
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫২তম অধিবেশনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এক ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ আহ্বান জানান।
জেনেভা থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সমস্যার গভীরে গিয়ে টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে মিয়ানমারের ব্যর্থতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার হতাশা ব্যক্ত করেন।
ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ক্রমবর্ধমান অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া এবং সেখানে অপর্যাপ্ত মানবিক সহায়তার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা সংকটের ন্যায়সংগত সমাধানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক হাইকমিশনার এবং একাধিক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ারের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার-সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন মেকানিজমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ-সংক্রান্ত কর্মসূচিতে সহায়তা দিয়ে আসছে।’ তিনি মানবাধিকার সুরক্ষায় সর্বজনীনতা ও প্রতিটি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কভিড-১৯ উত্তর বিশ্বে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য-জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এতে করে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লাঘবের উদ্দেশ্যে গৃহীত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপগুলো ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে অবদান রাখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি সব অভিবাসীর মানবাধিকার রক্ষার ওপরও জোর দেন।
ধনী দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করালেন মোমেন : জি-২০ দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোকে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ আহ্বান জানান মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মন্ত্রী তার বক্তব্যে জি-২০ দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল জোগানোর অনুরোধ করেন।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অবদান রাখছে। তিনি রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তার হুমকি এড়াতে দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের আগে দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রাঙ্গণে ড. মোমেনকে স্বাগত জানান।
বিকেলে মোমেন সাইডলাইনে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনা, স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার লি দো-হুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার এবং চলমান ভূরাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পান।
এক দশক আগে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ কংগ্রেস নামের একটি রাজনৈতিক দল। শুরুর দিকে কিছু কর্মসূচি থাকলেও ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর রাজনীতির মাঠে তেমন কোনো সক্রিয়তা নেই দলটির। কালেভদ্রে কিছু ইস্যুতে ঢাকায় মানববন্ধন করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ দলের কার্যক্রম। একই অবস্থা নিবন্ধিত আরেক দল গণতন্ত্রী পার্টির। পুরানা পল্টনে ভাড়া করা ছোট একটি কক্ষে দলটির কার্যালয়। তবে সেখানে নেই কোনো সাইনবোর্ড বা নামফলক।
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমন কিছু দল সরব হতে শুরু করেছে। কোনো কোনো দল ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছে। যদিও বছরজুড়ে দলগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না রাজনৈতিক অঙ্গনে। তারা দেশের জনগণের কোনো চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে না, যদিও দলগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। এ অবস্থায় গত বছর অদ্ভুত নামের প্রায় শখানেক দল নিবন্ধন চাওয়ার পরই বিষয়টি আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্যমতে, দেশে এখন ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ দলের অবস্থায়ই কাগজে আছে কাজে নেই অবস্থা। কয়েকটি দল ইস্যু বা দিবসভিত্তিক কর্মসূচি দিলেও তা পালন করার মতো লোকবলই নেই তাদের। আবার ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কয়েকটি বিদেশের ইস্যু নিয়ে মাদ্রাসা বা মসজিদকেন্দ্রিক কিছু কর্মসূচি করলেও জাতীয় ইস্যুতে তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। ৯০ শতাংশ দল ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্র সংগঠনও অকার্যকর।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মতো দলগুলোর গত কয়েক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়।
কয়েক দলের কার্যালয়ে গিয়ে বা ফোনে যোগাযোগ করা হয় নেতাদের সঙ্গে। তবে কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় সন্ধান মেলেনি বেশ কয়েকটি দলের কার্যালয়ের। এমনকি যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে তাতেও কয়েকটি দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিটি নাগরিকের রাজনীতি করা, সংগঠন করা, রাজনৈতিক দল করার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। বাংলাদেশের যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা বেশিরভাগই ক্রিয়াশীল নয়। ফলে দেশের রাজনীতির সংস্কৃতিতে যেমন এর প্রভাব পড়ছে। নিবন্ধনের এমন প্রক্রিয়া চলমান থাকলে অনেক ক্রিয়াশীল দলও রাজনীতি থেকে ছিটকে যাবে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিবন্ধন থাকার পরও যেসব দল রাজনীতির মাঠের সক্রিয় না, নির্বাচন এলে এক ধরনের জট সৃষ্টি করে। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তাদেরও বেগ পেতে হয়। আমার মনে হয় আরও বেশি যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়া উচিত। ঢালাওভাবে নিবন্ধন না দিয়ে কমিশন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এসব করে কি না? তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে এসব দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কমিশনের সেই ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোর মিনিমাম শর্ত পালন করা উচিত। অন্যদিকে অনেক দল আছে যারা ক্রিয়াশীল কিন্তু দীর্ঘ সময় তারা চেষ্টা করেও নিবন্ধন পাচ্ছে। না হলে দল ও রাজনীতির প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হবে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর বাংলা মোটরে হ্যাপি রহমান প্লাজায় (চতুর্থতলা) বাংলাদেশ কংগ্রেসের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক কক্ষবিশিষ্ট রুমে দুটি টেবিল ও ৮-১০ চেয়ার রয়েছে। মাঠের রাজনীতিতে সংক্রিয় না থাকলেও গত ১০ বছরে দুটি কাউন্সিল করছে দলটি। আগামী মাসে তৃতীয় কাউন্সিল হবে। তাছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায় তারা।
অফিসে দলের কোনো শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের পাওয়া না গেলেও কথা হয় দপ্তর সম্পাদক তুষারের সঙ্গে। তিনি জানান, মাঝেমধ্যে এখানে দলের নেতাকর্মীরা আসেন। এখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। বর্তমানে কেন্দ্রের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। আমাদের ৫৪টি জেলা ও ২০০ উপজেলায় কমিটি রয়েছে। শিগগিরই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তবে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনেক জেলায় দলটির কমিটি থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। অনেক জেলায় আবার দলীয় অফিসও নেই। বরগুনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. ওলিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোকবল কম থাকায় জেলাপর্যায়ে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। তবে বিভিন্ন দিবস ধরে কর্মসূচি পালন করা হয়।
দলটির মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, দল ছোট বলে আমরা মিডিয়া কাভারেজ পাই না। তাই আমাদের দলের প্রচার কম। এখন আমাদের ৪০টি জেলা কমিটি রয়েছে। নিবন্ধিত দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বলা থাকলেও মাত্র কয়েকজন নারী প্রতিনিধি রয়েছে দলটিতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নারীদের বিষয়ে যে শর্ত দিয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। নারীরা রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা চাইলে নারীদের দলে ভেড়াতে পারছি না। তবে আমাদের চার-পাঁচ নারী প্রতিনিধি রয়েছে।
একই অবস্থা আরেক রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী পার্টির। পুরানা পল্টন, ইশরাত টাওয়ার ১০ তলা ভবনটির ছোট একটি কক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওই ভবনে গিয়ে দেখা গেছে দলীয় কোনো সাইনবোর্ড নেই। ১০ তলায় ছোট একটি রুম থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইস্যুভিত্তিক কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বিভিন্ন দিবস ধরে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবে সেসব কার্যালয়ের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
কেন্দ্রের বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই। ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় কমিটি রয়েছে তারাও নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী। তিনি বলেন, আমরা ১৪ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ। বড় কোনো কর্মসূচি আমাদের নেওয়া হয় না। নানারকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে কিছু কর্মসূচি হয়। তবে কেন্দ্রের উদ্যোগে দিবস ধরে কর্মসূচি হয়। আমাদের ২৫-৩০ জেলায় কমিটি রয়েছে। সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্থায়ী কোনো অফিস নেই। ভাড়া নিয়ে কার্যালয় পরিচালনা করতে হয়। ভবন কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ম রয়েছে। ফলে সাইনবোর্ড লাগানো যাচ্ছে না।
নিবন্ধন থাকলেও কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের। নির্বাচন কমিশনে তথ্যানুযায়ী, দলটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত স্বজন টাওয়ার-২। ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, এরকম দলের অফিস আছে বলে জানা নেই। তাদের কারও ফোন নাম্বার থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নাম্বারগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার তোপখানা রোড। ৫০০-৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি ভাড়া কক্ষে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলের তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিও না থাকলেও জোটের কর্মসূচিতে সক্রিয় দলটি। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে নিয়মিত বিবৃতি ও প্রেস রিলিজ নির্ভর দলটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে মাত্র কয়েকটি জেলায় দলীয় কার্যক্রম ও অফিস রয়েছে। নারীকর্মীও হাতেগোনা কয়েকজন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কোনো দলের পক্ষেই ইসির শর্তগুলো শতভাগ মেনে চলা সম্ভব নয়। তবে মেজর যে শর্ত রয়েছে আমাদের দল তা পূরণ করেছে। ইসি যেসব শর্ত দিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান পরিপন্থী। রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করা উচিত।
২০১৩ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট। নিবন্ধন পাওয়ার পর দলটির কোনো কার্যক্রম নেই। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে দলটির কোনো সাইনবোর্ড বা অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া দুটি টেলিফোন নাম্বারেও তাদের পাওয়া যায়নি।
একই অবস্থা ইসলামি দলগুলোর। নির্বাচন কমিশনে তথ্যানুযায়ী ১০টি ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে। ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে এসব দলের সরব উপস্থিতি থাকলেও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি নেই। বিবৃতি আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে দলীয় কার্যক্রম। অনেক দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্থানীয় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দল মূলত মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল পরিচালিত হয়। স্থানীয় মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আমাদের কার্যালয়। বছরের অর্ধেক সময় ছাত্র-শিক্ষকরা পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকছে। ফলে মাঠের রাজনীতিতে আমাদের বড় কোনো কাজ করতে পারছি না। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকি। কমিশনের শর্ত মেনেই দল চলছে।
নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে আগ্রহী দলটিতে যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন, যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে। দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সংবলিত দলিল থাকতে হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখা, বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না এসব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গত বছর অক্টোবরে নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে চলছে কি না সে তথ্য চেয়ে এসব দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে সব দলই নির্বাচন কমিশনে তথ্য সরবরাহ করেছে। তবে সেসব এখন যাচাই-বাছাই চলছে।
এর আগে কেএম নুরুল হুদা কমিশনও দলগুলো শর্ত পালন করছে কি না, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি এবং ২০২১ সালে জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে।
এসব নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত মেনে দল পরিচালনা করছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছিলাম। সব দল তথ্য জমা দিয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে। কোনো অসংগতি পেলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
আবাসিক হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে তিন দিনের ব্যবধানে দুই দফা সংঘর্ষে জড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের একটি উপপক্ষের দুই গ্রুপ। এ ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ দুটি হল থেকে ৯টি রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে। কিন্তু এসব অস্ত্র উদ্ধারের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। আটক বা গ্রেপ্তারও হয়নি কেউ।
শুধু হলের কক্ষ দখল নয়, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গত এক মাসে অন্তত পাঁচবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আগে কয়েকটি ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িতদের যেমন বিচার হয় না, তেমনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে তারাও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেপরোয়া কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিরা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন এবং অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকা-ের কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমীন দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। এর মধ্যে ১৭ জুলাই যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক নারী শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। আগস্ট মাসে অন্য মামলাটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এ দুটি মামলা এখনো তদন্তাধীন।
অথচ গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত বছর ১৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে ভিত্তিক উপপক্ষ বিজয় ও সিএফসি, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সিক্সটি নাইন ও এপিটাপ, ৫ সেপ্টেম্বর সিএফসি ও সিক্সটি নাইন, ২ ডিসেম্বর রাতে ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও বিজয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুল ইসলাম জানান, কতটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সে হিসাব তাদের কাছে নেই। একটি গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে গত বছর ১৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। ওই তিনটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তথ্যমতে, গত ৩৩ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি হত্যাকা- ঘটেছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা রাজনৈতিক কারণে। খুনোখুনির এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অসংখ্য তদন্ত কমিটি গঠন করলেও রিপোর্টগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার, মামলা করলেও ৩০ বছরে এসব হত্যাকা-ের একটিরও বিচার শেষ হয়নি। ২২ বছর ধরে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা চৌধুরী হত্যাকা-ের বিচার। কিন্তু ২১ খুনের মামলার একটিরও নিষ্পত্তি বা রায় হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, মারামারি নিরসনে তাদের রাজনৈতিক ‘গুরুদের’ও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নাছির সমর্থকদের নয়টি ও নওফেল সমর্থকদের দুটি উপপক্ষ।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কোনো অনুসারী নেই বলে দাবি করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। গত রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শিক কারণে মারামারি নেই। মূল হচ্ছে আসন সংকট। কারণ অনেকের ছাত্রত্ব নেই। তারা হলের আসন দখল করে আছে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিতে থাকছে। অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।’
এমফিল বা পিএইচডির শিক্ষার্থী ছাড়া ১০ বছরের ঊর্ধ্বে একজন অছাত্র কেন হলে থাকবে এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থাকার কারণে তারা পেশিশক্তি দেখাতে কক্ষ দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। র্যাগিং করছে। মূল অপরাধ ঢাকার জন্য বা নিজেকে সেফ করার জন্য তারা অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের অনুসারী বলে প্রচার করছে।’
একমাত্র শিক্ষকরাই এ সংকট নিরসন করতে পারেন, এমন দাবি করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি হল থেকে অছাত্রদের বের করে দিলে সংঘাত, মারামারি ৯০ শতাংশ কমে যাবে। ব্যক্তিগত অনুসারী সৃষ্টির রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না এবং অনুসারী পরিচয়ে যারা অপরাধ করেছে বা করছে, তাদের পক্ষে থাকা বা সমর্থন আমি কখনোই করিনি এবং আগামীতেও করব না।’
সম্প্রতি ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের পরও থানায় মামলা না করা প্রসঙ্গে চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মারামারি, সংঘাতের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। থানায় মামলা বা জিডি করা না হলেও সব ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তিনি জানান, ২০২১ সালের অক্টোবরে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে ছাত্রলীগের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তবে এর মধ্যে আটজন মুচলেকা দেওয়ায় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ১১ জানুয়ারি সাংবাদিক হেনস্তা, আবাসিক হলে ভাঙচুর ও ছাত্রী হলে মারামারিসহ ছয় ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের ১৭ নেতাকর্মীসহ ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
একাধিকবার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরও মারামারি ও হানাহানি বন্ধ করতে পারেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আরও দুই দফা রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রশিবির বা ছাত্রদলের দৃশ্যত কোনো রাজনৈতিক কর্মকা- নেই। এখন ছাত্রলীগ নিজেরাই নিত্যদিন মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়োগ নিয়ে নানা দুর্নীতির সংবাদ, ফোনালাপ গণমাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে। যদি প্রশাসনিক দুর্বলতা থেকে থাকে তাহলে এর সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছে ছাত্রলীগ নামধারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চেইন অব কমান্ড নেই। নিজেদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখে পুলিশ হতাশ। হাটহাজারী থানা শুধু কি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের জন্য? এ থানার তো অনেক কাজ আছে। যদি সরষের মধ্যে ভূত থাকে, ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়, তাহলে ছাত্রলীগের সংঘাত থামাতে পারবে না। এসব রোধ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগে নিজেকে আস্থায় আনতে হবে। প্রশাসন যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় সেই সুযোগ নেবে বারবার সংঘাতে লিপ্ত ছাত্রলীগ নামধারীরা।’
চট্টগ্রাম আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে কিছু স্বার্থবাদী লোক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশকে ব্যবহার করছেন। ছাত্রলীগ নামধারীরা নিজেরা অপকর্মের দায় থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার অনুসারী বলে প্রচার করছে। আমি জানি না যেসব নেতার সমর্থক বলে তারা প্রচার করছে সেসব নেতারা তাদের সমর্থন দিচ্ছে কি না।’
গন্তব্য কমলাপুর রেলস্টেশন। গুগল ম্যাপ জানাচ্ছে বাসে যেতে সময় লাগবে ৩৫ মিনিট আর হেঁটে এক ঘণ্টা। বাসে উঠে শাহবাগের জ্যাম দিয়ে শুরু। এরকম আরও কয়েকবার জ্যাম ও সিগন্যাল পেরিয়ে ১ ঘণ্টা ১১ মিনিট পর মতিঝিল পৌঁছলাম। জ্যামে আর বসে থাকতে ইচ্ছে হলো না। তাই এখানে নেমে গিয়ে বাকিটা পথ হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যখন কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছলাম তখন বিকেল ৪টা ৩ মিনিট।
স্টেশনে ঢুকতেই চোখে পড়ল বড় করে লেখা ‘ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন’ সাইনবোর্ডে। মুহূর্তেই থমকে দাঁড়ালাম। ভুল করে অন্য কোনো স্টেশনে চলে এলাম না তো। জানি না আমার মতো এমন করে আর কেউ বিভ্রান্ত হন কি না। তবে যারা প্রথমবার আসেন তাদের নিয়ে এরকম বিভ্রান্তি হলেও হতে পারে। আসলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনটি বহুকাল ধরেই কমলাপুর রেলস্টেশন নামেই পরিচিত।
মনের দ্বিধা দূর করে পা বাড়ালাম। একটু সামনে এগোতেই কানে এলো রিকশা, বাইক আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ড্রাইভারদের চিল্লাচিল্লি। এই মামা কই যাবেন, মামা চলেন যাই। চালক-যাত্রী দেনদরবার। ঢাকা শহরে বাসিন্দাদের দৈনন্দিন সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাড়া বিড়ম্বনা। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এক যাত্রী স্টেশন থেকে মিরপুর-১ যেতে মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দেনদরবার করছেন। যাত্রীর দাবিঅ্যাপসে যা আছে তাই দেবেন। চালক পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেনএখন অফিস টাইম, রাস্তায় জ্যাম, তাই ভাড়া বেশি। ভাড়া নিয়ে অন্য যাত্রী ও ড্রাইভারদের দরকষাকষি পেছনে রেখে আমি সামনে পা বাড়ালাম।
এর মধ্যে চোখে পড়ল কয়েকটি ছেলে হাতে আমড়া, বরই, পেয়ারা, ঠান্ডা পানি হাতে নিয়ে, বিক্রির চেষ্টা করছে। কথা বলতে চাইলে একজন জানাল, এখন কথা বলার সময় নেই। ট্রেন আসছে। যাত্রীরা স্টেশন থেকে বের হবে। বিক্রি করতে হবে বলেই সে চলে গেল।
স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে পা ফেলতেই মনে পড়ল আজ ১ মার্চ থেকে নতুন পদ্ধতিতে টিকিট দেওয়া হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইনে এবং অফলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণে জরিমানা করা এবং ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলযাত্রীদের একটা বড় অংশ প্রযুক্তি সুবিধার বাইরে, তাদের অনেকের অনলাইনে বা অফলাইনে নিবন্ধন বা লগ ইন করার পদ্ধতি জানা নেই, ডিভাইস নেই, ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই। নতুন পদ্ধতিতে টিকিট নিয়ে মানুষের ভাবনা, অভিজ্ঞতা আর বিড়ম্বনার কথা শুনতে চাই।
এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তার অ্যানড্রয়েড মোবাইল নেই। মগবাজারের একটা কম্পিউটারের দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি কয়েকবার ট্রেনে যাতায়াত করেন। এখন ট্রেনে চড়তে হলে প্রতিবার তার কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যদিও পাশের যাত্রী জানালেন নতুন পদ্ধতিতে টিকিট চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন কালোবাজারিরা টিকিট নিলেও বিক্রি করতে পারবে না। যার যার এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ট্রেনে ভ্রমণের সময় এনআইডির ফটোকপি দেখাতে হবে, ফলে টিকিট কালোবাজারিদের দিন শেষ।
আজ টিকিট অন্যরকম। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছে। আশপাশে কোনো দালাল নেই। আরএনবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা যাত্রীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ১৪ নম্বর টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখতে পেলাম, টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত এক মহিলা কাউন্টারে এক তরুণকে, তার এনআইডি সঙ্গে আছে কি না জানতে চাইলেন। বুঝলাম, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। একটু সময় নিয়ে কয়েকবার কম্পিউটারে যাচাই করে জানালেন, আপনার নিবন্ধন হয়নি। ৭ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে আবার নিবন্ধন করে নিয়ে আসুন।
প্রায় প্রতিটি কাউন্টারের সামনে বাংলা ও ইংরেজিতে কাউন্টার টিকিটের জন্য ব্যবহারকারী নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেখা বিজ্ঞাপন আছে।
টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশে পা বাড়ালাম। প্রবেশপথেই দেখা মিলল ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক ও টিকিট কালেকটর গ্রেড-২ কর্মকর্তাদের তৎপরতা। টিকিট ছাড়া তারা কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। যাদের টিকিট নেই তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে বলা হচ্ছে। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম, টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোনো উপায়ে তারা কাউকে প্রবেশ করতে দেন কি না সেটা দেখার জন্য। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম তারা আজ সততার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে টাকা দিয়ে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে চায়নি বিষয়টা এমন নয়, তবে তারা প্রলোভনে রাজি হননি।
এর মধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখলাম প্রতিটি বগির দরজা আটকানো। বাইরে দাঁড়িয়ে অ্যাটেনডেন্ট টিটিইরা টিকিট চেক করে তারপর যাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব অনেক বেশি। ভিড়ের মধ্যে বাচ্চাদের টেনে নিয়ে যাওয়া কিংবা তুলনামূলকভাবে যাদের বয়স একটু বেশি কিংবা শরীর অসুস্থ তাদের জন্য এ যাত্রাপথ কিন্তু বেশ ভোগান্তির। প্ল্যাটফর্ম কাছাকাছি হলে সুবিধা হতোএমন কথা জানান আনোয়ার হুসেন নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, আপনাদের মতো বয়স থাকতে মাইলের পর মেইল হেঁটে গিয়েছি। দুই হাতে ব্যগ নিয়েও গিয়েছি। কিন্তু এখন শরীরের বল কমে এসেছে, সহজে ক্লান্ত হয়ে যাই।
কথা শেষ করতেই চোখে পড়ল লাল জামা পরিহিত এক কুলির সঙ্গে ঝগড়ার সুরে কথা বলছেন এক মধ্যবয়সী। তার সঙ্গে অনেকগুলো মালামাল। সেগুলো নিয়ে যেতে টাকার পরিমাণ নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের হুইসেল বেজে ওঠে। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা উঠে বসেছেন ট্রেনে। ট্রেনের চাকা ঘুরতে শুরু করে। আমি ফিরে যাই আমার গন্তব্যের পথে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রায় রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) চেয়ে করা আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রইল।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত আট বিচারকের আপিল বিভাগ রিভিউ খারিজের রায় দেয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অধ্যাপক তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে একই বিভাগের শিক্ষক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রয়েছে আবদুস সালাম ও নাজমুল আলমের।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, দণ্ডের বিরুদ্ধে এই দুজনের আইনি লড়াই শেষ হলো। তাদের সামনে এখন শুধু দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার
আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এ আবেদন খারিজ হলে কারাবিধি অনুযায়ী দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২ মার্চ (গতকাল) রায়ের জন্য ধার্য করে আপিল বিভাগ। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
মোর্শেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের মধ্যে সালাম রিভিউ আবেদন করেছিলেন। তার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ফলে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে দণ্ড ভোগ করতে হবে।
আপিল বিভাগের রিভিউ রায়ের সময় অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী ও শাকিলা রওশন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হাইকোর্টে রায় থেকে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের দণ্ড বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল গত বছরের ৫ এপ্রিল খারিজ করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এতে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজাও বহাল থাকে। বিচারিক আদালতের রায়ে এ চারজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর একটি আদালত রায়ে চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেয়। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এবং নাজমুল ও আবদুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ নিখোঁজ হন। দুদিন পর শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাতে অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন মুনশি এবং সালামের আত্মীয় নাজমুলকে আসামি করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করার কাজে লাগান। তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এসব প্রতারণা প্রমাণিত হয়।
সেই অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাহেরকে বাসায় হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের কাছে শেষবার ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৪ থেকে ঘরের মাঠে টানা ছয় সিরিজ জয়ের সাফল্য ছিল টাইগারদের। ২০১৬তে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ এ সিরিজ হারের পর গত ডিসেম্বরে ভারতকে হারানো পর্যন্ত টানা সাত সিরিজ জয়ের তৃপ্তি আছে। সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ড আবারও বাংলাদেশের দুর্গ ভাঙার পথে এগিয়ে আছে। শেষবার প্রথম ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয়টিতে জিতে বাংলাদেশ সিরিজে সমতা আনে। তবে চট্টগ্রামে হেরে সিরিজ আর হাতে তোলা হয়নি বাংলাদেশের। ঠিক একই অবস্থা আবার। মিরপুরে আজ জয়ে না ফিরলে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে ওয়ানডে সুপার লিগে হোমে অক্ষত থাকার রেকর্ডও ভেঙে যাবে। অবশ্য আজ বাংলাদেশ জিতলে হোমে অজেয় থাকার রেকর্ড ধরে রাখার আশা টিকে থাকবে।
বাংলাদেশ সবশেষ নিজেদের ইতিহাসের সাফল্যের বছরেই প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও সিরিজ জিতেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ২০১৫ সালে প্রথম ম্যাচ হারের পর টানা দুই ম্যাচ জিতে ২-১ এ সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ওই সিরিজ বাদে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেও লড়াইয়ে ফেরার দারুণ নজির গড়ে বাংলাদেশ। সেবার সিরিজে ২-০তে পিছিয়ে পড়েও শেষ তিন ম্যাচ জিতে ৩-২ এ সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সিরিজে টিকে থাকতে কাল শেষ মুহূর্তে দলে পরিবর্তন এনেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিপিএল ভালো করা শামিম হোসেনকে যুক্ত করায় বাংলাদেশ দল এখন ১৫ জনের। আগে টি-টোয়েন্টি দলে থাকা যুব বিশ্বকাপজয়ী শামিম এই প্রথম ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন। নির্বাচকরা বলছেন চোটগ্রস্ত দুজনের ব্যাকআপ হিসেবে আনা হয়েছে তাকে। তার খেলার সম্ভাবনা কম। খেললেও অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে নামতে পারেন।
প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমই বেশি দায়ী থাকবেন। দুজনই স্পিনারদের বিপক্ষে সøগ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। মিরপুরের উইকেট বুঝে খেলার অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। এ নিয়ে মুশফিক চিন্তিত থাকলেও, সাকিব চিন্তায় ছিলেন বলে মনে হয় না। ম্যাচের পরদিন ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও মুশফিক দলের কোচিং স্টাফদের নিয়ে গতকাল চলে আসেন মিরপুরে। করেছেন ব্যাটিং অনুশীলন। প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ১৬ রানে আউট হওয়ার ভুল নিয়ে কাজ করেছেন অবশ্যই। অনুশীলনের এক পর্যায়ে নেট বোলারের থ্রোতে বল হাতে লাগায় ব্যথাও পেয়েছেন। অবশ্য বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন মুশফিকের চোট গুরুতর নয়। এদিকে সাকিব কাল ম্যাচে আগের দিন সন্ধ্যায় ছিলেন নিজের স্পন্সর কাজ নিয়ে ব্যস্ত। টিম হোটেল ত্যাগ করে একটি ব্র্যান্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এ কারণেই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন কাল সন্ধ্যায় বিরক্তি নিয়েই উপস্থিত হয়েছিলেন টিম হোটেলে।
ক্রিকেটারদের ভুল শটে আউট হওয়াই প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হারের কারণ। পাশাপাশি বিপক্ষে একজন ডাভিড মালান থাকলে চ্যালেঞ্জটা বেশি। প্রথম ম্যাচে জস বাটলার, জেসন রয়দের মতো বিধ্বংসী ব্যাটারদের দ্রুত ফেরাতে পেরেছেন বোলাররা। কিন্তু মালানকে ফেরাতে পারেননি। গত ১০ বছরে প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএল মিলিয়ে বাংলাদেশে ৫০টির মতো ম্যাচ খেলা মালান প্রথমবার দেশের জার্সিতে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে নামেন। আর প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন। এটা অবশ্যই ওই ৫০ ম্যাচ খেলার ফল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রথম ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে তুলেছেন দলকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও তাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মালান। তাকে দ্রুত ফেরানো গেলেই বাংলাদেশের অর্ধেক কাজ এগিয়ে থাকবে।
কোচ হাথুরুসিংহের অধীনে স্পিন শক্তি নিয়েই শুরু করেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের পিচে স্পিন খেলা রপ্ত করা মালান সেই শক্তিকে দমিয়ে দিয়েছেন। আজও একই পরিণতি হলে সাত সিরিজ পর দেশের মাটিতে সিরিজ হারের স্বাদ নিতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’