
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক সফলভাবে শেষ হওয়ায় জয়শঙ্করকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বৈঠক হয়। গতকাল রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ব্রাজিল, মেক্সিকো, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এবং বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান মোমেন। এ ছাড়া এসব বৈঠকে বাণিজ্য ও সম্পর্ক আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় মেক্সিকোর দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান।
‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ থিমের ওপর ভারতের সভাপতিত্বে দিল্লিতে গত বুধবার রাতে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশে^র প্রধান অর্থনৈতিক জোটের (জি-২০) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনব্যাপী বৈঠক। গত বৃহস্পতিবার মূল আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এ বৈঠকে যোগ দেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ভারত জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব পায়। আগামী ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। এরই মধ্যে এই সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
ভারতে তিন দিনের সফর শেষ করে গতকাল রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে। ডলার সংকটে অর্থনীতিও বেকায়দায়। অন্যদিকে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগ সব মিলে জাতীয় নির্বাচনের আগে ভাবমূর্তির সংকট দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার।
এ অবস্থায় সরকার ও দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চলতি বছর কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মনে করেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি আরও পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। সে কারণে মানুষকে খুশি করতে হবে। আর সে জন্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটের মাঠে মানুষকে চমক দিতে চান সরকারপ্রধান। তার এমন সিদ্ধান্তে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজনকে শাস্তির মুখোমুখি পড়তে হতে পারে।
চলতি বছর জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে আরও কিছু কাজ করতে চায় সরকার; বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে যে বেকায়দায় ফেলেছে, তা পুষিয়ে নিতে চায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন সুবিধা দেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা এবারের বাজেটে স্বল্প পরিসরে হলেও বাস্তবায়ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে সরকারের। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা করেছেন। কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, সে জন্য পরামর্শও চেয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু দেশের টাকা বিদেশে পাচার। পাচার রোধ করতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা ও আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, এপ্রিল থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের টাকা বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে এমন আলোচনা আছে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে গেলে নির্মোহভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেটা কার্যকর করতে হবে। করা গেলে ভোটে তার সুফল মিলবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজ ধরতে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও কার্যকর করে তোলা হচ্ছে; বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আরও জোরদার ও দৃশ্যমান হবে নির্বাচনী বছরে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশে টাকা পাচারকারীরা দেশের শত্রু। অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধীর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার সব সময় আপসহীন। অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যারাই রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে আপস করা শেখ হাসিনার নীতি নয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেছেন, “টাকা পাচারকারীদের তালিকা দেন, ব্যবস্থা নেব।” আমি মনে করি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হবে।’
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এমন কিছু অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হবে, যা ভোটের মাঠে সরকার ও আওয়ামী লীগকে আলোচনায় রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আরও মজবুত করে তুলবে। তার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশংসিত হবে তেমন কিছু আলোচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নীতি অনুসরণ করা হবে।
সরকারের এ পরিকল্পনার কথা সর্বশেষ দলীয় এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেও জানিয়েছেন। ওই কর্মসূচিতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হচ্ছেন! কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই সাবধান ও সতর্ক হয়ে যান। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা তারই ইঙ্গিত ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য, এমনই দাবি করেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও।
কঠোর কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকম-লীর একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার যারা করেছেন, প্রথমেই তাদের বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ যাবেন সরকারপ্রধান। তারা বলেন, অপরাধীরা দলের হোক আর যত বড় প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিছপা হবেন না টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেন্দ্রীয় ওই নেতারা আরও বলেন, অর্থ পাচারের বিষয়টি এই মুহূর্তে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ঊর্ধ্বমুখী হবে। মাদক কারবারি ও এর সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান জোরদার করা হবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এ দুটি জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রূপরেখা তৈরির কাজও হয়েছে। অভিযান শুরু হবে সেখান থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত বা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারাও শাস্তির আওতায় আসবেন। এ ক্ষেত্রে কে দলীয় বা দলীয় নয়, সে বিবেচনা করা হবে না।
আওয়ামী লীগের পদপদবি ব্যবহার করে ক্ষমতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন দলের এই অংশকেও শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে হাঁটবে সরকার। গত এক যুগে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, জনপ্রিয়তার রাস টেনে ধরেছেন সেসব আগাছা-পরগাছা উপড়ে ফেলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘দানব’ বনে যাওয়া কিছু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এমন আভাসও পাওয়া গেছে। তবে ‘দানব’ বনে যাওয়া সংসদ সদস্যদের সবচেয়ে বড় শাস্তি হবে মনোনয়ন না দেওয়া।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যেসব উন্নয়ন শেখ হাসিনার সরকার করেছে সেসব। পাশাপাশি কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি চমক সৃষ্টি করবে ভোটের মাঠে। তারা বলেন, ভোটের আগে ভোটের মাঠে অনেক চমকের মধ্যে এটিও অন্যতম। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখবে তেমন পরিকল্পনা থেকে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যায়-অনিয়মকে কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্রয় দেননি। এ ক্ষেত্রে নিজের দল ও অন্য দল এ বিবেচনাবোধ নেত্রী (শেখ হাসিনা) করেন না।’ তিনি বলেন, অপরাধীর পরিচয় তার কাছে অপরাধীই।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায় (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আরিফুর রহমান (২৮) নামে এক যুবক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশ সদস্য, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬০ জন। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসান (২৩) নামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দুপুর ২টার পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সংঘর্ষের শুরু হয়; যা ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায়, চলে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। সংঘর্ষের সময় তৌহিদি জনতার ব্যানারে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
রাত ৮টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সালানা জলসা আয়োজনের অনুমতি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে শহরে মাইকিং করার পর উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৭ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে, সেটা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
গতকাল জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড় সিনেমা হল রোডসহ চৌরঙ্গী এলাকায় একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তাদের সঙ্গে এলাকার বাইরের অচেনা অনেক মানুষকে যোগ দিতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা পাল্টা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। তখন পুলিশ পিছু হটে। পরে বিক্ষোভকারীরা সিনেমা হল রোডে আহমদিয়াদের মালিকানাধীন দুটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল বের করে সড়কে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া করতোয়া নদীর পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় সাতটি মোটরসাইকেলও পোড়ানো হয়। একই সময় ধাক্কামারা গোল চক্করে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সেখানেও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চলে। পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর ও আগুনের ছবি তুলতে গেলে এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান টুটুলকে বেধড়ক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া আরও কয়েকজন সাংবাদিককে ছবি তুলতে গেলে লাঞ্ছিত করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের অদূরে আহাম্মদনগর গ্রামে আহমদিয়াদের জলসা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হলে চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের সিনেমা হল সড়কে পিছু হটে। বিকেলে করতোয়া নদী হেঁটে ও নৌকায় পার হয়ে কিছু মানুষ আহম্মদনগরে ঢুকে আহমদিয়াদের অন্তত ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাতে আগুন জ¦ালিয়ে দেয়। এ সময় তাদের হামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ধাক্কামারা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল একদল জনতা। এ সময় আহম্মদনগর এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলছিল বলে জানা গেছে। হামলার ঘটনায় শহরের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা যোগ দেন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন।
সংঘর্ষে নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন। সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী আরিফুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনরা জানান, দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রংপুরে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল আলম দেশ রূপান্তরকে জানান, নিহত আরিফুরের মাথায় গুলির আঘাত ছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কুপিয়ে হত্যা করা জাহিদ হাসানের বাড়ি নাটোরের বনপাড়া এলাকায় বলে জানা গেছে। পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসানকে করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা গতকালের সহিংসতায় দুজনের মৃত্যুর তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানার এসআই কাউয়ুম আলী, ভবেশ চন্দ্র পাল, ট্রাফিক পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম, এএসআই মো. আবদুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আল-আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামানের নাম পাওয়া গেছে। আহত অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলে কর্মরত মাহমুদ আহমাদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হামলা করে অনেককে আহত করা হয়েছে।
রাত ৯টার দিকে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
কাছাকাছি সময়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সালানা জলসা আয়োজনের অনুমতি বাতিল করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ ছাড়া শহরে পর্যাপ্ত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তবে গতকাল দুপুরে মিছিল বের করার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অস্বীকার করেছেন। মসজিদ থেকে লোকজন নিজেরাই মিছিল বের করে বলে তাদের দাবি।
সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে সিদ্ধিরগঞ্জে বিক্ষোভ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আহমদিয়াদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল বাদ জুমা ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি বাংলাদেশের’ উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। কমিটির বাংলাদেশের আমির আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সির নেতৃত্বে সমাবেশে পঞ্চগড়ে সালানা জলসা বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বক্তারা।
দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণের ক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি কাজে লাগাতে পারছে না। এমনটাই মনে করছেন দলটির ওপরের সারির কয়েকজন নেতা। তাদের কারও কারও মধ্যে দলের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েও হতাশা আছে। তারা বলছেন, বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে সরব থাকুক তা দেখতে চায় মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের অংশ হিসেবে জনগণ এগিয়ে রয়েছে, কিন্তু জনগণের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি।
অবশ্য দলের মহাসচিব বলছেন, রাজনীতির বাস্তবতা অনেক কঠিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নয়াপল্টনে দলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর এক দফার কর্মসূচি আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এক দফা থেকে সরে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হলো। দেশের জনগণ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বিএনপি। বিএনপি আদৌ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের এক দফার আন্দোলনে যেতে হবে। তাই দেরি না করে আগেভাগে ঘোষণা দিয়ে দেওয়াই ভালো।’
বিএনপির আন্দোলনের ধীরগতির বিষয়ে দলটির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণ এর একটা বিহিত চায়। ডিসেম্বর মাসে দেশের জনগণ, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ছিল। ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশে দলের নেতাকর্মীরা সব বাধা অতিক্রম করে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সফল করেছে। এসব দেখে সরকাব ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। কিন্তু বিএনপির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এবং দলটির কিছু দায়িত্বশীল নেতার দায়িত্বহীন বক্তব্যে সব ভেস্তে যায়।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অনৈতিক অভিযানের ক্ষয়ক্ষতি আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী এখনো জেলে আছেন। বিএনপি পিছিয়ে নেই। কারণ প্রতিটি আন্দোলনের একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছি। সেটি ছিল একটি পর্যায়ের আন্দোলনের শেষ ধাপ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব আগেই বলেছিলেন ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ শেষ কর্মসূচি নয়; বরং একটি ধাপের শেষ কর্মসূচি। তারপরও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিল। কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া কার্যালয়ে তান্ডব চালায়।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দায়িত্বশীল কিছু নেতার দায়িত্বহীন মেঠো বক্তব্যে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথায়। সমাবেশে যোগ দেবেন খালেদা জিয়া। নেতাদের এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যে সরকার বিব্রত হয়। আর যার রেশ পড়ে দলের ওপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভ্রান্ত হন। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অভিযান দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্বহীন বক্তব্যে।’
রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২২ নভেম্বর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘এখনো তো আসল ঘোষণা দিইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখ। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া হত্যার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের জীবন নিয়ে খেলছেন। আমাদের সাতজনকে হত্যা করেছেন। ভাবছেন পার পেয়ে যাবেন? “এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি।” এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নেই। যেতেই হবে। তাই শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, জেগে উঠতে হবে। আন্দোলনে ফেটে পড়তে হবে। এমনি-এমনি কেউ সরে না, সরাতে হবে। জনগণের বল দিয়ে, শক্তি দিয়ে এ সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করতে হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অভিযানের ক্ষত এখনো শুকায়নি। কার্যালয়ের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক নিয়ে যাওয়ায় অনেক তথ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এখনো মুক্তি পাননি। গুরুতর অসুস্থ রিজভীকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। যেকোনো সময় যেকোনো অঘটনা ঘটে যেতে পারে। এক দফা আন্দোলনের যে ঘোষণা আসার কথা ছিল তার আগেই আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। এখানে তো আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিই না। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের কষ্ট লাঘব ও তাদের হারানো সব সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে রয়েছি। জনগণ অনেক সময় আবেগ নিয়ে অনেক কথা বলে। কিন্তু রাজনীতিতে আবেগের জায়গা নেই। আমরা এখন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছি। ধাপে ধাপে আমরা এ আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে নিয়ে যাব। রাজনীতিতে সময় বেঁধে সরকারের পতন ঘটানো যায় না; বরং পরিস্থিতি বলে দেয় কখন কীভাবে আগাতে হবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’
বিভাগীয় সমাবেশের আগে দলের নেতাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাঠের বক্তব্য আর বাস্তবতা এক নয়। তা ছাড়া দলের নীতিনির্ধারক ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য বিএনপির সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেওয়া ঠিক নয়। তবে দলের নেতাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত।’
‘টাকা’ অথবা নিজস্ব নোট স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌম এখতিয়ারের প্রতীক। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কাগজি মুদ্রার (টাকা বা টঙ্ক) প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। প্রথম কাগজি মুদ্রার প্রচলনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তৃতীয়বারের মতো ‘টাকা দিবস’ পালিত হবে আজ।
মুদ্রা প্রচলনের আগে মানুষ লেনদেন করত বিনিময় প্রথায়। কোনো একটি পণ্যকে একক হিসেবে গণ্য করে পণ্যের সঙ্গে পণ্য বিনিময় করা হতো। ওই পণ্যটিই ‘মুদ্রা’র কাজ করত। কালক্রমে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। তখন মানুষ ‘কড়ি’র মাধ্যমে বিনিময় করত। তখন ‘গদ’ নারায়ণের যুগ।
ক্রমে ধাতব পদার্থ বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে ওঠে। প্রচলন শুরু হয় তামা, লোহা বা রুপার মুদ্রা। এর ধারাবাহিকতায় একসময় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন হয়। এরপর স্বর্ণমুদ্রা থেকে কাগজি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। ‘মুদ্রা’ প্রচলনের যুগটিই ‘নগদ’ নারায়ণের যুগ। এখনো মানুষ নগদ নারায়ণেই আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির বিকাশের (বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির) ‘নির্ব্যক্ত-নিরুক্ত’ চাপে বা প্রভাবে আগামী দশকে কাগুজে বা বহনযোগ্য মুদ্রার প্রয়োজনীতা কমবে। টাকা ছাপানোর খরচও কমে আসবে।
তথ্য-সাবুদ বলে, প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিসরে বিনিময়প্রথার প্রচলন ছিল। আর পুরাণ-ব্যাকরণ বলে, এ প্রথার শুরু হয়েছিল ভারতে। প্রজাপতি বেণের সময়ে বিনিময়প্রথার শুরু। যা-ই হোক, নথিবদ্ধ তথ্যে গুরুত্ব দিয়ে বলতে হয়, বিনিময়ের জন্যই ‘একক’ পণ্যের ব্যবহার শুরু। মানবসমাজ অনেক কিছুই মুদ্রা বা টঙ্ক (টাকা) হিসেবে ব্যবহার করেছে। লবণ, কফি বিন, শস্যদানা, গরু ও হাঙরের দাঁত, মূল্যবান পাথর প্রভৃতি। আর ভারত উপমহাদেশে (বাংলাদেশসহ) চল ছিল কড়ির।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ বা পঞ্চম অব্দে তুরস্কের এশিয়া মহাদেশীয় অংশে (এশিয়া মাইনর) লিদিয়া অঞ্চলে প্রথম মুদ্রার চল তৈরি হয়। লিদীয়দের মুদ্রা প্রচলনের কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন ভারতে ‘মুদ্রা’র প্রচলন হয়। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সুমেরীয়রা বার্লি বিক্রির জন্য প্রথম ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করে।
ধাতব মুদ্রার পথ ধরেই আসে কাগুজে মুদ্রা। কাগুজে মুদ্রা বা নোটের প্রচলন শুরু হয় চীনে; তাঙ রাজবংশের রাজত্বকালে (৬১৮-৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ)। ১৬৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে কাগজের নোটের প্রস্তাব করা হয়। ১৭৬০ সালে প্রথম ডলার ছাপানো হয় এবং তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়।
আজকের যে অর্থব্যবস্থা তাতে স্বর্ণ-রৌপ্যের ভূমিকা সরাসরি তেমন নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত মুদ্রাব্যবস্থায় কাগজের মুদ্রার সঙ্গে স্বর্ণের সরাসরি যোগসূত্র ছিল। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর আস্থা ছিল স্বর্ণ বা স্বর্ণমানের ওপর। মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে ও মুদ্রামান নির্ণয়ে স্বর্ণ হয়ে ওঠে নিয়ামক।
বাংলাদেশে টাকার প্রচলন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নেয়। স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রতীক হলো নিজস্ব মুদ্রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচলন করে নিজস্ব ব্যাংক নোট। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশের ১ টাকা ও ১০০ টাকার ব্যাংক নোট চালু হয়।
আগে এ দেশে পাকিস্তানের ব্যাংক নোট চলত; মুদ্রার নাম ছিল রুপি। বাংলাদেশের মুদ্রার নাম রাখা হয় টাকা। টঙ্ক কথা থেকে এর উদ্ভব। ৪ মার্চ ১৯৭২ প্রকাশিত দুটি ব্যাংক নোট ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হয়। ১ টাকার নকশায় বাংলাদেশের মানচিত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কথাটি স্থান পায় এবং তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন তখনকার অর্থসচিব কে এ জামান। আর ১০০ টাকার নকশায় দেখা যায় বাংলাদেশের মানচিত্র এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং তাতে লেখা বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নোটটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর এ এন হামিদ উল্ল্যাহ্র স্বাক্ষর ছিল। এখন বাংলাদেশে ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট রয়েছে। পাশাপাশি ১, ২ এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাও আছে। আগে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার প্রচলন ছিল, যা বর্তমানে অচল। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে কাগুজে নোট প্রচলনের ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ছাপানো টাকা ও কয়েন (মুদ্রা) মিলে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংক নোট ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার। আর সরকারের নোট ও কয়েন ১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার। তবে দেশে ব্রড মানির পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।
চাইলেই কি নোট ছাপানো যায়?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে না। এর জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, তা মেনে কাজ করতে হয়। পুরো বিষয়টি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে বাড়িয়ে দেবে জীবনযাত্রার খরচ। অর্থনীতির স্বার্থেই ভারসাম্য রাখতে হয়।
পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন বা অর্থের প্রবাহের বিষয়টি দেখেই নতুন নোট ছাপা হয়। অনেক সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছিঁড়ে যাওয়া, পুড়ে নষ্ট হওয়া বা রি-ইস্যু করা যায় না এমন নোট ব্যাংকিং চ্যানেলে মার্কেট থেকে তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঘাটতি পূরণেও নতুন নোট সরবরাহ করা হয়।
ডলার, সরকারের ট্রেজারি বিল বা বন্ডের বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়তে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার যদি বিদেশি ঋণ না পায়, তবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ট্রেজারি বিল বা বন্ড ছাড়ে। এসব বিল বন্ডের বিনিময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় সরকার। ব্যাংকে তারল্যসংকট তৈরি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিল বা বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেয়। আবার বিল ও বন্ডের বিপরীতে ডিভলবিং ফান্ড (নতুন টাকা ছাপিয়ে) থেকে সরকারকে ঋণ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ
প্রতি বছর নতুন টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ হয় সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা। কোনো বছর ৭০০ কোটিও ছাড়িয়ে যায়। নানা কারণে টাকা নষ্ট হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক নষ্ট নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে তার বিপরীতে নতুন নোট ছাড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ১০০০ টাকার নোট ছাপাতে ৫ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। ২০০ টাকার নোটে ৩ টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা, ১০, ২০, ৫০ টাকার সব নোটেই দেড় টাকা। আর ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কয়েন তৈরিতে। প্রতিটি কয়েনে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। তবে কয়েন বেশি টেকসই। নোট ছাপানোর খরচের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা তথা ক্যাশলেস ব্যবস্থার দিকে যেতে চায়।
টাকার প্রচলন কমানোর উদ্যোগ
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় বিশে^র বিভিন্ন দেশেই এখন নগদ টাকার ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধার্থে নিয়ে এসেছে ‘বিনিময়’ নামে অ্যাপ। এর সাহায্যে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সহজে লেনদেন করা যাবে। আর কেনাকাটায় গ্রাহক ও দোকানির মধ্যে সহজ লেনদেনের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলা কিউআর’।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, যদি ডিজিটাল কারেন্সিকে জনপ্রিয় করা যায়, তাহলে অর্থ বেঁচে যাবে।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আরফান আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
অধ্যাপক ড. অনুপম সেন জীবনে একটি বই লেখার পর যদি আর কোনো বই নাও লিখতেন, তাহলেও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত হয়েই থাকতেন। কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তিনি যে বইটি লেখেন, সেই বইটি এখন ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। ১৯৮২ সালে এ বইটি প্রকাশ করেছিল ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রাউটলেজ অ্যান্ড কেগানপল। গত ২৫০ বছরের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা ৩০টি বই প্রকাশনা করে এবং এর মধ্যে ড. অনুপম সেনের ‘দ্য স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাস ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া’ নামে বইটি রয়েছে। পরে ২০১৭ সালে বইটির দ্বিতীয় দফায় প্রকাশ করা হয়।
বইটি উত্তর আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয় যেমন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়; সুইডেনের টিনবারজেন বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অর্থনীতি (ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস) ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশের আর কোনো লেখকের বই আন্তর্জাতিকভাবে এভাবে পাঠ্য তালিকায় যুক্ত হওয়ার নজির নেই উল্লেখ করে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘আমার জানামতে দেশের আর কোনো লেখকের বই এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় যুক্ত করার খবর আমার জানা নেই। আর এ যুক্ত করার মাধ্যমে শুধু আমি নিজে সম্মানিত হইনি, আমার দেশ বাংলাদেশও সম্মানিত হয়েছে।’
বইটি কেন এত বিখ্যাত হয়েছিল? বইটি কী নিয়ে লেখা হয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘এটি ছিল আমার পিএইচডি থিসিস। এ বইয়ে ব্রিটিশদের পুঁজিবাদে লুণ্ঠনে কীভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ ভারতবর্ষ বা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ গরিব দেশে পরিণত হলো তা তথ্য ও তত্ত্বের সমাহারে তুলে ধরা হয়েছিল।’
বইটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডা. আতিউর রহমান লিখেছিলেন, ‘বইটিতে মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা হলেও এতে নয়া-মার্ক্সবাদী ভাবনার সংযোজন বেশ স্পষ্ট। তবে বুদ্ধিবৃত্তিক পাটাতনটি তিনি ধ্রুপদি মার্ক্সীয় ভাবনাতেই উপস্থাপন করেছেন। এর ওপর যে কাঠামো গড়েছেন তাতে সমকালীন নয়া-মার্ক্সবাদীদের ভাবনা বেশ মুনশিয়ানার সাথেই তিনি সংযোজন করেছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন অনুপম সেনের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলী প্রয়াসের প্রকাশিত বইয়ে লেখেন, ‘অধ্যাপক সেন দুটো জায়গায় অত্যন্ত উজ্জ্বল। শিক্ষাদীক্ষার পরিমণ্ডলে তাঁর পরিচিতি বাংলাদেশ ও এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। দ্বিতীয়ত গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাঁর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গবেষণা করছে, এমফিল ডিগ্রি অর্জন করছে।’
ড. অনুপম সেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ ১৯ জন শিক্ষক চট্টগ্রামে চলে আসেন। সে সময় ড. অনুপম সেনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। সেই থেকে তিনি চট্টগ্রামে রয়ে গেছেন। মাঝে ১৯৭২ থেকে ’৭৯ সাল পর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রির জন্য কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। ২০০৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০০৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নামেই যিনি বিখ্যাত। বিশ্বের যেকোনো দেশে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। এমনকি রাজধানী শহর ঢাকায়ও থাকেননি, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অনেক শিক্ষক পরবর্তী সময়ে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেলেও ড. অনুপম সেন আর যাননি। তিনি চট্টগ্রামে রয়ে গেলেন। এখন যেখানে মানুষ সুযোগ পেলেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত দেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, সেখানে তিনি কেন গেলেন না? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামকে ভালোবাসি। চট্টগ্রামের মায়া আমাকে কোথাও যেতে দেয় না। আর তাই এখানেই আছি ও থাকব।’
কিন্তু তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি যে চট্টগ্রামকে দেখেছি এখন আর সেই চট্টগ্রাম নেই। আমার স্বপ্নের চট্টগ্রাম আজ শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। এখানের পাহাড়গুলোকে কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। এখানে সবুজকে কেটে বিনাশ করা হয়েছে। পাহাড়, নদী ও সমুদ্রের যে মিশেল চট্টগ্রাম ছিল সেই চট্টগ্রাম আজ বিপন্ন। অপরিকল্পিত নগরায়ণে ক্ষত-বিক্ষত চাটগাঁ।’
৮৩ বছর বয়সেও গত বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ কক্ষে যখন দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, দিন, সাল অনুযায়ী সব সঠিক করে কথা বলছিলেন। এত বয়সেও পুরনো দিনের কথা কীভাবে মনে রাখেন? আবার নাগরিক আন্দোলনেও সামনের সারিতে থাকেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীরও সদস্য বরেণ্য এ শিক্ষাবিদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আছে যে ব্যক্তি সৃজনশীল কাজের সঙ্গে বই পড়া ও লেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, বুদ্ধিবৃত্তীয় কাজ করেন তাদের মস্তিষ্ক উর্বর থাকে। একই সঙ্গে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের মস্তিষ্কও ভালো কাজ করে। আর আমি যেহেতু চিন্তাশক্তির কাজ করি তাই আমার স্মৃতিশক্তি এখনো প্রখর রয়েছে।’
অনুপম সেনের কৈশোর : পটিয়ার ধলঘাটে তার পৈতৃক নিবাস হলেও ড. অনুপম সেন ১৯৪০ সালের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে তাদের নিজস্ব বাড়িতে। তখনকার সময়ে ওই এলাকায় তেমন পাকাবাড়ি ছিল না। একমাত্র অনুপম সেনদের বাড়িটি পাকা ছিল। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় অনুপম সেনদের পরিবার গ্রামের বাড়ি পটিয়ার ধলঘাটে চলে যান। যুদ্ধকালীন সেখানেই অবস্থান করেন। ছাত্রজীবনে ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন। তিনি মূলত ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামতেন। চিটাগাং ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন।
পারিবারিক জীবন : ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক শ্রী লোকনাথ বলের ভাইয়ের মেয়ে উমা সেনগুপ্তার সঙ্গে ড. অনুপম সেনের বিয়ে হয় ১৯৬৬ সালে। তাদের একমাত্র মেয়ে ইন্দ্রানী সেনগুহ। পারিবারিক জীবনের কথা বলতে গিয়ে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমার স্ত্রী শয্যাশায়ী ছিল। ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি।’ জানা যায়, পুরো এ সময়টা সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার পর থেকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পর্যন্ত ওষুধ খাওয়া থেকে শুরু করে পুরো শুশ্রুষা ড. সেন নিজেই করতেন। বর্তমানে তার মেয়েও একজন সমাজবিজ্ঞানী।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপম সেন : ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন অনুপম সেন। তখন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ড. শামসুল হক, পরে যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে লালদীঘি ময়দানে গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে প্রতিদিন কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের তখনকার শিক্ষক আবু জাফর, চট্টগ্রাম কলেজ বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমেদ এবং ইংরেজির অধ্যাপক কবি মোহাম্মদ রফিক ড. সেনের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করেন। এ সময় প্রতিদিন ট্রাকে করে র্যালি করার পর সবাই লালদীঘিতে এসে জমায়েত হতো। ২৪ মার্চ লালদীঘি থেকে তা চকবাজার প্যারেড মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছিল। আর সেদিন রাতে মঞ্চে নাটক চলাকালীন চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ অস্ত্র নিয়ে ভেড়ানোর খবর পাওয়ার পর সবাই অনুষ্ঠান থেকেই সেখানে যায়। পরে যুদ্ধকালীন খাগড়াছড়ির রামগড় হয়ে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে আগরতলা হয়ে কলকাতায় যান। আর কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় প্রফেসর আনিসুজ্জামান, রামেন্দু মজুমদার, জহির রায়হান, কবি আল মাহমুদসহ একসঙ্গে ছিলেন বলেন জানান অনুপম সেন। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান অনুপম সেন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অনুপম নেন একজন সমাজ সচেতন মানুষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিরূপে এবং ব্যক্তিগতভাবে আশির দশকের অধিকাংশ সময়ে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। মুুক্তিযুদ্ধের সময়ও তার একটা ভূমিকা ছিল। গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের প্রতি তার অঙ্গীকার অত্যন্ত দৃঢ়। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে স্বীকার করে নিয়েও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমর্পিত।’
প্রথম শিক্ষকতা জীবন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেওয়ার পর ফলাফল প্রকাশের আগে ১০ মাস (১৯৬৩-৬৪ সাল) শিক্ষকতা করেছিলেন চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজে। আর তখন এই কলেজের ছাত্র ছিলেন চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরে তিনি ১৯৬৫ সালে তিনি বুয়েটে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে সমাজবিজ্ঞানের পাশাপাশি টাউন প্ল্যানিং নিয়ে পড়াতেন। ১৯৬৬ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০১৪ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সমাজবিজ্ঞানীয় ড. অনুপম সেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে অন্যতম প্রধান মানুষ হচ্ছেন অনুপম সেন। যাকে পন্ডিত বলে এবং পান্ডিত্যের সঙ্গে যাদের প্রজ্ঞা আছে, অনেকদূর পর্যন্ত চিন্তা করতে পারে, শুধু নলেজ নয়, উইজডম পর্যন্ত আছে, তাদের মধ্যে অনুপম সেন একজন। এ মানুষটিকে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। আর আমি তার গুণের প্রমাণ অনেক পেয়েছি।’
এদিকে বিশিষ্ট লেখক আলী প্রয়াসের সম্পাদনায় অনুপম সেনকে নিয়ে কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ড. সেনের নিজের লেখা প্রায় ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। কেমন চট্টগ্রাম দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের সবুজ ফিরিয়ে আনতে হবে। চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। এ সবুজের জন্যই আমরা সিআরবি রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছিলাম।’
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।