
গতকাল শুক্রবার মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ, যেটা আবার এই ভেন্যুতে স্বাগতিক বাংলাদেশের ১০০তম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখতে কিছুই করতে পারলেন না ‘হোম অব ক্রিকেট’-এর বাসিন্দারা। বছরজুড়ে এ মাঠেই চলে তাদের অনুশীলন, বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ম্যাচও তারা খেলেন এ ভেন্যুতেই। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কিছুই যেন কাজে এলো না। দলীয় রানটা ২০০ ছাড়াল না, কোনো ব্যাটসম্যান পেলেন না শতরানের দেখা। ইংল্যান্ডের করা ৭ উইকেটে ৩২৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৪৪.৪ ওভারে গুটিয়ে গেছে ১৯৪ রানে; হারটা ১৩২ রানের। ম্যাচ শেষে তামিম ইকবাল সংবাদ সম্মেলনে এসে হারের অনেক কারণই বলেছেন। ব্যাটিং ভালো হয়নি, ইনিংসের শুরুতে বোলিং ভালো হয়নি... ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে হারের প্রধান কারণের নাম কারান। স্যাম কারান নামের বছর চব্বিশের এক তরুণের কাছেই আসলে হেরেছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের জেসন রয় আর জস বাটলারের তা-বে একটা সময় মনে হচ্ছিল চারশোর কাছাকাছি রান হবে। সেখান থেকে দ্রুতই রয়, বাটলার আর উইল জ্যাকসকে আউট করার পর মনে হচ্ছিল তিনশোর নিচেই আটকে রাখা যাবে ইংল্যান্ডকে। মইন আলিকে নিয়ে একটু ভয় ছিল, তবে সিলেবাসের বাইরে থেকে এসে স্যাম কারান খেলে দিলেন ১৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস। ৩টা ছয় যার দুটি তাসকিনের করা ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ আর পঞ্চম বলে। ইংল্যান্ডের রানটা সোয়া তিনশো হয়ে গেল কারানের ইনিংসেই। এরপর বল করতে এলেন প্রথম ওভারেই। চতুর্থ বলেই লিটন দাসকে তুলে নিলেন জেসন রয়ের ক্যাচ বানিয়ে, পরের বলটা নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে আলতো চুমু খেয়ে চলে যায় বাটলারের গ্লাভসে। মুশফিকুর রহিম এসে হ্যাটট্রিকটা ঠেকিয়েছেন, তবে পরের ওভারে বাঁচেননি কারানের ছোবল থেকে।
লিটন দাস সবুজ ঘাসের বুকে নাকি ব্যাট দিয়ে মোনালিসা আঁকেন, তবে ইদানীং তার ব্যাট যা আঁকছে তাকে জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ছবিই বলা যায়। সবশেষ পাঁচ ওয়ানডেতে কোনো হাফসেঞ্চুরি নেই, এক অঙ্কের রানেই আউট হয়েছেন তিনবার। শান্ত আগের ম্যাচে অবশ্য হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন, এ জন্যই নিজেকে নিরাপদ ভাবছেন। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নাকি একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেন না, তবে মাঠে এ দুজনের ব্যাটের ভাষাতেই যা একটু বাঁচল বাংলাদেশ।
আগের দিন পণ্যদূত হিসেবে প্রচারণা চালিয়েও সাকিব বল হাতে প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যানের উইকেট নিতে পারেন, ব্যাট হাতে দলের সর্বোচ্চ ইনিংসটা খেলতে পারেন। এ জন্যই তিনি অনন্য। সাকিব কাল সেঞ্চুরি করা রয়কে আউট করেছেন, নিজে খেলেছেন ৬৯ বলে ৫৮ রানের ইনিংস। বাকিদের সঙ্গে তার এমন পার্থক্যের জন্যই বোধহয় নানান বিতর্ক আর অপেশাদার আচরণের পরও বিসিবি সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে অপারগ।
বৃহস্পতিবার বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান খেলোয়াড়দের সাহস দিতে গিয়েছিলেন টিম হোটেলে। তাতে ফল হয়েছে বিপরীত। প্রথম ম্যাচে তবু লড়াই করে, জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে হেরেছিল বাংলাদেশ। কাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লড়াইয়ের চেয়ে টিকে থাকার তাড়নাটাই বেশি দেখা গেল। তামিম ইকবাল নিজে ৬৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে যে পথটা দেখিয়েছেন, সে পথেই ম্যাচ থেকে ক্রমেই ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। অনেকের ভেতর অবশ্য সেই চেষ্টাটাও দেখা যায়নি। কুৎসিত ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহও, ম্যাচের অমন সময়ে ৪৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসের কোনো মানে নেই, অনেক ওভার থাকায় মাহমুদউল্লাহ যদি অন্তত অর্ধশতকেও যেতেন তাতেও না হয় ক্যারিয়ারে একটা হাফসেঞ্চুরি বাড়ত।
রান তাড়ায় আরেকটু সদিচ্ছা না থাকার কারণ হিসেবে তামিম বলে গেলেন, ‘আমরা যখন প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলি, এরপর দ্বিতীয় ওভারে আরও এক উইকেট। এ ধরনের ধাক্কা থেকে আপনাকে আবার নতুন করে ইনিংস শুরু করতে হয়। যেটা আমি আর সাকিব করার চেষ্টা করছিলাম এবং আপনি যখন ৩২৭ রান তাড়া করতে যাবেন একজনকে ঝুঁকি নিতেই হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি যখন এটা করতে গিয়েছিলাম, কাজে লাগেনি। দুই ওভারের মধ্যে আপনার যখন তিন উইকেট পড়ে যাবে ৩২৭ রান তাড়া করা আসলে সত্যিই কঠিন।’
নিজের ৩৫, সাকিবের ৫৮ বা মাহমুদউল্লাহর ৩২ রান যে এসব ম্যাচে হার বাঁচাবে না, সেটাও স্পষ্ট বুঝেছেন তামিম, ‘আজ থেকে যদি ধরেন ১০-১২ বা ১৫ বছর আগে যদি আমরা এ পরিস্থিতিতে থাকতাম, আমরা একটা সম্মানজনক সংগ্রহের কথা চিন্তা করতাম, হয়তো যখন তিন-চারটি উইকেট পড়ে গেছে। এখন যখন আমি আর সাকিব ব্যাট করছিলাম আমরা সবসময় জেতার জন্যই চিন্তা করে যাচ্ছিলাম। আপনার কখনো কখনো রিবিল্ড করতে হবে। আপনার যখন তিনটি উইকেট পড়ে যাবে, একটু সময় নিতে হবে। এ কারণেই কিন্তু আমার বা ওর এই শটটা খেলা। আমরা চাচ্ছিলাম যতটুকু এগোতে পারি। আগেই যদি তিন উইকেট পড়ার পর হার মেনে যেতাম, তাহলে খেলাটা অন্যরকম হতো। আস্তে আস্তে খেলছে সবাই। আমার মনে হয় না ওই স্টেজে আছি আমরা। ওরা যদি ৪০০ রানও করত, আমরা চেষ্টা করতাম, পারি বা না পারি সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু চেষ্টা করতাম। আমার কাছে মনে হয় আমি ও সাকিব যতক্ষণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু যেটা বললাম ৩০-৩৫-৫০ এ লক্ষ্য তাড়ার জন্য যথেষ্ট নয়।’
বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কোনো কিছুই যে সহজ হবে না, সেটা জানতেন সবাই। প্রথম ম্যাচে সুযোগ এসেছিল, সেটা ফসকে গেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগই দেয়নি ইংল্যান্ড। তাই প্রায় সাত বছর ধরে ঘরের মাঠে টানা সাতটি ওয়ানডে সিরিজে অপরাজিত থাকার পর ফের সেই ইংল্যান্ডের কাছেই হার। আগেরবার তাও দ্বিতীয় ম্যাচটা জিতেছিল বাংলাদেশ, এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা অপেক্ষা করেনি তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত। এটাই বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ডের সঙ্গে আগের ইংল্যান্ডের তফাত।
সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে। ডলার সংকটে অর্থনীতিও বেকায়দায়। অন্যদিকে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগ সব মিলে জাতীয় নির্বাচনের আগে ভাবমূর্তির সংকট দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার।
এ অবস্থায় সরকার ও দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চলতি বছর কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মনে করেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি আরও পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। সে কারণে মানুষকে খুশি করতে হবে। আর সে জন্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটের মাঠে মানুষকে চমক দিতে চান সরকারপ্রধান। তার এমন সিদ্ধান্তে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজনকে শাস্তির মুখোমুখি পড়তে হতে পারে।
চলতি বছর জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে আরও কিছু কাজ করতে চায় সরকার; বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে যে বেকায়দায় ফেলেছে, তা পুষিয়ে নিতে চায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন সুবিধা দেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা এবারের বাজেটে স্বল্প পরিসরে হলেও বাস্তবায়ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে সরকারের। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা করেছেন। কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, সে জন্য পরামর্শও চেয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু দেশের টাকা বিদেশে পাচার। পাচার রোধ করতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা ও আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, এপ্রিল থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের টাকা বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে এমন আলোচনা আছে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে গেলে নির্মোহভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেটা কার্যকর করতে হবে। করা গেলে ভোটে তার সুফল মিলবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজ ধরতে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও কার্যকর করে তোলা হচ্ছে; বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আরও জোরদার ও দৃশ্যমান হবে নির্বাচনী বছরে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশে টাকা পাচারকারীরা দেশের শত্রু। অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধীর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার সব সময় আপসহীন। অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যারাই রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে আপস করা শেখ হাসিনার নীতি নয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেছেন, “টাকা পাচারকারীদের তালিকা দেন, ব্যবস্থা নেব।” আমি মনে করি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হবে।’
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এমন কিছু অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হবে, যা ভোটের মাঠে সরকার ও আওয়ামী লীগকে আলোচনায় রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আরও মজবুত করে তুলবে। তার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশংসিত হবে তেমন কিছু আলোচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নীতি অনুসরণ করা হবে।
সরকারের এ পরিকল্পনার কথা সর্বশেষ দলীয় এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেও জানিয়েছেন। ওই কর্মসূচিতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হচ্ছেন! কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই সাবধান ও সতর্ক হয়ে যান। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা তারই ইঙ্গিত ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য, এমনই দাবি করেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও।
কঠোর কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকম-লীর একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার যারা করেছেন, প্রথমেই তাদের বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ যাবেন সরকারপ্রধান। তারা বলেন, অপরাধীরা দলের হোক আর যত বড় প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিছপা হবেন না টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেন্দ্রীয় ওই নেতারা আরও বলেন, অর্থ পাচারের বিষয়টি এই মুহূর্তে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ঊর্ধ্বমুখী হবে। মাদক কারবারি ও এর সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান জোরদার করা হবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এ দুটি জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রূপরেখা তৈরির কাজও হয়েছে। অভিযান শুরু হবে সেখান থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত বা আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারাও শাস্তির আওতায় আসবেন। এ ক্ষেত্রে কে দলীয় বা দলীয় নয়, সে বিবেচনা করা হবে না।
আওয়ামী লীগের পদপদবি ব্যবহার করে ক্ষমতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন দলের এই অংশকেও শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে হাঁটবে সরকার। গত এক যুগে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, জনপ্রিয়তার রাস টেনে ধরেছেন সেসব আগাছা-পরগাছা উপড়ে ফেলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘দানব’ বনে যাওয়া কিছু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এমন আভাসও পাওয়া গেছে। তবে ‘দানব’ বনে যাওয়া সংসদ সদস্যদের সবচেয়ে বড় শাস্তি হবে মনোনয়ন না দেওয়া।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যেসব উন্নয়ন শেখ হাসিনার সরকার করেছে সেসব। পাশাপাশি কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি চমক সৃষ্টি করবে ভোটের মাঠে। তারা বলেন, ভোটের আগে ভোটের মাঠে অনেক চমকের মধ্যে এটিও অন্যতম। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখবে তেমন পরিকল্পনা থেকে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যায়-অনিয়মকে কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্রয় দেননি। এ ক্ষেত্রে নিজের দল ও অন্য দল এ বিবেচনাবোধ নেত্রী (শেখ হাসিনা) করেন না।’ তিনি বলেন, অপরাধীর পরিচয় তার কাছে অপরাধীই।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায় (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আরিফুর রহমান (২৮) নামে এক যুবক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশ সদস্য, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬০ জন। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসান (২৩) নামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দুপুর ২টার পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সংঘর্ষের শুরু হয়; যা ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায়, চলে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। সংঘর্ষের সময় তৌহিদি জনতার ব্যানারে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
রাত ৮টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সালানা জলসা আয়োজনের অনুমতি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে শহরে মাইকিং করার পর উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৭ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে, সেটা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
গতকাল জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড় সিনেমা হল রোডসহ চৌরঙ্গী এলাকায় একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তাদের সঙ্গে এলাকার বাইরের অচেনা অনেক মানুষকে যোগ দিতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা পাল্টা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। তখন পুলিশ পিছু হটে। পরে বিক্ষোভকারীরা সিনেমা হল রোডে আহমদিয়াদের মালিকানাধীন দুটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল বের করে সড়কে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া করতোয়া নদীর পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় সাতটি মোটরসাইকেলও পোড়ানো হয়। একই সময় ধাক্কামারা গোল চক্করে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সেখানেও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চলে। পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর ও আগুনের ছবি তুলতে গেলে এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান টুটুলকে বেধড়ক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া আরও কয়েকজন সাংবাদিককে ছবি তুলতে গেলে লাঞ্ছিত করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের অদূরে আহাম্মদনগর গ্রামে আহমদিয়াদের জলসা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হলে চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের সিনেমা হল সড়কে পিছু হটে। বিকেলে করতোয়া নদী হেঁটে ও নৌকায় পার হয়ে কিছু মানুষ আহম্মদনগরে ঢুকে আহমদিয়াদের অন্তত ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাতে আগুন জ¦ালিয়ে দেয়। এ সময় তাদের হামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ধাক্কামারা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল একদল জনতা। এ সময় আহম্মদনগর এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলছিল বলে জানা গেছে। হামলার ঘটনায় শহরের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা যোগ দেন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন।
সংঘর্ষে নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন। সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী আরিফুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনরা জানান, দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রংপুরে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল আলম দেশ রূপান্তরকে জানান, নিহত আরিফুরের মাথায় গুলির আঘাত ছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কুপিয়ে হত্যা করা জাহিদ হাসানের বাড়ি নাটোরের বনপাড়া এলাকায় বলে জানা গেছে। পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিক্ষোভকারীরা জাহিদ হাসানকে করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা গতকালের সহিংসতায় দুজনের মৃত্যুর তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানার এসআই কাউয়ুম আলী, ভবেশ চন্দ্র পাল, ট্রাফিক পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম, এএসআই মো. আবদুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আল-আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামানের নাম পাওয়া গেছে। আহত অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলে কর্মরত মাহমুদ আহমাদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হামলা করে অনেককে আহত করা হয়েছে।
রাত ৯টার দিকে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
কাছাকাছি সময়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সালানা জলসা আয়োজনের অনুমতি বাতিল করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ ছাড়া শহরে পর্যাপ্ত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তবে গতকাল দুপুরে মিছিল বের করার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অস্বীকার করেছেন। মসজিদ থেকে লোকজন নিজেরাই মিছিল বের করে বলে তাদের দাবি।
সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে সিদ্ধিরগঞ্জে বিক্ষোভ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আহমদিয়াদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল বাদ জুমা ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি বাংলাদেশের’ উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। কমিটির বাংলাদেশের আমির আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সির নেতৃত্বে সমাবেশে পঞ্চগড়ে সালানা জলসা বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বক্তারা।
দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণের ক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি কাজে লাগাতে পারছে না। এমনটাই মনে করছেন দলটির ওপরের সারির কয়েকজন নেতা। তাদের কারও কারও মধ্যে দলের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েও হতাশা আছে। তারা বলছেন, বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে সরব থাকুক তা দেখতে চায় মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের অংশ হিসেবে জনগণ এগিয়ে রয়েছে, কিন্তু জনগণের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি।
অবশ্য দলের মহাসচিব বলছেন, রাজনীতির বাস্তবতা অনেক কঠিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নয়াপল্টনে দলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর এক দফার কর্মসূচি আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এক দফা থেকে সরে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হলো। দেশের জনগণ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বিএনপি। বিএনপি আদৌ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের এক দফার আন্দোলনে যেতে হবে। তাই দেরি না করে আগেভাগে ঘোষণা দিয়ে দেওয়াই ভালো।’
বিএনপির আন্দোলনের ধীরগতির বিষয়ে দলটির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণ এর একটা বিহিত চায়। ডিসেম্বর মাসে দেশের জনগণ, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ছিল। ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশে দলের নেতাকর্মীরা সব বাধা অতিক্রম করে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সফল করেছে। এসব দেখে সরকাব ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। কিন্তু বিএনপির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এবং দলটির কিছু দায়িত্বশীল নেতার দায়িত্বহীন বক্তব্যে সব ভেস্তে যায়।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অনৈতিক অভিযানের ক্ষয়ক্ষতি আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী এখনো জেলে আছেন। বিএনপি পিছিয়ে নেই। কারণ প্রতিটি আন্দোলনের একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছি। সেটি ছিল একটি পর্যায়ের আন্দোলনের শেষ ধাপ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব আগেই বলেছিলেন ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ শেষ কর্মসূচি নয়; বরং একটি ধাপের শেষ কর্মসূচি। তারপরও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিল। কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া কার্যালয়ে তান্ডব চালায়।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দায়িত্বশীল কিছু নেতার দায়িত্বহীন মেঠো বক্তব্যে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথায়। সমাবেশে যোগ দেবেন খালেদা জিয়া। নেতাদের এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যে সরকার বিব্রত হয়। আর যার রেশ পড়ে দলের ওপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভ্রান্ত হন। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অভিযান দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্বহীন বক্তব্যে।’
রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২২ নভেম্বর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘এখনো তো আসল ঘোষণা দিইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখ। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া হত্যার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের জীবন নিয়ে খেলছেন। আমাদের সাতজনকে হত্যা করেছেন। ভাবছেন পার পেয়ে যাবেন? “এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি।” এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নেই। যেতেই হবে। তাই শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, জেগে উঠতে হবে। আন্দোলনে ফেটে পড়তে হবে। এমনি-এমনি কেউ সরে না, সরাতে হবে। জনগণের বল দিয়ে, শক্তি দিয়ে এ সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করতে হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের অভিযানের ক্ষত এখনো শুকায়নি। কার্যালয়ের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক নিয়ে যাওয়ায় অনেক তথ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এখনো মুক্তি পাননি। গুরুতর অসুস্থ রিজভীকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। যেকোনো সময় যেকোনো অঘটনা ঘটে যেতে পারে। এক দফা আন্দোলনের যে ঘোষণা আসার কথা ছিল তার আগেই আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। এখানে তো আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিই না। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের কষ্ট লাঘব ও তাদের হারানো সব সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে রয়েছি। জনগণ অনেক সময় আবেগ নিয়ে অনেক কথা বলে। কিন্তু রাজনীতিতে আবেগের জায়গা নেই। আমরা এখন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছি। ধাপে ধাপে আমরা এ আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে নিয়ে যাব। রাজনীতিতে সময় বেঁধে সরকারের পতন ঘটানো যায় না; বরং পরিস্থিতি বলে দেয় কখন কীভাবে আগাতে হবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’
বিভাগীয় সমাবেশের আগে দলের নেতাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাঠের বক্তব্য আর বাস্তবতা এক নয়। তা ছাড়া দলের নীতিনির্ধারক ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য বিএনপির সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেওয়া ঠিক নয়। তবে দলের নেতাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক সফলভাবে শেষ হওয়ায় জয়শঙ্করকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বৈঠক হয়। গতকাল রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ব্রাজিল, মেক্সিকো, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এবং বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান মোমেন। এ ছাড়া এসব বৈঠকে বাণিজ্য ও সম্পর্ক আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় মেক্সিকোর দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান।
‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ থিমের ওপর ভারতের সভাপতিত্বে দিল্লিতে গত বুধবার রাতে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশে^র প্রধান অর্থনৈতিক জোটের (জি-২০) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনব্যাপী বৈঠক। গত বৃহস্পতিবার মূল আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এ বৈঠকে যোগ দেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ভারত জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব পায়। আগামী ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। এরই মধ্যে এই সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
ভারতে তিন দিনের সফর শেষ করে গতকাল রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করেন।
‘টাকা’ অথবা নিজস্ব নোট স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌম এখতিয়ারের প্রতীক। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কাগজি মুদ্রার (টাকা বা টঙ্ক) প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। প্রথম কাগজি মুদ্রার প্রচলনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তৃতীয়বারের মতো ‘টাকা দিবস’ পালিত হবে আজ।
মুদ্রা প্রচলনের আগে মানুষ লেনদেন করত বিনিময় প্রথায়। কোনো একটি পণ্যকে একক হিসেবে গণ্য করে পণ্যের সঙ্গে পণ্য বিনিময় করা হতো। ওই পণ্যটিই ‘মুদ্রা’র কাজ করত। কালক্রমে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। তখন মানুষ ‘কড়ি’র মাধ্যমে বিনিময় করত। তখন ‘গদ’ নারায়ণের যুগ।
ক্রমে ধাতব পদার্থ বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে ওঠে। প্রচলন শুরু হয় তামা, লোহা বা রুপার মুদ্রা। এর ধারাবাহিকতায় একসময় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন হয়। এরপর স্বর্ণমুদ্রা থেকে কাগজি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। ‘মুদ্রা’ প্রচলনের যুগটিই ‘নগদ’ নারায়ণের যুগ। এখনো মানুষ নগদ নারায়ণেই আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির বিকাশের (বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির) ‘নির্ব্যক্ত-নিরুক্ত’ চাপে বা প্রভাবে আগামী দশকে কাগুজে বা বহনযোগ্য মুদ্রার প্রয়োজনীতা কমবে। টাকা ছাপানোর খরচও কমে আসবে।
তথ্য-সাবুদ বলে, প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিসরে বিনিময়প্রথার প্রচলন ছিল। আর পুরাণ-ব্যাকরণ বলে, এ প্রথার শুরু হয়েছিল ভারতে। প্রজাপতি বেণের সময়ে বিনিময়প্রথার শুরু। যা-ই হোক, নথিবদ্ধ তথ্যে গুরুত্ব দিয়ে বলতে হয়, বিনিময়ের জন্যই ‘একক’ পণ্যের ব্যবহার শুরু। মানবসমাজ অনেক কিছুই মুদ্রা বা টঙ্ক (টাকা) হিসেবে ব্যবহার করেছে। লবণ, কফি বিন, শস্যদানা, গরু ও হাঙরের দাঁত, মূল্যবান পাথর প্রভৃতি। আর ভারত উপমহাদেশে (বাংলাদেশসহ) চল ছিল কড়ির।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ বা পঞ্চম অব্দে তুরস্কের এশিয়া মহাদেশীয় অংশে (এশিয়া মাইনর) লিদিয়া অঞ্চলে প্রথম মুদ্রার চল তৈরি হয়। লিদীয়দের মুদ্রা প্রচলনের কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন ভারতে ‘মুদ্রা’র প্রচলন হয়। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সুমেরীয়রা বার্লি বিক্রির জন্য প্রথম ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করে।
ধাতব মুদ্রার পথ ধরেই আসে কাগুজে মুদ্রা। কাগুজে মুদ্রা বা নোটের প্রচলন শুরু হয় চীনে; তাঙ রাজবংশের রাজত্বকালে (৬১৮-৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ)। ১৬৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে কাগজের নোটের প্রস্তাব করা হয়। ১৭৬০ সালে প্রথম ডলার ছাপানো হয় এবং তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়।
আজকের যে অর্থব্যবস্থা তাতে স্বর্ণ-রৌপ্যের ভূমিকা সরাসরি তেমন নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত মুদ্রাব্যবস্থায় কাগজের মুদ্রার সঙ্গে স্বর্ণের সরাসরি যোগসূত্র ছিল। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর আস্থা ছিল স্বর্ণ বা স্বর্ণমানের ওপর। মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে ও মুদ্রামান নির্ণয়ে স্বর্ণ হয়ে ওঠে নিয়ামক।
বাংলাদেশে টাকার প্রচলন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নেয়। স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রতীক হলো নিজস্ব মুদ্রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচলন করে নিজস্ব ব্যাংক নোট। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশের ১ টাকা ও ১০০ টাকার ব্যাংক নোট চালু হয়।
আগে এ দেশে পাকিস্তানের ব্যাংক নোট চলত; মুদ্রার নাম ছিল রুপি। বাংলাদেশের মুদ্রার নাম রাখা হয় টাকা। টঙ্ক কথা থেকে এর উদ্ভব। ৪ মার্চ ১৯৭২ প্রকাশিত দুটি ব্যাংক নোট ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হয়। ১ টাকার নকশায় বাংলাদেশের মানচিত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কথাটি স্থান পায় এবং তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন তখনকার অর্থসচিব কে এ জামান। আর ১০০ টাকার নকশায় দেখা যায় বাংলাদেশের মানচিত্র এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং তাতে লেখা বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নোটটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর এ এন হামিদ উল্ল্যাহ্র স্বাক্ষর ছিল। এখন বাংলাদেশে ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট রয়েছে। পাশাপাশি ১, ২ এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাও আছে। আগে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার প্রচলন ছিল, যা বর্তমানে অচল। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে কাগুজে নোট প্রচলনের ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ছাপানো টাকা ও কয়েন (মুদ্রা) মিলে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংক নোট ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার। আর সরকারের নোট ও কয়েন ১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার। তবে দেশে ব্রড মানির পরিমাণ ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।
চাইলেই কি নোট ছাপানো যায়?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে না। এর জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, তা মেনে কাজ করতে হয়। পুরো বিষয়টি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে বাড়িয়ে দেবে জীবনযাত্রার খরচ। অর্থনীতির স্বার্থেই ভারসাম্য রাখতে হয়।
পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন বা অর্থের প্রবাহের বিষয়টি দেখেই নতুন নোট ছাপা হয়। অনেক সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছিঁড়ে যাওয়া, পুড়ে নষ্ট হওয়া বা রি-ইস্যু করা যায় না এমন নোট ব্যাংকিং চ্যানেলে মার্কেট থেকে তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঘাটতি পূরণেও নতুন নোট সরবরাহ করা হয়।
ডলার, সরকারের ট্রেজারি বিল বা বন্ডের বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়তে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার যদি বিদেশি ঋণ না পায়, তবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ট্রেজারি বিল বা বন্ড ছাড়ে। এসব বিল বন্ডের বিনিময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় সরকার। ব্যাংকে তারল্যসংকট তৈরি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিল বা বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেয়। আবার বিল ও বন্ডের বিপরীতে ডিভলবিং ফান্ড (নতুন টাকা ছাপিয়ে) থেকে সরকারকে ঋণ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ
প্রতি বছর নতুন টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ হয় সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা। কোনো বছর ৭০০ কোটিও ছাড়িয়ে যায়। নানা কারণে টাকা নষ্ট হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক নষ্ট নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে তার বিপরীতে নতুন নোট ছাড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ১০০০ টাকার নোট ছাপাতে ৫ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। ২০০ টাকার নোটে ৩ টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা, ১০, ২০, ৫০ টাকার সব নোটেই দেড় টাকা। আর ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কয়েন তৈরিতে। প্রতিটি কয়েনে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। তবে কয়েন বেশি টেকসই। নোট ছাপানোর খরচের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা তথা ক্যাশলেস ব্যবস্থার দিকে যেতে চায়।
টাকার প্রচলন কমানোর উদ্যোগ
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় বিশে^র বিভিন্ন দেশেই এখন নগদ টাকার ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধার্থে নিয়ে এসেছে ‘বিনিময়’ নামে অ্যাপ। এর সাহায্যে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সহজে লেনদেন করা যাবে। আর কেনাকাটায় গ্রাহক ও দোকানির মধ্যে সহজ লেনদেনের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলা কিউআর’।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, যদি ডিজিটাল কারেন্সিকে জনপ্রিয় করা যায়, তাহলে অর্থ বেঁচে যাবে।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আরফান আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
সার কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে আমদানিকৃত গ্যাসের ওপর ভর দিয়ে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরপরও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এভাবে গ্যাস বন্ধ কিংবা সীমিত করে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার ফলে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্রাহকরা যেমন ঠিকমতো গ্যাস পাবে না, তেমনি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়বে। সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়। রমজান, সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাকি গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে।
বর্তমানে দেশে দৈনিক প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং বাকি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হলে ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য খাতে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ভুল। কারণ কদিন আগেও বিশ^বাজারে এলএনজির দাম ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন সেটা অনেক কমলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে পারে। তখন গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’
‘সংকটের মুখে পড়ে সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আরও আগেই এ কাজ করা দরকার ছিল। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে যখন আমদানি শুরু হয় তখন থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতো তাহলে এতদিনে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না’ যোগ করেন তিনি।
বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানিতে যতবেশি নজর দেওয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ততটায় অবহেলিত রয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫ থেকে ৭টা কূপ খনন করা গেলে সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, বিশ^বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। দাম কমতে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে খোলাবাজার থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। চলতি মাস থেকে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করায় গ্যাসের সরবরাহও বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ৩০০ মিলিয়ন এবং জুনে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খোলাবাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশীয় গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলাবাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো কারণে খোলাবাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায় তাহলে গ্যাস সরবরাহ আরও কমবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেলে বাসাবাড়ি ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ কমানো অথবা সরবরাহ বন্ধ করা হবে দিনের কিছু সময়ের জন্য। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হবে। তবে রমজানে সাহরি ও ইফতার তৈরিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে মানুষের ভোগান্তি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘এটা একটা জোড়াতালির পরিকল্পনা। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা নাগরিক হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। এতে এলপিজির দামও আরও বেড়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আমদানিকৃত ও দেশীয় বিদ্যুতের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ¦ালানির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে যাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা ও অন্যান্য জ¦ালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সবমিলে এ বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চদামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।