
অধ্যাপক ড. অনুপম সেন জীবনে একটি বই লেখার পর যদি আর কোনো বই নাও লিখতেন, তাহলেও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত হয়েই থাকতেন। কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তিনি যে বইটি লেখেন, সেই বইটি এখন ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। ১৯৮২ সালে এ বইটি প্রকাশ করেছিল ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রাউটলেজ অ্যান্ড কেগানপল। গত ২৫০ বছরের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা ৩০টি বই প্রকাশনা করে এবং এর মধ্যে ড. অনুপম সেনের ‘দ্য স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাস ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া’ নামে বইটি রয়েছে। পরে ২০১৭ সালে বইটির দ্বিতীয় দফায় প্রকাশ করা হয়।
বইটি উত্তর আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয় যেমন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়; সুইডেনের টিনবারজেন বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অর্থনীতি (ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস) ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশের আর কোনো লেখকের বই আন্তর্জাতিকভাবে এভাবে পাঠ্য তালিকায় যুক্ত হওয়ার নজির নেই উল্লেখ করে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘আমার জানামতে দেশের আর কোনো লেখকের বই এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় যুক্ত করার খবর আমার জানা নেই। আর এ যুক্ত করার মাধ্যমে শুধু আমি নিজে সম্মানিত হইনি, আমার দেশ বাংলাদেশও সম্মানিত হয়েছে।’
বইটি কেন এত বিখ্যাত হয়েছিল? বইটি কী নিয়ে লেখা হয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘এটি ছিল আমার পিএইচডি থিসিস। এ বইয়ে ব্রিটিশদের পুঁজিবাদে লুণ্ঠনে কীভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ ভারতবর্ষ বা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ গরিব দেশে পরিণত হলো তা তথ্য ও তত্ত্বের সমাহারে তুলে ধরা হয়েছিল।’
বইটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডা. আতিউর রহমান লিখেছিলেন, ‘বইটিতে মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা হলেও এতে নয়া-মার্ক্সবাদী ভাবনার সংযোজন বেশ স্পষ্ট। তবে বুদ্ধিবৃত্তিক পাটাতনটি তিনি ধ্রুপদি মার্ক্সীয় ভাবনাতেই উপস্থাপন করেছেন। এর ওপর যে কাঠামো গড়েছেন তাতে সমকালীন নয়া-মার্ক্সবাদীদের ভাবনা বেশ মুনশিয়ানার সাথেই তিনি সংযোজন করেছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন অনুপম সেনের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলী প্রয়াসের প্রকাশিত বইয়ে লেখেন, ‘অধ্যাপক সেন দুটো জায়গায় অত্যন্ত উজ্জ্বল। শিক্ষাদীক্ষার পরিমণ্ডলে তাঁর পরিচিতি বাংলাদেশ ও এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। দ্বিতীয়ত গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাঁর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গবেষণা করছে, এমফিল ডিগ্রি অর্জন করছে।’
ড. অনুপম সেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ ১৯ জন শিক্ষক চট্টগ্রামে চলে আসেন। সে সময় ড. অনুপম সেনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। সেই থেকে তিনি চট্টগ্রামে রয়ে গেছেন। মাঝে ১৯৭২ থেকে ’৭৯ সাল পর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রির জন্য কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। ২০০৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০০৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নামেই যিনি বিখ্যাত। বিশ্বের যেকোনো দেশে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। এমনকি রাজধানী শহর ঢাকায়ও থাকেননি, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অনেক শিক্ষক পরবর্তী সময়ে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেলেও ড. অনুপম সেন আর যাননি। তিনি চট্টগ্রামে রয়ে গেলেন। এখন যেখানে মানুষ সুযোগ পেলেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত দেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, সেখানে তিনি কেন গেলেন না? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামকে ভালোবাসি। চট্টগ্রামের মায়া আমাকে কোথাও যেতে দেয় না। আর তাই এখানেই আছি ও থাকব।’
কিন্তু তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি যে চট্টগ্রামকে দেখেছি এখন আর সেই চট্টগ্রাম নেই। আমার স্বপ্নের চট্টগ্রাম আজ শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। এখানের পাহাড়গুলোকে কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। এখানে সবুজকে কেটে বিনাশ করা হয়েছে। পাহাড়, নদী ও সমুদ্রের যে মিশেল চট্টগ্রাম ছিল সেই চট্টগ্রাম আজ বিপন্ন। অপরিকল্পিত নগরায়ণে ক্ষত-বিক্ষত চাটগাঁ।’
৮৩ বছর বয়সেও গত বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ কক্ষে যখন দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, দিন, সাল অনুযায়ী সব সঠিক করে কথা বলছিলেন। এত বয়সেও পুরনো দিনের কথা কীভাবে মনে রাখেন? আবার নাগরিক আন্দোলনেও সামনের সারিতে থাকেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীরও সদস্য বরেণ্য এ শিক্ষাবিদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আছে যে ব্যক্তি সৃজনশীল কাজের সঙ্গে বই পড়া ও লেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, বুদ্ধিবৃত্তীয় কাজ করেন তাদের মস্তিষ্ক উর্বর থাকে। একই সঙ্গে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের মস্তিষ্কও ভালো কাজ করে। আর আমি যেহেতু চিন্তাশক্তির কাজ করি তাই আমার স্মৃতিশক্তি এখনো প্রখর রয়েছে।’
অনুপম সেনের কৈশোর : পটিয়ার ধলঘাটে তার পৈতৃক নিবাস হলেও ড. অনুপম সেন ১৯৪০ সালের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে তাদের নিজস্ব বাড়িতে। তখনকার সময়ে ওই এলাকায় তেমন পাকাবাড়ি ছিল না। একমাত্র অনুপম সেনদের বাড়িটি পাকা ছিল। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় অনুপম সেনদের পরিবার গ্রামের বাড়ি পটিয়ার ধলঘাটে চলে যান। যুদ্ধকালীন সেখানেই অবস্থান করেন। ছাত্রজীবনে ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন। তিনি মূলত ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামতেন। চিটাগাং ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন।
পারিবারিক জীবন : ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক শ্রী লোকনাথ বলের ভাইয়ের মেয়ে উমা সেনগুপ্তার সঙ্গে ড. অনুপম সেনের বিয়ে হয় ১৯৬৬ সালে। তাদের একমাত্র মেয়ে ইন্দ্রানী সেনগুহ। পারিবারিক জীবনের কথা বলতে গিয়ে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমার স্ত্রী শয্যাশায়ী ছিল। ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি।’ জানা যায়, পুরো এ সময়টা সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার পর থেকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পর্যন্ত ওষুধ খাওয়া থেকে শুরু করে পুরো শুশ্রুষা ড. সেন নিজেই করতেন। বর্তমানে তার মেয়েও একজন সমাজবিজ্ঞানী।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপম সেন : ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন অনুপম সেন। তখন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ড. শামসুল হক, পরে যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে লালদীঘি ময়দানে গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে প্রতিদিন কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের তখনকার শিক্ষক আবু জাফর, চট্টগ্রাম কলেজ বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমেদ এবং ইংরেজির অধ্যাপক কবি মোহাম্মদ রফিক ড. সেনের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করেন। এ সময় প্রতিদিন ট্রাকে করে র্যালি করার পর সবাই লালদীঘিতে এসে জমায়েত হতো। ২৪ মার্চ লালদীঘি থেকে তা চকবাজার প্যারেড মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছিল। আর সেদিন রাতে মঞ্চে নাটক চলাকালীন চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ অস্ত্র নিয়ে ভেড়ানোর খবর পাওয়ার পর সবাই অনুষ্ঠান থেকেই সেখানে যায়। পরে যুদ্ধকালীন খাগড়াছড়ির রামগড় হয়ে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে আগরতলা হয়ে কলকাতায় যান। আর কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় প্রফেসর আনিসুজ্জামান, রামেন্দু মজুমদার, জহির রায়হান, কবি আল মাহমুদসহ একসঙ্গে ছিলেন বলেন জানান অনুপম সেন। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান অনুপম সেন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অনুপম নেন একজন সমাজ সচেতন মানুষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিরূপে এবং ব্যক্তিগতভাবে আশির দশকের অধিকাংশ সময়ে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। মুুক্তিযুদ্ধের সময়ও তার একটা ভূমিকা ছিল। গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের প্রতি তার অঙ্গীকার অত্যন্ত দৃঢ়। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে স্বীকার করে নিয়েও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমর্পিত।’
প্রথম শিক্ষকতা জীবন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেওয়ার পর ফলাফল প্রকাশের আগে ১০ মাস (১৯৬৩-৬৪ সাল) শিক্ষকতা করেছিলেন চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজে। আর তখন এই কলেজের ছাত্র ছিলেন চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরে তিনি ১৯৬৫ সালে তিনি বুয়েটে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে সমাজবিজ্ঞানের পাশাপাশি টাউন প্ল্যানিং নিয়ে পড়াতেন। ১৯৬৬ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০১৪ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সমাজবিজ্ঞানীয় ড. অনুপম সেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে অন্যতম প্রধান মানুষ হচ্ছেন অনুপম সেন। যাকে পন্ডিত বলে এবং পান্ডিত্যের সঙ্গে যাদের প্রজ্ঞা আছে, অনেকদূর পর্যন্ত চিন্তা করতে পারে, শুধু নলেজ নয়, উইজডম পর্যন্ত আছে, তাদের মধ্যে অনুপম সেন একজন। এ মানুষটিকে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। আর আমি তার গুণের প্রমাণ অনেক পেয়েছি।’
এদিকে বিশিষ্ট লেখক আলী প্রয়াসের সম্পাদনায় অনুপম সেনকে নিয়ে কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ড. সেনের নিজের লেখা প্রায় ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। কেমন চট্টগ্রাম দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের সবুজ ফিরিয়ে আনতে হবে। চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। এ সবুজের জন্যই আমরা সিআরবি রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছিলাম।’
সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে। ডলার সংকটে অর্থনীতিও বেকায়দায়। অন্যদিকে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগ সব মিলে জাতীয় নির্বাচনের আগে ভাবমূর্তির সংকট দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার।
এ অবস্থায় সরকার ও দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চলতি বছর কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মনে করেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি আরও পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। সে কারণে মানুষকে খুশি করতে হবে। আর সে জন্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটের মাঠে মানুষকে চমক দিতে চান সরকারপ্রধান। তার এমন সিদ্ধান্তে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজনকে শাস্তির মুখোমুখি পড়তে হতে পারে।
চলতি বছর জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে আরও কিছু কাজ করতে চায় সরকার; বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে যে বেকায়দায় ফেলেছে, তা পুষিয়ে নিতে চায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন সুবিধা দেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা এবারের বাজেটে স্বল্প পরিসরে হলেও বাস্তবায়ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে সরকারের। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা করেছেন। কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, সে জন্য পরামর্শও চেয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু দেশের টাকা বিদেশে পাচার। পাচার রোধ করতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা ও আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, এপ্রিল থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের টাকা বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে এমন আলোচনা আছে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে গেলে নির্মোহভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেটা কার্যকর করতে হবে। করা গেলে ভোটে তার সুফল মিলবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজ ধরতে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও কার্যকর করে তোলা হচ্ছে; বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আরও জোরদার ও দৃশ্যমান হবে নির্বাচনী বছরে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশে টাকা পাচারকারীরা দেশের শত্রু। অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধীর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার সব সময় আপসহীন। অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যারাই রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে আপস করা শেখ হাসিনার নীতি নয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেছেন, “টাকা পাচারকারীদের তালিকা দেন, ব্যবস্থা নেব।” আমি মনে করি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হবে।’
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এমন কিছু অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হবে, যা ভোটের মাঠে সরকার ও আওয়ামী লীগকে আলোচনায় রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আরও মজবুত করে তুলবে। তার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশংসিত হবে তেমন কিছু আলোচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নীতি অনুসরণ করা হবে।
সরকারের এ পরিকল্পনার কথা সর্বশেষ দলীয় এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেও জানিয়েছেন। ওই কর্মসূচিতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হচ্ছেন! কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই সাবধান ও সতর্ক হয়ে যান। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা তারই ইঙ্গিত ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য, এমনই দাবি করেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও।
কঠোর কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকম-লীর একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার যারা করেছেন, প্রথমেই তাদের বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ যাবেন সরকারপ্রধান। তারা বলেন, অপরাধীরা দলের হোক আর যত বড় প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিছপা হবেন না টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেন্দ্রীয় ওই নেতারা আরও বলেন, অর্থ পাচারের বিষয়টি এই মুহূর্তে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ঊর্ধ্বমুখী হবে। মাদক কারবারি ও এর সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান জোরদার করা হবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এ দুটি জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রূপরেখা তৈরির কাজও হয়েছে। অভিযান শুরু হবে সেখান থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত বা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারাও শাস্তির আওতায় আসবেন। এ ক্ষেত্রে কে দলীয় বা দলীয় নয়, সে বিবেচনা করা হবে না।
আওয়ামী লীগের পদপদবি ব্যবহার করে ক্ষমতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন দলের এই অংশকেও শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে হাঁটবে সরকার। গত এক যুগে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, জনপ্রিয়তার রাস টেনে ধরেছেন সেসব আগাছা-পরগাছা উপড়ে ফেলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘দানব’ বনে যাওয়া কিছু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এমন আভাসও পাওয়া গেছে। তবে ‘দানব’ বনে যাওয়া সংসদ সদস্যদের সবচেয়ে বড় শাস্তি হবে মনোনয়ন না দেওয়া।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যেসব উন্নয়ন শেখ হাসিনার সরকার করেছে সেসব। পাশাপাশি কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি চমক সৃষ্টি করবে ভোটের মাঠে। তারা বলেন, ভোটের আগে ভোটের মাঠে অনেক চমকের মধ্যে এটিও অন্যতম। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখবে তেমন পরিকল্পনা থেকে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যায়-অনিয়মকে কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্রয় দেননি। এ ক্ষেত্রে নিজের দল ও অন্য দল এ বিবেচনাবোধ নেত্রী (শেখ হাসিনা) করেন না।’ তিনি বলেন, অপরাধীর পরিচয় তার কাছে অপরাধীই।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায় (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আরিফুর রহমান (২৮) নামে এক যুবক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশ সদস্য, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬০ জন। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসান (২৩) নামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দুপুর ২টার পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সংঘর্ষের শুরু হয়; যা ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায়, চলে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। সংঘর্ষের সময় তৌহিদি জনতার ব্যানারে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
রাত ৮টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সালানা জলসা আয়োজনের অনুমতি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে শহরে মাইকিং করার পর উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৭ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে, সেটা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
গতকাল জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড় সিনেমা হল রোডসহ চৌরঙ্গী এলাকায় একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তাদের সঙ্গে এলাকার বাইরের অচেনা অনেক মানুষকে যোগ দিতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা পাল্টা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। তখন পুলিশ পিছু হটে। পরে বিক্ষোভকারীরা সিনেমা হল রোডে আহমদিয়াদের মালিকানাধীন দুটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল বের করে সড়কে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া করতোয়া নদীর পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় সাতটি মোটরসাইকেলও পোড়ানো হয়। একই সময় ধাক্কামারা গোল চক্করে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সেখানেও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চলে। পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর ও আগুনের ছবি তুলতে গেলে এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান টুটুলকে বেধড়ক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া আরও কয়েকজন সাংবাদিককে ছবি তুলতে গেলে লাঞ্ছিত করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের অদূরে আহাম্মদনগর গ্রামে আহমদিয়াদের জলসা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হলে চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের সিনেমা হল সড়কে পিছু হটে। বিকেলে করতোয়া নদী হেঁটে ও নৌকায় পার হয়ে কিছু মানুষ আহম্মদনগরে ঢুকে আহমদিয়াদের অন্তত ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাতে আগুন জ¦ালিয়ে দেয়। এ সময় তাদের হামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ধাক্কামারা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল একদল জনতা। এ সময় আহম্মদনগর এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলছিল বলে জানা গেছে। হামলার ঘটনায় শহরের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা যোগ দেন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন।
সংঘর্ষে নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন। সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী আরিফুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনরা জানান, দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রংপুরে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল আলম দেশ রূপান্তরকে জানান, নিহত আরিফুরের মাথায় গুলির আঘাত ছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কুপিয়ে হত্যা করা জাহিদ হাসানের বাড়ি নাটোরের বনপাড়া এলাকায় বলে জানা গেছে। পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসানকে করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা গতকালের সহিংসতায় দুজনের মৃত্যুর তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানার এসআই কাউয়ুম আলী, ভবেশ চন্দ্র পাল, ট্রাফিক পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম, এএসআই মো. আবদুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আল-আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামানের নাম পাওয়া গেছে। আহত অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলে কর্মরত মাহমুদ আহমাদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হামলা করে অনেককে আহত করা হয়েছে।
রাত ৯টার দিকে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
কাছাকাছি সময়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সালানা জলসা আয়োজনের অনুমতি বাতিল করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ ছাড়া শহরে পর্যাপ্ত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তবে গতকাল দুপুরে মিছিল বের করার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অস্বীকার করেছেন। মসজিদ থেকে লোকজন নিজেরাই মিছিল বের করে বলে তাদের দাবি।
সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে সিদ্ধিরগঞ্জে বিক্ষোভ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আহমদিয়াদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল বাদ জুমা ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি বাংলাদেশের’ উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। কমিটির বাংলাদেশের আমির আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সির নেতৃত্বে সমাবেশে পঞ্চগড়ে সালানা জলসা বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বক্তারা।
দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণের ক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি কাজে লাগাতে পারছে না। এমনটাই মনে করছেন দলটির ওপরের সারির কয়েকজন নেতা। তাদের কারও কারও মধ্যে দলের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েও হতাশা আছে। তারা বলছেন, বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে সরব থাকুক তা দেখতে চায় মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের অংশ হিসেবে জনগণ এগিয়ে রয়েছে, কিন্তু জনগণের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি।
অবশ্য দলের মহাসচিব বলছেন, রাজনীতির বাস্তবতা অনেক কঠিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নয়াপল্টনে দলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর এক দফার কর্মসূচি আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এক দফা থেকে সরে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হলো। দেশের জনগণ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বিএনপি। বিএনপি আদৌ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের এক দফার আন্দোলনে যেতে হবে। তাই দেরি না করে আগেভাগে ঘোষণা দিয়ে দেওয়াই ভালো।’
বিএনপির আন্দোলনের ধীরগতির বিষয়ে দলটির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণ এর একটা বিহিত চায়। ডিসেম্বর মাসে দেশের জনগণ, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ছিল। ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশে দলের নেতাকর্মীরা সব বাধা অতিক্রম করে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সফল করেছে। এসব দেখে সরকাব ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। কিন্তু বিএনপির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এবং দলটির কিছু দায়িত্বশীল নেতার দায়িত্বহীন বক্তব্যে সব ভেস্তে যায়।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অনৈতিক অভিযানের ক্ষয়ক্ষতি আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী এখনো জেলে আছেন। বিএনপি পিছিয়ে নেই। কারণ প্রতিটি আন্দোলনের একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছি। সেটি ছিল একটি পর্যায়ের আন্দোলনের শেষ ধাপ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব আগেই বলেছিলেন ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ শেষ কর্মসূচি নয়; বরং একটি ধাপের শেষ কর্মসূচি। তারপরও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিল। কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া কার্যালয়ে তান্ডব চালায়।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দায়িত্বশীল কিছু নেতার দায়িত্বহীন মেঠো বক্তব্যে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথায়। সমাবেশে যোগ দেবেন খালেদা জিয়া। নেতাদের এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যে সরকার বিব্রত হয়। আর যার রেশ পড়ে দলের ওপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভ্রান্ত হন। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অভিযান দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্বহীন বক্তব্যে।’
রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২২ নভেম্বর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘এখনো তো আসল ঘোষণা দিইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখ। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া হত্যার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের জীবন নিয়ে খেলছেন। আমাদের সাতজনকে হত্যা করেছেন। ভাবছেন পার পেয়ে যাবেন? “এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি।” এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নেই। যেতেই হবে। তাই শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, জেগে উঠতে হবে। আন্দোলনে ফেটে পড়তে হবে। এমনি-এমনি কেউ সরে না, সরাতে হবে। জনগণের বল দিয়ে, শক্তি দিয়ে এ সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করতে হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অভিযানের ক্ষত এখনো শুকায়নি। কার্যালয়ের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক নিয়ে যাওয়ায় অনেক তথ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এখনো মুক্তি পাননি। গুরুতর অসুস্থ রিজভীকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। যেকোনো সময় যেকোনো অঘটনা ঘটে যেতে পারে। এক দফা আন্দোলনের যে ঘোষণা আসার কথা ছিল তার আগেই আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। এখানে তো আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিই না। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের কষ্ট লাঘব ও তাদের হারানো সব সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে রয়েছি। জনগণ অনেক সময় আবেগ নিয়ে অনেক কথা বলে। কিন্তু রাজনীতিতে আবেগের জায়গা নেই। আমরা এখন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছি। ধাপে ধাপে আমরা এ আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে নিয়ে যাব। রাজনীতিতে সময় বেঁধে সরকারের পতন ঘটানো যায় না; বরং পরিস্থিতি বলে দেয় কখন কীভাবে আগাতে হবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’
বিভাগীয় সমাবেশের আগে দলের নেতাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাঠের বক্তব্য আর বাস্তবতা এক নয়। তা ছাড়া দলের নীতিনির্ধারক ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য বিএনপির সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেওয়া ঠিক নয়। তবে দলের নেতাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক সফলভাবে শেষ হওয়ায় জয়শঙ্করকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বৈঠক হয়। গতকাল রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ব্রাজিল, মেক্সিকো, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এবং বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান মোমেন। এ ছাড়া এসব বৈঠকে বাণিজ্য ও সম্পর্ক আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় মেক্সিকোর দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান।
‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ থিমের ওপর ভারতের সভাপতিত্বে দিল্লিতে গত বুধবার রাতে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশে^র প্রধান অর্থনৈতিক জোটের (জি-২০) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনব্যাপী বৈঠক। গত বৃহস্পতিবার মূল আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এ বৈঠকে যোগ দেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ভারত জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব পায়। আগামী ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। এরই মধ্যে এই সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
ভারতে তিন দিনের সফর শেষ করে গতকাল রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করেন।
‘টাকা’ অথবা নিজস্ব নোট স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌম এখতিয়ারের প্রতীক। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কাগজি মুদ্রার (টাকা বা টঙ্ক) প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। প্রথম কাগজি মুদ্রার প্রচলনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তৃতীয়বারের মতো ‘টাকা দিবস’ পালিত হবে আজ।
মুদ্রা প্রচলনের আগে মানুষ লেনদেন করত বিনিময় প্রথায়। কোনো একটি পণ্যকে একক হিসেবে গণ্য করে পণ্যের সঙ্গে পণ্য বিনিময় করা হতো। ওই পণ্যটিই ‘মুদ্রা’র কাজ করত। কালক্রমে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। তখন মানুষ ‘কড়ি’র মাধ্যমে বিনিময় করত। তখন ‘গদ’ নারায়ণের যুগ।
ক্রমে ধাতব পদার্থ বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে ওঠে। প্রচলন শুরু হয় তামা, লোহা বা রুপার মুদ্রা। এর ধারাবাহিকতায় একসময় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন হয়। এরপর স্বর্ণমুদ্রা থেকে কাগজি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। ‘মুদ্রা’ প্রচলনের যুগটিই ‘নগদ’ নারায়ণের যুগ। এখনো মানুষ নগদ নারায়ণেই আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির বিকাশের (বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির) ‘নির্ব্যক্ত-নিরুক্ত’ চাপে বা প্রভাবে আগামী দশকে কাগুজে বা বহনযোগ্য মুদ্রার প্রয়োজনীতা কমবে। টাকা ছাপানোর খরচও কমে আসবে।
তথ্য-সাবুদ বলে, প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিসরে বিনিময়প্রথার প্রচলন ছিল। আর পুরাণ-ব্যাকরণ বলে, এ প্রথার শুরু হয়েছিল ভারতে। প্রজাপতি বেণের সময়ে বিনিময়প্রথার শুরু। যা-ই হোক, নথিবদ্ধ তথ্যে গুরুত্ব দিয়ে বলতে হয়, বিনিময়ের জন্যই ‘একক’ পণ্যের ব্যবহার শুরু। মানবসমাজ অনেক কিছুই মুদ্রা বা টঙ্ক (টাকা) হিসেবে ব্যবহার করেছে। লবণ, কফি বিন, শস্যদানা, গরু ও হাঙরের দাঁত, মূল্যবান পাথর প্রভৃতি। আর ভারত উপমহাদেশে (বাংলাদেশসহ) চল ছিল কড়ির।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ বা পঞ্চম অব্দে তুরস্কের এশিয়া মহাদেশীয় অংশে (এশিয়া মাইনর) লিদিয়া অঞ্চলে প্রথম মুদ্রার চল তৈরি হয়। লিদীয়দের মুদ্রা প্রচলনের কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন ভারতে ‘মুদ্রা’র প্রচলন হয়। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সুমেরীয়রা বার্লি বিক্রির জন্য প্রথম ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করে।
ধাতব মুদ্রার পথ ধরেই আসে কাগুজে মুদ্রা। কাগুজে মুদ্রা বা নোটের প্রচলন শুরু হয় চীনে; তাঙ রাজবংশের রাজত্বকালে (৬১৮-৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ)। ১৬৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে কাগজের নোটের প্রস্তাব করা হয়। ১৭৬০ সালে প্রথম ডলার ছাপানো হয় এবং তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়।
আজকের যে অর্থব্যবস্থা তাতে স্বর্ণ-রৌপ্যের ভূমিকা সরাসরি তেমন নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত মুদ্রাব্যবস্থায় কাগজের মুদ্রার সঙ্গে স্বর্ণের সরাসরি যোগসূত্র ছিল। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর আস্থা ছিল স্বর্ণ বা স্বর্ণমানের ওপর। মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে ও মুদ্রামান নির্ণয়ে স্বর্ণ হয়ে ওঠে নিয়ামক।
বাংলাদেশে টাকার প্রচলন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নেয়। স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রতীক হলো নিজস্ব মুদ্রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচলন করে নিজস্ব ব্যাংক নোট। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশের ১ টাকা ও ১০০ টাকার ব্যাংক নোট চালু হয়।
আগে এ দেশে পাকিস্তানের ব্যাংক নোট চলত; মুদ্রার নাম ছিল রুপি। বাংলাদেশের মুদ্রার নাম রাখা হয় টাকা। টঙ্ক কথা থেকে এর উদ্ভব। ৪ মার্চ ১৯৭২ প্রকাশিত দুটি ব্যাংক নোট ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হয়। ১ টাকার নকশায় বাংলাদেশের মানচিত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কথাটি স্থান পায় এবং তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন তখনকার অর্থসচিব কে এ জামান। আর ১০০ টাকার নকশায় দেখা যায় বাংলাদেশের মানচিত্র এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং তাতে লেখা বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নোটটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর এ এন হামিদ উল্ল্যাহ্র স্বাক্ষর ছিল। এখন বাংলাদেশে ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট রয়েছে। পাশাপাশি ১, ২ এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাও আছে। আগে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার প্রচলন ছিল, যা বর্তমানে অচল। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে কাগুজে নোট প্রচলনের ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ছাপানো টাকা ও কয়েন (মুদ্রা) মিলে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংক নোট ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার। আর সরকারের নোট ও কয়েন ১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার। তবে দেশে ব্রড মানির পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।
চাইলেই কি নোট ছাপানো যায়?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে না। এর জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, তা মেনে কাজ করতে হয়। পুরো বিষয়টি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে বাড়িয়ে দেবে জীবনযাত্রার খরচ। অর্থনীতির স্বার্থেই ভারসাম্য রাখতে হয়।
পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন বা অর্থের প্রবাহের বিষয়টি দেখেই নতুন নোট ছাপা হয়। অনেক সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছিঁড়ে যাওয়া, পুড়ে নষ্ট হওয়া বা রি-ইস্যু করা যায় না এমন নোট ব্যাংকিং চ্যানেলে মার্কেট থেকে তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঘাটতি পূরণেও নতুন নোট সরবরাহ করা হয়।
ডলার, সরকারের ট্রেজারি বিল বা বন্ডের বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়তে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার যদি বিদেশি ঋণ না পায়, তবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ট্রেজারি বিল বা বন্ড ছাড়ে। এসব বিল বন্ডের বিনিময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় সরকার। ব্যাংকে তারল্যসংকট তৈরি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিল বা বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেয়। আবার বিল ও বন্ডের বিপরীতে ডিভলবিং ফান্ড (নতুন টাকা ছাপিয়ে) থেকে সরকারকে ঋণ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ
প্রতি বছর নতুন টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ হয় সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা। কোনো বছর ৭০০ কোটিও ছাড়িয়ে যায়। নানা কারণে টাকা নষ্ট হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক নষ্ট নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে তার বিপরীতে নতুন নোট ছাড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ১০০০ টাকার নোট ছাপাতে ৫ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। ২০০ টাকার নোটে ৩ টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা, ১০, ২০, ৫০ টাকার সব নোটেই দেড় টাকা। আর ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কয়েন তৈরিতে। প্রতিটি কয়েনে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। তবে কয়েন বেশি টেকসই। নোট ছাপানোর খরচের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা তথা ক্যাশলেস ব্যবস্থার দিকে যেতে চায়।
টাকার প্রচলন কমানোর উদ্যোগ
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় বিশে^র বিভিন্ন দেশেই এখন নগদ টাকার ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধার্থে নিয়ে এসেছে ‘বিনিময়’ নামে অ্যাপ। এর সাহায্যে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সহজে লেনদেন করা যাবে। আর কেনাকাটায় গ্রাহক ও দোকানির মধ্যে সহজ লেনদেনের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলা কিউআর’।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, যদি ডিজিটাল কারেন্সিকে জনপ্রিয় করা যায়, তাহলে অর্থ বেঁচে যাবে।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আরফান আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।