
আহমদিয়া জামাত (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের পর পঞ্চগড় জেলা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গত শুক্রবারের ওই সংঘর্ষের পর গতকাল শনিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করে আজানা আতঙ্ক। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহল দেখা গেছে।
শুক্রবারের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও আহমদিয়াদের বাড়িঘরে হামলায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশ-বিজিবির সদস্য, সাংবাদিকসহ আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। শুক্রবার রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সালানা জলসা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গতকাল সকাল থেকে প্রশাসনের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জলসায় আসা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সময় তা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকেলে সালানা জলসা মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বহিঃসম্পর্ক, গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বাদ জুমা জলসা শুরু হলে আক্রমণ শুরু হয়। প্রথম তিন ঘণ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহায়তা পাইনি, যা আমাদের ব্যথিত ও বিস্মিত করেছে। হামলাকারীরা আমাদের এক তরুণকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া ৭০ জনকে আহত করেছে। দুষ্কৃতকারীরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয়। ইটপাটকেল ছোড়ে। বারবার পুলিশ ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের আশ্বস্ত করে বলা হয়, পুলিশ-বিজিবি আছে সমস্যা হবে না। পুলিশ-বিজিবি ছিল, কিন্তু কোনো কারণে তারা নিষ্ক্রিয় ছিল জানি না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এত বেশি হতো না দাবি করে আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমে তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) ২০/২০ জন ছিল। পুলিশ-বিজিবি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এতগুলো বাড়িঘর পুড়ত না, লুটপাট হতো না। দুটি গ্রামে দেড়শর বেশি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করেছে। পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। পুরো আহমদিয়া সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বাদ এশা প্রশাসনের অনুরোধে আহমদিয়া সম্প্রদায় সালানা জলসা স্থগিত করার পরও অনেক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছে।’
শুক্রবারের হামলার ঘটনায় আহমদিয়া জামাতের পক্ষে ওসমান আলী নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে পঞ্চগড় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ (এজাহার) জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত পুলিশ তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি। অবশ্য হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা নথিভুক্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।’
আরিফকে দাফন, জাহিদের লাশ পাঠানো হলো নাটোরে : গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় মাথায় গুলি লেগে নিহত মো. আরিফুজ্জামান আরিফের (২৭) জানাজা গতকাল বিকেল ৩টায় পঞ্চগড় শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে শহরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। অন্যদিকে আহমদনগরে কুপিয়ে হত্যা করা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসানের (২২) মরদেহ বাদ জোহর জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নাটোরের বনপাড়া পৌর এলাকার চিরইল গ্রামে পাঠানো হয়। এর আগে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। নিহত জাহিদ সালানা জলসার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাকে ধরে টেনেহিঁচড়ে করতোয়া নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানেই তার লাশ পড়েছিল। রাতে উদ্ধার করে জলসাস্থলে আনা হয়।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনায় দুজন মারা গেছেন, তবে কীভাবে মারা গেছেন তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। শহর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে।’
গত শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনা তদন্তে গতকাল পঞ্চগড়ে আসেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক রশিদুল ইসলাম। এ সময় পঞ্চগড় থানায় সাংবাদিকরা সহিংসতার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জলসা স্থগিতের পর পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।’
পঞ্চগড়ের ঘটনা সরকারের অপকৌশল দাবি বিএনপির : দেশ ও দেশের বাইরের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিভ্রান্ত করতে কৃত্রিমভাবে ধর্মীয় বিরোধের ইস্যু উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে হতাহতের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব এ ধরনের সংঘাতের জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের উদাসীনতা ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে দাবি করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকে সম্প্রীতি বহুকাল থেকেই বিরাজমান। আজ জনগণ দৈনন্দিন অর্থনৈতিক জীবনের দুর্ভোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্রের জন্য মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এ অবস্থায় জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই শাসকগোষ্ঠীর মদদে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত করা হচ্ছে। এটি সরকারের দীর্ঘদিনের অপরাজনীতির কৌশলমাত্র।’
সীতাকুণ্ডের কদম রসুল এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের ক্ষত না শুকাতেই একই এলাকায় আবারও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল অক্সিজেন প্ল্যান্টে। ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড’ নামের প্ল্যান্টে গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কেঁপে ওঠে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা। দুর্ঘটনার পর প্ল্যান্টের ভেতরে পাঁচজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্ল্যান্টের বাইরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২২ জন। এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি।
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল প্ল্যান্টটিতে অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আর পুরো প্ল্যান্টের ওপরের ছাউনি উড়ে গেছে। স্থাপনার লোহার রডগুলো বেঁকে রয়েছে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্ল্যান্টের মধ্যে একটি বড় সিলিন্ডার রয়েছে যেখানে অক্সিজেন উৎপাদিত হয়ে জমা হয়। পাইপের মাধ্যমে একটি স্পটে আসে। সেই স্পট থেকে ছোট আকারের অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলোতে অক্সিজেন রিফিল করা হয়। পুরো প্ল্যান্টে অক্সিজেন রিফিল করার দুটো স্পট রয়েছে। প্রতিটি স্পটে ৬ জন করে দুই স্পটে ১২ জন ডিউটিরত ছিলেন। বিস্ফোরণের পরপরই ওপরের ছাউনিগুলো উড়ে যায় এবং পাশের অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলোর নিচে চাপা পড়ে ওখানে কর্মরত শ্রমিকরা।
এ ঘটনায় নিহত পাঁচজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন শামসুল ইসলাম (৪০), ফরিদ (৩৬), রতন লকরেট (৪৫), আবদুল কাদের (৫০) ও সালাহউদ্দিন (৩৫)। বাকি একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও একজনের মরদেহ ভাটিয়ারি বিএসবিএ হাসপাতালে রয়েছে বলে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ জানান। এ ছাড়া ২২ জন আহত হলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মো. নূর হোসেন ( ৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান দাদা (৩৫), নাসিম শাহরিয়ার (২৬), মো. জাহিদ হাসান (২৬), মাকসুদুল আলম (৩০), মোহাম্মদ ওসমান (৪৫), মোহাম্মদ সোলায়মান (৪০), মোহাম্মদ রিপন (৪০) ও রোজী বেগম (২০)।
পুরো প্ল্যান্ট ঘুরে দেখা যায়, অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া পাশের একটি ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে। কারখানার সীমানা দেয়ালটি ভেঙে গেছে। প্ল্যান্টের বাইরে আরেকটি কারখানা ছিল সেটিও লোহার পাতের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের মানুষের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে এক শ্রমিক বলেন, ‘প্ল্যান্টের এই পাইপটি (চিমনি) ১০০ ফুট উঁচু ছিল। এর ওপরে ছিল ছাউনি। নিচ থেকে কী পরিমাণ শক্তিতে বিস্ফোরণ হলে তা পুরো উড়ে গিয়ে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডে পড়ে চিন্তা করে দেখেন।’ আর পুরো প্ল্যান্টটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণে অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে একটি লোহার খণ্ড প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে উড়ে গিয়ে শামসুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মাথার ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এমনিভাবে আশপাশের সকল বাড়িঘরের গ্লাসও বিস্ফোরণের শব্দে ভেঙে যায় এবং আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে লোহার খণ্ড।
কীভাবে হয়েছে এই দুর্ঘটনা?
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে কেউ কথা বলতে নারাজ। এখনই চটজলদি কোনো মন্তব্য করতে চায় না কেউ। ঘটনাস্থলে শুরু থেকে উপস্থিত থাকা সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমাদের প্রধান কাজ হলো উদ্ধার করা। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করার পর কী কারণে হয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে।’
অক্সিজেন প্ল্যান্টের একাধিক শ্রমিক জানান, প্ল্যান্টের মধ্যে কারিগরি কোনো সমস্যা হয়েছে হয়তো। অথবা যে পয়েন্টে সিলিন্ডারে রিফিল করা হয় সেখানে কোনো সমস্যা হলো কি না সেটাও দেখার বিষয়। তবে এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় কেউ।
তবে এখনই কারণ বলতে নারাজ ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগে উদ্ধার শেষ করি, পরে কারণ অনুসন্ধান করব। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে।’
কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে কী পরিমাণ লোক চাপা রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে কারখানার লোকজন জানান, এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। সাধারণত পুরো কারখানায় ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু বিস্ফোরণের সময় কতজন কাজ করছিলেন তা জানা নেই।
গাউছিয়া কমিটির সদস্যদের একজন মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকায় আগুনের কু-লী ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে তা নিভে যায়। তবে এখান থেকে লোহার পাতগুলো আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল আলম বলেন, ‘অক্সিজেন কারখানা থেকে আমার বাড়ি অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘরের দরজা এবং জানালা ভেঙে নিচে পড়ে যায়।’
শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদিত হতো কারখানাটিতে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদিত হতো কারখানাটিতে। এটি সীমা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রয়াত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। জাহাজভাঙা শিল্পে লোহা কাটার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় সেখানে এবং অন্যান্য কারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় প্রতিষ্ঠানটি থেকে। ১৯৯৭ সালে কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কারখানাটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদিত হতো। মূলত বাতাস থেকে অক্সিজেন পৃথককরণ করে সিলিন্ডারে অক্সিজেন সংরক্ষণ করা হয়। তাদের মালিকানাধীন সীমা স্টিল রিরোলিং মিলস রয়েছে। সেই কারখানায় বছর দশেক আগেও একবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এ সময় তিনি আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাকিব হাসানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ জুন সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ৬০০ মিটার উত্তরের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
দেশের বিচারিক আদালতগুলোতে মৃত্যুদণ্ড কমছে। একই সঙ্গে এক মামলায় বেশিসংখ্যক আসামিকে সর্বোচ্চ এই সাজা দেওয়ার প্রবণতাও কমে আসছে। বিকল্প সাজা হিসেবে আমৃত্যু ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সঙ্গে এর আগের ছয় মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে এই প্রবণতা দেখা গেছে।
গত বছরের ৩১ মে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ‘কেন এত বেশি মৃত্যুদণ্ড’, ১ জুন ‘৮৬ শতাংশ মৃত্যুদণ্ডই টেকেনি হাইকোর্টে’ এবং ২ জুন ‘প্রাণদন্ডের পক্ষে-বিপক্ষে’ শিরোনামে ধারাবাহিক তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনগুলোতে ব্যাপকহারে মৃত্যুদণ্ড, সর্বোচ্চ সাজার প্রভাব, উচ্চ আদালতে বেশির ভাগ দন্ড বহাল না থাকা, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবারের আর্থিক ও সামাজিক দুরবস্থা, দণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগেই বছরের পর বছর কনডেম সেলে রাখার বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকদের নানা অভিমত উঠে আসে।
প্রতিবেদন তিনটি প্রকাশের পর থেকে দেশ রূপান্তর মৃত্যুদন্ডের রায়ের তথ্য সংরক্ষণ করতে শুরু করে। ছয় মাসের তথ্য সংরক্ষণের পর সেগুলো পর্যালোচনা করে বিচারিক আদালতে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার প্রবণতা কমার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সারা দেশে বিচারিক আদালতে ৪২ মামলাতেই মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল ১৬২ জনের। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭৮টি মামলার রায় পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১০৮ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়মিত ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেন এমন বেশ কয়েকজন আইনজীবী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই বিচারকরা সতর্কতা, বিচক্ষণতা ও বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দিচ্ছেন। যে কারণে ব্যাপকহারে ফাঁসির দন্ড কমে আসছে। এটি ইতিবাচক। মৃত্যুদন্ডের মতো সাজা নিয়ে বিশ্বজুড়েই নানা তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশেও এর পক্ষে ও বিপক্ষে নানা অভিমত ও বিতর্ক রয়েছে। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীদের ভাষ্য, পৃথিবীজুড়ে প্রাণদন্ডের মতো সাজা দিয়ে অপরাধ নির্মূলের ধারণা ক্রমেই কমে আসছে। বেশির ভাগ দেশই মৃত্যুদন্ড বাতিল করেছে। সর্বশেষ মালয়েশিয়া গত বছরের জুনে বাতিল করেছে।
প্রাণদন্ডের মতো সর্বোচ্চ সাজা এবং এই দণ্ডের ফলে সমাজ ও মানুষের মধ্যে এর প্রভাব নিয়ে দেশে গবেষণা নেই বললেই চলে। ফাঁসির দন্ড পাওয়া কিছু আসামি নিয়ে গত কয়েক দশকে বেসরকারিভাবে দুই-একটি গবেষণার উদাহরণ রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত কারাগারের কনডেম সেলগুলোতে ২ হাজার ১৬২ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে। বন্দিদের মধ্যে ৬৩ জন নারী। তবে বিচারিক আদালতে দেওয়া মৃত্যুদন্ডের ৮০ শতাংশের বেশিই হাইকোর্টে টেকে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাপকহারে ফাঁসির রায় থেকে বেরিয়ে আসা আমি মনে করি সুখকর। তার মানে এই নয় যে নৃশংস অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হোক। বিকল্প তো আছে। আসলে সর্বোচ্চ এই সাজাটা সমাজ ও মানুষকে কিন্তু তেমন কিছু উপকারিতা এনে দেয় বলে মনে হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটা লোককে যদি আপনি মৃত্যুদণ্ড দেন সমাজে তার অবস্থান, তার পরিবারের অবস্থান সব মিলিয়ে নড়বড়ে ও দুর্বল হয়ে যায়। এই টানাপোড়েনে পরিবারের অনেকেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক বছরে যে হারে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তাতে কি অপরাধ কমেছে? কমেনি। আমার মনে হয়, অপরাধ কেন বেশি হয়, কীভাবে কমানো যায় এটি নিয়ে বেশি বেশি কাজ করা উচিত। প্রাণদণ্ড নিয়ে এখন থেকেই চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসা উচিত।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পৃথিবীর জন্ম থেকে শুরু করে হত্যাসহ অসংখ্য বড় বড় অপরাধ হয়েছে। বহু মৃত্যুদণ্ডও হয়েছে। কিন্তু এতে কিন্তু অপরাধ কমেনি। আসলে এভাবে অপরাধ নির্মূলে কোনো সমাধান আসে না এই বাস্তবতাটা আমাদের অনুধাবন করা উচিত। মৃত্যুদ- তুলে দেওয়া একবারে তো হবে না। আস্তে আস্তে তুলে দেওয়া উচিত। তবে কমাতে গেলে যদি দেখি যে শাস্তিই হবে না খালাস হয়ে যাবে, এটাও কিন্তু কাম্য নয়। ফাঁসিতে না গিয়ে অন্য সাজাতে যেতে হবে। বিচারকদের তো সেই সুযোগ রয়েছে।’
রায় পর্যালোচনায় যা মিলেছে : জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশের বিচারিক আদালতে হওয়া ১৭৮টি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের মামলার রায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হত্যার ১৫২টি মামলায় (৯ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা) সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে ৯৪ জনকে। আর ধর্ষণের পৃথক তিনটি মামলার একটিতে ৬ জনকে এবং অন্য দুটিতে ৪ জনকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাদকের একটি মামলায় ৪ জনকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। মামলাগুলোর মধ্যে ১৪টি হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে বিচারিক আদালত। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ৩৭৮ জনের।
এ সময়ের মধ্যে ময়মনসিংহের গৌরিপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যায় গত ১০ অক্টোবর ৭ জনকে, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মাকে টুকরো করে হত্যার মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি ছেলেসহ ৭ জনকে, বান্দরবানে একটি হত্যা মামলায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। এ ছাড়া খুলনার খালিশপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ৬ জনকে, হবিগঞ্জে একটি ধর্ষণের মামলায় গত ১ ডিসেম্বর ২ জনকে এবং ঢাকায় দুই শিশুকে ধর্ষণের মামলায় গত ২৯ জানুয়ারি ২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে মাদকের মামলায় গত ১৩ নভেম্বর ৪ জনকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয় আদালত। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অপরাধে গত ২৪ নভেম্বর ৫ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আদালত।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের মে মাস পর্যন্ত ছয় মাসে বিচারিক আদালতে ৪২টি মামলায় ১৬২ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়, যার ৯৮ ভাগ হত্যা মামলায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ১৩ জন করে ২৬ আসামিকে প্রাণদন্ড দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড দিয়ে অপরাধ কমানো এটা আধুনিক বিশ্ব আর বিশ্বাস করে না। মৃত্যুদণ্ড তো মেরে ফেলার মতোই। এটা তো মধ্যযুগীয় বিচারের মতো। তবে, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ফাঁসির দণ্ডই সমাধান এ ধারণা থেকে আমরা বেরোচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয় এখনো কাজ করে যে ফাঁসি দিলেই অপরাধ কমবে। কিন্তু কই সেটি তো হচ্ছে না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এটি বাতিল করেছে। তারা চিন্তা করেই এটি করেছে। সভ্যতা, শিক্ষা এবং মানুষের মৌলিক ও স্বীকৃত অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে অপরাধ কমবে ফাঁসিরও অবকাশ থাকবে না।’
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এস এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এজাহার এবং অভিযোগপত্র যদি আরও দক্ষ লোক দ্বারা করা হয়, আমি নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড আরও কমে আসবে। এভাবে ১৫ জন যদি আসামি হয়, দেখা যাবে শুধু মূল আসামিদের সাজা হচ্ছে, অন্যরা নির্দোষ প্রমাণিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নৃশংস ঘটনাগুলোতে সর্বোচ্চ সাজা হওয়াই সমীচীন। কেননা অপরাধীর সাজা না হলে সমাজ ভেঙে পড়বে। তবে, ফাঁসি এত সস্তা হওয়া উচিত নয়।’ অপরাধ অনুযায়ী বিচারের ওপর গুরুত্বারোপ করে এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘ফাঁসি কমানোরও দরকার নেই, বাড়ানোরও দরকার নেই এবং দিলে উচ্চ আদালতেও যেন তা বহাল থাকে।’
সার্বিক বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড বিচার বিশ্লেষণ করেই দেওয়া হয়। আর কমার কারণ হচ্ছে, আসামির অধিক বা কম বয়স, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, ঘটনার পরিস্থিতি ও বিচার বিশ্লেষণ, একই পরিবারের বেশি আসামি হলে কিংবা বিচারকদের বিচক্ষণতায় ফাঁসিটা কমে।’
দেশের মানুষ ও তার দল বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এবার আমরা আর কোনো নির্বাচন, সেই তামাশার নির্বাচন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন হতে দেব না, এ দেশের মানুষ হতে দেবে না।’ গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় (আজমপুর) বিএনপির পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দলটির মহাসচিব।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের থানায় থানায় এই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গতকালের সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবি আদায়ে ১১ মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান মোতাবেক দেশে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে না। দেশের জনগণ গত দুটি সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী সংসদ নির্বাচন হতে দেবে না। কারণ তারা অতীতে ভোট দিতে পারেনি।’
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে তারা যেভাবে গত দুইটা নির্বাচন করেছে, এবারও ওইভাবে নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। আর আবারও সেভাবে জনগণকে শোষণ করবে, জনগণের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাবে। এভাবে মানুষ এটা আর হতে দেবে না। কারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। রাজপথে আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমার নিজের মতো করে কাটাছেঁড়া করে তোমাদের মতো করে ছাপিয়ে নিয়েছ, সেখানে জনগণের কোনো অধিকার নাই সেই সংবিধান? যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে না, ভোট দিতে যায় না। আপনাদের মনে আছে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচন মানুষ ভোট দিতে পারে নাই, মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কুকুর-বিড়াল দেখা গেছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রয়াত নেতা শফিউল আলম প্রধান বলেছিলেন, কুত্তা মার্কা নির্বাচন।’
তুরাগের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার অভিযোগ : রাজধানীর তুরাগ থানাধীন ১০ নম্বর সেক্টরে পদযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ চলাকালে এক দফা এবং পদযাত্রা শেষে নেতাকর্মীরা ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আরেক দফা হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদযাত্রার আগে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা আহত হন। ইটের আঘাত লেগেছে আমার শরীরে। পরে পদযাত্রা শেষ করে নেতাকর্মীরা নিজ নিজ ঘরে ফেরার সময় অতর্কিত হামলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’ এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ করেন স্বপন।
এ ছাড়া রাজধানীর ৬২টির বেশি থানায় পদযাত্রা করে বিএনপি। যাত্রাবাড়ীতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শাহবাগে মির্জা আব্বাস, বংশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, পল্লবীতে আবদুল মঈন খান, গুলশানে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহানপুরে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পল্টনে আবদুস সালাম, কাফরুলে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, রূপনগরে হাবিবুর রহমান হাবিব, চকবাজারে ফরহাদ হালিম ডোনার, মোহাম্মদপুরে মামুন আহমেদ, ভাষানটেকে আবদুল হাই শিকদার, কদমতলীতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রামপুরায় খায়রুল কবির খোকন, শ্যামপুরে আসাদুজ্জামান রিপন এবং ধানমন্ডিতে নাসির উদ্দিন অসীমসহ বিভিন্ন থানায় কেন্দ্রীয় নেতারা পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। এসব পদযাত্রায় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এ ছাড়া গতকাল সকালে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে, ১২-দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংক থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টন মোড়ে থেকে আলাদা আলাদাভাবে পদযাত্রা করে। বিকেলে এলডিপি রাজধানীর পান্থপথ, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী থেকে তিনটি আলাদা পদযাত্রা বের করে।
ফখরুলের নিন্দা ও প্রতিবাদ : পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, কামরাঙ্গীরচর বিএনপি নেতা রাকিব, খিলগাঁও থানা বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, ভাটারা থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী, বিএনপি কর্মী মো. সুলতান হোসেন ও জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া কামরাঙ্গীচরে বিএনপির সহমানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়ার গাড়ি ভাঙচুর, মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফার বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি নৌকাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগরের সংসদীয় আসনগুলোতে পৃথক শান্তি সমাবেশ থেকে দলের নেতারা এই নির্দেশনা দেন।
ওই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতারা আরও বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। আর এ ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি।’
সরকার পতন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থানায় থানায় পদযাত্রা করে বিএনপি। এসব কর্মসূচি থেকে সহিংসতা হতে পারে দাবি করে তা প্রতিরোধে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছেন, ‘বিএনপি পদযাত্রার নামে আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আনতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার নির্দেশনা দেন নেতারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আওতাধীন সাতটি সংসদীয় আসন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর চারটি সংসদীয় আসনের এলাকায় শান্তি সমাবেশ করে। সমাবেশের পর মিছিল বের করা হয়। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি নগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেন ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন আটটি আসনে বিজয়ী হতে এখন থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী আট মাস আপনারা পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করবেন। শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খবর তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন।’ ঐক্যবদ্ধভাবে দল করলে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চায় বলে জানান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি বলেন, ‘সরকার বিরোধীদের ক্ষমতা ভাগাভাগির স্বপ্ন পুরণ হবে না।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শান্তি সমাবেশ থেকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই সরকার উৎখাত করা যাবে না। নির্বাচনই হলো ক্ষমতা বদলের একমাত্র পথ।’
অনির্বাচিত সরকার আনার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে বিএনপি নস্যাৎ করতে চায় বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দেশের গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে দলটির নেতাকর্মীরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত বলে জানান তারা। মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বরে আয়োজিত শান্তি সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে, দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়, দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে ভোট দেবে। যদি আগামী নির্বাচনে কেউ কোনো প্রকার বানচালের চেষ্টা করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিহত করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করব।’
বিএনপির পদযাত্রা থেকে হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং নিউ মার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এ দাবি করেন। তার দাবি বিএনপি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, দাঁতভাঙা জবাব দেবে।
তাপস বলেন, ‘আমরা চাইলে ঢাকা মহানগরের কোনো এলাকায় আপনাদের (বিএনপি) নামার সুযোগ ছিল না। তারপরেও গণতন্ত্রের স্বার্থে, সংবিধানের স্বার্থে আমরা কোনো বাধা দেব না।’
দেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও হেফাজতে ইসলামের বিকল্প শক্তি হিসেবে জায়গা নিতে চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ভোট এবং জোট দুটি পন্থায় এগোচ্ছে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি ইসলামপন্থী ১২টি দলকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে দলটি।
এদিকে নির্বাচনী মাঠে দলটি যে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে সেটি মনে করছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও। ফলে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি দলটির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে; বিশেষ করে আন্দোলন, ভোটের হিসাব কষে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, আপাতত নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মনোযোগী হলেও কিছু কমন এজেন্ডা নিয়ে মাঠে থাকবে তারা। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে দল দুটির এমন ইঙ্গিত দিলেও একটি পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত কোনো পক্ষই মুখ খুলতে নারাজ। তবে আলাদা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ব্যাপারে দৃশ্যমান বেশ কয়েকটি বৈঠক সেরেছে ইসলামী আন্দোলন। দলটির নেতারা বলছেন, আগামী জুনের মধ্যে জামায়াত ও হেফাজতের শূন্যতা পূরণে সমমনা ইসলামি দলগুলোকে এক কাতারে নিয়ে আসা এবং একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সমমনা অন্তত ১২টি দলের সঙ্গে পৃথক পৃথক আনুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক হবে না জানিয়ে দলটির একাধিক নেতা জানান, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য ইসলামি শক্তিগুলোর বিকল্প সক্রিয় প্ল্যাটফর্ম তৈরিই তাদের লক্ষ্য। প্রাথমিকভাবে এই প্ল্যাটফর্মের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনী মোর্চা’।
এদিকে সরকারি দলের বিরূপ প্রচারের কারণে জামায়াত নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক ধারণার আগেই সচেতনভাবে দলটিকে এড়িয়ে চলছে বিএনপি। প্রায় দুই যুগ ধরে আন্দোলন ও নির্বাচনে থাকলেও সম্প্রতি যুগপৎ কর্মসূচিতে জামায়াতের কর্মকা-ে খুশি নয় বিএনপি। তাই এবার নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী বাছাইয়ে দলটিকে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সে হিসেবে ভোটের মাঠে জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প শক্তি হিসেবে সক্রিয় বাকি ইসলামি দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। সব রকমের যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, দেশ রূপান্তরকে এমনটি জানিয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, দুই পক্ষই নিজ নিজ ফোরামে আলোচনা-পর্যালোচনার কাজটি সারছে। দুই দিক থেকে আসার ট্রেনে একটি জংশনে পৌঁছানোর পরই তা জানানো হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইসলামি বা অন্য দলগুলোর মতোই এসব প্রতিষ্ঠানেরও নির্দিষ্ট অনুসারী রয়েছে। ভোটের বাজারে এসব দল বা সংগঠনের চাহিদা রয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির কাছে। তাই এসব দল বা সংগঠনের সঙ্গে সব দলই বন্ধুত্ব রাখতে চায়। সংগত কারণে বিএনপির কাছেও এদের চাহিদা রয়েছে। আছে বলেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, আলোচনায় তারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে শিগগিরই একটা পরিণতির দিকে যাবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে ইসলামি শক্তির নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে ১০ থেকে ১২টি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দলগুলো একটু সময় নিচ্ছে। তবে আশা করি আগামী জুনের মধ্যেই এই জোটের অস্তিত্ব একটি রূপরেখায় পৌঁছাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জোট হলে এবার এককভাবে নয়, শরিককে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাদের একটি লিয়াজোঁ কমিটি রয়েছে।’
সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে দলটির আমন্ত্রণে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল যায়। এ সময় ঘোষিত ১০ দফা দাবির পক্ষে রাজপথে থাকতে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হলে জবাবে ইসলামী আন্দোলন জানায়, তাদের ১৯ দফায়ও সুষ্ঠু ভোট, রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় সরকারের কথা আছে। নিজেদের এজেন্ডার বাইরে আপাতত না গেলেও বিএনপিকে আশ^স্ত করা হয়েছে, সুষ্ঠু ভোটের জন্য যেকোনো আন্দোলনে মাঠে থাকবেন তারা। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনে সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে যোগ দিতে দেখা গেছে।
ইসলামি দলগুলোর একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, জোট করার লক্ষ্যে গত বছর থেকেই কাজ চলছে। ক্রীড়নক হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা ইতিমধ্যে পৃথকভাবে গত বছরের ৪ আগস্ট খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে, ২৬ আগস্ট পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে, ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতাদের সঙ্গে, ৩ সেপ্টেম্বর একই স্থানে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সঙ্গে, ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় অফিসে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে শিক্ষাক্রম নিয়ে আয়োজিত একগোলটেবিল আলোচনা হয়েছে। সেখানে গোলটেবিলের বাইরে জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন একাধিক ইসলামি দলের নেতারা।
সৌজন্য বৈঠকের কথা স্বীকার করে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পরিস্থিতি ও সময় বলে দেবে। এখনো তো সময় আছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ইসি নিবন্ধিত অংশের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল গফফার বলেন, ‘বিভিন্ন দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। সময় ও পরিস্থিতি হলে আমাদের শূূরা সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আটটি দল প্রয়াত শায়খুল হাদিস প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (জিয়া উদ্দীন), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (আতাউল্লাহ), খেলাফত মজলিস (ইসহাক), নেজামে ইসলাম পার্টি, ফরায়েজি আন্দোলন ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (আবুল খায়ের)। এই দলগুলো জোট গঠন প্রক্রিয়ায় সামনের কাতারে রয়েছে। নেজামে ইসলাম পার্টি, ফরায়েজি আন্দোলন ছাড়া বাকি ৬টি দলই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
ইসি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪০টি। এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ১০টি। আর কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল রয়েছে ৬টি।
বিএনপি ২০-দলীয় জোট ভেঙে দিলেও ভিন্ন ফরম্যাটে ৫টি দল ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস বিএনপির সঙ্গে রয়ে গেছে। যদিও ইসি নিবন্ধিত মূল দলের কোনোটিই এখন বিএনপির সঙ্গে নেই। অন্যদিকে মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট ও আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর খেলাফত আন্দোলন কোনো জোটে না গেলেও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জাকের পার্টি আগে থেকেই সরকারের সঙ্গে রয়েছে।
বেলজিয়ামের নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সম্মানতি বোধ করছেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা কেভিন ডি ব্রুইনা।
গত বছর বিশ্বকাপের পর রিয়াল মাদ্রিদ তারকা এডেন হ্যাজার্ড জাতীয় দলকে বিদায় জানান। বেলজিয়াম কোচ ডোমেনিকো টেডেসকো প্লেমেকার ডি ব্রুইনাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন। বিশ্বকাপের পর বেলজিয়ামের কোচের পদে রবার্তো মার্টিনেজের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন টেডেসকো।
গত জানুয়ারিতে ৩২ বছরে পা রেখেছেন ব্রুইনা। আরটিএল-টিভিআই টেলিভিশনে বেলজিয়ামের নেতৃত্ব পাওয়া নিয়ে ডি ব্রুইনা বলেছেন, ‘এভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সত্যিই সম্মানের। আমার বয়স প্রায় ৩২ হয়ে গেছে। আমি কখনই আন্তর্জাতিক অবসরের চিন্তা করিনি। আমি বিশ্বাস করি এখনো দলকে কিছু দেবার সক্ষমতা আমার আছে। এই সুযোগে তরুণদেরও সহযোগিতা করতে চাই।’
সুইডেনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ইউরো বাছাইপর্বে অধিনায়ক হিসেবে ডি ব্রুইনার অভিষেক হতে যাচ্ছে। মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ও চেলসি রোমেলু লুকাকু ডি ব্রুইনার সহ-অধিনায়ক হিসেবে কাজ করবেন।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কি না তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমার সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় আমি প্রত্যেককে বাড়ি দেব। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তরের সময় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। তিনি গতকাল ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে বাড়িপ্রাপ্তদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার ওপর একটি ভিডিও-প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন, একজন ব্যক্তি ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং এর অতিরিক্ত পরিমাণ জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র গড়তে রোডম্যাপ জরুরি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক-কৌশলগত সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। গতকাল ঢাকায় প্রথম অ্যাভিয়েশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিট-২০২৩’-এর আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কারণ, দেশটির এই অঞ্চলে একটি বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যাত্রী ও মালামাল উভয়ের জন্যই একটি উন্নত ও টেকসই বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারি সংস্থা, এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব পক্ষকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার ই-ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ও পর্যটনে আসা যাত্রীদের সুবিধা দেবে ও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যুবকদের অবশ্যই পাইলট, বিমান প্রকৌশলী, মেকানিক, ক্রু ও আরও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দেশের বিমানশিল্পে লোকবলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিমানশিল্প এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ও ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বক্তব্য দেন।
রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে ট্রেনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষের ঘটনায় ২ ঘণ্টা পর চালু হয়েছে রেল যোগাযোগ।
ইঞ্জিন পরীক্ষার পর পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ১১টার দিকে ছেড়ে যায়। এতে সড়কের ২ পাশের যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।
বুধবার রাত ৯টার পর মালিবাগ লেভেল ক্রসিংয়ে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোহাগ পরিবহনের একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ ঘটনায় তিন জন আহত হন। দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে কোনো যাত্রী ছিল না। ট্রেনের গতিও কম ছিল।
মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনার কামরুজ্জামান ফকির (৩৫) নামে এক পল্লি চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। এ সময় জাহিদ (২৮) নামে আরেকজন আহত হন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার শেখপুর বাজারসংলগ্ন মির্জারচর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুজ্জামান মাদারীপুর সদর উপজেলার আদিত্যপুর গ্রামের আবদুর রব ফকিরের ছেলে।
হাসপাতালে, ফায়ার সার্ভিস ও নিহতের আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরে কামরুজ্জামান তার আপন ভায়রা জাহিদকে নিয়ে তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী যাওয়ার উদ্দেশে শিবচরের পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হন। পাঁচ্চর থেকে বাসযোগে টঙ্গী যাওয়ার কথা ছিল তার। এ সময় তার মোটরসাইকেলটি শিবচর-মাদারীপুর আঞ্চলিক সড়কে শিবচরের শেখপুর মির্জারচর নামক স্থানে আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল থাকা দুজন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা কামরুজ্জামানকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত জাহিদকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শিবচর ফায়ার সার্ভিসের লিডার তরুনুর রশিদ খান বলেন, ভোরে আমরা খবর পেয় ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সকালে রোগীকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসে। পরে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পাই হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
একাত্তরের যুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, বিশেষ করে নজরুল ছিলেন বাঙালির সংগ্রামী চৈতন্যের অগ্নিস্রোত। কথা না-থাকলেও সেই দুর্বার সময়ে বিষণœতার কবি জীবনানন্দ দাশ ওই অগ্নিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেলেন। কেন ঢুকলেন তা বিচার করতে চাইলে বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানসচৈতন্যের দিকে তাকাতে হবে। কল্পনাবিলাসী, আবেগপ্রবণ, ভাবুক, দুঃখবাদী, বিষন্ন, প্রকৃতিমুগ্ধ, কৃষিভিত্তিক জীবনবিলাসী বাঙালি রক্তাক্ত বিদ্রোহের ভেতরও ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’ আর ‘দু’দণ্ড শান্তি’-এর মতো ‘নাটোরের বনলতা সেন’কে কেন বারবার স্মরণ করত? এ প্রশ্ন অনিবার্য। আশ্চর্য এই যে, ভাববাদী রোমান্টিকরা তো বটেই, চরম বস্তুবাদী রিয়ালিস্টিক পাঠকও জীবনানন্দকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কোন জাদুতে? জীবনানন্দ নিজেই কি ম্যাজিক বা ম্যাজিশিয়ান, তার শব্দ, চিত্রকল্প, উপমা, কাব্যভাব কি ম্যাজিক? জীবনানন্দ মুগ্ধতা কি ক্রমবিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাঙালির বাঙালি হয়ে ওঠার নানা উপাদান অর্থাৎ চারিত্রিক এবং সাংস্কৃতিক নানা দুর্বলতার ফল মাত্র? বাঙালির মানসচেতনার সীমাবদ্ধতার কথা সত্যি জানতেন জীবনানন্দ। তিনি নিজেও যে একই গোত্রের। তার কবিতার শব্দ-প্রযুক্তিবিদ্যা, ধ্বনিমাধুর্য প্রবাহ, রূপকল্পের আবেগী ব্যবহার, অতীন্দ্রিয়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যবহার বাঙালিকে বিস্মিত করেছে।
দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা, দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘরে ও বাইরে চিরক্লান্ত, আশাশূন্য, বিধ্বস্ত এবং ঘোর অবসাদাক্রান্ত বাঙালিকে জীবনানন্দের কবিতা গভীর আত্মমুখী আঁধারে ডুবিয়ে দেয়। সমকালের, সমাজের, রাষ্ট্রের, পরিবার এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত রোগ, অসহায়ত্বকে ধরতে পেরেছিলেন জীবনানন্দ। নিজের জীবনের ওপর পরীক্ষাও করেছেন। তার অকাল মৃত্যুও ভেতর গোপন অদৃশ্য ব্যাধির ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই।
জীবনানন্দের কবিতার ভেতরই জটিল রহস্য রয়েছে। তার কবিতা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সমাজ ও ব্যক্তিকে আশ্রয় নিয়ে ‘দু’দণ্ড শান্তি’ নিতে উসকে দেয়। মানুষের মগজে, স্নায়ুতন্ত্রীতে মাদকের মতো ‘প্রশান্তির জগৎ’ তৈরি করে। যে কাব্য সমালোচকরা তার কাব্যে জীবনবিমুখতা, আত্মপলায়নপরতা কিংবা অবক্ষয়ী মূল্যবোধের চর্চার অভিযোগ এনেছেন, তাদের সব যুক্তিকে বাতিল করা যায় না। এ কথাও সত্য যে, তাকে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গুরুত্ব লঘু করা না। কেন যায় না তা নিয়ে আমরা তর্কে যাব না, কেননা আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়, উদ্দেশ্য বরং একাত্তরের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে বাঙালির আবেগ এবং চর্চার সীমানাটা খুঁজে দেখা। এ দেখাটা স্বাধীন দেশের বাঙালির জন্য জরুরি।
সাহিত্যের দহলিজে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে, বুদ্ধিজীবী মহলে জীবনানন্দ চর্চা পূর্ববঙ্গে পঞ্চাশের দশকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও চর্চার সঙ্গে জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ চর্চারও একটা যোগসূত্র দেখা যায়। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের কিছু আগে বা পরে জীবনানন্দের কাব্যসমগ্র রণেশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় বাংলাবাজার থেকে বের হয়। ব্যাপক সাড়াও ফেলে। জীবনানন্দ অনুসন্ধানের আগে আমরা জেনে নিতে চাই তার শিল্পের মননজগৎ তৈরির পেছনের সামাজিক, রাষ্ট্রিক এবং আন্তর্জাতিক কার্য-কারণগুলো। জীবনানন্দের কাব্যসাধনা এবং তার বিকাশ ও পরিণতি ঘটে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন, সময়ের সেই প্রভাবেই তিনি আন্দোলিত হয়েছেন।
বাংলায় উপনিবেশিক শাসন-শোষণ, জমিদারতন্ত্র, হিন্দু বর্ণবাদ, হিন্দুধর্ম আর ব্রাহ্মধর্মে সংঘাত, হিন্দুধর্মের শাক্ত আর বৈষ্ণব মতবাদীদের পরস্পর বিদ্বেষ, দেবী কালী আর অবতার কৃষ্ণের বিবাদ সমাজ অভ্যন্তরে তৈরি করে অস্থিরতা। সেই ইতিহাসই পরবর্তীকালে দেখিয়ে দেয় কেমন করে ভাঙন ধরে হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একেশ্বরবাদী, পৌত্তলিকতা-বিরোধী নতুন ধর্ম ব্রাহ্মবাদেও। শরৎচন্দ্রের গল্প-উপন্যাসে এর বর্ণনা আছে। বরিশালের ব্রাহ্মসন্তান জীবনানন্দ দাশও এ থেকে মুক্ত ছিলেন না। ব্রাহ্ম হওয়ার কারণে হিন্দুপ্রধান কলকাতা শহরে জীবনানন্দের জীবন-জীবিকাও সংকটে পড়ে। কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করতে গিয়ে তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শেও তিনি শান্তি পাননি। ব্যক্তির এই সামাজিক হতাশা তার কাব্যে সংক্রমিত হয়। একটা কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, সাতচল্লিশের আগে ও পরে পূর্ববঙ্গের ‘বাঙাল’ আর দেব-দেবী বিদ্বেষী ব্রাহ্মদের জন্য মহানগর কলকাতা এক দুর্ভোগের স্থান হয়ে ওঠে।
বাংলা তো বিশ্বমানচিত্রের বাইরে নয়, বিশ্বেরই সে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের যে কোনো কম্পনই তাকে ছুঁয়ে যাবে। বিশ্বপুঁজির মহাসংকটের নগ্ন প্রকাশ ঘটে প্রথম মহাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তথাকথিত উন্নত ইউরোপ তো বটেই, উপনিবেশিক অনুন্নত দেশগুলোতেও মানুষের হতাশা, ভয়ংকর ভীতি ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর মৃত্যুর প্রেতছায়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর কম্পন-প্রকম্পন থামতে না থামতেই এসে যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। আরও জটিল, আরও বহুমাত্রিক বিভীষিকা নেমে আসে বিশ্বে। বঙ্গ-ভারতের গণমানসে মুক্তির স্পৃহা জেগে ওঠে। উপনিবেশিক শোষণ আর দেশীয় উৎপীড়ন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং সশস্ত্র লড়াই সামনে এসে দাঁড়ায়। শাসকরা দেশীয় বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটায় স্বাধীনতা, আজাদী, স্বরাজের নামে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া মানবসভ্যতা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেটা বুঝতে পেরে পুঁজিবাদী শক্তি ইউরোপের দেশে দেশে ব্যক্তির মুক্তি, সামাজিক মুক্তি এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে নানারকম নতুন নতুন দর্শনের উদ্ভব ঘটানোর জন্য একদল দার্শনিককে কাজে নামিয়ে দেয়। জীবনবিমুখ অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শনকে কবর থেকে টেনে তুলে আনে। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাবশিষ্যরাই বিস্ময়করভাবে আত্মসমর্পণ করে সোরেন কিয়ের্কগার্ড-এর বাতিল অস্তিত্ববাদের প্রেতের কাছে। তারা উচ্চকণ্ঠ হলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করলেন যে, হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদ, দুঃখবাদ আর আত্মবিচ্ছিন্নতার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব জীবনের সুখ-আনন্দ-পরম শান্তি।
দর্শনচর্চাকারী মাত্রই জানেন যে, কিয়ের্কগার্ড দর্শনের মৌল উপাদান হলো এই ধারণা যে, মানব অস্তিত্বের প্রকৃত রূপ নিঃসঙ্গতা, কোনো মানুষই এই নিঃসঙ্গতাকে ডিঙিয়ে যেতে পারে না। হেগেলের যুক্তিবাদকে খণ্ডন করে কিয়ের্কগার্ড দাবি করেন ঈশ্বরই হচ্ছে একমাত্র পথ। ব্যক্তিমানুষকে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াতে হবে পাপবোধ, আত্মগ্লানি, অনুতাপ, নৈরাশ্য, যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-উৎপীড়ন, হিংসা, হিংস্রতা থেকে মুক্তির জন্য। ব্যক্তির দুঃখ ভোগ যত বৃদ্ধি পাবে, ততই ব্যক্তির চেতনায় ধর্ম ও ঈশ্বরভাব জাগ্রত হবে। এতেই তার আত্মার মুক্তি ঘটবে।
কিয়ের্কগার্ডের জন্য দর্শনচর্চার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং মানুষের অবসাদ-নৈরাশ্য। সেই ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বে। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। সেই ভাষাই তার সংযোগ ঘটায় কিয়ের্কগার্ড দর্শনের সঙ্গে। রুশ বিপ্লব এবং বস্তুবাদী দর্শন তাকে আন্দোলিত করে না। তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য রেখে গেছেন তিনি নিজের লেখায়। ‘আধুনিক কবিতা : কবিতার কথা’ তার দলিল। দ্বিধাশূন্য জীবনানন্দ বলছেন, ‘কিয়ের্কগার্ড প্রভৃতি দার্শনিকের অস্তিত্ববাদ যা প্রমাণ করেছে সেটা মানুষের প্রাণধর্মে টিকে থাকার... দার্শনিক তথ্য হিসেবে মানুষকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন... তার সাহিত্যিক শিষ্যদের রীতির চেয়ে আরও নিপুণ ও নির্ভুল প্রয়োগে, মানুষের জীবনের এই অন্তর্নিঃসহায়তার কথা ফুটে উঠেছে...।’ সহজ কথায়, এটা নির্মম সত্য যে, জীবনানন্দ বাঙালি পাঠকদের ঘাড়ে তার নিজস্ব অন্তর্নিঃসহায়তার বোঝা চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন।
কেবল কিয়ের্কগার্ড নয়, ফ্রেডারিখ নিটসে, পাস্কাল, মনোবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড অ্যাডলার এবং আরও অনেকে বিজ্ঞানবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন যুদ্ধবিধ্বস্ত নৈরাশ্যবাদী ক্লান্ত মানুষের সামনে তুলে রেখে গেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তারা বিশ্বাস করতেন বুদ্ধি, মুক্তি, বিজ্ঞান নয়; বরং মানুষের বিশ্বাস, তার অনুভূতিই জীবন বাস্তবতার আসল সত্য। জীবনানন্দ যখন এসব চর্চা শুরু করেন তার আগেই সারা ইউরোপে যুক্তিবাদ আর বিজ্ঞানবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদকে মরণসংকট থেকে রক্ষা করা।
যুদ্ধ, ধ্বংস, চূড়ান্ত শোষণ, মানবতার মহাবিপর্যয় না ঘটিয়ে ব্যাধিতে আক্রান্ত যে পুঁজিবাদ টিকতে পারে না, এই বাস্তবতার ভেতর দার্শনিক রুশোর দর্শনে কথিত সেই ‘ঘধঃঁৎধষ গধহ’ সার্ত্রে-এর বিশ্বাসে কোনো রূপ নেয়? সার্ত্রে ব্যক্তিমানুষকে তার বাস্তব স্থান আর সময়কালের সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুক্ত ব্যক্তিসত্তার কল্পনার দিকে টেনে নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিমানুষ রাষ্ট্র ও সমাজের বন্ধন থেকে কোনোভাবেই মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারে না। সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদও ব্যক্তিমানুষকে তার প্রত্যাশিত মুক্তি এনে দিতে পারে না। ব্যক্তিমানুষ চূড়ান্তভাবেই নিঃসঙ্গ; পৃথিবীর বিপক্ষেও সে। একেবারেই একা।
সার্ত্রের ভাববাদী দর্শন ব্যক্তিমানবসত্তা সম্পর্কে কী বলে? অতলান্তিক কালস্রোতে ভাসমান মানুষ মুহূর্তকালের ভেতরই শূন্যতায় আক্রান্ত হয়। এই শূন্যতা তাকে আতঙ্কের ভেতর ঠেলে দেয় এবং দাঁড় করিয়ে দেয় বিমূর্ত এক সত্তার সামনে। সেই সত্তাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, বরং অতীন্দ্রিয়। স্বাধীনতা যেহেতু অসীম এবং নিরঙ্কুশ তাই প্রতিকূল সমাজে ব্যক্তিমানুষ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমন বিশ্বাসের ভেতর সার্ত্রে মনে করতেন উৎকণ্ঠা থেকে মানুষের মুক্তি নেই। ব্যক্তিমানুষ কখনো সমষ্টি বা সঙ্ঘের সঙ্গে মিলিত হতে পারে না, মিলিত হওয়ার চেষ্টাটা কেবলই দুঃস্বপ্ন। সার্ত্রের ভাবশিষ্যরা তো এই দর্শনই তাদের সাহিত্যের নানা শাখায় প্রয়োগ করেছেন।
সার্ত্রে কেবল ইউরোপ নয়, ইংরেজি ভাষাকে বাহন করে বঙ্গভারতে শিক্ষিত শ্রেণির একাংশের চেতনায় প্রবেশ করেন। জীবনানন্দ কিন্তু তাদেরই দলে। সার্ত্রে চিরন্তন সত্যবাদ, ঐতিহ্যবাদ, ধর্মবাদ এবং বুর্জোয়া নৈতিকতাবাদের বিরোধিতা করে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের পক্ষ নিলেও সামাজিক শ্রেণি ও শ্রেণি দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে সম্মত হননি। বস্তুজগৎ এবং মানবমনের দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন। তার দাবি ছিল, ‘No general ethics can shwo you what is to be done’ এবং ‘ও I have got to limit myself to what I see’
মানব অস্তিত্বরক্ষার সুনির্ধারিত কোনো অর্থ বা কারণ সার্ত্রের বিশ্বাসের দর্শনে নেই। তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন যে, চরম অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত মানুষ অন্ধের মতো আশ্রয় সন্ধানে আবর্তিত হবে। নিঃসঙ্গতা, আতঙ্ক, উদ্বেগ তার নিত্যসঙ্গী। জীবন ও জগৎ তার কাছে অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার হেঁয়ালি এবং যুক্তিশূন্য। তার গল্পের নায়ককে তাই উচ্চারণ করতে হয়, ‘The nausea is not inside me, I feel it out There... I am the one who is within it......’
বিস্ময়কর এটাই যে, অস্তিত্ববাদী এই দর্শনকে মহাযুদ্ধে বিধ্বস্ত মানুষদের একাংশ বরণ করে নেয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং ভয়াবহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মানবতা, অবক্ষয়ী নৈতিকতার ভেতর মনোলোকের এই অন্তঃসারশূন্যতা ব্যক্তিমানুষকে মহাশূন্যে ভাসমান মৃত গ্রহের ভগ্ন অণুর মতো ঘিরে ধরে। সে সময়ের কবিরা তো মানবচেতনার আশা-প্রত্যাশা আর নতুন স্বপ্নের বদলে দেখতে পেলেন চরাচরের চারদিকে কেবলই নির্জন শূন্যতা আর মৃত্যু। কাফ্কার মতো সংবেদনশীল শিল্পীও লিখলেন, ‘ÔI am separated from all things by a hollwo space...’। আলবেয়ার কামুও একই পথের পথিক। স্যামুয়েল বেকেট তো বলেই ফেললেন, ‘...I was born or not, have lived or not, am dead or merely dying...’। ইউরোপের অনেক কবি-সাহিত্যিক আত্মনিমগ্নতার ওই অন্ধকারে ডুব দেন।
আর ওই যে অস্তিত্ববাদী দর্শনের অভিঘাতে ইউরোপে জন্মাল Sur-realism, Dadaism, Futurism, বিশেষ করে পরাবাস্তববাদ। এর প্রভাব বাঙালি মননেও পড়ে। কলকাতার অনেক পরে, কবরে ভূত হয়ে যাওয়ার পর পরাবাস্তববাদ ঢাকাতেও উঁকি মারে। বাঙালি যখন গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লড়াই করছে, তখনই এই ভূত ঢাকায় এসে হাজির। বাংলাদেশের কাব্যদর্শনের এই দেউলিয়াপনার বাইরে মনুষ্যত্বের পক্ষে, মুক্তির প্রশ্নে একদল কবির আবির্ভাব ওই পরাবাস্তব প্রেতাত্মাকে পরাভূত করেছিল। ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র-গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধবিষয়ক কবিতার দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও লেখক
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।