাবে মানুষ এমন কিছু তৈরি করবে না যা তার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ‘মানবিক অনুভূতি’ ব্যাপারটা জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা শতকোটি বছর নানা বিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গিয়ে মানুষ অর্জন করেছে। ফলে সৃজনশীল কর্মের দক্ষতা এআইএর অর্জন করা প্রায় অসম্ভব। কেননা এ ট্রান্সফরমার তাই তৈরি করতে পারে যা আগে মানুষ করে রেখেছে। এ কারণেই অটোপাইলট দিয়ে চালানো বিমানে বৈমানিক লাগে। কেননা নতুন তৈরি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা এদের নেই।
কিন্তু অদৃশ্যত দুনিয়ার ক্ষমতা কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করে ফেলবে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি। এ ধরনের এআইয়ে বিনিয়োগ করেছে জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। অল্প কিছু মানুষ বা গুটিকয় করপোরেট মিলে একক (সিঙ্গুলার) এক দুনিয়া তৈরি করতে চাইছে। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই একই ভাষায় কথা বলবে, একই বিষয় পছন্দ করবে, একই দলকে ভোট দেবে বা দেওয়ার প্রয়োজনই হয়তো হবে না। রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামো ধীরে ধীরে মাইক্রোসফট, টুইটার, ফেসবুক, গুগলসহ এমন গুটিকয় করপোরেটের হাতে চলে যাবে। মূলত মেশিনের গুটিকয় পরিচালকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সব। লক্ষ করবেন, চ্যাটজিপিটিতে সূচনা থেকে বিনিয়োগ করেছে লিংকডইন, পেপল, টেসলা, স্পেস এক্স ও টুইটার, আমাজন, মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। গুগল ও ফেসবুকের নিজস্ব বিনিয়োগ আছে এআইতে। ফলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে দুনিয়ার ক্ষমতা কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করবে। এআই সাঁজোয়া সোশ্যাল মিডিয়া নিজের শক্তি পরীক্ষা করেছে ২০১০ সালে আরব বসন্তের ভেতর দিয়ে। বসন্ত শুরু হয় তিউনেশিয়ায়, এর ফুল ঠিকই ফুটেছে লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইনে। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাকবোনে ব্যবহৃত অ্যালগরিদমের ব্যাপক ভূমিকা ছিল বলে সন্দেহ করা হয়। ফলে বেন আলি, গাদ্দাফি, হোসনি মোবারক, আলি আবদুল্লাহ সালেহ দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা গদি রক্ষা করতে পারেনি। এই এআই তার শক্তির পরীক্ষা দেখিয়েছে ২০২০ সালের আমেরিকা নির্বাচনে। টুইটার বা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও একহাত দেখিয়েছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এমন ক্ষমতা আগে দেখা যায়নি। যতই দিন যাবে গুটি কয়েক করপোরেট দুনিয়ার মানুষের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেবে। চ্যাটজিপিটিও এই একই খেলার অংশ সম্ভবত। সেনাবাহিনী পূর্বে রাষ্ট্র রক্ষা করত, এআইর মতো মিলিটারি টেকনোলজি এখন প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ঠিক রাখবে। চ্যাটজিপিটি বিশ্বস্ত শিক্ষক হয়ে উঠবে। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে মনের খবর জেনে যাবে। একসময় আস্থা অর্জিত হওয়ার পর আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে যা শেখাবে ও জানাবে তা দিয়ে অবচেতনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। চ্যাটজিপিটির বাইরের আর কোনো জ্ঞানই আমাদের আর বিশ্বাস হবে না। বৈচিত্র্যপূর্ণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে মানুষের অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হবে। আর তখনই মানুষ হয়ে উঠবে জৈব-মেশিনের এক সত্তা যার স্বাধীন কোনো অস্তিত্ব নেই। ইলন মাস্ক তার কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এআই নিউক্লিয়ার বোমা থেকেও ভয়াবহ।’
লাখ লাখ বছরে দুনিয়ায় মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন ও প্রাপ্তি হলো তার স্বাধীনতা। এ যেন শেষ না হয়ে যায়। দুনিয়ার মানুষ যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তার সমাধান প্রযুক্তি ও দর্শন দিয়ে করা হয়ে থাকে। ফলে এআই বা চ্যাটজিপিটি থেকে তৈরিকৃত সমস্যার সমাধান প্রযুক্তি, চিন্তা ও সৃজনশীলতা দিয়েই করতে হবে। চ্যাটজিপিটি বা এআইয়ের দুনিয়ায় মানুষ মানবিকভাবে আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। তার সৃজনশীলতা ও চিন্তাকে বাস্তবায়ন করার মতো অতি দক্ষ টুলস থাকবে হাতে। ফলে আশা করি মানুষ তার স্বাধীনতার রক্ষার পক্ষে এ প্রযুক্তি ও তার স্বাধীন চিন্তা নিয়ে বিপুল বিক্রমে দাঁড়াবে। মানুষের স্বাধীনতার জন্য তার পাশে যা দাঁড়িয়ে থাকবে তা একটা মেশিন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।