
অবহেলাতেই প্রাণ গেল ছয়জনের। আহত ২২ জনের মধ্যে চোখ হারাল তিনজন। অক্সিজেন সেপারেশন কলামে যখন অক্সিজেন এসে জমা হচ্ছিল, সেই অক্সিজেন বের হওয়ার জন্য যে পাইপগুলো ছিল একপর্যায়ে তা বের হতে না পেরেই প্রবল শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছে কলামটি। আর ১০০ ফুট উচ্চতার এ কলামটি ছিল লোহার শিটের তৈরি। এই শিটগুলো যখন প্রবল বেগে ছোটে, তখন শেডের লোহার পাতগুলো কারখানার রডের ছাউনিগুলোকে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর লোহার আঘাতে চারপাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গতকাল রবিবার উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, এ কলামটি (অক্সিজেন সেপারেশন কলাম) বিস্ফোরিত হয়েছিল। এটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু ছিল। প্রায় ১৪ বর্গফুট আয়তনের এ কলামটিতে অক্সিজেন এসে জমা হতো। একই সঙ্গে দুটি পাইপ দিয়ে আসত বাতাস। আর দুটি পাইপ দিয়ে উৎপাদিত অক্সিজেন দুটি ডেলিভারি পয়েন্টে চলে যেত। সেই ডেলিভারি পয়েন্টে প্রায় ২৪টি সিলিন্ডারে একসঙ্গে অক্সিজেন রিফিল করা যায়। এই প্ল্যান্টে দুটি ডেলিভারি পয়েন্ট ছিল; অর্থাৎ ৪৮টি সিলিন্ডারে একসঙ্গে অক্সিজেন রিফিল করা হচ্ছিল। অক্সিজেন রিফিল হয়ে গেলে পাশেই ট্রাক দাঁড়ানো থাকত সেই ট্রাকে উঠিয়ে দেওয়া হতো বলে জানান মিজানুর রহমান নামের এক শ্রমিক।
বিস্ফোরণ কেন হলো : বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক আহমদ মিয়া কলামটিকে দেখিয়ে বলেন, এই কলামে এসে অক্সিজেন জমা হচ্ছিল। সেই অক্সিজেন কোনো না কোনো কারণে ডেলিভারি পয়েন্টে যাচ্ছিল না। কোথাও ব্লকেজ হয়েছিল। ব্লকেজ হয়ে যাওয়ায় কলামের ভেতরে অক্সিজেনের চাপ বেড়ে যায় এবং বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু চাপ বেড়ে গেলে তো পাশের অপারেটর বসা ছিলেন। তিনি কলামের পাশের জায়গায় আঙুল প্রদর্শন করে বলেন, এখানে বসত অপারেটর। তাহলে আমার প্রশ্ন, ডেলিভারি পয়েন্টে যে সিলিন্ডার রিফিল হচ্ছিল না, তা অপারেটর খেয়াল করেনি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা ফোরকান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ডেলিভারি পয়েন্টে যে শ্রমিক কাজ করছিল, সে সুইচ অন করে বসেছিল, সে হয়তো খেয়াল করেনি। একইভাবে অপারেটরও বিষয়টি জানত না। আর এতেই দুর্ঘটনা ঘটে।
কিন্তু হঠাৎ করে ব্লকেজ কেন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান নামের আরেক শ্রমিক জানান, গত পাঁচ বছরে এই সেপারেশন কলাম চেক করা হয়নি বলে জানেন। হয়তো দীর্ঘদিন মেইনটেন্যান্স না করার কারণে তা ব্লকেজ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অক্সিজেন সেপারেশন কলামেই বিস্ফোরণ হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে গ্যাস জ্যাম হয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। তারপরও আমরা আরও কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে এর আগে কোনো অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। তাই এখানে কেন ঘটল, আমরা তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’
কারখানা ব্যবস্থাপকের ভাষ্য : দুর্ঘটনার পর থেকে সীতাকুন্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না কিংবা পরিচয় দিয়ে কেউ সামনে আসছিল না। গতকাল সকালে কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম সংবাদকর্মীদের সামনে শনাক্ত হওয়ার পর বলেন, ‘আমাদের কারখানার সরকারের সব দপ্তরের (বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস) ছাড়পত্র রয়েছে। সাধারণত অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা ঘটে না। তারপরও কেন ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
তদন্ত কমিটির ভাষ্য : সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গতকাল রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কী পেয়েছেন, সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘পুরো তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই প্ল্যান্টের পাশাপাশি আগামীতে যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে এবং কীভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই সুপারিশ থাকবে আমাদের রিপোর্টে।’
এদিকে গতকাল সকালেই উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। এমনকি কেউ আহত অবস্থায়ও ছিল না। ফলে গত শনিবারের বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু ও ২২ জন আহত হয়েছে। এই প্ল্যান্ট থেকে শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হতো। এ ছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার জন্যও এই অক্সিজেন ব্যবহৃত হতো। চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে আবুল খায়ের, লিন্ডে, স্পেকট্রা, মোস্তফা হাকিম, আল রাজিসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে। এর আগে গত বছরের ৪ জুন পাশর্^বর্তী বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সরকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে না পারলে সংস্থাটি ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করবে না। প্রথম কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের আগে এ শর্ত দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। সরকার রাজি হওয়ায় ঋণ অনুমোদন এবং প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
আগামী ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে। এখন দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নির্দেশনা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে দফায় দফায় বৈঠক।
সূত্র জানায়, আইএমএফের শর্ত মানতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে আরেক দফা। রাজস্ব খাতের সংস্কারে এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একের পর এক হিসাব কষছে। আইএমএফের কথামতো অতিরিক্ত রাজস্ব কোন খাত থেকে আদায় করা সম্ভব তার যোগ-বিয়োগ করছে। আসছে বাজেটে কোন কোন খাতে ভ্যাট অব্যহতি কমানো যায় তা নিয়েও বিশ্লেষণ চলছে।
রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্তপূরণ করতে হলে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে হবে। এর মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩ করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে কর-জিডিপির অনুপাত দিয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ অর্থবছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এ অর্থবছরে এনবিআরকে বর্তমান আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৯৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে।
আইএমএফের এসব হিসাব সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসের ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি সামনে রেখেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরার চিন্তা চলছে। এতে আসছে অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না তা নিয়ে চলছে বৈঠক। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে এবং ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপাস্তকে বলেন, ‘বাস্তব অবস্থার ওপর নির্ভর করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কাউকে খুশি করতে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।’
আইএমএফের কথামতো নিয়মিত আদায়ের সঙ্গে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে এরই মধ্যে আয়কর আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত করার কাজটি দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি কাস্টমস বা শুল্ক আইনের কাজটিও দ্রুত শেষ করতে বলেছেন। ঋণদানকারী সংস্থার সন্তুষ্টিতে এরই মধ্যে রাজস্ব জালের বিস্তার করতে ২০২৩ সালেই আরও ২০ লাখ করদাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। দাতা সংস্থার শর্ত মানতে বড়মাপের কর ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এনবিআরে তলব করে পাওনা পরিশোধে বলা হয়েছে।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট গোয়েন্দা শাখার কাজে গতি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাতা সংস্থার প্রস্তাব অনুসারে সম্ভাবনাময় বৃহৎ ও মাঝারি করদাতা চিহ্নিত করার কাজে জোর বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মনিটরিং, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণা ও অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে, করদাতাদের সেবা বৃদ্ধি ও করদাতাদের সঙ্গে (খাতভিত্তিক) বেশি বেশি আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে রাজস্ব জালের বাইরে থাকা অনিবন্ধিত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপে চিহ্নিত করে নিবন্ধিত কর শুরু করা হয়েছে।
ঋণ প্রদানের আগেই আইএমএফের শর্ত দেওয়া হয়েছে, নতুন করে কোনো খাতেই আর শুল্ক-ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। বর্তমানে যেসব খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে, তা কমাতে হবে বা তুলে নিতে হবে। আইএমএফের এ প্রস্তাবে কোন কোন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে তা যাচাই-বাছাই করে এনবিআরের তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা খাতে কোনো ভ্যাট নেই। উৎপাদন খাতে পোশাকশিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, লিফট, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোনসেট ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। ওষুধের প্রাথমিক কাঁচামাল উৎপাদনে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এভাবে জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্য সেবা ভ্যাট অব্যাহতির আওতাভুক্ত থাকায় ভ্যাট জিডিপি তথা কর জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর থেকে হিসাব করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ না তৈরি করেও আইএমএফের শর্ত কতটা মানা সম্ভব।
অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে জোরালো চাপ দিয়েছে আইএমএফ। ঋণদানকারী সংস্থাকে সন্তুষ্ট করতে এরই মধ্যে অর্থ পাচারে কে বা কারা জড়িত তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে ৩৩টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাজে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। অর্থ পাচারকারীর এসব ব্যক্তির সন্ধানে তৎপরতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অতীতে পানামা, প্যারাডাইসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার সম্পর্কিত কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের নাম উঠে এসেছিল তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক খাতে সংস্কার, সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া, টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, প্রকল্পের কেনাকাটায় জবাবদিহি, স্বচ্ছতা আনাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিযোজন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাংক খাতের কী সংস্কার করা সম্ভব এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন কতটা সংশোধন করা সম্ভব তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে।
আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে এ বছরের ডিসেম্বরে আর শেষ কিস্তি পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। এসব কিস্তির পরিমাণ ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার করে।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শিরিন ম্যানশন নামের একটি বাণিজ্যিক ভবনের তিনতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা ওই তলায় অবস্থিত নিউ জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মী। ভবনের একটি অংশ ধসে ছিটকে পড়ে দুপাশের সড়কে।
বিস্ফোরণে পথচারীসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি। এর মধ্যে অন্তত পঁচাজন দগ্ধ হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৬ জনকে। তাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরণের পরই আগুন ধরে যায় ভবনটিতে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ছুটে যান। জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার।
আগের দিনই চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বেশ কয়েকজন।
গতকাল সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ভবনটির চারদিকে ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দুপাশের সড়কে। ধসে পড়ে ভবনের তিনতলার দেয়ালের ইট-বালু ও আসবাবপত্র। কিছু সময় পর দেখা যায় কয়েকজন ভবনের সামনের সড়কের ওপর অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। ভবনটির দুই পাশ দিয়ে থাকা সড়কের অনেক পথচারীও আহত হন।
ঘটনার সময় ভবনটির নিচে ছিলেন রিকশাচালক জিয়া রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি রিকশা নিয়ে দাঁড়ায় ছিলাম। হঠাৎ এমন একটা বেকট (বিকট) শব্দ হলো, এরপর চারিদিক ধুলায় ভরে গেল। আমি রিকশা ফেলায় দিছি দৌড়। বাইচা গেছি।’
ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের তাৎক্ষণিক ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। নিহত তিনজন হলেন নিউ জেনারেশন কোম্পানির কম্পিউটার অপারেটর শফিকুজ্জামান শফিক (৪৫) ও তুষার, অফিস সহকারী আবদুল মান্নান (৬৫)।
আহতদের অনেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও ধানম-ির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গুরুতর আহত ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আয়েশা আক্তার আশা, হাফিজুর রহমান, জহুর আলী, সৈয়দ আকবর আলী ও সৈয়দ আশরাফুজ্জামান।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, পাঁচজনকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই থেকে তিনজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। সবাইকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নুরনবী, তাজুদ্দিন, মেহেদী হাসান, জাকির হোসেন জুয়েল, কামাল, কবীর হোসেন, রাবেয়া খাতুন, তামান্না ও অজ্ঞাতনামা একজন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের পাশেই শিরিন ম্যানশন নামের তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটি পুরাতন ও জরাজীর্ণ। বিস্ফোরণ হওয়া তৃতীয়তলায় ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং নিউ জেনারেশন কোম্পানি অফিস। দোতলায় রয়েছে সেলুন, লন্ড্রি আর নিচতলায় খাবারের হোটেল, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের দোকান, হস্তশিল্প ও তাঁতজাত পণ্যের বিপণিবিতান। ভবনটির তিনতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেয়ালের ইট ও জানালার কাচ উড়ে গিয়ে রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় পড়েছে। আশপাশের দোকানিরা জানান, ভবনটির নিচে বেশ কয়েকজন হকার ছিল। তারাও আহত হয়েছে।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারা সবাই দগ্ধ ছিলেন বলে জানান জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। এ ছাড়া তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন। তারা হলেন মো. হান্নান, মাহাবুবুন্নবী ও স্বপ্না রানী সাহা।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ৩৫ থেকে ৪০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দুজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং একজনকে এইচডিওতে রাখা হয়েছে। তাদের শরীর ও মাথা আঘাতে থেঁতলে গেছে।’
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি : গতকাল দুপুরে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকতেই দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। মৃত্যুর সংবাদ শুনে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা। নিহত শফিকুজ্জামান শফিকের স্বজনরা জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সাভারের গেন্ডারিয়ায়। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর থানার ধুলদি লক্ষ্মীপুরে। মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্ত্রী পপি জামান। তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা।
নিহত আবদুল মান্নান গত ২২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছিলেন বলে স্বজনরা জানান। তার ছেলে মোসাদ্দেক হোসেন আশিক জানান, পুরান ঢাকার চকবাজার থানা এলাকার ইয়াসিন ব্যাপারীর গলিতে তাদের বাসা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন মান্নান। পরে মৃত্যুর খবর পান তারা। তিনি বলেন, টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন আগে তার বোন মনিরা মারা গেছেন। সেই শোক না কাটতেই বাবার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। নিহত আরেকজন তুষারের বাড়ি নরসিংদী।
বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে সিটিটিসির বক্তব্য : ঘটনার পর সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এবং সিবিআরএন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গ্যাস ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সাধারণত কোনো ঘরে বা আবদ্ধ স্থানে যদি কোনোভাবে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ঘনত্বে গ্যাসের অবস্থান থাকে, সে ক্ষেত্রে যেকোনো ইগনিশন সোর্সের (বৈদ্যুতিক সুইচ, শর্টসার্কিট, দেশলাই, লাইটার) মাধ্যমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত ভবনের তিনতলার ফিনিক্স ইনসিওরেন্স লিমিটেডের অফিস থেকে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিটিটিসির বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে কোনোরূপ বিস্ফোরকের উপস্থিতি ছিল না বলে নিশ্চিত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা ও ব্যাপকতা পর্যালোচনায় গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ বলে সিটিটিসির বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মতামত দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে আসা সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমতউল্লাহ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার ভবনগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, সেখানে যেকোনো কারণে গ্যাস তৈরি হতে পারে। আমরা ধারণা করছি জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, কারণ এত বড় বিস্ফোরণ গ্যাস থেকেই সম্ভব। তবে এসির গ্যাস থেকে এমন বিস্ফোরণ হয় না। স্যুয়ারেজের লাইন বা অন্য কোনো কারণে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে।’ নাশকতার কোনো আলামত এখনো মেলেনি বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর একই দাবি করে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনাটি নাশকতা নয়, এটি একটি দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে আমরা একটা কমিটি করব। তদন্ত কমিটি ফায়ার সার্ভিস এবং ঘটনাস্থলে কাজ করা এক্সপার্টদের মতামত নেবে। পরে তারা একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
নিউ জেনারেশন কোম্পানির এরিয়া সেলস ম্যানেজার শাহিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, লিরা ব্র্যান্ডের পেনসিল, রাবার, ইরেজার, জ্যামিতি বক্স, ফাইল, স্ট্যাপলারসহ এ জাতীয় বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করেন তারা। বিস্ফোরণ হওয়া অফিসটাতে কোনো মালামাল ছিল না।
ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট (পাবলিক রিলেশনস) মো. মাহাবুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমাদের ছয়জন কর্মী অফিসে ছিল বলে জানতে পেরেছি। তারা সবাই আহত হয়েছেন। অফিসে দুই টন করে চার টনের দুটি এসি ছাড়া আর কিছুই নেই। কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বা দাহ্য পদার্থ ছিল বলে আমার জানা নেই।’
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পাশে থাকবে কাতার। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের পাশাপাশি গতকাল রবিবার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি কাতারের আমিরকে উদ্ধৃত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাতারের আমির বলেছেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।
মোমেন বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কাতারের কাছ থেকে আরও বেশি জ্বালানি, বিশেষ করে বার্ষিক আরও এক মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিএ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, আমরা কাতারের সাহায্য চাই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি চুক্তি নবায়ন করতে চাই। আমি আরও এলএনজি চাই। জবাবে কাতারের আমির জানতে চান বাংলাদেশ কতটা জ্বালানি চায়। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশ আরেকটি এমটিএ অর্থাৎ ১৬-১৭ কনটেইনার জ্বালানি চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আমির বলেন, আপনার কাতার ছাড়ার আগে জ্বালানিমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবেন।
অনুদান নয় স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রাপ্য চায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনুদান নয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তাদের প্রাপ্য চায়। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোও দর-কষাকষিতে তাদের পক্ষ রাখবে। আমাদের দেশগুলো দান চায় না; আমরা যা চাই তা হলো আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির অধীনে আমাদের পাওনা।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল কিউএনসিসিতে এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোহা কর্মসূচি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আশার আরেকটি আশ্বাস। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এলডিসিতে বাস্তব কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এলডিসিতে উত্তরণে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত। তাদের একটি বর্ধিত সময়ের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সহায়তা ভোগ করা উচিত। তাদের উন্নত বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীল সক্ষমতা কীভাবে তৈরি করা যায় তা জানতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনী ও ক্রান্তিকালীন অর্থায়ন ব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অংশ দ্বিগুণ করার জন্য টেকসই সহায়তা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোর এলডিসির জন্য ওডিএ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে হবে। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ঋণ টেকসই করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যম রয়েছে। এলডিসিগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় এবং অনুমানযোগ্য করা উচিত। এলডিসিগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের অধিকার এবং মঙ্গলের জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা এলডিসিতে ২২৬ মিলিয়ন যুবকদের ব্যর্থ করতে পারি না।’
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী এবং তারপর ইউক্রেনের যুদ্ধ এলডিসি অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু সংকট এবং কিছু স্বল্পোন্নত দেশে দীর্ঘকাল ধরে টানা সংঘাত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের গল্পের বেশির ভাগ অংশই আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য আলোচনা করেছিলাম এবং সহযোগিতার জন্য আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেছি। বেশির ভাগ উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতি থেকে আমরা যে শুল্ক এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছি, তা আমাদের বেসরকারি খাতকে একটি দৃঢ় উৎপাদন ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রিপস চুক্তির অধীনে প্রদত্ত পেটেন্ট মওকুফ সুবিধা স্থানীয়ভাবে আমাদের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অপর ডব্লিউটিও চুক্তির অধীনে রেয়াতগুলো আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষুধা ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছি, তা আমাদের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মহতী সমাবেশে আপনার সঙ্গে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি কাতার সরকার ও জনগণকে তাদের উদার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে রয়েছি। আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। আমাদের জনগণের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের বেশি। কভিড-১৯ মহামারীকালে তার সরকার বাংলাদেশের জিডিপির ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ সমান অর্থব্যয়ে ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী ভিশন-২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। সম্মেলনের সভাপতি ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, ইউএনজিএর সভাপতি সাবা করোসি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি লাচেজারা স্টোয়েভা এবং মালাবির প্রেসিডেন্ট ও এলডিসি গ্রুপের চেয়ারপারসন লাজারাস ম্যাকার্থি চাকাওয়েরা বক্তৃতা করেন।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাত (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের পর গত শনিবার দিনভর পরিস্থিতি ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। তবে রাত ৯টার দিকে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে রাতে এমন গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় জেলা শহরের দোকানপাট। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত শহরের কদমতলায় ওয়াকার শোরুমসহ আহমদিয়াদের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করে। এ ছাড়া ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। জেলা শহরের প্রেস ক্লাব সড়কে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের অ্যাকশনে পিছু হটে বিক্ষোভকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার মধ্যরাত থেকে পঞ্চগড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল।
তবে গতকাল রবিবার সকাল থেকে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির পর গতকাল সরকারি-বেসরকারি দপ্তর খোলা থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে ভিড় বাড়তে থাকে। অবশ্য শহরে মানুষজনের উপস্থিতি তুলনামূলক অন্যান্য দিনের চেয়ে ছিল কিছুটা কম।
এদিকে হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে আহমদিয়াদের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। তিনটি মামলায় নামপরিচয় উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মিলে আসামির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহমদিয়াদের মামলার বাদী হয়েছেন ওসমান গনী নামে এক ব্যক্তি। এই মামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যুবক প্রকৌশলী জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুজনকে। তারা হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ গ্রেপ্তারদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে গুজব রটনার অভিযোগে পৌর যুবদল নেতা ফজলে রাব্বীকে (৩০) এবং তেঁতুলিয়া থেকে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে সতর্ক আছেন। এখন পর্যন্ত থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গুজব ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ইন্টারনেটসেবা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অপারেটররা নিজে থেকে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করেছে। আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।’
বিএনপি-জামায়াত গুজব ছড়িয়েছে দাবি রেলপথমন্ত্রীর : আহমদিয়াদের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা গুজব ছড়িয়ে তৌহিদি জনতার নামে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। গতকাল বিকেলে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই দাবি জানান রেলপথমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে, ইসলামের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি এবং আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করে নিজেদের ফায়দা লুটতে চায়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে হতাহত কাউকে উদ্ধারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৮ জনের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল ইসলাম। সাতজনের মধ্যে মো. মাসুদ ও প্রভাষ নামে দুই শ্রমিককে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত অন্য পাঁচজন হলেন মো. আরাফাত আলম, জাহিদ হাসান, মো. ওসমান, মো. মজিবুর রহমান ও ফ্যান্সি।
আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুন নির্বাপণের পরও আগ্রাবাদ ও কুমিরা স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছিল। এখন আর দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ তদন্তসাপেক্ষে পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
হাসপাতালের চিত্র: গতকাল রবিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহতরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। বিস্ফোরণে কারও থেঁতলে গেছে পা, কারও উড়ে গেছে হাত, কেউ পেয়েছেন মাথায় আঘাত। আবার কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন বার্ন ইউনিটের বিছানায়। তাদের সুস্থ করে তুলতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দেশ রূপান্তরকে জানান, বিস্ফোরণে আহত ২১ জনকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তিনজন গতকালই মারা গেছেন। বাকি ১৮ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
আহতদের কাতরাতে দেখে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড। ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে কথা হয় আহত শ্রমিক মো. ফোরকানের সঙ্গে। তার হাত ও আঙুলে ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, শনিবার বিকেলে কারখানায় কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর তার আর কিছু মনে নেই। চমেক হাসপাতালের বিছানায় জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তার বাম হাতের দুই আঙুল উড়ে গেছে। পাশের বেডে কাতরাচ্ছেন মাসুদ। তার ডান পা উড়ে গেছে। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন মো. জাহেদ। তার চিকিৎসা চলছিল চমেকের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে। জাহেদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবার বিকেলে কারখানায় কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণের পর আর কিছু মনে নেই তার। গতকাল রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে তার জ্ঞান ফেরে। তার পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসকরা জানান, জাহেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অপারেটর রিপন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। বুক, কোমর ও হাঁটুতেও আঘাত পেয়েছি।’
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আহত ১৮ জনের মধ্যে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ৭ জন, অর্থোপেডিক্স বিভাগে ২ জন, নিউরো সার্জারি বিভাগে ৬ জন ও চক্ষু বিভাগে ৩ জন। আহত অন্য শ্রমিকরা হলেন মো. নূর হোসেন (৩০), মোতালেব (৫২), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান (৩৫) ও শাহরিয়ার (২৬)।
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে গেলে এমন বীভৎসতার চিত্র দেখা মেলে। বিস্ফোরণে মুখম-ল থেঁতলে গেছে আকতারের। তার সারা শরীরে ঢুকেছে কাচ ও লোহার টুকরা। ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে চিরতরে। দুই চোখ ও থুতনি ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মুখমন্ডলে রক্তের দাগ। বাম চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে গতকাল বিকেলে। চিকিৎসকরা বলেছেনÑডান চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো আর দেখবেন না আকতার। এমন খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার ছোটভাই আজাদ হোসেন। চোখের যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় ভাইকে কাতরাতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারছেন না আজাদ। তার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। স্বামীর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে আকতারের স্ত্রীও শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার চোখ মুছছেন।
চমেকের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তনুজা তানজিন জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে আজাদসহ তিনজনের একটি করে চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাদের চোখে কাচ ঢুকে নার্ভ কেটে গেছে। তবে তিনজনের চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাকি দুজন হলেন নাহিন শাহরিয়ার ও সোলায়মান। এর মধ্যে নাহিন ও আকতার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের শ্রমিক। সোলোয়মান ট্রাক শ্রমিক।
ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৪০০ ঘরবাড়ি: গতকালের বিস্ফোরণে কারও ঘরের চাল উড়ে গেছে, কারও ভেঙেছে জানালার কাচ। আবার কারও বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ফেটে গেছে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচ, ছোট ছোট লোহার টুকরো। দেখে মনে হবে, এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা। বিস্ফোরণের পর আশপাশে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এমন ক্ষয়ক্ষতিই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বিএম ডিপোর ঘটনার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ৯ মাসের মাথায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামের একটি প্ল্যান্টে ঘটে গেল আরেকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা আজ (গতকাল) সকাল থেকে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেছি। সবমিলিয়ে প্রায় চারশ ঘর ও অর্ধকোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তখন ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আপনারা আরও সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি।’
সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, আমি অসুস্থ তাই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আসতে পারিনি। আমাদের কাছে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র আছে। তবে কীভাব এ ঘটনা ঘটেছে তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। বিস্ফোরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেব। আর যেসব ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রথম দিনের উদ্ধার অভিযান শেষে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনের কথা জানা যায়। এর মধ্যে আহত ২৪ জন এবং নিহত ৬ জন।
এদিকে, বিস্ফোরণের কারণ জানতে জেলা প্রশাসনের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নিহত শ্রমিকদের দুই মন্ত্রণালয় থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।